গল্পঃ রক্তিম চোখ
#Ipshita_Shikdar (samia)
আজ আবারো সেই চোখ জোড়া দেখলো ইজহার। সেই রক্তিম চোখ।
ইজহার নুর ভাই অয়ন চৌধুরী এর এক মাত্র আদরের বোন। অনাথ হলেও কোনো চাহিদা ইচ্ছা অপূর্ন থাকেনি তার। বাবা মায়ের ছায়া না পেলেও ভাইয়ের ছায়াতলে তার জীবনটাও নামের মতো নুরে ভরা।
খুব মজ মাস্তিতেই দিন কাটছিল তার তবে গাজিপুর কমলা সাগর পার্কে হওয়া ঘটনা তার জীবনের গতিপথই পাল্টে দেয়। তার এই আলোকিত জীবনকে অন্ধকার দেখিয়ে আসছে এই রক্তিম চোখ। এই চোখ জোড়ার সাথে তার দেখা হয়েছিল আজ থেকে আরও ৩ বছর আগে যখন সে ক্লাস নাইন এর এক্সাম শেষে ফুপির বাসায় যায়। ইজহারের ফুপির বাসা গাজিপুর আর ওর বাসা ধানমন্ডি ।
অতিত_
পার্কে কাজিনদের সাথে ঘুরছিলো ইজহার। আনন্দই লাগছিল তার নতুন জায়গায় আসায়। ভাইয়ের ফোন আসায় অন্যদিকে চলে যায় ইজহার। বেশ দুরেই চলে যায় কথা বলতে বলতে। সেখানে এক গাছের ছায়াতলে কথা বলে পিছনে ঘুরতেই দেখল এক লোক তার পিছনে হুডি পরা ব্লাক কালার এর আর মুখে ব্লাক মাস্ক। শুধু চোখ দুটোই দেখা যাচ্ছে। কিন্তু চোখ জোড়া অসম্ভব লাল। মনে হচ্ছিলো রক্ত জমে আছে।
হঠাৎ লোকটিকে নিজের এতটা সামনে দেখায় খানিকক্ষণ থম ধরে থাকে নুর। ঘোর কাটতেই দেখে লোকটি নেই। তবে তার থেকে কিছু দূরে রক্ত ভরা মাটিতে। সে এটাতে একটু ভয় পেলেও পরে ভাবে সে একটু বেশিই মাথা ঘামাচ্ছে এসবে তাই মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে কথাটা আবারও সবার মাঝে চলে যায়। সেদিন আর দেখা পায়নি রক্তিম চোখের আর ঘটনাটাও প্রায় ভুলেই গিয়েছে।
তবে পরের দিন নিউস চ্যানেলে দেখা সংবাদ তাকে বাধ্য করে মনে করাতে সেই দৃশ্য।
রক্তিম চোখ
পর্বঃ ২
#Ipshita_Shikdar
তবে পরের দিন নিউস চ্যানেলে দেখা সংবাদ তাকে বাধ্য করে মনে করাতে সেই দৃশ্য। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে ফুপির সাথে খবর দেখছিল তখনই দেখল কমলা সাগর পার্কে গতকাল খুন হয়েছে এলাকায় কুখ্যাত এক আসামি। অত্যন্ত নির্মমভাবে খুন হয়েছে খুন করে এক ডাস্টবিনে তাকে ফেলে রেখে আসা হয়। যে জায়গায় খুন হয়েছে সে জায়গাটাও দেখানো হয়। জায়গাটা দেখে নুর 450 ভোল্ট এর শক খায়।
কারণ এই জায়গায় ই দেখা পেয়েছিল রক্তিম চোখের আর যেখানটায় ও রক্ত দেখেছিল তাইই তো দেখানো হচ্ছে। ইজহার অনেক ভাবনা চিন্তার পরো ঘটনার সমীকরণ মিলাতে পারছে না। এই দিনের পর থেকে অতিরিক্ত চিন্তা ভাবনায় ভয়ে খাওয়া দাওয়া ভুলে রুমেই বন্দি হয়ে থাকতো। ফুপি কাজিনরা বারবার জিগ্যেস করার পরও কিচ্ছু বলেনি। এভাবে চলতে ১২ দিনের মাথায় অজ্ঞান হয়ে পরে যায় নুর। ফুপা ফুপি তারাতারি হসপিটালে নিয়ে যায় এবং অয়ন কে খবর দেয়। অয়ন চৌধুরী তার কলিজার এ অবস্থা শুনে খুব শিঘ্রই রওনা হলো।
আধা ঘন্টা পর ডাক্তার কেবিন থেকে বের হয়ে বলল,
নুর এখন সুস্থ। অতিরিক্ত মানসিক চাপ আর অনিয়মিত খাওয়া দাওয়া করার কারণে এমন হয়েছে। চিন্তার কিছু নেই তবে ২ দিন থাক্তে হবে।
এসব শুনে তো অয়ন অবাক কারণ যে বোনকে ও কষ্ট কি দুঃখ কি তা বুঝতে দেয়নি সর্বদা রঙিন করে রেখেছে তার জীবন সে কিনা এখানে এসেছে ১৫ দিনও হয়নি মানসিক চাপে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। সে অনেক রাগারাগি করলো গত 11 দিনে ঘটা ঘটনাগুলো তাকে না জানানোর জন্য।
নুরকে ঘুমের ইনজেকশন দেয়া হয়েছিল। পরের দিন সকাল ৪ টায় ঘুম ভাঙে নুরের। আস্তে আস্তে উঠে বসতেই খেয়াল করলো কালো কাপড় পড়া কেউ দরজা দিয়ে বের হলো। তারপরই দেখলো বেড টেবিলে একটি ফ্লাওয়ার বুকেট, ৫টা চকলেট বক্স ও ৪টা আইস্ক্রীম বক্স রাখা এবং তার সাথে একটি কার্ড। নুর চকলেট বক্স থেকে একটা চকলেট খেতে খেতে কার্ডটি পড়তে শুরু করলো। সেখানে লিখা ছিল,
#রক্তিম_চোখ
#পর্বঃ ৩
#Ipshita_Shikdar
মায়াপরী,
আমাকে নিয়ে এত ভেবে লাভ নাই। আমার সমীকরণ মিলাতে গিয়ে নিজের সমীকরণই ঘুলিয়ে ফেলেছ । কি অবস্থা করেছ নিজের? এখন থেকে ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করবে। আমার যাতে আর আসতে না হয় কারণ আমার আসা তোমার জন্য আনন্দনীয় হবেনা। আর আইসক্রীম বেশি খেয়ো না এই শীতে ঠান্ডা লেগে যাবে। মনে থাকে যেন।
ইতি,
রক্তিম চোখ
চিঠিটা পড়ে ইজহার অনেক অবাক হয়।
পরের দিনই নুরকে নিয়ে অয়ন ধানমন্ডি ব্যাক করে। নিজ জায়গায় ফিরে এসে অনেক আনন্দেই দিন কাটছিলো তার। রক্তিম চোখ জোড়াকেও সম্পূর্ণ ভুলে গিয়েছিল নুর। তবে সে কি জানতো আবার ফিরে আসছে রক্তিম চোখ তার জীবনে।
জানুয়ারির ২ তারিখ, আজকেই ক্লাস শুরু নুরের। সকাল সকাল উঠে ক্লাসে পৌছালো নুর। যেয়ে খবর পেলো আজকে হাফ ডে। তাই বন্ধুদের সাথে রেস্টুরেন্টে যাবে বলে ঠিক করলো। তবে সে কি জানতো আজ তার আবার দেখা মিলবে সেই চোখ জোড়ার।
রেস্টুরেন্টটির ভিউ খুবই সুন্দর। অনেক নেচারাল উপাদান দিয়ে সাজানো। বাশঁ এর সিটিং, কেবিনগুলোর মাঝে ছোট্ট একটা পন্ড তার মধ্যে আর্টিফিশিয়াল পদ্ম, শাপলা ও গোলাপের পাপড়ি ছড়ানো। এখনকার ইয়াং জেনারেশনের মতো নুর ও তার ফ্রেন্ডরা সেলফি তুলতে ব্যস্ত। অন্যদিকে একজন যে তাকে এক দৃষ্টিতে দেখছে সেদিকে তার কোনো ধ্যানই নেই। সেই ব্যক্তিটিই এবার তার দিকে এগিয়ে গেল এবং তার হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরালো।
সামনে তাকিয়ে নুর অবাক কারণ সামনে আর কেউ নয় তাকে অবাক করতে সক্ষম এমন একজনই দাড়াঁনো।
সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটি হলো অভ্র। অভ্র ইজহারের মামাতো বড় ভাই ও বেস্ট ফ্রেন্ড। ২ বছর আগেই পড়ার জন্য ইউএসএ গিয়েছিল। তবে আজ তো তার আসার কথা নয় কারণ মামানি বা ভাইয়া তাকে কিচ্ছু বলেনি। তাই সে অবাক হয়ে সব সময়ের মতো স্টেচ্যু হয়ে আছে। আর অভ্র সে তো সোজা জড়িয়ে ধরেছে এতদিন পর তার কলিজাকে দেখে। কিন্তু অভ্র কি জানে এই জড়িয়ে ধরা কেউ রক্ত চক্ষু নিয়ে দেখছে।
তা যাই হোক যখন নুরের সেন্স আছে তখন সে উরা ধুরা মাইর দিয়ে জড়িয়ে ধরে। তারপর একে অপরকে ছেড়ে নিজের গিফট চেয়ে বসে নুর। আর অভ্রও বোনের জন্য আনা ব্রেসলেট তাকে পরেয়ে দেয়। ইজহার তো খুশিতে আত্মহারা হয়ে আবার জড়িয়ে ধরে ভাইকে এবং সব ফ্রেন্ড কে পরিচয় করিয়ে দেয় অভ্র এর সাথে।
তারপর সবাই খাওয়া দাওয়া করতে বসলে ওয়েটার নুরের ড্রেসে জুস ফেলে দেয় তাই নুর ওয়াসরুমের দিকে যায়। ওয়াসরুমের গেট খুলতে নিলেই হঠাৎ কেউ হেচকা টান দিয়ে দেয়ালের সাথে জড়িয়ে নিল। ইজহার ভয়ে চোখ বন্ধ করে ৫ সেকেন্ড ফ্রিজ হয়ে গেল যখন চোখ খুললো তখন সামনে যাকে দেখলো ভয়ে চোখ বেড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম।
চলবে,,,