যোজন – বিয়োজন পর্ব:০৪
মিশু মনি
.
স্বর্ণের ডাকে ঘুম ভাঙল।
আমার এখনো ভালোভাবে ঘুম হয়নি।এত তাড়াতাড়ি ডেকে দেয়ায় মেজাজ গরম হয়ে গেলো। নতুন বর,কিছু বলাও যাবেনা।তাই নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম আমি একটু পরে উঠবো।
স্বর্ণ আরো বারকয়েক ডাকলো।আমি ঘুমের ঘোরে কি বলেছি না বলেছি জানিনা।কয়েক মুহুর্ত পরেই বুঝলাম গা ভেজা ভেজা লাগছে।
একি! সর্বনাশ! স্বর্ণ বালতি থেকে মগে মগে জল তুলছে আর বিছানায় ঢালছে! হায় ভগবান! এ কেমন বর! আমার এত সুন্দর গদির বিছানা ভিজাইয়া দিলো রে!!
এক লাফে উঠে পড়লাম। স্বর্ণের হাত থেকে মগ কেড়ে নিয়ে ওর মাথাতেই ঢেলে দিলাম।
ও দাত কেলিয়ে বলল,স্নান করিয়ে দিচ্ছো? দাও দাও..
– সুপ,এটা কেমন ভদ্রতা?
– এটা অভদ্রতা..
– চুপ করো ছেলে।এই বিছানা শুকাতে দিবো কিভাবে?
– দিবেনা..
– ঘুমাবো কিভাবে তাহলে?
– এর উপরেই..
– এটা তো ভেজা.. এই ঠাণ্ডায়?
– প্রবলেম কি? আমার বউয়ের ত অনেক টাকা।একটা নতুন জাজিম কিনে নিলেই হবে।
– চুপ! একদম চুপ..
– যদি চুপ না করি?
– খুব দুষ্টামি হচ্ছে না? কি দরকার ছিল এই সকাল সকাল বিছানায় জল ঢালার?
– যাতে রোজ রোজ তাড়াতাড়ি উঠে পড়ো তাই।যদি না উঠ, আবারো জল ঢালবো। তুমি ভয়ে ভয়ে রোজ তাড়াতাড়ি উঠে পড়বা।
– স্বর্ণ,না জেনে কিছু বলবা না।আমি ভোরে উঠে স্নান করে, পূজা সেরে তরপর আবার ঘুমিয়েছি।
– সত্যি নাকি?
– হুম,এই দেখো আমার ভেজা চুল..
বলেই চুল গুলো ছেড়ে দিলাম। স্বর্ণ থত খেয়ে বলল,ইস রে! তাইলে আমিই ত ভুল করে ফেলছি! সরি।
– তুমি সরি বললে না হয় আমার রাগ টা কমবে।কিন্তু বিছানা কে সরি বললে,সেকি শুকোবে?
স্বর্ণ জিহ্বায় কামড় দিয়ে বলল,সরি,সরি। সরি বউ,সরি বিছানা।
বলেই বিছানায় গিয়ে একাই ফোম টা তুলে বাইরে নিয়ে গেলো। আমি তো একদম হতভম্ব!
এক পাজির পা ঝাড়াকে বিয়ে করেছি।না জানি আরো কি কি আছে কপালে!
.
ব্রেকফাস্ট করার সময় স্বর্ণ একটা কথাও বলল না।
আমি বললাম,কাল থেকে ক্লাস করবা ঠিকমত। কিছু না বুঝলে আমাকে বলবা।
স্বর্ণ চেঁচিয়ে উঠল, নান্না।
– কি নান্না?
– আজ বিয়ে হতে না হতে কাল থেকে আবার ক্লাস? উহু,কয়েকদিন বিয়ে খাই,তারপর।
– বিয়ে খাবা মানে! কাল থেকে ক্লাস করবা ব্যস।আর আজ বিকেলে তোমাকে আমার ক্লিনিকের সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো। সব দায়িত্ব বুঝিয়ে দিবো।
– আজই? না একদম না।আগে কয়েকদিন রেস্ট নেই,তারপর।
– চুপ করো।কিসের রেস্ট? ডক্টর দের রেস্ট বলে কিছু থাকেনা।
– ডক্টর দের হাসব্যান্ডদের তো থাকে।আমি যেতে পারবো না।
– কি বল্লা আরেকবার বলোতো দেখি?
– আই এম আনএবল টু কানেক্ট।
– কিহ!
– সরি,
আমি দাত কিড়মিড় করে তাকালাম। সাথে সাথেই স্বর্ণ বলল,আজ বয়সে ছোট বলে! বউ আমাকে শাসন করে! সে আমাকে স্বামী হিসেবে মানেনা।হায় কপাল!
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললাম,আচ্ছা আচ্ছা।আজকে যেতে হবেনা।দুদিন রেস্ট নাও।আমি একাই যাবো আজ।
– তুমিও যাবেনা।
– আমি যাবো।
– পারবা না।আমি আটকাবো।
– হুহ,আটকাবো বললে ই হলো।একদম ই পারবা না।
– ওকে,চ্যালেঞ্জ।
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম।সামান্য কথায় চ্যালেঞ্জ! হুম,আমিও দেখবো কিভাবে আটকাও আমাকে!
.
পুরোটা দুপুর ভালো সময় কাটালাম। এরপর রেডি হয়ে নিলাম ক্লিনিকে যাবার জন্য।স্বর্ণ কিভাবে আটকায় তাই আমি দেখবো!
ওমা! পেট টা মোচড় দিয়ে উঠল। তলপেট খামচে ধরলো।ওরে বাবাহ! একি পেট ব্যাথা!
এক ছুটে বাথরুমে গেলাম।
কিন্তু এক ছুটেই শেষ হলোনা।বারবার বারবার যাচ্ছি,তবুও আরাম পাচ্ছিনা।ব্যাপার টা কি? এ কেমন দশা!
স্বর্ণ মিটমিট করে হাসছে আমার বাথরুমে ছোটা দেখে।হুম,বুঝেছি। তারমানে এটা স্বর্ণের কারসাজি। আমার পাতলা পায়খানার জন্য সেই দায়ী।
দুপুরের খাবারে নিশ্চয় ই কিছু মিশিয়েছিল।তাই তো বলি,এত যত্ন করে তুলে খাওয়াতে চাচ্ছে কেন! এতক্ষণে বুঝলাম।
ওরে বাবাগো!
.
৫/৬ বার টয়লেটে গিয়ে আমার অবস্থা কাহিল।বাসায় তো ওষুধ ও নেই।
স্বর্ণ বলল,কি হইছে মিশু বুড়ি? বারবার টয়লেটে যাচ্ছো যে? হাগা ধরেছে বুঝি?
– চুপ করো পাজি ছেলে।কি খাইয়েছো আমাকে?
– আমি তো বিরিয়ানি খাইয়েছি। আসলে হয়েছে কি,আমার হাতে খেতে পেরে তুমি একটু বেশিই খেয়ে ফেলেছো।তাই হজমে কুলায় নাই,বদহজম হয়ে গেছে গা।
স্বর্ণ হা হা করে হাসছে।আমি হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছি না।
বললাম,চ্যালেঞ্জ এ তুমিই জিতেছ।যাও।
– হুম জিতলাম।ওষুধ এনে দি?
– নো থ্যাংকস।
– তেল্কাম।
বলেই আবারো হাসি শুরু করলো। এত পাজি কেন ছেলেটা!
.
স্বর্ণ কাকে যেন ফোন করে ওষুধ আনতে বলল।
তারপর নিজে স্যালাইন এনে মুখে ধরলো।
আমি খেয়ে চুপচাপ বসে রইলাম।
স্বর্ণ বলল,এখন কেমন লাগছে?
– পেট টা গুড়গুড় করছে।
– ইহাহা ইহাহা… এক কাজ কর,বাথরুমে গিয়ে বসে থাকো। আমি বরং ল্যাপটপ এ ভালো ছবি ছেড়ে দিয়ে ওটা দিয়ে আসবো, তুমি হাগবে আর ছবি দেখবে।
– ছিঃ,
স্বর্ণ খিলখিল করে হাসছে।সেই হাসি হিচকির মত চলছে তো চলছেই।থামছে না।ধুর,এ কেমন ছেলেরে বিয়া করলাম!
বয়সে ছোট ছেলেকে বিয়ে করাটাই ভূল হয়ে গেছে মনে হচ্ছে।অবশ্য ভূল টা একদম খারাপ হয়নি।বরং ভালোই লাগছে।স্বর্ণ অনেক মিষ্টি একটা ছেলে! বেশ ভালোলাগে ওকে।
চলবে