যোজন -বিয়োজন পর্ব:০১

0
3300

যোজন -বিয়োজন পর্ব:০১
লেখা: মিশু মনি
.
আজ আমার বিয়ে হয়েছে।
ব্যাপার টা আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যে,বর আমার চেয়ে বয়সে কয়েক বছরের ছোট।কমপক্ষে ৭ বছর তো হবেই।
সে কিছুতেই বিয়েটা করতে রাজি হয়নি।অনেক টা বাধ্য হয়েই রাজি হলো।ছেলেটার মুখের ভঙ্গী দেখেই আমার হাসি পাচ্ছে!
আসলে ব্যাপার টা এরকম, আমি নিজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বিয়ে করবো বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। কিন্তু প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর দেখতে দেখতে অনেক বছর চলে গেলো কিন্তু বিয়ে করা হয়ে উঠেনি।আজ এত বছর পর শেষ বয়সে এসে বিয়ে করলাম তাও আমার চেয়ে বছর ছয়েক ছোট ছেলেকে।কিংবা তার চেয়েও বেশি হবে।
আমি ডাক্তার হয়েছি বহু বছর হলো।এখন আমার নিজেরি একটা ক্লিনিক আছে।এই ছেলেটার ডাক্তারি পড়ার খুব শখ কিন্তু টাকার জন্য পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে বসেছিল।আমার অবশ্য ওকে ভীষণ ভালো লাগে।কিউটের ডিব্বা টাইপ চেহারা একদম! তাই সুযোগ বুঝে কোপ মারলাম। সরাসরি তাকে প্রস্তাব দিলাম আমাকে বিয়ে করবে কিনা? সে প্রথম দিকে রাজি হয়নি।আমার শ্বশুর মশাই রাজি করিয়েছে তাকে।আমি তার পড়াশুনার দায়িত্ব নেয়ার পাশাপাশি তার ছোট ভাইকে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট এ ঢুকিয়ে দিলাম নগদ টাকা দিয়ে।বেচারা বিয়ে না করে যায় কই?
বাসর ঘরে বসে বসে অট্টহাসি দিচ্ছিলাম। আজ ওর মন টা বহুত খারাপ! পিচ্চির সাথে প্রথম কথা কি বলবো তাই ভেবে আমার দাত ফাটানো হাসি আসছে।সে কি আমাকে শ্রদ্ধা করবে,ভয় করবে? নাকি আমাকে রেখে পালাবে? অন্যথায় আমাকে খুন করে সব সম্পত্তি দখল করবে? হা হা হা… ও হো হো হো…
.
– কি ব্যাপার? এত হাসছো কেন তুমি!
আমি চমকে উঠে তাকালাম।আমার বর এসেছে! ভেবেছিলাম সে আমাকে আপনি করে বলবে।ধারণা ভূল,সে পরিষ্কার তুমি করে বলছে! এর আগে তার সাথে আমার যতবার কথা হয়েছে,সে আপনি ই বলেছিল।আজ তুমি! বাব্বাহ! ভালো তোহ!
.

– হাসছো কেন?
– তোমাকে খুব মিষ্টি দেখাচ্ছে!
– তাতে হাসির কি হলো? তোমাকে ও সুন্দর দেখাচ্ছে।কই আমিতো হাসছি না।
– আমাকে সুন্দর দেখাচ্ছে কিন্তু মিষ্টি দেখাচ্ছে না।তাই হাসছো না।
বলেই আবারো হাহা হিহি শুরু করলাম।
স্বর্ণ বলল,তুমি অনেক ক্ষণ ধরেই হাসছো।কিন্তু কেন?
– এই যে তুমি বুড়ি মহিলাকে বিয়া করে ফেল্লা।জাস্ট লাইক এ ইন্টেলিজেন্ট বয়।আমি আর কয়েক বছরের মধ্যেই মারা যাবো। দেন ইউ ক্যান ম্যারি এগেইন।এন্ড আই থিংক, ইউ হ্যাভ…. হা হা হা.. ও হো হো হো…..
স্বর্ণ হা করে তাকিয়ে আছে।হয়ত ভাবছে, এই মহিলার মাথায় প্রব্লেম আছে নাকি?
আমি বললাম, be easy my dear.. be easy..
– আই এ্যাম পারফেক্টলি ইজি।তুমি হাসো যতক্ষণ মন চায়।
কথাটা বলেই স্বর্ণ রুমের এক কোণায় গিয়ে দাঁড়াল। তারপর বলল,বাড়িটা সুন্দর! এর আগে পুরো বাড়ি ঘুরে দেখিনি।
– হুম।কিন্তু বেশি না,মাত্র ২ কোটি টাকার বাড়ি।
– নিজে ইনকাম করে করেছো তাইনা?
– হ্যা।আমার কষ্টের টাকায় গড়া বাড়ি এটা।
– বাড়ি গাড়ি,ক্লিনিক সবই করেছ।বিয়েটা করোনি কেন আগে?
– সবকিছু করে তারপর বিয়ে করবো বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। সবকিছু করতে গিয়ে বয়স অনেক হলো।কিন্তু অপূর্ণতা একটাই,বিয়ে করিনি।আজ পূর্ণ হলাম।
– আচ্ছা তোমার তো অনেক খ্যাতি এখন। তুমি যে কাউকে প্রপোজাল দিলে সে রাজি হতো।বাট করোনি কেন?
– তোমাকে বিয়ে করবো বলে।হা হা হা… ও হো হো হো..
– স্ট্রেঞ্জ!!
– হুম।
আমি স্বর্ণের পাশে এসে দাঁড়ালাম। তারপর বললাম,কফি খাবা?
– শিউর।নিয়ে আসো।
.

এরপর কফি নিয়ে বসলাম।স্বর্ণ আমার সামনে ই বসলো।আমার তো একদম ই হাসি থামছে না।
স্বর্ণ নিজেই বলল,ভেবেছিলাম তোমার সাথে কথা বলতেই পারবো না।কিন্তু বিয়েটা হওয়ার পর থেকেই কেন জানি মনে হচ্ছে আমরা পূর্ব পরিচিত।
– হুম।এটাই তো সাতপাকের শক্তি।
– আমি কি তোমাকে আপু ডাকবো?
– হা হা হা.. ও হো হো হো..
– হাসছ যে! বয়সে তুমি আমার ৮ বছর ৮ মাস ১৭ দিনের সিনিয়র।
– সিরিয়াসলি!
– ইয়াহ,
– কাউন্ট করা হয়ে গেছে? ইহাহা ইহাহা..
– দ্যাখো মিশু আপু।এভাবে হাসবে না।এটা ভদ্রলোকের বাড়ি।
– ও হা হা হা।আমি কি অভদ্রের মত হাসছি? আই এম লাফিং লাইক এন অভদ্র! ইহাহা ইহাহা…
কথাটা বলেই উঠে দাঁড়িয়ে কয়েক বার লাফালাম।
স্বর্ণ বলল,কি হচ্ছে এটা?
– আই এম লাফিং..
এবার স্বর্ণ ও হেসে উঠল।
আমি হাসতে হাসতে হাফিয়ে গিয়ে ধপ করে বসে পড়লাম।
– কেমন যেন লাগছে মিশু আপু..
– আন ইজি?
– না… জীবনে প্রথম বার বিয়ে তো তাই।
– বিয়ে কয়বার হয় সুপ?
– হা হা.. তুমি খুব ফানি।
– হুম।আমার পেশেন্ট রা আমার কথা শুনে হেসেই অর্ধেক সুস্থ হয়ে যায়।
– wow! you are great!
– thanks darling!

বলেই আবারো হেসে উঠলাম।
কফি খাওয়া শেষ করে কফির গ্লাস টা অব্দি খেয়ে ফেললাম।স্বর্ণ অবাক হয়ে বলল,মিশুপু! তুমি কি মানুষ!
– কেন পিচ্চি! চোখ বড় বড় করেছো কেন?
– কফির গ্লাস তুমি খেয়ে ফেল্লা! কিভাবে সম্ভব!
– ওহ,এই গ্লাস টা আসলে সামুদ্রিক শৈবাল দিয়ে তৈরী।এটা খাওয়া যায়।খেতেও সুস্বাদু আর শরীরের জন্য ও ভালো!
বলেই ইয়া বড় ঢেকুর তুললাম।
স্বর্ণ অবাক হয়েই বলল,তুমি! অদ্ভুত!
– কিটক্যাট খাবা?
– চকোলেট?
– হুম।এই নাও..
বলেই চকোলেট এগিয়ে দিলাম। বাসর রাত জমে উঠেছে। আমার পিচ্চি বর চকোলেট খাচ্ছে আর আমি হাসছি! কি অদ্ভুত সুন্দর বাসর আমাদের!!
.
স্বর্ণ বলল,শুনেছি তুমি খুব সংগ্রাম করে আজ এতদূর অব্দি পৌছেছ?
আমি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম। সত্যিই অনেক সংগ্রাম করেছি এ জীবনে! বলবো,সবই বলবো।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে