মোবাইলে সেভ করা নাম্বার গুলো ফেসবুকে সার্চ দিয়ে দেখতেছিলাম ?
কারো ফেসবুক আইডি পাওয়া যায় কিনা।
অনেকক্ষণ সার্চ করার পর ভাবলাম আমার নাম্বারটাই সার্চ দিয়ে দেখি কোনো আইডি আসে কিনা(আমার আইডি ইমেল দিয়ে খোলা ছিল)
এমা, ?
দেখি ফোনের স্ক্রিনে জলজ্যান্ত একটা আইডি ভেসে উঠলো,
“মৃত্তিকার অপ্সরী ”
দেখে আমি তো পুরাই হাম্বা বলদ হয়ে গেলাম।
আমার নাম্বার দিয়ে ফেসবুক আইডি,
অথচ আমি জানিনা।
যাইহোক, ভাবলাম আমিও একটু দেখি কে আমার নাম্বার ব্যবহার করে এই মহৎ কাজটা করছে।
একটা ফেক ইমেল একাউন্ট খুলে “নীল আকাশের রাজপুত্র” নাম এবং দক্ষিণ ভারতীয় অভিনেতা আল্লু অর্জুন এর একটা পিক দিয়ে একটা ফেক ফেসবুক একাউন্ট ওপেন করলাম।
এরপর সেই মৃত্তিকার অপ্সরী আইডিতে রেকুয়েষ্ট দিলাম।?
মনে হয় উনি ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করার জন্যই প্রস্তুতি নিয়ে ছিল।
আমার রিকুয়েস্ট দিতে দেরি হল,ওনার এক্সেপ্ট করতে দেরি হলনা।
এরপর আমি ওনাকে নক দিলাম
:হাই,কেমন আছেন?
:হ্যালো।
ভাল নাই গো।
বাড়ি থেকে শুধু বিয়ে দিতে চায়।
কিন্তু আমি Arrange marriage করতে চাইনা।
(শুধু হাই,কেমন আছেন এর রিপ্লে দিতে যে রচনা লেখা শুরু করছে না জানি পরে আবার মহাকাব্য লেখা শুরু করে কিনা সেই ভয় পেয়ে গেলাম।
এবার আমিও একটু মজা নেওয়া শুরু করলাম)
:আহারে,খুব কষ্ট না?
(আমি আবার আহসান হাবীব পেয়ারের ভক্ত ছিলাম)
:হ্যা গো।
যদি একটা প্রেমিক থাকতো তাহলে বাসায় তার কথা বলে লাভ ম্যারিজ করতে পারতাম।
:আমিও প্রেম করে বিয়ে করার জন্য একটা মেয়ে খুজতেছি কিন্তু পাচ্ছিই না।আমাদের দুজনের কত মিল তাইনা?
:হ্যা গো,আপনার মত কাউকে যদি পেতাম
(লাভ ইমো)?
:আমার মত পেতে হবে কেন,আমিই তো আছি(আমিও একটা কিসের ইমো দিলাম।
ইশ,আপনি তো হিরোর মত দেখতে।
আপনি কি আমাকে পাত্তা দিবেন?
(সে হয়তো আল্লু অর্জুন কে চেনেনা,
তাই পিপি এর পিক টা আমার মনে করছে)
-আপনিও তো অনেক সুন্দরী, আপনার কথা শুনলেই বোঝা যায়।
(না দেখেই বাতাস দিলাম)
:কি যে বলেন না(লজ্জার ইমো)
আমি মৃত্তিকার অতল গহবরে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে চাই।
এক টুকরো জায়গা হবে কি এই প্রেম ভিখারির জন্য?
(সোজা ইয়র্কার মারলাম)
আমিও চাই ওই নীল আকাশ থেকে একটা রাজপুত্র ধপাস করে পরে আমার মনের শুন্যস্থান টা পূর্ণ করে দিক।
(বোল্ড আউট হয়েছে)?
তাহলে আজ থেকে শুরু হোক আমাদের প্রেমের গাড়ির ধিকিধিকি যাত্রা
:তুমি সেই গাড়ির ড্রাইভার আমি একমাত্র যাত্রি।
লাভ ইউ জানুটা ?
লাভ ইউ টু বেবিটা?
এতক্ষণ বুকের উপর পাথর চেপে এই আপদের সাথে চ্যাট করলাম।
একদিনেই তার এতো অগ্রগতি দেখে ভাবতেছি দিন-দুনিয়া নষ্ট হয়ে গেছে।আমাদের আগের জেনারেশন কত ভাল ছিল,
আর এই কলিযুগে পোলাপান সব নষ্ট হয়ে গেছে।
এরপর প্রতিদিন টুকটাক ভালই কথা বলতাম।
মাঝেমাঝে রোমান্টিক কথাও বলতাম।দেখি সে রোমান্সের জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে।
কথা শুনে মনে হয় সে আমার জন্য লাইলী,শিরি,রজকিনী, পার্বতী সব হয়ে গেছে।
একদিন অফিসে বসের সাথে রাগারাগী করে বাসায় ফিরে দেখি বউ বাসায় নাই।
রাগে মাথা আগ্নেয়গিরির মত জ্বলতেছিল।
ফোনের ডাটা অন করতেই দেখি সেই আইডি থেকে ম্যাসেজ।
রাগের মাথায় ইচ্ছামত বকা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
সন্ধ্যায় আমার ওয়াইফের ফোনে ঘুম ভাংলো।
ফোন রিসিভ করতে ওইপাশ থেকে বউ হাউমাউ করে কেঁদে উঠে বললো,
মা অনেকগুলো ঘুমের ওষুধ খেয়েছে।আমি হাসপাতালে নিয়ে এসেছি তুমি তাড়াতাড়ি চলে আসো।
আমি লাফ দিয়ে উঠে ফ্রেস হয়ে হাসপাতালে চলে গেলাম।
গিয়ে দেখি ডাক্তার আমার শাশুড়ির গলায় নল ঢুকিয়ে পানি দিয়ে ওয়াশ করতেছে।
ওয়াশ করা শেষ হলে ডাক্তার বললো কয়েকদিন হাসপাতালে থাকতে হবে।আমার শশুর বেঁচে নেই,
ইন্টারমিডিয়েট পড়া একটা শালা আছে শুধু।
তাই যা ঝামেলা সব আমাকেই বইতে হবে।
আমি আমার শশুরবাড়ি গেলাম হাসপাতালে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র আনতে।
শাশুড়ির রুম থেকে জিনিষপত্র নিতে গিয়ে দেখি ওনার স্মার্টফোনটা বেডের উপর পরে আছে।
সেটা নিতে গিয়ে কৌতুহলবশত একটু চেক করতে চাইলাম।
ফোন চালু করতেই দেখি ম্যাসেঞ্জার ওপেন করা আর উপরে “নীল আকাশের রাজপুত্র” নামটা জ্বলজ্বল করছে।
এটা দেখে মনে হল একগ্লাস সুইসাইড খেয়ে আত্মহত্যা করি।?
আমার একমাত্র শাশুড়ি তার একমাত্র মেয়ে জামাইয়ের জন্য suicide attempt করেছে।
সত্যিই ঘোর কলিযুগ এসে গেছে,
যেখানে বুড়িরাও প্রেমের সাগরে হাবুডুবু খায়।??