#মেঘ রোদ্দুরের আলাপন
#পার্টঃ০৭
#Writer:মারশিয়া জাহান মেঘ
৩৯.
‘জেইন আজ আমরা রাতে একটা পার্টিতে যাবো।
‘কি পার্টি বাপি?
‘বার্থডে পার্টি।
‘ওকে বাপি।
আর জেইন শুনো…তোমার গ্রেনিও যাবে। তুমি স্বাদ আর তোমার গ্রেনিকে নিয়ে চলে যাইও আর আমি বরং অফিস থেকে ডিরেক্টলী চলে যাবো।
‘ওকে বাপি।
সেহের মেহেরিয়া রুম থেকে বেরুতেই জেইনের ফোনটা বেজে উঠলো। ফোনের স্কিনে ঝলমল করছে রিশ নামটি। জেইন ফোনটা না তুলে চুপচাপ কিছুক্ষণ বসে থাকে। অনেকটা ফোন বাজার পর সে ফোনটা হাতে নেয়।
‘কল ধরতে কষ্ট হয় আপনার তাইনা?
…….নিশ্চুপ…
কি হলো কথা বলছেন না কেনো? জানেন? আমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্তটা নিবো আজ।
জেইন অস্ফুটে বলে, ‘কি সিদ্ধান্ত?
রিশ কান্নাভেজা কন্ঠে বলে,
‘যা এতোদিন কারে অপেক্ষা প্রহর গুনতে গুনতে নেওয়া হয়নি।
‘রিশ..
“না না চিন্তা করবেন না। সি আই ডি অফিসার রিশ ওয়াহিদ এমন কোনো কিছু করবেনা যাতে করে পত্রিকায় বের হয় যে সি আইডি অফিসার রিশ ওয়াহিদ সুইসাইড করেছে।
রিশ এর কথা শুনে বুক কেঁপে উঠে জেইনের। জেইন নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
‘এইসবের মানে কি রিশ?
‘কিছুনা। কালকেই বুঝতে পারবেন। ভালো থাকবেন। বাই।
‘হ্যালো..হ্যালো রিশ…ফোনটা কান থেকে নামিয়ে দেখে রিশ ফোন কেটে দিয়েছে। জেইন চুলগুলো টেনে ধরে বলে,
‘তুমি কেনো বুঝতে চাইছোনা রিশ আমার শত্রুর অভাব নেই। অনেক বড় বড় অপরাধী প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করছে। সেইখানে তুমিও একজন অফিসার। তোমার শত্রু নেই কারণ তুমি সবেমাত্র পা রেখেছো দেশ রক্ষায়। কিন্তু আমি? আমাকেতো সবাই চিনে। কেউ যদি জানে তুমি আমার….ওফ কি করে বুঝাবো তোমায়।
৪০.
বাবাই আমি পার্টিতে যাবোনা। বেশ সিরিয়াস হয়ে কথাটা বললো রিশ। খাবার টেবিলে খেতে বসেছে সবাই। সবার দৃষ্টি স্থির রিশ এর দিকে। রিলজেম গলাটা ঝেঁড়ে বললো,
‘কেনো রিশ?
‘দাভাই আমার শরীরটা ভালোনা তাই।
‘রিশ তুমি যেতেই হবে। তুমি রিশ ওয়াহিদ। ডটার অফ শাহারিয়া ওয়াহিদ।
‘বাট বাবাই…
‘নো রিশ। আমি আর কিছুই শুনতে চায়না।
রিশ আর কথা না বাড়িয়ে আনমনে খাবার নাড়ছে। মমতা ওয়াহিদ মেয়ের দিকে এক পলক তাকিয়ে চলে গেলেন৷ টেবিলে বসে আছে মিসকাত, রিশ আর রিলজেম। রিলজেম মিসকাতকে চোখে চোখে কিছু একটা ইশারা করতেই মিসকাত বললো,
“রিশ প্লিজ মন খারাপ করিসনা। তোকে ছাড়া আমি ওখানে বড় অসহায়রে। আজকে যদি আমার পরিবার…
‘ওফ মিসকাত শুরু করে দিলিতো ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল। আচ্ছা যাবো হ্যাপি? এইটা বলেই রিশ হাত ধুয়ে চলে যায়। রিশ যেতেই হাতে হাত মেলায় রিলজেম এন্ড মিসকাত।
৪১.
জেইন গাড়ি থেকে নামতেই দেখলো গ্রিন কালার একটা লেহেঙ্গা পড়ে হেসে হেসে রিশ একটা ছেলের সাথে কথা বলছে। জেইন তার গ্রেনিকে নামিয়ে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছে আর রিশ এর দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে।
হঠাৎ রিশ এর চোখ যায় স্কিন কালার প্যান্ট এ্যাশ কালার ব্লেজার পরে হেসে হেসে কৌশল বিনিময় করা জেইন এর দিকে। জেইন তাকাতেই রিশ চোখ নামিয়ে পাশে থাকা ছেলেটার দিকে তাকালো। রিশ বুঝতে পারছে জেইন জেলাস ফিল করছে। কারণ তার চোখ দেখেই সে বুঝেছে। রিশ হঠাৎ ভাবলো, ‘একটু যেহেতু রেগেছে তো আরেকটু রাগালে কেমন হয়? রিশ এইটা ভাবতেই পাশে থাকা আহানের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো, ‘চলো আহান আমরা সারা বাড়ীটা হেঁটে হেঁটে দেখি।
আর এইদিকে….
” স্বাদ..
‘ইয়েস স্যার।
“তোমার ম্যাম এর সাথে ছেলেটি কে?
‘আহান স্যার। ম্যাম এর কাজিন।
‘ওহ আচ্ছা।
রিশ জেইনের দিকে তাকিয়ে কোনো রিয়াকশন না দেখে মনে মনে বললো, ‘জেইন আপনার এই ডন্ট কেয়ার ভাবটা আমার জেদকে তিন গুন বাড়িয়ে দিচ্ছে।
৪২.
‘জেইন বাসায় ফিরে ফোনে রিশ এর হাসি মাখা মুখটাই চেয়ে আছে৷ জেইন বাঁকা হেসে স্বাদকে কল দিলো।
আর এইদিকে রিশ রাগে ফুঁসে উঠছে বার বার। জেইন মানুষটা এমন কেনো? ওফ ঘুরে ফিরে এই পাথর মানুষটার প্রেমেই পড়তে হলো আমাকে?
‘মিসকাত…
‘হুম।
‘মন খারাপ?
‘না। জানেন রিলজেম? আজ না পৃথিবীকে বড্ড প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হচ্ছে যে সে কেনো? আমার মা-বাবা কে দেখালো না কেনো? এইটা বলেই মিসকাত নিজের অজান্তেই রিলজেমকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে শুরু করে।
৪৩.
‘ওমা আহান তোমার হাত পায়ের এই কি অবস্থা করেছো তুমি?
রিশ এর কথায় বাসার সবাই তাকায় আহানের দিকে। হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ তার। মমতা ওয়াহিদ তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে বললো, ‘এইখানে বস আহান। ইশ কি অবস্থা। এইসব কি করে হলো?
‘খালামনি আর বলোনা। হঠাৎ গাড়ি নিয়ে আসার পথে এট্যাক হয়।
‘ওমা সেকিরে? কিভাবে?
‘জানিনা গুন্ডাগুলো কিছু না বলেই আমাকে মারতে থাকলো। আহানের কথা শুনে রিলজেম হো হো করে হেসে দেয়।
৪৪.
” বাবাই আমি বিয়ে করতে চায়।
‘কিহ! রিশ এর কথা শুনে বসার ঘরের সবাই হা হয়ে আছে। যেনো এইটা কোনো ভূত দেখার বিষয়।
“কি হলো তোমরা সবাই এইভাবে কি দেখছো?
‘না মানে তুই সিরিয়াস রিশ?
‘হুম দাভাই।
‘রিশ আমি তোমার সিদ্ধান্তে খুশি হয়েছি। আমি চায় তুমি বিয়েটা করো।
‘থেংকস বাবাই। রিশ উঠে চলে যায়।
৪৫.
স্যার…ওহহহহ স্যার…স্বাদ এর চিৎকারে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে জেইন।
‘ক্ কও কি?
‘স্যার সর্বনাশ হয়ে গেছে।
জেইন চোখ ঢলতে ঢলতে বললো,
‘কি হয়েছে স্বাদ?
‘স্যার এই নিন।
” কি এটা।
‘খুলে দেখুন।
জেইন কার্ডটা খুলতেই চমকে উঠে। দড়ফড় করে লাফিয়ে বিছানা থেকে উঠে চোখে মুখে বিষ্ময় নিয়ে বলল, “রিশ এর বিয়ের কার্ড! জেইন স্বাদকে চলে যেতে বলে হাত ফোনটা নিয়ে রিশকে কল দেয়।
‘হুম বলুন
‘এইটাই তোমার সিদ্ধান্ত রিশ?
‘ধরে নিন তাই
“তুমি কি ভেবেছো জেইন তোমার এই সিদ্ধান্ত নেওয়াতে আমি জেলাসী হবো? নো ওয়ে
‘জানি কোনো ফিল হবেনা কারণ আপনিতো সঠিক ভালবাসার মর্যাদাই বুঝেন না মিস্টার জেইন মেহেরিয়া।
‘হুম ঠিক। আর আমি তোমার বিয়েতে অবশ্যই আসবো। আফটার অল তুমি আমাকে ইনভাইটেশন পাঠিয়েছো।
‘আপনি আসলে আমি সত্যি ভীষণ হ্যাপি হবো মিস্টার জেইন। এইটা বলেই রিশ কল কেটে দেয়। রিশের চোখে অশ্রু বেয়ে পরছে। চোখের পানিটুকু মুছে জেইনের প্রতি একরাশ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
৪৬.
ফেইসবুকে রিশ এর সাথে আহানকে অতি ঘনিষ্ঠভাবে দেখে জেইনের হাতের মুষ্টি আবদ্ধ হয়ে যায়। দাঁতে দাঁত চেপে টাওজারের এক পকেটে এক হাত গুজে হাতের ফোনটা হাতে নিয়ে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে ফেইসবুকে রিশ এর পোষ্ট করা ছবিটির দিকে। হাসিমাখা ফেইসে হলুদ টইটুম্বর।
চলবে…..