#মেঘ রোদ্দুরের আলাপন
#পার্টঃ০৪
#Writer:মারশিয়া জাহান মেঘ
২০.
গ্রেনি…গ্রেনি..কোথায় তুৃমি?
‘দাদুভাই তুমি এসেছো?
‘হুম গ্রেনি।
‘খেয়েছো?
‘হুম। তুমিও গিয়ে খেয়ে নাও যাও। আমি না আজ তোমার জন্য পায়েস করেছি।
‘আমার জন্য পায়েস! সত্যি?
‘হুম দাদুভাই। আসলে কি বলোতো হুইলচেয়ারে বসার পর থেকেতো তেমন কিছুই করতে পারিনা। অথচ সবাই আগে বলতো আমার হাতের রান্না নাকি চমৎকার।
“ওফ গ্রেনি রাগ তুলছো কিন্তু আমার।
‘আচ্ছা আচ্ছা আর বলবোনা। তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো। আর তোমার বাপি তোমাকে বলেছে আসলে একবার দেখা করতে যেতে।
‘ওকে গ্রেনি যাচ্ছি।
২১.
রিশ কোথায় যাচ্ছিস?
‘মমকে দেখতে।
‘সত্যি? মিসকাত এর এমন টান টান উত্তেজনার কথা শুনে রিশ অবাক হয়ে বললো, এই আমি যাবো বলে তুই এতো খুশি কেনো? রিশ আয়নার সামনে যেতে যেতে আবার বললো, ‘ শুন আমি একেবারের জন্য যাচ্ছিনা বুঝলি? আমি জাস্ট আমার মমকে একটু দেখেই চলে যাবো জব খুঁজতে।
‘রিশ তুই সত্যিই রেস্টুরেন্টের জবটা করতে চাসনা? না মানে আমি সকালেতো দেখলাম ম্যানেজার তোকে কল দিয়েছে।
‘তো? কল দিয়েছে ভালো কথা ওনি অনুতপ্ত না হয়ে আমাকে বলেছে রিশ তুমি আসবে নাকি অন্যকাউকে নিয়ে নিবো।
‘কি বলিস এইটা বলেছে?
‘হুম৷ আসলে কি বলতো মানুষের সামনে যতক্ষণ থাকবি ততক্ষণি মানুষ তোর প্রশংসায় বিভোর থাকবে। আর আড়ালে গেলে বদনামের অভাব নেই।
২২.
জেইন শত্রুপক্ষ একবার যদি টের পায় যে তুমি বাংলাদেশে ব্যাক করেছো ব্যাবসার জন্য নয় কোনো উদ্দেশ্যে তাহলে তারা তোমার ক্ষতি করার যথাসাধ্য চেষ্টা করবে।
‘বাপি তুমি আমাকে নিয়ে প্লিজ টেনশন করোনা।
‘জেইন তোমাকে নিয়েইতো আমার বড় ভয়। তোমার কিছু হলে তোমার গ্রেনি আর আমি শেষ হয়ে যাবো।
জেইন সেহের মেহেরিয়ারকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,
‘বাপি আমার কিছু হবেনা। আর তুমি জানোইতো আমি এমন একটা পেশায় যুক্ত যেইটাতে লাইফ রিস্ক নিতেই হয়।
‘জেইন ফর্মোলাটার কোনো ইনফরমেশন পেলে?
‘বাপি সময় হলে তোমাকে আমি সব বলবো। এখন আমি যায়। ফ্রেশ হয়ে টিম এর সাথে একটা মিটিংয়ে বসতে হবে।
‘ওকে মাই সান।
২৩.
মম…মম.. রিশ বাড়ীতে ঢুকতেই অল সার্ভেন্ট ভূত দেখার মতো চমকে উঠে।
‘আফা আপনে!
‘টুটি মম কোথায়? আমি ডাকছি শুনতে পাচ্ছেনা?
‘আফা আমি আম্মারে অক্ষনোই ডাইকা আনতাছি।
টুটি মমতা ওয়াহিদকে ডাকতে যেতেই রিশ আরেকটা সার্ভেন্টকে বললো, ‘আমার রুমে এক কাফ কফি পাঠিয়ে দাও।
“আইচ্ছা আফা।
২৪.
জেইন আর স্বাদ দরজা বন্ধ করে জেইনেই রুমের আলমারির পেছনের গুপ্ত ঘরে ঢুকে। রুমটার চারদিকে এসি এন্ড হাই কোয়ালিটির লাইট।
‘স্যার..এই রুমটাও আমাদের জন্য নিরাপদ নয়৷ যদি শত্রু পক্ষের কেউ জানতে পারে আমাদের হাউস এই আমাদের সব কর্মস্থল তাহলে পরিবারের উপর ব্যাপারটা রিস্ক হয়ে যায়।
‘স্বাদ ইফ ইউ নো? এই রুমটা এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে যে এই রুমে কেউ ডুকলে আমি সবার আগে জানতে পারবো।
”I know Sir। বাট, তখনতো আপনি একা থাকবেন ফাইট করাটা অতিরিক্ত হয়ে যাবে তখন।
‘Don’t Worry স্বাদ। আমি সব এরেন্জ করে রেখেছি। চলো মিটিংয়ে বসা যাক।
স্বাদ আর জেইন ল্যাপ্টপের সামনে বসে অপর পাশ থেকে কয়েকজন বললো,
‘হেলো স্যার। আমরা জানতে পেরেছি যে ওই মেয়েটার অজান্তেই তার কাছে সেই ফর্মোলাটা আছে।
‘আমি জানি। আর তার জন্যই ওর উপর ২৪ ঘন্টা নজর রাখছি৷ কারণ যদি এই ইনফরমেশন টা সত্যি হয়ে থাকে তাহলে রিশ ওয়াহিদ এর অনেক বড় বিপদ সামনে।
স্বাদ অবাক হয়ে বললো, ‘তার মানে?
‘হুম স্বাদ রিশ এর কাছে ওই ফর্মোলা।
‘ওহ মাই গড। স্যার বুঝতে পারছেন? ম্যাম এর কতে বড় বিপদ।
ল্যাপ্টপের অপরপাশ থেকে আবার একজন বললো,
” স্যার আমরা বাংলাদেশে আসতে চায়। আমাদের হ্যাড স্যার বলেছেন আপনার সাথে থাকতে এন্ড ওই মেয়েটিকে প্রটেক্ট করতে।
জেইন অনেক্ষ ভেবে বললো, ওকে তোমাদের মধ্যে ৫জনের একটা টিম এইখানে চলে এসো আর বাকি সবাই লন্ডনেই থাকো। আর হুম, ওইখানে যা যা ঘটবে তার অল ইনফরমেশন আমাকে দিবে।
জেইন ল্যাপ্টপ অফ করে স্বাদকে বললো,
‘স্বাদ তুমি ৫জনের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করো। স্বাবধান কেউ যেনো সন্দেহ না করে।
স্বাদ যেতেই জেইন দরজা অফ করে ফ্লোরে বসে পড়ে দুই হাত দিয়ে মাথার চুল টানতে টানতে। আর মৃদ চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো, ” কি চাই এই রিশ ওয়াহিদ? ওনার কাছে ফর্মোলা অথচ ওনি কান্ট্রিকে তুলে দিচ্ছেনা। মানুষ না জানুক ওনার আরেকটা পরিচয়৷ কিন্তু আমি! আমিতো জানি। কেনো ফর্মোলা দিচ্ছেনা? আমি কিছু বুঝতে পারছিনা। কি করা উচিৎ আমার। যেই উদ্দেশ্যে আমাকে বিডি তে পাঠিয়েছে স্যার। যেই উদ্দেশ্যে আমি প্রথমে রেস্টুরেন্টে গিয়েছি ওফ জাস্ট আর ভাবতে পারছিনা। এখন গোসল দেওয়া দরকার। গরমে আমার শরীর নিশ্বেষ হয়ে যাচ্ছে। ঠান্ডা মাথায় এই বিষয়টা নিয়ে ভাবতে হবে আমাকে।
২৫.
মম তুমি এইভাবে কাঁদলে কিন্তু আমি একটুও না বসে আবার চলে যাবো।
‘রিশ তুই আর যাসনা মা আমরা তোকে ছাড়া মরেই যাবো।
‘মম…
‘রিশ তুই প্লিজ আর যাসনা প্লিজ
‘দাভাই বিশ্বাস করো তোমাদের উপর আমার কোনো রাগ নেই৷ আমি পড়াশোনার জন্য আলাদা থাকছি৷ ট্রাস্ট মি।
‘পড়াশোনা বাসায় থেকেও করদ যায়” কারো গম্ভীর কন্ঠে এই কথাটা শুনে পিছনে তাকায় রিশ। দেখে তার বাবা দাঁড়িয়ে আছে। রিশ চুপসে যায়। তার বাবাইকে ভয় পাই কিনা!
‘বাবাই আমি নিজেকে প্রুভ করতে চায়
‘আমার উপর এখনো রেগে আছো তাইতো?
‘ না না বাবাই। তা কেনো হবে? আমি সত্যিই চায় নিজে কিছু করতে।
‘বাসায় থেকে করো।
‘বাবাই মিসকাত…
রিলজেম রিশ কে আর কিছু বলতে না দিয়ে বললো,
‘মিসকাত আমাদের বাড়ীতেই থাকবে। তোর সাথে। তবুও তুই এইখানে থাক।
রিশ কিছু একটা ভেবে বললো, ‘ওকে। মমতা ওয়াহিদ খুশিতে মেয়েকে জড়িয়ে ধরেন। রিলজেম মুচকি হেসে বেরিয়ে যায় মিসকাত কে আনতে।
২৬.
জেইন রেডি হচ্ছিলো অফিসে যাবে বলে হঠাৎ কল আসে। ফোনের স্কিনে ভাসমান হচ্ছে স্বাদের নাম। জেইন কলটা ধরতেই স্বাদ হাঁপিয়ে হাপিঁয়ে বলছে, ‘স্যার স্যার..ম্যাম ওয়াহিদ হাউস এ ব্যাক করেছেন। আচমকা এমন নিউস শুনে কিছুটা চমকে উঠলো জেইন। পরমুহূর্তেই ভাবলো হয়তো পরিবারের উপর রাগ করে আর থাকতে পারেনি।
“স্যার ম্যাম জব খুঁজছে।
‘তুমি কি করে জানলে স্বাদ? আর রেস্টুরেন্টের ম্যানেজারকে যে বলেছিলাম রিশ কে রিজেক্ট করতে করেছে?
‘ইয়েস স্যার। তাইতো নিউ জব খুঁজছে।
জেইন বাঁকা হেসে বললো, ”Start Your Drama স্বাদ।
২৭..
মিসকাত রুমে বসে পাকন খাচ্ছি বাসার কলিংবেল বাজতেই বিরক্ত নিয়ে রিমোর্ট টা রেখে দরজা খুলে রিলজেমকে দেখো ভীষম খায় সে। রিলজেম রিশ এর ভাই সে ভালো করেই জানে। ব্লু টি-শার্ট সাদা সফট জিন্স প্যান্ট হাতে ঘড়ি পড়েছে। দেখেই বুঝা যায় বাসার ড্রেস পরেই চলে এসেছে।
” বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখবে নাকি ভেতরে নিয়ে বসাবেন?
‘না আম..না মানে বাসায় কেউ নেই।
রিলজেম ব্যাপারটা বুঝতে পেরে মুচকি হেসে বললো, ‘কাপড় চোপড় গুছিয়ে নিন।
মিসকাত অবাক হয়ে বললো, ‘কেনো?
“রিশ আপনাকে নিয়ে যেতে বলেছে।
‘রিশ! রিশ কোথায়? ওহ আর এইখানে আসবেনা? এইটা বলেই ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতে থাকে মিসকাত। মিসকাত এর আচমকা এমন কান্ডে ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায় রিলজেম। রিলজেম একটু পর ফিক করে হেসে বলে ” একা যেনো না থাকতে হয় তাইতো রিশ আপনাকে নিতে পাঠিয়েছে। রিলজেমের কথা শুনে মিসকাত কান্না থেকে লাফিয়ে উঠে বলে সত্যি?
‘ইয়ে হুম হুম সত্যি।
চলবে….