#মেঘ রোদ্দুরের আলাপন
#পার্টঃ৩
#Writer:মারশিয়া জাহান মেঘ
১৩.
রিশ স্টেজে উঠতেই চোখ যায় রিলজেম এর দিকে। রিলজেমকে দেখে তার অস্বস্তি হচ্ছেনা কারণ সে বরাবরই ভার্সিটির সব অনুষ্ঠানের আয়োজনে পার্টিসিপেট করে। রিশ রিলজেমের পাশে জেইনকে দেখে অবাক হয়ে যায়। জেইনকে দেখেই রিশের সারা শরীর রাগে কটমট করতে থাকে। পরক্ষণেই ভাবলো ওনি আসলে আমার কি? হয়তো আমাদের সেইম বিজনেস-ম্যান ওনার বাবা। তাইতো দাভাইয়ের সাথে।
স্যার…
‘হুম স্বাদ বলো।
“স্যার দেখেছেন? রিশ ম্যাম কিভাবে আপনার দিকে রাগী লুক নিয়ে তাকিয়ে ছিলো।
জেইন একটু গম্ভীর মুখে বললো, ‘তাকাতে দাও স্বাদ ওনিতো জানেনা জেইন মেহেরিয়া কি।
” বৈশাখের বিকেল বেলায়
তোমায় নিয়ে বকুল তলায়
প্রেমের এক খান গান শুনাবো।
পাখিরা ডাকবে, মনে রং লাগবে
কিছু মিষ্টি মধুর স্বপ্ন সাজাবো…
প্রেমের একখান গান সাজাবো।
………………….
……………….
রিশ এর গান শুনে সারা ভার্সিটি করতালি দেয়। ভার্সিটিতে গান নিয়ে কিছু হলে সবার আগে রিশ এর নাম থাকে। রিশ গান গেয়ে চোখে পানি নিয়ে দৌঁড়ে স্টেজ থেকে চলে যায়।
রিশ..দাঁড়া…রিশ
“একদম আমার পেছনে আসবেনা দাভাই।
‘রিশ বোন আমার প্লিজ থাম।
রিলজেম গিয়ে রিশ এর হাত ধরে ফেলে৷
‘রিশ প্লিজ বাসায় চল। মম অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েছে তোর জন্য৷ প্লিজ চল।
‘দাভাই আমি নিজেকে প্রুভ করেই ওই বাসায় যাবো নয়তো না।
‘রিশ..বোন আমার। আমার উপর রাগ করে বাবাই আর মমকে কষ্ট দিসনা প্লিজ রিশ।
‘দাভাই বাবাইতো এইটাই চেয়ে ছিলো। আমি জাস্ট বলেছিলাম যে কোম্পানিতে জয়েন করতে চায়। আমিতো বলিনি যে আমাকে ফিউচার Owner’ করতে। আমাকে জয়েন করিয়ে একবার দেখতো কোম্পানির কোনো অবনতি হয় কিনা।
রিলজেম মনে মনে ভাবছে, ” রিশ তোকে আমি কিভাবে বুঝাবে যে বাবাই আমাদের দু-জনের যোগ্যতা দেখার জন্য আমার কথায় এমন করেছে।
“রিশ আচ্ছা তুই বাবাইয়ের কথা না হয় বাদ দে মমের কথা ভাব একটু প্লিজ বোন।
” দাভাই মায়ায় আটকে থাকলে জীবনে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। ভালো থেকো।
রিশ…রিশ প্লিজ যাসনা প্লিজ.
রিশ রিলজেমের কোনো কথা না শুনে দৌঁড়ে চলে যেতে লাগলো।
রিলজেম হাত মুঠো করে হাতটা ঝেড়ে রেগে বললো,
“সিট..আমার বোনটাকে যে আমি কি করি। রিশ কেনো বুজতে চাইছেনা যে মম সিক।
স্যার..দেখছেন দুই ভাই-বোনের স্নেহের মিল।
জেইন একটা আঙুল ঠোঁটে চেপে বললো,
‘স্বাদ আমি কিছুতেই বুঝতে পারছিনা যে, ওদের ভাইবোনের এতো মিল তাও রাগে-অভিমান! না মানে..ওদের দুজনকে কি দেখে বুঝা যায়? ওদের মাঝে Misunderstaning.
” স্যার জানিনা কি বলবো তবে মিস্টার ওয়াহিদের মেয়ে বেশ জেদী এবং তেজস্কর।
‘কিভাবে বুঝলে?
“স্যার দেখলেন না? অলওয়েজ কেমন গম্ভীর হয়ে থাকে।
” জেইন বিড়বিড় করে বললো “তেজস্বীনি”
“স্যার কিছু বললেন?
” আব.. আরে না কিছু বলিনি চলো…অফিসে একবার যেতে হবে।
জেইন চোখে সানগ্লাসটা পড়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো।
১৪.
‘রিশ..এই রিশ..রিশকে ডাকতে ডাকতে মিসকাত রুমের দরজা খুলে দেখলো রিশ হুড়মুড় খেয়ে উঠে চোখের পানি মুছে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
‘এই রিশ তুই কাঁদছিস কেনো?
‘ক ক্ কই কাঁদছি? আরে শুন না তোকে না খুঁজে পাচ্ছিলাম না তাই একা চলে এসেছি৷ রাগ করিসনা প্লিজ।
মিসকাত গিয়ে রিশ এর পাশে বসে। আদুরে সুরে বলে,
‘মিথ্যে বলার দরকার নেই রিশ। আমি জানি যে ভাইয়া ওইখানে ছিলো। আর ভাইয়ার জন্যই তুই ওভাবে চলে এসেছিস।
মিসকাত রিশ কে আর কোনো কথা বাড়ানোর সুযোগ না দিয়ে বললো,
‘চল গোসল দিয়ে রেডি হয়ে নে।
রিশ অবাক হয়ে বলে, ‘কেনো? দেখ মিসকাত আমি এখন জব খুঁজতে বের হবো।
মিসকাত ভেঙ্গু করে বললো, ‘দেখ মিসকাত আমি জব খুঁজতে বের হবো” তোকে কি না করছি জব করতে? এক কথা কতোবার বলবো যে কালকে জব খুঁজতে যাস।
‘মিস…রিশ সব কথা সম্পূর্ণ শেষ না করতেই মিসকাত বললো,
“দেখ রিশ আমি কিছু শুনতে চায়না। তুই আমার সাথে বের হচ্ছিস মানে হচ্ছিস।
‘কিন্তু কোথায় বলবিতো।
‘গেইলেই দেখতে পাবি।
১৫.
জেইন অফিসে ডুকতেই সব স্টাফ দাঁড়িয়ে গুড মর্নিং বলছে। জেইন হাত ঘুড়িটায় চোখ রেখে বললো, ‘১২ টা সমান! জেইন নিজের ক্যাবিনে ডুকে সামনে লাগানে বড় ফ্রেমের ছবিটা দেখে বললো, ‘মাম্মাম তোমাকে আমি দেখিনি তোমার আদরও পায়নি। তবে সবাই বলে তোমার কিছু গুন নাকি আজোও আমার মাঝে আছে। আর সবচেয়ে বড় গুন চাপা অভিমান। এইসব ভাবতেই জেইনের দুই চোখ ঝাপসা হতে থাকে।
” স্যার…
কারো ডাকে জেইনের ভাবনায় ছেদ ঘটে। জেইন নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
‘কাম।
‘স্যার আপনি আমায় ডেকেছেন?
‘হুম। স্বাদ ওই ফর্মোলা টার কি কোনো খুঁজ পেয়েছে আমাদের টিম?
“নো স্যার। বাট আই হোপ খুব শীঘ্রই পাওয়া যাবে।
‘ওয়েল এন্ড হুম..ভুলেও কেউ যেনো না জানে আমার আরেকটা পরিচয়। মাইন্ড ইট?
‘ইয়েস স্যার। আর হুম আমাকে আমাদের টিমের বিশ্বস্ত মানুষ একটা গোপন ইনফরমেশন দিয়েছে তোমাকে আমি পরে বলবো। তুমি ২৪ ঘন্টা রিশ ওয়াহিদের উপর নজর রাখবে গট ইট?
‘ওকে স্যার।
‘ওফ স্বাদ আমাকে স্যার বলে তুমি কি পাও বলোতো?
স্বাদ একটু মুচকি হেসে বললো,
‘স্যার আমি যতোই আপনার সেইম এইজের হয়না কেনো এইটাও সত্যি আমি আপনার টিম এন্ড বিজনেস এর একজন কর্মচারী।
‘স্বাদ তোমাকে আমি সেই চোখে দেখিনা৷ তুমি আমার ভাইয়ের মতো৷
‘জানি স্যার। তাও নিজেকে ছোট মনে হয় অনেক।
‘ওফ আচ্ছা আচ্ছা তুমি আমায় স্যার ই ডেকো। তাও ছোট মনে করোনা নিজেকে।
১৬.
তুই আমাকে পার্কে নিয়ে এসেছিস কেনো?
‘ওফ রিশ তুই না দিন দিন উচ্ছে ম্যাম হয়ে যাচ্ছিস।
‘হোয়াট? আমাকে দেখে তোর কোন দিক দিয়ে তিতা করলা মনে হয়?
‘এইতো মুখের কথা শুনে।
‘মিসকাত..
‘ওফ রাগ করছিস কেনো চল ফুচকা খায়।
‘ফুচকা!!!
‘হুম ফুচকা৷ এখনতো হ্যাপি হয়েছিস একটু আগেতো আসতেই চাইছিলিনা।
‘এই এই এখন চলনা এতো রাগ করছিস কেনো। চল চল ফুচকা খায়।
১৭.
হ্যালো স্যার ম্যাম ফুচকা খাচ্ছে। ঝালে ম্যামের গাল লাল হয়ে গেছে পুরো।
‘স্বাদ…
‘ইয়ে না মানে স্যার এমনি বলছিলাম আর কি।
‘ওই অবস্থাতেই একটা পিক তুলে দাওতো আমায়।
‘স্যার পিক!
‘হুম পিক Hurry Up.
স্বাদ ফোনটা কাটতেই অস্ফুটে বললো, “স্যারের যে মাঝে মাঝে কি হয় আল্লাহই জানে।
জেইনের ফোনে টুং করে আওয়াজ হতেই জেইন ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে মিষ্টি দেখতে একটা মেয়ে হাতে ফুচকা নিয়ে চোখ বুঝে খাচ্ছে। হয়তো ফুচকার টেস্টটা একটু বেশিই অসাধারণ ছিলো। তার পাশে আরেকটা মেয়ে। রিশকে হয়তো মেয়েটা কিছু বলছিলো৷ রিশ এর গাল ঝালে আসলেই লাল হয়ে গেছে। জেইন একটু মুচকি হেসে বললো,
‘আসলেই আপনি তেজস্বীনি রিশ। নয়তো কি আর নিজের এতো বড় একটা পরিচয় সিক্রেট রেখে সাধারণ ভাবে চলতে পারতে? তোমার পরিচয়তো শুধু ওয়াহিদ ইন্ডাস্ট্রির ফিউচার Owner’ নয় তোমার আরেকটা পরিচয়…এইটা বলেই বাঁকা হাসে জেইন।
১৮.
বাবাই আমি কোম্পানির ফিউচার Owner’ হতে চায়না তুমি রিশকে বাসায় ফিরিয়ে নিয়ে এসো।
‘তুমি ভেবে বলছো জেইন?
‘জ্বি মম আমি আপনাদেরকে ভেবেই বলছি।
‘হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত?
‘বাবাই আমার বোনের মনে আমার প্রতি যে ক্ষোভ দেখতে পাচ্ছি তাতে আমার আর ভালো লাগছেনা৷ আমি চায় রিশ ফিরে আসুক এই বাসায়। এইটা বলেই রিলজেম নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়।
‘কি ভাবছো শাহারিয়া?
‘মমতা রিলজেম ওর বোনের প্রতি ভালোবাসা থেকে এই কথা বলছে। কিন্তু আমিতো জানি রিলজেম মনে মনে কষ্ট পাবে। তাই আমিও চায় রিশ নিজেকে প্রমাণ করুক।
১৯.
হ্যালে..তোমরা Sure যে মেয়েটার কাছেই সেই ফর্মোলাটা আছে?
………..
‘ওকে। আর তোমাদেরকে সময় হলে আমি নিজেই বলবো বাংলাদেশে ব্যাক করতে।
……..
ওয়েল। বাই।
স্বাদ…
ইয়েস স্যার।
তোমার পক্ষে মিস রিশ কে অলওয়েজ ফলো করদ পসিবল নয় বিকজ, তোমাকে আমার অলওয়েজ লাগে৷ তুমি মিস রিশ কে ফলো করার জন্য অন্য কোনে বিশ্বস্ত মেম্বারকে এটেন্ড করো।
‘বাট স্যার কেনো? ম্যাম এর সাথে আমাদের টিমের ওই সিক্রেট ফর্মোলার কি কানেকশন?
‘স্বাদ..
‘সরি স্যার। আমি এখনি এটেন্ড করার এরেন্জ করছি।
চলবে….