#মেঘের বাড়ি☁
#পর্ব-১৬
#লেখনীতে_ফারহানা_আক্তার_ছবি
.
.
অন্যদিকে সোহেল মেঘের স্মৃতির তাড়নায় পারছে না থাকতে৷ এক ছুটে মেঘের কাছে যেতে মন চাইছে৷ কয়েকমাস ধরে সবুজ তার ভাইয়ের কষ্ট গুলো দেখে যেন নিজেও আর সহ্য করতে পারছে না তাই সির্ধান্ত নিলো সে তার ভাইকে আবারও বিয়ে করাবে৷
৩০.
সোহেলের গোপনে সবুজ মেয়ে খুঁজতে লাগলো৷ অন্যদিকে মনি মেঘের সাথে ফোনে নিয়মিত কথা বলতো খোঁজ নিতো আর কথায় কথায় সোহেলকে বিয়ে করানোর ভুত যে তার স্বামীর মাথায় চেপে বসেছে সেটাও মেঘকে জানায়৷ সবটা শুনে মেঘের বুকে প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে৷ ডিভোর্স হলেও তাকে সে মন থেকে স্বামী মানে কিন্তু তার কাপুরুষতা মেঘের মনে কষ্টের পাহাড় গড়ে তুলেছে৷ সে পাহাড় পেড়িয়ে মানুষটার কাছে পৌছানোর কোন উপায় নেই মেঘের৷
মনির সাথে কথা শেষ করে মেঘ দম মেরে বসে রইল৷ সুর্বনা পাশেই বসা ছিলো৷ সব কথা না শুনলেও যতটুকু শুনেছে সেটুকু শুনেই সুর্বনা সোহেলের বিয়ের বিষয়টা জানতে পারলো৷ সুবর্না তার ননদের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে বলতে লাগলো,” মেঘ কষ্ট পেও না৷ তোমাকে আজ আমি কিছু কথা বলছি মন দিয়ে শুনবে৷”
“জ্বী ভাবি৷”
” মেঘ স্বামী স্ত্রী সম্পর্ক খুব পবিত্র সম্পর্ক৷ তুমি চাইলেই সে সম্পর্ক নষ্ট করা যায় না৷ মেঘ তুমি কী তোমার অনাগত সন্তানের কথা একবারও ভেবে দেখেছো? বাচ্চাটা কাকে বাবা বলে ডাকবে মেঘ? আমি জানি তোমার ভাইয়েরা কখনো তোমাকে বা তোমার সন্তানের কোন কষ্ট পেতে দিবেনা৷ কিন্তু বাচ্চা টা কী বাবার আদর স্নেহ ভালোবাসা পাবে? পাবে না৷ আর একটা কথা বলবো মেঘ, আমি জানি তুমি আমার কথায় হয়তো কষ্ট পেতে পারো তবুও বলবো৷ তুমি শুরু থেকে সবটা আমাকে বলেছো সেখান থেকেই জানা৷ সোহেল তোমাকে বাড়ি যেতে বলেছিলো কিন্তু তুমি শুনোনি৷ ওবাড়িতে পড়ে ছিলে৷ কিন্তু এটা বলবো না তারা তোমার এর পরেও কোন ক্ষতি করতো না৷ করতো কিন্তু তখন সোহেল তোমার সাথে থাকতো৷ সোহেল নিজেই তার পরিবারের আসল চেহারাটা দেখতে পেতো৷ যাই হোক এক হাতে তালি বাজে না মেঘ৷ দোষ তোমারও আছে সোহেলের ও আছে৷ আর পরে রইল সোহেলের বাবা মা বোন জামাই! তারা তাদের শাস্তি পাচ্ছে মেঘ৷ তাদের জেল হয়েছে৷ এই মামলায় জামিন পাওয়া খুবই মুশকিল৷ আমার মনে হয় না তোমার পথে আর কোন কাঁটা রইল৷ তুমি ভাবো কী করবে?”
মেঘ তার পেটের উপর হাত দিয়ে ভাবতে লাগলো৷ মাত্র এই কয়েকমাসে পাড়া-প্রতিবেশী তার জীবনটা নরকের দরজায় পৌছে দেওয়ার জন্য কম চেষ্টা করে নি৷ কিন্তু ভাই ভাবি মা বোনের জন্য পারে নি কিন্তু তার সন্তান তাকেও তো এই কষ্ট সহ্য করতে হবে৷ কি ভাবে আমার সন্তান সহ্য করবে এই কষ্ট? মেঘ দোটানায় পড়ে গেল৷
সুবর্না মেঘের মাথায় হাত রেখে বললো,” মেঘ বেশি ভেবো না ইনশাআল্লাহ সব ঠিক হয়ে যাবে৷”
” ভাবি আমাদের তো ডিভোর্স …. ” বাকিটা বলার আগে সুবর্না বলে ওঠে ,” হয়নি৷ ডিভোর্স হয়নি তোমাদের৷ বেবিটা যতদিন না দুনিয়ায় আসছে ততোদিন তোমাদের ডিভোর্স হবে না৷ চিন্তা করো না আমি দেখছি কী করা যায়৷ আর তোমার জায়ের ফোন নাম্বার টা দেও৷”
মেঘ নাম্বার টা দিয়ে দিলো৷ সুবর্না নাম্বার নিয়ে চলে গেলো৷
এদিকে সোহেল আনমনা হয়ে বসে আছে নদীর পাড়ে৷ মেঘ আর তার অনাগত বাচ্চাটির জন্য কলিজাটা যেন পুড়ে যাচ্ছে৷ সবুজ তার ভাইকে খুঁজতে খুঁজতে নদীর পাড়ে এসে হাজির হয়৷ নিঃশব্দে সোহেলের পাশে এসে বসে সবুজ৷ সোহেল এখনো আনমনা হয়ে বসে আছে৷ সবুজ তার ভাইয়ের হাতে হাত রাখতে সোহেল চমকে ওঠে পাশে তাকিয়ে দেখে সবুজ বসে আছে৷
” ভাই কী হয়েছে তোমার?”
” আমার কিছু হয়নি সবুজ৷”
” ভাই আমি সবই বুঝি তোমার কষ্ট আমার সহ্য হচ্ছে না৷”
সোহেল কান্না গুলো অনেক কষ্ট করে আটকে রেখে সবুজ কে বলতে লাগলো,” ভাই মেঘকে এনে দে না৷ ওকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না৷ আমার প্রাপ্য শাস্তি তো আমি পেয়েছি ৷ এখনো কেন আমাকে শাস্তি পেতে হচ্ছে ভাই?”
না চাইতেও সোহেলের চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে৷ সবুজ বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে বলতে লাগলো ভাইজান চিন্তা করবেন না ভাবিকে আপনার কাছে ফিরিয়ে আনার জন্য আমাকে যা যা করতে হয় আমি তাই করবো৷ এখন বাসায় চলো সকাল থেকে কিচ্ছু খাওনি আর এখন সন্ধ্যা হতে চললো৷ সবুজ সোহেল দুজনে মিলে গরু গুলোকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে৷
মনি তার স্বামী ভাসুরকে রাতের খাবার দিয়ে বাচ্চাদের ঘুম পাড়াতে চলে যায়৷ সোহেল চুপচাপ খেয়ে নিজের রুমে গিয়ে মেঘের একটা শাড়ি বুকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে৷
সপ্তাহখানেক পর সেজভাই বরিশাল আসে৷ সুবর্না তার স্বামীকে মেঘের অবস্থা টা বুঝিয়ে বলে৷ সেজভাই সব শুনে বুঝে সুবর্নাকে বলে,” মেঘ যেটা চাইবে সেটাই হবে সুবর্না৷ মেঘ যদি চায় সোহেলের সাথে সংসার করবে তাহলে আমাদের কোন আপত্তি নেই৷”
সুর্বনা মুচকি হেসে তার স্বামীর কাঁধে মাথা রেখে বললো,” জানো আমি চাই মেঘের একটা সুন্দর সংসার হোক৷ বাড়ি হোক যেটা শুধু ‘মেঘের বাড়ি’ হবে৷ ”
” চিন্তা করো না বউ আমাদের মেঘ ভালো থাকবে ইনশাআল্লাহ ৷”
৩১.
আজকাল মেঘের হাটাচলা করতে বেশ কষ্ট হয়৷ আটমাসের পেট নিয়ে চলাচল করা খুবই কষ্ট কর৷ মেঘের পায়ের পাতায় পানি জমে ফুলে গেছে৷ আর আগের থেকে আরও গুলুমুলু হয়ে গেছে৷ আয়নায় নিজেকে দেখে মেঘের কেমন যেন লাগলো৷ আনমনে সোহেলের অনুপস্থিতি মেঘের হৃদয়টা যেন কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে৷ আজ হুট করে মেঘকে তার ভাবি খুব সুন্দর করে লাল পাড়ের সাদা শাড়ি আটপৌরে করে শাড়ি পড়িয়ে মেঘের সোনার গহনা গুলো পড়িয়ে দিলো৷ চোখে গাড় কাজল পড়িয়ে মুখে হালকা পাউডার লাগিয়ে দিলো৷ ঠোঁটে লাল লিপষ্টিক লাগিয়ে দিয়ে আয়নায় সামনে দাড় করিয়ে বলে দেখো তো ননদিনী কেমন লাগছে৷”
মেঘ আয়নায় নিজেকে দেখে অবাক চোখে তাকিয়ে থেকে বললো,” ভাবি এটা কি আমি?”
” জ্বী ননদিনী এটা আপনি৷ আজ আপনাকে এত মিষ্টি লাগছে আল্লাহ কারও যেন নজর না লাগে৷” বলেই চোখের কোণ থেকে কাজল নিয়ে মেঘের কানের লতিতে লাগিয়ে দিলো৷
সকাল থেকে মেঘকে রুম থেকে বের হতে দেয়নি৷ মেঘের মনের ভেতর কেমন যেন খুঁত খুঁত করছে৷ ভাই ভাবি কী করতে চাইছে? ঠিক বুঝতে পারছে না৷ পুরো বাড়ি খাবারের সু্ঘ্রানে মৌ মৌ করছে৷ দুপুর দুইটার দিকে মেঘকে ধরে তার বোন আর ভাবি মিলে রুম থেকে বের হতে মেঘ অবাক হয়৷ পুরো বাড়ি সাজানো হয়েছে ফুল আর বেলুন দিয়ে৷ মেঘকে ধরে চেয়ারে বসানোর পর নুর পেছন থেকে আবারও মেঘের চোখ চেপে ধরে বলে,” আপা তোর জন্য সারপ্রাইজ আছে৷ একদম ছটপট করিস না তাহলে কিন্তু তোর জন্য রান্না করা সব মজাদার খাবার আমি খেয়ে ফেলবো৷” ছোট বোনের কথা শুনে মেঘ হেসে ফেলে৷ আলিয়া দ্রুত ছোট রুমে গিয়ে সেই কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকে ইশারা করতে মানুষটি প্রচন্ড এক্সসাইটমেন্ট নিয়ে আলিয়ার সাথে সাথে যেতে লাগলো৷ কয়েকসেকেন্ড পর নুর মেঘের চোখ ছেড়ে দিয়ে বলে,” চোখ মেলে তাকা আপা৷” নুরের কথা শুনে মেঘ চোখ মেলে তাকাতে সামনে দাড়িয়ে থাকা মানুষটাকে দেখে মেঘ স্টাচু হয়ে বসে রইল৷ চোখের পলক ফেলতে যেন ভুলে গেছে মেঘ৷ সুবর্না ইশারায় তার তার স্বামীকে রুম থেকে বের হতে বলতে একে একে সবাই রুম থেকে বের হয়৷ সোহেল একপা একপা করে মেঘের পায়ের সামনে হাটু গেড়ে বসে মেঘের হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে…….
.
.
.
#চলবে………..