“মেঘলা আকাশ” পর্ব ৮.
মৃদুমন্দ বাতাস বইছে। এছাড়া চারিটা দিক নিস্তব্ধ। ভাইয়া এখনও ফ্রেশ হয়ে আসছে না। হয়তোবা নয়ন ভাইয়ের বিয়ের কথাটি মেনে নিতে সময় লাগছে, নয়তো মায়ার না যাওয়া অবধি আসবেই না। তাই মায়া গলা খাঁকার দিয়ে বলল, “আপনি জিজ্ঞেস করবেন না কার কথা বলছি?”
“আমি জানি।”
মায়া হতভম্ব হয়ে তাকালো। নয়ন ভাইয়ের মুখের কোনো ভাবান্তর ঘটেনি। হাবীব ভাই কাউকেই বলতে নিষেধ করেছে। বারবার বলেছে, সময় এলে আমি সবাইকে জানাবো। নয়ন ভাইই হয়তো মজা করছে।
“তাই নাকি? আপনি কীভাবে জানেন?”
নয়ন ভাই শুধু মুচকি হাসলো। মায়ার আর কোনো সন্দেহ রইল না।
“এজন্যই আপনিও বিয়ে করে ফেলছেন? নিজেকে শক্ত করে গড়ে তুলেছেন?”
“সময় মানুষকে সবকিছু শিখিয়ে দেয়। যে কখনও আমার ছিল না, তার কথা ভাবা আমি বন্ধ করে দিয়েছি। আর সামান্য কারণে নিজেকে থামিয়ে রাখা মূর্খের কাজ। আমি অন্তত এতটুকু মূর্খ নই।”
“আপনি জানলে ভাইয়ারও জানার কথা। কিন্তু ভাইয়া কেন জানে না?”
“রাজীব কথা বলার সময় এতটাই খামখেয়ালি হয়ে যায় যে, সে আশেপাশের আর কিছু লক্ষ করে না। কিন্তু আমি তো ওরকম নই।”
“আপনি কেমন এখনও বুঝতে পারছি না।”
“মায়া, আমি দেখতে চেয়েছিলাম, তুমি রাজীবকে কিছু জানাও কিনা। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে আমার এদিকটায় আসা হয়নি। কিন্তু এসে আমি অন্য একটা রূপই দেখছি। রাজীব কিছু জানে না। এই বাড়িটা নাকি আজকাল বড় নির্জীব থাকে। তুমি রাতে ঘন ঘন বই পড়। বান্ধবীদের সাথে ঝগড়া বাঁধিয়ে ফেলেছ। তুমি কি বুঝতে পারছ, একটা লোকের জন্য তুমি তোমার নিজের সাথে কতটা অন্যায় করছ? শুধু ওই লোকটির জন্যই তুমি সবাইকে তুচ্ছ করে এগিয়ে যেতে চাইছ। এমনটা তো হওয়া উচিত নয়। কারণ এই সমাজে আমরা অনেক মানুষের ভিড়ে টিকতে পারি না, আবার ওই মানুষ ছাড়াও টিকতে পারি না। তুমি একজনের জন্য দশজনকে দূর করে দিতে পারো না।”
মায়া দম বন্ধ করে এতক্ষণ বসে রয়েছিল।
“সবাই আপনা থেকেই দূর হয়েছে।”
“তোমার মাঝের পরিবর্তন তুমি টের পাবে না। পাবে অন্য কেউ। তুমি ছাড়া সবাই দেখতে পাচ্ছে, তুমি কেমন হয়ে গিয়েছ। মায়া, তুমি অনেক কিছুই জানো না। আমাকে যদি তুমি সামান্য পরিমাণ গুরুত্ব কখনও দিয়ে থাক, তবে একটা কথা রাখবে, সবদিকটা বিবেচনা করে এগিয়ে যাবে। আমি চাই, তুমি সুখী হও।”
হঠাৎ নয়ন ভাই আর কোনো কথা বলল না। মায়া নিচের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। নয়ন ভাই উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “হয়তো তোমার চাচা আসছে। তিনি আমাদের দেখে ফেলবেন।”
তিনি চলে গেলেন। কয়েক মুহূর্ত কেটে যাওয়ার পর তার চাচা সত্যিই বাইরে এলো। কানে তাঁর ফোন ধরে রেখেছেন। কিন্তু মায়া জানে, ফোনে কারও সাথে কথা বলছেন না। মায়া তাঁকে পাশ কাটিয়ে ভেতরে চলে এলো।
মায়া ভাবছে। ভাবছে বিগত সময়ের কথা। অমনিই ফোন বেজে উঠে।
“মায়া, কী হয়েছে? এতবার ফোন দেই, রিসিভ করো না কেন?”
“আমার রুমে তেমন একটা ছিলাম না তাই।”
“তুমি ঠিক আছ তো? তোমার গলার স্বর এমন কেন শোনাচ্ছে?”
“জানি না।”
“তোমার বোধ হয়ে মন খারাপ। আচ্ছা, কালকে আমার ওখানে একটু যেও। আমারও ভালো লাগবে, তোমারও।”
“কেন? আপনি এখন কোথায়?”
“মা একটু অসুস্থ ছিল। তাই বাসায় এসেছি।”
“উনি এখন কেমন আছেন?”
“ভালো। সকালে একটু জ্বর এসেছিল। এরপর থেকে মোটামুটি ঠিক আছে। এখন জ্বর নেই।”
“আপনি ওখানেই থাকুন। আমার জন্য এখানে আসার প্রয়োজন নেই।”
“সমস্যা নেই মায়া।”
মায়া কিছু বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু অন্য এক শব্দ শোনে থেমে যায়।
“আপু, তুমি এখানে?” ওপাশ থেকে হাবীব ভাইয়ের কণ্ঠ শোনে বুঝা যাচ্ছে, তিনি কতটা বিস্মিত।
“তোমার হেডফোনটা একটু দেবে? ওইদিন তোমার ভাইয়ার সাথে রাগারাগি করে কেটে ফেলেছিলাম।”
“নাও নাও।”
আবারও নীরবতা।
“আফরা আপা ছিল?”
“হু।”
“উনি বিবাহিতা?”
“হু। জানতে না?”
“কখনও জানাননি। আমি ভেবেছি, এমনিই বিয়েসাদি করেননি।”
“ওর স্বামীর সাথে প্রায়ই ঝগড়া হয়। এজন্যই রাগ করে আমার সাথে তোমার ভাইয়ের বিয়েতে গিয়েছিল। রাগের চোটে সেসময় সে শত্রুকেও জড়িয়ে ধরতে পারে। আসলে সে মানুষের সাথে নিজেকে সহজে মানিয়ে নিতে পারে না।”
“ওহ্। উনি কি আমার সম্বন্ধে জানেন?”
“নাহ্। সুযোগ খুঁজছি জানানোর। কখনও রেগে গেলে জানাবো। এখনও অবধি ভালো মুডে আছে। তাছাড়া ওকে জানানো মানে বাবাকেই জানানো।”
মায়া ভাবে, পৃথিবীতে কত কত অদ্ভুত মানুষই না আছে। সেরাত সে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ে। অথচ এক রাজ্য চিন্তাভাবনা তাকে ভর করার কথা। কিন্তু তার পরিবর্তে সে খুব সহজে ঘুমিয়ে পড়েছে। কারণ সে কোন পথে চলবে তার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে।
পরদিন মায়া হাবীব ভাইয়ের বাসায় এলো। বাসায় বলে এসেছে, কলেজে না গিয়ে জেরিনের বাসায় যাবে। তাই সে নির্দ্বিধায় বসে রইল। দুপুর অবধি তাদের টুকটাক কথা হলো। মায়া কোনো কথায় সায় দিয়েছে, আর কোনো কথা কেবল শুনে থেকেছে। হাবীব ভাই বেশ বুঝতে পারছে, মায়ার মন এখনও ঠিক হয়নি।
মায়া এক পর্যায়ে বলল, “আমি কিছু বলতে চাই হাবীব ভাই।”
“কী বলবে বলো।”
মায়া মুখ খোলার আগে দরজায় কেউ টোকা দেয়।
(চলবে…)
লেখা: ফারিয়া কাউছার
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share