Sunday, October 5, 2025







“মেঘলা আকাশ”পর্ব ৯.

“মেঘলা আকাশ”পর্ব ৯.

হাবীব ভাই বলল, “ওহহো, আমি তাঁকে তোমার কথা বলতে ভুলেই গেছি।”
মায়া জিজ্ঞেস করার আগেই হাবীব ভাই দরজা খোলে। এই বাড়ির লোকটি এসেছে খাবার নিয়ে। এই বয়স্ক লোকটি একাই কীভাবে সংসার করে? মায়া তাঁকে আগে দেখেনি।
“জামাল ভাই, খাবার আরেকজনের মতো হবে? আমি বলতে ভুলে গিয়েছিলাম।”
“হবে হবে। বলেছি না, আমি সবসময় একজনের রান্না রেঁধে এসেছি। তাই অতিরিক্ত রাঁধতে হলে আমি পরিমাণ না বুঝে বেশিই রেঁধে ফেলি? ওইদিন দুপুরে এই মেহমানই খাবার খেয়েছেন নাকি?”
হাবীব ভাই সঙ্কোচ করে মাথা নাড়ে।
“এর প্রয়োজন ছিল না। আমার এখানে খাওয়ার ইচ্ছে ছিল না।”
“কেন?”
“এমনি।”
“কী বলতে চেয়েছিলে যেন?”
“পরে বলব।”
মায়া খেতে খেতে তাকে বলল, “আচ্ছা হাবীব ভাই, ভাইয়ার সাথে কী হয়েছিল যে, ভাইয়া লেখাপড়া ছেড়ে দেয়? আপনি তো উনার বন্ধু। নিশ্চয় জানবেন।”
মায়া মুখ তোলে তাকিয়ে দেখে হাবীব ভাই খুব ধীরে ধীরে ভাত খাচ্ছে, যেন কোনোকিছু নিয়ে চিন্তা করছে। ঠিক এভাবে নয়ন ভাইও চিন্তা করেছিল যখন এই প্রশ্নটা সে তাকে করে। কিন্তু নয়ন ভাই ফটাফট বলে দেয়, ‘কথাটি বলা যাবে না। রাজীব চায় না, এই বিষয়ে কোনোদিকে কথা হোক।’
হাবীব ভাই চুপচাপ খাবার খেয়ে উঠে গেল। তোয়ালেতে হাত মুছল, প্লেটগুলো রেখে এলো। এরপর একটা চিঠি ভাঁজ করে মায়ার হাতে দিয়ে বলল, “আমি কথাটি মুখে বলতে পারব না। তাই লিখে দিয়েছি। কখনও আমার বলার চান্সেস একদম না থাকলে কাগজটা খুলে লেখাটা পড়বে।”
এরপর প্রতিবারের ন্যায় বিছানার একপাশে বসলো মায়ার সাথে নিত্যদিনের কথা বলার জন্য, যেন মায়া কোনো প্রশ্নই করেনি, তিনি কোনোকিছু বলেননি। মায়া এখনও জানালার পাশের চেয়ারে বসে আছে। সেও আর কিছু জিজ্ঞেস করছে না। তার কেন যেন ভালো লাগছে না। ভালো লাগা উচিত, নিজেকেই সে বলল, সবকিছু এখন থেকে ঠিক হতে চলেছে।
“হাবীব ভাই,” সে জানালা দিয়ে বাইরের অন্য বিল্ডিংগুলোর দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে বলল, “আমার অনেক কিছু বলার আছে। এখানে একটু আসবেন?”
“এই জায়গাটা তোমার কাছাকাছিই আছে। দূরত্ব যত কমাবো, ততই বিপদ বাড়বে।”

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share

তার হঠাৎ এমন কথায় মায়া প্রশ্ন করলো না। হয়তোবা তার ভাবভঙ্গি দেখে হাবীব ভাই অনেককিছুই বুঝে ফেলছে।
“আমি অনেক ভেবেছি সবকিছু নিয়ে। অনেককিছু শুনেছি। আমি কাল পর্যন্ত ভাবছিলাম, কারও মত না থাকলে আমরা নিজেরাই বিয়ে করে নেওয়ার প্রস্তাব আপনাকে দেবো। আপনি কিছু মনে করবেন না। কিন্তু আপনাকে ভালোবাসাটা আমার জন্য সাময়িক। আমি এমন জিনিসকে আঁকড়ে ধরতে চাইছি, যা নিয়ে কারও সায় নেই। ভাইয়ার চোখে আমি দেখেছি, কীভাবে তিনি আমার জন্য নয়ন ভাইকে বেশি উপযুক্ত মনে করেন। কখনও আপনাকে নিয়ে একটুও ভেবেছেন কিনা সন্দেহ। আপনিও হয়তো সেই ভয় করেন। নইলে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যে তাকে জানাতে পারতেন। তাছাড়া আপনার বাবা, আপা এরা কেউ রাজি হবেন কিনা জানা নেই। আমি ভেবে দেখেছি, কেবল আপনিই আমার জন্য যথেষ্ট নন। আমার বাবা আছে। তিনি অনেক দুর্বল। তিনি আরও মুষড়ে পড়বেন। ভাইয়াকে..” মায়া চোখের পানি সংবরণ করলো, “অন্য কেউ পাশে না থাকলেও ভাইয়া ছিল। তিনি মনে করেন, আমার মতো বিশ্বাসী কাউকে সহজে পাওয়া যায় না। তাকে না জানিয়ে কাউকে ভালোবেসেছি, তা লুকানো পর্যন্তই আমার ক্ষমতা। মায়েরও কোনো দোষ নেই। তিনি কখনও আমাকে উঁচু গলায় ডাক পর্যন্ত দেননি। সবার ছোট হওয়ায় আমি কত ভালবাসাই না পেয়েছি, আমার কোনো অধিকার নেই ওদের কষ্ট দেওয়ার।
আমি কালকে অনুভব করেছি, আপনি আমার মনে পুরোপুরি জায়গা করে নিতে পারেননি। এজন্যই হয়তো এসব কথা বলতে আমার দ্বিধা হচ্ছে না। আমি আবিষ্কার করেছি, আমি ছোট ছোট সুখ নিয়েই তৃপ্ত থাকতে পারি। আপনি বড় মানুষ। আপনাকে হয়তো সাময়িকের জন্যই আমার ভালো লেগেছে..”
মায়া কথা শেষ না করতেই ধুম করে রুমের দরজাটা খুলে যাওয়ায় দু’জনই চমকিত হয়ে তাকালো। আফরা আপা এসেছে। মায়া অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে।
“বাবা, আমি বলেছিলাম না আপনার ছেলে এসব করছে?”
মায়ার বুক প্রবল জোরে উঠানামা করতে শুরু করলো। আফরা আপার গলার স্বর কালকে যতটা নরম মনে হয়েছে, আজকে তা একদমই নেই। ঠিক যেন তাদের বাসায় বেড়াতে যাওয়া আফরা আপাটা তাদের সামনে দাঁড়িয়েছে। মায়ার ভয় হচ্ছে, আফরা আপা আর তার স্বামীর মাঝে বুঝি আবার রাগারাগি হয়েছে।
এক বয়স্ক লোক হাবীব ভাইয়ের দিকে তাকালেন। লোকটিকে মায়ার কেন যেন চেনা মনে হচ্ছে।
“এদিকে এসো।”
“বাবা..”
“কোনো কথা না। তুমি এক্ষুণি এখান থেকে বেরিয়ে যাবে।”
হাবীব ভাই তবু বলল, “আপা, তুমি কাল শুনেছিলে আমি কার সাথে কথা বলছিলাম। তুমি আমাকে একটা কথাও জিজ্ঞেস করোনি। আর এখন হঠাৎ আমার সাথে এমন কেন করলে?”
“আমি তোমার সাথে কিছু করিনি। এই মেয়েটিকেই আমার পছন্দ নয়। ও ওর বান্ধবীদের সাথে দীঘির পাড়ে যাওয়ার সময় আমি শুনেছি কীভাবে ওরা আমাকে রাতের বেলায় ভয় দেখিয়েছিল। আমি চাই না, এমন মেয়ে আমাদের পরিবারে আসুক।”
“আর তুমি যে ওর বাসায় থেকেছিলে?”
লোকটি আফরা আপার দিকে তাকালেন। পরক্ষণে হাবীব ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, “তুমি জানো, ওর স্বভাব কেমন। রাগ উঠলে ও কেমনটা করে। তুমি কেন আমাকে না জানিয়ে ওই ছেলেটার বিয়েতে গিয়েছিলে? ছোটলোকদের সাথে তোমার এতো খাতির কিসের? চলো আমার সাথে। আমি এখানে আর কোনো কথা বলতে চাই না।”
হাবীব ভাই একবারও পেছনে না তাকিয়ে বাবার সাথে চলে গেল। তারা যাওয়ার পরই মায়া এতক্ষণে দেখতে পেল, আরেকজন আছে এখানে। রাজীব ভাইয়া ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে। তাকে দেখে মায়ার পায়ের নিচের মাটিই যেন সরে গেল।
“ভাইয়া, আমি এসব শেষ করে…”
“আজ যদি আফরা ফোন করে এই বাড়ির লোকটার কাছে খবর না পেত, আমাকেও লজ্জা না দিত, তবে জানতামই না তুই আর হাবীব এখানে কী করছিস। যাইহোক, বাসায় চল।” বলেই ঘুরে হাঁটা শুরু করলো।
সারাটা পথ গাড়িতে ভাইয়া একটুও কথা বলল না। মায়ার হৃদপিন্ড এতই উঠানামা করছে যে, এই যেন গলায় এসে আটকে যাবে। সে তো ভেবেছে, আজ সব ঠিক হয়ে যাবে। ভাইয়া তার সম্বন্ধে ভুল ধারণা রাখছে এটাও মুখ ফোটে বলতে পারছে না। সে নিজেই বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। যে লোকটির জন্য এতকিছু হয়েছে, সে কিনা তার সর্বনাশ করে যাওয়ার সময় একটিবার ফিরে তাকায়নি।
মায়ার জন্য কী অপেক্ষা করছে সে জানে। আফরার মতো মেয়ে তুলকালাম করতেই পারে। মায়া যেতেই সবাইকে তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখাটাও স্বাভাবিক। তার সবই স্বাভাবিক মনে হচ্ছে। চাচা একের পর এক কথা বলছেন, তার কানে কিছুই আসছে না।
“… এই জন্য বারবার বলি, মেয়েদের শাসনে রাখা উচিত। এখন কী হয়েছে দেখলে তো? মাথার উপর তুলে রাখারই ফল পেয়েছ। এখন এই মেয়েটিকে কীভাবে বিয়ে দেবে তাই ভাবো। কে এই মেয়েটির অবৈধ বাচ্চার বাপ হতে চাইবে খুঁজে দেখ।
মেয়েটা পেয়েছে কাকে? হারুন সাহেবের ছেলেকে। আর কেউ ছিল না। যার হাতে তোমার ভাই মার খেয়েছে, তার ছেলেকেই কেমনে..”
মায়া জানত না। কিছুই জানত না। হাবীব ভাই তাকে এসবকিছু না জানিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। মায়া কেবল দেখছে, কীভাবে তার বাবা অসহায় ভঙ্গিতে তার দিকে চেয়ে আছে, মা কীভাবে ভেতরে লজ্জায় চুপ হয়ে বসে আছেন, আর ভাইয়া কীভাবে তখনের মতোই মুখ নিচু করে এককোণে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সবই তার দোষ। এরপর থেকে তার এই বাড়িতে কাঠপুতুলের মতো বাস করতে হচ্ছে, তা তারই দোষে। সবাই যে তাকে পর ভাবতে শুরু করেছে তাতে তারই দোষ। সে তার মনের আকাশে উড়ন্ত সুখী একটা পাখি ছিল। আজ সেই আকাশ মেঘলা হওয়ার দায়ী সে নিজেই।
.
তিনদিন পর। রাতের এই অন্ধকারে মায়া ছাদের রেলিঙ ধরে দাঁড়িয়ে আছে। হাতে ভাঁজ করা কাগজটার দিকে সে তাকালো। আজ সকালেই সে লেখাটি পড়েছে। তার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না। সে আবারও কাঁপা হাতে ভাঁজ খোলে তাকালো। লেখা আছে, ‘আই অ্যাম সরি। আমার সাহস ছিল না বলেই লুকিয়ে রেখেছিলাম। আমার সাহস ছিল না বলেই বিয়ের প্রতিশ্রুতিও দিইনি। কারণ আমাদের কোনো ফিউচার ছিল না। এদিকে আমি বারবার নিজেকে তোমার কাছ থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করে গিয়েছি। কিন্তু পারিনি। হতে পারে, হঠাৎ করেই আমাদের আলাদা করে দেওয়া হয়েছে। এজন্য আগে থেকে লেখাটি লিখে রেখেছি। আমি ভীতু বলে বলার সাহস ছিল না। আর হ্যাঁ, আমি সত্যিই তোমার যোগ্য নই। কারণ আমি তোমাকে কখনও আমার জীবনের কোনো প্রিয়জনের জায়গায় ঠাঁই দিইনি, তোমাকে সাময়িক প্রেমিকা হিসেবেই দেখেছি।’
আরেকবার পড়তেই প্রবল ঘৃণায় সে কাগজটি ছিঁড়ে ছিঁড়ে ফেলে দেয়। হাবীব ভাই জানত, মায়া তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। সে সাময়িকের জন্য তাকে ভালোবাসেনি। তবু কীভাবে এমন করতে পেরেছে?
মায়া ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। সে যদি ঘুণাক্ষরেও বুঝত, হাবীব ভাই শাহেদ ভাইয়ের মতোই, তবে সে দ্বিতীয় ভুলটা করত না। ইশ, সময়টা কোনো কাঁচা কলসির মতো হতে পারত না, যাকে যেমন ইচ্ছা তেমনই আকার দেওয়া যাবে?
“মায়া?”
আচমকা এই ডাকে মায়া সম্বিৎ ফিরে পায়। তাকে এভাবে ডাকার জন্য কে আর অবশিষ্ট আছে? সে পেছনে তাকিয়ে লোকটিকে দেখতে পায়, তার খুব কাছেই দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ লোকটিকে এতই আপন মনে হলো যে, সে অজান্তেই কবে তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করেছে, তারই হুঁশ নেই।
নয়ন ভাই তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
“সব ঠিক হয়ে যাবে।”
“কিচ্ছু ঠিক হবে না। উনি আমাকে ইউজ করেছেন। মানুষ এতটা স্বার্থপর কী করে হয়?”
“যা হওয়ার তা হয়েছে। সবই ভুলে যাও।”
মায়ার হঠাৎ মনে পড়ল, লোকটি তো আর আগের মতো নেই। তিনি এখন অন্য কারও হতে চলেছে। সে একটু সরে আসে।
“উনি ভোলার মতো কাজ করেননি। সবকিছু ছারখার করে দিয়েছেন। আমাকে যেভাবে সবার সামনে নোংরা করেছেন, তা ভোলার মতো না।”
“আমার তো অমন মনে হচ্ছে না। আমি রাজীবদের সাথে কথা বলেছি। ওরা মনে করে না তুমি নোংরা। ওরা তোমাকে চেনে।”
“জানি। কিন্তু ভাইয়ার কাছে লুকানোটাও কম বড় অপরাধ না। চাচা তো আমাকে..”
“রিয়েলি? তুমি ওঁর কথা কবে থেকে চিন্তা করতে শুরু করেছো?”
“করা উচিত। উনি আমাকে তো খোঁচা দিয়েই থাকেন। তিনি ভাইয়াদের অতীতেরও খোঁচা দিতে পারতেন। আমি অন্তত জানতে পারতাম।”
“তিনি ততটাও খারাপ নন, এজন্য এতো জঘন্য আচরণ করেননি। তিনি বকাই দিতে জানেন। শুনো, আমরা কেউই চাইনি আফরা নামের অধ্যায়টা ওর জীবনে আসুক।”
মায়া মুখ তোলে চোখ মুছে তাকায়।
“তুমি এখনও জানো না?”
“আমার সাথে কেউ কথাই বলছে না। জানানোর কথা দূরেই থাক।”
তার মোছা গালটা আবারও ভিজে গেল।
“শান্ত হও। আসলে হাবীব যেভাবে ওর বন্ধুর বোনকে পছন্দ করত, সেভাবে রাজীব আফরাকেও করত। হারুন সাহেব জানার পর তার পক্ষের লোক রাজীবকে মারধর করে শাসিয়ে গিয়েছে তাদের মেয়ের দিকে চোখ তোলে না তাকানোর জন্য। রাজীবের চারিদিকে বদনাম ছড়িয়ে পড়ায় সে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছে, চাকরী পায়নি। তুমি তখন অবুঝ ছিলে। ওর উপর সেসময় খুব ঝড় গিয়েছে। ও মনে করে, ও নিজেও অন্যায় করেছে। এজন্য বিয়ের সময় তাদের আসতে দিয়ে তার ক্ষতি পূরণ করতে চেয়েছিল। কিন্তু.. আমি এজন্যই চেয়েছিলাম তোমরা যাতে প্র‍্যাংক না করো।”
মায়া দীর্ঘক্ষণ চুপ করে রইল।
“শুনো, টেনশন করো না। কথাগুলো পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। বাইরের বলতে আমিই জানি। তোমার বিয়েসাদিতে কোনো সমস্যা হবে না।”
মায়া হাসতে চেয়েও হাসি পেল না। নয়ন ভাই এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে।
“আপনি কবে এসেছেন? কীভাবে জেনেছেন?”
“আমি তো বিয়ের কথাবার্তা নিয়েই এসেছিলাম। কিন্তু এখানে এসে দেখি এই কাণ্ড।”
নয়ন ভাই তার দিকে চেয়ে রয়েছে। মায়া মন থেকে বলল, “নয়ন ভাই, আমি চাই আপনি খুব সুখী হন। আপনার জীবনসঙ্গিনী যাতে আপনাকে অনেক ভালোবাসে। কারণ আপনার মতো লোক ভাগ্যবতীদের কপালেই জোটে। এখন নিচে যান। খাওয়ার সময় হয়েছে।”
নয়ন ভাই তবু তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
“রাত এগারোটা বাজছে। আমাকে মা খাইয়ে দিয়েছে। তুমিই খাওনি।”
“এগারোটা?”
“হু। খেয়ে নাও প্লিজ।”
“দেখি।”
মায়ার এখানে আর কেন যেন থাকতে ইচ্ছে হচ্ছে না। বুকটা ক্রমশ ফাটছে। সে চলে যেতে উদ্যত হয়, অমনিই নয়ন ভাই পেছন থেকে তার হাত ধরে ফেলে।
“তুমিও রাজীবের মতোই হয়েছ। নিজেকে ছোট করে দেখা বন্ধ করো। আমি সবই জানি। তোমার চোখই আমাকে জানিয়ে দিচ্ছে। নিজের সাথে মিথ্যা বলো না। এখনও সময় আছে।”
“কিসের সময়? কিসের মিথ্যা?”
“তুমি যাকে খুঁজছিলে সে সবসময় তোমার খুব কাছে ছিল। তুমি নিজেকে মিথ্যা বলায় চিনতে পাওনি। আমাকেই তুমি ভালোবাসো। বাকিরা মোহ ছিল মায়া। আমি যতবার বিয়ের কথা বলেছি, ততবার তুমি কীভাবে ফুঁসছিলে আমি দেখেছি। আর কী দেখিয়ে দিবো বলো? একটু আগের জড়িয়ে ধরাটা?”
হুট করেই তাকে নয়ন ভাই জড়িয়ে ধরলো। মায়ার চোখে পানি টলমল করছে বিধায় সে মুখটা অন্যদিকে ফিরিয়ে রাখল।
“আপনি এভাবে আমাকে ক্ষমা করতে পারেন না। আমি অন্যায় করেছি।”
“অন্যায় তো আমিও করেছি মিথ্যা বলে। তুমি তা বুঝতেও পারোনি।”
“কী?”
“যাকে আমি ভালোবাসতাম, তাকে ভুলে থাকতে পারছি না। বলো, আমাকে বিয়ে করবে? তুমি একবার হ্যাঁ বলে দিলে কারও সাধ্য নেই আমাদের মাঝখানে আসার।”
মায়া হঠাৎই যেন বোবা হয়ে গিয়েছে। তার হাত-পা যেন কাঁপছে। সে নিজেকে স্থির রাখতে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। সে জানতই না এটার জন্য তার মন কতটা তৃষিত হয়ে উঠেছিল। সে জানে না, নয়ন ভাই তার মনের আকাশে সূর্য হতে পারবে কিনা। তবে জানে, কোনো এক রূপে তিনি এসে মায়ার মাথার উপর ছাতা ধরবে আচমকা বৃষ্টিতে না ভেজার জন্য।
(সমাপ্ত)
লেখা: ফারিয়া কাউছার

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

2 মন্তব্য

  1. Golpopoka.com a aga ank golpo chilo jamn mohorana, amr vindeshi tara, anuvaba tumi, tomai thik chaiyanebo, tomate amate ai rkm ank golpo chilo oi gulo nai kano? Pls deban oi sob golpogulo pls pls….. pls reply deban

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ