Monday, October 6, 2025







“মেঘনাদ” পর্ব ২..

“মেঘনাদ” পর্ব ২…

আমি আর কলেজে যাব না। আমি কারও প্রশ্নের সম্মুখীন হতে চাই না। সেই প্রশ্নের কীভাবে জবাব দিই? হঠাৎ এক আতঙ্কজড়িত কণ্ঠ শুনতে পেলাম, “ধ্রুব, তোমাকে এতো চিন্তিত কেন দেখাচ্ছে? কোনো অঘটন ঘটিয়ে ফেলনি তো?”
“আমার লাগছে একটি মেয়ে আমাকে সন্দেহ করেছে।”
বেশ কিছুক্ষণ পর বহুদূর থেকে আওয়াজটা এলো, “কে? কোথাকার মেয়ে? সে কাউকে কিছু বলছে না তো?”
“জানি না। আমার খুব ভয় করছে। আমি আর কলেজে যাব না।”
“এমনটা হয় নাকি? বরঞ্চ মেয়েটির ওপর তোমার নজর রাখা উচিত।”
“আমার দ্বারা তা হয় না। মেয়েটিকে অনেক ধূর্ত বলে মনে হয়। তার চিন্তাও আমার পড়ার অনুকূলে নয়।”
“ওহহো। আমি বলব, কলেজে যাওয়া বন্ধ করবে না। দুয়েকদিন ডিসাইড করো কীভাবে ওই মেয়েটিকে হ্যান্ডেল করা যায়।”
আমি মায়ের আইডিয়াই উপযুক্ত বলে মনে করলাম। পরদিন আমি কলেজে গেলাম না। বিকালে সাঈদ ফোন করে বলল, বিজ্ঞানের স্টুডেন্টের ওপর নবীন বরণ অনুষ্ঠানের অর্ধেক দায়িত্ব এসে পড়েছে। আমি টপ স্টুডেন্টের মাঝে একজন হওয়ায় আমারও এটেন্ড করতে হবে। আমি সায় দিলাম, কারণ অনুষ্ঠান হবে পরশু। এর আগে কেবল চাঁদা তোলার কাজ আছে। তা সাঈদেরা দেখে নেবে। চাঁদা তোলার দিন কলেজে না গিয়ে সাঈদকে আমার টাকাটা দিয়ে রাখতে বলে রাখলাম। অবশেষে অনুষ্ঠানের দিনটা হাজির হলো। আমি অনেক অনেক ভেবেছি। ভেবেছি, মেয়েটি যাই জিজ্ঞেস করবে, তার সত্য উত্তর দেবো। কিন্তু সরাসরি নয়। মেয়েটি অতিরিক্ত কিছু জানতে চাইলে বলব, সে যাই আমার কাছে চাইবে, আমি তা দেবো। কেবল আমার সত্যটা যেন সে জানার চেষ্টা না করে। সবকিছু আবারও একবার ভেবে নিয়ে দশটার দিকে কলেজে পৌঁছলাম। আমার মুখ থেকে ভয়ের ছাপটা মুছে ফেললাম। কেন নয়? আমি এই মানুষের কাছ থেকে পঞ্চাশ গুন ক্ষমতাধারী। আমি চাইলেই একটি মানুষকে ধূলিসাৎ করে দিতে পারব হাতের ক্ষমতা ব্যবহার করে। একটি মানুষের হাত ধরে আমি তার স্মৃতি লণ্ডভণ্ড করে দিতে পারব। পারব একটি মানুষের মস্তিষ্কে আতঙ্ক সৃষ্টি করে তাকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। কিন্তু এই ক্ষমতার আমি অপব্যবহার করি না। কারণ আমি আকাশের লোক, এসব খারাপ কাজ আমার চরিত্রে নেই।
যাইহোক, আমি মেয়েটিকে একদমই ভয় পেলাম না। তার আশেপাশেই নির্দ্বিধায় কাজ করতে লাগলাম। আশ্চর্য সে আমার দিকে তেমন তাকাচ্ছে না। অদ্ভুত! এই মেয়েটি সবসময় তাই প্রতিক্রিয়া দেয়, যা আমি ভেবে রাখি না। তার তো আমাকে নিয়ে গণ্ডগোল পাকানোর কথা! কারণ একটি ছেলে বিনা কারণে তার হাত ধরেছে।
আমি অবশেষে কথা বললাম, তাও অন্য এক বিষয়ে। ‘সি প্রোগ্রামিং-এ প্রোগ্রেস কেমন হচ্ছে?’
সে কিছুটা চমকালো। সে হয়তো ভেবেছিল, আমি আর কথাই বলব না। ‘ওই টপিকের দুর্বলতার কথা তুমি কী করে জানো?’
‘সেদিন আবির স্যারকে তুমি বলতে শুনেছিলাম।’
‘ওহ্। ওটার জন্য টিউটর রাখা হয়েছে।’
‘তুমি…এরপরের দিনের অদ্ভুত কাণ্ডটা নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করবে না? আমি তো খারাপ ছেলেও হতে পারি। তাই না?’
‘খারাপ ছেলেরা হয়তো ওভাবে হিপনোসিস করে না। সরাসরি একশন নেয়।’
সে ওটাকে হিপনোসিস ভেবেছে? আর সে আমায় ভালো ছেলে বলেছে? ‘হিপনোসিস?’
‘না, কিছু না।’
‘বলো, সমস্যা নেই।’
‘সম্মোহন.. তুমি কি আমার চোখ দেখে ওটাই করতে চেয়েছিলে?’
‘না তো।’
‘তাহলে ওটা কী ছিল? টেলিপ্যাথি?’
কিছুটাই, ‘ওই ধরনেরই।’
আমরা নিচু স্বরে কথা বলছিলাম। কে কে এটা লক্ষ করেছে তাতে পাত্তা দিলাম না।

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share

‘তা কিসের মাধ্যমে করো?’
‘চোখের মাধ্যমে। চোখের মাধ্যমে না হলে কারও অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে। আর যদি সিরিয়াস কোনো কথা জানতে চাই, তবে সরাসরি হাত ধরি।’
‘আর কীভাবে এসব করো?’
‘চোখের মাধ্যমটা তোমাকে বুঝিয়ে বলতে পারব না। এটা আমার কাছে সবচেয়ে সহজ। কীভাবে করে ফেলি নিজেই বুঝতে পারি না। অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমটার জন্য অভ্যাস লাগে। এটা স্বভাবত তখনই করি, যখন কোনো মানুষের মস্তিষ্ক দুর্বল, সাধারণত যারা রক্তকে ভয় পায়, যাদের মস্তিষ্ক চোখ দেখে পড়তে পারি না। আর শেষেরটা হাতের মাধ্যমে, আগের দুটো অকৃতকার্য থাকলে। হাতের মাধ্যমে আমি দুটো মস্তিষ্কে শিরার মাধ্যমে কমিউনিকেট করি। এটা দক্ষতার ব্যাপার।’ সত্যিই, একটা সাধারণ মানুষের জন্য দক্ষতার ব্যাপার। চাইলে সে এগুলো কিছুটা আয়ত্তে আনতে পারবে।
‘তুমি বললে, সিরিয়াস কিছু জানার জন্যই শেষেরটা করো। আমার কাছে কী জানতে চেয়েছিলে?’
মেইন পয়েন্টে সে এলো। ‘আমার সম্বন্ধে কী ভাবো।’
‘ওটা তো আমি সরাসরিই বলতে পারি।’
অবাক হলাম, ‘তাই?’ তাহলে এতগুলো গণ্ডগোল কেন করেছি? হাত ধরা, অদৃশ্য হওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি।
‘হ্যাঁ, আমি ভাবছিলাম, তোমার রূপটা খুবই অমানবিক। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তোমার কাজ বেমানান লাগে। ধরো, তোমার ভাই আর তোমার মাঝের তফাৎ।’
কিছুটা নিশ্চিন্ত হলাম। মেয়েটি অন্তত এভারেজ টাইপ নয়। খুব সুন্দরভাবে কথা বলতে জানে। আর কী ভাবছে সরাসরি তা বলেছে। ‘আমার রূপে আমার কোনো হাত নেই। মা-বাবার কাছ থেকেই পেয়েছি। ভাইয়া… ও আসলে আমার ভাই নয়। মানে আমি ওর পরিবারের পালিত সন্তান।’
‘ওহ্। আর সেদিন তুমি বারান্দায় দাঁড়িয়েছিলে। আমি যখন গেইট পর্যন্ত এসে পেছনে ফিরি, তুমি ততক্ষণে উধাও হয়ে গিয়েছিলে। মাত্র কয়েক সেকেন্ডে কীভাবে সম্ভব?’
অসম্ভব একটা মেয়ে! সে এতকিছু কখন নোটিস করে? সত্যের ওপর ঢাকনা দিয়ে সত্য বললাম, ‘আমি তোমার পাশ দিয়েই গিয়েছি। তুমি লক্ষ করোনি, আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলাম না। তোমার পিছু পিছু গেইট পর্যন্ত গেলাম। তুমি যখন কলেজের দিকে ফিরলে, তখন ততক্ষণে আমি তোমার পাশ কাটিয়ে গেইট অতিক্রম করে ফেলেছিলাম।’
সে হয়তো ভাবছে, তখিন কোথাও আমার অস্তিত্ব সে পায়নি। সে ঠোঁট কামড়াল। তাকে কিউট দেখাচ্ছে। কিন্তু সে চিন্তিত হয়েই এমনটা করছে। আমি মিটিমিটি হাসলাম।
‘কী হয়েছে?’
‘তোমার অনেক কনফিউশন এখনও দূর হয়নি। তাই না?’ সে কিছু বলল না। ‘দেখ, একটা চুক্তি করা যায় না? তুমি কী চাও তা বলো, আমি দেওয়ার চেষ্টা করব। পরিবর্তে তুমি আমাকে নিয়ে বিশ্লেষণ করা বন্ধ করে দাও। মানে এই ধরনের ইনভেস্টিগেশন বন্ধ করে দেবে। আমি মিথ্যা বলতে পারি না তাই বলছি। বলো, তুমি কী চাও? এর পরিবর্তে তোমায় কী দেব?’
সে তৎক্ষণাৎ কথা বলল, যেন আমি যেভাবে প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলাম, সেও তদ্রূপ নিয়ে এসেছে। বলল; ‘আমি তোমার বন্ধু হতে চাই। কেবল বন্ধু।’
আমি নির্বাক রইলাম। মেয়েটি যেকোনো কিছু চাইতে পারত। কিন্তু ফ্রেন্ডশিপই কেন? আমি এতক্ষণে খেয়াল করলাম, তার চোখের নিচের দিকটা আংশিক কালো। সে বোধ হয় খুব বিষণ্ণ থাকে। মেয়েটিকে সঙ্গ দিলে খারাপ হবে না। অন্তত তার ওপর নজর রাখা যাবে। এবং.. মেয়েটির কাঠিন্যের ব্যাপারেও জানা যাবে। আমি মৃদু হাসলাম।
সে স্বাভাবিক থাকায়, আমিও অস্বাভাবিক পরিস্থিতিটাকে টানার চেষ্টা করলাম না। আলিয়া আশ্চর্য রকমের ভালো। আমাদের দু’জনের মাঝের ব্যাপার আমাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখছে। আমরা বাকিটা সময় সাধারণ সহপাঠীর ন্যায় কাটিয়ে দিলাম। এরপর আমি নিজ বাসায় ফিরে এলাম। মাকে জানালাম আলিয়ার সাথে ফ্রেন্ডশিপ করার কথা। মা সুদূর দূর থেকে বললেন, “এতদিন ফ্রেন্ড বানাসনি দেখে ভালো লেগেছিল। এখন খারাপ লাগছে। কিন্তু কিছু করার নেই। মেয়েটির ওপর নজর রাখার এই এক পদ্ধতি।”
নিজের মনেই জবাব দিলাম, “মা, মেয়েটি অন্যান্য মেয়েদের মতো নয়। আমি বিশ্বাস করি, আমার অস্বাভাবিকতার কথা তার বোন আসিয়াকে পর্যন্ত জানায়নি। আর সর্বোপরি সে অন্যান্য মেয়ের ন্যায় আমার ওপর অধিক ক্রাশ খায়নি।”
মা হাসল। তাঁর ঝকঝকে দাঁতগুলো আমি দেখতে পেলাম।
“বাবা কেমন আছেন?”
“ভালো।”
এরপর আমার প্রতিদিনের ন্যায় বোরিং সময় কাটতে লাগল। প্রায় সব বইয়ের পড়াই আমার মস্তিষ্কে আবদ্ধ আছে। একেক সময় একেকজনের হাত ধরে তার জ্ঞান নিজের মস্তিষ্কে স্থানান্তর করেছি। তাই পড়ার প্রয়োজনও হয় না। রাতটা আরেকটু ঘন হতে শুরু করলে জঙ্গলের দিকে পা বাড়ালাম। আমি সাধারণত এই সময় আসি না। কিন্তু আজ.. আজ কি আলিয়ার বাসায় যাব? ওদের সামনের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় বাড়িটা দেখেছি। আশপাশ যাস্ট ঘুরে দেখব, আলিয়াকে দেখা যায় কিনা। আমি জানি, আমি পাগলামো করছি। কিন্তু আমি অনেক উদ্বিগ্ন, মেয়েটি কী করছে তা দেখার জন্য। আমি তার বাসার চারিদিকটা ঘুরে কেবল একটাই রডবিহীন বলকনি দেখলাম। এমন ডিজাইন সম্ভবত কোনো বাতাস পিয়ারা মানুষের জন্যই তৈরি। দেখা যাক না, ফাঁকফোকর পেলে তা গলিয়ে ভেতরে ঢুকে যাব। আমি যথারীতিতে অদৃশ্য হয়ে বেলকনিটায় গেলাম। দুর্ভাগ্যবশত ওখানের দরজা বন্ধ। কিন্তু সৌভাগ্যবশত, এটাই আলিয়ার রুমের বেলকনি। রাত এগারোটা পঞ্চাশ। আলিয়া না ঘুমিয়ে বসে ঝিমুচ্ছে। একটু একটু পর ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। কিন্তু এমন সময় ঘুমে ঢলে পড়ল। সে ঘুমিয়ে পড়ল। তাকে.. কি সুন্দরই না দেখাচ্ছে! অথচ আমি এরচেয়ে অনেক সুন্দর মেয়ে অর্থাৎ পরীদের দেখেছি। কিন্তু কেন যেন আলিয়াকেই সেরা মনে হলো। হয়তো আমি এই প্রথম কোনো মেয়েকে গুরুত্ব দেওয়ায় এমনটা ভাবছি। এরপর কেন যেন মনে হলো, বেলকনিতে ইতোমধ্যে খারাপ কিছু একটা এসেছে। কারণ আমি উদ্ভট এক দুর্গন্ধ পেলাম, যেন কাছে কোথাও কিছু পচে পড়ে আছে। কিন্তু আমি কিছুই তো দেখিনি। এমনকি দুর্গন্ধটা আগে ছিল না। আমি কেন যেন বিকর্ষণ অনুভব করলাম। আমি আর থাকতে না পেরে অদৃশ্য অবস্থায়ই বাসার পথ ধরলাম।
পরদিন কলেজে গেলাম। আজ ক্লাস ভালোভাবে না হলেও আমি করব। কারণ আমি ভালো ছাত্রদের লিস্টে আছি। আজ দেখছি, আলিয়ারা আসেনি। যেন বিগত দিনগুলোয় অনেক বড় একটা দুর্যোগ কেটে গিয়ে এখন শান্তি ফিরে এসেছে, এমন একটা মনোভাবনায় স্বস্তি বোধ করলাম। কিন্তু আলিয়া খারাপ নয়! অন্তত ওকে যতবড় একটা আপদ ভাবছি, ততবড় সে নয়।
সাধারণ দিনগুলোর মতোই কলেজ শেষে বাসায় ফিরে এলাম। একটু বাইরে ঘোরাঘুরির পর আলিয়ার ফোন পেলাম। সে আমাকে আসিয়ার বার্থডে’র কথা জানাল। এইজন্যই হয়তো কলেজে সে আসেনি।
সে বলল, ‘তুমি আমার পক্ষ থেকে ইনভাইটেড। আর হ্যাঁ, যদি ইচ্ছা হয়, তোমার ভাইয়াকেও আনতে পার।’
‘ওর গার্লফ্রেন্ড মুনতাহা আগেই ওকে ইনভাইট করেছে।’
সে নীরব রইল। মুনতাহার কথাই হয়তো তাকে ভাবাচ্ছে।
‘আসিয়া… ভাইয়াকে পছন্দ করে তাই না?’
‘হু।’
‘সেদিন দেখেছিলাম তাকে কাঁদতে। আমি ভাইয়াকে বুঝিয়েছি, মুনতাহা তার জন্য পারফেক্ট নয়। কিন্তু সে কাউকে কষ্ট দিতে পারে না।’
‘আমি বুঝতে পারছি। আর তুমি মুনতাহার মস্তিষ্ক পড়েছ। তাই না?’
আমি হাসলাম। মেয়েটি যাস্ট অসম্ভব! দেখি, কী কারণে আমি তাকে পড়তে পারি না। ‘আচ্ছা, একটা কথা বলো। তুমি টিকটিকিকে ভয় পাও?’
‘না। আমি ছোটবেলায় অনেক লেজ ছিঁড়েছি।’
‘ছিঃ, তো.. তেলাপোকা?’
‘তেলাপোকা দিয়ে আমাদের কলেজে লাস্টবার একটু করে ব্যবহারিক ক্লাস করেছিলাম। মানে যাস্ট পাগুলো কেটেছি।’
‘ইয়াক.. সাপ?’
‘সাপকে কেবল বিষের দিক থেকেই ভয় পাই। আমাদের আগের বাসাটা ঝোপঝাড়ের ভেতর ছিল। সাপ ধরার অভ্যাস আছে। আবার সরাসরি হাতে ধরিনি।’
‘এটা বলো, ভয় কাকে পাও তুমি?’
‘হা হা..’ আচমকা গম্ভীর হয়ে বলল, ‘ভূতকে ভয় পাই।’
‘ভূত?’
‘আমি জানি না, ওটা বাস্তবে, নাকি কল্পনায়। কিন্তু আমি ভূতকে ভয় পাই। ভূত বলে সংজ্ঞায়িত করব কিনা বুঝছি না। তবে বলব, “খারাপ কিছু”।’
আমি কিছুটা আতঙ্কিত হলাম। আলিয়ার মতো মানুষ আমি প্রথম দেখছি, যে কিনা ভূতে বিশ্বাস করে। ভূত যে থাকে, তা কেউ দেখে না বিধায় বিশ্বাস করে না। ‘কোনোবার দেখেছ?’
‘সরাসরি দেখিনি। তবে অনুভব করেছি। আমার জীবনে নতুন কিছু এলে আমি তা নিয়ে স্বপ্ন দেখি, মায়ের মৃত্যুর পর থেকে। আমি এখানে আসার আগে স্বপ্নে দেখতাম, বীভৎস, দুর্গন্ধময় এক লোক আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।’ কিসের সাথে যেন মিল পাচ্ছি। কী তা?
আমি আরও উদ্বিগ্ন হলাম। ‘তোমার এখানে আসার আগের ঘটনাগুলো আমায় খুলে বলো। প্লিজ। আমার জানতে ইচ্ছে করছে।’
সে আমায় একে একে সবকিছুই নির্দ্বিধায় বলতে লাগল। সে বলল, ‘মা মৃত্যুর আগে অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। তাঁর চোখের নিচে কালো হয়ে গিয়েছিল। মুখ শুকিয়ে গিয়েছিল। শেষের দিকে আমাকে তিনি তাঁর কাছে একদমই থাকতে দিতেন না। মাঝে মাঝে তাঁর জিহ্বা অনেক সাদা হয়ে যেত, চোখ লাল হয়ে যেত। অদ্ভুত অনেক কিছুই হতো। আমি তা মনেও করতে চাই না। শেষে তিনি অনেক ছটফট করে মারা গেলেন। এরপর থেকে আমার দুঃস্বপ্ন দেখা শুরু হয়। একটা রাতও ভালো করে ঘুমাইনি। প্রতিরাত আমি ওই বীভৎস জিনিসকে অস্পষ্টভাবে দেখেছি। এরপর আমার স্বপ্ন পালটায়। একমাস পর আমাকে হঠাৎই ছেলেপক্ষ দেখতে আসে। খালা আমাকে এসবের কথা কিছুই জানাননি। রাতের বেলায় বিয়ের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। আমি অনিচ্ছাসত্ত্বেও তাঁর মাথায় আঘাত করে পালিয়ে যাই। এমন সময় আমি বাবাকে পেয়ে যাওয়ায় আশা ফিরে পেয়েছি। তাঁর সাথে এখানে চলে আসার পর দেখলাম, এখানে আমাকে অপছন্দ করার মতো কেউই নেই। তাই এই জায়গাকে আমি নিজের বাড়ি হিসেবে ভেবে থাকতে লাগলাম। সেই রাত আমি প্রথমবার ভিন্ন স্বপ্ন দেখি। দেখি আমাকে বিয়ে করতে আসা খালার বীভৎস দেবরকে। পরের রাত স্বপ্নে তোমাকেও দেখি। এখন আপাতত কিছু দেখি না।’
দীর্ঘক্ষণ চুপ করে থেকে ভাবতে লাগলাম। সে আমাকে দেখছে। তার লাইফে কিন্তু আমি কোনো মোড় ঘুরাইনি। তার ভ্রমই তাকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে। অথবা হয়তো সত্যিই এমন কিছু আছে, যা কিনা তার মনকে আতঙ্কিত করায় এসব সে দেখছে। ‘তুমি অতিরিক্ত চিন্তা কর। যা চিন্তা কর, তা দিয়ে সম্ভাবনার একটা দেয়াল তৈরি করে তুমি এই স্বপ্নগুলো দেখ। তোমার মনের কারণেই তুমি এসব দেখছ। প্লিজ, নিজেকে সুখে রাখার চেষ্টা কর। ফ্রেন্ড হিসেবেই বলছি।’
‘আমি চেষ্টা করছি। তুমি এসব কথা আমার দুর্বলতা সম্বন্ধে জানার জন্যই কি জিজ্ঞেস করেছ?’
‘না। তোমাকে খুবই ইন্টারেস্টিং লাগে। তোমাকে জানার চেষ্টা করছি, এইটাই। আর কিছু না।’
এরপর আর কথা হয় না। সন্ধ্যার দিকে ক্লাসমেটদের সাথে জিসান ভাইয়ার বড় মাইক্রোতে করে গেলাম। কিছুক্ষণ বসে থাকার পর মৌমিতা আমাকে তার সাথে আলিয়ার রুমে যেতে ডাকল। আমি তার সাথে গেলাম। আলিয়া আমাদের দেখেও ড্রেসিং টেবিলের কাছে দাঁড়িয়েছিল। হয়তো সে অস্বস্তি বোধ করছে। অ্যাপ্রোন ব্যতীত দ্বিতীয়বারের মতো তাকে অন্য ড্রেসে দেখলাম। আজও তাকে সুন্দর দেখাচ্ছে। সে আমাদের দিকে এক পা বাড়ায়। ঠিক তখনই গাউনের নিচের অংশ এবং ওড়না একই সাথে তার পায়ের নিচে চাপা পড়ায় সে ফ্লোরে পড়ে গেল। আমি তড়িঘড়ি করে তাকে তুললাম, ‘ব্যথা পাওনি তো?’
সে কিছুটা লজ্জা পেল। ‘ব্যথা পাওয়ার মতো করেই পড়েছি।’
‘ওহ্, কোথায় ব্যথা পেলে? এই ধরনের গাউন দুইহাতে একটু উঁচিয়ে রেখে হাঁটতে হয়, তুমি জানো না?’
‘না। তুমি ফ্যাশন নিয়ে অনেক ধারণা রাখ। তোমার মডেলই হওয়া উচিত।’ মেয়েটি ব্যথাকে ইগনোর করে অহেতুক কথা বলে যাচ্ছে। তাহলে সম্ভবত সে রক্তকে ভয় পায়।
‘দেখ, এসব পোষাক-পরিচ্ছদের ব্যাপার। আমার ওরকম কোনো দক্ষতা নেই। ভাইয়াই আমার ওয়্যারড্রো-এর দিকটা দেখেন। আর এতদিন যাদের কাছে থেকেছি, তাদের স্ট্যান্ডার্ডেরই ধারণা পেয়েছি।’
‘ওহ্,’ সে ঠোঁট কামড়াল।
‘তুমি ঠিক আছ?’
তার চক্কর খাওয়া লক্ষ করে মৌমিতা তাকে বিছানায় বসাল। তার অবস্থা আরও খারাপ হওয়ায় মৌমিতা তাকে শুইয়ে দেয়। আমি এতক্ষণে দেখলাম সে আঙুলে ব্যথা পেয়েছে। আমি ড্রয়ার খুঁজে ফার্স্ট এইড বক্স পেলাম। সে আধো আধো ভাবে চোখ খোলা রাখল।
আমি হেসে বললাম, ‘তুমি কিনা রক্তকে ভয় পাও না।’
‘পাই না। কেটে যাওয়ার দৃশ্যটাকেই ভয় পাই।’
কি! নতুন কিছু শুনলাম। ‘তুমি অদ্ভুত। এটা সামান্য একটা ক্ষত। তুমি বেহুঁশ হয়ে পড়ছ।’
‘এটা প্রথমবার নয়। কলেজে একবার, স্কুলে একবার হয়েছে…’
মৌমিতা তাকে কথা বলতে নিষেধ করে তাকে পানি খাওয়ায়। সে সুস্থ হওয়ার পর আমরা বাইরে গেলাম।
পার্টি শুরু হয়েছে। গানবাজনা হওয়ার সময় আমি একদিকে বসে রইলাম। এসবকিছু আমার ভালো লাগে না। আসিয়া কেক কাটে। আমাকে সে একপিছ খাইয়ে দেয়। আমি তা কোনোভাবে হজম করলাম। বাসায় গিয়ে সোজা ওয়াশরুমেই যাব।
পুনরায় পার্টি শুরু হয়। এতক্ষণ আলিয়া একটুও নাচেনি। কিন্তু এইবার মৌমিতা তাকে নাচাতে নিয়ে এলো। সে হাত নেড়ে মৃদুমন্দ নাচতে শুরু করল। একসময় তার সাথে আমার চোখাচোখি হয়। হাতের ইশারায় সে আমায় ডাকল। আমি গেলাম না। সে নিজের মতো করেই আসিয়ার সাথে নাচতে লাগল। বাকিটা সময় সবার ফুর্তি দেখে আমি কাটিয়ে দিলাম। দশটার দিকে খাওয়া-দাওয়া শুরু হয়। আমি না খাওয়ার জন্য লুকিয়ে রইলাম। মানুষের মতো খেয়ে লাভ কী হবে? আমার তো বিপাক হয় না। খাবারগুলো একসময় বমি আকারে বের করিয়ে আনতে হয়। এগারোটা পর্যন্ত পার্টি চলল। আমি আলিয়াকে আর দেখলাম না। লাস্টবার তাকে খাওয়ার সময় দেখেছিলাম। সেসময় তার চোখে রাজ্য জুড়ে ঘুম ভর করেছিল। হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে। অদ্ভুত এক মেয়ে!
পার্টিতে এমন দু’জনকে আমি দেখলাম, যাদের মাইন্ড পড়া যায় না। এক ছেলে এবং এক মহিলা, দু’জনেরই হয়তো রক্তের প্রতি দুর্বলতা আছে। তাদের অঙ্গভঙ্গিতেও বিশেষ কিছু লুকিয়ে নেই। এগারোটা বাজার দশ মিনিট এপার-ওপার হলে পলাশ ভাই জিসানকে তার বাবার উপহার দেওয়া মাইক্রোটা পার্কিং-এর জায়গা থেকে বের করিয়ে আনল। আমরা সকলে উঠে পড়লাম। আমাদের সাথে ভিন্ন একজন আছে। মুনতাহা। মেয়েটা মোটেও সুবিধার নয়। সবসময় তার মাথায় বদখেয়াল থাকে। কীভাবে জিসানের গায়ে পড়বে, কীভাবে জিসানকে ওর অনিচ্ছাসত্ত্বেও আপত্তিকর অবস্থায় ফেলবে সবসময় এসবেরই প্রচেষ্টা। সে কিনা আবার জিসানকে ভালোবাসে! হুহ, ওর চেয়ে আসিয়াই ঢের ভালো। কিন্তু এটা অন্যের লাইফ। আমার কিছু করার নেই।
(চলবে..)
লেখা: ফারিয়া কাউছার

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES
- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ