মিশন হার্ডডিস্ক পর্বঃ ০১
লেখকঃ আবির খান
প্রচন্ড গোলাগুলি শুরু হয়ে গিয়েছে প্রিতমের টিমের সাথে শত্রু পক্ষের। প্রিতম একাই দুইহাতে আর্মস নিয়ে শত্রুদের শেষ করে দিচ্ছে।
প্রিতমঃ সালমান তুই সবাইকে নিয়ে বাইরে যা৷ জাস্ট ২০ পর্যন্ত গুনে এটা ভিতরে মারবি। তাতে আমি আসি আর না আসি।
সালমানঃ কিন্তু দোস্ত…
প্রিতমঃ যা বলছি তাই কর যা।
সালমান টিমের বাকিদের নিয়ে বাইরে এসে ২০ সেকেন্ড পর্যন্ত গুনে গ্রেনেডটি ভিতরে মারে। আর সাথে সাথেই শত্রুর আস্থানা ধ্বংস হয়ে যায় নিমিষেই।
আরিফঃ দোস্ত একি করলি?? প্রিতম তো ভিতরে।
সালমান মাটিতে বসে পড়ে ধ্বংস হয়ে যাওয়া আস্থানার দিকে তাকিয়ে মাথা নত করে বন্ধুকে হারিয়ে ফেলে চোখের জল ছেড়ে দেয়। হঠাৎই সালমান ওর কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পায়৷ সালমান মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে প্রিতম। সালমান অবাক হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে প্রিতমকে জড়িয়ে ধরে। আর বলে,
সালমানঃ দোস্ত তুই ঠিক আছিস?? কীভাবে বেঁচে আসলি??
প্রিতমঃ আমার কাছে সবার আগে তোরা। তোদের দোয়া সাথে থাকলে আমার কিছু হতে পারে বল??
বাকিরাঃ কখনোই না।
প্রিতমঃ যাক একটা মিশন শেষ হলো। এবার একটু শান্তিতে থাকতে পারবি তোরা। চল বাসায় যাবি।
নিরবঃ ভাই এভাবে আমাদের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিবিনা। আমাদের কাছে তুই সবার আগে।
রবিনঃ হ্যাঁ দোস্ত।
শামিমঃ তুই সবসময় আমাদের সেইফ রাখস। আর নিজে শত্রুর সামনে এগিয়ে যাস। এরপর আর কিন্তু এসব চলবে না।
প্রিতমঃ আরে কি যে বলিস না। তোরাই আমার সব। চল এখন যাওয়া যাক।
সবাইঃ হ্যাঁ চল।
এরপর সবাই সবার বাসায় চলে যায়। প্রিতম বাসায় গিয়ে নক করতেই ওর মা দরজা খুলে দেয়। প্রিতমকে দেখেই বলে,
মাঃ বাবা এসেছিস?? ঠিক আছিস তো??(চিন্তিত কণ্ঠে)
প্রিতমঃ হ্যাঁ মা ঠিক আছি। তোমার দোয়া সাথে থাকলে আমার আর কিছু হতে পারে বলো??
প্রিতম ওর মাকে জড়িয়ে ধরে বলে। ওর মা অভিমানী কণ্ঠে বলে,
মাঃ তোর বাবাও আর্মিতে কাজ করে নিজের জীবন দিয়েছেন। আর তুইও শেষমেশ সেই পথে গেলি।
প্রিতমঃ আহারে মা…এতো চিন্তা করো নাতো। দেশের জন্য কিছু করতে পারা এটা সৌভাগ্যের ব্যাপার। তুমি শুধু দোয়া করো তাহলেই হবে।
মাঃ মায়ের দোয়া সবসময়ই ছেলের সাথে থাকে। এখন যা ফ্রেশ হয়ে আস আমি খাবার দিচ্ছি।
প্রিতমঃ আচ্ছা।
এই হলো প্রিতম। প্রিতমের বাবা আর্মিতে ছিলেন। বাবার আর্দশ ফলো করেই আজ প্রিতম দেশের জন্য কাজ করছে। প্রিতম একজন স্পেশাল টিমের হেড। এই টিমে পাঁচ জন ওয়ারিয়র্স রয়েছে। তাদের সবাইকে একসাথে ফাইফস্টার ব্যাটেলিয়ন বলা হয়। আর এই ব্যাটেলিয়নের হেড হলো প্রিতম। ওর নেতৃত্বে এখন পর্যন্ত ১০টি মিশন সম্পূর্ণ হয়েছে। সরকার থেকে সবাইকে স্পেশাল মেডেলও দেওয়া হয়েছে।
প্রিতমের পরিবারে মা আর একটা ছোট বোন আছে। বাবা আগেই শহীদ হয়েছেন। প্রিতমের বোনকে কিছু দিন আগেই একজন ডাক্তারের সাথে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রিতমের বয়স এখন ২৮ বছর। ও দেখতে বেশ হ্যান্ডসাম আর গুড লুকিং ছেলে। ফর্সা মুখ, সিল্কি চুল, সুঠাম দেহ সব মিলিয়ে পুরো একটা হিরো। প্রিতম স্বভাবতই অনেক রাগী আর মিশুক। প্রিতম ওর টিমের বাকি চার জনকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে৷ ওরা সবাইও ওর অনেক অনুগত। প্রিতমের কোনো কথাই ওরা ফেলে দেয় না। এদের নিয়েই প্রিতমের দুনিয়া।
প্রিতমের এই ভাগাদোরি জীবনে কোনো মেয়ের সাথে সম্পর্ক হয়ে উঠে নি। জীবনের এই পর্যায়ে আসার জন্য কোনো মেয়ের উপর প্রিতম দুর্বল হয়নি। আসলে কখনো কাউকে ওভাবে ভালোই লাগে নি। কিন্তু প্রিতম অনেক মেয়ের ড্রিমবয় ছিল। স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি সব জায়গায় খেলাধুলা থেকে শুরু করে সব কিছুতেই প্রিতম ছিল বেস্ট। তাই সবার প্রিয় ছিল প্রিতম। এরপর যখন ফাইফস্টার ব্যাটেলিয়নে যুক্ত হলো তখন ওর দায়িত্ব পালন দেখে সবাই ওকে পছন্দ করতে লাগল। এখন ওর ডিপার্টমেন্টে সবাই ওকে এক নামে চিনে।
লাস্ট মিশন শেষ করে প্রিতম আর ওর বাকি টিম মেম্বার’রা যখন রেস্ট নিচ্ছিল ঠিক তখনই ওকে ওদের ডিপার্টমেন্টের চিফ রায়হান সাহেব কল করে ডাক দেয়। প্রিতম দ্রুত তার কাছে চলে যায়।
প্রিতমঃ মে আই কামিন স্যার??
রায়হান সাহেবঃ ইয়েস ইয়েস প্রিতম আসো। বসো।
প্রিতম বসতে বসতে বলে,
প্রিতমঃ স্যার আপনাকে অনেক চিন্তিত মনে হচ্ছে। কোনো বড় সমস্যা স্যার??
রায়হান সাহেব তার চেয়ার ছেড়ে উঠে বেশ চিন্তিত ভাবে এদিক ওদিক তাকিয়ে প্রিতমকে বলে,
রায়হান সাহেবঃ কীভাবে যে বলি বলো..মাত্রই তোমাদের একটা মিশন শেষ হলো। এখন…
প্রিতমঃ স্যার আপনি নিশ্চিন্তে বলুন।
রায়হান সাহেব প্রিতমের কাছে এসে দ্রুত বলে,
রায়হান সাহেবঃ প্রিতম, আমাদের সিক্রেট বেইস থেকে একটা গুরুত্বপূর্ণ হার্ডডিস্ক চুরি হয়েছে। যেটায় হাইটেক সিকিউরিটি দেওয়া। যা ব্যান করার জন্য একমাত্র পিন আমি জানি। কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে এই হার্ডডিস্ক যদি শত্রুপক্ষ এক্সেস করে ফেলে তাহলেতো আমাদের দেশের অনেক বড় ক্ষতি হবে।
প্রিতমঃ কিন্তু স্যার যেহেতু এটায় আপনার নিজস্ব সিকিউরিটি দেওয়া শত্রু পক্ষ কি পাড়বে তা এক্সেস করতে?? যেখানে আমরা আজ অবধি পারিনি।
রায়হান সাহেবঃ প্রিতম কীভাবে বলবো বলো, তারা অলরেডি এক্সেস এর জন্য কাজ করা শুরু করেছে। এরা খুবই বড়মাপের শত্রু প্রিতম। এই হার্ডডিস্ক এ একটা স্পেশাল জিপিএস আছে। এটাকে ঠিক যখনই এক্সেস করতে নিবে এটা এই আইপ্যাডে তার লোকেশন পাঠাবে। লাস্ট ৭ জায়গায় এর লোকেশন ট্র্যাক করা হয়েছে। এরা এই হার্ডডিস্ক সম্পর্কে সব জানে। তাই ভিন্ন ভিন্ন সাত জায়গায় তারা এটিকে এক্সেস করতে চেষ্টা করছে। কিন্তু সফল হয়নি। তবে সফল হওয়ার চান্স রয়েছে। প্রিতম তোমাকে এই হার্ডডিস্ক খুঁজে বের করতেই হবে। যেভাবে হোক বের করতেই হবে।
প্রিতমঃ স্যার, আপনি চিন্তা করবেন না। মিশন যতই কঠিন হোক আমি তা সলভ করবোই। ইনশাআল্লাহ।
রায়হান সাহেবঃ প্রিতম এই মিশনটা একদম সিক্রেট। এখনো কেউ জানে না। গতরাতে আমাদের সিক্রেট বেইসের সব সিসি ক্যামেরা প্লাস সিকিউরিটি সিস্টেম হ্যাক করে তারা এটা চুরি করেছে। এদের উদ্দেশ্য খুবই ভয়াবহ প্রিতম। এই কথা মিডিয়াতে গেলে আমাদের অনেক ক্ষতি আর বদনাম হবে। তাই আমি তোমাকে ছাড়া আর কাউকে বিশ্বাস করতে পারছিনা। এইজন্য এই টাফ মিশনটা তোমাকেই হ্যান্ডেল করতে হবে। এবং সফল হতে হবে৷
প্রিতমঃ স্যার, আর চিন্তা করবেন না। কারণ মিশন হার্ডডিস্ক শুরু।
রায়হান সাহেবঃ যেকোনো প্রকার হেল্প লাগলে তুমি আমাকে বলবে।
প্রিতমঃ জি স্যার। আমাকে শুধু এই মিশন রিলেটেড সব ইনফরমেশন দিন। তাহলে হবে।
রায়হান সাহেবঃ ওকে আমি সব তোমার কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
প্রিতমঃ ওকে স্যার তাহলে আমি উঠি।
রায়হান সাহেবঃ বেস্ট অফ লাক।
এরপর প্রিতম রায়হান সাহেবকে বিদায় দিয়ে বাসায় ফিরে যায়। বাসায় গিয়ে প্রিতম খুব চিন্তায় পড়ে যায়। কারণ এ এমন একটি মিশন যার লক্ষ্য হলো একটা হার্ডডিস্ক খুঁজে বের করা। এই হার্ডডিস্ক যাদের কাছে আছে তারা নিশ্চয়ই কোনো সাধারণ লোক হবে না। এরা কোনো বড় মাফিয়া বা ডনই হবে। আর সবচেয়ে বড় কথা এই হার্ডডিস্ক খুঁজে বের করাও একটা সহজ কাজ না। প্রিতম কীভাবে কি করবে তা বুঝতে পারছে না।
রাত ১২ টা,
প্রিতম এখনো ওর টিম মেম্বারদের নতুন মিশন সম্পর্কে কিছুই বলে নি। আগে প্রিতম এই মিশনের পুরো ছকটা আঁকতে চায় তারপর নামবে মিশন হার্ডডিস্ক এ। সারারাত ধরে প্রিতম হাজার বার চেষ্টা করে কিন্তু কোনো ভাবেই কোনো ক্লু পাচ্ছিল না। কিন্তু হঠাৎই ভোরের দিকে এতো বার চেষ্টা করার পর প্রিতম সেই অপেক্ষাকৃত ক্লুটা পেয়ে যায়। আর দ্রুত ছকটা একে ফেলে। প্রিতম কাজ শেষ করে ঘুমিয়ে পড়ে। কারণ আজ ঘুম থেকে উঠেই এমন এক মিশন শুরু হবে যার শেষটা কেউ জানে না।
চলবে??
কেমন লেগেছে জানাবেন কিন্তু। সাথে থাকবেন সবসময়।