#মিঠা_রোদ
#পর্ব:১৮
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
“স্কুলে না গিয়ে এখানে কী করছো তোশা?”
দিশার প্রশ্নে বিব্রতবোধ করলো তোশা।এতোক্ষণ যে বাতাবরণ উষ্ণতায় মোড়ানো ছিল হুট করে তা নির্জীব হয়ে গেলো।শীতল অসহনীয় হয়ে উঠলো চারিধার।নির্জনতায় শুধু একটু দূরে থাকা প্লেট ও চামচের টুংটাং স ং ঘ র্ষের শব্দ শোনা যাচ্ছে।
“ম্যাম,আমি অসুস্থ ছিলাম।এই কারণে যাওয়া হয়নি।”
“রেস্ট্রুরেন্ট কী সুস্থ হওয়ার জায়গা?”
তোশা আস্তে করে জবাব দিলো,
“এখানে না এলে আমি সুস্থ হতাম না।”
বাক্যটির বিপরীতে ঠিক কী বলবে দিশা সেটা খুঁজে পেলো না।অথচ যাকে ঘিরে এই দ্বিধার মেলা বসেছে।সেই কবীর শাহ নিশ্চুপ হয়ে ফোন ঘাটছে।মুখটা তুলেও দিশার দিকে দেখলো না।
“ঠিক আছে।কাল স্কুলে দেখা হবে।নিজের খেয়াল রেখো।”
“জি ম্যাম।”
দিশা চলে গেলে তোশা আস্তে করে কবীরের পাশে এসে বসলো।লোকটার মুখের উজ্জ্বলতা কয়েক ধাপ নিচে নেমে গেছে যেন।
“হঠাৎ আপনার কী হলো কবীর শাহ?”
“মিটিং আছে।তোমাকে পৌঁছে দিচ্ছি।”
“না যেতে পারবো।মনে থাকবে তো আমরা এখন থেকে বন্ধু?”
থমথমে গলায় কবীর জবাব দিলো,
“থাকবে।কিন্তু আজকের পর থেকে এভাবে দেখা করতে আসবেনা।বিষয়টা ভালো দেখা যায়না।”
“আমার সাথেই সব ভালো দেখা যায়না আপনার।অথচ আড়ালে বেলাডোনা বলে ঠিক ডাকেন।এমনকি।থাক বললাম না।কিছুটা হুঁশ ছিল আমার।”
কবীরের অক্ষিগোলক আকারে যেন কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়ে গেলো।পরক্ষণে মৃদু হেসে বলল,
“সব চুম্বন কামনার হয়না।কিছু স্পর্শ সম্মানেরও হয় বেলাডোনা।”
(***)
রাতের খাবার তিল পরিমাণও খেতে পারেনি দিশা।কী যে য ন্ত্র ণা হচ্ছে তার।একে তো কবীরের বিয়ে ঠিক হয়েছে শুনে মনটা খারাপ ছিল।আবার তোশার সঙ্গে আজ রেস্ট্রুরেন্টে দেখা হলো।কবীরের বাহুতে মেয়েটা যে মাথা ঠেকিয়ে ছিল।সেটা খুব ভালোমতন দেখেছে।অনেকটা সময় নিজের সঙ্গে দ্বন্ধতে লিপ্ত থেকে অবশেষে কবীরের নাম্বারে ডায়াল করলো।প্রথম কয়েকবার রিসিভ হলো না।কিন্তু একসময় অপ্রত্যাশিতভাবে কবীরের কণ্ঠটি শোনা গেলো।
“বলো।”
“কবীর তুমি কী পাগল হয়ে গিয়েছো?আমি শুধু জানতাম মেয়েটা সঙ্গে কথা হয়।কিন্তু ওরকম কোনো সম্পর্ক নেই।তবে আজ রেস্ট্রুরেন্টে যা দেখলাম?ওসব কী?”
“স্টপ দিশা।আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে জানো।”
“জানি।এই কারণে বলছি তোশাকে এতোটা আস্কারা দিওনা।ও বাচ্চা একটি মেয়ে।এবং তোমার বন্ধুর মেয়ে।মায়ান যদি কখনো জানতে পারে কেমন হবে?আমার ভয় লাগছে কবীর।তোশা অনেক ভালো একটি মেয়ে।তোমার জন্য জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে ওর।”
“এতো কথা কেন বলো দিশা?আমার জীবনে কী হচ্ছে না হচ্ছে সেটা দেখার বিষয় তোমার না।আমাকে কী চরিত্রহীন মনে হয়?”
কথাগুলো বলার সময় কবীরের কণ্ঠে ভীষণ রাগ মিশে ছিল।সে পুনরায় বলল,
“আমি জানি কীভাবে ওকে হ্যান্ডেল করতে হয়।আমার বিয়ে ও বাচ্চার কথা শুনে মেয়েটা অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল।সেখানে কঠোর আমি কীভাবে হবো?আগে যেটা হইনি।”
পূর্ব দিক থেকে উষ্ণ বায়ু এসে দিশার মুখোমন্ডলে লুটপাট করতে লাগলো।তবুও যেন অনবরত ঘামতে থাকা স্যাতস্যাতে অনুভূতি কমছেনা।কিছুটা আবেগ ও আন্দোলিত কণ্ঠে শুধালো,
“তোশাকে ভালোবাসো তুমি কবীর?”
“ভালোবাসা?”
শব্দটি কবীর শাহ নামক শক্ত পুরুষকে গম্ভীর চিন্তায় ফেলে দিলো।সে চট জলদি কোনো জবাব দিতে পারছেনা।তোশাকে সে অনুভব করে।এই কথাটি তো মিথ্যা নয়।দিশা এই নিরবতার চাদরকে সরিয়ে বলল,
“তবে ভালোবাসো মেয়েটিকে?”
“সম্ভবত অনুভূতি তৈরী হয়েছে।আমি এটা অস্বীকার করতে পারবো না।”
“লজ্জা করলো না নিজ প্রাক্তন স্ত্রীকে এসব কথা বলতে?”
“আমি নিজ থেকে বলেছি এই কথা?অদ্ভূত।”
দিশা কিছু বলার পূর্বে ফোনটি কেঁটে দিলো কবীর।যেন এরপর কোনো কথা থাকার মতো নেই।অপরদিকে দিশা নামক নারীটি অসহ্য অনলে জ্বলেপুড়ে একদম দগ্ধ হয়ে যাচ্ছে।
(***)
“আপনি বিশ্বাস রাখতে পারেন।আমরা নিজেদের বেস্ট দিয়ে একটা ইভেন্ট সম্পূর্ণ করি।আপনার মেয়ের বিয়েতে কোনোকিছুর কম রাখবো না।”
সামনে বসে থাকা ষাট বছর বয়সী লোকটি মৃদু হেসে বলল,
“আপনাদের ভালো নাম আছে দেখে এসেছি মিস.তাহিয়া।বাই দ্য ওয়ে মিস্টার শাহ কোথায়?”
“কবীর আসছে।আপনার সঙ্গে পার্সোনালি কথা বলবে ও।”
ফোন বের করে পুনরায় কবীরকে ম্যাসেজ করলো তাহিয়া।বড্ড উসখুস লাগছে তার।কারণটি হলো সামনে বসে থাকা বৃদ্ধ লোকটিকে সে চিনে।এমনকি তার পাশে বসে থাকা আটত্রিশ বছর বয়সে বেশ খানিকটা যৌবন ধরে রাখা আসিফকেও।একসময় এই আসিফ নামের লোকটি তাহিয়ার জন্য পাগলপ্রায় ছিল।যখন মায়ানের সঙ্গে বিয়ের কথা সকলে জানলো তখন যে লোকটা আ ত্ম হ ত্যা করার মতোও পদক্ষেপ নিয়েছিল সেটাও জানা তাহিয়ার।পরবর্তীতে দেখা হয়নি কখনো।এতোদিন পর ক্লায়েন্ট হিসেবে আসিফকে পাওয়া বেশ বিব্রতকর।অথচ অপর ব্যক্তিটা কেমন নির্জীব শান্ত হয়ে ফুলের সাজসজ্জা দেখতে ব্যস্ত।যেন তাহিয়াকে কখনো সে দেখেনি। সবেমাত্রই পরিচয় হলো যেন। অফিস রুমটায় হুট করে এক তামাটে চাঁদের আর্বিভাব ঘটলো।যে নিজের সমস্ত আলোকছটা নিয়ে চেয়ারে বসার পূর্বে আসিফের সঙ্গে করমর্দন করতে ভুললো না।
“কেমন আছেন আসিফ ভাই?”
“কবীর তোমাকে দেখে তো বয়স আন্দাজ করা যায়না।কী ব্যাপার এতো সৌন্দর্যের?”
“ব্যাচেলর তো।এই কারণে এতোটা সৌন্দর্য।”
আসিফ হেসে বলল,
“আমিও তো এক জীবন ধরে ব্যাচেলর।কিন্তু চুলের রঙ পরিবর্তন হতে শুরু হয়েছে।তোমরা কেমন যেন রহস্যময় মানুষ।কারো সৌন্দর্য কমেনি।”
কথাটি তাহিয়ার দিকে তাঁকিয়ে বলল আসিফ।যাতে তার অস্বস্তি আরো বৃদ্ধি পেয়ে গেলো।এরপর পুরো মিটিং এ তিনটি পুরুষের কণ্ঠ শোনা গিয়েছে।তাহিয়া নিশ্চুপে শুধু কফির কাপে চুমুক বসিয়েছে।ঘড়িতে দুপুর দুটো বাজে।তাহিয়া উঠে দাঁড়ালো হঠাৎ।
“কবীর তুমি একটু কথা বলো।তোশামণি আসছে কীনা দেখছি আমি।”
“তোশামণি কে কবীর?”
কৌতুহলী হয়ে প্রশ্নটি শুধালো আসিফ।
“তাহিয়ার মেয়ে।”
“ওহ।মায়ান কেমন আছে?”
তাহিয়া এমন বিব্রতকর পরিস্থিতি আর নিতে পারলো না।সে তৎক্ষনাৎ বের হয়ে গেলো।কবীর আস্তে করে বলল,
“আমার মতোন মায়ান-তাহিয়ারও ডিভোর্স হয়েছে।আঙকেল আসুন লাঞ্চ আমাদের সাথে করবেন।”
কিছু যেন বলতে চেয়েছিল আসিফ।কিন্তু পরিস্থিতির চাপে নিশ্চুপ থেকে গেলো।
বাহিরের এক জায়গায় ক্লান্ত পরিশ্রান্ত স্কুল ড্রেস পরা কিশোরীকে দেখে কবীরের অধরে হাসি ফুটে উঠলো।মেয়েটির ঘর্মাক্ত মুখটিও যেন মায়াতে জড়ানো।মেয়েটির প্রতি এতো ভালোলাগা কবীরকে কষ্টের সঙ্গে শান্তিটাও দিয়ে যায়।তাহিয়া যত্ন সহকারে মেয়ের মুখটা মুছে দিচ্ছে।সে ফোন হাতে চলে গেলে তৎক্ষনাৎ কবীর তার পাশে গিয়ে বসলো।তোশা না তাঁকিয়ে বলল,
“জানেন কবীর শাহ।আপনার বিয়ে ভে ঙে গিয়েছে।”
“আমি জানিনা তো।তুমি কীভাবে জানলে?”
নাকের ডগায় বিন্দুঘাম ছিল।তোশা এগিয়ে এসে সেটা কবীরের বাহুতে মুছে বলল,
“কেবল মায়ের ফোনে কল এসেছিল।কলি আন্টি না করে দিয়েছে।আমার ভা গ্য কী ভালো তাইনা?”
কিশোরীর মুখে বিশ্ব জয়ের হাসি।সে আরো উচ্ছাসিত কণ্ঠে বলল,
“এখন গেইম আবার স্টার্ট হবে কবীর শাহ।রাউন্ড থ্রি।”
চলবে।
#মিঠা_রোদ
#পর্ব:১৯
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
“কলিকে আগে থেকে ওর বন্ধু পছন্দ করতো।লোকটার স্ত্রী মা রা গিয়েছে গত বছর।তাই বিয়ে ঠিক হওয়ার কথা শুনে বলেছে পছন্দের বিষয়টা।এখন সেই ছেলে আর কলি মিলে মোটামুটির সংসার গড়বে।এই কারণে বিয়েটা হচ্ছে না তোমার সঙ্গে।আমি কীভাবে আন্টিকে বলবো বিষয়টি।”
“মোটামুটির সংসার?”
“ছেলেটির স্বাস্থ্য মোটা।”
কবীরের কাছে নিজ বিয়ে ভাঙার বিষয়টি হাস্যকর না লাগলেও কিশোরী তোশা উচ্চ শব্দে হেসে উঠলো।তাহিয়া মেয়েকে চোখের ইশারায় চুপ থাকতে বলল।
“দেখো কবীর।”
“এই বিষয়ে পরে কথা হবে তাহিয়া।এখনও আসিফ ভাইয়ারা আছেন।”
“তুমি একটু তাদের নিয়ে লাঞ্চ করো।আমি মেয়েকে নিয়ে ডক্টরের কাছে যাবো।”
“ততোসময়ে ওর খুদা লেগে যাবে।লাঞ্চ করিয়ে নিয়ে যাও।”
কবীরের একটু বেশীই তোশার প্রতি চিন্তা প্রকাশ পায়।যা তার ব্যক্তিত্বের সঙ্গে ঠিক মিশেনা।বিষয়টি তাহিয়া অনেকবার খেয়াল করেছে।পরবর্তীতে সঠিক কিছু অনুসন্ধান করে না পাওয়ায় চিন্তাটি এগিয়ে নিয়ে যায়নি।আসিফ ও তার বাবা আবদুল এমন সময় কথা বলতে বলতে সেখানে প্রবেশ করলো।সর্বপ্রথম আসিফের টেবিলে বসে থাকা ছিমছাম গড়নের তোশার উপরে নজর পড়লো।মায়ের সঙ্গে যতো বিবাদ হোক।তোশার সাথে পরিচয় হওয়ার লোভ সে সামলাতে পারলো না।পাশে বসতে বসতে বলল,
“তাহিয়ার ছোট ভার্সন তোমার নাকী?”
“আমাকে বলছেন?”
“জি ম্যাডাম আপনাকে।”
অচেনা মানুষ বিধায় তোশা মায়ের পানে তাঁকালো।তাহিয়া আস্তে করে বলল,
“আমাদের সিনিয়র ছিলেন ইনি।নাম বলো তোমার।”
“তাইয়ুবা চৌধুরী তোশা।”
“সুন্দর নাম।আমি আসিফ মির্জা।”
“আমাকে আম্মুর ছোট ভার্সন বললেন কেন?”
“খানিকটা তাহিয়ার কিশোরী বয়সের মতোন তুমি।এই কারণে।আব্বু মনে আছে এই বয়সে থাকতে তুমি রোজ তাহিয়াকে পটেটো চিপস কিনে দিতে।”
আবদুল ছোট্ট করে ‘হুম’ বলল।সঙ্গত কারণে সে তাহিয়াকে এখন পছন্দ করেনা।অথচ এক সময় মেয়ের থেকেও বেশী ভালোবাসতেন।অতীতের জন্য এতো সময় অচেনার বেশ ধরে ছিল।কিন্তু ছেলের এতোটা পরিস্ফুটিত হওয়া পছন্দ হচ্ছে না তার।
“কবীর তোমাদের তিনজনের পুরো ফাংশন গেস্ট হিসেবেও এটেন্ড করতে হবে।আমি ইনভাইট করে যাচ্ছি।”
“হয়তো আমার সম্ভব হবেনা ভাইয়া।কিন্তু তাহিয়া থাকবে।”
“কোনো কথা শুনছিনা।তাইয়ুবাকে নিয়ে আসবে তোমরা।”
কবীর সৌজন্যেবোধক হাসলো।ব্যক্তিটার খাবার গ্রহণ করাও তোশার কাছে অনন্য লাগে।সে আড়চোখে তাঁকিয়ে আছে।হুট করে কবীরের সঙ্গে দৃষ্টির মিলন ঘটলো তার।ব্যক্তিটা ভ্রু উঁচু করে ইশারায় হয়তো জিজ্ঞেস করলো এভাবে দেখছে কেন?তোশা মিষ্টি হেসে মাথাটা এপাশ ওপাশ দুলালো।খাওয়া দাওয়া শেষে আসিফরা বিদায় নিলো।তোশার মাথায় সুন্দর করে হাত বুলিয়ে আসিফ বলল,
“তাইয়ুবা তুমি কিন্তু ফাংশনে আসবে।আমি অপেক্ষায় থাকবো।”
“অবশ্যই আঙকেল।”
গাড়ীতে উঠে বসলো তারা।আসিফ উষ্ণ শ্বাস ফেলে স্টার্ট করলো গাড়ীটি।আবদুল একটু অসন্তোষ প্রকাশ করে বলল,
“তাহিয়ার মেয়ের প্রতি হঠাৎ এতো মায়া দেখালে আসিফ?ভুলে গিয়েছো অতীত?”
“না আব্বু।কিন্তু দ্বিতীয়বার হয়তো একটা সুযোগ পেতে যাচ্ছি আমি।কেন কাজে লাগাবো না।”
“এতোকিছুর পরেও তাহিয়ার প্রতি অনুভূতি আছে?সতেরটি বছর অতিক্রম হয়ে গিয়েছে আসিফ।দিন দুনিয়া বদলে গিয়েছে।”
“আব্বু,ভালোবাসা তো বদলায়নি।যা যুবক বয়সে পাইনি তা আজ যৌবনের শেষে পেয়ে গেলে মন্দ হয়না।হোক না দেরী।”
“বিষয়টা আমার ভালো লাগছেনা।ডিভোর্সের কারণটাও জানিনা।অথচ তুমি পুনরায় স্বপ্ন দেখছো।স্বাবধান থেকো।”
“জি বাবা।বাই দ্যা ওয়ে বাচ্চা মেয়েটা কিন্তু সুন্দর।রেডিমেড মেয়ে পেয়ে গেলে বরং এই বয়সে ভালো হবে।”
আবদুল উষ্ণ শ্বাস ফেললো।ছেলে তাকে সবসময় বন্ধু হিসেবে দেখেছে।এই কারণে মনের কথাগুলো বিনা সংকোচে বলতে পারে।ছেলে এতো বছরেও বিয়ে না করার দুঃখ তার যদি ঘুচে যায় তাহলে সে নিশ্চিন্ত হতে পারবে।
(***)
কতোগুলো প্রাণবন্ত ইন্টারে পড়ুয়া মেয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটছে ও আলাপ করছে।কোনোকিছু নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে একে অপরের উপর হাসতে হাসতে ঢলে পড়ছে।হুট করে তাদের কানে পুরোনো হিন্দি সিনেমার গান ভেসে এলো।তৎক্ষনাৎ তারা থেমে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা বৃদ্ধ লোকটির উদ্দেশ্যে বলল,
“হ্যালো হ্যান্ডসাম।আজকেও কিশোর কুমার চলছে?”
বৃদ্ধ লোকটি হাসলো।গালের চামড়ায় আরো কয়েকটি ভাঁজ পড়লো।
“ইয়াং লেডিস্ তোমরা জানো না কিশোর কুমার একটি ইমোশন।কী ব্যাপার পড়তে যাচ্ছো তোমরা?আমার সাথে কফি ডেউটের কী হলো?”
“ওটা পরের শুক্রবার।আমরা সকলেই যাবো।”
“মনে থাকে যেন সুন্দরীরা।”
মেয়েগুলো সম্মতিতে মাথা দুলিয়ে হাসতে হাসতে চলে গেলো।পাশের কোচিং সেন্টারে তারা পড়াশোনা করে।বৃদ্ধ লোকটির নাম হুমায়ুন।এইতো গত মাসে বয়স বাহাত্তরের ঘর ধরলো।কিন্তু মনটা যেন এখনও সেই সুইট সিক্সটিন।নতুন করে দুনিয়া দেখার ইচ্ছা জাগে।মেয়েগুলোর সাথে এরকম উপহাস তাকে আরো প্রাণবন্ত করে তোলে।ভেতরে এসে নিজ মিসেসের উদ্দেশ্যে বলল,
“মেয়েগুলো সুন্দর।তাদের সাথে কথা বলাতে তোমার হি ং সা হয়না?তোশামণি তোমার দাদীর আমার প্রতি ভালোবাসা চলে গিয়েছে।”
হুমায়ূনের আফসোস মাখা কণ্ঠে মৃদু হাসলো তোশা।দাদীর হাতে খেতে খেতে জবাব দিলো,
“দাদীকে নিয়ে কফি ডেইটে যাও।দেখবে ভালোবাসা জন্মাবে।”
“তোমার দাদীর কী সেই সময় আছে।কী মিসেস কথা বলছেন না কেন?”
শরীফা বিরক্ত হয়ে বলল,
“আপনি কী ইন্টারে পড়েন?না তো।ওই মেয়েগুলো পাগল বুড়ো দেখে মজা নেয়।”
“তোমার মনে হয় আমি এনাফ হ্যান্ডসাম না।”
“না।”
“অপমান মিসেস।”
হুমায়ূন এতোক্ষণ মজা করলেও এবার প্রসঙ্গ বদলে বলল,
“খয়ের শাহ(পান খায় যে খয়ের দিয়ে) যে বিবাহিত তুমি তা জানতেনা তোশা?এই কারণে আমি বলেছিলাম সব খোঁজ নিয়ে দেখো।এখন কী চাও?শুনলাম অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলে।”
“দাদু আমি জানতাম না।তোমরাও বলো নি।”
“বিষয়টি সাধারণ ছিল।এখনও কী ভালোবাসার ভূত আছে?”
তোশা মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বলল।শরীফা রাগত সুরে বলল,
“তোমার ভালোবাসা এতোদিনেও কমলো না?শুধু কান্নাকাটি করো দেখে সাহায্য করি।যদি মায়ানের বাবা এসব জানে আমাকে কী বলবে জানো?বড় ভাবী হিসেবে কিন্তু খুব সম্মান করে। খয়ের শাহ এর প্রতি বিশ্বাস আছে ও ভুল করবেনা।এজন্য যা খুশি তাই করতে পারছো।”
“কবীরকে তোমরা খয়ের শাহ বলো কেন?গায়ের রঙের জন্য?”
শরীফা মাথা দুলালো।সে ও হুমায়ূন হচ্ছে মায়ানের আপন চাচা-চাচী।সপ্তাহে একবার তাদের কাছে তোশাকে দিয়ে যায় তাহিয়া।কারণ বুড়ো মানুষ দুটো বড় একা।হুমায়ূন তাদের কথার মাঝে বলল,
“আরে শুনো তোশামণি।যখন তোমার মা-বাবার বিয়ের কথা জানলাম।তখন তো তুলকালাম লেগে গেলো।ছেলে-মেয়ে এখনও এতো ছোট্ট।তোমার দাদা নিজের ব ন্দু ক নিয়ে বের হলেন।এতো অসম্মানের থেকে মে রে ফেলবে ছেলেকে।তখন এই খয়ের মানে কবীর শাহ তোমার দাদার সামনে দাঁড়িয়ে সাহসী হয়ে বলেছিল,’বিয়ে আমি দিয়েছি কী করবেন করেন?’
আবার যখন এতে মায়ানের বাবা আরো রেগে গেলো।তখন বলেছিল’ ভালোবাসা হয়ে গিয়েছে।আমি আপনি বা যে কোনো মানুষ থামানোর কে?যে যার সাথে সুখী থাকে।’
কথাগুলো এখনও আমার কানে এসে লাগে।সেই কবীর শাহ এর প্রেমে তুমি কীভাবে মজলে সেটাই ধোঁয়াশা তোশা।যদি কেউ জানে আমরা তোমাকে সাহায্য করেছি তখন আমাদের ঘৃ ণা করবে মানুষ।”
তোশা সোফা থেকে উঠে এসে হুমায়ূনকে জড়িয়ে ধরলো।আপন দাদার থেকে হুমায়ূন বেশী প্রিয় তার।
“করুক।কিন্তু আমি তোমাদের খুব ভালোবাসি।জানো দাদা কতো চেষ্টা করেছি লোকটাকে ভুলতে।কিন্তু মন মানেনা।শরীরে যন্ত্রণা হয়।তোমরা বলো সময় দিলে সব শেষ হয়ে যাবে।”
“হয়ে যাবে।কিন্তু সীমাতে থেকে চেষ্টা করো দেখো।অন্তত আমি বা তোমার দাদী চাইনা এই বয়সে কোনো মন ভাঙা নিয়ে বড় হও।বাকী ওই বলি বিল্ডার খয়ের শাহ এর প্রতি আমার বিশ্বাস আছে।ও তোমাকে মেনে নিবেনা।যদিও পুরুষ মানুষ তো বলা যায়না।”
“সে সত্যিই এতো সাহসী ছিলেন?”
“কবীরকে এখনও ঠিকঠাক চিনো না তোশা।মনে নেই কীভাবে তোমাকে পানি খাইয়ে মাতাল করেছিল।ও ঠিক এমনই।”
তোশা দাদার কথায় খিলখিল করে হেসে উঠলো।কিন্তু ভেতরে ভেতরে সে খুব ভীত হয়ে আছে।অনুভূতি গুলো এতো বে ই মান কেন সেটাই কিশোরী বুঝে উঠতে পারছেনা।তাছাড়া দুনিয়াতে এতো মানুষ থাকতে কবীর শাহ নামক পা ষা ণ মানুষটার প্রতি ভালোবাসা কেন তৈরী হলো?যেখানে অসম বয়সের য ন্ত্র ণা আছে।জটিল সম্পর্কের সমীকরণের দেখা মিলে।যা ঘন্টার পর ঘন্টা চেষ্টা করলেও সিদ্ধ হয়না।
চলবে।
#মিঠা_রোদ
#পর্ব:২০
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
“যৌবন ধরে রেখেছো কীভাবে?এখনও বেশ সুন্দর লাগে দেখতে।”
“আপনার মনে হয়না আসিফ ভাই ফ্লার্ট করা বা নেওয়ার বয়সটা আমাদের নয়।”
“তুমি তো এতো তেজি ছিলেনা তাহিয়া।হঠাৎ এই রুপ।”
তাহিয়া নিরবতার চাদরকে অবলম্বন করলো।নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশ থাকার পরেও এতো ভীরে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তার।সামনে শীতকাল আসবে।পরিবেশ ধীরে ধীরে জানান দিচ্ছে তা।আসিফের বোনের আজ মেহেদী অনুষ্ঠান।পুরো তিনদিনের লম্বা প্রোগ্রাম রেখেছে তারা।আর হবেনা কেন?আসিফ যে রাজনীতিতে আছে তা সকালে জানলো তাহিয়া।তখন থেকে মেজাজ যেন আরো চটে গিয়েছে।তার ভাষ্যমতে রাজনৈতিক কার্যকলাপে যুক্ত মানুষেরা খানিকটা অদ্ভূত ধরণের হয়ে থাকে।যাদের অনুভূতির আগামাথা হয়না।আসিফ হাতে থাকা মোহিতো তাহিয়ার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
“মাথা ঠান্ডা করো।ফ্লার্ট করছিনা আমি।তবে একটি প্রশ্ন করা আমার অধিকারে আছে।এতো প্রেমের সংসার ভাঙলো কেন?”
“আমার পার্সোনাল ব্যাপার আসিফ ভাই।”
“আমি তো বলিনি যে বিষয়টি জনগণের ব্যাপার।সকলের শোনা উচিত।বিষয়টি নিয়ে চর্চা করা উচিত।এমনকি টিভিতে নিউজেরও কথা বলিনি।”
“আশ্চর্য।”
তাহিয়ার কণ্ঠের গাঢ়তা অনুকরণ করে আসিফ বলল,
“অদ্ভূত।তাইয়ুবা কোথায়?এটার জবাব দাও অন্তত।”
তাহিয়া আশেপাশে তাঁকিয়ে দেখলো তোশা কোথাও নেই।সে রেগে গেলো নিজের এসিস্ট্যান্টের উপর।কয়েক মাস আগে এমনই এক অনুষ্ঠানে মেয়েকে সে হারিয়ে বসেছিল।পাশ থেকে মেয়েটিকে ডেকে শুধালো,
“তোশা কোথায়? ”
“ম্যাম, তোশামণি তো উপরে গিয়েছে।বলল ঘুম আসছে বলে।”
” রুমের চাবি পেলো কোথায়?”
তাহিয়ার হঠাৎ মনে পড়লো খাওয়ানোর সময় সে নিজেই চাবি দিয়েছিল।চারিধারে প্রচন্ড জোরে গান চলছে।মানুষ নাচানাচি করছে।এমন পরিবেশে মেয়েটিকে না রাখা উত্তম দেখে তাহিয়া চিন্তায় মগ্ন ছিল।অকস্মাৎ তাহিয়া আসিফের উদ্দেশ্যে শুধালো,
“দয়া করে তোশার সামনে স্বাভাবিক ব্যবহার করবেন।আপনি এক সময় আমাকে পছন্দ করতেন বিষয়টি জানলে খুব বিব্রতবোধ হবে।”
“ভয় নেই তাহিয়া।তুমি জানো আমি অনুভূতি প্রকাশে ভীষণ কার্পণ্য করি।এজন্য সতের বছর আগে সুযোগটা কাজে লাগাতে পারিনি।”
“যা তখন পারেননি তা নিয়ে এই মাঝ বয়সে এসে আক্ষেপ করা বোকামো।”
তাহিয়া শাড়ী সামলে নিজের কাজে চলে গেলো।পিছন ফিরে অবশ্য একবার আসিফের দিকে তাঁকিয়েছিল।লোকটার চোখে একরাশ শূন্যতা কাজ করছে।তাহিয়া বুঝতে পারছে অপর ব্যক্তিটা তাকে পাওয়ার চেষ্টায় আছে।এজন্য তোশার মন জয় করার বহু চেষ্টাও করছে।তবে তাহিয়ার কাছে এসব তেতো অনুভূতি ছাড়া কিছু নয়।জীবনে মায়ান নামের একজন ছিল।সে চলে যাওয়ার পর আর কাওকে প্রবেশ করতে দিবেনা সে।নতুন বউয়ের দিকে তাঁকিয়ে হুট করে তাহিয়ার চোখ দুটো অশ্রুতে পরিপূর্ণ হয়ে গেলো।এরকম সুখি একসময় সে নিজেও ছিল।
(—)
আস্তে করে ভারী দরজাটি খুলে ভেতরে উঁকি দিলো তোশা।দরজা ক্যাচ ক্যাচ শব্দ করে অবশ্য আগুন্তকের বার্তা ভেতরের মানুষটিকে জানান দিলো।ফোনটা কানে রেখেই পিছন ফিরে তাঁকালো কবীর।পরক্ষণে সামনে ফিরে ফোনে থাকা ব্যক্তিটির উদ্দেশ্যে বলল,
“আমি রাখছি আব্বু।বিষয়টি খেয়াল রাখবো।”
কবীর ফোনটা রেখে জানালায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।তোশাকে একবার ভেতরে আসতেও বলল না।ছোট্ট মেয়েটির মন এজন্য অভিমানে ভরে গেলেও ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গ পাওয়ার লোভ সামলাতে পারলো না।মৃদু পায়ে সামনে এসে দাঁড়ালো।জানালা দিয়ে মৃদু রঙীন আলো আসছে।আলোর উষ্ণ উজ্জ্বলতায় কবীর শাহ নামক মানুষটিকে নতুন করে আবিষ্কার করলো তোশা।লম্বা চওড়া পাহাড়ের মতোন শক্ত দৃঢ় শরীরে সাদা রঙের পাঞ্জাবীটা বেশ ফুঁটে উঠেছে।
“আপনাকে খুব সুন্দর লাগছে কবীর শাহ।”
“হুম।”
তোশামণির ছোট্ট মন যেন আরো ভেঙে গেলো।সে তো অনেক অনেক সুন্দরী।যা সকলে বলে বেড়ায়।আবার গায়ের রঙ নাকী দুধে আলতা।সেখানে আলতো স্পর্শ করলেও রক্তিম আভা ফুঁটে উঠে।এইতো আজ স্বপ্নের মানুষটির সঙ্গে মিল রেখে সে অফ হোয়াইট রঙের গাউন পড়েছে।গলায় আবার মুক্তোর মালাও দিয়েছে।তাহিয়া তো তাকে ছোট্ট বারবি বলতেও দ্বিধা করেনি।কিন্তু এই পা ষা ণ, নির্দয় পুরুষটি একবার তাঁকিয়েও দেখলো না।কিন্তু দুষ্ট মন তা মানলো না তোশার।নিজ থেকে শুধালো,
“আমাকে কেমন লাগছে বললেন না তো।”
কবীর ঘাড় ঘুরিয়ে একটিবার মেয়েটিকে দেখলো।পরক্ষণে সরিয়ে নিলো দৃষ্টি।
“আমাকে ভালোবাসো অথচ আমার দৃষ্টি পড়তে পারো না?”
“পড়ার সুযোগটি আমাকে দেননি।”
“তোশা তুমি কবে সিরিয়াস হবে?জানো আমি খুব..।”
“আপনি কী?”
“এইযে ভালোবাসার কথাগুলো বলো।হুটহাট দেখা করতে চলে আসো।এসব কেউ জানলে কী হবে জানো?তোমার কিছুই হবেনা।উল্টো আমার সম্মান চলে যাবে।একজন ষোল বছরের কিশোরীর কী আর ভুল ধরবে মানুষ।”
“আপনাকে খুব হতাশাগ্রস্ত দেখাচ্ছে।”
“কারণটা তুমি।”
কথাটি শুনে রাগ হলো না তোশার।বরং সে এগিয়ে এসে অনন্য শৈল্পিক মানুষটিকে উষ্ণ আলিঙ্গন করলো।
“তুমি এভাবে আমার সন্নিকটে চলে আসা বিরাট বড় ভুল করিয়ে দিতে পারে তোশা।”
“যেমন?”
তোশা সরিয়ে দিলো কবীর।সে খোলামেলা কিছু বলতে পারছেনা।বরং অনুভূতির বি ষা ক্ত দ ং শ নে শেষ হয়ে যাচ্ছে।হুট করে তোশার প্রতি রাগ উঠে গেলো তার।এগিয়ে তার হাতখানি শক্ত করে ধরে বলল,
“দুনিয়াতে এতো মানুষ থাকতে বাবা-মায়ের বন্ধুর প্রেমে কেন পড়তে হলো তোমার?আবার যখন ভালোবাসা তৈরীই হলো।তবে কেন লুকিয়ে রাখলে না।”
“কারণ ভালোবাসা লুকানোর জিনিস না।”
“বড় বড় কথা ফেলতে জানো শুধু।বাস্তবতা জানো?”
তোশা কম্পমান কণ্ঠে শুধালো,
“আমার সাথে এমন করছেন কেন?”
“বয়স অনুযায়ী অনেক ছেলে পাবে।কেন আমাকে মানুষের কথার ভাগীদার বানাচ্ছো?”
“আমি কী করলাম।”
তোশাকে দূরে সরিয়ে দিলো কবীর।রাগে হাসফাস করছে সে।যে ব্যক্তিত্ব সম্মান এতো বছরে কুড়িয়েছে তা এক নিমিষেই শেষ করে ফেলবে মেয়েটা।হুট করে ভয়ার্ত তোশার মুখপানে তাঁকালো সে।কী সুন্দর মায়ামাখা মুখখানি।এমন মায়া সে রোজ দেখতে চাইবে।তোশার চোখের কার্ণিশ ছুঁয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।ছোট্ট করে বলল,
“ভালোবাসি তো কবীর শাহ।”
“ভালোবাসো ঠিক আছে।কাছে আসো।আমার স্ত্রী হতে চাওনা?বিয়েটা চলো এখন করে আসি।এরপর দুজনের রাত রঙিন হোক।”
“না।এটা ভালোবাসা না কবীর শাহ।”
“আমার কাছে এটাই ভালোবাসা।যদি না পারো এখুনি বের হবে রুম থেকে।”
“এটা কী পরীক্ষা?”
“ধরে নাও।”
ফুঁপিয়ে কান্না করে উঠলো তোশা।কবীরকে আজ ভিন্ন লাগছে তার কাছে।
“আমি ষোল বছরের একজন মেয়ে।তার কাছে কীভাবে আপনি এমন কিছু আশা করেন?”
নিজের কথায় তোশা চমকে উঠলো।সে এই কথাটা বলে তাদের সম্পর্ক যে সম্ভব নয় সেটাই বুঝিয়েছে।কবীরের অধরে হাসি ফুটে উঠলো।সে এগিয়ে এসে তোশার গালে হাত দিয়ে উষ্ণ স্পর্শ করে বলল,
“ভালোবাসা বৈবাহিক সম্পর্কের সঙ্গে যুক্ত।আর বিয়ে শারীরিক লেনাদেনায় অনেকটা টিকে থাকে।আমার বাচ্চার মুখ থেকে মা ডাক শোনার জন্য আমার স্ত্রী হতে হবে।যাও বের হও রুম থেকে।তা নয় ধাক্কা দিয়ে বের করবো।”
তোশা এক মুহুর্তও সেখানে দাঁড়ালো না।কবীর এই ছোট্ট পুতুলটির মন একটুও ভাঙতে চায়নি।এতোটা কঠোর কখনো সে হতো না।যদি না দিশা সবকিছু কবীরের বাবাকে জানাতো।সেই এখন ফোন করে অনেকগুলো কথা শুনিয়ে দিলো।অবসন্ন মন নিয়ে কবীর বিছানাতে গা এলিয়ে দিলো।সিলিং এর পানে তাঁকিয়ে ফিসফিস করে বলল,
“আমাকে ক্ষমা করিও তোশা।নিজেকে এতোটা ছোট করতে হলো শুধু তোমাকে দূরে সরানোর জন্য।”
চলবে।