আমার প্রথম বাচ্চা,নরমাল এ হয়।প্রায় ১৮ঘন্টা লেবার ছিল।আমি চিৎকার চেঁচামেচি খুব কম করসি,প্রতিবার ব্যাথার দমক আসলে আমি শুধু দাঁত মুখ খিচে বেডের রড ধরে পরে থাকতাম।
আমার জনাব ভীতু মানুষ।ইনডিউজ এর জন্য সেলাইন পুশ করার সাথে সাথেই আমি বললাম,”তুমি চলে যাও,থাকার দরকার নাই।”
সে বলল,”না আমি থাকবো।”
২-২.৩০ঘন্টা সে আমার হাত ধরে হাউ মাউ করে কাঁদলো, এরপর ঝটকা দিয়ে বের হয়ে চলে গেল।শুনছি বাকি রাত জায়নামাজে বসে কেঁদে কেঁদে কাটাইসে।
২য় বার,আমার নরমাল হওয়ার পুরা চান্স ছিল, ডাক্তার,সব রিলেটিভ খুব চাপ দিল,নরমাল করো।আমি,আবার সেই পেইন নেয়ার জন্য রাজি ছিলাম না।
পরে সবাই ওকে ধরলো,যেন আমাকে রাজি করায়।সে জাস্ট বলল,”ওকে পেইনে আমি দেখসি,আবার দেখার ক্ষমতা আমার নাই।আমি ওকে এই নিয়ে প্রেসার দিব না।ও যেটা ভালো বুঝে,সেটাতেই আমি সাথে আছি।”
আমার সিজার হলো।
কিন্তু বাচ্চা হওয়ার পরে আমাদের মধ্যে ডিস্টেন্স অনেক বেড়ে যায়।ও আমাকে টাচ ই করতো না,কাছে আসা তো দূরে থাক।বলত,”তুমি ব্যাথা পাবা।আরো সময় যাক।”
কিন্তু আমি বুঝতেসিলাম,এতে দূরত্ব আরো বাড়বে,কমাবে না।তাছাড়া এমন দুর্বল সময়ে অনেকেই সুযোগ নেয়।
মাঝে মাঝে ওর উপর রাগ হত,পোস্ট প্রেগনেন্সি হরমোন এর জন্য ডিপ্রেশন, ফ্রাস্ট্রেশন মাথায় চেপে বসত।
মাঝে মাঝে ড্যাম কেয়ার ভাব করতাম,থাক,না আসলে নাই,আমার অত শখ নাই,যাক জাহান্নামে।আমার কি।
এভাবে মাসের পর মাস যেতে থাকে,ডিপ্রেশন কথায় ও মুখে বুঝা যেতে শুরু করে,দুইজনের ই।
জানি না আমার ভিতরের কেউ খুব তাগাদা দিল,নাহ,তোমাকেই আগাতে হবে,তোমাকেই ইনিশিয়েটিভ নিতে হবে,না হলে এই সম্পর্কের খবর আছে।
বাচ্চা আসার আগেও যে কাজ করার কথা জীবনে ভাবি নাই,তাই করা শুরু করলাম।
সে অফিস থেকে ফেরার আগে সেজেগুজে বসে থাকতাম।
নিজের সব ক্লান্তি,একটা বাক্সে বন্ধি করে হাসি খুশি,উচ্ছল থাকতাম।
কোন মতে বাচ্চাকে ঘুম পারায়, আগের মত তার সাথে বসে রাত জেগে টিভি দেখতাম,ঘুমে, টায়ার্ডে চোখ জ্বলত, তাও মধ্য রাতে চা,নাস্তা নিয়ে বসে গল্প করে,মুভি দেখতাম।
ধীরে ধীরে খুবই ধীরে ধীরে সে নরমাল হতে থাকলো, আমি তার কাছে তার বাচ্চার মা হওয়ার সাথে সাথে আবার বউ হতে থাকলাম।
ও পরে বলসিল,আমি যদি না আগাতাম,এই ডিস্টেন্স কোনদিন কমত না হয়ত আরো খারাপ দিকেই যেত।।।
এত প্যাচাল পারলাম,এক ছোট বোনের বর্তমান অবস্থার কথা ভেবে।তার একটাই ধারণা, জামাই তার প্রতি আর ইন্টারেস্টেড না।আর ভালোবাসে না ইত্যাদি।।
আর এমন সিচুয়েশন এর মধ্য দিয়ে ম্যাক্সিমাম নতুন প্যরেন্টস যায়।
আর দুঃখজনক হলেও খুব কম হাজব্যান্ড ই এই ক্ষেত্রে হেল্পফুল আর আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়।
আর প্রেগনেন্সি হরমোন এর চাপে আমরাও নিজের রাগ জিদ দেখিয়ে সিচুয়েশন আরো খারাপ করে ফেলি।
আমরা যেভাবে মা হই, ছেলেরা সেভাবে বাবা হয় না।দশ মাস বাচ্চা আমাদের ভিতরে থাকে,বাবা রা হয়ত শুধু বাইরে থেকে কিক ফিল করে।এরপর একদিন হঠাৎ করেই একটা বাচ্চা তার কোলে দিয়ে বলা হয়,”এই নাও তোমার বাচ্চা,তুমি এখন বাপ।”
ওদের খুশির ঝাপটা টা কেটে যাওয়ার পর আসে রেস্পন্সিবিলিটি আর নতুন লাইফে এডজাস্টমেন্টের ধাক্কা।বাচ্চার সাথে বাবার বন্ডিং হতে কিছু সময় লাগে,তার উপর তার বেটার হাফ পুরা দিন থাকে টায়ার্ড,খিটখিটে মেজাজে।সেলাই এর ব্যাথায় কাতর।
এই অবস্থায় বেশিরভাগ সময় সে নিজেকে দূরে রাখাটাই সবার জন্য ভালো বলে মনে করে।”আমি আর কিছু করতে পারতেসি না,তো ওদেরকে স্পেস দেই ” ,অনেক রাত পর্যন্ত অফিসে থাকা বা আলাদা বিছানায় ঘুমানো কে সে নিজের দ্বায়িত্ব ভাবে।এভাবে সে আস্তে আস্তে একা হয়ে যায়।
অনেকে শুনি হাজব্যান্ড ছাড়া বাচ্চা নিয়ে আলাদা ঘুমায়,কারন বাচ্চা রাতে কাঁদলে বাবার ঘুমে ডিস্টার্ব হয়।এটা আমার মতে খুবই ভুল কাজ।
বাচ্চা হলে মা কে কোটি কোটি স্যাকরিফাইজ করতে হয়।সাথে বাবাকেও কিছু স্যাকরিফাইজ করতে শিখা উচিত।বাচ্চার ঘুম ভাঙলে মা কে ঘুমাতে দিয়ে বাচ্চাকে কোলে নিয়ে হাঁটা,বাচ্চার টুকটাক কাজ করা বাচ্চার সাথে বাবার বন্ডিং বাড়ায়, দ্বায়িত্ব বোধ বাড়ায়,নিজেকে ইনভলব,গুরুত্বপূর্ন ভাবতে পারে।
আলহামদুলিল্লাহ, সেই কয়েকমাসের কষ্টের ফল,এখন পাচ্ছি।বাবা ছেলের বন্ডিং দেখতে দেখতে আমার সময় কেটে যায়,ছেলের সব কাজে সে এগিয়ে আসে,আমার সব কাজে হেল্প করে,যতটা সম্ভব আমাদেরকে সময় দেয়,আমাকে সব সময় হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করে, আলহামদুলিল্লাহ এখন সব নরমাল,actually নরমাল থেকেও অনেক বেশি ভালো।
আগে যত ভালোবাসতো,কেয়ার নিত,এখন তার দশ গুন নেয়।
তাই কষ্টই হোক,আমাদের ও উচিত দিন বা রাতের কিছু সময় হাসব্যান্ডের জন্য দেয়া।যেভাবেই হোক,যত কষ্টই হোক,যত টায়ার্ড থাকি।
দিনশেষে কিন্তু,আমদের সবারই দুইটা বাচ্চা,একটা শাশুড়ির বাচ্চা,একটা আমার বাচ্চা??
মা_হওয়ার_গল্প
পিংকি