Sunday, October 5, 2025







মা’ওয়া পর্ব-০৪

~মা’ওয়া~
মোর্শেদা হোসেন রুবি
পর্ব-০৪

সময়টা মাগরিবের নামাজের পরপর। যখন কিছুটা ছায়া ঘনাতে থাকে। গাছের ছায়ায় আর ঝোঁপের নিচে। থোকা থোকা অন্ধকার জমতে শুরু করছে। এরকম একটা সময়ে রাহিমা চাচির সাথে তার পুরো বাড়িটা একবার ঘুরে এলো ইশারা। চাচির সাথে হাঁটতে ভালোও লাগছিল ওর। চাচি মানুষটা বয়সে বৃদ্ধ হলেও মনের দিক থেকে বেশ তরুণী। হাঁটতে হাঁটতে অনেক ধরণের গল্প করলেন তিনি। জীবনের উদ্দেশ্য বোঝালেন। ইশারা চাচিকে যতই দেখছে ততই যেন অবাক হচ্ছে। দিনের আলোয় ঘরের আড়ালে ঘোমটা দেয়া চাচিকে দেখে বোঝাই যায়না আসলে তিনি কতটা প্রানোচ্ছ্বল। সন্ধ্যে মেলাবার পর তিনি নিজেই প্রস্তাব করেছেন ইশারাকে। বলেছেন, ” চলো মা, একটু হাইটা আসি। এই সময়টা ব্যাটাছেলেরা কেউ বাড়ায় না। তোমার চাচা আর ইনজাম এসময় ঘরে ঢুকে কেতাব খুলে বসে আর আমি পুরো বাড়ি তিনচক্কর মারি। হাঁটাও হয় আবার গাছগুলোর যত্নও নেয়া হয়।” সেটা শুনেই বেরোনো।

আবছা আলোয় হাঁটতে গিয়ে নিজেকে বেশ রহস্যময়ী মনে হচ্ছিলো ইশারার। এর আগে গ্রামে এলে দুতিন দিনের বেশি থাকেনি ইশারা। সেই তিনদিনও ঘরে বসে গল্পের বই পড়েই কেটে যেতো। সারাদিনে হয়তো একবার চাচির বাড়ি উঁকি দিতো আর নয়তো চলে আসার দিন দায়সারা গোছের একটা সাক্ষাৎ। কিন্তু এবারের ভ্রমন সম্পূর্ণ আলাদা। আজ নিজের বাড়ি পর হয়ে যাওয়ায় মাত্র একদিনেই চাচি ওর কাছের মানুষ হয়ে উঠেছেন। তার কাছে আসতে ভালো লাগছে ইশারার। কথা বলে সময় কাটাতে ভালো লাগছে। বাড়িতে সবাই থাকলেও মনের কাছাকাছি আজ কেউ নেই। সবারই চেহারায় যেন একটা আলগা মুখোশ ঝুলছে। যে কোন মুহূর্তে খসে পড়বে ওটা।

আজ সকালে চাচির কথায় বড় ভাইয়া আর মাসুমা আপা বিচার পেছানোর কথায় রাজী হলেও সন্ধ্যেটা নষ্ট করতে রাজি হয়নি। সবাই দল বেঁধে বেরিয়েছে বাবার পরিত্যক্ত সাম্রাজ্য দেখতে। যদিও মুখে বলেছে গ্রাম ঘুরে দেখবে কিন্তু ওদের গা টিপাটিপি আর কুটকুট হাসি দেখেই অনুমান করেছে ইশারা। এক রাতে ধনী হয়ে যাবার আনন্দে বিভোর সবাই। ইশারা ইচ্ছে করেই ওদের সাথে যায়নি। গেলে ভালো লাগবে না জানে বলেই যায়নি।

পুরোটা বিকেল আজ ছোটমার সাথেই ছিল। সন্ধ্যার খানিক আগে ছোটমাকে দেখতে তার আত্মীয় স্বজন এলে মাকে বলে চাচিদের বাড়ি চলে এসেছে ইশারা। চাচির এখানেই মাগরিব পড়েছে। অবশ্য সে একা নয়। নামাজ গত দুদিন ধরে ওর বাকি ভাইবোনেরাও পড়ছে। হয়তো বাবার চলে যাওয়া উপলক্ষেই চলছে এটা । কতদিন এমন চলবে ইশারা নিজেও জানেনা। তবে সে নিজের মনে মনে ঠিক করেছে এবার থেকে আর নামাজ ছাড়বেনা।

” এই যে, এটা হলো আমার সাহেদের চেম্বার।” চাচির ডাকে সম্বিত ফিরলো ইশারার। ভালো করে তাকাতেই দেখলো একটা দোচালা ঘর। ঘরটায় তালা দেয়া। ইশারা অবাক হলো। বললো, ” সাহেদ ভাই এখানে বসেন নাকি? ”

” আরে না। সবদিন তো বসেনা। প্রতি শনিবার বসে। শুক্রবার রাতে বাড়ি চলে আসে। রাতটা থেকে পরদিন শনিবার সকাল থেকেই এখানে বসে। দুপুরে খানিক জিরিয়ে যাবার আগে বিকেলে আরো একঘন্টা। এটা তোমার চাচারই ইচ্ছা এবং আদেশও। বাপের আদেশ মেনেই গত এক বছর ধরে প্রতি সপ্তাহে এটা করার চেষ্টা করে সাহেদ। গ্রামের দরিদ্রদের বিনামূল্য চিকিৎসা করে। আজকাল ওর ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় নিয়ম মেনে প্রতি শুক্রবার আসতে পারে না। মাসে দুবার আসে। না এলে তোমার চাচা অনেক রাগ করে।”

ইশারার ভালো লাগলো উদ্যোগটা। মুচকি হেসে বলে বসলো,” বাহ ভালো তো। আমি ডাক্তার হয়ে গেলে আমিও গ্রামে এসে রুগী দেখবো।”
ওর কথা শুনে রাহিমা উজ্জ্বল চোখে তাকালেন। হেসে বললেন, ” তুমি চাইলে সেই ব্যবস্থাও হতে পারে।”

” মানে ? কীভাবে? ”

রাহিমা এবার এগিয়ে এসে ইশারার হাত ধরলেন,” আজ সকালে এই কথাটা বলার জন্যই আমি তোমাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। ইচ্ছে ছিল তোমার ছোটমার সামনেই বলি। কিন্তু অন্যান্য প্রসঙ্গ এসে যাওয়ায় আর বলা হয়নি।” রাহিমাকে ইতস্তত করতে দেখে ইশারা অভয় দানের হাসি হাসলো।

” এতো হেজিটেট করার কী আছে চাচি। বলুন না। আমি তো আপনার মেয়ের মতোই।”

” তা তো অবশ্যই। আমি নিজেও তোমাকে ঐ চোখেই দেখি। দেখো মা, তুমি এখন সাবালিকা। নিজের ব্যপারে ভালো মন্দ বোঝার ক্ষমতা তোমার আছে। এদিকে তোমার ভাইবোনরাও সবাই এখন গ্রামে। পরে চাইলেও ওদেরকে গ্রামে একসাথে জোটানো সম্ভব হবে না। নইলে আমি আরো অপেক্ষা করতাম। কী জানি আবার কবে সবাই এক হয়। হবে কিনা তাই বা কে জানে। ” রাহিমা থামলেন। ইশারার কৌতুহল বাড়লো। রাহিমা দ্বিধা কাটিয়ে উঠলেন। আস্থার সাথেই বলতে লাগলেন, ” শোনো মা, আমি সরাসরি কথা বলতে পছন্দ করি। ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বলা আমার স্বভাববিরুদ্ধ। তুমি লালমিয়া ভাইয়ের মেয়ে। আয়না ভাবিও আমার অনেক শ্রদ্ধার একজন মানুষ। তার উপর তোমার বাবা মা দুজনেই চলে গেছেন। তুমি নিজেও হয়তো আর এক সপ্তাহ এই গ্রামে আছো। সবমিলিয়ে কথাটা এখনই বলতে হচ্ছে। তুমি কিছু মনে করোনা যেন ” বলে রাহিমা কিছুক্ষণ থামলেন। তারপর ইশারার দিকে তাকিয়ে বললেন ,” আমার সাহেদকে তো তুমি মোটামুটি ভালো করেই জানো। ও তোমার চাচাজান বা ইনজামের মতো ধার্মিক হয়নি তবে বাপের স্বভাব ওদের সব ভাই বোনের রক্তে। ছেলে আমার অসৎ পথে পা বাড়ায়নি। বিয়ের কথা অনেকদিন ধরেই বলছিলাম। ও বলে তোমার পছন্দে বিয়ে করবো। গতকাল তোমাকে দেখার পর থেকেই সাহেদের এই কথাটা মাথায় ঘুরছে আমার। আমি বলি কী মা, বিয়ে তো একদিন করবেই। তাহলে আর দেরি কেন। আজ বুধবার। কাল বাদে পরশু সাহেদ গ্রামে আসবে। তুমি চাইলে সাহেদের সাথে কথা বলে দেখতে পারো। তারপর নাহয় তোমার মতামতটা জানাও। আখতার মাসুমা রুমানা সহ তোমার সব ভাই বোনই তো আছে এখানে। আমার তো মনে হয় ওরাও খুশি হবে। আমি বলি কী, সাহেদকে তুমি আগে দেখো কারণ ওকে তুমি অনেক আগে দেখেছো। ইদানিং তো আর দেখোনি। তাই ওকে দেখো, কথা বলো। তারপর সিদ্ধান্ত নাও। আমি কী বলতে চাইছি বুঝতে পারছো তো মা ? ”

ইশারার চেহারা এবার আপেলের রঙ ধরলো। যত বিদুষিনীই হোক না কেন, বিয়ের কথায় লজ্জা পায়না এমন নারী বোধহয় জগতে নেই। সে মুখ নামিয়ে বললো ,” এখনই বিয়ে? আমার পড়াশোনা তো শেষ হয়নি চাচি ? ”

” জানি। আমাদের দেশে পড়াশোনা শেষ না হলে বিয়ে করা যায়না। বাকি সব করা যায়। ওতে কেউ বাধা দেয়না। নিরুৎসাহিত করে বলে না, পড়াশোনা শেষ হয়নি এখনই প্রেম কিসের। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে কিংবা ক্লাস শেষ করে প্রেমিকাকে নিয়ে আড্ডা দিলে কারো পড়াশোনা নষ্ট হবার ভয় জাগেনা কিন্তু যেই না বিয়ের কথা উঠবে তখনই রব উঠবে। সংসার করবে না পড়বে। আগেকার দিনে যেসব মেয়েরা ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হয়েছে খোঁজ নিয়ে দেখো তারা সবাই বিয়ে করে বাচ্চা কোলে নিয়েই এসব করেছে। বরং বিবাহ বহির্ভূত অস্থিরতা মানুষকে পড়াশোনাতে বিচলিত করে, বিয়ে করে ঠান্ডা মাথায় পড়তে বসলে তা আর হয়না। বাকি রইলো পরিবারের সমর্থন। এটা তুমি পুরোপুরি পাবে। কাজেই ও নিয়ে একদম ভেবোনা। সাহেদকে তোমার পছন্দ হয়ে গেলে বিয়ের পরের সময় নিয়ে তোমাকে একটুও ভাবতে হবেনা। ঐ চিন্তা ইনশাআল্লাহ আমার। ”

ইশারাকে নিরব দেখে আর কথা বাড়ালেন না রাহিমা। তার মনে হলো তার যা যা বলার তা তিনি বলে ফেলেছেন। এরপরেও আর এটা নিয়ে কথা বলা মানে ওকে চাপ দেয়া। সেটা তিনি করবেন না। এরপরের ভূমিকা ইশারাকে নিতে হবে। ওর আগ্রহ না দেখলে তিনি আর এ নিয়ে কথা তোলার পক্ষপাতি নন।

ওরা দুজনে হাঁটতে হাঁটতে ঘরে চলে এলো।শোনা গেলো ঈশার নামাজের পরই বিচার কার্য শুরু হবে। রাহিমা অযু করতে ঢুকলে ইশারা পাশের ঘরে চলে এলো। চাচির কাছে শুনেছে এই ঘরটাতেই নাকি বিচার হবে।

ঘরে ঢুকেই থমকে দাঁড়ালো ইশারা। ঘরটা আয়তনে বিশাল। গ্রামাঞ্চলের ঘরগুলো যেমন হয় এটা তারচেয়েও কিছু বড়। দুদিকেই বড় বড় ঝরোকা। সেগুলো দিয়ে এলোপাতাড়ি বাতাস আসছে। ওগুলিকে জানালা বলতে ইচ্ছে করলো না ইশারার। ছোট ছোট চারটা করে কপাট। শহরের স্লাইড করা থাই গ্লাসের জানালার মতো নয়।

রাহিমা চাচিদের বাড়িটা এমনিতেই পুরোনো ধাঁচের। শহুরে অনেক সুবিধা থাকলেও ডিজাইনটা সেই পুরোনো ধাঁচেরই। প্রাচীন জমিদার বাড়ির মতো। একটু আগে চাচির কাছেই শুনেছে এই রুমটা ইনজিমামের। সে নাকি আজকাল গ্রামেই থিতু হয়েছে। চাচার মাদ্রাসা বড় করবে বলে গোঁ ধরেছে। অথচ ওর পড়াশোনা বেশ ভালো। ইশারার ধারণাকে টপকে গেছে ইনজির প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতা। সে চাইলেই রাজধানীর যে কোন নামকরা প্রতিষ্ঠানে যোগ দেবার যোগ্যতা রাখে। কিন্তু এই বেকুবটা নাকি ইচ্ছা করেছে সে গ্রামেই থাকবে। এখানকার মাদ্রাসা দেখাশোনা করবে। ওর মতে সবাই যদি উচ্চশিক্ষা নিয়ে দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়ায় তাহলে অজপাঁড়াগাঁর রত্নগুলোকে শাণিত করবে কে। এদেরকেও তো বড় হবার সুযোগ দিতে হবে। এমনটাই নাকি ইনজামের বক্তব্য। ওর এসব কথার কাছে হার মেনে রাহিমা চাচি এখন কিছু বলা ছেড়ে দিয়েছেন। সেই থেকে ছেলে এখানেই পড়ে আছে। সবশুনে ইশারাও মন্তব্য না করে পারেনি। সে বলেছে, ” ইনজি গায়ে গতরে বাড়লে কী হবে চাচি ! বুদ্ধিতে গবেটই রয়ে গেলো। এই গ্রামে কী কোন ফিউচার আছে আপনিই বলুন।”
শুনে রাহিমা হেসেছেন কিছু বলেন নি।

ঠুকঠাক শব্দ হচ্ছে। দুজন কিশোর একটা বড় চাদর ধরে আছে। আর ইনজাম চেয়ারের উপর দাঁড়িয়ে দেয়ালে পেরেক ঠুকছে। সম্ভবত ঘরের মাঝখানে চাদর ঝুলিয়ে ঘরটাকে দুভাগ করার ব্যবস্থা হচ্ছে। ইশারা আস্তে করে বাচ্চা ছেলে দুটোর হাত থেকে চাদরটা নিয়ে নিলো। ইনজাম তখনও বিশেষ মনোযোগে পেরেক ঠোকার কাজ করছে। পেছনের ঘটনা সম্পর্কে সে অবহিত নয়।

ঠোকার কাজ শেষে চাদর নেবার জন্য ঘুরে তাকাতেই ইলেকট্রিক শক খেলো ইনজাম। চাদর হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ইশারা। ওকে তাকাতে দেখেই হাসলো সে।
ভ্রু নাচিয়ে বললো, ” কী রে চারচোখ ? তোর চশমা কই ? চাচি না বললে তো তোকে চিনতামই না।” ইশারার মুখে সেই পুরোনো দুষ্টু হাসি।
ইনজাম ওর কথার জবাব দিলোনা। ইশারা কিছুটা বিস্মিতই হলো এবার।

” কী রে ? আমাকে তুই চিনতে পারিসনি ? দেখলেই অমন পালাস ? বড়দের দেখলে যে সালাম দিতে হয় তাও জানিস না নাকি ? এই বুঝি তোর ধর্মীয় শিক্ষা ? ” বলে কপট রাগে মুচকি হাসলো ইশরা। যেন ইনজামের চালাকি ধরে ফেলেছে।

ইনজাম পাথরের মুর্তির মতো দাঁড়িয়ে কথাগুলো শুনলো। তারপর কিশোর দুজনের দিকে তাকিয়ে বললো, “এ্যাই , তোমাদেরকে কী বলেছিলাম যে কেউ এসে চাইলেই চাদর দিয়ে দেবে? হ্যাঁ ? “শেষের শব্দটা ধমকের সুরে বললো ইনজাম। তাতেই বিস্মিত হলো ইশারা। সে একবার ইনজামকে আরেকবার কিশোরকে দেখলো।

অবাক বিস্ময়ে বললো, ” তুই ওদের বকছিস কেন ? চাদরটা তো আমিই নিলাম । কেমন কাঠখোট্টা হয়ে গেছিস তুই ? ” ইশারা এটা বলার সাথে সাথেই চিকন কণ্ঠে বললো কিশোরদের একজন বলে উঠলো,” আমরা দেইনি উস্তায। উনি টান দিলেন। আমরা ছেড়ে দিয়েছি।”

” হাপ্ ! চাদর ছেড়েছো কেন ? আবার বলো টান দিয়েছে। টান দিলেই দিয়ে দেবে নাকি ? বোকার দল।” ধমক মেরে কথাগুলো বলে ইশারার দিকে হাত বাড়ালো ইনজি তবে নজর ফেরালো না।
ভারি স্বরে বললো, ” চাদরটা দিন।” ইশারার বিস্ময় উপচে পড়লো এবার। তবে চাদরটা এগিয়ে দিলো না । ইনজাম বাচ্চা দুটোকে হাত তুলে ইঙ্গিত করলে তারাই ইশারার হাত থেকে চাদর নিয়ে নিলো।

ইশারা আর কোন কথা না বলে চুপচাপ ওদের কাজ দেখতে লাগলো দাঁড়িয়ে। হঠাৎ ওর মনে হলো ইনজাম বেশ অস্বস্তি বোধ করছে ওর তীক্ষ দৃষ্টির সামনে। অথচ একটা সময় কত চমৎকার ঠাট্টার সম্পর্ক ছিল ওদের। দুজনে কত গল্প ঠাট্টায় সময় পার করেছে। আর আজ?

চাদর মেলা হয়ে যাবার পর ইনজাম চেয়ার থেকে নামলে ওর মুখোমুখি দাঁড়ালো ইশারা। অনেকটা পথ আটকে দাঁড়ানোর মত করে। বললো, ” তুই বোধহয় আমাকে চিনিস নি ? আমি ইশারা। ”

” চিনবো না কেন। ভালো করেই চিনি।” বলে নিজের হাতুড়ির দিকে তাকিয়ে রইলো সে। তাতেই রেগে গেলো ইশারা।

‘ তুই আমার দিকে তাকালে কী তোর চোখ খসে পড়বে। এ্যাই কাঠমোল্লা বান্দর, তাকা নয়তো আগের মতো ধাক্কা খাবি।”

” ইশারা। ঝামেলা করিস না। সর এখান থেকে।”শেষ পর্যন্ত পুরোনো মেজাজে তেতে উঠতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলো ইনজাম। ইশারার রাগ এবার অভিমানে রূপ নিলো।

” ওহ..তারমানে আমাকে আপনি চিনতে পেরেছেন। তাহলে এতোক্ষণ বড় বড় ভাব নিচ্ছিলেন কেন? একটু আগে তো আপনি বলেও ডাকা হচ্ছিলো। হাতে পায়ে বড় হয়ে নিজেকে বিরাট হুজুর ভাবা শুরু করেছিস তাই না ? বড়দের সম্মানটাও করতে জানিস না। ”

” আমি তোকে সম্মান করি বলেই ওভাবে বলেছি। তুই তোকারী এই বয়সে মানায় না। আমরা এখন আর ছোট নেই যে সব কথায় তামাশা করবি। ”

” তাই নাকি ? তা এই বয়সে কী মানায় বলতো শুনি ?” ইনজাম জবাব দিলো না। ইশারা অভিমানাহত স্বরে বললো,” আব্বা মারা গেলো। একটা সান্ত্বনাবাক্য বলেছিস তুই আমাকে ? এটা কেমনতর দ্বীনদারী যে আপনজনদের বিপদে পাশে এসে দাঁড়াস না। চোরের মতো পালিয়ে বেড়াস।” ইনজাম চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেললো এবার। ইতোমধ্যে কিশোর দুটো চলে যেতে ধরলে ইনজাম ওদের আটকালো। তাতে ইশারার বিস্ময় বাড়লো।

” কী অদ্ভুত।তোর চোখে আমি তবে খারাপ মেয়ে? ”

” আমি কী তাই বলেছি ? ”

” বলিস নি তবে প্রথম দিন থেকেই না চেনার ভান করছিস। এখন ছেলেগুলোকে আটকালি। কেন ? তোর কী ধারণা ওরা না থাকলে আমি তোর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বো ? তোর রক্ত চুষে খাবো ? ” রাগে গলা আটকে গেলো ইশারার।

ইনজাম এবার সরাসরি ইশারার দিকে তাকালো। পরনারী ইশারার দিকে তাকানো প্রথম এবং শেষ চাহনী।

” তুই আমার গায়ের মাহরাম ইশারা। আমার মা বোন খালা ফুপু না। তোকে একাকী দেখলে শয়তান একা তোর মাথায় না আমার মাথায়ও ভর করতে পারে। তুই ঝাঁপিয়ে না পরলেও আমি ঝাঁপিয়ে পড়তে পারি। জানিসই তো মানুষ মাত্রই ভন্ডামীর আঁধার।”

” তুই কোনটা ? ভন্ড না সাধু? ”

” কোনটাই না, সর সামনে থেকে। শহরে থেকে একদম ফাত্রা হয়ে গেছিস তুই।”

” আর তুই হয়েছিস ভন্ড।”

” এই তো ঠিক বুঝেছিস। এরপর থেকে আমার সামনে আর আসিস না।”

” এলে কী হবে ? জানিস দুদিন পর আমি তোর ভাবি হতে যাচ্ছি? গুরুজন। আর ভাবি মায়ের মতোন।”

” ভাবি কখনও মায়ের মতো না ইশারা। ভাই মরলে ভাবিকে বিয়ে করা যায়। সে মায়ের মতো হয় কী করে ? বোন হয় মায়ের মতোন। খালা ফুপু দাদি নানী এরা মায়ের মতোন। কারণ যারা মায়ের মতো বা বোনের মতো তাদের দিকে তাকালেও বাজে চিন্তা করা যায় না। কারণ তাদের সাথে বিয়েটাই হারাম। যারা তা নয় তাদের থেকে নজর সরিয়ে ফেলতে হয় নয়তো ওয়াসওয়াসা জন্মায় । যাক্, তুই এসব বুঝবি না। এবার দয়া করে সর আমার পথ থেকে। ”

চলবে,,

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ