Sunday, October 5, 2025







মা’ওয়া পর্ব-০২

~মা’ওয়া~
মোর্শেদা হোসেন রুবি
পর্ব-০২

বাদশাহ আলমগীর—
কুমারে তাহার পড়াইতো এক মৌলভী দিল্লীর।
একদা প্রভাতে গিয়া
দেখেন বাদশাহ -শাহজাদা এক পাত্র হস্তে নিয়া
ঢালিতেছে বারি গুরু চরণে
পুলকিত হৃদে আনত-নয়নে,
শিক্ষক শুধু নিজ হাত দিয়া নিজেরি পায়ের ধূলি
ধুয়ে মুছে সব করিছেন সাফ্ সঞ্চারি অঙ্গুলি।

ইশারাকে দেখেই থেমে গেলো মেয়েটা। চট করে মুখ ঘুরিয়ে একবার শিক্ষিকাকে দেখলো। তারপর আরেকদফা ইশারাকে। এবার শিক্ষিকার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করলো মেয়েটা।
মিহি সুরে ডাকলো ,’ নানিই…।”
শিক্ষিকা তখনও মগ্ন হয়ে সেলাই ফোঁড়াই নিয়ে কসরত করেই যাচ্ছেন। পুঁচকে ছাত্রীর রিনরিনে কণ্ঠ তার কানে পৌঁছেনি। তবে আবৃত্তিকারকের থেমে যাওয়া তাকে সচকিত করেছে।
মগ্নতার রেশ কাটিয়ে মুখ তুললেন ,” কী হলো থামলি কেন রে লায়লা..? ” বলতে বলতেই সামনে দাঁড়ানো ইশারাকে দেখলেন তিনি। চশমার কাঁচটা ওপর নিচ করে ঠাহর করার চেষ্টা করলেন বারদুয়েক।
ইশারা সালাম দিলে ত্রস্তে হাতের সরঞ্জাম একপাশে সরিয়ে রাখলেন। কিছুটা ব্যগ্র কণ্ঠে বললেন,” তুমি লালমিয়া ভাইয়ের ছোট মেয়ে জুমানা ইশরাত না ?”

” জি, চাচি। ” বলেই মলিন হাসলো ইশারা। চাচি ওকে ওর পুরোনামে ডাকেন। শুধু ইশারা বলতে নাকি ভাল লাগেনা। সামান্য ঝুঁকে তার পা ছুঁতে গেলে তিনি সভয়ে পা টেনে নিলেন। একইসাথে খপ করে ইশারার হাত দুটো ধরে ফেললেন।

” না না, পা ছুঁয়ে সালাম করোনা মা। পা ছুঁয়ে না।” বলতে বলতেই বিছানা ছাড়লেন তিনি। এরই মধ্যে ছাত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন ,” আজ এ পর্যন্তই থাক রে লায়লা। আজ তোর ছুটি। ”
লায়লা আনন্দিত মুখে আরেকবার ইশারাকে দেখলো। শুধু আনন্দবোধ না, কিছুটা কৃতজ্ঞতাও মিশে আছে বুঝি ঐ চকচকে চোখ জোড়ায়। ইশারার এমনটাই মনে হলো। ভাল লাগলো দেখে যে এরা অল্পতেই কত খুশি ।
ইশারার হাত ধরে টেনে নিয়ে বিছানার পাশে রাখা সোফাটায় বসলেন হাকিম মোল্লা চাচার স্ত্রী রাহিমা বেগম। স্নেহভরা চোখে ইশারাকে ভাল করে দেখে মাথায় হাত রেখে বললেন,” কেমন আছো মা ? ”

মাথা নাড়লো ইশারা। তারপর চাচিরই বলা একটা কথা মনে পড়ে যাওয়ায় বললো, ” আলহামদুলিল্লাহ।”

” বাহ্ সুন্দর জবাব। আলহামদুলিল্লাহ আলা কুল্লি হাল। সর্বাবস্থায় প্রশংসা শুধু আল্লাহর জন্যই। তা মা তুমি আজ আসতে এতো দেরি করলে কেন ? ওরা অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেছিলো তোমার জন্য।”

ইশারা মুখ নামালো এ কথায়। ওকে নিরবে কাঁদতে দেখে আলতো করে জড়িয়ে ধরলেন রাহিমা বেগম। তাতেই ঝরঝর করে কেঁদে ফেললো ইশারা। বিড়বিড় করে বাবার চলে যাওয়া আর দেখা করতে না পারার আক্ষেপ ঝরে পড়লো সেই কান্নাতে। তবে তা বেশিক্ষণ দীর্ঘস্থায়ী হতে পারলো না রাহিমার কারণে। তিনি সযত্নে চোখ মুছিয়ে দিয়ে বললেন,” ছিঃ এভাবে কাঁদে না মা। কিছু কান্না মাইয়্যাতের জন্য আযাবের কারণ হয়। এসব বলেনা। সবর করো।আল্লাহতা’লা আমাদের দুনিয়াতে পাঠানোর আগেই তো সব বলে নিয়েছেন। আমাদের জানানো হয়েছে, যে একদিন আমাদের সবাইকে তাঁর কাছেই ফিরতে হবে। একথা জানার পর এতো কান্নার যৌক্তিকতা কী বলো ? ”

” কান্না পেলে কী করবো বলুন? আমার যে আপন বলতে কেউ রইলো না চাচি। বাবা আমাকে কতটা স্নেহ করতেন তা তো আপনি জানেন। আমার নিজেরও একমাত্র আহ্লাদের জায়গা ছিল বাবা। এই মায়া অগ্রাহ্য করি কী করে চাচি।”

” হ্যাঁ, তা ঠিক। অগ্রাহ্য করার উপায় নেই আর করবোও না। আমাদের মায়াও লাগবে আমরা কাঁদবোও। বরং মায়া তো আল্লাহর রহমত যা বান্দার মনে মাখনের মতো জমে থাকে। সামান্য উত্তাপেই গলে গলে জল হয়ে ঝরে পড়ে। কিন্তু কান্নার সময় মুখ বন্ধ রাখতে হবে মা। কারণ কান্নার সময় মুখ দিয়ে যা বের হয় তা প্রলাপ, বিলাপ, সত্যের অপলাপ। পুরোটাই শয়তানের কাজ। আর কাঁদতে কাঁদতে আবেগে বলা কথা থেকেই রবের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ পেয়ে যায়। এই যে বললে, বাবা আর কটা দিন কেন থাকলো না। এটা একদম ভুল কথা। তিনি ততদিনই ছিলেন যতদিন থাকা তার জন্য কল্যানকর ছিল। ”

কথাগুলো শোনার পর ইশারা এবার নিজেকে সামলে নেবার প্রয়াস পেলো। চোখ মুছে নিয়ে স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করলো।
রাহিমা সান্ত্বনা দেবার ভঙ্গিতে বললেন,” আল্লাহতা’লা আমাদের সবকিছু বলে কয়েই এখানে পাঠিয়েছেন। বেঁচে থাকার প্রতিমুহূর্তে আমরা জানি মারা যেতে হবে। তবু মৃত্যুর মুহূর্তে আমাদের আহাজারি বেরিয়ে পড়ে। সাহাবীদের এমনটা হতো না। তাঁরা সবর করতেন। কারণ তারা প্রতিদিনই মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকতেন আর আমরা অপেক্ষা করি দীর্ঘজীবনের। কান্না কী আর সাধে বেরোয়?”

” এভাবে ভাবতে গেলে তো দুনিয়াতে মন বসাতে পারবো না চাচি। সারাক্ষণ মনে হবে কেন এতো কিছু ? এই যে আমি কষ্ট করে লেখাপড়া করছি। এতো দৌড়ঝাঁপ। তাহলে আপনিই বলুন, কেনই বা এতো কষ্ট আর কিসের এতো আয়োজন। সব যদি শেষই হয়ে যায় ? তাহলে আমার ডাক্তারি পড়ে লাভ কী ?তখন মনে হবেনা ঘরে বসে থাকি? ” ইশারা বলে চললো। রাহিমা মন দিয়ে ইশারার ক্ষেদোক্তি অনুভব করলেন। ইশারা তখনও ঘাড় বাঁকা করে বলে চলেছে,” এভাবে ভাবলে তো আমরা আর এগোতেই পারবোনা চাচি। তখন তসবিহ আর জায়নামাজ নিয়েই পড়ে থাকতে হবে। দুনিয়া আর আখেরাত কী এক করে ভাবা সম্ভব ? ” ইশারা থামলো। রাহিমা মুচকি হাসলেন।

” কেন সম্ভব না মা ? আখিরাতের জন্যই তো এই দুনিয়াটা। আখিরাত পেতে হলে দুনিয়ার বিকল্প নেই। দুনিয়াকেই আখিরাতের জন্য প্রয়োজন। যেমনটা প্রয়োজন হয় নৌকা চালাতে পানির। পানির পরিমান বেশি হলে নৌকা ডুবে যাবে আর কম হলে চড়ায় আটকে যাবে। তেমনই দুনিয়া বেশি হলে তুমি ডুবে যাবে আর দুনিয়া কম হলে চড়ায় আটকে যাবে। দুনিয়া যথেষ্ট না পেলে আখিরাত পাবে কী করে বলো ? আর রইলো তোমার ডাক্তারি। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য সুস্থ থাকা জরুরী। কাজেই তোমার এই ডাক্তারি পড়া মোটেও অনর্থক নয় মা বরং এটা অনেক বেশি জরুরী। নইলে আমাদের মুসলিম মহিলাগুলো কাদের কাছে যাবে চিকিৎসার জন্য বলো তো ? মুসলিম মেয়েদের জন্য প্রযোজ্য পেশাগুলোর মধ্যে অবশ্যই ডাক্তারি একটি। যেগুলো নিষেধ করা হয়েছে সেগুলোর কোনটাই জীবনের প্রয়োজনে নয়। তোমার কী মনে হয় নেচে গেয়ে শরীর প্রদর্শন করে বেড়ানো কী একজন মহিলার জন্য জরুরী? অবশ্যই না। বরং ঝুঁকিপূর্ণ। আর এখানেই ইসলামের নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু ইবলিশ আমাদের মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছে যে ইসলাম কাঠখোট্টাদের ধর্ম। মেয়েদের বন্দি করে রাখার ধর্ম। অথচ ইসলাম শতভাগ নারীবাদী একটা ধর্ম। এই ধর্ম মেয়েদের অধিকার আর রক্ষণাবেক্ষণের ব্যপারে যতটা সোচ্চার ততটা অন্য কোন মতবাদে নেই। ইসলাম নারীদের সমানাধিকারে না ন্যায্য অধিকারে বিশ্বাসী। আমরা তো বোকা, তাই ঠেলাঠেলি করে অধিকার আদায় করতে যাই যেখানে আমাদের প্ল্যাটফরমই আলাদা। দেখো মা পৃথিবীতে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশি। এতোবড় জনগোষ্ঠীকে উপেক্ষা করে বিশ্বের কোন দেশ মাথাতুলে দাঁড়াতে পারবে না। আমাদেরকে তাদের লাগবেই। তারা আমাদের নায্য অধিকার দিতে বাধ্য। কিন্তু দেখো আমরা মেয়েরাই তাদের কাজ কত সহজ করে দিয়েছি। তারা এখন আমাদের ঘরে বাইরে খাটিয়ে মারে আর আমাদের দিয়েই পয়সা রোজগার করে। বিনিময়ে আমাদের সামনে স্বাধীন আর বিখ্যাত হবার মূলোটা ঝুলিয়ে রাখে। আর আমরা আবেগি মেয়েগুলো ধরে নেই আমরা স্বাধীন। আমার জানামতে পুরুষের মনোরঞ্জন না করে ঐসব পেশায় তুমি দাঁড়াতেই পারবে না। ইসলাম আমাদের শুধু সেসব পেশাতে যেতে মানা করে। ডাক্তারি পড়তে মানা করেনা। শিক্ষকতা করতে মানা করেনা। নার্সিং মানা করেনা। নিরাপদ আর বৈধ ব্যবসা করতে মানা করেনা।

ইশারা স্বস্তির হাসি হাসলো এবার। তবে রাহিমার হাসি ম্লান হয়ে এলো।
“তোমরা কখনও ভেবে দেখেছো মা, আজ যদি পৃথিবীর তাবৎ মহিলা তারকারা একসাথে শোবিজ জগত ছেড়ে ঘরে বসে যায় তাহলে কার সবচে বড় ক্ষতি হবে ? ক্ষতি তাদেরই হবে যারা মেয়েদের পণ্য বানিয়ে বাজারে ব্যবহার করে। পৃথিবীর বহু সাম্রাজ্যবাদীদের পতন ঘটে যাবে। তারা স্রেফ ধ্বসে পড়বে।শত শত কোম্পানী পথে বসে যাবে। বহু ব্যবসায়ী দেউলিয়া হয়ে যাবে। কারণ আমরা মহিলারা নিজেদের জান-জীবন, যৌবন, সততা আর সৌন্দর্য দিয়ে সংসারকে উচ্ছন্নে ফেলে তাদের গোডাউন ভরে দিচ্ছি। তাদের মালামাল করে দিচ্ছি সামান্য কিছু অর্থ আর সুনামের আশায়। মনে আখিরাতের ভয়টা থাকলে আমরা মেয়েরা এতোটা বিগড়ে যেতাম না। বুঝেশুনে চলতাম। চারিদিকে তাকিয়ে দেখো মেয়েরা সৌন্দর্য লুকালেই নিয়মনীতি আর ইউনিফর্মের রব উঠছে অথচ সেজেগুজে বেরোলে সেটা অটোমেটিক নিয়মে পরিণত হয়ে যাচ্ছে। কারণ আমরা পর্দায় গেলে তাদের লস। এতো সহজে তারা এটা হতে দেবেনা। এই বুঝ সব মেয়েদের আসতে আসতে পৃথিবীই ধ্বংস হয়ে যাবে মা। কাজেই আখিরাত নিয়ে না ভেবে অন্তত আমাদের মুসলিমাদের কোন উপায় নেই। কারণ আমরা বিশ্বাস করি পৃথিবী ক্ষণিকের। ” বলে রাহিমা বড়সড় দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
ইশারা আবারও মুগ্ধ হলো চাচির কথা শুনে। ওর মনে হলো আসলেই রাহিমা চাচি বেশ ভাল বলতে পারেন। ছোটবেলাতেও সে দেখেছে চাচি যখন মহিলাদের তালিম দিতেন তখন সে নিজেও বসে বসে শুনতো মাঝেমধ্যেই।

ইশারা জানে গোটা গ্রামে সুভাষিনী বলে সুনাম আছে চাচির। তবে তিনি শুধু সুভাষিনীই নন সুহাসিনীও। সুন্দর করে হাসেন চাচি। তাঁর মেধা সম্পর্কেও অনেক কথাই শুনেছে ইশারা। তিনি নাকি খুব অল্প বয়সেই হিফজ সম্পন্ন করেছেন। জ্ঞান হবার পর থেকে সে নিজেও দেখে আসছে চাচিকে। বড়ই বুদ্ধিমতী মহিলা তিনি। চাচির ছেলেমেয়ে গুলোও ঐ পদেরই। চাচির মতোই মেধাবী। চাচি তার পুরো যৌবনকালই হাকিম মোল্লা চাচার মাদ্রাসার পেছনে ব্যয় করেছেন। তার কাছ থেকে শিখে কতশত ছাত্রী যে নিজেরা মাদ্রাসা দিয়ে বসেছে তার সংখ্যা চাচি নিজেও হয়তো জানেন না। চাচার গড়া মাদ্রাসার মহিলা বিভাগে মুহতামীম হিসেবে আছেন অনেকদিন ধরেই। চাচির ছেলেমেয়েরাও সবাই দেশে বিদেশে বিভিন্ন কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করে এখন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োজিত আছে। ইশারা জানে চাচির বড় ছেলে আশরাফ ভাই ঢাকার কোন এক নামকরা মসজিদের ইমাম ও খতিব। মেজ ছেলে কুষ্টিয়া ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। সেজছেলে সাহেদ তো আরো একধাপ এগিয়ে। সে ঢাকার নামকরা একটা সরকারী হাসপাতালে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ। ইশারার সাথে একসময় বেশ সখ্যতাও ছিল এই সাহেদের। সাহেদ ভাই যখন মেডিকেলে পড়েন ইশারা তখন সবেমাত্র স্কু্ল শেষ করার পাঁয়তারা করছে । চাচির দুই মেয়ের দুজনই গৃহিনী। তবে তাদের একজন তার শ্বশুরবাড়ি এলাকায় ছোটখাট মাদ্রাসা চালায়। অপরজন একটা কিন্ডারগার্টেনে শিক্ষকতা করে বলে শুনেছে ইশারা। সবচেয়ে ছোট ছেলেটা ইশারার সমবয়সী বা মাস ছয়েকের ছোট হবে। শেষবার যেবার এসেছিলো সেদিনই শুনেছে সে নাকি ভারতের বিখ্যাত একটা মাদ্রাসায় চান্স পেয়ে সেখানেই পড়াশোনা করছে গত দুই বছর ধরে। তবে বাকিদের সাথে কমবেশি দেখাসাক্ষাৎ হলেও চাচির ঐ ছেলেটার সাথেই ঠিকমতো দেখা হয়নি ইশারার। ইশারার এসএসসি দেবার আগেই সে ঢাকা চলে গিয়েছিলো। তখনই একবার দেখা হয়েছিলো। রোগাপটকা শরীর আর চোখে মোটা পাওয়ারের চশমা। ওকে দেখলেই চশমা টান দিয়ে নিয়ে নিতো ইশারা আর বলতো কয় আঙ্গুল বল্ তো ? ”

রাহিমা এবার ভিন্ন প্রসঙ্গে চলে গেলেন। আনুষঙ্গিক বিষয় নিয়ে আলাপ করলেন। ইশারার কলেজের খোঁজখবর নিলেন। একপর্যায়ে আবছাভাবে জানতে চাইলেন,” তোমার ফুপুরা কেউ আসেনি? তাদের কাউকে দেখলাম না যে !”

” জি না চাচি। ফুপিদের খবর দেয়া হয়নি।” জড়ানো কণ্ঠে জানালো ইশারা। বাবার দ্বিতীয় বিয়ের পর থেকেই ফুপুদের সাথে ওদের ভাইবোনদের দুরত্ব বেড়ে গেছে কারন তারা বাবাকে সমর্থন করেছিলো। এ কারণেই তাদের কাউকেই জানানো হয়নি খবরটা। রাহিমা শিউরে উঠলেন।

” সেকি ? ওদের জানাওনি ? এটা তো ঠিক হলো না মা। হাজার হোক তোমার বাবা তাদের ভাই।”

” তা তো ঠিক আছে চাচি। কিন্তু কে খবর দেবে বলুন ? সবাই তো এখানে আছে সম্পত্তি বন্টনের ধান্ধায়।” বলতে গিয়ে লালচে হলো ইশারার চেহারা।

রাহিমা বুঝতে পেরে প্রসঙ্গান্তরে বললেন, “আচ্ছা, তুমি একটু বসো। আমি তোমার জন্য শরবত করে আনি।”

” না চাচি আমি কিছু খাবো না এখন। ঐদিকে বাড়িতে সবাই বসে আছে। আমি বরং যাই।”

” এখানে আর কদিন আছো তুমি ? ”

” এই তো ছুটি ফুরালেই চলে যাবো। এমনিতেও আমাদের কলেজ আগামী কাল থেকে এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ দিয়ে দিচ্ছে। আমি বাবার খবর পেয়ে একদিন আগেই চলে এসেছি আরকি।”

” ওহ আচ্ছা। এরপর থেকে ছুটি হলে কী আর গ্রামে আসবে ? ‘

ইশারা মুখ নামালো,” কার কাছে আসবো চাচি। এখানে কার বাসায় থাকবো ? গ্রামে তো আমার কেউ রইলো না। ”

” ঢাকায় কোন বোনের বাড়িতে উঠবে বলে ভেবে…!”

” না চাচি। আমি আগেই ঠিক করেছি আমি কোন বোনের বাড়ি থাকবোনা।” রাহিমার কথা শেষ করতে না দিয়ে আগেভাগেই বলে বসলো ইশারা। শুনে রাহিমা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। মৃদু স্বরে বললেন,” তোমাকে নিয়ে তোমার বাবা খুব চিন্তা করতো জানো। তোমার ছোট মা এটা নিয়ে আমার সাথে কয়েকবার কথা বলেছে। ময়না চাইতো তোমার ব্যপারে আমি তোমার বড় ভাই বোনদের সাথে কথা বলি। হয়তো এটা তোমার বাবারও ইচ্ছে ছিল কিন্তু এরপরেও ময়না ভাবি একা এতোটা সাহস পেতেন না। তিনি তোমার আপন মা তো নন।”

” কী ব্যপার নিয়ে চাচি ? ”

” তোমার ভবিষ্যত নিয়ে মা।” কিছুটা ইতস্তত করে বলেই ফেললেন রাহিমা।

ইশারাকে দমে যেতে দেখে ফের বললেন,” আমি নিজেও তোমাকে বলি মা। তুমি এভাবে আর একা থেকোনা। আপাতত কোন ভাই বা বোনের সাথে গিয়ে ওঠো আর যত দ্রুত সম্ভব নিজের চারপাশে বেড়া দাও।”

” বেড়া মানে ? ” বড় বড় চোখ মেলে তাকালো ইশারা। রাহিমা হাসলেন ইশারার অজ্ঞতায়।

” বেড়া মানে বোঝোনি ? বেড়া মানে স্বামী। মেয়েরা যদি ফুল বাগান হয় তবে স্বামী হয় তার বেড়া। যার বেড়া যত মজবুত তার বাগান তত সুরক্ষিত। ”

” ওহ্, এগুলো তো পুরোনো দিনের কথা চাচি। আর আমি এখনই বিয়ের কথা ভাবছিনা। আমার এখনও পড়াশোনা বাকি।” আরক্তমুখে বললো ইশারা।

রাহিমা ইশারার দিকে তাকিয়ে হাসলেন, ” যুগ কখনও বদলায় না মা। বদলায় মানুষ। দুইশো বছর আগেও সূর্য পূর্বে উঠতো আর পশ্চিমে অস্ত যেতো আজও তেমনই। নারী জাতি সে যুগেও নারী ছিল আর এ যুগেও সে নারীই। তার কাঠামো বদলায় নি। বরং বদলেছে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি। যাই হোক, এটা তোমার নিজেকেই ভাবতে হবে।

রাহিমা আরো কিছু বলতে গিয়েও আর বললেন না। তার নিজের কিছু গোপন ইচ্ছে মনের কুঠুরিতে গোপনই রেখে দিলেন। তবে ইশারার মত না নিয়ে তিনি তার ছেলের সাথে কথা বলার পক্ষপাতি নন। ইশারার মতটা জেনেই তবে সাহেদকে জানাবেন। ওরা দুজনেই ডাক্তার। সম্পর্কটা মন্দ হবেনা। ইশারা মেয়েটার ভেতর দ্বীনের বুঝ কম হলেও মেয়েটার ব্যাসিক ভালো। হেদায়েতেরও লক্ষণ আছে। তবে আজই এসব কথা বলাটা ভাল দেখাবে না। বেচারির বাপটা আজই মারা গেলো। দুটো দিন যাক। ভেবে নিজেকে প্রবোধ দিলেন রাহিমা।

রাহিমা বেগমের সাথে আরো কিছুটা সময় কাটিয়ে নিজেদের বাড়িতে ফিরে এলো ইশারা।
বাড়িতে ফিরেই অবাক হয়ে গেলো সে। বাড়ির পরিবেশ আমূল বদলে গেছে। পুরো বাড়িতে যেন উৎসবের আমেজ। এ যেন বিয়েবাড়ি। অন্তত খুব বেশি পার্থক্য নেই। দুপুরের জন্য খাবার এসেছে কোন এক প্রতিবেশির বাড়ি থেকে। বিশাল একটা ডেগ ভর্তি বিরিয়ানী। ঢাকনা সরাতেই সুঘ্রানে ভেসে উঠলো পুরো উঠোন।

বড় ভাই আখতারকে দেখা গেলো লোকজনকে আদেশ করছেন উঠানেই চেয়ার আর টেবিল ফেলার জন্য। সম্ভবত উঠানেই খেতে বসার বন্দোবস্ত করা হবে। কে যেন একজন ত্রিপল টানাতে গেল।

আখতারুজজ্জামান ইশারাকে দেখেই বললেন,” বুঝলি ইশারা। যে কদিন গ্রামে আছি। সবাই একসাথে খাওয়া দাওয়া করবো। তাই নকল ডাইনিং স্পেশ বানিয়ে ফেললাম। ঘুঘু পাখির ডাক শুনবি আর খাবি। হা হা…মনের ভু্লে হাসতে গিয়েও সামলে নিলেন নিজেকে।

ইশারা কিছু না বলে বারান্দায় উঠে এলো। সেখানে বড়আপা আর তাদের শ্বশুড়বাড়ির লোকদের জটলা দেখে এড়িয়ে যেতে চাইলো সে। সবারই একটা বাড়তি আগ্রহ যেন ওকে ঘিরে। দেখলেই থুতনী নেড়ে, ‘ আহারে সিয়ানা মাইয়াটা’ শুনলেই গা জ্বলে যাচ্ছে ইশারার।

গোধূলির পাশ দিয়ে যাবার সময় বাধা পেলো। ওর কাঁধ খামচে ধরে ওকে থামালো গোধূলি। চাপা ক্রোধে বলতে লাগলো,” বড়আপার কান্ডটা দেখেছিস ? গুষ্টিশুদ্ধ ডেকে এনেছে। আর এরা এমন হাভাতে গোষ্ঠী বলামাত্রই সব দলবেঁধে বসে গেলো। বড়আপা এখন এগুলারে খেতে বসাবে। খাবার শর্ট পড়বে দেখিস তুই।”

গোধূলির কথার জবাব না দিয়ে নিরব বিস্ময়ে বড়বোনদের নির্লজ্জ কান্ডজ্ঞানহীনতা দেখতে দেখতে নিজের মনেই মরমে মরে যেতে লাগলো ইশারা। মাসুমার শ্বশুরবাড়ি পাশের গ্রামেই। প্রতিবেশি আত্মীয় বলে তারা সবাই দলবেঁধে এসেছিলো এখানে। উদ্দেশ্য রথ দেখার পাশাপাশি কলা বেচা। ঘটনা সেরকমই মনে হচ্ছে। কারণ বড়আপার সাথে যারই দেখা হচ্ছে তাকেই তিনি ধরে ধরে শোনাচ্ছেন ,” আরে, আগামী দুতিনদিন তো কোথাও নড়তেই পারবো না। বাবা চলে যাবার খবরটা শোনার পর থেকেই শরীরে জোর পাচ্ছিনা আমি। এদিকের শ্বশুরবাড়িও যাওয়া দরকার। তাই ওদেরকেই ফোনে ডাকলাম যে তোরাই আয়…।”

ছোট্ট করে দীর্ঘশ্বাস ফেললো ইশারা। মৃদু স্বরে বললো, ” আমি বিরিয়ানী খাবোনা, তোমরা খাও। ইনশাআল্লাহ, শর্ট পড়বেনা। ”

” আহা ঢং। তোর একজনের খাবার যেন দশজন খাবে। ”
ইশারা জবাব না দিয়ে সরে যেতে ধরলে গোধূলি হঠাৎ ওর কব্জি চেপে ধরে বারান্দার একপাশে টেনে আনলো। ওর কান্ড দেখে অবাক না হয়ে পারলো না ইশারা। গোধূলি ওর গলার স্বরকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের খাদে নামিয়ে এনে বলতে লাগলো ।

“ইশু শোন্, রুমানা কিন্তু তোকে ওর দেবরের জন্য বাগাবার তালে আছে। তুই একদম সরাসরি মানা করে দিবি।”

-” মানে ? ” শূণ্য চোখে তাকালো ইশারা। গোধূলির কথাগুলো বুঝতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে ওর।

” মানে আবার কী ? নিজের ডাক্তার বোনকে দিয়ে দেবরের উপর ছড়ি ঘোরাবে। সবাই জানে তুই শান্তশিষ্ট নরম প্রকৃতির। কাজেই তোকে অপারেট করা সহজ। রুমানা তো আর এমনিতেই দেবরের নাম নেয়নি। এক ঢিলে দুই পাখি মারবে রুমানা। আমি নিশ্চিত এটা ওর নগদ চাল। দেবর বিয়ে করতে চাইছে টাইছে এসব কিছু না। বরং রুমানাই তোকে দিয়ে ওর মালদার দেবরকে বাগাবে। বুঝেছিস কিছু ? রুমানা তো নিজেকে বেশি চালাক মনে করে। ভেবেছে কিছু বুঝিনা। হাড়ির একটা দানা টিপলেই পুরো হাঁড়ির খবর জানা হয়ে যায় আমার।”

” আমাকে দিয়ে বাগাতে পারবে কে বললো? ” নির্বিকার ভঙ্গিতে প্রশ্ন করলো ইশারা। সে গোধূলিকে যতোই দেখছে ততই যেন অবাক হচ্ছে। এই মানসিকতা নিয়ে সে ব্যাঙ্কে চাকরি করে কীভাবে অাল্লাহই জানে। হঠাৎই চাচির একটা কথা আবছা ভাবে একটা কথা মনে এলো ওর। এই দুনিয়ায় আসলে কেউ কারো না। সবাই স্বার্থপর।

” আপা, আমি ছোটমার কাছে গেলাম।” বলে গোধূলির হাত ছাড়িয়ে ভেতর দিকে পা বাড়ালে ফের বাধা পেলো।

” এ্যাই দাঁড়া। বিরিয়ানী না খেলে কী খাবি তবে ? ”

” খিদে পায়নি এখনও। আর পেলেও সাদা ভাতই খাবো। ডাল দিয়ে।”

” সেকি। ভাত কোথায় পাবি ? ” চোখ কপালে উঠলো গোধূলির।

” কেন রেঁধে নেবো।”

” তুই কী পাগল ? আগামী তিনদিন এ বাড়িতে চুলা জ্বলবে না। এতে মৃতের অমঙ্গল হয়।”

” কেন ? চুলা জ্বালানোর সাথে মঙ্গল অমঙ্গলের কী আছে ? ”

” অতশত জানিনা বাপু। মুরুব্বিরা যা শিখিয়েছে তাই মানছি। ”

” আমি ভেতরে গেলাম গোধূলি আপা। ছোটমা ঘরে একা। তার সাথে কারো থাকা দরকার।”

” আরে দুর। একা….হুঁহ, ন্যাকা। গিয়ে দেখ, সে এখন মহাসুখে আছে। মনে মনে লাড্ডু ফুটছে । বড় পুকুর পাবার আশায় সে এখন স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে। ”

” তুমি কীভাবে জানলে আপু ? ” ইশারা চেয়ে রইলো গোধুলির দিকে। কোন ফাঁকে এতো জটিলটা ভর করলো গোধুলির মনে কে জানে। কত নির্বিচারে মন্তব্য করে যাচ্ছে সে।

” জানা লাগে নাকি ? সে তো আমার বাবাকে বুড়ো দেখেই বিয়ে করেছিলো। ভালো করেই জানতো বুড়ো আগে মরবে। তাহলে সম্পত্তির লোভে বিয়ে করে এখন দুঃখের ভাব দেখালে মানবো কেন! ”

ইশারা বিস্ময়াহত কণ্ঠে বললো,” তুমি নিজেও তো শোয়েব ভাইয়ের বেতন আর সম্পদের পরিমাণ জেনে বিয়ে করেছিলে। নইলে নাকি তুমি সিকিওরড ফিল করবে না। আমি কী ধরে নেবো শোয়েব ভাই মারা গেলে তুমি ওর পরিত্যক্ত সম্পত্তির মালিক হবে এই আশায় খুশি ? তোমার ছেলেমেয়ে দুটোই এখনও নাবালক। তুমি চাইলে ওদের সম্পত্তি দেখাশোনার ভারও পাবে। তারমানে কী শোয়েব ভাইয়ের মৃত্যু তোমার কাছে কাঙ্খিত কিছু ? ”

ইশারার এ কথায় গোধূলি এবার রেগে গেলো। তবে রাগ প্রকাশের সুযোগ দিলোনা ওকে ইশারা। সে হনহনিয়ে ছোটমায়ের রুমের দিকে চলে গেলো। তাঁর দরজায় দাঁড়াতেই চোখে পানি চলে এলো ইশারার। বাবার একটা লুঙ্গি আঁকড়ে ধরে পড়ে আছেন তিনি। দুচোখ বুঁজে রেখেছেন। ইশারার পায়ের শব্দে চোখ মেলে উঠে বসে আস্তে করে লুঙ্গিখানা সরিয়ে রাখলেন তিনি।
চলবে,,

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ