Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"মন বিনিময়মন বিনিময় পর্ব-৪৭ এবং শেষ পর্ব

মন বিনিময় পর্ব-৪৭ এবং শেষ পর্ব

#মন_বিনিময়
#পর্বঃ৪৭ (অন্তিম)
#লেখনীতে- তাসফিয়া হাসান তুরফা

পরদিন সকালে আরেকদফা ভূরিভোজনের পর অবশেষে স্বপ্নিল রাহিতাকে নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলো। এর মাঝে সকালবেলা বাসায় যাওয়ার পথে রবীন্দ্র সরোবর চোখে পড়ায় স্বপ্নিল গাড়ি থামালো। পাশ ফিরে রাহিতার উদ্দেশ্যে বললো,

—হাটবে? চলো কিছুক্ষণ ঘুরে আসি।

স্বপ্নিলের এহেন প্রস্তাবে রাহিতা মুচকি হেসে মাথা নাড়ে। রাস্তার পাশে গাড়ি পার্ক করে দুজনে বের হয়। সকাল সকাল তবুও তেমন একটা ফাকা নেই জায়গা, মানুষ আছে ভালোই। জায়গাটা মনোমুগ্ধকর হওয়ায় হওয়ায় মানুষের আনাগোনা লেগে থাকেই। কেউ এসেছে বাচ্চাদের নিয়ে, কেউবা একা একাই বসে আছে গাছের নিচে, আবার কোনো কপত-কপোতী এর মাঝেই প্রেম করতে ব্যস্ত। এমন সব দৃশ্যের ভীড়ে স্বপ্নিল-রাহিতা হেটে চলেছে হাতে-হাত রেখে নিজেদের মতোন। লেকের পাশের টং হতে মটকা চা নিয়ে দুজন পাশাপাশি হাটছে আর গল্প করছে, যেন আশেপাশে কি হচ্ছে সেদিকে তাদের কোনো চিন্তাভাবনা নেই! নতুন নতুন প্রেমে পড়া প্রেমিকযুগলের মতো ওরা দুজনেও শুধু নিজেতেই মত্ত! এরই মাঝে ওদের ধ্যান কাটে একটি ছোট্ট বাচ্চার মেয়েলি স্বরে। ওরা সামনে তাকিয়ে দেখে, এক বাচ্চা মেয়ের হাতে তাজা বেলিফুলের মালা। আবদারের সুরে বলছে,

—একটা মালা নেন না, ভাইয়া। আপুর হাতে সুন্দর লাগবো।

ওর কথায় আড়চোখে একবার রাহিতার দিক তাকায় স্বপ্নিল। রাহিতাকে জিজ্ঞেস করে,

—ভাল্লাগে বেলিফুল? ফুলের গন্ধে আবার তোমার এলার্জি নেই তো?

রাহিতা মাথা নাড়তেই পুনশ্চ মেয়েটার উদ্দেশ্যে বলে,

—কত করে মালাগুলো?

—বিশ ট্যাকা।

—আচ্ছা, দাও তাহলে কয়েকটা।

মেয়েটা খুশি হয়ে ৬টা মালা দেয় স্বপ্নিলকে। সে ১৫০ টাকার নোট দিলে ফুলওয়ালি মেয়েটা কাচুমাচু করে বলে,

—সকাল সকাল বেচতে আসছি, এখন তো খুচরা ট্যাকা নাই, ভাইয়া।

—লাগবেনা। তুমি রেখে দাও পুরোটা।

স্বপ্নিলের কথায় খুশিতে গদগদ হয়ে চলে যায় মেয়েটা। স্বপ্নিল আশেপাশে ফাকা স্থান দেখে রাহিতাকে নিয়ে বসে গাছগাছালির মাঝে অবস্থিত একটি বেঞ্চে। ইশারায় হাত চাইতেও রাহিতা নির্দ্বিধায় বাড়িয়ে দেয়। তিনতে-তিনটে করে মেয়েটার দু’হাতে বেশ সুন্দরভাবে যত্নসহকারে বেলিফুলের মালা পড়িয়ে দেয় স্বপ্নিল। ফুলে ফুলে সুসজ্জিত রাহিতার হাতদুটো, সুগন্ধে যেন মৌ মৌ করছে। নয়নভরা খুশি নিয়ে মুগ্ধ হয়ে নিজের হাতজোড়া নেড়েচেড়ে দেখছিলো রাহিতা। ওর হাসি হাসি মুখের দিক চেয়ে স্বপ্নিল এগিয়ে বসে, দুজনের মধ্যকার দূরত্ব কমায়। বেলিফুলে আবদ্ধ রাহিতার হাত দুটো তুলে নেয় নিজ হাতের মুঠোয়। গাঢ় চুমু খেয়ে বলে,

—তোমার এ হাতদুটো দেখছি বেলিফুলের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে!

স্বপ্নিলের এহেন কথায় রাহিতা ইষত লজ্জা পায়। লাজুক হাসি ফোটে ঠোঁটের কোণে। স্বপ্নিল এত সুন্দর কথা বলবে, ওর প্রশংসা করবে সে কি ভেবেছিলো কখনো? ধৈর্যের প্রাপ্তি সত্যিই মধুর!

দুজনে বেশকিছুক্ষণ হাটাহাটি করে আবার গাড়ির কাছে ফিরে আসে। স্বপ্নিল রাহিতার জন্য গাড়ির দরজা খুলে দিতেই মেয়েটা ভেতরে বসতে ধরে। ঠিক সে সময় হঠাৎ স্বপ্নিল আশেপাশে তাকিয়ে ওর কানের কাছে এগিয়ে আসে। হঠাৎই লতিতে কাম’ড় দিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,

—অনেকক্ষন ধরেই খেয়াল করছি কিন্তু বলতে ভুলে গেছি। আজকে তোমায় অন্যরকম সুন্দর লাগছে। এর পেছনের রহস্যটা কি, মিসেস রাহিতা?

রাহিতা প্রথমে অবাক হলেও কিছুক্ষণ পর স্বপ্নিলের কথার অর্থ ধরতে পেরে শিউরে উঠে, নিদারুণ লজ্জায় চোখ বড় বড় করে তাকায়। নিজের কাছ থেকে স্বপ্নিলকে ধা’ক্কা দিয়ে সরিয়ে দ্রুতবেগে গাড়িতে বসতে বসতে বলে,

—চুপ করুন তো, অসভ্য লোক!

ওর এমন আচরণে স্বপ্নিল উচ্চহাসিতে ফেটে পড়ে। রাহিতাকে বিব্রত করতে, ওকে লজ্জা দিতে স্বপ্নিলের ভীষণ ভালো লাগে। রাহিতা যখন লাজুক চোখে কপট রাগ দেখিয়ে ওর দিকে তাকায়, স্বপ্নিলের অন্তর তৃপ্ত হয়। রাহিতার ছোট ছোট বিষয়ে যেমন ওর ভালো লাগে, তেমনি ওর ছোট ছোট কস্টেও স্বপ্নিলের মনে ভীষণ অস্থিরতা কাজ করে আজকাল। ভালোবাসা বুঝি এমনই হয়?

______________

বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে সরাসরি দিলারা বেগমের রুমে চলে গেছে স্বপ্নিল। সে মায়ের উপর ভীষণ ক্ষি’প্ত, কেন তাকে ওভাবে ধোকা দিলো তখন। সবকিছুর জবাব স্বপ্নিল চায়। তবে দিলারা বেগম এখন আছেন বেশ স্বাভাবিক ও ফূর্তিতে। স্বভাবতই নিজের বিচক্ষণতার দ্বারা তিনি বুঝে গেছেন স্বপ্নিল ও রাহিতার মাঝে সব ঠিক হয়ে গেছে। তাই তিনি বেশ স্বাভাবিকভাবেই বলেন,

—তোদের সম্পর্কে হস্তক্ষেপ করার জন্য আমায় মাফ করিস, বাবা।

বলাবাহুল্য, মায়ের মুখে এমন কথা শুনে স্বপ্নিল চমকায়। বেশ অবাক হয়। তিনি কেন ক্ষ’মা চাইছেন? স্বপ্নিল তো এজন্য আসেনি! মায়ের কথায় বিস্মিত স্বপ্নিল বিছানায় বসা মায়ের সামনে হাটুগেড়ে বসে। মায়ের কোলে মুখ গুজে ইতস্তত করে বলে,

—মা! তুমি এভাবে বলছো কেন? আমি তোমার থেকে ক্ষ’মা চাইনি। প্লিজ এভাবে বলে আমায় ছোট করোনা কখনো।

দিলারা বেগম হাসেন। ছেলে যে তাকে কতটা শ্রদ্ধা করে, কতটা ভালোবাসে তা তিনি বরাবরই জানেন। এবং এটারই একপ্রকার সুযোগ নিয়ে তিনি স্বপ্নিলের একান্তই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তগুলোয় হস্তক্ষেপ করেছেন বলেই আজ ক্ষ’মা চাইলেন ছেলের কাছে। স্বপ্নিলের মাথায় স্নেহের পরশ বুলিয়ে দিয়ে বললেন,

—আমি জানি তুই আমায় সেভাবে বলিসনি। আমার পেট থেকে হইছিস তুই, তোকে কি আমি চিনিনা? তবুও বললাম এর পেছনেও একটা কারণ আছে, স্বপ্নিল।

মায়ের কথায় স্বপ্নিল মাথা তুলে। প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকায় তার দিকে। ওর চাহনি দেখে দিলারা বেগম ছেলের চুলে হাত এলিয়ে বলেন,

—তোর মা হিসেবে আমি তোর জীবনের ছোট-বড় সব সিদ্ধান্তে নিজের মতামত দিয়েছি, যেটা আমার কর্তব্য ছিলো। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রত্যেকটা মানুষকে নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত একাই নিতে দেওয়া উচিত। তবে পরিস্থিতির শি’কার হয়ে আমি তোর জীবনের এত বড় একটা সিদ্ধান্ত, বিয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটা দায়িত্ব তোর ইচ্ছার বিরুদ্ধে তোর উপর চাপিয়ে দিয়েছিলাম। যেটা পারতপক্ষে আমার উচিত হয়নি। তবে আমি এটা করতে বাধ্য ছিলাম কারন তখন তোর যে অবস্থা ছিলো তাতে আমার হস্তক্ষেপ না করলে তোর জীবনটা আজকের পরিণতি পেতোনা। রাহিতাকে কোনোকিছু না জানিয়ে তোর সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য আমি আগেই ওর কাছে ক্ষ’মা চেয়েছি, তুই আমার নিজের সন্তান। তাই সে অধিকারবোধ থেকেই তোর কাছে কখনো মাফ চাওয়ার প্রয়োজনবোধ করিনি। তবে আজ হঠাৎ মনে হলো এখন যেহেতু সব ঠিক হয়ে গেছে তাই তোকে এটা বলা উচিত।

মায়ের কথায় স্বপ্নিল যেমন অবাক হয়, তেমনি এত উত্তম চিন্তাধারার অধিকারিনীকে নিজের জন্মদাত্রী ভাবতে বক্ষ ফুলে উঠে প্রশান্তিতে। মায়ের দু-হাতে চুমু খেয়ে আদুরে কণ্ঠে উদ্দেশ্যে বলে,

—তুমি যদি সেদিন আমার জীবনের এ সিদ্ধান্ত না নিতে তবে আজ আমার কি হতো আমি নিজেও জানিনা, মা। আমি তোমার কাছে কৃতজ্ঞ রাহিতাকে আমার জীবনে এনে দেওয়ার জন্য। আমার জীবনকে সঠিক পথে আনতে তোমার অবদান কখনোই অস্বীকার করতে পারবোনা।

ছেলের কথায় দিলারা বেগম তৃপ্তির হাসি হাসেন। প্রসঙ্গ ঘুরাতে স্বপ্নিলের কান টেনে স্বভাবসুলভ বাংগালি মায়ের মতো করে বলেন,

—তোর কৃতজ্ঞতা তখনই গ্রহণ করবো যখন আমার কোলে নাতি-নাতনি এনে দিবি। তার আগ পর্যন্ত তোর কৃতজ্ঞতা ঝুলিয়ে রাখা হলো!

মায়ের কৌতুকপূর্ণ কথায় স্বপ্নিল উচ্চস্বরে হেসে উঠে। একিসাথে হাসলেন দিলারা বেগমও। দুজনের আড়ালেই মা-ছেলের এ মিস্টি দৃশ্যের সাক্ষী হলো রাহিতা। সে-ও দরজার আড়াল থেকেই হাসলো তাদের অজান্তে। আল্লাহর কাছে দোয়া করলো যেন তাদের এ সুন্দর পারিবারিক বন্ধন সদা এভাবেই অটুট থাকে। এ জীবনে একটি সুখী পরিবারের চেয়ে বেশি মূল্যবান আর কি কিছু আছে?

________________

চোখের পলকেই পেরিয়ে গেলো সময়। রাহিতা এখন অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। পড়াশোনার চাপ যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে সাংসারিক দায়িত্ব। সামিরাও এইচএসসি দিয়ে রাহিতার ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে গেছে। স্বপ্নিলও ব্যস্ত ব্যবসা নিয়ে। ক’দিন আগে ওরা জানতে পেরেছে, দীপ্তর সাথে সামিরার প্রেমের সম্পর্ক ছিলো বিগত তিন বছর ধরে। তবে স্বপ্নিল-আনিকার সম্পর্কের পরিণতির জন্য পারিবারিকভাবে জানাতে ভয় পাচ্ছিলো তারা। তবে সামিরাকে অবাক করে দিয়ে স্বপ্নিল এক্ষেত্রে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে। সে একজনের থেকে ধো’কা পেয়েছে তার মানে এমন না যে ওই বংশের সবাই ওরকম হবে। নিজের মামাতো ভাই দীপ্ত কেমন ছেলে, স্বপ্নিল ভালো করেই জানে। রাহিতাও সামিরাকে সাপোর্ট করছে। একিসাথে দিলারা বেগমেরও আপত্তি নেই, দীপ্তও বেসরকারিভাবে বড় একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেয়েছে বিধায় পারিবারিক ভাবে আগামী মাসেই দুজনের আকদ হবে।

এতসব খুশির মাঝে আরেকটি খুশি এসে ধরা দিলো স্বপ্নিল-রাহিতার জীবনে। বেশ ক’দিন ধরে রাহিতা অনুভব করছে তার মাঝে অন্য কারও অস্তিত্ব, কিন্তু লজ্জায় স্বপ্নিলকে বলতে পারছিলোনা। তবে আজ সব লজ্জা-দ্বিধা কাটিয়ে স্বপ্নিলকে বলে ডাক্তারের কাছে কনফার্ম হতে গেছে দুজন। স্বপ্নিল প্রথমে একটু রাগারাগি করেছিলো ওকে আগে কেন বলেনি এ নিয়ে, তবে ডাক্তার চেকাপ করে যখন বললো ওরা সত্যিই বাবা-মা হতে চলেছে তখন ওকেই সবচেয়ে বেশি খুশি দেখালো! এতক্ষণের সব রাগ ভুলে হসপিটালেই রাহিতাকে কোলে নিয়ে এক পাক ঘুরিয়েছে সে। এতগুলো মানুষের মাঝে এরকম করায় রাহিতা ব্যাপক লজ্জা পেয়েছে, তবু উচ্ছাসিত স্বপ্নিলকে বিশেষ থামাতে পারেনি। সে ইতিমধ্যে ঢোল-ঢাক পিটিয়ে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে। রাহিতার মা-বাবাকেও তৎক্ষণাত ফোন দিয়ে বলেছে বাসায় মিস্টি নিয়ে আসতে। রাহিতা আলগোছে স্বপ্নিলের পাগলামি দেখে হেসেছে শুধু, কে বলবে একটা সময় এ মানুষটাই ওকে বউ হিসেবে মানতে চাইতোনা? আর এখন! পরিস্থিতি ৩৬০° ঘুরে গিয়েছে। সৃষ্টিকর্তার লীলাখেলা বড়ই অদ্ভুত!

_____________

টিপটিপ বৃষ্টিভেজা পরিবেশ। শুক্রবার হওয়ায় বিকেলবেলা স্বপ্নিল বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছিলো একা একা। রাহিতা ঘুমোচ্ছে, প্রেগন্যান্সির তিন মাস পেরিয়েছে। এখন ঘুমটা অনেক বেড়ে গিয়েছে মেয়েটার। একটু পরপরই ঘুমোতে চায় শুধু। তাই স্বপ্নিলও ওকে না উঠিয়ে একা-একাই বৃষ্টি দেখতে মগ্ন। আনমনেই ভাবলো এ সময় একটা সিগারেট হলে মন্দ হতোনা! পরক্ষণেই আবার নিজের প্রতি নিজেই রাগ হলো স্বপ্নিলের। আজকাল সে খুব একটা সিগারেট খায়না। রাহিতার পছন্দ না বিধায় ছেড়ে দিয়েছিলো প্রায়। তার মঝে ও প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর থেকে একেবারেই হাতে নেয়না বলতে গেলে। তাই এবারও নিজের চিন্তাকে হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে ভেজামাটির গন্ধে প্রাণভরে শ্বাস নিচ্ছিলো স্বপ্নিল। এমন সময় বাহুতে গরম কিছু ঠেকতেই চমকে উঠে চোখ খুলে পাশে তাকায় স্বপ্নিল। রাহিতা দাঁড়িয়ে আছে হাসিমুখে। ওর দু’হাতে দুটো চায়ের কাপ। রাহিতাকে দেখে প্রথমে হাসলেও পরক্ষণে চা দেখে রেগে যায় স্বপ্নিল। আজকাল দিলারা বেগম ও স্বপ্নিল ওকে খুব একটা রান্নাঘরে যেতে দেন না। এসব কাজের জন্য তো একদমই না! তবুও রাহিতা কখন যে উঠে চা বানাতে গেলো স্বপ্নিল টেরই পেলোনা! চায়ের কাপ হাতে নিয়ে খানিকটা রা’গ দেখিয়ে সে বলে ওঠে,

—চা বানাতে গেলে কেন তুমি? তোমার না পায়ে ব্যাথা করছিলো বললে সকালে? তবুও কেন, রাহিতা? আমার এসব ভালো লাগেনা একদম!

স্বপ্নিলের রাগ দেখে রাহিতা হাসে। মিস্টি কণ্ঠে বলে,

—আমি বানাইনি তো। রহিমা খালাকে যেয়ে বললাম, তিনিই বানিয়ে দিলেন। আমি শুধু নিয়ে নিলাম এই যা! আপনি একা একা বৃষ্টি দেখছিলেন যে? বোর হচ্ছিলেন নিশ্চয়ই? আমায় ডাকলেই পারতেন!

রাহিতাকে চেয়ারে বসিয়ে ওর সামনে আরেকটা চেয়ার টেনে স্বপ্নিল বলে,

—তোমার শরীর ভালোনা বলেই ডাকিনি। আমি বোর হচ্ছিলাম কে বললো তোমায়? আমি তো দাঁড়িয়ে থেকে প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখছিলাম এতক্ষণ! এবার তুমি এসেছো, বসে বসে তোমায় দেখবো!

চোখ টিপে বলে স্বপ্নিল। ওর কথায় চোখ সরু করে ফেলে রাহিতা। ইদানিং ওর ওজন বেড়ে গেছে, স্বাস্থ্য ভালো হয়েছে। দেখতে গোলগাল লাগে। অথচ স্বপ্নিলের চোখে যেন রাহিতার সৌন্দর্য দ্বিগুণ হয়ে গেছে। সুযোগ পেলেই ওর গাল টেনে দিবে, নয়তো জাপ্টে ধরে চুমু খাবে। ওর হুটহাট এমন আক্র’মণে রাহিতা মাঝেমধ্যে বিরক্ত হলেও স্বপ্নিলের হেলদোল নেই। সে নিজের মতোই আছে। চায়ে চুমুক দিতে দিতে রাহিতা হঠাৎ আবদার করলো,

—শুনুন না!

—হুম, বলো?

—একটা গান শুনাবেন?

—এখন হঠাৎ গান শুনতে মন চাইলো যে তোমার?

—এত মনোরম পরিবেশ, বাইরে বৃষ্টি, বারান্দায় আমরা দুজন একা, হাতে চায়ের কাপ। সাথে একটা রবীন্দ্র সংগীত হলে আর কি লাগে?

স্বপ্নিলের কথাগুলো বেশ পছন্দ হলো। তবে খানিকটা ভুল ধরার মতো করে রাহিতার পেটে হাত দিয়ে বললো,

—সব তো ঠিকই আছে। তবে আমরা দুজন একা? এটা তুমি কীভাবে বলতে পারলে, রাহি? আমি পুচকুটাকে ভুলে গেলে?

স্বপ্নিলের কথার ধরনে হেসে ফেলে রাহিতা। স্বপ্নিলের হাতের উপর হাত রেখে বললো,

—আচ্ছা সরি, আপনার পুচকুকে ভুলিনি। সে-ও তার বাবার কণ্ঠে সুন্দর একটা গান শুনতে চায়। শুনাবেন না ওকে?

—আলবত শুনাবো। শুরু করছি দাড়াও। একটু ভাবতে দাও কি গান গাওয়া যায়!

—হুম ভাবুন। আমরা অনেক এক্সাইটেড।

স্বপ্নিল খোলা গলায় সুর তুললো। অনবদ্য রবীন্দ্র সংগীতে চারপাশ মুখরিত হলো।

ওগো তোমার আকাশ দুটি চোখে
আমি হয়ে গেছি তারা
এই জীবন ছিল
নদীর মতো গতিহারা
এই জীবন ছিল
নদীর মতো গতিহারা, দিশাহারা
ওগো, তোমার আকাশ দুটি চোখে
আমি হয়ে গেছি তারা।

আগে ছিল শুধু পরিচয়,
পরে হলো মন বিনিময়।

শুভ লগ্নে হয়ে গেলো, শুভ পরিণয়
শুভ লগ্নে হয়ে গেলো, শুভ পরিণয়
আজ যখনি ডাকি
জানি তুমি দেবে সাড়া
এই জীবন ছিল
নদীর মতো গতিহারা, দিশাহারা
ওগো, তোমার আকাশ দুটি চোখে
আমি হয়ে গেছি তারা।

রাহিতা মুগ্ধ নজরে শুনলো। ওর মনে হলো গানটা যেন ওদের উদ্দেশ্য করেই লেখা হয়েছিলো! বাইরে বৃষ্টির বেগ বাড়লো, ভেজামাটির গন্ধে চারপাশ স্নিগ্ধ হলো। বারান্দায় এক কাপ চায়ের সাথে একটি সুখী দম্পতির মন বিনিময়ের গল্প পরিপূর্ণ হলো!

(সমাপ্ত)

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ