#মন_বিনিময়
#পর্বঃ৪০
#লেখনীতে- তাসফিয়া হাসান তুরফা
রাহিতার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে স্বপ্নিল। ওর দ্রুতবেগে চলা কদমের সাথে তাল মিলিয়ে হেটে যাচ্ছে রাহিতা নিজেও! অবশ্য হাটছে বললে ভুল হবে, লম্বাটে স্বপ্নিলের বড় বড় ধাপের সাথে এগোতে ওকে দৌড়াতে হচ্ছে একপ্রকার! তবু মেয়েটা চুপ করে আছে, কোনো টু শব্দটুকুন করছেনা৷ এয়ারপোর্ট এরিয়া থেকে বের হয়ে আশেপাশেরই কোনো এক নির্জন রাস্তায় এসে থামে স্বপ্নিল। এখানে চারপাশে অসংখ্য গাছপালা, মাঝখান দিয়ে একটি সরু রেললাইন গিয়েছে। আকাশটাও গুরুম গুরুম করছে, শনশন হাওয়া বইছে রীতিমতো। টিপটিপ বৃষ্টি এসে দুজনকেই ভিজিয়ে দিতে পারে যেকোনো মুহুর্তে। অথচ স্বপ্নিলের সেদিকে কোন ধ্যান নেই। তার সমস্ত ধ্যান-জ্ঞান এখন ভীত নজরে চারপাশ পর্যবেক্ষণ করা রাহিতার দিকে।
—কেন এমন করছিলে এ ক’দিন আমার সাথে? আমার কেমন লাগবে সেটা তুমি একবারো ভাবোনি?
স্বপ্নিলের টগবগে কণ্ঠে আক্ষে’প। ওর কথার ধরনে মনে হবে যেন ওর সাথে এ ক’দিন কথা না বলে রাহিতা মহাপাপ করে ফেলেছে। তবে রাহিতা নিশ্চুপ, কি বলবে না বলবে ভাবার মাঝেই পুনরায় স্বপ্নিলের আওয়াজ ভেসে আসে ওর কানে।
—চুপ করে আছো কেন, রাহিতা? উত্তর দাও বলছি।
রাহিতা বুঝলো, স্বপ্নিল বেশ ভালোই ক্ষে’পেছে। এই যে এখন সে ওর পুরো নাম ধরে ডাকছে। এটা স্বপ্নিলের একপ্রকার অভ্যাস যা ওর সাথে থাকাকালীন এ ক’দিনে উপলব্ধি করেছে রাহিতা। যখন স্বপ্নিল আহ্লাদী মুডে থাকে তখন বেশ আয়েশ করে ওর পুরুষালি স্বরে মিস্টিভাবে ডাকে “রাহি”। যে ডাকে রাহিতার মন-প্রাণ জুড়ে যায়। আবার সেই দুস্টুমিস্টি মানুষটাই যখন রেগে যায় তখন শীতল কণ্ঠে রাহিতার পুরোনাম ধরে ডাকে। জিব দিয়ে শুষ্ক ঠোঁট ভিজিয়ে স্বপ্নিলকে শান্ত করার উদ্দেশ্যে রাহিতা নরম গলায় বললো,
—মাত্রই জার্নি করে এলেন। আপনি ভীষণ টায়ার্ড! এখন কি এসব কথা বলার সময় হলো? আমাদের হাতে তো সারা দিন পরে আছে। বাসায় যেয়ে আগে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিবেন। তারপর না হয় এ ব্যাপারে কথা হবে। চলুন!
কথা শেষ করে নিজের দু’হাতের মুঠোয় স্বপ্নিলের বাহু ধরে যাওয়ার জন্য বারকয়েক টানলো রাহিতা। তবু স্বপ্নিল অনড়ভাবে একিজায়গায় দাঁড়িয়ে। হৃষ্টপুষ্ট স্বপ্নিলের শক্তির সাথে হার মেনে অবশেষে রাহিতা ক্লান্ত মুখে বলে,
—আমি বাসায় যেয়ে সব বলবো বললাম তো! আকাশটা একবার ভালো করে দেখুন, যেকোনো মুহুর্তে বৃষ্টি শুরু হবে। এর মধ্যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলার কোনো মানে নেই৷ চলুন না? আপনি বুঝছেন আমার কথা?
—আমি যাবোনা।
—এসব কোন ধরনের পাগলামি, স্বপ্নিল?
বিরক্ত হয়ে খানিকটা জোরেই চেচায় রাহিতা। তবে আশেপাশে মানুষ না থাকায় কেউ দেখেনা ওদের। এবার স্বপ্নিল ক্ষি’প্র পায়ে এগিয়ে আসে, দু হাতে রাহিতার বাহু খামচে ধরে চেচিয়ে বলে,
—হ্যাঁ, আমি পাগল। যার কাছে আমার ইমোশনের কোনো দাম নেই তার কাছে তো আমি পাগলই হবো! তাই না?
রাহিতা বিস্মিত নজরে চায়। জিজ্ঞেস করে,
—কার কথা বলছেন আপনি? আমি আবার কবে আপনার ইমোশনকে দাম দিলাম না?
স্বপ্নিল তাচ্ছিল্য ভরে হাসে। চেপে রাখা বাহুদ্বয়ে আরও খানিকটা বল প্রয়োগ করে বলে,
—ওয়াও, রাহিতা। তোমার মতো ম্যাচিউরড মেয়ে এমন বোকার মতো প্রশ্ন করছে দেখে সত্যিই হাসি লাগছে। আমি চলে যাওয়ার আগে তোমার থেকে কিসের ওয়াদা নিয়েছিলাম তুমি ভুলে গেছো? এখন হাসবো কার উপর বলো তো? নিজের উপর না নিজের ভাগ্যের উপর?
রাহিতা বিরক্ত হয়। স্বপ্নিলের এমন ঘুরিয়ে পেচিয়ে বলা কথা ওর পছন্দ হয়না। ভ্রু কুচকে বলে,
—যা বলার সরাসরি বলুন তো! তখন থেকে কিসব ঘুরেফিরে কথা বলছেন। আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা!
—তা পারবে কেন? তুমি তো শুধু পারো আমাকে জ্বা’লাতে। আমার মনে আগু’ন জ্বা’লিয়ে দিয়ে, আমার থেকে পালিয়ে বেড়াতে!
কথা বলা শেষ করে স্বপ্নিল রাহিতাকে ছেড়ে দেয়। অভিমানে মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নেয়৷ ওর সেই রাগমিশ্রিত অভিমানি মুখ দেখে রাহিতার ভীষণ মায়া হয়। ছেলেটার প্রতি ভালোবাসা বেড়ে যায়। কৌতুহলী হয়ে বলে,
—আপনার এত্ত খারাপ লেগেছে আমাদের এ কয়দিন যোগাযোগ না হওয়ায়?
স্বপ্নিল আড়চোখে তাকায়। রাহিতার প্রশ্নে অভিমানী চোখজোড়া সরু হয়ে আসে। তাচ্ছিল্যের সুরে বলে,
—যে বুঝেও বুঝেনা তাকে বলে কি লাভ!
ওর কথায় ও অভিমানে রাহিতা হেসে ফেলে। স্বপ্নিলটা হঠাৎ করে বাচ্চাদের মতো করছে এখন! রাহিতা নিঃশব্দে এগিয়ে আসে, স্বপ্নিলের দুই হাত আলতোভাবে ওর কোমল হাতে পুরে নিয়ে বলে,
—সরি। আমি তো দুস্টুমি করে এমন করছিলাম। আসলে দেখতে চাইছিলাম আপনি আমায় সত্যিই মিস করেন কিনা!
ওর কথায় স্বপ্নিলের কপালে ভাজ পড়ে। চোখ ছোট ছোট করে সুধায়,
—আমার কতটা অস্থির লেগেছে তুমি জানো? তোমার সাথে একদিন কথা না বললেই আমার দম বন্ধ হয়ে আসে, রাহি। সেখানে তুমি এতদিন আমার সাথে যোগাযোগ করলেনা আমার ভীষণ রা’গ হয়েছিলো তোমার উপর। কিভাবে পারলে এমনটা করতে? তোমায় যে এতবার বললাম চলে যাওয়ার আগে, যে আমাদের সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়তে দিবোনা আমরা। অথচ তুমি কিনা আমার সাথে যোগাযোগটাই বন্ধ রাখলে? একবারো কি বুক কাপেনি তোমার?
রাহিতাকে ঝাকিয়ে প্রশ্ন করে স্বপ্নিল। খানিকটা থেমে নিজেকে শান্ত করে আবারো বলে,
—আর কি বললে তুমি? আমি তোমায় মিস করবো কিনা সেটা দেখার জন্য এমন করেছো? তাহলে যে সেদিন এয়ারপোর্টে চলে যাওয়ার আগে আমি এত সুন্দর করে বললাম তোমায় মিস করবো, সেটা কি ভুলে গেছো তুমি? নাকি এক চুমুতেই সব স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেছো?
স্বপ্নিলের শেষ কথায় রাহিতা বিব্রত হয়। হঠাৎ সেই চুমুর কথা মনে হতেই লজ্জায় মিইয়ে যায়। রাহিতার লালাভ গাল ও নত হওয়া উজ্জ্বল মুখ দেখে স্বপ্নিলের অভিমান চুইয়ে চুইয়ে মাটিতে পড়ে যায়। মন-মেজাজ ফুরফুরে হয়। ঠোঁটের কোণ বাকিয়ে চিরচেনা ফাজলামোর সুরে বলে,
—কি হলো, এখন চুপ হলে কেন আবার? এক চুমুতেই এমন হলে তো সমস্যা। তাহলে তোমায় দিনরাত চুমু থেরাপি দিয়ে অভ্যাস করাতে হবে…
স্বপ্নিল কথা শেষ করতে পারেনা, রাহিতা তাড়াতাড়ি হাত দিয়ে ঠোঁটকাটা লোকটার মুখ চেপে ধরে। লজ্জা ঢাকতে কপট রাগ দেখিয়ে তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বলে,
—আপনার কি লজ্জাশরম নেই? রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে এসব বলছেন? আশেপাশে কেউ নেই দেখে যা মুখে আসছে বলবেন নাকি! আপনি…
রাহিতা কথা শেষ করতে পারেনা, তার আগেই বিকট শব্দে ব’জ্র’পাত হয়। যার আওয়াজে ওর মুখের কথা মুখেই রয়ে যায়। উল্টো চোখমুখ খিচে সে তড়িৎবেগে আকড়ে ধরে স্বপ্নিলকে, এতদিন পর প্রিয়তমের প্রশস্ত বুকে যেন নিজের আশ্রয় খুজে। রাহিতার মনে ভয়, একিসাথে বাসায় যাওয়ার তাড়া। অথচ স্বপ্নিল আলগোছে হাসে। ওর ঠোঁটের কোণে লেগে আছে মনোমুগ্ধকর হাসি, একটি সুখী মানুষের হাসি!
__________________
দিলারা বেগম থমথমে মুখে বসে আছেন ডাইনিং টেবিলে। এতদিন পর ছেলে আসবে বলে নিজ হাতে খাবারদাবার রান্না করে টেবিল সাজিয়েছিলেন, অথচ সেই স্বপ্নিল এখন দুপুর গড়িয়ে প্রায় বিকেল হলো তবু এলোনা। ড্রাইভার যখন একা আসে লাগেজ হাতে তখন তিনি বিস্মিত হন৷ স্বপ্নিল কোথায় জিজ্ঞেস করতেই ড্রাইভারের থেকে জানতে পারেন স্বপ্নিল শুধু লাগেজ হাতেই তাকে পাঠিয়ে দিয়েছে৷ সে নাকি রাহিতার সাথে পরে বাড়ি আসবে৷ এতটুকু ঠিক ছিলো কিন্তু ড্রাইভার যখন বললো স্বপ্নিল রেগে ছিলো, তখন দিলারা বেগমের চিন্তা হলো। এতদিন পর দেখা হলো জামাই-বউ এর অথচ দুজন দুজনের প্রতি রেগে আছে? কোথায় আরও এ সময় দুজনের হাসিখুশিভাবে বাড়ি ফেরার কথা কিন্তু এ দুটো একে-অপরের প্রতি রাগ ঝাড়তে ব্যস্ত। দিলারা বেগম নিজ ভাবনায় বিভোর তখন সামিরা কলেজ থেকে কাকভেজা হয়ে বাসায় ফিরে। মেয়েকে দেখে দিলারা বেগম বলেন,
—কিরে, তোর আসতে এত দেরি হলো কেন? তুইও তোর ভাইয়ের মতো ঢং শুরু করলি নাকি?
মায়ের কথার আগামাথা না বুঝে সামিরা বলে,
—কি বলছো মা? ভাইয়া কোথায়? ও এখনো আসেনি?
—নাহ। ড্রাইভারকে লাগেজসহ পাঠিয়ে দিয়েছে বাসায়। বেশ রেগে ছিলো নাকি, রাহিকে নিয়ে পরে বাড়ি ফিরবে তাই বলেছে।
সামিরা অবাক হয় মায়ের কথা শুনে। নিজের রুমের দিক যেতে যেতে বলে,
—ওহ, হয়তো কোনো কাজ আছে ওদের। তুমি চিন্তা করোনা, মা। ভাইয়া যখন বলেছে বুঝেশুনেই বলেছে নিশ্চই। আর আমার দেরিতে আসার কারণ হলো, তনুর সাথে দেখা হয়েছে অনেকদিন পর কলেজে। তাই ওর সাথে গল্পগুজব করতেই দেরি হয়ে গেলো একটু!
—এই তনুটা কে রে? তোর সেই বান্ধবী না যে কয়দিন থেকে কলেজ আসছেনা বললি সেদিন?
—হ্যাঁ, মা। ওর বাড়িতে ঝামেলা হয়েছিলো বুঝেছো? ওর ভাইয়ের প্রেম ছিলো, কিন্তু তনুর মায়ের সেই মেয়েকে পছন্দ নয়। তাই জোর করে ওর ভাইকে অন্য মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়। পরে বিয়ের একমাস পেরোতেই নাকি ওর ভাই-ভাবী আলাদা থাকতে শুরু করে। এ মাসে নাকি ডিভোর্স হলো শুনলাম, এখন ওর ভাই সেই আগেকার মেয়ের সাথেই আবার বিয়ে করতে চাইছে। এসব ঝামেলায় ও এতদিন কলেজ আসেনি, বেচারির ফ্যামিলিতে ঝড়-তুফান বইছে। এসব শুনতে শুনতেই বাসায় ফিরতে দেরি হয়ে গেলো। এখন বৃষ্টিতে ভিজে গেছি, একবারে গোসল সেড়ে আসি? ততক্ষণে দেখবে ভাই-ভাবীও চলে এসেছে বাসায়!
এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো মা-কে বলে সামিরা নিজের রুমে চলে যায়। অথচ সে জানেই না তার বলা কথাগুলো তার মায়ের উপর কিরুপ প্রভাব ফেললো! থমথমে মুখে জানালার বাহিরে গুমোট আকাশের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছেন দিলারা বেগম। সামিরা কথাগুলো স্বাভাবিকভাবে বল্লেও, তিনি স্বাভাবিকভাবে নিতে পারলেন না। অনেক সময় আমাদের চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা যেন আমাদেরই প্রতিফলন দেখায়, তার সাথেও কি এ মাত্র সেটাই ঘটলো? দিলারা বেগম মনে মনে ভাবেন। এক মুহুর্তে তার নিজেকে তনুর মায়ের মতো মনে হলো, তিনিও কি আসলেই জোর করে ওদের সম্পর্ক বেধে রাখার চেস্টা করছেন? স্বপ্নিল-রাহিতারও যদি তনুর ভাই-ভাবির মতো পরিণতি হয়? তবে এ অপরাধবোধ থেকে কোনোদিন বের হতে পারবেন না দিলারা বেগম। নাহ! এতদিন ধরে মনের মাঝে চলা দুশ্চিন্তার ঝড়কে আর বাড়তে দেওয়া যাবেনা। অতঃপর বেশ অনেকক্ষণ চিন্তাভাবনা করে দিলারা বেগম কিছু শক্তপোক্ত সিদ্ধান্ত নিলেন। ইস্পাতের ন্যায় কঠিন হৃদয় নিয়ে স্বপ্নিল-রাহিতার বাড়ি ফেরার অপেক্ষা করতে থাকলেন।
_______________
বৃষ্টি পড়ছে মশুলধারে। আশেপাশে কাকপক্ষীর দেখা নেই, সবাই যেন আশ্রয় খুজছে বাড়ির ভেতর। এর মাঝে এক জোড়া কপোত-কপোতী নির্দ্বিধায় আশ্রয় নিয়েছে একে-অপরের আলিংগনে। আবেশে কতক্ষণ যে এভাবে দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে ছিলো তারা জানেনা। রাহিতার হুশ ফিরতেই সে মুখ তুললো স্বপ্নিলের বুক থেকে। চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে স্বপ্নিল, ওর চোখমুখে কেমন যেন প্রশান্ত ভাব। যেন রাহিতাকে বুকে নিয়ে এ অসময়ের বৃষ্টি ভীষণ উপভোগ করছে সে! কিন্তু রাহিতার ব্যপারটা পছন্দ হলোনা। আজকেই জার্নি করে ফিরেছে স্বপ্নিল, ক্লান্ত শরীরে বৃষ্টিতে ভিজে যদি জ্বর বাধিয়ে ফেলে? তাইতো স্বপ্নিলের বুকে খানিকটা ধাক্কা দিয়ে বললো,
—এই যে, আপনার মান-অভিমান সব দূর হয়ে গেলে আমরা এখন বাসায় যাই? বেশি ভিজলে আপনার জ্বর আসবে কিন্তু। এমনিতেই ধকল গেছে আপনার উপর দিয়ে!
বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে বউয়ের এমন আহ্লাদ বেশ ভাল্লাগলো স্বপ্নিলের। জ্বর তো আজ ওর নির্ঘাত আসবে। তাই বলে রাহিতার সাথে প্রথমবার বৃষ্টি বিলাস সে মিস করবে? কখনো না! তাইতো লালচে হয়ে যাওয়া চোখজোড়া মেলে ঘোর লাগানো দৃষ্টিতে রাহিতার দিকে তাকায় স্বপ্নিল। কোনোকিছু বুঝে উঠার আগেই রাহিতাকে পেছন ফিরিয়ে ওর চুল ঘাড় থেকে সরাতেই মেয়েটা আঁতকে উঠে বলে,
—ক,কি করছেন? আমরা রাস্তায়!
—চুপ থাকো, রাহি।
—কিন্তু..
রাহিতা আর কথা বলার সুযোগ পায়না। সে অনুভব করে স্বপ্নিল ওর ভেজা চুল ঘাড় থেকে সরিয়ে দিয়েছে ইতিমধ্যে। এরপর ওর প্যান্টের পকেট থেকে একটি স্বর্ণের চেইন বের করে সযত্নে পড়ানো শুরু করেছে রাহিতার গলায়। বিস্মিত রাহিতা অবাক কণ্ঠে সুধায়,
—এটা কোথায় পেলেন? লাগেজ না সব ড্রাইভারকে দিয়েছিলেন? চেকিং এ ধরা পড়েননি?
—ড্রাইভারকে দেওয়ার আগেই বের করে নিয়েছিলাম। তোমার অতকিছু জানতে হবেনা। আমি বোকা নই।
—কিন্তু…
রাহিতা পেছন ফিরে কিছু বলতে চায়, কিন্তু ওর কথা কণ্ঠনালিতেই আটকে যায়। কারণ সে অনুভব করে ততক্ষণে স্বপ্নিলের ঠোঁট ওর খালি গলায় ও ঘাড়ে বিচরণ করতে শুরু করেছে ইতোমধ্যে। রাহিতার শ্বাস আ’টকে যায়। সে বুঝে স্বপ্নিল হুশে নেই। একে আটকাতে হবে নয়তো মাঝরাস্তায় পাগলামি শুরু করবে। আবেশে কম্পিত সে কোনোমতে ঢোক গিলে নিজেকে সামলায়। বৃষ্টির প্রকোপে ঠিকমতো তাকানো দায়। তবু কোনোমতে পিছন ফিরে স্বপ্নিলকে আটকিয়ে নিভু নিভু স্বরে বলে,
—আ,আমাদের বাড়ি ফিরা উচিত। মা অপেক্ষা করছেন। এখন চলুন, প্লিজ।
এবার রাহিতার বাধা দেওয়ায় কাজ হয়। স্বপ্নিল হুশে ফিরে। মায়ের কথা মনে হতেই টনক নড়ে ওর। ওয়াটারপ্রুফ হাতঘড়িতে সময় দেখে নিয়ে মাথা নেড়ে সায় দেয়। দৃঢ় বন্ধনে রাহিতার হাত আবদ্ধ করে দুজনে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
#চলবে
#মন_বিনিময়
#পর্বঃ৪১
#লেখনীতে- তাসফিয়া হাসান তুরফা
বৃষ্টির মধ্যে ফাঁকা রিকশা বা সিএনজি পাওয়া খুব মুশকিল। তাই তো মেইন রোডে এসে স্বপ্নিল-রাহিতাও পড়লো বিপাকে৷ তখন গাড়ি ছেড়ে দেওয়ার জন্য মনে মনে স্বপ্নিলকে বারকয়েক বকে দিয়ে ক্ষ্যান্ত হলো রাহিতা। তার কিছুক্ষণ পরেই একটি ফাকা সিএনজির দেখা পেলো ওরা দুজন। বৃষ্টির সুযোগের সদব্যবহার করে সিএনজিওয়াল ভাড়া দ্বিগুণ ভাড়া চাইলেও রাহিতার মুখের দিক চেয়ে স্বপ্নিল আর দ্বিমত করলোনা। দুজনে উঠে পড়তেই ওদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো সিএনজি।
বৃষ্টির বেগ কমেছে, ভেজা শরীরে হিমেল বাতাস স্পর্শ করতেই শীত করতে থাকলো দুজনের। সিএনজিওয়ালা ডাবল ভাড়া পাওয়ার খুশিতে একমনে সামনের দিক তাকিয়ে চাপা স্বরে গুনগুন করতে করতে ড্রাইভ করছে, পেছনে কে আছে সেদিকে যেন কোনো হুশই নেই তার। এ সুযোগে স্বপ্নিল নিজের ও রাহিতার মাঝের দূরত্ব ঘুচিয়ে দিলো। গায়ের সাথে গা ঘেঁষে কোমড় জড়িয়ে ধরলো, রাহিতাকে মিশে ফেললো নিজের সাথে। সিএনজির মাঝে এমন করায় রাহিতা অবাক হয়, খানিকটা বিব্রতবোধ করে বলা চলে। স্বপ্নিলের শক্তহাতের বাধন থেকে নিজেকে ছাড়ানোর ব্যর্থ চেস্টা করেও রাহিতা যখন পারলোনা তখন শেষমেশ নিচু স্বরে বললো,
—এই আপনার সমস্যা কি? রাস্তার মাঝখানে এমন করছেন কেন আজ?
রাহিতার বিরক্তবোধকে যেন পাত্তাই দিলোনা স্বপ্নিল। আরেকটু নিজের কাছে টেনে নিলো বরং।
—তুমি আমার সমস্যা! সবসময় আমার থেকে এত দূরে দূরে থাকো কেন, রাহি? আমাকে কি তোমার ভালো লাগেনা?
অস্থির গলায় বলে উঠলো স্বপ্নিল। ওর গমগমে কণ্ঠ শুনে রাহিতা ফিরে তাকায়। পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করে স্বপ্নিলকে। ওর শুষ্ক মুখ ইষৎ ফ্যাকাশে, লালচে চোখজোড়াও আগাম জ্বরের প্রকোপে ছোট হয়ে এসেছে প্রায়। অথচ এসবের পরেও নির্বিকার সে ঘন ঘন চোখের পলক ফেলে গভীরভাবে তাকিয়ে আছে রাহিতার পানে! কৌতুহলবশত স্বপ্নিলের কপালে ছোয়ায় সে। ওর আন্দাজ সঠিক, গা গরম হতে শুরু করেছে স্বপ্নিলের। আর সে হয়তো জ্বরের ঘোরেই এসব পাগলামি করছে। দ্রুত বাসায় যাওয়া দরকার নয়তো জ্বর বেড়ে যেতে পারে। এটা ভেবেই জোরপূর্বক স্বপ্নিলের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে সিএনজিওয়ালাকে ফাঁকা রাস্তায় দ্রুত টেনে নিয়ে যাওয়ার তাগিদ দিলো রাহিতা। মিনিট বিশেকের মধ্যে ওরা পৌঁছে যায় বাসায়। ভাড়া মিটিয়ে বাসার ভেতর ঢুকবে দুজনে এমন সময় রাহিতা লক্ষ্য করে স্বপ্নিল মুখটা বাংলার পাচের ন্যায় ভার করে রেখেছে। কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই স্বপ্নিল গম্ভীর মুখে অভিমানি গলায় বললো,
—তুমি আমায় একটুও ভালোবাসোনা, রাহি। এতদিন পর পেলাম তোমায় অথচ তুমি আমায় দূরে ঠেলে দিলে? তোমার সাথে আর কথা নেই যাও!
একনাগাড়ে কথাগুলো বলে একা একাই বাড়ির ভেতর হাটা শুরু করলো স্বপ্নিল। এদিকে ওর কথা শুনে ফিক করে হেসে ফেললো রাহিতা৷ জ্বরে-অভিমানে স্বপ্নিল যেন প্রেমিকাদের মতো ঢং শুরু করে দিয়েছে! এ লোকটাকে নিয়ে সে কি করবে!
______________
ভেজা শরীরে ড্রয়িংরুমে ঢুকতেই মায়ের সাথে সাক্ষাৎ হলো স্বপ্নিলের। ওর পিছু পিছু আসা রাহিতাও দিলারা বেগমকে এভাবে বসে থাকতে দেখে অবাক হয়ে গেলো। মা-কে দেখে স্বপ্নিল হাসি হাসি মুখ করে এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরতেই থামিয়ে দিলেন দিলারা বেগম। স্বপ্নিলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,
—পুরো ভিজে গেছিস তো। এ শরীরে বেশিক্ষণ থাকলে জ্বর বাধবে নির্ঘাত। কপালটাও বেশ গরম লাগছে। আগে জামা পালটে ফ্রেশ হয়ে আয় দ্রুত, তারপর কথা বলছি!
কথাগুলো বলার সাথে সাথেই স্বপ্নিলকে একপ্রকার ঠেলে সিড়ির কাছে পাঠিয়ে দিয়ে রাহিতার নিকট এলেন তিনি। স্বপ্নিল সিড়ি বেয়ে উপরে উঠার মাঝে রাহিতার কপালে হাত দিয়ে বললেন,
—যাক, তোর জ্বর আসেনি! তাও ভালো। আমার ছেলেটা এদিক দিয়ে এমনই নাজুক ছোটবেলা থেকে। একটু বৃষ্টিতে ভিজলেই জ্বর আসে। তাই ও নিজেও ভিজতে চায়না বৃষ্টিতে তেমন! তোরা গাড়ি না পাঠালেই বরং ভালো হতো! ভালোয় ভালোয় চলে আসতি বাসায়! কি হয়েছিলো রে স্বপ্নিলের? হঠাৎ ওভাবে রেগেছিলো কেন?
শাশুড়ির চিন্তা দেখে মিহি হাসে রাহিতা। মুখে বলে,
—আসলে উনার এয়ারপোর্টে একটু কাজ ছিলো, মা। তাই তখন ড্রাইভারকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন যাতে সামিরাকে কলেজ থেকে আনতে দেরি না হয়। আমরা সিএনজি খুজতে খুজতেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছিলো তাই ভিজে গেছি দুজনে।
রাহিতার কথা পুরোপুরি বিশ্বাস না করলেও মাথা নেড়ে সায় দেন দিলারা বেগম। এরই মাঝে তার চোখে পড়ে রাহিতার গলায় চকচক করতে থাকা স্বর্ণের চেইনটার উপর৷ ফর্সা মেয়েটার ভেজা গলায় চেইনটা লেপ্টে থেকে যেন ওর সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তা দেখে তিনি উৎসুক কণ্ঠে প্রশ্ন করেন,
—বাহ! চেইনটা তো সুন্দর। এটা আবার কবে পড়লি? আগে খেয়াল করিনি তো!
চেইনের কথা শুনে স্বপ্নিলের চেইন পড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য মাথায় আসে রাহিতার। মুহুর্তেই লজ্জায় রেঙে যায় ওর মুখ। লাজুক মুখে বলে,
—এটা উনি মালেশিয়া থেকে এনেছেন, মা।
স্বপ্নিল এনেছে শুনে মনে মনে খানিকটা শান্তি পান দিলারা বেগম। যাক! তার ছেলেটা এতটাও কাণ্ডজ্ঞানহীন নয় তবে। ভেতরে যতই রাগ থাকুক না কেন নিজের দায়িত্ব পালন করতে কখনো পিছপা হয় না সে! দিলারা বেগমের ভাবনার মাঝেই রাহিতা বলে উঠে,
—মা, এখন আমি যাই? উনি হয়তো বেরিয়েছেন গোসল সেড়ে৷ ফ্রেশ হয়ে নিই।
রাহিতার কথায় দিলারা বেগমের টনক নড়ে। মেয়েটাও যে তার ছেলের সাথে বাইরে থেকে ভিজে এসেছে তা যেন মাথায়ই ছিলোনা তার। লজ্জিত তিনি দ্রুততার সাথে বললেন,
—আরে তাই তো, আমিও বা কেমন তোকে আটকে রেখেছি এখানে। তাড়াতাড়ি যা, কাপড় চেঞ্জ কর। ফ্রেশ হয়ে নে। স্বপ্নিল বের না হলে আমার বাথরুমে এসে গোসল সাড়িস!
শাশুড়ির অনুমতি পেয়ে মাথা নেড়ে রাহিতাও চলে গেলো সিড়ি বেয়ে উপরে। ওর যাওয়ার দিকে চেয়ে দিলারা বেগম পড়লেন দোটানায়। তিনি যা ভেবেছেন তা কিভাবে বলবেন দুজনকে? ওদের দুজনের আচরণ একেকবার একেকরকম লাগছে! বিষয়টা সন্দেহজনক ঠেকছে তার কাছে। নাহ! তাড়াহুড়োয় কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবেনা, আরেকটু ভালো করে দুজনকে পর্যবেক্ষণ করে তারপর ওদের সাথে কথা বলবেন। নিজের মনকে বুঝিয়ে অবশেষে এটাই ঠিক করলেন দিলারা বেগম।
______________
ডাইনিং টেবিলে কথার ফুলঝুরি ফুটেছে যেন। দিলারা বেগম নিজ হাতে যত্ন করে খাইয়ে দিচ্ছেন ছেলেকে। স্বপ্নিলের চোখজোড়া এখনো লালচে, একটু পর পর হাচ্চি দিচ্ছে বেচারা। যার দরুণ খাড়া নাকটাও একপ্রকার লাল হয়ে আছে। ভাইয়ের এ নাজুক অবস্থা দেখে বেশ হাসি পাচ্ছে সামিরার। সে-ও তো ভিজে এসেছে, একিসাথে রাহিতাও। অথচ তাদের কিছুই হলোনা কিন্তু স্বপ্নিলকে দেখে মনে হচ্ছে সব বৃষ্টির পানি ওর উপরেই পড়েছে! ব্যাপারটা নিঃসন্দেহে হাস্যকর। কিন্তু মায়ের তীর্যক চাহনিতে ভয় পেয়ে হাসার দুঃসাহস সে করছেনা। এদিকে দিলারা বেগম ছেলেকে খাওয়ানোর ফাকে ফাকে একদৃষ্টিতে স্বপ্নিল রাহিতাকে পর্যবেক্ষণ করতে ব্যস্ত। স্বপ্নিল তার সাথে, বোনের সাথে এমনকি রহিমা খালার সাথেও কথা বলছে। কিন্তু বাসায় আসার পর থেকে একবারও তিনি ওকে রাহিতার সাথে কথা বলতে দেখলেন না! বিষয়টা নিঃসন্দেহে দৃষ্টিনন্দন লাগলোনা উনার কাছে। তবে এ মুহুর্তে মুখে কিছু না বলাই শ্রেয় মনে করলেন তিনি। চুপচাপ খাওয়ানো শেষ করে হাত ধুতে উঠে গেলেন। এদিকে দিলারা বেগম উঠতেই সামিরা মুখ খুলে।
ভাইয়ের উদ্দেশ্যে বলে,
—তারপর বলো কেমন কাটলো তোমার দিনগুলো, ভাইয়া?
—সারাদিন কাজ শেষে ক্লান্ত শরীরে ঘরে ফিরতে না পারলে মানুষ যেমন অনুভব করে ঠিক তেমনি!
জবাব সামিরাকে দিলেও কথাগুলো রাহিতার উদ্দেশ্যেই ঠান্ডাভাবে বললো স্বপ্নিল। ওর কথায় একিসাথে দুঃখ ও ভালো লাগা ভর করলো রাহিতার মনে! স্বপ্নিল ওকে নিজের ঘরের সাথে তুলনা করলো? যে ঘর মানুষের মানসিক প্রশান্তির কারণ, সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে মুখ গুজার আশ্রয়, স্বপ্নিল কি তাকে সেই ঘরের সাথেই তুলনা করলো তবে! ছেলেটা কি ওকে সত্যিই এত ভালোবেসে ফেলেছে?
রাহিতা বিস্মিত মনে ভাবে।
সামিরা ভাইয়ের কথা পুরোপুরি বুঝলোনা। সে ধরে নিলো হয়তো অনেকদিন বাড়ি না ফিরে হোমসিক হয়ে গেছে স্বপ্নিল। তাই বাড়িকে মিস করছিলো। তাই প্রসঙ্গ ঘুরাতে সে উৎফুল্ল কণ্ঠে বলে,
—তা আমাদের জন্য কি কি আনলে দেখি!
—আরে দেখাবো বোন, আগে আমায় একটু শান্তিতে রেস্ট নিতে দে! এ ক’দিন বাসাতেই আছি আমি। কাল আরামসে দেখিস।
—কিন্তু আমার যে দেখার জন্য তর সইছেনা, ভাই।
লোভে বশীভূত হয়ে করুণ কণ্ঠে সামিরা কথাটা বল্লেও সে সময় দিলারা বেগম চলে আসেন। এক ধমক দিয়ে মেয়ের উদ্দেশ্যে বলেন,
—এখন আরেকবার যদি তোর মুখে এ কথা শুনি তবে তোর একদিন কি আমার একদিন। দেখছিস না স্বপ্নিল অসুস্থ, কোথায় ভাইকে একটু রেস্ট নিতে দিবি তা নয়। উলটো ভাই না আসতেই গিফট দেখার বায়না করছে।
মায়ের ধমকে মুখ ফুলিয়ে চুপসে যায় সামিরা। চেয়ার ঠেলে উঠে এক দৌড়ে ছুটে যায় নিজের রুমে। সেদিক চেয়ে স্বপ্নিল বলে,
—কেন ওকে ধমক দিলে, মা? ছোট মানুষ। এ বয়সে আগ্রহ থাকে এসব দেখার। ভালোভাবে বল্লেও তো পারতে!
—তুই চুপ থাক। নিজের শরীর ভালোনা এখন সেদিক নজর দে। ভাত তো খাইয়ে দিলাম এখন রুমে গিয়ে নাপা খেয়ে নিয়ে আমায় উদ্ধার কর।
—কিন্তু মা..
—যেতে বলছি, স্বপ্নিল।
অগত্যা চোখমুখ কুচকে স্বপ্নিল নিজেও প্রস্থান করে রুমের উদ্দেশ্যে। যাওয়ার আগে মায়ের চোখ ফাকি দিয়ে রাহিতাকে চোখ রাঙিয়ে যেতে ভুলেনা। স্বপ্নিলের চোখ রাঙানো দেখে মনে মনে হাসে রাহিতা। শাশুড়ির দিক তাকিয়ে বলে,
—সামিরা হয়তো মন খারাপ করে বসে আছে। আমি যাই ওর কাছে!
কিন্তু ওর পথ আটকান দিলারা বেগম। রাহিতা তাকাতেই খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকেন ওর সরল মুখশ্রীর দিকে। এত ভালো, মিস্টি মেয়েটাকে কিভাবে স্বপ্নিল ভালোবাসতে পারলোনা দিলারা বেগম ভেবে পাননা! তার বুক চিড়ে বেরিয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস। রাহিতার কোমল হাতদুটো তার চামড়ায় ভাজপড়া হাতের ভাজে নিয়ে কোমল সুরে বলে,
—সামিরাকে আমি পরে দেখে নিবো। তুই বরং স্বপ্নিলের কাছে যা। ও তো এসব জ্বর-টরকে পরোয়া করেনা, আমি জানি বেশি জ্বর না আসা পর্যন্ত ওষুধ না খেয়েই বসে থাকবে। ওকে ওষুধ খাইয়ে দে।
মাথা নেড়ে রাহিতা সেদিকে অগ্রসর হতেই হঠাৎ পেছন থেকে দিলারা বেগম বলেন,
—কাজ শেষ করে আমার সাথে একটু দেখা করিস তো, রাহি। কিছু জরুরি কথা আছে।
শাশুড়ীর কথায় রাহিতার চলন্ত কদম থমকায়। পেছন ফিরবেনে ফিরবেনা করেও একবার পেছন ফিরে। দিলারা বেগম কেমন উদাস মুখে চেয়ে আছেন, তার কণ্ঠস্বর অন্যরকম। যা না চাইতেও রাহিতাকে ভাবায়! কি এমন জরুরি কথা বলার জন্য তিনি ডাকছেন ওকে? চিন্তার বিষয়!
#চলবে