Monday, October 6, 2025







মন বিনিময় পর্ব-৩৪+৩৫

#মন_বিনিময়
#পর্বঃ৩৪
#লেখনীতে- তাসফিয়া হাসান তুরফা

স্বপ্নিলের প্রশ্নে এক শীতল স্রোত বয়ে গেলো রাহিতার শিরদাঁড়ায়। বিস্মিত সে হতভম্বতায় ঝট করে সরে দাঁড়ায় স্বপ্নিলের বুক থেকে। রাহিতার হঠাৎ এভাবে সরে যাওয়ায় খানিকটা অবাক হয় স্বপ্নিল। ওর অগোচরেই রাহিতার বুকে দুরুদুরু হৃদকম্পন বাড়তে থাকে। শ্বাস-প্রশ্বাস পাল্লা দিয়ে উঠানামা করে। শুষ্ক ঢোল গিলে রাহিতা ইতস্তত কণ্ঠে বলে,

—এমন কিছুই হবেনা! এক্ষুনি লাইট এসে যাবে। আমি জানি!

রাহিতার কথা বলার ধরনে হেসে ফেলে স্বপ্নিল। নিশ্চুপ কক্ষে ওর হাসির শব্দে আরেকটু লজ্জা পায় মেয়েটা। তবে অন্ধকারে একে-অপরের চেহারা দেখা না যাওয়ায় কেউ কারও রিয়েকশন দেখতে পায়না। বাতাসে জানালার পর্দা সরে যায়, ক্ষী’প্ত মেঘের ঘ’র্ষ’ণে বিদ্যুৎ চমকে উঠে। সেই আলোতে এক মুহুর্তের জন্য দুজনের দৃষ্টি বিনিময় হয়। এ আবছা অন্ধকারেও দুজন অনুভব করে নিজেদের হৃদয়ে ছুটতে থাকা ভিন্ন ভিন্ন অনুভুতির জোয়ার। একজনের মনে যেখানে ভয়, লজ্জা ও উৎকণ্ঠা। সেখানে অপরজনের মনে নবপ্রেমের জোয়ার। বৃষ্টিস্নাত এ রাতে অনুভুতির সাগরে ভেসে যেতে যেন হিমশিম খাচ্ছে দুজনেই। মনের নি’ষিদ্ধ অনুভুতিগুলোকে নাড়া দিতেই প্রচণ্ড জোরে বজ্রপাতের শব্দ হয়। বিদ্যুতের ঝলকানিতে যেমন এক মুহুর্তের জন্য চারপাশ আলোকিত হয়ে উঠে, ঠিক তেমনি বিকট গর্জনে ভয় পেয়ে পুনরায় স্বপ্নিলের কাছে যেতে বাধ্য হয় রাহিতা। চোখমুখ খিচে সর্বশক্তি দিয়ে আকড়ে ধরে প্রিয়তমকে। রাহিতার উৎকণ্ঠা বুঝে ওকে শক্ত করে বাহুবন্ধনীতে আবদ্ধ করে রাখে স্বপ্নিল। বেশ কিছুক্ষণ সময় দেয় শান্ত হওয়ার। তবুও রাহিতার কম্পন থামছেনা ওকে অভয় দিতে শেষমেশ স্বপ্নিল এক অদ্ভুত কাণ্ড করে বসে। ক্রমাগত চুলে হাত বুলানোর এক ফাঁকে হঠাৎ অতি সন্তপর্ণে খুব যতনে এক গাঢ় চুমু খায় রাহিতার কপালে।

প্রায় দু’মাস হতে চলা বিবাহিত জীবনের এ প্রথমবার স্বপ্নিলের উষ্ণ স্পর্শ পেয়ে এক মুহুর্তের জন্য হার্টবিট মিস করে রাহিতা। অনুভুতিতে অসাঢ় হয়ে যেন কিছুক্ষণের জন্য শ্বাস নিতেও ভুলে গেলো সে। অক্ষিদ্বয় একিসাথে ভালো লাগা ও বিস্ময়ে বড় হলো নিমিষেই। স্বপ্নিলের বুক থেকে মাথা তুলে উপরে তাকালো রাহিতা। না দেখেও এ অন্ধকারেই সে অনুভব করলো স্বপ্নিল মাথাটা ঝুকিয়ে রেখেছে এবং এখনো ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। আলো-আঁধারির খেলায় একে-অপরের মায়ায় মোহাবিষ্ট হয়ে দুজনের মধ্যিখানের দূরত্ব আরও খানিকটা ঘুচবে ঠিক এমন মুহুর্তে নিষ্ঠুরের মতো ব্যাঘাত ঘটালো ইলেক্ট্রিসিটি! লাইটের তেজ আলোয় কয়েক পল চোখ বন্ধ করে রাখলো দুজনে। পুনরায় চোখ খুলতেই যেন মস্তিষ্ক অবশেষে সজাগ হয়ে উঠলো, এতক্ষণ যেটা দখল করে ছিলো আবেগ, সেই রেশ নিমিষেই কেটে গেলো। অতঃপর মুহুর্তেই একে-অপরের থেকে ছিটকে সরে দাড়ালো দুজনে৷ লজ্জা ও অস্বস্তিতে ইতস্তত করতে লাগলো দুজনেই। বরাবর সব বিষয়ে মজা করা স্বপ্নিলও যেন এবার খানিকটা দমে গেলো৷ কিছুক্ষণ ভেবেচিন্তেও বলার মতো শব্দ খুজতে সক্ষম হলোনা। নিজের কর্মকান্ডে সে নিজেই অবাক! যদিও এ ক’দিনে সে নিজেও বুঝেছে যে সে ধীরে ধীরে রাহিতার প্রতি বেশ ভালোই দূর্বল হয়ে পড়েছে। কিন্তু তাই বলে হুট করে এভাবে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারানোর ব্যাপারটা সচারাচর ওর সাথে ঘটেনা। তবে রাহিতার সংস্পর্শে আসলে যেন সবকিছুই এলোমেলো হয়ে যায়। অতিকস্টে পাথর হয়ে যাওয়া মনটাতেও যেন রং-বেরঙের ফুল ফুটে, পুনরায় ভালোবাসার ভেলায় চড়তে মন সানন্দে রাজি হয়! অপরদিকে মস্তিষ্ক তা মানতে নারাজ, একবার প্রেমে ধোকা খেয়ে পুনরায় সে পথ মাড়াতে ভয় দেখায়। বারবার প্রশ্ন তুলে আবারও যদি মনের বিনিময়ে মন না মিলে? তবে কি করবে সে? এ ধাক্কা সামলানো যে বড্ড মুশকিল হয়ে যাবে স্বপ্নিলের জন্য!

চোখ বন্ধ করে মন ও মস্তিষ্কের অদৃশ্য লড়াইয়ের সমাপ্তি ঘটায় স্বপ্নিল। তর্জনী ও বৃদ্ধাংগুল কপালে রেখে কিছুক্ষণ ডলে আবার চোখ মেলে। স্বাভাবিক চোখে তাকায় সামনে দাঁড়ানো লাজুক আবরণে মোড়া রাহিতার দিকে। যে পবিত্র মুখ দেখে স্বপ্নিলের নির্লজ্জ মনের আবারো চুমু খেতে মন চায়। কিন্তু মনের এসব লাগামহীন ভাবনা রাহিতাকে বুঝতে না দিয়ে গলা ঝেড়ে ওর মনোযোগ আকর্ষণ করে সে বলে,

—উম, অনেক রাত হয়ে গেছে। আমার অনেক খিদে পেয়েছে। চলো খাই। তোমার পায়নি?

—হ্যাঁ

মাথা নাড়িয়ে সায় দেয় রাহিতা। সত্যিই খিদে পেয়েছে ওর। সেদিক চেয়ে স্বপ্নিল বলে,

—জার্নি করে এসে তোমায় রান্না করার কস্ট দিতে চাইছিলাম না। বৃষ্টি-বাদল না হলে খাবার অর্ডার দিতে পারতাম। কিন্তু এই বৃষ্টিতে ভিজে কেউ ডেলিভারি দিতে আসবেনা।

—আরে, কিসের কস্ট? এটা কোনো ব্যাপারই না। আমি নিচে যাচ্ছি। দেখছি ফ্রিজে কিছু আছে নাকি!

বলতে বলতেই রুম থেকে বেরিয়ে সিড়ির কাছে যেয়ে আটকে যায় রাহিতা। যদিও লাইট আছে তবুও ফাকা বাড়িতে এভাবে একা একা নিচে যেতে ওর ভয় লাগছে। কিন্তু সেটা স্বপ্নিলকে কিভাবে বলবে? এমনিই একটু আগে যা হলো তাতে এখনো লজ্জার রেশ কাটেনি ওর, না জানি স্বপ্নিল কি ভেবে বসে? রাহিতা যখন নিজ ভাবনায় বিভোর তখন পেছন থেকে স্বপ্নিলের আওয়াজ কানে ভাসে।

—কি হলো? দাঁড়িয়ে গেলে কেন মাঝপথে?

পেছন ফিরে স্বপ্নিলকে আসতে দেখে মনে মনে বেশ খুশি হয় রাহিতা, যে খুশির রেশ ওর চোখেমুখে স্পষ্ট ভাসে। সে মাথা নাড়িয়ে “কিছুনা” বলে পুনরায় হাটা আরম্ভ করে। নিচে নেমে সোজা রান্নাঘরে চলে যায় দুজনে। ফ্রিজ ঘেটে দুজনে খাওয়ার মতো যখন কোনো তরকারি পেলোনা, তখন পেছন ফিরে স্বপ্নিলের উদ্দেশ্যে রাহিতা বলে,

—তরকারি তো নেই তেমন। রহিমা খালা তো জানতেন না আমরা আসছি, আর উনি বাড়ি চলে যাবেন দেখে বোধহয় কিছু রাধেননি। এখন কি রান্না করবো? কি খাবেন বলুন?

—ঝটপট হয়ে যাবে এমন কিছু বানাও তো। আমার ভীষণ ক্ষুধার্ত, রাহি। একটা কিছু বানালেই হলো পেট ভরার মতো।

—হুম,,ঠিক আছে। খিচুড়ি খাবেন? ফ্রিজে বেগুন দেখলাম কয়েকটা। খিচুড়ি, বেগুনভাজি ও সাথে ডিমভাজি করলে কেমন হয়?

—বেস্ট হয়! বৃষ্টির দিনে খিচুড়ির চেয়ে ভালো কিছু হতেই পারেনা। চলো তাড়াতাড়ি শুরু করো। আমিও হেল্প করছি তোমার।

স্বপ্নিলের কথায় মাথা নাড়িয়ে কাজ শুরু করে রাহিতা। চাল বের করতে করতে হেসে জিজ্ঞেস করে,

—কি হেল্প করবেন? আমিই করছি। লাগবেনা আপনার কিছু করা!

—কেন? নিজের বউয়ের হেল্প করতে সমস্যা কোথায়? এখানে লজ্জার তো কিছুই নেই। আমার মা আমাকে এই শিক্ষা দিয়েছে। আমি বেগুন কাটতে পারবো মনে হয়। দেখি দাও তো এদিকে।

কথা বলতে বলতেই ফ্রিজ থেকে বেগুন বের করে ধুয়ে ফেলে স্বপ্নিল। রাহিতা খিচুড়ি চুলোয় বসিয়ে এসে ওর সাথে বেগুন কাটতে আরম্ভ করে। দুজনে মিলে কথার ফাঁকে ফাঁকে বেশ খানিকটা কাজ এগিয়ে নেয়। কাটা শেষে স্বপ্নিল সবেমাত্র হাত ধুয়েছে এমন সময় ওর ফোন বেজে উঠে। হাত মুছে সেদিক এগিয়ে যেতেই দেখে মা ফোন দিয়েছে। ফোন ধরতেই দিলারা বেগম বলেন,

—কিরে? বাসায় পৌঁছেছিস তোরা? একটাবার ফোন দিয়ে জানালিও না! আমার কি টেনশন হয়না?

—সরি মা, এদিকে বেশ বৃষ্টি হচ্ছে তো। আমরা বাসায় পৌঁছেছি ঘণ্টাখানেক হবে। ফোন দিতে যেয়ে ভুলে গেছিলাম।

—আচ্ছা। রাহি কোথায়? ওকে ফোন দে তো। কি খাবি তোরা আজ? রহিমাকে বল বানিয়ে দেবে।

—রহিমা খালার ভাই অসুস্থ তাই গ্রামে চলে গেছে, মা। বাসায় এসে জানতে পারি দারোয়ানের থেকে। চাবি রেখে গেছে। তুমি চিন্তা করোনা আমরা ম্যানেজ করে নিচ্ছি। রাহিতা রান্না করছে। স্পিকার এ দিচ্ছি দাড়াও।

স্বপ্নিল ফোন স্পিকারে দিতেই রাহিতা কথা বলে।

—হ্যালো, মা। আপনার চিন্তা করার দরকার নেই, আমি চুলোয় খিচুড়ি বসিয়ে দিয়েছি। এখন বেগুন ভাজা করবো, সাথে ডিম ভাজা। এটুকুই আজ ডিনারের জন্য বেশ হবে!

—বাহ। ভালো করেছিস তো। তা তুই একা একাই সব করছিস নাকি? আমার বাদরটা কি শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে নাকি তোর সাহায্যও করছে?

—রাহিতা, তোমার শাশুড়িকে বলে দাও আমি বসে বসে খাওয়ার মানুষ নই। কাজ করে তবেই খাই।

মায়ের কথার বিপরীতে ব্যাঙ্গাত্বক স্বরে বলে উঠলো স্বপ্নিল। ওর কথায় মুখ টিপে হাসলো রাহিতা। শাশুড়ির উদ্দেশ্যে বললো,

—উনি আমায় হেল্প করছেন, মা। দুজন মিলেই করছি সবকিছু।

—আচ্ছা, যাক তাহলে তোরা রান্নাবাড়া কর। কাল কথা হবে। রাখছি কেমন?

—আল্লাহ হাফেজ।

কথা শেষ হতেই ফোন কেটে দিয়ে রাহিতার পাশে কেবিনেটের সাথে হেলান দিয়ে স্বপ্নিল বলে,

—দেখেছো? বলেছিলাম না তোমার শাশুড়ি থাকলে এটাই জিজ্ঞেস করতো? এবং হয়েছেও তাই!

—হুম। আমার শাশুড়ি মা অনেক ভালো!

মুচকি হেসে বলে রাহিতা। অতঃপর বেগুন মাখানো শেষ করে হাত ধুতে বেসিনে চলে যায় সে। হাত ধোয়ার মাঝেই অনুভব করে নিজের ঠিক পেছনে কারও উপস্থিতি। ঘাড় ঘুরিয়ে স্বপ্নিলকে এভাবে পেছনে দাড়াতে দেখে চমকে উঠে সে। কিন্তু স্বপ্নিল সেদিকে পাত্তা না দিয়ে নিঃশব্দে পেছন থেকেই রাহিতার দু’হাতের উপর হাত রেখে ওর হাতে লেগে থাকা বাকি সাবানের ফেনাগুলো ধুয়ে দিতে দিতে বলে,

—আর শাশুড়ির ছেলে? তাকে কেমন লাগে তোমার?

হঠাৎ স্বপ্নিলের এমন কাজে ও কথায় এতক্ষণ শান্ত হয়ে থাকা হৃদস্পন্দন আবারো বাড়তে থাকে রাহিতার। মনে মনে ভাবে মায়ের ছেলেকে তার কেমন লাগে এটা ঠিক কিভাবে জানাবে তাকে? যদি স্বপ্নিল কিছু মনে করে? স্বপ্নিল এখন যতোই সহজ হোক রাহিতার সাথে, যতই হাসিখুশি হয়ে মেলামেশা করুক দিনশেষে তাদের সম্পর্কে ওই একটা জায়গায় কেন যেন একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন থেকেই যাচ্ছে! কবে ওরা পুরোপুরি স্বাভাবিক একটা দম্পতি হবে সেটা রাহিতার জানা নেই। প্রত্যাখ্যানের ভয়ে না সে নিজে থেকে আগ বাড়িয়ে নিজের ভালোবাসার কথা বলতেও পারছেনা। পাছে ভয় হয় যদি স্বপ্নিল আবারো ওর মন ভেঙে দেয়? এটলিস্ট আজকের ঘটনার পর রাহিতা বুঝেছে স্বপ্নিল ওর প্রতি দূর্বল কিন্তু সে এখনো বিষয়টা স্বীকার করতে প্রস্তুত নয়। তাইতো তখন এভাবে প্রসংগ পালটে রাহিতাকে নিয়ে নিচে চলে এলো। স্বপ্নিল টের না পেলেও রাহিতা ঠিকি বুঝেছে, তাই সে-ও আর কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে চুপচাপ চলে এলো।

দ্বিধান্বিত রাহিতার চিন্তাধারায় ব্যাঘাত ঘটলো যখন মুখে উপর ভেজা কিছুর উপস্থিতি অনুভব হলো। চোখ পিটপিটিয়ে সামনে তাকাতেই দেখে ওর মুখে হাতের পানি ছিটিয়ে দিয়েছে স্বপ্নিল। চোখমুখ কুচকে রাহিতা সেদিক তাকিয়ে স্বপ্নিল ভ্রু নাচায়। যা দেখে বিরক্তের সহিত তাকাতেই ওকে ছেড়ে সরে দাঁড়ায় স্বপ্নিল। রাহিতা দাতে দাত চেপে বলে,

—শাশুড়ির ছেলে একটা আস্ত ফাজিল। এখন সরুন এখান থেকে। ডিম, বেগুন ভাজতে হবে। খিচুড়িও প্রায় হয়ে গেছে। সময় নস্ট হচ্ছে!

রাহিতার কথায় সায় দিয়ে স্বপ্নিল নিজেও সরে গেলো। অতঃপর দুজন মিলে গল্পের সাথে সাথে আজকের জন্য রান্নার আয়োজন সম্পন্ন করলো। খেতে বসে স্বপ্নিলের মনে হলো রাহিতার রান্নার হাত বেশ ভালো। এত সাধারণ খাবার, তবুও যেন দুজনে মিলে তৈরিতে করা আজকের খাবারে অন্যরকম এক পরিতৃপ্তি আছে। ভোজনরসিক সে সানন্দে পেট ভরে খেলো। খাওয়া শেষে সব গুছিয়ে রাহিতার হাত ধরে নিজেদের রুমের উদ্দেশ্যে চললো দুজনে। বিছানায় শুয়ে পাশে তাকিয়ে রাহিতার উদ্দেশ্যে স্বপ্নিল বললো,

—কাল সকাল ৮টায় ডেকে দিও তো, রাহি। খাওয়াদাওয়া সেড়ে ৯টার মধ্যেই বেরিয়ে পড়বো অফিসের উদ্দেশ্যে। কাল সময়মতো অফিস পৌঁছানো খুব দরকার।

—আচ্ছা। আমি ডেকে দিবো। এখন ঘুমিয়ে পড়ুন।

—হুম। তুমিও ঘুমাও।

অতঃপর চোখ বন্ধ করতেই সারাদিনের ক্লান্তিতে কিছুক্ষণের ঘুমে তলিয়ে গেলো দুজনে। জার্নি শেষে ভরপেট তাদের এখন একটা ভালো ঘুমের বড্ড প্রয়োজন!

__________________

বৃষ্টি শেষে হালকা রোদের দেখা মিলেছে সকালে। জানালার পর্দা ভেদ করে সকালবেলা সেই আলো এসে উঁকিঝুঁকি দিলো রাহিতার চোখে। পিটপিটিয়ে সদ্য ঘুম ভেঙে চোখ মেলে আস্তেধীরে উঠে বসলো সে। পাশে তাকিয়ে ঘড়িতে দেখলো ৭.০৫ বাজে। আস্তেধীরে উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেলো সে। কাল জার্নি করার পর রাত হয়ে যাওয়ায় আর গোসল করেনি সে। তাই সকালে উঠেই ঝটপট গোসল করে নিলো। এসব করে বের হতে হতেই ৭.৪৫ বেজে গেছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে যখন চুল ঝাড়ছে রাহিতা ঠিক তখনি ওর মনে হলো ফোনের ভাইব্রেশনের মৃদু শব্দ আসছে। তোয়ালে মেলে দিয়ে সন্দেহ মোতাবেক এগিয়ে গিয়ে নিজের ফোন চেক করলো সে। না এখানে তো কোনো ফোন আসেনি। স্বপ্নিলের দিকের সাইড টেবিলে হেটে যেতেই আবারো ফোন বেজে উঠায় এবার বিষয়টা স্পষ্ট হলো রাহিতার কাছে। স্বপ্নিলের ফোন সাইলেন্ট করা, এখান থেকেই আওয়াজ আসছে বারবার। হাত বাড়িয়ে রাহিতা দেখে “তুষার” নামের একজনের ছয়টা মিসডকল। রাতে ঘুমের ডিস্টার্ব না হওয়ার জন্য ফোন সাইলেন্ট করে ঘুমিয়েছিলো স্বপ্নিল। তাই রাহিতাকে ডেকে দিতে বলেছে সকাল সকাল। ঘড়িতে সময় দেখে এবার স্বপ্নিলকে ডাকে রাহিতা। বেশ কয়েকবার ডাকার পর যখন স্বপ্নিল উঠেনা তখন রাহিতা বলে ওর ফোন এসেছে আর এটাতেই কাজ হয়। হুট করে চোখ মেলে তাকায় স্বপ্নিল। রাহিতার হাত থেকে ফোন নিয়ে কানে লাগাতেই কথা হয় ছেলেটার সাথে, যে পারতপক্ষে স্বপ্নিলের অফিসের ম্যানেজার। রাহিতা খেয়াল করে, কথা বলার মাঝেই ক্ষণে ক্ষণে স্বপ্নিলের মুখ পেশি শক্ত হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে কোনো কারণে ব্যাপক রা’গান্বিত সে! কৌতুহলী রাহিতা কল কাটার পর কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই যেন স্বপ্নিল রা’গে ফেটে পড়ে। ফোনের রাগ ওর উপর ঝেড়ে বলে,

—আটটা ষোল বাজে এখন। তোমায় বলেছিলাম না আমায় ৮টার আগে ডেকে দিতে? এখন রেডি হবো কখন, খাবো কখন আর যাবো কখন! একটাদিন ডেকে দিতে বলেছি, তাও করতে পারলেনা তুমি?

অনেকদিন পর স্বপ্নিলের এমন ধমকে অবাকের চুড়ান্তে পৌঁছে যায় রাহিতা। কস্টে ওর চোখে পানি চলে আসে। সে তো ঠিক সময়েই ডেকেছিলো স্বপ্নিলকে, সে নিজেই তো ফোনে কথা বলে এতগুলো সময় নস্ট করলো। এটা কি রাগের মাথায় খেয়াল করেনি সে? রাহিতা নিজের পক্ষে কথা বলতে ধরে। চোখের পানি বের হতে দেয়না। চোখমুখ শক্ত করে মুখ ফুটে বলে,

—একদম আমার উপর দোষ দিবেন না বলে দিচ্ছি। আমি ঠিক ৮ টাতেই আপনায় ডেকেছি। আপনিই ফোনে এতক্ষণ সময় নস্ট করলেন আবার এখন শুধু শুধু আমার উপর রাগ ঝাড়ছেন!

রাহিতার পালটা জবাব দেওয়ায় যেন রাগ আরেকটু বেড়ে গেলো স্বপ্নিলের। তবে এবার আর জবাব না দিয়ে রা’গে গজগজ করতে করতে দ্রুতপায়ে উঠে যায় সে। রাগের মাত্রা বুঝাতে ঠাশ করে বাথরুমের দরজা লাগিয়ে বুঝিয়ে দেয় সে ক্ষে’পে আছে! ফ্রেশ হয়ে বেরোতেই ওর কাপড়চোপড় বিছানার উপর রেডি করে রাখা দেখেও কিছু বলেনা স্বপ্নিল। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বিনা নাস্তা করেই চলে গেলো অফিসের উদ্দেশ্যে। যাওয়ার আগে রাহিতার সাথে আর একটা কথাও বললোনা সে। ব্যস্তহাতে কাকে যেন ফোন করে কথা বলতে বলতে বেরিয়ে গেলো বাসা হতে। হঠাৎ স্বপ্নিলের এমন বদলে যাওয়া আচরণে অভিমান জন্মে রাহিতার ছোট্ট মনে!

কই সে তো কিছু করেনি, তবে কেন স্বপ্নিল ওর উপর এভাবে রাগ ঝাড়লো? ওর কি খারাপ লাগেনা? আর তার চেয়েও বড় কথা – কিসেরই বা এত রাগ, এত ক্ষো’ভ জন্মালো স্বপ্নিলের মনে, যার কারণে সে এভাবে এত তাড়াহুড়ো করে ঢাকায় আসলো? হয়েছেটা কি ওর অফিসে?
বারান্দার রেলিং ঘেষে দাঁড়িয়ে স্বপ্নিলের চলন্ত গাড়ির দিক তাকিয়ে ভাবতে থাকলো রাহিতা!

#চলবে

#মন_বিনিময়
#পর্বঃ৩৫
#লেখনীতে- তাসফিয়া হাসান তুরফা

সকাল ১০টা। বারান্দায় চুপচাপ বসে আছে রাহিতা। স্বপ্নিলের উপর রাগে কিছু খায়নি সে সকালে। মনের মাঝে মুঠোভরা অভিমান ও রাগ নিয়ে ফুসছে শুধু! কিছুক্ষণ আগে দিলারা বেগমের সাথে কথা হয়েছে তার, উনারা আগামী পরশু আসবেন ঢাকায়। অর্থাৎ আরও দুটো দিন স্বপ্নিলের সাথে একা থাকতে হবে বাসায়। এটা ভেবেই রাহিতার বিরক্ত লাগছে এখন। যে আগ্রহ নিয়ে ও ঢাকায় এসেছিলো স্বপ্নিলের সাথে, আজ সকালে করা আচরণে যেন সব মূর্ছা গেলো। রাহিতা যতক্ষণ রাগে বিভোর ততক্ষণে ঘড়িতে ১০.৩০ টা পেরিয়েছে। টুংটাং করে বেজে উঠা মুঠোফোনের ধ্বনি ভেসে আসছে রুম থেকে। রুমে যেয়ে ফোন নিতেই দেখে স্বপ্নিলের নাম জ্ব’লজ্ব’ল করছে স্ক্রিনে। যে নাম দেখে অভিমানের পাল্লা তরতর করে বেড়ে উঠে। মাথাচাড়া দেয় রাগ। তাই কতক্ষণ বেজে উঠে ক্লান্ত হয়ে একা একাই বন্ধ হয়ে যায় ফোন। কল কেটে যাওয়ার পর আরও তিনবারের মতোন ফোন দেয় স্বপ্নিল। রাহিতা তবু ধরেনা। মনে মনে স্বপ্নিলকে জ্বা’লিয়ে বেশ শান্তি পায় সে। নির্ঘাত অনেক বিরক্ত হয়েছে লোকটা। ঠিক হয়েছে! মনে মনে ক্রু’র হাসে রাহিতা।

মিনিট পাচেক অতিক্রম হয়, কলিং বেল বেজে উঠে। রাহিতা চমকায়। এ সময় আবার কে আসলো? স্বপ্নিল না অফিসে, ও আবার চলে আসেনি তো? কিন্তু অফিসে তো অনেক জরুরি কাজের কথা বললো স্বপ্নিল, এত তাড়াতাড়ি আসার কথা না। তবে কে? ভাবতে ভাবতেই মেইন দরজার ফুটো দিয়ে দেখার চেস্টা করে বাহিরে কে। দারোয়ানকে দেখে আরেকটু অবাক হয়। দরজা খুলে দিতেই রাহিতাকে দেখে সালাম দেয় দারোয়ান। নম্র হেসে একটা বক্স ওর হাতে দিয়ে বলে,

—ম্যাডাম, এটা আপনার জন্য।

—এটা কি, সোলেমান ভাই?

—তা তো জানিনা। এক ছেলে আসছিলো একটু আগে এটা দিয়ে গেলো। এরপর স্বপ্নিল স্যার ফোন দিয়ে বললো আপনারে দিয়ে যাইতে।

দারোয়ান মাথা চুলকে বলে। আর কথা না বাড়িয়ে উনার থেকে বক্সটা নিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয় রাহিতা। সোফায় বসে কৌতুহলের সাথে বক্সটা খুলতেই চোখে পড়ে ভেতরে পারসেল। মনে হয় কোনো খাবার, অন্তত ভেতর থেকে আসা সুঘ্রাণ তো তাই বলছে! পারসেলটা তুলতেই নিচে চোখে পড়ে একটি চিরকুট। তাতে গুটিগুটি অক্ষরে ছোট্ট করে লেখা “সরি”। রাহিতার এবার আর বুঝতে বাকি রয়না এটা কে পাঠিয়েছে, কেন পাঠিয়েছে। একিসাথে স্বপ্নিলের দেওয়া চিরকুট ও খাবার দেখে এতক্ষণের মন খারাপ যেন নিমিষেই কয়েকগুন হালকা হয়ে গেলো। সবেমাত্র খাবারের প্যাকেট খুলেছে রাহিতা সে সময় পুনরায় স্বপ্নিলের ফোন আসে। এবার আর রাগ দেখায়না রাহিতা। কোমল সে স্বপ্নিলের নিকট থেকে একটু যত্ন পেয়েই গলে যায়, ফোন না ধরে থাকতে পারেনা আর। ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে স্বপ্নিলের বিচলিত কণ্ঠস্বর ভেসে আসে তৎক্ষণাত!

—কোথায় ছিলে তুমি? ফোন ধরছিলেনা কেন?

স্বপ্নিলের প্রশ্নে অদ্ভুত ব্যাকুলতা ও অস্থিরতা টের পায় রাহিতা। তবু শান্ত স্বরে বলে,

—এমনিই। আপনার কি সমস্যা? এত ফোন দিচ্ছিলেন কেন?

—এমনি মানে? তুমি এতক্ষণ ইচ্ছা করে আমার ফোন ধরছিলেনা? মজা করছো আমার সাথে?

—মজা করবো কেন? সবসময় আপনার ফোন ধরতে বাধ্য নই।

—অবশ্যই বাধ্য তুমি।

দাতে দাত চেপে বলে স্বপ্নিল। ভেবেছিলো এবার ফোন দিয়ে ভালোভাবে কথা বলবে রাহিতার সাথে, সকালের আচরণের জন্য সরি বলবে। কিন্তু এখন মেয়েটার ত্যাড়া উত্তর শুনে নিজেরই মেজাজ আবার ক্ষি’প্ত হচ্ছে। রাহিতা উত্তর না দেওয়ায় স্বপ্নিল নিজেও ফোস করে এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে। নিজেকে সামলে এবার নরম কণ্ঠে বলে,

—বাসায় কেউ নেই। তোমায় একা রেখে এসেছি। এদিকে তুমি এতবার ফোন দেওয়ার পরেও ধরছিলেনা, আমি কত টেনশনে পড়ে গিয়েছিলাম তুমি জানো? কেন এমনটা করলে, রাহি?

রাহিতা এবারও নিশ্চুপ রয়। তবে এবার তার অনুভূতি ভিন্ন। এখন সে উপলব্ধি করে স্বপ্নিলের তখনকার বিচলিত হওয়ার কারণ। সে ওর জন্য এতটা চিন্তা করছে, ওর খেয়াল রাখছে বিষয়টা হৃদয় জুড়িয়ে দেয়। রাহিতা নিচু স্বরে বলে,

—সরি। আর করবোনা এমন।

এতক্ষণ পর রাহিতার স্বাভাবিক কণ্ঠ শুনে স্বস্তির শ্বাস ফেলে স্বপ্নিল। সে নিজেও স্বাভাবিক গলায় জিজ্ঞেস করে,

—খাবার পেয়েছো?

—হ্যাঁ। মাত্রই পেলাম।

—তাহলে খেয়ে নাও।

—আচ্ছা।

—এখনো মুড অফ?

নির্বিকার ভাবে প্রশ্ন করে স্বপ্নিল। রাহিতা একবার ভাবলো বলবে এখনো রেগে আছে স্বপ্নিলের উপর। কিন্তু পরক্ষণেই ওর মনে হলো এমনটা করা ঠিক হবেনা। স্বপ্নিল অফিসের ঝামেলায় এ ক’দিন কেমন অস্থিরতায় দিন কাটাচ্ছিলো সেটা রাহিতা বেশ ভালোই দেখেছে। সকালে যদিও স্বপ্নিলের উপর রাগ হয়েছে তবুও বিচক্ষণ রাহিতা বুঝে কারণছাড়া হুট করে স্বপ্নিল এমনটা করবেনা। তাইতো এতকিছুর মাঝেও স্বপ্নিল ঠিকি মনে করে ওর জন্য খাবার পাঠিয়েছে, সাথে ছোট চিরকুট। তাই এ মুহুর্তে আর মনোমালিন্য বাড়ানোর ইচ্ছে হলোনা রাহিতার। কিছুক্ষণ চুপ থেকে স্বপ্নিলের উদ্দেশ্যে সে বলে,

—আপনি খেয়েছেন?

—হ্যাঁ, মাত্র খেলাম। তুমিও খেয়ে নাও এখনি।

—আচ্ছা, আপনি কিভাবে জানলেন আমি না খেয়ে বসে আছি?

রাহিতার প্রশ্নে স্বপ্নিল হাসে। সে বলে,

—এতদিন তোমার সাথে থেকে থেকে তো এটুকু চিনিই তোমায়। এর আগেও একদিন আমাদের ঝগড়া হয়েছিলো ওইদিন তুমি রাগ করে খাওনি আমি খেয়াল করেছি। এটা তোমার অনেক বাজে অভ্যাস, রাহি। এ অভ্যাস ছাড়ো। কতক্ষণ খালিপেটে আছো সে খেয়াল আছে তোমার?

স্বপ্নিলের কথার বিপরীতে রাহিতা আস্তে করে বলে,

—এখন থেকে আমি যতবার রাগ করে না খেয়ে থাকবো, আপনি কি ততবার আমার জন্য খাবার পাঠাবেন?

রাহিতার এহেন বোকা বোকা প্রশ্নে জোরে হেসে ফেলে স্বপ্নিল। ওর হাসির আওয়াজে ফোনের এপারে লজ্জায় মিইয়ে যায় রাহিতা। সে কি মনের কথা বলে ভুল কিছু বলেছে? স্বপ্নিল নিশ্চয়ই এখন মজা নিবে! রাহিতার ভাবনার মাঝেই স্বপ্নিল কিছু বলবে তার আগেই ওর ম্যানেজার চলে আসে রুমে। তাই আর কথা বলার সুযোগ পায়না স্বপ্নিল।
“পরে কথা বলছি” বলে ফোনটা কেটে দেয়।

এদিকে স্বপ্নিলের হুট করে ফোন কেটে দেওয়ায় খানিকটা মিইয়ে যায় রাহিতা। ভাবে ওর সেই প্রশ্নটা করা উচিত ছিলোনা হয়তো। মনে হয় স্বপ্নিল ইতস্তত বোধ করেছে যার ফলে এভাবে ফোন কেটে দিলো। মনে মনে হতাশ হয়ে খাবারের প্যাকেট খোলে রাহিতা। দুটো চিকেন স্যান্ডউইচ পাঠিয়েছে স্বপ্নিল। তা দেখে প্রশস্ত হাসে রাহিতা। ও একদমই ভারী নাস্তা করতে পারেনা সকালে, এ বিষয়টাও খেয়াল করেছে স্বপ্নিল! ভাবতেই অন্যরকম ভালো লাগে!

_______________

মিটিংরুমে অফিসের সদস্যদের সাথে বসে আছে স্বপ্নিল। তার অধীনে কাজ করা এক কর্মচারী তাদের কোম্পানির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। এক বড় বিদেশি কোম্পানীর সাথে ডিল করার জন্য স্বপ্নিলদের কোম্পানির যে প্রেজেন্টেশন রেডি করেছিলো তা ওই ব্যক্তি আরেকটি প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানির কাছে ফাস করে দিয়েছে। জুবায়ের নামক সেই ব্যক্তি মূলত ওই কোম্পানির স্পাই হিসেবে কাজ করছিলো যা কিছুদিন আগেই জানতে পারে স্বপ্নিল। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। যার ফলে সব মিলিয়ে এ ব্যাপারে বেশ বিপাকে পড়েছে স্বপ্নিলের কোম্পানি। এ স্বল্প সময়ে কিভাবে সব সামাল দিবে ভেবে পাচ্ছেনা কেউ৷ সে বিষয়ে আলোচনা করতেই কোম্পানির সব গুরুত্বপূর্ণ পোস্টের মেম্বারদের নিয়ে আজকের এ মিটিং। সবার আলোচনা শেষে ঠিক করা হলো ওরা যেয়ে সরাসরি ওই বিদেশি ডিলারদের সাথে দেখা করবে এবং এ বিষয়ে কথা বলবে। উপায় না পেয়ে শেষমেশ স্বপ্নিল নিজেও রাজি হয়। ম্যানেজার জিজ্ঞেস করে, সব ঠিকঠাক করে কবেকার ফ্লাইট বুক করবে। কিছুক্ষণ ভাবনা-চিন্তা করে স্বপ্নিল বলে সামনের সপ্তাহের টিকেট বুক করতে। একিসাথে ওর সাথে যারা যাবে তাদের উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করে,

—কারও কোনো সমস্যা নেই তো?

—না, স্যার। আমাদের যেহেতু ভিসা করাই আছে। তাহলে সামনের সপ্তাহে গেলে কোনো প্রবলেম হবেনা। সবাই গোছগাছও করতে পারবো।

—হুম। তাহলে আজকের মিটিং এখানেই শেষ। যে যার মতো কাজ হ্যান্ডেল করুন। আর যে আমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে তাকে আমি দেখে নিবো।

—ওকে, স্যার। আমরাও চাই ওর বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

—হুম। আমাদের কাছে কিছু প্রমাণ আছে। ওর বিরুদ্ধে জলদিই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

_____________

স্বপ্নিল যখন বাড়িতে পৌঁছে তখন সন্ধ্যা ৬টার মতোন হবে। রাহিতা একা বাসায় আছে তাই অফিসের কাজ মিটিয়ে অন্ধকার নামার আগে আগেই ক্লান্ত শরীরে তড়িঘড়ি করে সে বাসায় আসার চেস্টা করেছে৷ কয়েকবার কলিং বেল বাজাতেই রাহিতা মিস্টি হেসে দরজা খুলে দিলো। নীল রঙের সালওয়ার কামিজ পড়ে মাথায় কাপড় দেওয়া স্নিগ্ধ রাহিতাকে দেখে কিছুক্ষণের জন্য মন-প্রাণ জুড়িয়ে গেলো স্বপ্নিলের। এতক্ষণের ক্লান্তি যেন নিমিষেই জিইয়ে গেলো।
আকাশে আজ পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে, কিন্তু এ মুহুর্তে স্বপ্নিলের মনে হলো তার ব্যক্তিগত চাঁদের সামনে আকাশের চাঁদ যেন কিছুই না! বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেট লক করে রাহিতার সাথে উপরে যেতে যেতে স্বপ্নিল প্রশ্ন করে,

—কি করছিলে তুমি? মাথায় কাপড় কেন?

—নামাজ পড়ছিলাম। আপনি আজ তাড়াতাড়ি এলেন যে?

—ভাবছিলাম আজ যদি আবার কারেন্ট যায় আর তুমি ভয় পেয়ে বাসা থেকে পালিয়ে যাও তাহলে তো আমার বিপদ। তাই তাড়াতাড়ি এলাম!

দুস্টু হেসে স্বপ্নিল বলে। ওর কথায় লাজুক হেসে ওর বাহুতে হালকা মারে রাহিতা। রুমে যেতেই স্বপ্নিল ফ্রেশ হতে চলে যায়। বের হয়ে আসতেই রাহিতার পাশাপাশি বিছানায় বসে। স্বপ্নিল খেয়াল করে রাহিতা গম্ভীরভাবে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। ভ্রু কুচকে স্বপ্নিল সুধায়,

—কি হয়েছে? এভাবে তাকিয়ে আছো কেন, হুম? আমায় কি আজ একটু বেশিই হ্যান্ডসাম লাগছে?

স্বপ্নিলের কথায় চোখ পাকায় রাহিতা। আগের ন্যায় গম্ভীর ভংগিমায় বলে,

—এসব বাদ দিন। আপনি সকালে আমার সাথে ওমন করলেন কেন সব খুলে বলুন আমায়!

—এখনি? আমি তো মাত্রই বাসায় এলাম। পরে বলি?

—না। আমার সকাল থেকেই সবটা জানার জন্য ভেতরে খচখচ করছে। আপনি এখনি বলবেন। প্লিজ, স্বপ্নিল। মানা করবেন না!

রাহিতার এত কৌতুহল দেখে আর দ্বিমত করেনা স্বপ্নিল। হঠাৎ সব জড়তা ভেঙে রাহিতাকে অবাক করে দিয়ে বলে,

—তোমার কোলে একটু মাথা রাখতে দেবে, রাহি? আমি ভীষণ ক্লান্ত।

এ প্রথম স্বপ্নিলের তরফ থেকে এমন নিঃসংকোচ আবদার শুনে মানা করার দুঃসাহস পায়না রাহিতা। বিছানায় হেলান দিয়ে বসে স্বপ্নিলকে কোলে মাথা রাখতে ইশারা করে। ওর সম্মতি পেয়ে আর বিলম্ব করেনা স্বপ্নিল। সাথে সাথেই এসে রাহিতার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। বিষাদময় নিঃশ্বাস ফেলে এক এক করে সবকিছু খুলে বলে। রাহিতাও এক হাতে ওর চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে পুরো কাহিনি শুনতে থাকে স্বপ্নিলের থেকে। নিশুতি রাতের পূর্ণিমা চাঁদ যেন আরও একবার সাক্ষী হয় দুজনের মন বিনিময়ের এক নতুন অধ্যায়ের!

#চলবে

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ