Monday, October 6, 2025







মন বিনিময় পর্ব-১৯

#মন_বিনিময়
#পর্বঃ১৯
#লেখনীতে- তাসফিয়া হাসান তুরফা

রুমে যেয়ে বেশ কিছুটা সময় নিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে স্বপ্নিল। এতক্ষণে মাথাটা একটু ঠান্ডা হয়েছে বোধহয়। হাত-পা ছেড়ে বিছানায় বসতেই একটু আগের করা নিজের আচরণের কথা মনে পড়লো ওর। সে কি একটু বেশিই রিয়্যাক্ট করে ফেললো নাকি? আনমনেই ভাবে স্বপ্নিল। রাহিতার সাথে এমনটা না করলেও পারতো সে, মেয়েটা নিশ্চয়ই খুব কস্ট পেয়েছে। নিজের মন ধি’ক্কার দিলো তাকে৷ কিন্তু পরক্ষণেই স্বপ্নিলের মনে পড়লো হুট করে তার এমন আচরণ করার কারণ। ক’দিন আগে স্বপ্নিলের এক বন্ধু সাফাতের ছোটভাই এমনই এক কাছের বন্ধুর বার্থডে পার্টিতে গিয়েছিলো, সেখান থেকে ম’দ্যপ অবস্থায় বাসায় ফিরেছে। কোনোদিন ম’দ না ছুয়ে দেখা ছেলেটাও বন্ধুদের চাপে প’ড়ে গ্রহণ ম’দ্য’পান করতে বাধ্য হয় একপ্রকার। একিসাথে সে স্থানে ছেলেমেয়েদের অশ্লীলতা ও অবান্তর ঢলা’ঢলি প্রত্যক্ষমান ছিলো, এ নিয়ে ওদের বাসায় বেশ তুলকালাম বেধেছিলো। রাগের বশে ভাইকে মেরেছিলোও সাফাত। আজকালকার জেনারেশনের এসব অধঃপতন নিয়েই সেদিন স্বপ্নিলের বন্ধুদের মধ্যে আলোচনা হয়েছিলো বেশ কিছুক্ষণ। তাই আজ রাহিতার মুখে বার্থডে পার্টি শুনে অজান্তেই এ স্মৃতি মাথায় আসে স্বপ্নিলের। তাইতো ছেলেমেয়েরা সব একত্রে পার্টি করছে শুনে মুহুর্তে ক্ষে’পে যায় সে!
যাই হোক সেসব কথা। যদিও স্বপ্নিল জানে রাহিতার বন্ধু-বান্ধবরা এমন নয়, রাহিতাকে হাজার জোর করলেও সে এমন কিছুই করবেনা তবুও স্বপ্নিলের অবাধ্য মন বুঝতে নারাজ। প্রসঙ্গ যেখানে রাহিতার আসে, সেখানে এক চুল পরিমাণ রিস্ক নিতে স্বপ্নিল রাজি নয়। নিজের এসব চিন্তাভাবনার মাঝেই স্বপ্নিল একিসাথে ভাবতে লাগলো রাহিতার মন কিভাবে ভালো করা যায়৷ ওর আচরণে একটু আগে নিশ্চয়ই খুব কস্ট পেয়েছে মেয়েটা।

হুটহাট কদম ফেলে ঝড়ের বেগে রুমে প্রবেশ করে রাহিতা। ওর পায়ের শব্দে চোখ তুলে তাকায় স্বপ্নিল। রেগে আছে রাহিতা, ফর্সা চেহারার লালচে ভাবে রাগের আভা স্পষ্ট দৃশ্যমান। এ ভাব ঠিক রাগ না অভিমানের ঠিক বুঝে উঠতে পারলোনা স্বপ্নিল। সেদিক না তাকিয়েই ওর সাথে কোনো কথা অব্দি না বলে একা একা বারান্দায় চলে গেলো রাহিতা। বেশ কিছুক্ষণ অতিক্রম হলো, রুমের ভেতরে ওর জন্য অপেক্ষা করলো স্বপ্নিল কিন্তু এখনো রাহিতা আসছেনা দেখে সে নিজেই চলে গেলো বারান্দায়। বারান্দার গ্রিল ধরে একমনে নিশুতি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে মেয়েটা, রাতের আকাশের ন্যায় ওর চোখেমুখেও আধারের ঘনঘটা! নিঃশব্দে ওর পাশে এসে দাঁড়ায় স্বপ্নিল। ওকে দেখেও যেন দেখেনা রাহিতা। আগেকার ন্যায় আকাশের দিকেই তাকিয়ে থাকে। ওর দৃষ্টি আকর্ষণে ব্যর্থ হওয়ায় এবার গলা ঝাড়ে স্বপ্নিল। সেদিক আড়চোখে তাকায় রাহিতা। স্বপ্নিল মুখ খোলার চেস্টা করতেই রাহিতা চলে আসে রুমের ভেতর। স্পষ্ট বুঝিয়ে দেয় “এ মুহুর্তে ওর কোনো কথাই সে শুনতে ইচ্ছুক নয় সে”।

বলাবাহুল্য, এভাবে ইগ্নোর হওয়াটা মোটেও পছন্দ হলোনা স্বপ্নিলের। তাইতো ওর পিছু পিছু সে নিজেও চলে আসে রুমের ভেতর। রাহিতা বিছানায় শুবে এমন সময় হাত ধরে টেনে তোলে ওকে। আচমকা ওর এহেন আচরণে মেয়েটার এতক্ষণের রাগে আরেকটু ঘি পড়লো যেন! স্বপ্নিল কিছু বলতে যাবে তার আগেই ক্ষি’প্ত রাহিতা নিজেই চেচিয়ে উঠে,

—কি সমস্যা আপনার? এমন করছেন কেন?

—দেখো রাহি, তুমি আমাকে ভুল বুঝ…

—কি ভুল বুঝবো আর আপনাকে বলুন? কিছু বুঝার বাকি আছে কি? এতদিন তো ভুল-ই বুঝে এসেছিলাম আপনাকে। ইদানীং তার প্রমাণও পাচ্ছি।

—আমি জানি তখন ওভাবে মানা করায় তুমি রেগে আছো আমার উপর, কস্টও পেয়েছো কিন্তু আমার দিক থেকেও বিষয়টা ভেবে একবার দেখার ট্রাই করো..

—এটাই তো আপনার প্রবলেম, স্বপ্নিল। প্রত্যেকবার আমাকেই আপনার দিকটা ভেবে দেখতে হবে। কিন্তু আপনি কোনোদিনও আমার দিকটা ভেবে দেখলেন না।

স্বপ্নিলকে অবাক করে হতাশ কণ্ঠে গর্জে ওঠে রাহিতা। বিয়ের পর থেকে চলা নিজের মন ও মস্তিষ্কের এ অদৃশ্য লড়াইয়ে যেন সে ভীষণ ক্লান্ত! সবসময় চুপচাপ হাসিমুখে স্বপ্নিলের সব কথাকে সব শর্তকে সে মেনে নিয়েছে, ওর যেন কোনো কস্ট না হয় সেদিকটা ভেবে দেখেছে৷ কিন্তু স্বপ্নিল? সে কি ওর মতো করে ভেবেছে? সে তো সবসময় নিজের দিকটাই ভেবে দেখেছে। আর কতদিন মনের কস্ট মনে লুকিয়ে রাখবে রাহিতা? সে-ও তো র’ক্তমাংসে গড়া মানুষ! ওর-ও যে কস্ট হয় স্বপ্নিলকে সেটা বুঝাতে হবে। তাই আজ আর চুপ থাকবেনা রাহিতা। স্বপ্নিলকে চোখে আংগুল দিয়ে জানাবে এতদিন তার মনের সকল না বলা ব্যথা।

—আপনার যখন ইচ্ছে হয় আমার উপর অধিকার দেখান, আবার যখন ইচ্ছে হয় আমাকে বউ হিসেবে অস্বীকার করেন। এটা কোন ধরনের আচরণ? মানে কি এসব করার? আমার কি খারাপ লাগেনা?

—রাহি, তুমি বুঝছোনা ব্যাপারটা। আমি তোমায় বউ হিসেবে অস্বীকার করিনি, আমি শুধু বলেছিলাম..

—আপনি শুধু বলেছিলেন আমায় বউ হিসেবে মেনে নিতে পারছেন না, তাইতো?

স্বপ্নিল মাথা নাড়তেই রাহিতা আবারো বলে,

—তো সেটা কি ইনডাইরেক্টলি বউ হিসেবে অস্বীকার করা হলোনা? চুপ আছেন কেন? বলুন!

এবার স্বপ্নিল কথা বলার ভাষা পায়না। সে নিজের কথায় নিজেও লজ্জিত৷ কিছুক্ষণ ওর উত্তরের আশায় চেয়ে থেকেও স্বপ্নিলকে নীরব দেখে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে রাহিতা৷ অশ্রুসিক্ত চোখে ভাঙা গলায় বলে,

—জানেন বিয়ে নিয়ে প্রত্যেকটা মেয়েরই একটা আলাদা স্বপ্ন থাকে, জীবনসঙ্গীকে ঘিরে কিছু সূক্ষ্ম চাওয়া-পাওয়া থাকে। আমিও এর ব্যতিক্রম নই, এসব শখ আমারো ছিলো৷ কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত আপনার মতো আমিও পরিস্থিতির শি’কার হই। যার ফলে বিয়ে নিয়ে আমার সকল চাওয়া পূরণ হওয়ার আগেই স্থির হয়ে যায়। তবুও আমি কখনো এসব নিয়ে কমপ্লেইন করিনি। কেন জানেন? শুধু আপনার কথা ভেবে। কারণ আমি বুঝেছি আপনার কস্ট, কোন পরিস্থিতিতে আমাদের বিয়ে হয়েছিলো সবটা বুঝেছি। নিজের কোনো দোষ না থাকার পরেও নিজের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েও আমি কখনো কোনো অভিযোগ করিনি।

কথার বলার মাঝে যেন খানিকটা ভেঙে পড়ে রাহিতা, নিজেকে সামলাতে ব্যর্থ হয়ে বসে পড়ে ফ্লোরে। সদা নিজেকে সামলে রাখা রাহিতাকে এ প্রথমবার এতটা ভেঙে পড়তে দেখে স্বপ্নিলের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে ওঠে , বুকের মাঝে কোথাও এক অদ্ভুত চিনচিনে ব্যথা শুরু হয়। রাহিতার পাশে সে-ও বসে পড়ে মাটিতে। দু’হাতে ওর চোখের পানি মুছে দিতে যাবে ঠিক তখন ওর হাত থামিয়ে দেয় রাহিতা। নিজ হাতে চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,

—আমি সবসময় আপনার কথা ভেবে নিজের অনুভুতিকে সরিয়ে রেখেছি, স্বপ্নিল। আপনি যেন আমার সাথে কম্ফোর্টেবল হন, আমার সাথে সুখ-দুঃখের কথা শেয়ার করেন এজন্য আপনার বন্ধু হয়েছি। কিন্তু বিনিময়ে আমি কি পেয়েছি? আপনার বিবাহিত স্ত্রী হয়েও আপনার মুখে বারবার “বউ হিসেবে মানিনা” শুনেছি। আপনার উপর আমার অধিকার থাকার পরেও আমি কখনো অধিকার দেখানোর সুযোগ পাইনি অথচ আপনি “বউ হিসেবে মানিনা” বলেও দিব্যি বহুবার আমার উপর অধিকার দেখিয়েছেন, আমার অনেক কিছুতে হস্তক্ষেপ করছেন। কেন? এই যে কথায় কথায়” বন্ধু বন্ধু” করেন, কখনো কি মনে হয়না এ বন্ধুরুপী মেয়েটা প্রকৃত অর্থে আমার বউ? তারও একটা স্বাভাবিক বৈবাহিক সম্পর্কের ইচ্ছা থাকতে পারে? কিন্তু আপনি বারবার কখনো বন্ধুত্বের নয়তো কখনো দায়িত্বের দোহাই দিয়ে আমার থেকে সে অধিকারটুকুও কেড়ে নিয়েছেন৷ আর কতদিন এভাবে চলবে বলুন?

কাদতে কাদতে রাহিতার হিচকি উঠে গেছে। কান্নার দমকে একটু পর পর দৃশ্যমানভাবে কেপে উঠছে শরীর। স্বপ্নিল একদৃষ্টে ওর মুখের দিক চেয়ে আছে, ওর দৃষ্টিতে কিছুটা বিস্ময়, বেশ খানিকটা অপরাধবোধ। রাহিতার কথায় আজ নিজের নজরে যেন নিজেই ছোট হয়ে যাচ্ছে স্বপ্নিল। আসলেই সে তো কখনো এভাবে ভাবেনি! সে তো সদা স্বার্থপরের ন্যায় নিজের দিকটাই ভেবে এসেছিলো। নিজের কস্ট সামাল দিতে দিতে রাহিতার মনের এ বেহাল দশা যে ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি সে! অপরাধী দৃষ্টিতে আলতো হাতে রাহিতার দুই গাল স্পর্শ করলো স্বপ্নিল৷ মাথা নিচু করে কাঁদতে থাকা রাহিতা হঠাৎ স্বপ্নিলের স্পর্শে চমকে মাথা উপরে তুললো। মুহুর্তেই চোখাচোখি হয় ওর দিকে গভীরভাবে তাকিয়ে থাকা স্বপ্নিলের সাথে। যার দৃষ্টিতে স্পষ্ট অনুতাপ, স্বচ্ছ অপরাধবোধ। সেদিক চেয়েই ধীরস্বরে রাহিতা বলে,

—আমি ক্লান্ত, স্বপ্নিল। বড্ড বেশিই ক্লান্ত। আমার দমবন্ধ লাগছে। আমায় একটু একা থাকতে দিন।

রাহিতার কথায় এবার টনক নড়ে স্বপ্নিলের। দেয়ালের সাথে হেলান দেওয়া রাহিতাকে নীরবে পর্যবেক্ষণ করে সে। আজকে যেন রাহিতার মাঝে কোথাও না কোথাও নিজেকে দেখতে পারছে সে৷ একা কস্ট সহ্য করার যন্ত্রণা স্বপ্নিল খুব ভালো করেই জানে, তাই রাহিতাকে একটু সময় দিলো চুপ থাকার। মুখে কিছু না বলে দু’হাতে যত্নসহকারে চোখের পানি মুছে দিলো ওর। অতঃপর সেভাবেই আলগোছে পাজাকোলে তুলে নিলো রাহিতাকে। নিজের কস্টে আজ এতটাই নিমজ্জিত রাহিতা যে স্বপ্নিলের প্রথমবার ওকে কোলে নেওয়াতেও কোনোরুপ রিয়েক্ট করার মতো সময় পেলোনা। সেভাবেই চুপটি করে লেপ্টে থাকলো স্বপ্নিলের বুকের সাথে। শুনতে থাকলো ওর দ্রুতগতিতে ধুকপুক করতে থাকা হৃদস্পন্দন!

রাহিতাকে ধীরেসুস্থে বিছানায় শুইয়ে দিলো স্বপ্নিল। এসি অন করে গায়ে কাথা টেনে দিলো। নিশ্চুপ রুমে শুধু একটু পরপর রাহিতার নাক টানার আওয়াজ শুনা যাচ্ছে। স্বপ্নিলটাও যেন আজ আশ্চর্যরকম নীরব। বিছানায় হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে একটু পরপর পাশ ফিরে শোয়া রাহিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। নীরবেই বুঝিয়ে দিচ্ছে ওর কস্টে সে একা নয়, স্বপ্নিলও ওর পাশে আছে৷ কিছু সময় অতিবাহিত হতেই থেমে গেলো নাক টানার শব্দ, শান্ত হয়ে এলো রাহিতার শ্বাস-প্রশ্বাস। স্বপ্নিল টের পেলো রাহিতা ঘুমিয়ে গেছে। বুকের মাঝে চেপে রাখা এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো সে। ধীরপায়ে বিছানা থেকে উঠে গিয়ে ঘুমন্ত রাহিতার মুখোমুখি বসলো ফ্লোরে। বেশ কিছুক্ষণ নীরবে মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করলো নিজের বউকে। চোখের পানির দাগ এখনো বুঝা যাচ্ছে গালে। কিভাবে পারলো সে এই মেয়েটাকে কস্ট দিতে? স্বপ্নিল তো কখনো এটা চায়নি। অথচ নিজের অজান্তে সে নিজেই সবচেয়ে বড় কস্ট দিয়ে ফেলেছে রাহিতাকে, তাও এতদিন ধরে যা চুপচাপ নিজের মনে পুষে রেখেছিলো মেয়েটা। অপরাধবোধ তীব্র হয়, অনুভূতিরা দিশেহারা। তপ্তশ্বাস ফেলে অনুতপ্ত স্বপ্নিল একটি শক্তপোক্ত সিদ্ধান্ত নেয়। মস্তিষ্কের বিরুদ্ধে যেয়ে মনের কথায় সায় দেয়, নিজের বউকে মন থেকে বউ হিসেবে মেনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত। এটাই রাহিতার প্রাপ্য!

______________________

পরদিন সকালে রাহিতা ঘুম থেকে উঠার আগেই অফিস চলে যায় স্বপ্নিল। সারাদিনে একবারও দেখা বা কথা কোনোটাই হয়নি দুজনের। বিকেলে শাশুড়ি ও ননদের সাথে বাসার পাশের পার্কে হাটতে গিয়েছিলো রাহিতা। আপাতত মন ভালো আছে তার। অবশ্য মন ভালো হওয়ার আরেকটি কারণ আছে এবং তা হলো দিলারা বেগম স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন রাহিতাকে তামান্নার বার্থডে পার্টিতে যাওয়ার জন্য। বিকেলে রিমি ফোন করায় রাহিতা পার্টিতে যাওয়ার কথা মানা করে দেয়, তখন সে জিদ করে ওকে রাজি করানোর চেস্টা করে এবং এক পর্যায়ে ওকে মানাতে হাল ছেড়ে শেষমেশ দিলারা বেগমের সাথে কথা বলে উনাকে রাজি করায়। ফলস্বরূপ সন্ধ্যায় শাশুড়ির অনুমতিতে পার্টির জন্য আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হচ্ছে রাহিতা। গাঢ় নীল রঙের সালওয়ার-কামিজ বেশ ফুটে উঠেছে তার উজ্জ্বল ত্বকে। চুল আঁচড়ে পরিপাটি হওয়ার মাঝেই রুমে ঢুকে স্বপ্নিল। সেজেগুজে রেডি হওয়া রাহিতার দিক তাকিয়ে কিছুক্ষণের জন্য থমকে দাঁড়ায় সে।
স্বপ্নিল জানে রাহিতা কোথায় যাচ্ছে, কারণ বাসায় প্রবেশ করতেই দিলারা বেগম স্পষ্ট জানিয়েছে তাকে রাহিতার যাওয়ার কথা এবং একিসাথে বলে দিয়েছেন স্বপ্নিল যেন এ ক্ষেত্রে আর দ্বিমত না করে। মায়ের কথায় সায় দিয়ে সে নিজেও চলে এসেছে উপরে। কেননা সে নিজেও অফিসে বসে ভাবছিলো বাসায় এসে রাহিতাকে পার্টিতে নিয়ে যাবে৷ মায়ের কাজে তার সুবিধাই হলো। আনমনে ভাবে স্বপ্নিল।

ফ্রেশ হয়ে এসে রাহিতাকে আপাদমস্তক ভালোভাবে লক্ষ্য করে চোখ সরু করে জিজ্ঞেস করে,

—বার্থডে করতে যাচ্ছো না বিয়েতে? এত সাজগোজ করার মানে কি?

—আমি যেটাই করি তাতে আপনার এত সমস্যা কেন হয়?

তেড়ে এসে বলে রাহিতা। ওর আচরণে হাসে স্বপ্নিল। মেয়েটা যে এখনো ওর উপর রেগে আছে বেশ বুঝে সে৷ কিছু না বলে এগিয়ে এসে রাহিতার পাশে দাঁড়িয়ে আয়নায় নিজের চুল ঠিক করে স্বপ্নিল। অতঃপর ড্রেসিং টেবিল থেকে শরীরে পারফিউম লাগাতে লাগাতে বলে,

—মজা করছিলাম। এখন চলো বের হই। পার্টি কয়টায় শুরু তোমার?

—৮টায়। কিন্তু আপনি কোথায় যাচ্ছেন?

অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে রাহিতা। আয়নায় সেদিক চেয়ে ওর বিস্ময়ভরা চাহনি দেখে স্বপ্নিল। আচমকা খানিকটা ঝুকিয়ে এসে ফিসফিসিয়ে বলে,

—আমার বউ বাহিরে পার্টি করবে আর আমি বাসায় বসে থাকবো এমন কি হয়? সে যেখানে যাবে আমিও সেখানেই যাবো। বুঝেছো এবার? চলো। লেট হচ্ছে তো!

কথাগুলো বলেই রাহিতার হাত ধরে রুম থেকে বের হয় স্বপ্নিল। এদিকে ওর কথার ধ্বনি রাহিতার কানে বাজে বেশ কিছুক্ষণ। “আমার বউ” মন-মস্তিষ্কে প্রতিফলিত হয় বারংবার! এটা আদৌ স্বপ্নিল তো? রাহিতার ছোট্ট মনে ভর করে বিস্ময়!

#চলবে

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ