#মন_বিনিময়
#পর্বঃ১৫
#লেখনীতে- তাসফিয়া হাসান তুরফা
চুপচাপ গাড়িতে বসে আছে রাহিতা। পাশে ড্রাইভ করতে থাকা স্বপ্নিলকে দেখেই একটু পর পর জমে থাকা অভিমান জাগ্রত হচ্ছে ওর মনে। কিন্তু স্বপ্নিলের মনে কি চলছে তার জানা নেই, কেননা ওর শক্ত হওয়া চোয়াল ও ভাবলেশহীন হাবভাব দেখে দ্বিধাদ্বন্দে ভুগছে সে৷ পুরো রাস্তা দুজনের মাঝে কোনো কথা হয়নি। এমনকি রাহিতা যে ওকে নিজের স্বামী হিসেবে পরিচয় দিলোনা এটা নিয়েও টু শব্দটা করলোনা স্বপ্নিল! মনে মনে প্রচন্ড ক্ষি’প্ত হলো রাহিতা। এ কেমন মানুষের সাথে বিয়ে করেছে সে? যার কিনা ওর প্রতি বিন্দুমাত্র কোনো অনুভূতিই নেই! আশ্চর্য।
এদিকে রাহিতার পাশে বসা স্বপ্নিল ড্রাইভ করতে করতে এক অন্য ছক কষতে ব্যস্ত! রাহিতার আজকের কথায় সে এতটাই হতভম্ব হয়েছে যে আর কোনোকিছু বলার ভাষা অব্দি হারিয়ে ফেলেছে যেন! অবশ্য এ স্তব্ধ হওয়ার পেছনে আরেকটি কারণ আছে এবং তা হলো হঠাৎ করে তার মনে সৃষ্টি হওয়া এক নতুন অনুভূতি, যা কিছুক্ষণ যাবত উপলব্ধি করছে স্বপ্নিল। এ অদ্ভুত অনুভূতির সাথে যে আগে সাক্ষাত ঘটেনি তার! আশ্চর্যজনকভাবে ওর মনের এ নতুন অনুভূতির কারণ হলো রাহিতা। একটু আগে রাস্তায় ওকে ‘বাবার বন্ধুর ছেলে’ বলাটা বিশেষ পছন্দ হয়নি স্বপ্নিলের। যদিও সে জানে রাহিতা মিথ্যা বলেনি। হয়তো ওর কথা ভেবেই এ কাজটি করেছে সে কেননা স্বপ্নিল নিজেই তো রাহিতাকে বউ হিসেবে মানেনা, চেয়েও মন থেকে গ্রহণ করতেও পারছেনা মেয়েটাকে এবং এটা তো সে নিজমুখেই বলেছে রাহিতাকে। মস্তিষ্ক রাহিতার পক্ষে সায় দেয়।
কিন্তু স্বপ্নিলের অবাধ্য মন তা মানতে নারাজ। এভাবে মানুষের সামনে তাকে নিজের স্বামী হিসেবে পরিচয় না দেওয়ায় রাহিতার উপর মনে মনে ফুসে উঠে সে। কোনো অজানা কারণে ভীষণ রাগ হচ্ছে ওর রাহিতার উপর। যতই হোক দুনিয়ার নজরে তো তারা দুজন স্বামী-স্ত্রী। তবে কি এমন ক্ষতি হতো যদি রাহিতা ওই ছেলেটার সামনে ওকে স্বামী হিসেবে পরিচয় দিতো? স্বপ্নিল কি অস্বীকার করতো? অবশ্যই করতো না! কিন্তু এ কথাটা কোন মুখে সে রাহিতাকে বলবে? ভেবে পায়না স্বপ্নিল। তাইতো মন-মস্তিষ্কের এ দ্বিপাক্ষিক যু’দ্ধে অপারগ হওয়ায় চুপচাপ মুখে কলুপ এটে ড্রাইভ করছে সে। অথচ মনে মনে ঠিকি ফু’সছে! এরই মাঝে কখন যে গাড়ির স্পীড বাড়িয়ে দিয়েছে টের পায়না স্বপ্নিল। আচমকা হাতে রাহিতার স্পর্শে টনক নড়ে তার!
—কি করছেন? সামনে গাড়ি আসছে, স্পীড কমান প্লিজ।
আতংকিত স্বরে স্বপ্নিলের হাত ধরে চেঁচিয়ে উঠে রাহিতা। এতক্ষণে হুশ আসায় মুহুর্তের মধ্যেই স্পীড কমিয়ে সামনে আসা গাড়ি থেকে নিজেদের গাড়িকে নিরাপদ দূরত্বে আনে স্বপ্নিল। তা দেখে ফোস করে ভেতরে চেপে রাখা শ্বাস ছাড়ে রাহিতা। আড়চোখে ওর দিক তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে স্বপ্নিল বলে,
—চিন্তার কোনো কারণ নেই। স্বামী হই বা না হই তোমাকে সেফলি বাসায় পৌঁছে দেওয়াটাও আমার দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। এ বিষয়ে আমি কোনো গাফিলতি করবোনা।
ওর কথায় কপালে ভাজ পড়ে রাহিতার। “স্বামী হই বা না হই” কথাটা মস্তিষ্কে ঘুরপাক খায় কিছুক্ষণ। স্বপ্নিল কি তবে ওকে তখনকার ঘটনার জন্য খোটা দিলো? কিন্তু কেন? সে তো নিজেই চায়না তাদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক হোক। তবে কেন এহেন আচরণ? দাতে দাত চেপে রাহিতা উত্তর দেয়,
—হ্যাঁ, তা তো দেখতেই পারছি। এজন্যই তো হুটহাট স্পীড বাড়িয়ে এক্সিডেন্ট করতে ধরেছিলেন।
—এক্সকিউজ মি? আমি কেন ইচ্ছে করে এমন করবো? আমি কিছুক্ষণের জন্য অন্যমনস্ক হওয়ায় হঠাৎ কখন স্পীড বাড়িয়ে দিয়েছি টের পাইনি, দ্যাটস ইট। আর কিছুই না। বাই দ্যা ওয়ে, তুমি কি এজন্য আমায় খোটা দিচ্ছো?
ভ্রু কুচকে রাহিতার বিরক্ত হয়ে থাকা মুখের দিক তাকিয়ে বলে উঠে স্বপ্নিল। ওর কথায় তাচ্ছিল্য হেসে রাহিতা উত্তর দেয়,
—আমি আপনাকে কেন খোটা দিবো বলুন তো? সে অধিকার কি আমার আছে?
—এভাবে কেন বলছো? আমি কি তা বলেছি?
—আমিও তো ভুল কিছু বলিনি। তাই না?
ওর কথায় এবার যারপরনায় অবাক হয় স্বপ্নিল। হঠাৎ করে আজ দুপুর থেকে এসব কেন বলছে রাহিতা? সম্পর্ককে অস্বীকার করা, অধিকার নিয়ে কথা বলা এর আগে যখনি এমন কথা হয়েছে ততবারই এ ধরনের কথাবার্তা শুধু স্বপ্নিল বলেছে। কিন্তু একমাসে রাহিতাকে ভুলেও একবার এমন কিছু উচ্চারণ করতে দেখেনি সে। তবে আজ মেয়েটার কি এমন হলো? রাহিতার কি খুব বেশি মন খারাপ? নিজের অজান্তেই ওকে কোনো কস্ট দেয়নি তো সে? মনে মনে ভাবনায় পড়ে যায় স্বপ্নিল। কিন্তু বহু অনুসন্ধান করেও কোনো কারণ খুজে পায়না তার মন। একবার ভাবলো রাহিতাকে নিজেই জিজ্ঞেস করবে কি হয়েছে কিন্তু এর আগেই গাড়ি বাসার সামনে এসে যায়। অতঃপর ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই দরজা খুলে গাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে রাহিতা। পেছনে ফেলে যায় আরেকদফা বিস্মিত স্বপ্নিলকে।
___________________
রাতের বেলা পড়ার টেবিলে বসে পড়ছে রাহিতা। পরীক্ষায় আসতে খুব বেশি দেরি নেই। সময় নস্ট করা যাবেনা। খাতায় অংক করছে আর একটু পর পর কাটছে সে। এমনিতেই এ একটা চ্যাপ্টারে ওর সমস্যা তার মধ্যে আজ মন মজাজ ভালো নেই সকাল থেকে, সবমিলিয়ে রাগ যেন খাতার উপর ঝাড়ছে একটু পর পর। স্বপ্নিল বেশ অনেকক্ষণ ধরে বারান্দায়। এক ধ্যানে আকাশের দিকে তাকিয়ে সিগা’রেট ফু’কছে, রুমে যেতেও ভালো লাগছেনা। রাহিতা ওর সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলছেনা সকাল থেকে, এখন গেলেও নিশ্চয়ই বলবেনা।
তিক্ত মনে ভাবে স্বপ্নিল।
এরই মাঝে ওর ফোনে কল আসে। আননোন নাম্বার দেখে ভ্রু কুচকে ফেলে। সিগারে’টে শেষ টান দিয়ে ধোয়া উড়িয়ে ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে সালামের আওয়াজ আসে। সালামের জবাব দিতেই স্বপ্নিল শুনে,
—কেমন আছেন, দুলাভাই? আমায় চিনেছেন তো?
গলার স্বর শুনেই স্বপ্নিল আন্দাজ করছিলো এটা কে, এবার তো কথা শুনে স্পষ্ট বুঝলো। তাই রাখঢাক না করে সরাসরি বললো,
—আরে, রওনক নাকি? কি অবস্থা? আমি ভালো আছি। তোমার কি খবর? আমরা তো সেম ব্যাচের ছিলাম, আপনি করে বলছো কেন?
—আমিও ভালো আছি। এইতো মজা করছিলাম। নতুন সিম কিনেছি, সেটা থেকেই ফোন দিলাম। দেখছিলাম দুলাভাই আমায় চিনে কি না।
—হাহা। বেশ বেশ। কিন্তু লাভ যে হলোনা। আমি যে আগেই ধরে ফেলেছি, শালাবাবু৷
ওর সাথে রসিকতা করে বললো স্বপ্নিল। একিসাথে রওনকও হাসলো। হাসতে হাসতেই বললো,
—তা কোথায় তুমি? বাসায় না বাহিরে? কি করছো?
—বাসাতেই আছি। তোমার বোন পড়ছে রুমে। আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে।
—ওহ। রাহি কেমন আছে? ওকে ফোন দিয়ে পেলাম না। ফোন বন্ধ কেন? ভালোমতো পড়াশুনা করছে তো? ওর আবার সামনে পরীক্ষা, খুব চিন্তা করছিলো বেচারি এটা নিয়ে। আমার কাছে হেল্প চেয়েছিলো তখন আমি ব্যস্ত ছিলাম। আমি কাল ফোনে ওকে বুঝিয়ে দেবো। ওকে বলে দিয়ো।
—ফোন মেইবি চার্জ দিতে ভুলে গেছে। ও তো সন্ধ্যা থেকেই পড়ছে। আচ্ছা আমি ওকে তোমার কথা বলে দেবো, চিন্তা করো না।
এরই মাঝে মায়ের ডাক পড়ে স্বপ্নিলের। রওনকের সাথে কথা শেষ করে রুম ত্যাগ করে মায়ের কাছে চলে যায় স্বপ্নিল। গম্ভীর মুখে দরজার সম্মুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন দিলারা বেগম, যেন স্বপ্নিলের আসারই অপেক্ষা করছিলেন এতক্ষণ। মা-কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে স্বপ্নিল খানিকটা বিচলিত হয়। দ্বিধান্বিত কণ্ঠে সুধায়,
—কিছু বলবে, মা?
—কি হয়েছে রাহির?
—রাহির আবার কি হবে? ও তো পড়ছে রুমে।
বিস্মিত সুরে প্রশ্ন করে স্বপ্নিল। ওর জবাবে যেন সন্তুষ্ট হলেন না দিলারা বেগম। আগেকার মতোই গাম্ভীর্য ভাব বজায় রেখে বলেন,
—দেখ স্বপ্নিল, তোদের মধ্যে কি হয়েছে আমি জানিনা। রাহি নিজে থেকে আমায় কিছু বলেনি, ও মেয়েটাই এমন। নিজের উপর হাজারো ঝড় বয়ে গেলেও পাশের মানুষকে ঘুণাক্ষরেও টের পেতে দিবেনা সে। কিন্তু আমি তো মা, ওর না বলা কথাও চোখমুখ দেখে বুঝে নিতে পারি। আজ সকাল থেকে খেয়াল করছি ওকে। না ঠিকমতো খেয়েছে সকালে, দুপুরে আসার পরেও ঠিকভাবে কথা বলেনি আমাদের কারও সাথে। মনে হচ্ছিলো ওর ভীষণ মন খারাপ। আমি জানি এর পেছনে নিশ্চয়ই আমার মহান ছেলের হাত। তাই না? সত্যি করে বল তো, তুই কি বলেছিস ওকে? আবারো খারাপ আচরণ করিসনি তো মেয়েটার সাথে?
মায়ের কথায় হতাশ মুখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে স্বপ্নিল। শেষমেশ ওর মা-ও ওকেই দোষ দিচ্ছে! অদ্ভুত ব্যাপার। সব দোষ এখন তার? অথচ রাহিতা যা করলো তা তো কেউ দেখলোনা! এই যে রাহিতা ওকে সকাল থেকে ইগ্নোর করছে, ওর সাথে ঠিকভাবে কথা বলছেনা, ওকে এড়িয়ে চলছে একপ্রকার। এটা কি কেউ দেখেছে? ওকে এটা নিয়ে কিছু বলেছে? না বলেনি। তবে সব দোষ স্বপ্নিলের একার কেন?
বিষাদিত অন্তরে ভাবে সে।
—দেখো মা, আমি ওকে কিছুই বলিনি। তোমার আদরের বউমা সকাল থেকেই হুট করে এমন অদ্ভুত বিহেভ করছে। আমি দু’বার জিজ্ঞেস করেছিলাম কি হয়েছে তবুও আমায় বলেনি। আমার কোনো দোষ নেই, মা। আমার জানামতে আমি তো কিছুই বলিনি ওকে। কেন এরকম করছে ও-ই বলতে পারে।
স্বপ্নিলের কথায় ভ্রু যুগল কুঞ্চিত হয় মায়ের। ছেলের সরল মুখ দেখে বুঝেন সে মিথ্যা বলছেনা কিন্তু তবুও কোথাও যেন কোনো ভুল রয়েই যায় চোখের আড়ালে। পরক্ষণেই মনে হলো পরদিন না হয় সরাসরি রাহিতার থেকেই জিজ্ঞেস করবেন তিনি। দেখা যাচ্ছে হয়তো স্বপ্নিল নিজের অজান্তেই এমন কিছু করেছে যার কারণে মন খারাপ করেছে রাহি অথচ তার ছেলে এখনো বুঝতেই পারেনি ব্যাপারটা! এ গাধাটাকে নিয়ে আর পারা গেলোনা!
—আচ্ছা ঠিক আছে। এখন রুমে যা। মেয়েটা একা আছে। ও আবার একটু ভয় পায়। তুই রুমে যা।
মায়ের কথায় হাফ ছেড়ে বাচে স্বপ্নিল। সে যেন এতক্ষণ এটারই অপেক্ষায় ছিলো। সেভাবেই মাথা নাড়িয়ে দ্রুতপায়ে রুমে চলে এলো।
__________________
স্বপ্নিলকে রুমে আসতে দেখেও যেন দেখলোনা রাহিতা। আড়চোখে ওর দিক একবার তাকিয়ে পড়ার গতি বাড়িয়ে দিলো। বিষয়টা লক্ষ্য করে বিছানায় বসে ওর পড়া শেষ হওয়ার প্রহর গুনছিলো স্বপ্নিল। কিন্তু মিনিট দশেক পার হওয়ার পরেও যখন রাহিতার আসার নামগন্ধ নেই তখন বিরক্তিকর সুরে স্বপ্নিল বলে উঠে,
—কি ব্যাপার? আজ কি সারারাত পড়ার প্ল্যান এ আছো নাকি?
—থাকতেই পারি।
রাহিতার ত্যাড়া জবাব। এতে বেশ খানিকটা ক্রু’দ্ধ হয় স্বপ্নিল। তাচ্ছিল্যের সাথে বলে,
—থাকবেই তো। তোমাদের মতো ফেলটুস স্টুডেন্টদের থেকে আর কি আশা করা যায়। সারাবছর পড়াশুনার নাম নেই আর মনে করে পরীক্ষার আগেরদিন পড়লেই ফার্স্ট হবে!
—কিহ? আমাকে ফেল্টুস বললেন আপনি?
তে’তে উঠে রাহিতা। ওকে রাগাতে পারে মনে মনে ক্রুর হাসে স্বপ্নিল। এতক্ষণে মনে হচ্ছে রাহিতার সাথে কথা বলছে ও। সে রাগকে বাড়িয়ে দিতেই পুনরায় বলে,
—অবশ্যই। আমি কি জানিনা মনে করেছো? টেবিলের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তোমার খাতা দেখেছিলাম আমি। কতগুলো ম্যাথ কা’টা খাতার মধ্যে। ভালো স্টুডেন্ট হলে কি আর এগুলো হতো? আমিও পার করে এসেছি ওই ধাপ। কি বুঝিনা নাকি!
—একটা সামান্য ম্যাথ কাটার জন্য আপনি আমায় এভাবে বললেন? আমার ওই চ্যাপ্টারে প্রব্লেম। বুঝিনা আমি। ভাইয়াকে বলেছিলাম বুঝানোর জন্য কিন্তু তারও সময় নেই। আমি কালকেই ভার্সিটি যেয়ে নিবিড়ের থেকে বুঝে নিবো। সব ম্যাথ পেরে পরীক্ষায় ভালো করে দেখিয়ে দেবো সবাইকে!
রা’গে অপ’মানে জ্ব’লে উঠে বলে দেয় রাহিতা। এতক্ষণ রাহিতার কথায় মজা পেলেও নিবিড়ের নাম শুনে চোখ সরু হয় স্বপ্নিলের।
—নিবিড় আবার কে?
—আমাদের ক্লাসের টপার। আজকে যে ছেলেকে দেখেছিলেন আমাদের সাথে ও।
দুপুরের কথা মনে হতেই মুহুর্তে চোয়াল শক্ত হয়ে উঠে স্বপ্নিলের। অজানা আক্রো’শে মন ক্ষি’প্ত হয়ে ওঠে। সেভাবেই শক্ত গলায় বলে,
—অযথা মানুষের সাথে রাস্তাঘাটে গল্প করো দেখেই তো এই অবস্থা। ওই টাইমটুকু পড়াশুনায় দিলে এতদিন তুমিও টপ করতে!
—এই দেখুন। ভালো হচ্ছেনা কিন্তু। কি শুরু করেছেন আপনি? আমার একদম ভালো লাগছেনা।
তেজি গলায় ক্লান্ত সুরে বলে রাহিতা। এবার স্বপ্নিল থামে। হয়তো এর বেশি কিছু বললে রাহিতা কস্ট পাবে। বিছানায় শুতে শুতে কাঠকাঠ গলায় বলে,
—এসব বাদ দাও। তোমার ভাই ফোন দিয়েছিলো। আমাকে হেল্প করতে বলেছে তোমায়। কাল থেকে তাড়াতাড়ি আসবো অফিস থেকে আর আমিই তোমাকে পড়াবো সন্ধ্যায়। বন্ধুদের সাথে পড়তে গেলে পড়াশুনা হয় না কি হয় সেটা আমরাও জানি। তাই এসব ফাকিবাজি ধান্ধা ছাড়ো। কাল থেকে আমার কাছেই পড়বে তুমি। এন্ড ইটস ফাইনাল। এখন ঘুমাতে আসো।
স্বপ্নিলের কথায় রাগ ভুলে চমকে উঠে রাহিতা। সে ওকে পড়াবে, এজন্য তাড়াতাড়ি আসবে? ওর ভাইয়া কি সত্যিই এটা বলেছে ওকে? পরক্ষণেই ভাবলো নিশ্চয়ই বলেছে। নয়তো স্বপ্নিল কেন বলতো? সে তো আর নিজে থেকে ওর সাথে সময় কাটাতে চাইবেনা নিশ্চয়ই। তাই আর কিছু না ভেবে চুপচাপ টেবিল থেকে উঠে বিছানায় শুয়ে পড়লো রাহিতা। কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়েও পড়লো। অথচ ওর পাশে শুয়ে থাকা স্বপ্নিল অনেকক্ষণ নড়াচড়া করেও ঘুমোতে পারলোনা। কেননা নিজের আচরণে সে নিজেই অবাক! রওনক ওকে একটাবারও বলেনি রাহিতাকে হেল্প করতে, অথচ স্বপ্নিল কিনা কত সাবলীলভাবেই এ মিথ্যা বলে দিলো! রাহিতা অন্য কারও হেল্প নিবে শুনার পর নিজের অজান্তেই ওর মুখ ফসকে কথাটা বের হয়ে গেলো। কিন্তু কেন?
#চলবে