#মন_বিনিময়
#পর্বঃ৫
#লেখনীতে- তাসফিয়া হাসান তুরফা
পরেরদিন সকাল। স্বপ্নিল অফিস যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে। যদিও আজ তার ছুটি ছিলো কিন্তু আজকাল বাসায় থাকলে তার দমবন্ধ লাগে তাই কোনো বাহানা দিয়ে বাসা থেকে বেরোনোর কথা ভাবছিলো সে! রেডি হওয়া শেষ করে আয়নায় এক পলক নিজের দিকে তাকালো স্বপ্নিল। তার মতো স্বাস্থ্যসচেতন ছেলেটার মাঝে বিগত ক’দিনে বেশ পরিবর্তন এসেছে। হৃষ্টপুষ্ট শরীর যত্নের অভাবে বেশ কিছুটা শুকিয়ে গেছে , বহুদিন দাড়ি না কাটায় সেগুলোও বেড়ে গেছে বেশ। আবার একাহাতে ব্যবসা সামলানো সে এভাবে দেবদাস হয়ে ঘুরছিলো তাতে ওর পিছে অফিসের অবস্থাও যে খুব একটা ভালো সেটাও বলার মতো না। সবমিলিয়ে কয়দিনের মাঝে বিস্তর পার্থক্য এসেছে ওর জীবনে! তবে এ পার্থক্য ভালোর নয়। নিজের জন্য না হলেও নিজের পরিবারের জন্য, মা ও বোনের জন্য হলেও তার নিজেকে ভালো রাখতে হবে। আয়নায় চেয়ে নিজ মনে এসব ভাবছিলো স্বপ্নিল! হঠাৎ রুমের দরজা খোলার শব্দ কানে এলে পারফিউম লাগাতে লাগাতে সেদিকে তাকায় সে। নীল রঙের শাড়ি পরে হন্তদন্ত ভংগিমায় রুমে প্রবেশ করে রাহিতা। সাইড টেবিল থেকে এক হাতে ফোন নিয়ে অপর হাতে কপালের সামনে চলে আসা অবাধ্য চুল সরিয়ে নেয়! এলোমেলো কেশগুচ্ছ খোপায় নিবদ্ধ! আচ্ছা, মেয়েটা কি জানে এ মুহুর্তে তাকে দেখতে কতটা বউ বউ লাগছে?
বউ! শব্দটা মাথায় আসতেই টনক নড়ে স্বপ্নিলের। সে তো ভুলেই গিয়েছিল তার একটা বউ-ও আছে! রাহিতাকে দেখেই নিজেদের বিয়ের কথা পুনরায় মনে আসে, একিসাথে অজানা বিষাদে ছেয়ে যায় মন! তার জন্মদাত্রী তার অজান্তে এমন এক কাজ করে ফেলেছে যা এক অদ্ভুত দ্বিধাদ্বন্দে ফেলেছে তাকে! না সে পারছে মেয়েটাকে দোষারোপ করে তাকে বউ হিসেবে অস্বীকার করতে, আর না পারছে এত তাড়াতাড়ি অতীতের তিক্ত স্মৃতি ভুলে রাহিতাকে মেনে নিতে! এ যেন বিশাল উভসংকট! স্বপ্নিলের চিন্তার মাঝেই রাহিতা প্রশ্ন করে,
—কোথাও যাচ্ছেন আপনি?
—হুম
ছোট্ট করে জবাব দেয় স্বপ্নিল। তবু পুরোপুরি প্রশ্নের উত্তর দেয়না। একবার ভেবেছিলো জবাব দিবেনা কিন্তু পরমুহূর্তে কাল রাতে মেয়েটার সেই অশ্রুসিক্ত চোখজোড়ার কথা মনে হওয়ায় নিজের মন পরিবর্তন করে সে! এতে অবশ্য নিজের উপর খানিকটা অবাকও হয় বটে। এই যে এখনো সে সরাসরি রাহিতার দিকে তাকাতে পারছেনা। কেননা মেয়েটার চোখেমুখে এক অদৃশ্য মায়া আছে যা কিভাবে যেন স্বপ্নিলের রাগকে দমন করে। যেটা কাল রাতেই প্রথমবার উপলব্ধি করেছে সে, তাইতো আর কোনো রিস্ক নিতে চায়না স্বপ্নিল! এখন তার মতে- মেয়ে মানেই মরিচীকা, প্রথমে ভালোবাসবে, তারপর একসাথে দুজনার বেচে থাকার আশা দেখাবে অতঃপর শেষ মুহুর্তে এসে ছেড়ে চলে যাবে! তাচ্ছিল্য ভরে ভাবে সে! একিসাথে রাহিতাকে আড়চোখে দেখে আর কিছু শোনার আগেই রুম ত্যাগ করে স্বপ্নিল।
নিচে নামতেই টেবিলে বসতেই মা ও বোনের সাথে দেখা হয় স্বপ্নিলের। ছোটবোন সামিরা কলেজে যাওয়ার আগে ব্রেকফাস্ট করছিলো। ভাইকে দেখে মিস্টি হাসি উপহার দিয়ে বলে,
—গুড মর্নিং ভাইয়া। অফিস যাচ্ছো নাকি তুমি?
—হ্যাঁ
—ওমা, তা কেন? বিয়ের পর বউকে রেখে এত তাড়াতাড়ি কেউ অফিস যায়?
মাত্রই গলা ভিজানোর জন্য পানি মুখে নিয়েছিলো স্বপ্নিল, বোনের এহেন কথায় পানি যেন গলায় আটকে গেলো তার! সামান্য বিষম খেলো সে। সে সময় নিচে নামলো রাহিতা নিজেও। চেয়ারে বসার আগে স্বপ্নিলকে কাশতে দেখে আস্তে করে উঠে যেয়ে ওর পিঠে হাত বুলিয়ে দেয়। স্বপ্নিল শান্ত হতেই তাকে ছেড়ে ধীরপায়ে ওর পাশের চেয়ারে বসে পড়ে সে। আড়চোখে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করেন দিলারা বেগম। রাহিতা তার কথার মর্যাদা রাখছে, স্বপ্নিলের যত্ন নিচ্ছে বিষয়টা হৃদয় ছুয়ে যায় তার। মেয়েটার প্রতি অসীম ভালোবাসায় ভরে উঠে মন! এদিকে নিজেকে সামলিয়ে বোনের দিকে চোখ পাকিয়ে তীক্ষ্ণ কণ্ঠে স্বপ্নিল বলে উঠে,
—তোকে এসব কথা কে শিখিয়েছে? কলেজে উঠতে না উঠতেই দেখি পেকে গেছিস। বড়ভাই হই আমি তোর, বেয়াদব।
ভাইয়ের থেকে ধমক খেয়ে ভয়ে আর মুখ দিয়ে কথা বের হয়না সামিরার। আর কোনো কথা না বলে চুপচাপ মাথা নিচু করে খেয়ে যায় সে। তার ভাই আগে এরকম ছিলোনা, ইদানীং একটু বেশি রাগ দেখায়। সব ওই আনিকার দোষ। ওর যাওয়ার পর থেকেই তার ভাইয়ের এমন বাজে পরিবর্তন। মনে মনে এসব ভেবে ক্ষ্যান্ত হয় সামিরা! তবুও নতুন ভাবীর প্রতি তার ভালোবাসা জন্মে, রাহিতাকে আগে থেকেই ভালো লাগতো তার। ওদের বাসায় গেলে দুজনে বান্ধবীর মতো গল্প করতো আর সে কিনা এভাবে তার ভাইয়ের বউ হয়ে যাবে তা কখনো স্বপ্নেও ভাবেনি সামিরা। তাই রাহিতাকে নিজের ভাবী হিসেবে বেজায় খুশি সে! পরিবেশ কিছুটা নিরব হতেই হঠাৎ দিলারা বেগম বলে উঠেন,
—আজ কেন অফিস যাচ্ছিস তুই? বলেছিলাম না এ কয়দিন অফিস না যেতে?
—এভাবে বললেই তো আর হয়না, মা। আমার অবর্তমানে সবকিছু কিভাবে চলছে, কর্মচারীরা ঠিকভাবে কাজ করছে কি না তা জানা আমার কর্তব্য। নিজে গিয়ে সবকিছু দেখে না আসা পর্যন্ত আমি শান্তি পাবোনা, তাই বাধা দিয়োনা আমায়।
—আমি জানি বাবা তোর যাওয়া জরুরি। তাই মানা করছিনা তোকে। শুধু এইজন্যই বলছিলাম যে বেয়াইনরা ফোন দিয়েছিলো আমায় সকালে। দুপুরে দাওয়াত দিয়েছেন তাদের বাসায়। আমাদের সাথে নতুন জামাই হিসেবে তো তোকেও যেতে হবে।
—সব বুঝেছি, মা। কিন্তু আমার যেতে ইচ্ছে করছেনা। কারণটা তুমিও জানো।
আলগোছে কথাগুলো বলে ফোস করে এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো স্বপ্নিল! ভালো লাগছেনা তার কোনোকিছু। এরই মাঝে সামিরা ব্রেকফাস্ট শেষ করে হাত ধোয়ার জন্য উঠে যেতেই ওর মা বলে উঠেন,
—দেখ বাবা, আমি জানি তোর হয়তো এখন কিছুটা অস্বস্তি লাগবে ওখানে যেতে। কিন্তু তোর মনে রাখতে হবে তুই এখন বিবাহিত। আমি তোকে যেভাবেই রাজি করাই না কেন, তুই কিন্তু নিজ মুখেই সজ্ঞানে রাহি কে কবুল বলে নিজের বউ হিসেবে স্বীকার করেছিস। তাই মেয়েটা এখন তোর দায়িত্ব, একিসাথে ওর বাড়ির প্রতিও তোর কিছু দায়িত্ব আছে না, বাবা?
মায়ের কথায় একবার পাশ ফিরে রাহিতার দিকে তাকালো স্বপ্নিল। সে-ও একিভাবে ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে। এরই মাঝে দিলারা বেগমের একটা কথা বারবার মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো স্বপ্নিলের “তুই নিজমুখে সজ্ঞানে ওকে নিজের বউরুপে কবুল করেছিস, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই”। কি এমন ছিলো সে কথায় কে জানে? আনমনেই মাথা নাড়িয়ে শশুড়বাড়ি যাওয়ার জন্য রাজি হয়ে গেলো স্বপ্নিল। মা কে জিজ্ঞেস করলো,
—কখন যেতে হবে?
—দুপুরেই। একটু আগেই যাবোনি না হয়। খাওয়ার সময় গেলে কেমন দেখায়? তুই অফিস যেয়ে যতদ্রুত পারিস তাড়াতাড়ি চলে আসিস, কেমন?
—আচ্ছা, মা। আসি তাহলে।
রাহিতা সবকিছু চেয়ে চেয়ে দেখলো শুধু। যদিও সে এখানেই বসে ছিলো তবুও কি ওকে একবার বলে চলে যাওয়া যেতোনা? নাকি স্বপ্নিল ওকে বলে যাওয়ার প্রয়োজনটুকুও মনে করলোনা?
রাহিতার মুখ দেখে শাশুড়ি যেন সব বুঝে গেলেন। চেয়ার থেকে উঠে ওর কাছে এসে মাথায় হাত রেখে বললেন,
—মন খারাপ? তোকে বলে যায়নি দেখে?
বিনিময়ে ব্যথিত নয়নে মেয়েটা নিরুত্তর চেয়ে রইলো শুধু। দিলারা বেগম আশ্বাস দিয়ে বললেন,
—আজ তোকে বলে যায়নি দেখে মন খারাপ করছিস, এরপর একদিন দেখবি তোকে না বলে কোথাও যেতেই পারছেনা স্বপ্নিল। আমি জানি সেই দিন আসবে, শীঘ্রই আসবে। তুই শুধু একটু ধৈর্য ধর। হতাশ হোস না। ওর মাঝে পরিবর্তনের বীজ রোপণ হয়ে গেছে। তুই শুধু একটু একটু করে তোর ভালোবাসার পানি দে। এরপর স্বপ্নিলের ভালোবাসার ফল শীঘ্রই ভোগ করবি তুই।
তার কথায় রাহিতা কি বলবে ভেবে পেলোনা। এখন মিথ্যে আশ্বাস বাসা বাধতে চায়না মনে! সবকিছু কেমন যেন দায়সারা লাগছে তার কাছে। তবুও কিছু বলতে যাবে এরই মাঝে সামিরা আসে সেখানে। তাদের দুজনকে দেখে একগাল হেসে বলে,
—একা একা কি গল্প হচ্ছে শাশুড়ি-বউমার? আমাকেও একটু বলো কেউ!
—তোর না কলেজের সময় পার হয়ে যাচ্ছে। স্বপ্নিল বাইরে অপেক্ষা করছে। তোকে ড্রপ করে দেবে। জলদি যা!
ওকে তাড়া দিয়ে বলে উঠলেন দিলারা বেগম। দ্রুতপায়ে দরজায় যেতে যেতে সামিরার আওয়াজ,
—ভালো কথা মনে করে দিয়েছো, মা। তোমার ছেলের যে মেজাজ হয়েছে আজকাল! দেখা যাচ্ছে এখন না গেলে আমায় রেখেই চলে যাবে ভাই!
সামিরা চলে যেতেই মুখ খোলে রাহিতা। কণ্ঠ স্বাভাবিক করে শাশুড়িকে বলে,
—রুমে যাই, মা? আম্মু ফোন দিয়েছিলো একটু আগে। রুমে যাওয়ার আগেই কেটে যাওয়ায় ধরতে পারিনি। আমি কলব্যাক করে কথা বলবো এখন।
—হ্যা অবশ্যই, রাহি। জলদি যা। আর বেয়াইনকে বলে দিস তার জামাইও যাচ্ছে আমাদের সাথে।
উনার কথায় মাথা নেড়ে রুমের উদ্দেশ্যে প্রস্থান করে রাহিতা। দিন আরম্ভের ব্যস্ততায় সবাই চলে যায় যে যার কাজে!
__________________
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শাড়ির কুচি ঠিক করছিলো রাহিতা। পেছনেই বিরক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে স্বপ্নিল। না মেয়েটা নিজে জলদি রেডি হচ্ছে না আয়নার সামনে থেকে সরে ওকে রেডি হতে দিচ্ছে। কিন্তু রাহিতা যে চাইলেও তাড়াতাড়ি করতে পাচ্ছেনা সেটা স্বপ্নিলকে বুঝাবে কে? জামদানীর নতুন শাড়ি হওয়ায় কুচির অংশ এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে বারবার। এদিকে ওদের বের হওয়ার সময় হয়ে এলো বটে! অতীষ্ঠ হয়ে শেষমেশ স্বপ্নিল বাহু টেনে ওকে সরিয়ে দিলো ড্রেসিংটেবিলের সামনে থেকে। হঠাৎ এমনটা হওয়ায় দুঃখ পেলো রাহিতা! একেতো কুচি ঠিক করতে পারছেনা তার মধ্যে না দেখে সে কিভাবে শাড়ি পড়বে এখন? চোখেমুখে আধার নামিয়ে শাশুড়ির রুমের দিক যেতে ধরতেই তার পথ রুখে দাঁড়ায় স্বপ্নিল। এতক্ষণে চোখ তুলে ওর দিক তাকাতেই সে চুপচাপ নিচে বসে পড়ে হাটু গেড়ে। যতক্ষণে বিস্ময়ের রেশ কাটিয়ে উঠছিলো ততক্ষণে স্বপ্নিলের আওয়াজে হুশ ফিরে আসে ওর,
—ভালো করে ধরে থাকো কুচি। নড়বেনা একদম।
গলায় আটকে যাওয়া শ্বাস রোধ করে কোনোমতে হাতে কুচি ধরে দাড়িয়ে ছিলো রাহিতা। স্বপ্নিল মনোযোগ দিয়ে ওর শাড়ির কুচি ঠিক করে দিচ্ছে! এ বিস্ময়ের যেন রেশ কাটিয়ে উঠতেই পারছেনা সে! এখন যে কেউ এলে স্বপ্নিলকে দেখলে ভাববে ওদের মাঝে স্বাভাবিক সম্পর্ক বিদ্যমান! এই মুহুর্তে স্বপ্নিলকে নিজের অজান্তেই পুরোদস্তুর স্বামীর মতো আচরণ করছে তা কি সে জানে? নিজের ভাবনায় নিজেই শিউরে উঠে রাহিতা! খানিক বাদেই ওর ভাবনাচিন্তার মাঝে কাজ শেষ করে ওর হাতের কুচি ঠিকভাবে ধরিয়ে দিয়ে স্বপ্নিল বললো,
—এইটুকু কাজ ঠিকমতো করতে পারোনা। নিজেরও সময় নস্ট করলে সাথে আমারো। ভালোভাবে শাড়ি পড়তে না পারলে মায়ের কাছে যেতে? আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ঢং করছিলে কেন? মেয়ে মানুষ মানেই ভেজাল! যত্তসব!
গটগট করে এসব কথা বলে একমনে আয়নায় তাকিয়ে ব্রাশ দিয়ে নিজের চুল আচড়াতে লাগলো স্বপ্নিল। ওর কথাবার্তায় এতক্ষণে কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে রাহিতা। জিব দিয়ে শুকনো ঠোঁট ভিজিয়ে আচমকা বলে উঠলো,
—শুনুন। একটা কথা বলার ছিলো
—হুম?
আয়নায় তাকিয়ে একধ্যানে নিজ কাজ করতে করতেই জবাব দিলো স্বপ্নিল। কোনোরুপ ভনিতা ছাড়াই রাহিতা বললো,
—আমার মা-বাবার সামনে আমার সাথে স্বাভাবিক আচরণ করবেন প্লিজ? এমন কিছু বলবেন না যেন তাদের মনে হয় আমাদের মাঝে স্বামী-স্ত্রীর স্বাভাবিক সম্পর্ক নেই। এ অনুরোধটা রাখবেন প্লিজ?
আচমকা রাহিতার এমন প্রশ্নে পিছন ঘুরে স্বপ্নিল। এভাবে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকায় কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে মেয়েটা। কিন্তু ও পুনরায় কিছু বলার আগেই পাঞ্জাবির বোতাম লাগাতে লাগাতে স্বপ্নিলের উত্তর,
—তুমি না বললেও আমি ওখানে যেয়ে এমন কিছু বলতাম না। তাদের সাথে ভালো আচরণই করতাম কারণ তাদের তো কোনো দোষ নেই এখানে, তারা তো কিছু জানেইনা! তাই এটা আমায় বলার প্রয়োজন নেই। এটুক কমনসেন্স আছে আমার মাঝে, বুঝেছো?
স্বপ্নিলের কথায় মনে মনে স্বস্তি পেলেও একটি কথা শুনে প্রশ্ন না করে পারেনা সে। মুখ ফসকে অবশেষে বলেই ফেলে,
—তাহলে তো আমার ক্ষেত্রেও বিষয়টা একিরকম তাইনা? আমিও তো কিছুই জানতাম না, আমারও তো কোনো দোষ নেই। তবে কেন আমার সাথে আপনার এত ঠান্ডা আচরণ?
মাত্র পাঞ্জাবির বোতাম লাগানো শেষ করতেই এহেন প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে কিছুটা থমকে যায় স্বপ্নিল! একদৃষ্টিতে চেয়ে থাকে ওর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছলছলে চোখের রাহিতার দিকে! এ চোখের ভাষা অস্পষ্ট, যেন অনেককিছুর জবাব চাইছে স্বপ্নিলের কাছে! নিজেদের অধিকার চাইছে তার থেকে! কিছুক্ষণ সে মায়াবী চোখে তাকিয়েই পলক সরিয়ে নেয় স্বপ্নিল! এ কেমন যন্ত্রণায় পড়লো সে?
#চলবে