মন ফড়িং ❤৪১.

0
2768

মন ফড়িং ❤৪১.

অদ্রি ফ্লোরে ডান পা রেখে বুঝতে পারলো তার পায়ে চিনচিন করে যে ব্যথাটা ছিলো সেটা অনেক গুণে বেড়ে গেছে। যদিও ব্যথাটা শুধু পায়ে না, পুরো শরীরে। পুরো শরীরে আজ ১ সপ্তাহ যাবত চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে। নিদ্রকে বুঝতে দিলে হয়তোবা ও কাছে আসতো না কিন্তু ওর তো আমাকে প্রয়োজন। এই প্রয়োজন আমার কাছ থেকে পূরণ না করতে পারলে তখন বাধ্য হয়ে অন্যদিকে পা বাড়াবে।
যা আমার দ্বারা সহ্য করা অসম্ভব। পুরুষ জাত যতোই ভালোবাসুক না কেনো এদের শারীরিক চাহিদা বিয়ের পর না পূরণ করলে অন্য দিকে যাবেই।
আগেও তার পুরো শরীরে ব্যথা হতো তবে সেই ব্যথা আরো বেশি তীব্র ছিলো।
অদ্রি থ্রিপিস আর তোয়ালে নিয়ে গোসলে গেলো।
মগ ভর্তি পানি শরীরে ঢেলে দিয়ে অদ্রি ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলো। মনে হলো চিনচিনে ব্যথাটা কয়েক গুনে বেড়ে গেলো।
কেউ যেন শরীরে সুঁই দিয়ে খুচিয়ে দিচ্ছে।
অদ্রির এখনই গোসল না করেই বের হয়ে যেতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু এ অবস্থায় বের হলে নিদ্র কারণ জানতে চাইবে।
কারণ বললে, নিদের নিজের প্রতি রাগ হয়েও যেতে পারে। ঝামেলা বাড়ানোর ইচ্চজা তার নেই।
ব্যথাটাকে সহ্য করে দ্রুত শরীরে পানি ঢালতে লাগলো।

নিদ্র বিছানা ছেড়ে উঠে পাশের রুমের বাথরুমে গোসলের জন্য গেলো।
এই রুমে কেউই থাকেনা কিন্তু সবসময় পরিষ্কার রাখা হয়।
এতো বড় বাড়িতে অদ্রি আর লিলি একা থাকতো। আর অদ্রি দোতলায় একা একটা রুমে দিনের পর দিন নিজেকে আটকে রাখতো। ওযে বদ্ধ পাগল হয়ে যায়নি এইতো কতো।
ডোভ সাবান হাতে নিয়ে নিদ্র মুচকি হাসলো। সাবানের ঘ্রাণটা তার খুব পছন্দ। এরচেয়ে বেশি পছন্দ অদ্রির শরীরের ঘ্রাণ। নিদ্রের মন বলে, সারাক্ষণ যেন নিজেকে ওই ঘ্রাণে মত্ত্ব রাখতে। কিন্তু সারাদিন তো আর একে অপরের সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকা যায়না।
আর ঘ্রাণ তো আমার স্মরণেই থাকে। অন্যকোনো মেয়ের শরীরের ঘ্রাণ নেয়ার আগে আমার স্মরণে থাকা ঘ্রাণ বাঁধা দিবে। নিদ্রের নিজেকে কথাগুলো বলে অন্যরকম শান্তি পেলো।

দুপুরে খাবার টেবিলে নাজমুল সাহেব চিন্তিত স্বরে বললেন
– তোমাদের একটা জরুরি কথা বলার ছিলো।
নিদ্র মুরগির রানে কামড় দিয়ে বললো
– বলে ফেলো।
– ঢাকার মীরপুরে তোমাদের জন্য ছোট্ট একটা ফ্ল্যাট ভাড়া করেছি আমি।
– এতো বড় বাড়ি রেখে ঢাকায় কী করতে যাবো?
– অদ্রির ডাক্তার বলেছেন, ওর ট্রিটমেন্ট শেষ হতে অনেক সময় লাগবে। প্রতি সপ্তাহে দুইদিন বা তিনদিনও তার চেম্বারে যাওয়া আসা করতে হবে। এই মফস্বল থেকে সপ্তাহে তিন চার বার যাওয়ার তুলনায় ঢাকায় থাকা বেশি ভালো না?

অদ্রি মন দিয়ে কথা শুনছিলো। নাজমুল সাহেবের প্রশ্নের উত্তর ও নিজেই দিলো।
– নিদ্র, বাবা ঠিকই বলেছেন। আর আমরা তো সারাজীবনের জন্য থাকছিনা।

– কিন্তু অদ্রি আমার গাছপালার মধ্যে নিরিবিলি থাকতে ভালো লাগে। আর ঢাকায় শুধু হর্ণের শব্দ আর শব্দ। আর এতো জ্যাম যে আমার সহ্য হয়না।

নাজমুল সাহেব বিরুক্ত হয়ে বললেন
– তাহলে তুমি এখানে তোমার দাদীকে নিয়ে থাকো। আমি, অদ্রি আর লিলি আপা ঢাকায় গিয়ে থাকি। অদ্রির সমস্যার সমাধান হলে আমরা চলে আসবো।
নিদ্র ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো
– কতো দিন লাগবে?
– ২ মাস, ৬ মাস, ১ বছর এমনকি আরো বেশি সময়ও লাগতে পারে।
নিদ্র আৎকে উঠে বললো
– আমি যাবো। পারলে শব্দ শুনতে শুনতে কান পচিয়ে ফেলবো বাট যাবো।

অদ্রি হাসি চেপে রেখে বললো
– আমরা কবে যাচ্ছি?
নাজমুল সাহেব হাসি মুখে বললেন
– আগামীকাল যাবো।

মনে মনে তিনি খুব শান্তি অনুভব করলেন। যাক ডিভোর্সের কথাটা হয়তোবা অভিমান করে বলেছিলো।

নিদ্র খাওয়া শেষ করে রান্নাঘরে এঁটো প্লেট রাখার জন্য গেলো।
রান্নাঘরের ট্রলির উপর মোবাইল দেখে। মোবাইল হাতে নিয়ে খেয়াল করলো ৬৮+ মিসড কল।
নাম্বার টা নিদ্র চিনতে পারলো। নীলিমার নাম্বার। মেয়েটা চায় কী তার কাছে?
সে বিবাহিত জেনেও যদি এই মেয়ে পিছু না ছাড়ে তাহলে কীভাবে একে থামাবে সে?
নিদ্র খুব চিন্তায় পড়ে গেলো। সামান্য একবার ফোন আসতে দেখে অদ্রি ডিভোর্সের কথা তুলেছে আর যদি জানে নীলিমা ৬৮+ কল দিয়েছে তাহলে তো…. ডিভোর্স দিয়ে দিতে পারে।
না, এই মেয়েকে বড় ধরনের শিক্ষা দিতে হবে।
আপাতত মোবাইল থেকে দূরে থাকাই উত্তম।
বিকালে অদ্রিকে জোর করে ঘুম পাড়িয়ে নিদ্র বাইরে বের হলো। ফাঁকা স্থান দেখে
নীলিমার নাম্বারে ফোন দিলো।
প্রথমবারেই নীলিমা ফোন রিসিভ করলো।
নীলিমা ন্যাকা স্বরে বললো
– আপনার কি মায়াদয়া কম?
নিদ্র যতোটা সম্ভব কণ্ঠ রূঢ় করা যায়, করে বললো
– এতোবার ফোন দেয়ার কারণ কী?
– আপনি বুঝি জানেন না?
– না আমি জানিনা।
– আপনার সাথে আমি দেখা করতে চাই।
– আমি বলেছিনা সম্ভব না।
– সম্ভব আপনাকে করতেই হবে।
– আমি ভালোভাবে আপনাকে বলছি আমাকে দয়া করে আর ফোন দিবেননা।
– আমি তো ফোন দিবোই।
– আপনার কী চাই আমার কাছে?
– আপনাকে।
– আমি বিবাহিত নীলিমা।
নীলিমা ন্যাকা স্বরে বললো
– আমার তাতে কোনো সমস্যা নেই।

নিদ্র ফোন কেটে দিয়ে মোবাইল অফ করে রাখলো আপাতত বাঁচার জন্য। বাবাকে ব্যাপারটা জানানোর সময় হয়ে গেছে।

রীতা অদ্রির ব্যাগ গুছিয়ে দিচ্ছিলো ঠিক এসময়ে রীতার মনে হলো অদ্রি বিরবির করে কিছু বলছে।
অদ্রি বিছানার উপর পা ছড়িয়ে বসে আছে। অদ্রির চেহারার অভিব্যক্তিটাও রীতার অচেনা লাগছে। চেহারার মধ্যে হিংস্রতা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। চোখ টকটকে লাল হয়ে আছে অদ্রির।

কথা বলার স্পিড বেড়ে যাচ্ছে। বিরবির করছেই থামছেনা।
রীতার মনে হলো কারো সাথে ঝগড়া করছে অদ্রি।
অদ্রির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পরে রীতা কী করবে ভাবতে শুরু করলেন।
নিদ্র আর নাজমুল সাহেব বাসায় নেই। বাজারে নাকি কাজ আছে তাই দুজনেই একসাথে বের হয়েছেন। আজকাল রশীদ সাহেব তেমন একটা আসেননা।
না আসার কারণটা রীতা বুঝতে পারছেনা।
আসমা জামানও রুম থেকে বেশ কয়দিন যাবত তেমন বের হননা। খাওয়ার সময় টেবিলে এসে চুপচাপ খেয়ে যান। নাজমুল সাহেবের সাথে টুকটাক কথা বলেন।
নিদ্রের সাথেও কথা বলেননা।
অদ্রি বিছানা ছেড়ে উঠে দেয়ালের সাথে নিজের মাথা গুতানো শুরু করলো। রীতার কাছে বিষয়টা ঘোর ঘোর লাগছে।
হা করে অদ্রি কী করছে দেখছে।
দৌঁড়ে গিয়ে যে, অদ্রিকে থামানো যেতে পারে তার মাথায় আসছেনা।
বেশ শব্দ করেই মাথা গুতাচ্ছে অদ্রি। একসময় দেয়াল রক্তের দাগ লেগে লাল হয়ে উঠতে শুরু করলো।
রক্ত দেখে রীতার ঘোর কেটে গেলে। দৌঁড়ে অদ্রিকে ধরে ফেললো।
অদ্রির পুরো মুখ রক্তে লাল হয়ে উঠেছে।
রীতা অদ্রিকে চেপে বুকের সাথে ধরে রাখলেন। অদ্রির শরীর থরথর করে কাঁপছে। আজব ব্যাপার অদ্রি এখনো বিরবির করে কিছু বলছে। কী বলছে শোনার জন্য অদ্রির কথার প্রতি গভীর মনোযোগ দিলো।
অদ্রি একটাই কথা বারবার বিরবির করে বলছে।
রীতা শিওরে উঠে অদ্রিকে ছেড়ে দিলেন।
অদ্রি নিজের ভার সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পরে গেলো।
দেয়ালে তাজা রক্তের দাগ লেগে আছে। এখনো রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।

চলবে……

© Maria Kabir

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে