মন ফড়িং ❤৩৯.

1
3233

মন ফড়িং ❤৩৯.

জড়িয়ে কষ্ট পাওয়ার চেয়ে না জড়িয়ে কষ্ট পাওয়া ঢের ভালো। এভাবে নিদ্রের জেদকে প্রশ্রয় দেয়াটা ঠিক হয়নি। নিজেকে ছোটো মনে হচ্ছে। মানুষটাকে সে শান্তি দিতে পারলোনা এমনকি নিজেও পেলোনা।
নিদ্র প্রায় দৌঁড়ে এসে রুমে ঢুকলো। বেশ শব্দ করে দরজা আটকে দিয়ে অদ্রির দিকে এগিয়ে গেলো।
কান্না থামিয়ে ততক্ষণে অদ্রি মাথা তুলে তাকিয়ে আছে নিদ্রের দিকে।
নিদ্র ফ্লোরে অদ্রির সামনে বসে পড়লো। অদ্রির কোমড়ে হাত দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসলো। অদ্রির ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো।
অদ্রি যে এতোক্ষণ যাবত কাঁদছিলো নিদ্র ঠোঁটের লবণাক্ত স্বাদেই বুঝতে পারছে। অদ্রি নিজেকে সামলানোর জন্য দেয়ালের সাথে হেলান দিলো। চুমুর গভীর থেকে গভীরে হারিয়ে যাচ্ছে নিদ্র। অদ্রির নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিলো। এক হাত দিয়ে নিদ্রকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়ার বৃথা চেষ্টা করতে লাগলো। এতোটা দূর্বল হয়ে পড়েছে এই কদিনে অদ্রি ভাবতেও পারছেনা। মাথাটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। অদ্রির চুলের ভেতরে আঙুল চালিয়ে দিয়ে অদ্রির ঠোঁট জোড়া থেকে নিজেকে মুক্ত করলো।
অদ্রির থুতনি উঁচু করে ধরে প্রশ্ন করলো
– আমাকে তো এখন ভালো লাগেনা, তাহলে কাছে আসতে দিলেন যে?
– কখন বলেছি ভালো লাগেনা?
– তাহলে যে নীলিমার কাছে যেতে বললেন।
– আপনার ভালোর জন্য বলেছি।
– আমার ভালো আপনাতে, এই কথা আর কতোবার বলবো? আচ্ছা আমি এমন কিছু করেছি কি যার কারণে আপনার মনে হয়েছে?
– আপনি ঠিক আগের মতো…… থাক বাদ দিন ওসব কথা।
– কেনো বাদ দিবো? বিষয়টা কি একার আপনার?
– না।
– বিয়ে করলাম দুজনের সিদ্ধান্তে কিন্তু ডিভোর্সটা একজনের সিদ্ধান্তে হবে তাই না? খুব বেশি ভালো সাজতে আসবেন না। ওই মেয়ের সাথে আমার কিছুই নেই। আর আপনি করলেন কী? ডিভোর্সের ডিসিশন নিয়ে বসলেন।
– আমি চাচ্ছি আপনি নতুন করে সবকিছু শুরু করুন।
– আমিও চাচ্ছি নতুন করে সবকিছু শুরু করতে। তবে আপনার সাথে অন্য কারো সাথে না। আপনি আমার কথা বুঝতে পারছেন?
– আপনি ভুল করছেন।
– আমার অনেক খিদে পেয়েছে। এখন উঠুন দুজনে একসাথে খাবো।
অদ্রি দু হাতের উপর ভর দিয়ে উঠার চেষ্টা করলো কিন্তু পারলোনা।
নিদ্র বিরুক্ত হয়ে বললো
– খাওয়া দাওয়া তো ছেড়ে দিছেন। নিজেও মরবেন আমাকেও মারবেন।
– শুধু সকালে খাইনি।
– চলুন।
নিদ্র দুহাত দিয়ে অদ্রিকে টেনে তুললো। শাড়ীর আঁচল ঠিক করতে গিয়ে অদ্রি বুঝতে পারলো শাড়ীতে পেচিয়ে গেছে সে। কীভাবে ঠিক করবে ভেবে না পেয়ে শব্দ করে হেসে নিদ্রকে বললো
– আমি হাঁটবো কী করে আমি তো শাড়ীতে পেচিয়ে গেছি।
অদ্রির হাসি মুখের দিকে একপলকে তাকিয়ে থেকে নিদ্র বললো
– আপনি কি খুব ক্লান্ত?
অদ্রি মাথা নাড়িয়ে না বলে শাড়ী ঠিক করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
চুল গুলো এলোমেলো হয়ে বুকের উপর ছড়িয়ে আছে, মুখে হাসি লেগে আছে। বাহিরে হালকা বৃষ্টি আর ঠান্ডা বাতাস বইছে। খোলা জানালা দিয়ে ঠান্ডা বাতাস রুমটাকে ঠান্ডা করে দিচ্ছে। নিদ্র কী করবে ভেবে পাচ্ছিলোনা।
– ডাক্তার ম্যাডাম বলছিলেন আমাদের বাচ্চা নিতে তাই আরকি ভাবছিলাম…..
অদ্রি শব্দ করে হেসে বললো
– আপনি না। আমার কাছে আসতে চাচ্ছেন বললেই হয়। আপনারই তো বউ!
নিদ্র লাজুক স্বরে বললো
– আপনি তো অসুস্থ তাই ভয় পাচ্ছিলাম। দেখা গেলো আপনি জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন। তখন তো বিপদ! মানুষ যখন জিজ্ঞেস করবে কী কারণে জ্ঞান হারিয়েছে? তখন কী উত্তর দিবো বলুন?
অদ্রি উচ্চস্বরে হাসতে হাসতে নিদ্রকে জড়িয়ে ধরে বললো
– কিচ্ছু হবেনা।

অদ্রির কোমড়ে হাত দিয়ে নিদ্র বললো
– সত্যিই তো? আমার কিন্তু বাবা হতে ইচ্ছে করছে।
– আপনি নিজেই তো এখনো বাচ্চা!
অদ্রির চিবুকে চুমু দিয়ে নিদ্র বললো
– বাচ্চা হলে আদর করতে পারতাম না।
– আপনি আমার থেকে ছোটো সেটা জানেন?
– তো? ছোটো বলে কি কোনো কিছুতে কমতি দিয়েছি?
– না। বাচ্চা এখন নেয়া যাবেনা। বাচ্চার বাবার মধ্যে বাবা বাবা ভাবটা আগে আসুক।
– ভাব টাব আসতে হবেনা। আমি বাচ্চার বাবা হতে একদম প্রস্তুত!
নিদ্রের কথায় অদ্রি উচ্চস্বরে হাসতে শুরু করলো!
অদ্রি কিছু মূহুর্ত আগেও নিদ্রকে হারিয়ে ফেলেছে ভেবে আঁচল মুখে চেপে কেঁদেছিল আর এখনই হাসছে সেই নিদ্রের আদুরে মুডে!
মানুষের জীবনটাই এরকম। কখনো হাসি, কখনো কান্না আবার কখনো অতি শোকে পাথর!

রীতা রান্নাঘরে এঁটো থালাবাসন ধোয়ায় ব্যস্ত। নিদ্র কিছুক্ষণ আগে মোবাইল রান্নাঘরের ট্রলির উপর রেখে গেছে। আর তখন থেকেই রিংটোন বেজেই চলেছে একটানা। মানুষের কি আক্কেল জ্ঞান নাই? দেখতেছে ফোন রিসিভ করতেছে না তাহলে ফোন কেনো দেয়? আর নিদ্রই বা কেমন? ফোন এভাবে ফেলে রেখে যায়?
অবশ্য যাবেনা কেনো? ঘরে লাল শাড়ী পড়ে স্ত্রী অপেক্ষায় আছে! পুরুষ মানুষ এমনিতেই মেয়েদের শাড়ী পরিহিত অবস্থায় পছন্দ করে আর যদি শাড়ীর রং লাল হয় তাহলে তো কথাই নেই।
এঁটো থালাবাসন রেখে দিয়ে ফোন রিসিভ করলেন রীতা। কানের কাছে এরকম একনাগাড়ে বেজে গেলে মেজাজ খারাপ কার না হবে?
ফোন রিসিভ হওয়ার সাথে সাথেই অভিমানের সুরে বললো
– আপনি ফোন রিসিভ করছেননা কেনো?
রীতা বললেন
– যার ফোন সে আশেপাশে নেই। তাই রিসিভ করেননি।
– আপনি কে?
– আমি কে জানতে হবেনা। আপনি ফোন রাখুন।
– আপনি কি অদ্রি?
নীলিমা রাগে গরগর করে জিজ্ঞেস করলো।
রীতা বললেন
– সে তো তার স্বামীর সাথে ব্যস্ত। বুঝেননা বাইরে বৃষ্টি…..
নীলিমা ফোন কেটে দিয়ে বিছানার উপর রাখা আয়নাটা আছাড় দিলো। বিকট শব্দ করে আয়না ভেঙে গেলো।

রীতা ফোন টা ট্রলির উপর রেখে আবার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
নাজমুল সাহেব একটার পর একটা সিগারেট ধরাচ্ছেন কিন্তু খাচ্ছেননা। ঢাকায় মিরপুরে ছোট্ট একটা ফ্ল্যাট ভাড়া করে এসেছেন। অদ্রি আর নিদ্রকে সহ কয়েক মাস ওখানে থাকতে হবে। ডা. নীলুফার বললেন
– রেগুলার কাউন্সিলিং ছাড়া অদ্রির সমস্যার সমাধান সম্ভব না।
তাই তিনি ফ্ল্যাট ভাড়া করে রেখে এসেছেন কিন্তু এদিকে অদ্রি ডিভোর্স দিতে চাচ্ছে কোনো এক কারণে!
ছেলেটা তো একদমই ভেঙে পড়বে। একটা মাত্র ছেলে তার।
ডা. নীলুফারকে বলে এসেছেন পরশুর মধ্যে ঢাকায় আসবেন। কিন্তু এখানে তো….

মানুষের জীবনে কোনো কিছুই প্ল্যান মাফিক হয়না। এইযে কতো সুন্দর প্ল্যান করে এসেছিলেন কিন্তু কিছুই হলোনা। ওরা কয়েক মাস একদম একাকি থাকলে বিবাহিত জীবনের আলাদা একটা স্বাদ পেতো।
দুজনের আনাড়িপনা সংসারে মান অভিমানের পালা শেষে ভালোবাসার জোয়ার আসতো।
ছোট্ট সংসারে…..
নাজমুল সাহেব আর ভাবতে পারলেননা।
নিজের না পাওয়া সুখগুলোও কাঁটার মতো বিঁধে যাচ্ছে বুকের বা পাশটাতে।

চলবে…….!

অবশেষে মহান আল্লাহ তালার অশেষ রহমত, পাঠকদের আগ্রহ এবং কিছু মানুষের প্রচেষ্টায় “বইবাজার প্রকাশনীর ” চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করলাম। আগামী বইমেলায় ইনশাআল্লাহ আমার লেখা বই
“যেখানে সীমান্ত তোমার আমার ” আসছে।সকলকে পড়ার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।বই এর কাজ চলছে শীঘ্রই প্রচ্ছদ আসবে।এবং বইটি আগামী বইমেলা -২০২০ এ প্রকাশিত হবে।

ধন্যবাদ ❤

© Maria Kabir

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে