#মনে_পড়ে_তোমায়_সন্ধ্যে_বেলায়
#পর্ব_০৮
#নুজাইফা_নূন
-” শার্ট,প্যান্ট দিয়ে আমি কি করবো?”
-” তুমি পরার জন্য কোনো জামাকাপড় পাচ্ছো না ।তাই আমার শার্ট,প্যান্ট দিয়ে তোমাকে সহযোগিতা করলাম।এখন যদি বাপের বাড়ি যেতে চাও,অতি দ্রুত শার্ট, প্যান্ট পরে রেডি হয়ে নাও।”
-” উৎসের কথায় আদ্রি বোকা বনে গেলো।উৎস আদ্রি কে দশ মিনিট সময় দিয়ে বাইরে গিয়েছিলো। কিন্তু উৎস প্রায় এক ঘন্টা পরে এসে দেখে আদ্রি রেডি না হয়ে বসে আছে। মূলত আদ্রি সবসময় বোরকা হিজাব পরিধান করে বাইরে বের হয়। তার ইচ্ছে ছিলো বোরকা পরে বিয়ে করবে। কিন্তু হঠাৎই দমকা হাওয়া এসে সবটা এলোমেলো করে দিয়ে চলে গেল। হুট করেই তার বিয়েটা হয়ে গেলো।আদ্রি ভেবেছিলো তার মা হয়তো লাগেজে কাপড়ের সাথে বোরকা হিজাব ও দিয়ে দিবে। কিন্তু আদ্রি উৎসের কথা অনুযায়ী রেডি হতে এসে লাগেজের সব কাপড় উল্টো পাল্টা করে ও নিজের বোরকা টা পেলো না। বোরকা হিজাব না পেয়ে আদ্রি ঠাঁই সেখানেই বসে রইলো।”
-” এদিকে উৎস নিজের কাজ শেষ করে বাসায় ফিরে উপমা কে ডেকে বললো,
-” মেয়েটা কি রেডি হয়েছে?”
-” কোন মেয়েটা ভাইয়া??”
-” আরে ঐ যে আদ্রি নাকি পাদ্রি?”
-” আমি জানি না ।আর তার সম্পর্কে জানার কোনো ইচ্ছা ও আমার নেই।ক্ষ্যাত একটা মেয়ে। চলাফেরা, কথাবলার স্টাইল দেখেছো?তাকে দেখলেই আমার গাঁ গুলিয়ে আসে।তোমার বউ। তুমি গিয়ে খোঁজ নাও রেডি হয়েছে কিনা বলে উপমা পার্লারে চলে গেলো।”
-” উপমার যাওয়ার পানে তাকিয়ে উৎস তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো, তিন কবুল বলে বিয়ে করলেই বউ হওয়া যায় না। শুধুমাত্র সজল খন্দকারের কথায় ঐ বাড়িতে যাওয়া।তিনি আমার বাবার বয়সী।তার আকুতি মিনতি আমি ফেলতে পারি নি।তাই তো অনিচ্ছাকৃত ভাবে ঐ বাড়িতে যেতে হচ্ছে।তবে আমি এই মিথ্যা সম্পর্ক বেশি দিন বয়ে নিয়ে বেড়াবো না।উকিলের সাথে কথা বলে আমি খুব শীঘ্রই ডিভোর্স এর ব্যবস্থা করবো বলে উৎস আদ্রির রুমে এসে দেখে আদ্রি রেডি না হয়ে মেঝেতে বসে রয়েছে।যা দেখে হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে আসে উৎসের।উৎস আদ্রির দিকে তেড়ে এসে বললো,
-” বাপের বাড়ি যাওয়ার কোনো ইচ্ছে নাই বুঝি? তোমাকে বলেছিলাম না রেডি হয়ে থাকতে? এই তোমার রেডি হবার নমুনা? তুমি কি ভেবেছিলে তুমি রেডি না হলে আমি সিনেমা, গল্প, উপন্যাসের নায়কদের মতো তোমাকে নিজে হাতে সাজিয়ে গুছিয়ে দিবো?”
-” আমি লুলা না যে আপনার হাতে আমার সাজগোজ করতে হবে।আপনার হাতে সাজগোজ করার কোনো ইচ্ছা আমার নেই।”
-” তাহলে এখনো রেডি না হয়ে বসে রয়েছো কেন?”
-” আদ্রি বোরকার কথা বলতে গিয়ে ও কিছু একটা ভেবে বললো,
-” আমি তো নতুন বউ। নতুন বউয়েরা সাধারণত নতুন জামাকাপড় পরে। কিন্তু এ বাড়িতে আসার পরে আমাকে কোন নতুন শাড়ি বা জামা দেওয়া হয় নি।আমি বাড়ি থেকে যে পুরাতন জামাকাপড় এনেছিলাম , সেগুলোই পরেছি। কিন্তু বাপের বাড়ি যদি এই পুরাতন কাপড় পরে যাই।তখন আশেপাশের লোকজন আপনাদের কে গালমন্দ করবে।বলবে তারা নাকি এতো বড়লোক।অথচ নতুন বউকে একটা ভালো শাড়ি পর্যন্ত দিতে পারে নি? কেমন বড়লোক তারা?আদ্রির কথা শুনে উৎস তৎক্ষণাৎ নিজের রুমে এসে কাবার্ড থেকে শার্ট, প্যান্ট নিয়ে আদ্রির মুখের উপর ছুড়ে ফেলে দিলো।আদ্রি মুখের উপর থেকে শার্ট ,প্যান্ট হাতে নিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখে বললো,
-“শার্ট,প্যান্ট দিয়ে আমি কি করবো?”
-” তুমি পরার জন্য কোনো জামাকাপড় পাচ্ছো না ।তাই আমার শার্ট,প্যান্ট দিয়ে তোমাকে সহযোগিতা করলাম।এখন যদি বাপের বাড়ি যেতে চাও,অতি দ্রুত শার্ট, প্যান্ট পরে রেডি হয়ে নাও।”
-” আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে? শার্ট প্যান্ট ছেলেদের পোশাক।আমি মেয়ে হয়ে কেন ছেলেদের পোশাক পরবো?”
-” উৎস দাঁতে দাঁত চেপে বললো,আমরা তো ছোটলোক। আমাদের টাকার অভাব।তোমাকে শাড়ি, থ্রিপিস কিনে দেওয়ার মতো কোনো টাকা আমাদের নেই। এজন্যই আমার যেগুলো আছে সেগুলো আমরা দুজনে ভাগাভাগি করে পরবো কেমন?”
-” উৎসের চিৎকার চেঁচামেচি শুনে সালমা তালুকদার দৌড়ে আসে।তাকে দেখেই উৎস রুম থেকে বেরিয়ে যায়।উৎস যেতেই সালমা তালুকদার আদ্রির দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,
-” কি হয়েছে আদ্রি মা? উৎস রেগে গিয়েছে কেন?”
-” আসলে মা আমার তো ভালো কোনো জামা নেই। তাছাড়া মা লাগেজে বোরকা হিজাব দিতে ও ভুলে গিয়েছে।আমি যদি পুরাতন কাপড় পরে ঐ বাড়িতে যাই।তাহলে লোকে আপনাদের বদনাম করবে।সেটাই বলছিলাম।আর তখনি উনি শার্ট প্যান্ট এনে আমার মুখে ছুড়ে দিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিয়েছে।খারাপ লোক একটা।”
-‘ আদ্রির কথা শুনে সালমা তালুকদার মুচকি হেসে বললেন, উৎসের রুমে আলমারি তে তোমার জন্য শাড়ি, থ্রিপিস রাখা হয়েছে।উপমা কে বলেছিলাম শাড়ি , থ্রিপিস তোমার হাতে দিতে। কিন্তু মেয়েটা তোমার হাতে না দিয়ে সেগুলো আলমারি তে রেখে দিয়েছে।আর আমি তো জানতাম না তুমি বোরকা পরো।জানলে শাড়ি , থ্রিপিস এর সাথে দুইটা বোরকা ও নিয়ে আসতাম।আমার ভুল হয়ে গিয়েছে মা।এবারের মতো শাড়ি পরে বাবার বাড়ি থেকে ঘুরে এসো। তুমি ফিরলে আমি তোমাকে সাথে করে নিয়ে গিয়ে তোমার পছন্দ মতো বোরকা কিনে দিবো।”
-” আমার নতুন বোরকা লাগবে না মা।ঐ বাড়িতে আমার বোরকা রয়েছে।আমি সেটাই নিয়ে আসবো।”
-” আচ্ছা ঠিক আছে।এখন কথা না বাড়িয়ে চলো।আমি ঝর্ণা কে বলছি । ঝর্ণা তোমাকে শাড়ি পরিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে দিবে।”
-” ঠিক আছে মা।”
-“প্রায় দুই ঘণ্টা পরে আদ্রির সাজ কমপ্লিট হয়।ঝর্ণা তালুকদার তাকে আয়নার সামনে নিয়ে দাঁড় করিয়ে দেয়।আদ্রি আয়নায় নিজেকে দেখে যেন নিজেই চিনতে পারে না।তাকে সম্পূর্ণ অন্য রকম লাগছে।তার গাত্রে বেগুনি কালারের একটা জামদানী শাড়ি জড়িয়ে রয়েছে।গলায় স্বর্ণের অলংকার, নাকে নাকফুল, হাতে স্বর্ণের মোটা বালা।চোখে গাড়ো কাজল, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক, চুলগুলো খোঁপা করে এক সাইডে গোলাপ ফুল গুঁজে দেওয়া। সবমিলিয়ে পরীর মতো লাগছে আদ্রি কে।আদ্রি কে এই রুপে দেখে সালমা তালুকদার নিজের চোখ থেকে হাতের কোনায় একটু কাজল নিয়ে আদ্রির কপালে ছুঁয়ে দিয়ে বললো,
-” এসব অলংকার তোমার শ্বাশুড়ি মায়ের।এই অলংকারের আসল উত্তরাধিকারী তুমি।এই অলংকার যেন তোমার সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। কথাটা শুনে আদ্রি সালমা তালুকদার কে জড়িয়ে ধরলো।তিনি তৎক্ষণাৎ আদ্রির কপালে আলতো চুমু দিয়ে বললো,
-“নজর না লাগুক যেন চান্দের ও গায়।”
-” আমি অনেক ভাগ্য করে আপনার মতো একজন শ্বাশুড়ি, কাকীমার মতো একজন চাচি শ্বাশুড়ি, সিজানের মতো একজন দেবর পেয়েছি।”
-“আর আমার ছেলে বুঝি ভালো নয়?”
-” আমাদের বিয়েটা তো শুধু মাত্র কাগজের বিয়ে হয়েছে।আমি তার কাগজের বউ।এই সম্পর্ক কতোদূর আগাবে আমি জানি না মা।তবে আমি মন প্রাণ দিয়ে চাই আমাদের সম্পর্ক টা আর পাঁচটা স্বাভাবিক দম্পতির মতো হোক।আমি আমার সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করে যাবো স্বামী, শ্বশুর, ননদ সবার মন জয় করার।সবার ভালোবাসা পাবার।”
-” তোমার শ্বাশুড়ি সবসময় তোমার পাশে থাকবে মা বলে সালমা তালুকদার, ঝর্ণা তালুকদার রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।তারা যাওয়ার পর পরই উৎস ফোনে কথা বলতে বলতে আদ্রির রুমে প্রবেশ করলো। হুট করে আদ্রির অন্য রুপ দেখে সে যেন কথা বলতে ভুলে গেলো।উৎস পলকহীন দৃষ্টি তে আদ্রির দিকে তাকিয়ে রইলো।।”
চলবে ইনশাআল্লাহ।।