#মনে_পড়ে_তোমায়_সন্ধ্যে_বেলায়
#পর্ব_০৫
#নুজাইফা_নূন
-“কবুল বলার ঠিক পরের মুহূর্তেই বর বিয়ের আসর ছেড়ে চলে যায়। মূহুর্তের মধ্যেই বিয়ে বাড়িতে শোরগোল পড়ে গেলো।আদ্রির মা শায়লা খন্দকার মেহমানদের সামনে আদ্রির হাত ধরে রুমের মধ্যে টেনে নিয়ে এসে একপ্রকার বিছানায় ছুড়ে মারলো।আদ্রি টলমলে চোখে শায়লা খন্দকারের মুখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।সে যেন নিজের মা কে চিনতেই পারছে না।আদ্রি বিছানা ছেড়ে উঠে শায়লা খন্দকারের দিকে এগিয়ে এসে তার হাত দুটো নিজের মুঠোয় নিয়ে বললো,
-” সরি মা।আমি তোমার কথা রাখতে পারি নি।বিয়ে একটা পবিত্র বন্ধন। জীবনের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ।আমি চাই নি সেই পবিত্র বন্ধন মিথ্যা দিয়ে তৈরি হোক। তাছাড়া সত্য কখনো চাপা থাকে না মা।তারা আজ নয় তো কাল জানতো আমি আদিতা না।তখন সমস্যা আরো বাড়তো।তার থেকে এটাই ভালো হয়েছে , আমি সত্য টা বলে দিয়েছি। তুমি রাগ করো না মা।আমার ভাগ্যে যা আছে তাই হবে। কিছু একটা বলো মা।এভাবে চুপ করে থেকো না।”
-” আদ্রির কথায় শায়লা খন্দকার আদ্রির হাত এক ঝটকায় সরিয়ে দিয়ে বললো,কিসের মা? আমি কারো মা না।আর না কেউ আমার মেয়ে।”
-” এসব তুমি কি বলছো মা?”
-” বুঝতে পারছিস না কি বলছি? আমি যদি তোর মা ই হতাম , তাহলে পারতিস এইভাবে সবার সামনে আমাকে অপমান অপদস্থ করতে?কি দরকার ছিলো সবাইকে বলার যে তুই বিয়ের পাত্রী না। আমাদের আত্মীয় স্বজনেরা’ই তোকে আর আদি কে গুলিয়ে ফেলে।সেখানে তুই না বললে তারা কখনো জানতে পারতো না তুই আদ্রি নাকি আদি? দিব্যি বড়লোক বাড়িতে রাজরানীর মতো পায়ের উপর পা তুলে খেতে পারতি।বর , শ্বশুর শাশুড়ি সবার আদর ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে থাকতে পারতি। কিন্তু তুই নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারলি।মহৎ সাজতে গিয়েছিলি তাই না? এখন পুড়লো তো কপাল?বর বিয়ের আসর ছেড়ে চলে গেলো। শ্বশুর শ্বাশুড়ির ও তোর প্রতি কোনো আগ্ৰহ নেই।তোকে আমি একটা কথা বলে রাখছি আদ্রি।তোর শ্বশুর বাড়ি তে তোর যদি কোন জায়গা না হয়।তাহলে আমার বাড়িতে ও তোর কোনো জায়গা হবে না।
-“শায়লা খন্দকারের কথায় আদ্রি ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়লো।সে বিয়েটা না করতে চাইলেও শায়লা খন্দকার এক প্রকার জোর করেই আদ্রি কে বিয়ের সাজে সাজিয়ে দিয়ে বিয়ের আসরে নিয়ে যায়।আদ্রি উৎস দুজনকে পাশাপাশি বসানো হয়। ঘোমটার আড়ালে আদ্রি চোখের পানি ফেলতে থাকে।উৎস সেটা লক্ষ্য করে তার রুমাল এগিয়ে দেয় আদ্রির দিকে।আদ্রি উৎসের হাত থেকে রুমাল নেওয়ার সময় উৎসের হাতের স্পর্শ পাওয়া মাত্রই আদ্রি নিজেকে গুটিয়ে নেয়।আদ্রি উৎস কে সত্য টা বলার জন্য হাঁসফাঁস করতে থাকে। কিন্তু সে সুযোগ হয়ে উঠে না।এক পর্যায়ে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়।বিয়ে শেষ হলে উৎস আদ্রির হাতের উপর নিজের হাত রাখে।উৎসের স্পর্শে আদ্রির সর্বাঙ্গ শিরশির করে উঠে।আদ্রি নিজর শাড়ি মুঠোয় নিয়ে তোতলাতে তোতলাতে বললো,
-” আপনাকে আমার কিছু বলার আছে।আমি বিয়ের আগে থেকেই কথাটা আপনাকে বলতে চাচ্ছি। কিন্তু বলতে পারি নি।”
-“আদ্রির কথায় উৎস মজার ছলে বললো, এখনি তো নয়।আসুক সময়।বলবো কথা বাসর ঘরে।এখনি যদি সব কথা বলে শেষ করে দাও।তাহলে বাসর রাত টা মাটি হয়ে যাবে আমাদের।সো তোমার যা বলার সোজা বাসর ঘরে বলবে।”
-” আদ্রি উৎসের কথায় কান না দিয়ে বলে উঠলো,
আমি আপনার পছন্দ করা পাত্রী নই ।আমি আদ্রিকা ।আদিতার বড় বোন।আদি আপনাকে বিয়ে করবে না বলে সকালে পালিয়ে গিয়েছে। বাবা মা নিরুপায় হয়ে আমাকে আদির জায়গায় বসিয়ে দিয়েছে। আমি আর আদ্রি টুইন।আমি চাইলেই ব্যাপার টা হাইড করতে পারতাম। কিন্তু আমি চাই নি মিথ্যা দিয়ে বিয়ের মতো একটা পবিত্র সম্পর্ক তৈরি হোক।কথাটা শোনা মাত্রই উৎস উৎস গলা থেকে বিয়ের মালা, মাথা থেকে পাগড়ি ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বিয়ের আসর ছেড়ে চলে যায়।উৎস যেতেই মেহমানরা আদ্রি কে ঠকবাজ, প্রতারক বলে অপমান করতে থাকে।যা দেখে শায়লা খন্দকার আদ্রি কে রুমের মধ্যে নিয়ে আসে।আদ্রি ভেবেছিলো হয়তো শায়লা খন্দকার তাকে সান্ত্বনা দিবে। কিন্তু তিনি আদ্রির ধারণা কে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে আদ্রি কে গালমন্দ করতে থাকে।আদ্রি ফ্লোরে বসে কান্না করতে থাকে এমন সময় আদ্রির বাবা সজল খন্দকার আদ্রি কে ফ্লোর থেকে তুলে বুকে টেনে নিয়ে বললো,
-” তোর মা আর বোনের লোভ তোর জীবন টা নষ্ট করে দিলো রে মা।পারলে আমাকে তুই ক্ষমা করে দিস।”
-” এভাবে বলছো কেন বাবা?জন্ম , মৃত্যু, বিয়ে আল্লাহর হাতে। আল্লাহ তায়ালা আমার কপালে যা রেখেছে তাই হবে। সেসব নিয়ে তুমি চিন্তা করো না।”
-“চিন্তা করো না বললেই কি আমি চিন্তা মুক্ত হতে পারবো?আমি যে বাবা।প্রত্যকটা বাবা মা চায় তার মেয়েটা ভালো থাকুক,সুখে থাকুক।আমি ও চাই তুই ভালো থাক।যা হবার হয়েছে। তুই একটু মানিয়ে গুছিয়ে নিস।”
-” আদ্রি কিছু বলতে যাবে তার আগেই জাহিদ তালুকদারের স্ত্রী সালমা তালুকদার এসে বললো, সন্ধ্যা প্রায় গড়িয়ে যাচ্ছে।আমাদের যেতে হবে বেয়াইসাহেব ।”
-” আপনাদের কে বলার মতো কোনো ভাষা আমার নেই।তবে একটা কথায় বললো, আমার মেয়েটাকে দেখে রাখবেন।বড্ড ভালো আমার মেয়েটা।”
-“আমি আমার সাধ্য মতো চেষ্টা করবো।আপনি আদ্রি কে নিয়ে আসুন।”
-” বর ছাড়া একাই শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয় আদ্রি। গাড়ি তে উঠে বুক ভারি হয়ে আসে তার। অঝোরে কান্না করতে থাকে সে।তার কান্না দেখে সাত বছরের একটা বাচ্চা ছেলে আদ্রির দিকে টিস্যু এগিয়ে দিয়ে বললো,
-” নতুন বউ তুমি কান্না করছো কেন?উৎস ভাইয়া তোমাকে বকেছে বুঝি?জানো উৎস ভাইয়া খুব খারাপ।আমাকে ও বকা দেয়।আবার বকা দেওয়ার পর চকলেট ও দেয়।আদর দেয়। তুমি দেখো তোমাকে ও চকলেট দিবে, আদর দিবে।বাচ্চাটার কথা শুনে কান্না বন্ধ হয়ে যায় আদ্রির।আদ্রি বাচ্চা টাকে কোলের উপর বসিয়ে গাল টেনে দিয়ে বললো,
-” তোমার নাম কি বাবু?”
-” আমি বাবু না।আমি সাজিন।”
-” ভারী মিষ্টি নাম তো তোমার।”
-” তুমি ও অনেক মিষ্টি দেখতে।”
-” সাজিনের এমন মিষ্টি মিষ্টি কথায় মন হালকা হয়ে যায় আদ্রির। সাজিনের সাথে গল্প করতে করতে আদ্রি কখন যে তালুকদার ভিলার সামনে চলে এসেছে টের পায় না।সে গাড়ি থেকে নেমে সাজিনের হাত ধরে তালুকদার ভিলার ভেতরে প্রবেশ করে।”
_________________________
-” ফুলে ফুলে সজ্জিত বিছানায় এক হাত ঘোমটা টেনে বসে রয়েছে আদ্রি।বুকের ভেতর যেন ঝড় বয়ে যাচ্ছে।উৎস তাকে নিজের রুমে, নিজের বিছানায় দেখে কেমন রিয়েক্ট করবে ভাবতেই গায়ের লোমকূপ দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের সৃষ্টি হচ্ছে।আদ্রি বারবার শাড়ির আঁচল দিয়ে কপালের ঘাম মুছে নিচ্ছে। বিছানায় স্থির হয়ে বসে থাকতে না পেরে এক পর্যায়ে আদ্রি বিছানা থেকে নেমে রুমের মধ্যে পায়চারি করতে শুরু করে।আর তখনি খট খট আওয়াজে দরজা খুলে যায়।আদ্রি উৎসের দিকে এক নজর তাকিয়ে তৎক্ষণাৎ ঘোমটার আড়ালে চলে যায়।উৎস রুমের দরজা লাগিয়ে পেছনে ফিরতেই আদ্রি উৎসের দিকে ঝুঁকে সালাম করতে যায় । কিন্তু আদ্রি উৎসের পায়ে হাত দেওয়ার আগেই উৎস আদ্রির হাত ধরে ফেলে।”
চলবে ইনশাআল্লাহ।।