Monday, October 6, 2025







মনের মাধুরীতে তুমি পর্ব-৭+৮

#মনের_মাধুরীতে_তুমি
#লেখিকাঃনওশিন_আদ্রিতা
#পার্টঃ৭
,
,
,
,
সময় প্রবাহমান। কখন কেটে যায় বলা যায়না দেখতে দেখতেই সেকেন্ডের কাটা পেরিয়ে মিনিটের কাটায় এসে পড়ে আবার ঘন্টা।সোনালী রোদ্দুরের বদলে আকাশ লালচে রঙ ধারণ করে। আবার সে লালচে রঙ টা পরিবর্তন হয় নিকোশ কালো অন্ধকারে।দিনের বেলা যে আকাশ টা সূর্যের আলোতে আলোকিত থাকে রাতে একই আকাশ তার আর চাঁদের আলোতে ঝলমল করে উঠে।

লাল রাঙ্গা শাড়ি পড়ে ফুলে উঠে চোখের নিচে মোটা করে কাজল এর রেখা টেনে নিয়ে আয়নার দিকে চোখ বুলালো সুখ।আয়নাতে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখে তাচ্ছিল্যে পূর্বক একটা হাসি দিলো।আয়না থেকে চোখ সরিয়ে নিজের কুচি ঠিক করতে নিলেই আহিয়ান এসে কুচির ভাজ ঠিক করতে শুরু করে।সুখ কিছু বলেনা জানে বলে লাভ নেই পাগল ঘ্যাড়ত্যাড়া লোকটা সেটাই করবে যেটা তার মন চাইবে।

—সুখ পাখির এই সাজ
তার কষ্ট আড়াল করতে নাকি
পাগল হৃদয় এ ব্যাকুলতার ঝড় তুলতে
তার চোখের এই বেদনা কি প্রিয় মানুষ টাকে হারানোর
নাকি এই চোখে অন্যকারো প্রতিচ্ছবি সাজানোর আগের প্রস্তুতি

কেপে উঠলো সুখ আহিয়ানের এমন বানীতে। কাজল মাখা চোখ বেয়ে বেরিয়ে এলো এক ফোটা অশ্রু জল। কষ্ট হচ্ছে বুকের বাম পাশটাই তীব্র ভাবে হাহাকার করছে।কিভাবে দেখবে প্রিয় মানুষ টাকে অন্যের জন্য তিন কবুল বলতে। নিজেকে আজ বড্ড অসহায় লাগছে সুখের। বার বার ইচ্ছা করছে আকাশের কাছে ছুটে যেয়ে তার কলার আকরে ধরে তাকে জিজ্ঞেস করতে

”কেন এসেছিলো সে তার জীবনে কেন এলোমেলো করে দিলো তার জীবন টা সে তো ভালোই ছিলো একা নিজেতে ছিলো মত্ত।কোন পিছুটান কোন কষ্ট তার বিরোধী ছিলোনা চোখের অশ্রুর সাথে অনেক আগেই বিচ্ছেদ করে নিয়েছিলো।নিজেকে শক্ত ভাবে দারুন করে গড়ে নিয়েছিলো তাহলে কেন এলো তাকে ভেংগে গুড়িয়ে দিতে।

—ডাক্তার

আহিয়ান এর দিকে ঘুরে ছলছল নয়নে তার নিকট যেয়ে আহিয়ানের চোখের দিকে তাকালো সুখ। এই শান্ত চোখ জোড়ার দিকে তাকালে সুখের অজানা শান্তি হয়।একটু বেশিই শান্তি পাই সে।

—ডাক্তারের কাজ তার পেশেন্ট কে সম্পূর্ণ রুপে সুস্থ করে তোলা আপনি আমাকে সম্পূর্ণ ভাবে কেনো সুস্থ করলেন। আমার শরীরের সমস্ত যক্ষম তো ঠিক করে দিলেন আগের ন্যায়। কিন্তু বুকের বাম পাশটার ব্যাথার কেনো কোন চিকিৎসা করালেন না কেনো।সেদিন তো বুকের বাম পাশটাও ক্ষত হয়েছিলো গভীর ভাবে। তাহলে সে ক্ষত কেনো আপনারা সারলেন না বলুন না ডাক্তার।আমার এই জায়গাটা খুব ব্যাথা করছে ডাক্তার কোন ঔষধ দেন না।

সুখ আহিয়ান এর কোর্টে গলা টা আকড়ে ধরলো।অঝোরে কেদে দিলো সুখ।আহিয়ান কিছু বললো না। একটা বার আকড়ে ধরলোনা সুখের নরম দেহটা ঝড়তে দিলো অশ্রুর প্রত্যেক টা জল বিন্দু।

একসময় সুখ নিজেই ক্লান্ত হয়ে গেলো।আহিয়ান আলতো হেসে হাত বেরিয়ে সুখের খোলা চুল গুলো খোপা করে দিলো পাশ থেকে ফুলের গাজরা নিয়ে বেধে দিলো চুলে।পকেট থেকে রুমাল বের করে চোখের নিচ টুকু মুছে দিলো যত্ন করে।আপন হাতেই পুনরায় কাজের কালো টান একে দিলো চোখের নিচে।

—তোমার দীঘল কালো কেশ উমুক্ত শুধু আমার জন্য
তোমার খোপাতে ফুল গুজা হবে শুধু আমার নামে
তোমার চোখে কাজল পড়ানোর অধিকার ও আমার নামে
লিখে নিলাম তোমার প্রতিটি সৌন্দর্যের প্রতিক আমার নামে
তোমার সমস্ত অশ্রু গরিয়ে পড়লে সেটা আটকাবেনা আমার হাত
তবে অশ্রুর পরে তোমার ঠোঁটের মনমুগ্ধকর হাসির কারন লিখে নিলাম আমার নামে

সুখ মুগ্ধ হয়ে শুনে গেলো সামনে দাঁড়ানো সুদর্শন পুরুষটির প্রেমাবাক্য।ডাক্তার রাও বুঝি এতো সুন্দর করে বুলি আউরাতে পারে। কই সুখ তো আগে জানতোনা। সে তো মনে করতো ডাক্তার রা নিষ্ঠুর হয় বড্ড নিষ্ঠুর তাইতো এতো সহজ ভাবে কারো মৃত্যু ঘষণা করে দেয় অপরেশন করতে হাত কাপেনা।

——————

সুন্দর করে সাজানো ৩ তালা বাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছে সুখ আর আহিয়ান।কিছু দূরেই দাঁড়িয়ে ছবি তুলা হচ্ছে আকাশ আর নয়ণার। নয়নার ঠোঁটে লেগে আছে তৃপ্তিকর হাসি।পড়ণে ভারি গোল্ডেন লেহেঙ্গা জুয়েলারি ভারি ব্রাইডাল মেকআপ এর কাছে সুখের নিজেকে ফিকে লাগছে।

—আসলেই আকাশ নয়নার জায়গা তুমি আমাকে কেনোই বা পছন্দ করবে। পার্ফেক্ট সে তোমার জন্য যেখানে আমার মাঝে মেয়েদের মতো কোন গুন ই নাই সেখানে কি দেখেই বা আমাকে ভালোবাসবা যেখানে সকল মেয়েরা রুপ চর্চা নিয়ে ব্যাস্ত থাকত সে সময় আমি তোমার সাথে চায়ের দোকানে বসে চা পান করেছি কোন দিন সেজেগুজে তোমার সামনে নিজেকে প্রদর্শিত করিনি।কি দেখে বলো তুমি আমাকে ভালোবাসবা।

সুখের ধ্যান ভাংগে আহিয়ান এর হাতের স্পর্শ নিজের হাতে পেয়ে।কানের কাছে আহিয়ানের গরম নিশ্বাস টের পেতেই পা দুইটা আসাড় হয়ে আসে।

—ওই চোখ থেকে আমার সামনে অশ্রু গরিয়েছে আমি কিছু বলিনি।কিন্তু তোমার ওই কান্না মাখা আবেদনময়ী স্নিগ্ধ চেহারা অন্যকারো চোখ পড়লে তাকেও শেষ করবো আর তোমাকে আমার মতো করে শেষ করবো।

সুখ চমকালো।ভাবালো তাকে আহিয়ানের এমন রোশ মূলক বাক্য লোকটা কি খালি গলায় তাকে মৃত্যুর হুমকি দিলো।নাকি অন্যকিছু।কিন্তু সুখকে অবাক করে দিয়ে আসলেই সুখের কান্না পাওয়া থেমে গেলো কিন্তু ভয় টা তাকে ঘিরে ধরলো আষ্টেপৃষ্টে।গোলকধাঁধার ন্যায় পেচানো লাগে এই লোকটাকে সুখের কাছে।কুইজ এর ন্যায় এই লোকটার প্রতিটি বাক্য। কখনো নেশালো কখনো ধারালো কখনো মধুর কখনো রাগী কখনো তীক্ষ্ণ।এতো রুপ কেনো হবে এই পুরুষ টার। সে কেনো হাজার রুপে রুপায়িত হবে।।।

বিয়ের পিরিতে বসে আছে নয়ণা তার সামনেই আকাশ।আর তাদের দুইজনার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে সুখ।এক প্রকার জোড় করে দাড় করিয়ে রেখেছে আহিয়ান সুখ কে ওইখানে।সুখ ছোটফোট করছে ছুটার জন্য।এরই মধ্যে কাজীর ধ্বনি শুনা যায়।কাজি আকাশ কে বলছে কবুল বলতে।সুখের ছোটফোটানো কমে গেলো।এতোক্ষন সে হাত আহিয়ানের হাতে বন্দি ছিলো এখন সে হাত সুখের হাতে বন্দি। ছোট হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে রেখেছে শক্ত পুরুষালী হাত।নিজের নখ দিয়ে ক্ষত করে চলেছে হাত টা।

এদিকে কাজি বার বার তাড়া দিচ্ছে আকাশকে কবুল বলতে নয়নাও এবার অস্থির হয়ে এসেছে।বরপক্ষ পাত্রীপক্ষ সবাই অবাক আর অশান্ত সেখানে আহিয়ান আর সুখ শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সবচেয়ে বেশি শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সুখ।পুতুলের ন্যায় জমে গেছে।এদিকে আকাশের দৃষ্টি আহিয়ানের সজ্জিত সুখের দিকে।লাল শাড়ি পরিহিত রমীনিকে দেখে আকাশ এর মন তাকে বার বার জানান দিচ্ছে সে ভুল করছে অনেক বড় ভুল। যে জায়গাটাই নয়ণা বসে আছে সে জায়গা সুখের জন্য বরাদ্দ।এইসব সুখের নামে হওয়া উচিত কিন্তু এই সব নয়ণার হচ্ছে যা ভুল

আকাশ উঠে দাড়াতেই সবাই এবার চমকায়।নয়না কেদে দিবে যখন তখন সেটা তার মুখ দেখে যে কেউ অনায়েসে বলে দিবে।আকাশ সব কিছু উপেক্ষা করে দাড়ালো সুখের সামনে

—আমি এই বিয়ে করতে পারবোনা সুখ। আমি তোমাকে ভালোবাসি। বড্ড বেশি ভালোবাসি শুধু তোমাকে চাই আমার বড্ড বেশি চায়।আমি বুঝতে পারিনি আমার অনুভূতি কিন্তু এখন বুঝেছি আমি তোমাকে ভালোবাসি।।

সুখ তাকালো বর বেশে থাকা তার ভালোবাসার মানুষ টির দিকে।আহিয়ানের হাতের ভাজ থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো।আহিয়ান চমকালো চোখ দুইটা লাল হয়ে এলো।

—আজ যদি তুমি আকাশের দিকে এক পা এগুয়ে নেও তাহলে এই সুখ পাখির সমস্ত সুখ কেড়ে নিয়ে বিষাদের কালো মেঘে ছেড়ে দিতে এই আহিয়ান দ্বিতীয় বার ভাববেনা কারন আমি মহান ত্যাগী প্রেমিক নয় যে নিজের প্রিয়সীর সুখের জন্য তাকে ছেড়ে দিবে আমি স্বার্থপর বড্ড স্বার্থপর আমি বাজতে চাই তাই আমি তোমাকে চাই।আর তোমার আমার হতেই হবে সুখ পাখি।

আহিয়ান প্রস্তুতি নিচ্ছিলোই সুখ কে নিজের সাথে নিয়ে যাওয়ার কিন্তু তার আগেই,,,,,,,

চলবে!

#মনের_মাধুরীতে_তুমি
#লেখিকাঃনওশিন_আদ্রিতা
#পার্টঃ৮
,
,
,
,
সুখের দিকে অশ্রু ভরা নয়ন নিয়ে তাকিয়ে আছে আকাশ।ঠিক এইভাবেই দাঁড়িয়ে ছিলো সেদিন সুখ।তার চোখ ও ঠিক একই ভাবেই অশ্রুতে পরিপূর্ণ ছিলো যখন সে শুনেছিলো তার মনের মানুষ টা অন্যকাউকে ভালোবাসে অন্যকেউ তার অর্ধাঙ্গিনী হিসেবে পরিচিয় পাবে।অন্য কাউকে তৈরি করা হয়েছে তার প্রিয় মানুষ টির বুকের বাম পাশের বাকা হার দিয়ে।

—আমি আহিয়ান কে ভালোবাসি আকাশ আপনাকে নই

সুখের এই একটি বাক্য ভেংগে গুড়িয়ে দিয়েছিলো আকাশের সমস্ত আশা।ছেলেদের নাকি কাদতে নেই কিন্তু আকাশের মনে হচ্ছে সে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে আকাশ পাতাল কাপিয়ে কাদুক।সত্যি কি এতোটা অসহনীয় ব্যাথা হয় ভালোবাসার মানুষ টিকে হারালে নাকি শুধু আকাশের ই হচ্ছে বুঝতে পারছেনা আকাশ।

—সুখ আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো নিশ্চয় আমার উপর অভিমান করে এই কথা বলছো তাইনা আমি দেরি করে ফেলেছি নিজের অনুভূতি বুঝতে সেজন্য বুঝি এই ভাবে অন্যকাউকে নিজের প্রেমিক হিসেবে জানান দিচ্ছো। এমন টা করোনা সুখ তীব্র ব্যাথা নিয়ে বেচে থাকতে পারবোনা আমি।

নিজেকে সামলে নিয়ে আকাশ সুখের হাত ধরে কথা গুলো বলে উঠলেই সুখ হাত সরায় নেই

—আজ তোমার বিয়ে আকাশ। সিন ক্রিয়েট করোনা। নয়ণা কান্না করছে।অন্যের অনুভূতি নিয়ে খেলার অধিকার তোমার নেয় যদি সত্যি আমাকে ভালোবেসে থাকো নয়না কে বউ হিসেবে স্বীকৃতী দেও।

হাটু গেড়ে বসে পড়লো আকাশ।জীবন টা মহূর্তে কেমন এলোমেলো লাগছে।বুঝতে পারছেনা কি করবে সে। একদিকে নয়না আর তার ক্যারিয়ার।নয়ণার বাবা তাকে প্রমিজ করেছিলো নয়না কে বিয়ে করলে তার ক্যারিয়ার গড়ে দিবে এই স্বর্তেই রাজি হয়েছিলো নয়নাকে বিয়ে করতে কিন্তু এখন তার আফসোস হচ্ছে বড্ড আফসোস কেন সে এমন টা করলো।

সুখ আহিয়ান এর হাত ধরে বেরিয়ে আসে বিয়ের আসর থেকে।তার দ্বারা সম্ভব হবেনা তার প্রিয় মানুষ টার এহেন দশা।সে জানে ঠিক কতোটা পুড়ে কতোটা রক্তক্ষরণ হয় যখন জানা যায় তার প্রিয় মানুষ টা তাকে নয় অন্য কাউকে চায়।

—দাড়াও সুখ

আকাশের কন্ঠে থেমে যায় সুখের পা। পিঠ যেয়ে ঠেকে আহিয়ানের প্রসস্থ বুকে।পিছন থেকেই খামচে ধরে আহিয়ানের পাঞ্জাবি।

—তুমি ডক্টর আহিয়ান কে ভালোবাসো তাইনা তাহলে ঠিক আছে এই বিয়ের আসরে একটা নই দুইটা বিয়ে হবে।

কেপে উঠলো সুখের হৃদয়। হাত পা জমে আসতে শুরু করলো।এটা যে তার দ্বারা সম্ভব নই কিভাবে সে আকাশের জায়গা দিবে আহিয়ান কে। যেখানে সব স্বপ্ন আকাশ কে নিয়ে দেখা সেখানে সে স্বপ্ন কিভাবে আহিয়ান এর সাথে পূরণ করবে

—আমি জানি সুখ তুমি আমাকেই ভালোবাসো। আর বিয়েটাও আমাকেই করবা এই আহিয়ান কে ভালোবাসার কথা মিথ্যা। এখন ই বলে উঠবা যে তুমি আমাকে ভালোবাসো। আমার জায়গা কাউকে দিতে পারবা না

মনে মনে কথা গুলো আপন মনেই হাসে আকাশ।এদিকে আহিয়ানের চেহারায় কোন ভাবান্তর নেই।

—এইসব কি বলছো আকাশ প্লিজ কথা না বাড়িয়ে বিয়ে টা সেরে ফেলো আমাদের যেতে হবে। বাসায় সবাই অপেক্ষা করছে।

—উহু যদি নয়নার বিয়ে আমার সাথে করাতে চাও তাহলে তোমাকেও আহিয়ান এর সাথে এখানে এই মহূর্তে বিয়ে করতে হবে।

—ঠিক আছে আমি আর সুখ এখন ই তোমাদের সাথে বিয়ে করবো এই আসরেই

আকাশ সুখ অবাক হয়ে যায়।সবচেয়ে বেশি চমকায় সুখ।

—কি বলছেন ডাক্তার বাড়িতে কাউকে না জানিয়ে কিভাবে আপনি এটা বলতে পারেন

—আমাকে বিশ্বাস করো

চুপ হয়ে যায় সুখ। কিছুক্ষন চুপ থেকে হ্যা তে মাথা নাড়ায়।ব্যাস আহিয়ান সুখের হাত নিজের হাতের মুঠোয় পুরে নিয়ে বসে পড়ে কাজির সামনে।কাজিকে নিজের আর সুখের সমস্ত ডিটেলস দিয়ে দেয়। কিছু ক্ষনের মাঝেই সব তৈরি করে নেই

কাজি কবুল বলতে বললে আহিয়ান বলে দিলেও সুখ চুপ থাকে। সুখের ইচ্ছা করে সেই মহূর্তে উঠে যেয়ে আকাশের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে বলতে

—ভালোবাসি তোমাকে আকাশ ভিষণ ভালোবাসি। পারবোনা অন্যকারো নামে কবুল বলতে।

কিন্তু সুখ সেটা বলতে পারেনা। এদিকে নয়ণা তার ভারি লেহেংগা তুলে সুখের সামনে বসে। কানে কিছু একটা বলে চলে যেতে নিলেই সুখ কবুল বলে উঠে।

সবাই আশ্চর্য হয়েই বলে উঠে “আলহামদুলিল্লাহ”।

আকাশ কেমন অনুভূতি শূন্য হয়ে গেলো।মহূর্তে এটা কি হয়ে গেলো সে বুঝতে পারলোনা কেন হলো কিভাবে হলো কিছুই যেনো তার মাথায় ঢুকলোনা। ফাকা মস্তিষ্ক নিয়ে ৩ কবুল বলে বেধে গেলো নয়নার সাথে পবিত্র বন্ধনে।

_______

ফাকা নির্জন রাস্তাই গাড়ি থামাই আহিয়ান। নিজেই ডোর ওপেন করে দেয়।রোবট এর মতো বেরিয়ে আসে সুখ।কিছু দূর আপন মনেই হেটে যেয়ে বসে পড়ে ফাকা রাস্তার মাঝখানে।কিছুক্ষন চুপ করে বসে থেকে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠে।পরিবেশ টা থমকে যায়।কেমন গুমোট হয়ে আসে।বিকাল গড়িয়ে কখন সন্ধ্যা হয়ে যায় বুঝতে পারেনা সুখ।আহিয়ান এক মনে গাড়ির সাথে হেলাম দিয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে তার সুখ পাখির চিৎকার ব্যাথার আর্তনাদ।

হঠাৎ এই অসময়ে আকাশ ভেংগে গড়িয়ে পড়ে বৃষ্টি জমিনে।আহিয়ান যেনো এটার ই অপেক্ষাই ছিলো। ধীর পায়ে এগিয়ে যেয়ে তুলে নিলো সুখকে।বৃষ্টির পানিতে মহূর্তে ভিজিয়ে দিলো দুইটি দেহ। আহিয়ান সুখের বাম হাতটা নিজের দুই হাত দিয়ে আকড়ে ধরলো। এই হাত টাই ধরেছিলো আকাশ।বাকা হেসে নিজের দুই হাত দিয়ে ঢলতে শুরু করলো।
সুখ কিছু না বুঝে তাকিয়ে রইলো পাগলাটে আচরণ করা তার স্বামির দিকে।স্বামি শব্দ টা মস্তিষ্কে বারি খেতেই কেমন অনুভূতি হলো।আজ থেকে আকাশের ভাবনা তার জন্য নিষিদ্ধ। আজ থেকে তার ধ্যান জ্ঞান মন শরীর সব কিছুই উপরেই যে শুধু এখন এই লোকটার অধিকার।

আচমকাই জড়ায় ধরলো আহিয়ান সুখ কে যেনো নিজের ভিতরে ঢুকিয়ে নিবে।সুখ ও যেনো একটা সুরক্ষিত স্থান পেলো নিজের সমস্ত দুঃখ উজার করতে।সুখ ভেবে নেয় হয়তো তাকে আগলে নিয়ে আহিয়ান এর এই কাজ কিন্তু সে এটা বুঝলোনা আহিয়ান এমন টা এই জন্য করছে যাতে তখন আকাশের ছোয়া তার ছোয়াতে মিটে যাক।সে চায়না তার সুখ পাখির উপর অন্যকারো ছায়া অব্দি পরুক।

——

গাড়ি চৌধুরী বাড়ির সামনে দাড়াতেই সুখ নেমে পড়তে চাইলে আহিয়ান সুখের হাত ধরে নেই । সুখ তাকায়।চোখ দুইটা লাল হয়ে ফুলে গেছে।অতিরিক্ত কান্নার কারণে এই অবস্থা বুঝতে বাকি রইলোনা আহিয়ান এর

—বিয়ের কথা এখন বাসায় বা বাহিরের কাউকে বলোনা সময় হলে আমি নিজেই জানিয়ে দিবো

সুখ হাসলো তাচ্ছিল্য ছিলো সে হাসিতে যা বুঝতে বাকি রইলোনা

—চিন্তা করবেন না ডাক্তার কোন দিন কারো সামনে নিজেকে আপনার স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিবোনা। খুব শীঘ্রই আপনাকে এই বন্ধন থেকে আলাদা করবো
(শেষ এর বাক্যটা মনে মনে বলে উঠে সুখ।)

আহিয়ান কিছু না বলে ছেড়ে দেয় সুখের হাত। সুখ নেমে পড়ে গাড়ি থেকে।সোজা নিজের ঘরে যেয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। গায়ের শাড়ি টেনে খুলে ফেলে সেফটিপিন এর আচরে ছিলে যায় হাত। চোখের কাজল ঠোঁটের প্রলেপ নিষ্ঠুরতার সাথে মুছে ফেলে।যত্নে করে করা খোপা টা অযত্নে খুলে ফেলে।গোলাপের তৈরি গাজরাটাও ছিড়ে টুকরো টুকরো করে দেয়।

হাতের চুড়ি গুলো অযত্নে ছুড়ে ফেলাই সেগুলো ভেংগে গড়িয়ে পড়ে মেঝেতে। সে চুড়ির কাচের উপরে দেহ এলিয়ে দেয় সুখ।বন্ধ করে ফেলে নিজের আখিপল্লব। কিছু সময়ের মধ্যেই আখিদ্বয় এর সামনে অন্ধকার ছেয়ে যায়।

চলবে!

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ