মনের অন্তরালে পর্ব-২০ এবং শেষ পর্ব

0
1848

#গল্পের_নাম_মনের_অন্তরালে
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ২০ শেষ পর্ব
~সবাই কী শুধু হবু মাকেই দোয়া করবে হবু বাবাও যে আছে তা তো কেউ দেখছেন।
প্রলয় পরশের পিঠ চাপড়ে বলে,
~হবু বাবা তোর কোনো importance নেই এখন সবকিছু এখন হবু মায়ের জন্যই হবে।
পরশ বললো,
~তোরও দিন আসবে সেদিন দেখিস আমি কী করি।
প্রলয় হেসে হাতে থাকা মিষ্টির প্যাকেটটি টেবিলে রেখে বললো,
~সবাই মিষ্টি খেয়ে নিন সুখের দিনে মিষ্টি মুখ করতে হয়।
পরশ প্রহেলীর সাথে এসে সোফায় বসে পরলো সবাই ব্যস্ত হৈ হুল্লোড় করতে। পরশ প্রহেলীর হাত ধরে বললো,
~তোমার কী খারাপ লাগছে?
প্রহেলী মৃদু হেসে বললো,
~নাহ খারাপ লাগছে না।
সবাই সারাদিন মজা-মাস্তিতে কাটিয়ে দিলো বিকেলবেলা সবাই রওনা দিয়ে দেয় বাসার উদ্দেশ্যে। নয়না প্রহেলীকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~আপু নিজের খেয়াল রেখো।আমি তোমার সাথে দেখা করতে আসবো।
প্রহেলী বললো,
~তুই সুস্থ হয়ে তারপর আমার কাছে আসিস।কোনো সমস্যা নেই আর মেডিসিন সময় মতো নিবি।
নয়না মাথা দুলালো সবাই গাড়িতে উঠে বসলো গাড়ি চলতে শুরু করলো আপন গতিতে।নয়না তাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ভিতরে চলে আসলো।প্রলয়ও তার সাথে ভিতরে এসে পরলো নয়নার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো তার মন খারাপ।প্রলয় নয়নাকে বললো,
~সবাই চলে গেছে বলে মন খারাপ?
নয়না বললো,
~আসলে ছোট থেকেই আমি অনেক মানুষের ভীরে বড় হয়েছি এ বাসায় আপনি ছাড়া কেউ নেই।আর আপনিও অফিসে চলে যান তখন আমি একা হয়ে যাই।
প্রলয় বললো,
~হুম আমি বুঝতে পেরেছি।
নয়না বললো,
~আমার পা ব্যাথা করছে একটু রেস্ট করতে হবে।
প্রলয় নয়নাকে বিছানায় শুইয়ে দিলো তারপর ল্যাপটপ নিয়ে কাজে বসে পরলো।
পরশরা বাসায় পৌছে যে যার রুমে চলে গেলো প্রহেলী রুমে এসে বিছানার চাদর সরিয়ে নতুন চাদর বিছিয়ে ফেললো তখনই ঘরে প্রবেশ করলো পরশ আর বললো,
~এসব এখন করার কী দরকার ছিল?তোমার রেস্ট নিতে হবে।
প্রহেলী বালিশে মাথা রেখে বললো,
~চাদরটা ময়লা হয়ে গেছে তাই সরিয়ে ফেলেছি।
পরশ প্রহেলীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
~আচ্ছা আমাদের একটা মেয়ে হলে কেমন হয়?
প্রহেলী বললো,
~আল্লাহ যা দেয় তাতেই আমি খুশি কিন্তু সুস্থ সবল দান করুক।
পরশ বললো,
~আমার একটা ছোট্ট রাজকুমারী পুরো বাসায় হেঁটে বেড়াবে কতোটা আনন্দ দায়ক হবে ব্যাপারটা।
প্রহেলী হেসে উঠলো আর বললো,
~আগেই এতো কিছু ভাবছেন।
পরশ বললো,
~তুমি আমার কল্পনার রাজ্যে একবার ভ্রমণ করে এসে প্রিয়।কতো যে স্বপ্ন বুনেছি আমি তা দেখতে পাবে
প্রহেলী বললো,
~ওহে কবি সাহেব এখন আমার জন্য একটু পানির ব্যবস্থা করুন।
পরশ হালকা হেসে বিছানা থেকে উঠে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো।প্রহেলী ভাবছে,
~সব স্বপ্ন পূরণ হবে তো নাকি অপূর্ণতায় ঘিরে ধরবে আমাদের।

_________________

সময় চলছে নিজ গতিতে দেখতে দেখতে ৭ মাস কেটে গেলো এ কয়েকদিনে প্রহেলীর পেট অনেকটাই উঁচু হয়ে গেছে পরশ,রুমানা তালুকদার, আমেনা সিকদার প্রহেলীকে একটুও কাজ করতে দেয় না।প্রহেলী এখন মুখ ফুলিয়ে বসে আছে বিছানায় পরশ রুমে প্রবেশ করতেই প্রহেলী বললো,
~আমি আর আপনাদের সাথে থাকবো না।
পরশ ভ্রুকুচকে প্রহেলীর দিকে তাকিয়ে বললো,
~কী বলছো এসব?
প্রহেলী বললো,
~আপনারা সারাদিন আমায় কোনো কাজ করতে দেন না এভাবে বসে থাকতে ভালো লাগে।কোনো কিছু করতে গেলেই মা ধমক দেয় এসব আর ভালো লাগে না।
পরশ মুচকি হেসে বললো,
~তোমার শরীরের অবস্থা দেখে ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে।ডাক্তার কী বলেছে শুনো নি তোমার প্রপার রেস্টের প্রয়োজন।
প্রহেলি বললো,
~তাই বলে সারাদিন এভাবেই শুয়ে বসে কাটাবো।
পরশ বললো,
~একদম না তুমি হাটা-চলা করো বাহিরে গিয়ে প্রকৃতি দেখো বই পরো,নামাজ পরো তাহলেই তো সময় কেটে যায়।
প্রহেলী কিছু না বলে বসে রইলে পরশ প্রহেলীর কাছে গিয়ে তার গাল টেনে দিয়ে বললো,
~আমার বাবুর আম্মু এই কয়েকটাদিন নিয়ম গুলো মেনে চলো তারপর তো সব ঠিকই হয়ে যাবে।
প্রহেলী বললো,
~দাদীকে দেখতে মন চাইছে।
পরশ বললো,
~আমি কালকে দাদীকে নিয়ে আসবো তোমার কাছে।
প্রহেলী পরশের কাঁধে মাথা রেখে বললো,
~আচ্ছা আমি যদি মরে যাই আপনি কী আরেকটা বিয়ে করবেন?
প্রহেলীর কথায় পরশের বুকটা কেঁপে উঠে সে প্রহেলীকে সরিয়ে দিয়ে বললো,
~আমার সাথে কথা বলবে না তুমি খবরদার আমাকে ফোন দেওয়ারও চেষ্টা করবে না।
বলেই সে গটগট করে রুম থেকে বের হয়ে গেলো তারপর বাসা থেকে বের হয়ে গাড়ি নিয়ে চলে যায়।
আর এখানে প্রহেলী অবাক হয়ে বসে আছে সে তো এভাবেই প্রশ্নটা করেছিল এতে রেগে কেন গেল পরশ?
প্রহেলীর এখন খারাপ লাগছে মানুষটা না খেয়েই চলে গেলো।
নয়না আজ শাড়ি পরেছি এ কয়েকদিনে প্রলয়ের সাথে তার সম্পর্কটা গভীর হয়ে গেছে।আজ নয়না প্রলয়কে সারপ্রাইজ দিবে তাই তো সে শাড়ি পরে রেডি হয়েছে।পুরো ঘর সাজিয়েছে প্রলয়ের পছন্দের খাবার রান্না করেছে সে নয়না তৈরি হয়ে প্রলয়ের জন্য অপেক্ষা করছে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো রাতঃ৯টা প্রলয় কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসবে।
তখনই কলিংবেল বেজে উঠলো নয়না দরজা খুলে দিতেই দেখতে পেলো প্রলয় দাড়িয়ে আছে। প্রলয় নয়নাকে দেখে অনেকটাই অবাক হয়েছে পরনে শাড়ি খোঁপায় বেলীফুলের মালা তাকে দেখতে অপরূপ লাগছে।
নয়না মুচকি হেসে বললো,
~কী দেখছেন?
প্রলয়ের ভাবনা সেখানেই শেষ হলো সে বললো,
~কিছু না।
বলেই সে ভিতরে প্রবেশ করলো নয়না পানি এনে তার হাতে দিলো প্রলয় পানি পান করে বললো,
~কালকে আমরা পরশদের বাসায় যাবো।
নয়না মাথা দুলালো প্রলয় উঠে দাড়ালো রুমে যাওয়ার জন্য নয়নাও তার পিছে পিছে চলে আসলো।প্রলয় রুমে ডুকতেই তার মুখ হা হয়ে গেলো সে একবার নয়নার দিকে তাকালো নয়না হেসে প্রলয়ের গলা জড়িয়ে ধরে বললো,
~কেমন হয়েছে সব আমি নিজ হাতে করেছি।
প্রলয় নয়নার কোমড় জড়িয়ে ধরে বললো,
~আমার জন্য করেছো এসব?
নয়না বললো,
~নাহ পাশের বাসার করিমের জন্য করেছি।
প্রলয় নয়নার কোমড় আরো শক্ত করে ধরে বললো,
~এতো সাহস তোমার নেই।
নয়না ফিক করে হেসে বললো,
~ফ্রেশ হয়ে আসেন খাবার সার্ভ করছি।
প্রলয় আচমকা নয়নাকে কোলে তুলে নিলো এতে নয়না অবাক হয়ে বললো,
~কী করছেন নিচে নামান।
প্রলয় বাঁকা হেসে বললো,
~আজ তোমায় ছাড়ছি না সুন্দরী।
বলেই সে নয়নাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে তার ঘাড়ে মুখ গুজে বললো,
~আজ তোমার মাঝে বিলীন হতে চাই আমাকে সেই অনুমতি দিবে।
নয়না আবেশে প্রলয়ের শার্টের কলার চেপে ধরলো দুজন ভালোবাসার জগতে চলে গেলো যেখানে কোনো বাধা নেই।এই জীবনে তারা একসাথে পথ চলার প্রতিজ্ঞা করে ফেলেছে দুটি প্রাণ এখন মিলিত হয়ে এই ধরনীতে সুন্দর এক ভুবন তৈরি করবে।

_________________

পরশ বাসায় ফিরে রাত ২টায় সে অনেকটাই রেগে ছিল এখন সে ঠান্ডা হয়েছে।রুমে ডুকেই দেখলো প্রহেলী গালে হাত দিয়ে শুয়ে আছে পরশের মায়া লাগলো সে ধীর পায়ে গিয়ে প্রহেলীকে কোলে তুলে নিলো প্রহেলী পিট পিট করে চোখ খুলে পরশকে দেখে বললো,
~আপনি এসেছেন প্লিজ আমার সাথে রাগ করবেন না আমি ওসব আর বলবো না।
পরশ প্রহেলীকে বিছানায় বসিয়ে বললো,
~আর কোনোদিন এসব বলবেনা।
প্রহেলী পরশকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~খেয়েছেন?
পরশ বললো,
~নাহ
প্রহেলী বললো,
~চলেন টেবিলে খাবার রাখা আছে খেয়ে নিবেন।
পরশ ফ্রেশ হয়ে আসলে তারা একসাথে খাবার খেয়ে
শুয়ে পরে প্রহেলী পরশের বুকে মাথা রেখে বললো,
~আমি আপনাকে ভীষন ভালোবাসি।
পরশ প্রহেলীর কপালে তার ওষ্ঠজোড়া ছুইয়ে দিয়ে বললো,
~সারাজীবন তোমায় ভালোবাসতে চাই।
সকালের এক ফালি রোদ নয়নার মুখে পরতেই সে ঘুম
থেকে উঠে পরে।প্রলয় তাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে সে হালকা হেসে প্রলয়কে ছাড়িয়ে উঠে পরলো।ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে চলে গেলো নাস্তা তৈরি করছে তখনই প্রলয় তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে বললো,
~আমাকে রেখে চলে আসলে কেন?
নয়না বললো,
~কাজ করছি আপনি যান ফ্রেশ হয়ে নিন।
প্রলয় নয়নার কাঁধে থুতনি রেখে বললো,
~তোমাকে ছাড়া ভালো লাগে না।
নয়না বললো,
~সকাল ১০টা বাজে আপনার মিটিং আছে আজকে মনে আছে।
প্রলয় বললো,
~হুম মনে আছে।
বলেই সে ফট করে নয়নার গালে চুমো খেয়ে চলে গেলো নয়না কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো তারপর একটা হাসি দিয়ে আবার কাজ করতে শুরু করলো।
ভালোবাসাময় দিন গুলো এভাবেই কাটতে লাগলো প্রলয়,নয়না,পরশ,প্রহেলী নিজ জীবনে খুশিতে কাটাতে লাগলো।পরিবার নিয়ে তারা সুখে আছে কিন্তু আজ সবার মনেই ভয় কাজ করছে কারণ

_____________

আজ প্রহেলীর ডেলিভারি সবাই কড়িডোরে অপেক্ষা করছে।পরশ চিন্তায় পায়চারি করছে প্রলয় তাকে সামলিয়ে রাখছে নয়না বোনের জন্য দোয়া করছে আমরুল সিকদার অনেকটাই চিন্তিত আমেনা সিকদার দোয়ায় ব্যস্ত।পরশ বললো,
~আমার অনেক চিন্তা হচ্ছে প্রলয়।
প্রলয় বললো,
~কোনো চিন্তা করবি না সব ঠিক হয়ে যাবে।
বেশকিছুক্ষন পর ডাক্তার বের হয়ে বললো,
~Congratulation.ছেলে হয়েছে আর মাও ঠিক আছে
পরশ খুশিতে কান্না করে দিলো প্রলয় পরশকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~দোস্ত তোর রাজকুমার এসেছে।
সবাই খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলো ছেলেকে এনে বাবার হাতে দিলো পরশ তার কপালে চুমো খেয়ে বললো,
~আমার সরফরাজ এসেছে।
বিকেলবেলা প্রহেলীকে নিয়ে সবাই বাসায় এসে পরলো বাবুকে নিয়ে সবাই ব্যস্ত নয়না তো বাবুকে ছাড়ছেই না।প্রহেলী নয়নাকে ডেকে বললো,
~তোর কী আজকেও বমি হয়েছিল?
নয়না বললো,
~হুম।
প্রহেলী আলতো হেসে নয়নার হাতে একটা জিনিস দিয়ে দিলো নয়না বললো,
~pregnence kit?
প্রহেলী বললো,
~হুম
রাতে প্রহেলী বাবুকে নিয়ে বসে আছে পরশ রুমে ডুকেই বাবুর কাছে বসে বললো,
~আমার সরফরাজ কী করছে?
প্রহেলী বললো,
~ঘুমায়।
পরশ প্রহেলীর কপালে ঠোঁট ছুইয়ে বললো,
~ধন্যবাদ আমার #মনের_অন্তরালে এতো সুন্দর ঘর তৈরি করার জন্য।
প্রহেলী হেসে পরশের কাঁধে মাথা রেখে জানালা দিয়ে সেই পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে লাগলো।
নয়না ভয়ে ভয়ে প্রলয়ের কাছে গেলো আর হাতে থাকা জিনিসটা প্রলয়ের সামনে রেখে বললো,
~আমি প্রেগন্যান্ট।
প্রলয় ভ্রুকুচকে বললো,
~তুমি কী?
নয়না বললো,
~যা শুনেছেন তাই।
প্রলয় একবার প্রেগ্ন্যাসির কীটের দিকে তাকালো আসলেই নয়না সত্যি বলছে।নয়না বললো,
~এতে আমার কোনো দোষ নেই যা দোষ আপনার।
নয়নার কোথায় প্রলয় হো হো করে হেসে উঠলো তারপর নয়নাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~অবশ্যই আমারই দোষ।
রাতের অন্ধকারে পূর্নিমার চাঁদের আলো নয়নার মুখে পরছে প্রলয় অতি আদরে প্রেয়সীকে নিয়ে চাঁদ দেখছে।নয়না ঘুমের দেশে চলে গেছে প্রলয় নয়নার ঠোঁট তার ওষ্ঠজোড়া ছুইয়ে বললো,
~#মনের_অন্তরালে শুধু তোমারই বসবাস।

সমাপ্ত।

(গল্পটি এখানেই সমাপ্তি করা হলো তারা সুখে থাকুক তাদের রাজ্যে।আবারো ফিরে আসবো নতুন গল্প নিয়ে ততদিন পর্যন্ত ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।আল্লাহ হাফেজ 💙💙)

(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading 🤗🤗)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে