#গল্পের_নাম_মনের_অন্তরালে
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ১৯
নয়না অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে পুরো ছাদ সুন্দর করে সাজানো পুরো পরিবার একসাথে দাড়িয়ে আছে।নয়নার মনটা একদম ভালো হয়ে গেলো প্রীতি এগিয়ে এসে নয়নার হাত ধরে বললো,
~ভাবি,আমি তোমার একমাত্র ননদীনি।কিন্তু তুমি তো আমার থেকে অনেক ছোট।
নয়না অবাক চোখে একবার প্রলয়ের দিকে তাকালো প্রলয় চোখের ইশারায় তাকে বুঝিয়ে দিলো।নয়না বললো,
~কেমন আছো আপু?
প্রীতি বললো,
~ভালো।
প্রলয় নয়নার জন্য একটা চেয়ার নিয়ে আসলো নয়নাকে সেটায় বসিয়ে দিয়ে বললো,
~এখান থেকে উঠবেনা কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে আমাকে জানাবে।
নয়না বললো,
~ঠিক আছে।
প্রহেলী এগিয়ে এসে বললো,
~সবাই এসে পরেছে আমি খাবার সার্ভ করছি।
পরশ বললো,
~হুমম খাবার ঠান্ডা হয়ে যাবে।
অনেকদিনপর সবাই একসাথে খেতে বসেছে প্রহেলী সবাইকে খাবার সার্ভ করে দিতে ব্যস্ত তাই পরশ প্লেটে খাবার নিয়ে প্রহেলীকে একজায়গায় বসিয়ে খাবার খাইয়ে দিতে লাগলে।প্রহেলী বললো,
~কী করছেন?এতো কাজ এখনো বাকি আছে আর আপনি এসব নিয়ে বসে আছেন।
পরশ বললো,
~পুরো খাবার শেষ করে তারপর কাজ করবে।
পরশের কাছে হার মেনে প্রহেলী সব খাবার খেয়ে নিলো।খাবার শেষ করতেই প্রহেলীর বমি এসে পরলো সে দৌড়ে নিচে চলে আসলো তারপর ওয়াশরুমে গিয়ে হরহর করে বমি করে দিলো।পরশও তার পিছে পিছে চলে আসলো প্রহেলীকে এভাবে বমি করতে দেখে পরশ অনেকটাই ঘাবড়ে গেলো সে প্রহেলীকে ধরে বিছানায় বসিয়ে দিলো প্রহেলীর মুখ মুছে দিয়ে বললো,
~কী হয়েছে তোমার শরীর কী খারাপ লাগছে?
প্রহেলী বললো,
~কেন যে এমন হলো বুঝলাম না শরীরটাও খারাপ লাগছে।
পরশ বললো,
~তুমি শুয়ে পরো আর খবরদার যদি বিছানা ছেড়ে উঠেছে তো।
প্রহেলী বললো,
~আচ্ছা ঠিক আছে।
প্রলয় প্রহেলীকে শুইয়ে দিয়ে রুমের বাহিরে চলে আসে তার মুখে চিন্তার ছাপ।ছাদে এসে সে এক জায়গায় দাড়িয়ে রইলো তখনই প্রলয় এসে বললো,
~কী হয়েছে তোর?
পরশ বললো,
~প্রহেলীর,শরীরটা ভালো না বমি করে অস্থির হয়ে পরেছে।
প্রলয় বললো,
~ডক্টরকে ফোন করবো?
পরশ বললো,
~এসব শেষ করে আমি নিয়ে যাবো।
প্রলয় বললো,
~চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে।
_________________
সব আয়োজন শেষে সবাই রুমে চলে গেলো নয়না প্রহেলীর কাছে যাওয়ার বায়না ধরলে প্রলয় তাকে প্রহেলীর রুমে নিয়ে যায়।নয়না প্রহেলীর কাছে বসে বললো,
~আপু তোমার কী অনেক খারাপ লাগছে?
প্রহেলী মুচকি হাসি দিয়ে বললো,
~এখন ভালো আছি।
নয়না বললো,
~বড় মা তোমার জন্য কতো টেনশন করছে।
তখনই ঘরে প্রবেশ করলো আমেনা সিকদার আর রুমানা তালুকদার তাদের দেখে প্রহেলী উঠে বসলো রুমানা তালুকদার বললেন,
~কী হয়েছে মা তোমার?
প্রহেলী বললো,
~বমি হয়েছে মা গত ২দিন ধরেই শুধু বমি বমি লাগে।
রুমানা তালুকদার হালকা হেসে বললো,
~আজই ডাক্তারের কাছে যাবে।
আমেনা সিকদার বললেন,
~তুই কিছু খাবি মা?
প্রহেলী বললো,
~না মা।কিছু খাবো না
রুমানা তালুকদার আর আমেনা সিকদার রুম থেকে চলে যেতেই নয়না বললো,
~তাদের এতো খুশি খুশি দেখাচ্ছে কেন?
প্রহেলী বললো,
~কী জানি তুই মেডিসিন নিয়েছিস?
নয়না বললো,
~হ্যাঁ নিয়েছি।
প্রহেলী আলতো হেসে নয়নার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।পরশ প্রহেলীকে নিয়ে বসে আছে ডাক্তারের সামনে ডাক্তার প্রহেলীর সব সমস্যা শুনে কিছু টেস্ট দিয়ে দিলো।পরশ জিজ্ঞেস করলো,
~ডক্টর প্রহেলী ঠিক আছে তো?
ডাক্তার মুচকি হেসে বললেন,
~উনি ঠিক আছেন এই টেস্ট গুলো করিয়ে আমার কাছে নিয়ে আসবেন।
প্রহেলী একবার ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে বললো,
~আমি যা ভাবছি তা কী সঠিক?
ডাক্তার হেসে বললো,
~টেস্ট গুলো করিয়ে সিউর হয়ে নিন।
পরশ বললো,
~আমি কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছিনা প্রহেলী কী হয়েছে তোমার?
প্রহেলী মুখ টিপে হেসে বললো,
~আমি কী জানি নাকি টেস্ট করালে বুঝা যাবে।
পরশ বললো,
~আমার অনেক ভয় করছে।
ডাক্তার বললেন,
~আগামীকাল চলে আসবেন।
পরশ প্রহেলীকে নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো তার মুখে এখনো চিন্তার ছাপ।প্রহেলী গুনগুন করে গান গাইছে এতে পরশের রাগ লাগছে তবুও সে চুপ হঠাৎ প্রহেলী জোরে বলে উঠলো,
~আমি হাওয়াই মিঠাই খাবো।নিয়ে আসেন
পরশ বললো,
~তোমার শরীর ঠিক নেই এসব খেতে হবে না।
প্রহেলী বললো,
~যাবো না আমি বাসায় আপনি গাড়ি থামান।
পরশ বললো,
~আচ্ছা ঠিক আছে এনে দিচ্ছি।
___________________
নয়না শুয়ে আছে তার ঠিক অপরপাশে প্রলয় শুয়ে আছে।প্রলয় দুরত্ব বজায় রেখে শুয়ে আছে তা দেখে নয়না প্রলয়ের একটু কাছে গিয়ে তার বুকে মাথা রেখে শুয়ে পরলো।প্রলয় চোখ খুলে নয়নাকে নিজের এতোটা কাছে দেখে অবাক হলো কিন্তু কিছুই বললো না।
নয়না বললো,
~জড়িয়ে ধরতে ট্যাক্স লাগে না।
প্রলয় মুচকি হেসে নয়নাকে জড়িয়ে ধরলো নয়না বললো,
~আমি সুস্থ হয়ে উঠলে পূর্ণিমা রাতে আমরা চাঁদ দেখবো আর বৃষ্টিতে ভিজবো।আপনি কিন্তু মানা করবেন না আমার অনেক ইচ্ছা আর আমার ইচ্ছা আপনাকে পূরণ করতে হবে।
প্রলয় বললো,
~কেন পূরণ করবো?
নয়না কপট রাগ দেখিয়ে বললো,
~থাক আপনার পূরণ করতে হবে না কোচিংয়ে আমার যে ছেলে ফ্রেন্ডটা আছে সেই পূরণ করে দিবে।
প্রলয় বললো,
~খবরদার ওই বাদরটার কথা মুখে নিয়েছে তো।
নয়না প্রলয়ের দিকে মুখ উঠিয়ে বললো,
~তাহলে উল্টো কথা কেন বলেন?
প্রলয় নয়নার নাক টেনে বললো,
~আর বলবো না হয়েছে।
নয়না বললো,
~good boy.
নয়না আবারো প্রলয়ের বুকে মাথা রেখে চোখ বুঝে নিলো দুজনই পরম সুখে ঘুমের জগতে চলে গেলো।
পরেরদিন সকালে প্রীতি আর তার বর বের হয়ে গেলো এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রাসেলের অনেক জরুরি কাজ পরেছে তাই চলে যেতে হবে।প্রীতি সবার থেকে বিদায় নিয়ে বের হয়ে পরলো পরশ রুমে এসে প্রহেলীকে বললো,
~রেডি হও ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
প্রহেলী বললো,
~বোরখাটা পরে নেই।
পরশ বললো,
~ঠিক আছে।
প্রহেলী রেডি হতেই তারা বের হয়ে পরলো নয়না আর প্রলয়ও আজ তাদের সাথে যাচ্ছে।নয়নার রিপোর্ট আজ ডাক্তার দেখবে তাই হাসপাতাল পৌছে পরশ আর প্রহেলী রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তারের কাছে চলে আসলো।ডাক্তার রিপোর্ট দেখে বললো,
~Congratulation প্রহেলী।আপনি মা হতে চলেছেন
প্রহেলী বললো,
~টেস্ট দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম আর মাও বলেছিল।
পরশ এখনো স্তব্ধ হয়ে বসে আছে প্রহেলী বললো,
~এই যে শুনতে পেরেছেন আপনি?
প্রহেলীর কথায় পরশের ঘোর কাটে সে বললো,
~ধন্যবাদ ডক্টর। প্রহেলী চলো বাসায়
নয়না আর প্রলয় ডক্টর দেখিয়ে অপেক্ষা করছে পরশদের জন্য। পরশ আর প্রহেলী আসতেই নয়না জিজ্ঞেস করলো,
~সব ঠিক আছে?
প্রহেলী বললো,
~সব ঠিক আছে বাসায় চল সবাইকে একটা কথা বলতে হবে।
পরশ বললো,
~প্রলয় আমার সাথে চল প্রহেলী তোমরা বাসায় যাও আমরা আসছি।
প্রহেলী বললো,
~আপনারা কোথায় যাচ্ছেন?
পরশ বললো,
~আমরা এসে পরবো তাড়াতাড়ি তোমরা বাসায় চলে যাও।
_______________
নয়না আর প্রহেলী বাসায় পৌছে সবাইকে একত্রিত করলো তারপর প্রহেলী বললো,
~অনেক তাড়াতাড়ি একটা ছোট্ট মেহমান আসছে আমার জীবনে সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।
সবাই খুশিতে আত্মহারা হয়ে পরলো নয়না প্রহেলীকে জড়িয়ে ধরলো সবাই খুশি হয়ে প্রহেলীকে দোয়া দিতে লাগলো।শুধু আমরুল সিকদারের চোখ ছলছল করছে তার মেয়ে যে এতো বড় হয়ে গেছে এখন যে নিজে মা হতে চলেছে।আমরুল সিকদার চোখের পানি মুছে প্রহেলীর কাছে গিয়ে বললো,
~আল্লাহ তোমাকে সকল সুখ দান করুক।
তখনই পরশ পিছন থেকে বলে উঠলো,
চলবে
(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন। ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading 🤗🤗)