মনের অন্তরালে পর্ব-১০

0
1087

#গল্পের_নাম_মনের_অন্তরালে
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ১০

প্রলয় ফিসফিস করে বললো,
~তোর সারপ্রাইজটা রেডি হয়েছে প্রহেলীর জন্য?
পরশ মুচকি হেসে বললো,
~সব রেডি আছে।
প্রলয় বললো,
~এবার প্রহেলীর birthday টা আমরা অনেক সুন্দর ভাবে উদযাপন করবো।
পরশ বললো,
~অবশ্যই।
নয়না তাদের দুজনকে ফিসফিস করতে দেখে বললো,
~আপনারা কী নিয়ে কথা বলছেন?
নয়নার সন্দিহান কথা শুনে প্রলয় বললো,
~Girlfriend এর ব্যাপারে কথা বলছি।
প্রহেলী ভ্রুকুচকে বললো,
~পরশ,এগুলো কী শুনছি আমি?
পরশ বললো,
~প্রহেলী,এই গাধার কথা শুনো না সব সময় উল্টো কথা।
শেষের কথাটা প্রলয়ের দিকে কটমট করে বললো।প্রলয় বললো,
~দুই বন্ধুর কথা চলছে তার মাঝখানে কেন কথা বললো?
নয়না বললো,
~এতো খেপছেন কেন?এমন মনে হচ্ছে চোর চুরি করে ধরা পরেছে।
প্রলয় পরশের দিকে তাকিয়ে বললো,
~গাড়িটা থামা তোর শালীকে এখানেই নামিয়ে দিবো।
প্রহেলী ধমকে উঠে বললো,
~এসব কথা একদম বন্ধ যে যার কাজ করো।
প্রহেলীর ধমক শুনে সবাই চুপ হয়ে বসে রইলো আর কোনো কথা তাদের মধ্যে হলোনা।
দুপুরের দিকে তারা পৌছে গেলো কক্সবাজার প্রলয় আগে থেকেই হোটেলে রুম বুক করে রেখেছিল বিধায় কোনো সমস্যা হয়নি।গাড়ি থেকে নেমে তারা হোটেলে প্রবেশ করতেই একজন সুদর্শন যুবক তাদেরকে স্বাগত জানিয়ে বললো,
~স্যার,আমার নাম মামুন।আপনাদের কী আগে থেকেই রুম বুক করা আছে?
প্রলয় বললো,
~জ্বী মামুন সাহেব।দুটি রুম বুক করা হয়েছে অনলাইনে।
মামুন বললো,
~আমি একটু চেক করে নিচ্ছি।
মামুন সবকিছু চেক করে দুটো চাবি প্রলয়ের কাছে দিয়ে বললো,
~স্যার আপনাদের রুমের চাবি।
প্রলয় বললো,
~ধন্যবাদ।দুটো রুম একসাথে তো?
মামুন বললো,
~জ্বী স্যার।আপনাদের ভ্রমণ শুভ হোক
প্রলয় বললো,
~ধন্যবাদ।
প্রলয় চাবি হাতে নিয়ে পরশের কাছে গিয়ে একটা চাবি পরশকে দিয়ে বললো,
~তোদের রুমের চাবি।
পরশ বললো,
~আচ্ছা তাহলে আমরা ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে একসাথে lunch টা করি।
প্রলয় বললো,
~অবশ্যই।
অতপর তারা রুমে চলে গেলো নয়নার অনেক অস্বস্তি লাগছে।একই রুমে এখন সবকিছু প্রলয়ের বাসায় তো প্রলয় আলাদা রুম ব্যবহার করছে রাতে শুধু প্রলয় নয়নার রুমের সোফায় ঘুমিয়েছে।
প্রলয় ওয়াশরুমে আছে এই সুযোগে নয়না লাগেজ থেকে কাপড় নিয়ে চলে গেলো প্রহেলীর কাছে।
প্রহেলীর রুমের দরজায় টোকা দিতেই পরশ দরজা খুলে দিলো নয়নাকে দেখে বললো,
~তুমি এখানে?

______________

নয়না পরশকে ঠেলে রুমের ভিতর প্রবেশ করে বললো,
~আপনার ওই জংগলি বন্ধুর সাথে আমি থাকবোনা।আপনি ব্যাগ গুছিয়ে তার কাছে চলে যান।
পরশ হতবিহ্বল হয়ে গেলো সে মনে মনে ভাবলো,
~হানিমুনে এসে কী বন্ধুর সাথে থাকবো বউকে রেখে?এ কেমন অবিচার?
খট করে ওয়াশরুমের দরজা খোলার আওয়াজ আসলো নয়না ঘুরে তাকিয়ে দেখলো প্রহেলী শাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে।নয়না প্রহেলীকে দেখে বললো,
~আপু একদম ঠিক সময়ে বের হয়েছিস আমি শাওয়ার নিবো। সাইড দাও তো
বলেই সে ওয়াশরুমে চলে গেলো প্রহেলী পরশের দিকল তাকিয়ে বললো,
~কী হয়েছে?
পরশ বললো,
~তোমার বোন এ রুমে থাকবে প্রলয়ের সাথে আমাকে থাকতে হবে।
প্রহেলী হেসে বললো,
~এমন কিছুই হবে না আমি নয়নাকল বুঝিয়ে বলবো।
পরশ কাপড় নিয়ে বললো,
~বুঝাতে থাকে আমি প্রলয়ের রুমে যাচ্ছি।
বলেই পরশ চলে গেলো প্রহেলী দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চুল মুছতে লাগলো।
পরশ প্রলয়ের রুমের দরজা খোলা পেয়ে ঢুকে পরলো প্রলয় পরশকে দেখে বললো,
~আমার বউ কী তোর রুমে হামলা করেছে?
পরশ বললো,
~হ্যাঁ।তোর বউ তোর সাথে থাকতে চায় না তাতে আমার বউকে কেন আমার থেকে দূর করছে?
প্রলয় বললো,
~বলছি এমন কিছুই হবে না নয়নাকে এখানে নিয়ে আসবো।
পরশ বললো,
~দেখা যাবে নে।
পরশ আর প্রলয় ফ্রেশ হয়ে প্রহেলী আর নয়নাকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে যেতে লাগলো।প্রহেলী হাত পরশ শক্ত করে ধরে আগে আগে হাঁটতে লাগলো পিছনে নয়নার হাত ধরে রেখে প্রলয় বলছে,
~তুমি ওদের রুমে কেন গিয়েছো?নতুম নতুন বিয়ে হয়েছে ওদের এরকম কোনো দিন করবে না।
নয়না বললো,
~আপনার মতো রাক্ষসের সাথে আমি থাকবো না।
প্রলয় শান্ত কন্ঠে বললো,
~নয়না,প্রহলী কোনোদিন এতো শান্তিময় পরিবেশ পাইনি নিজের জন্য ভাবার সময় পাইনি এখন যেহেতু সে নিজের ভালোবাসার মানুষটির হাত ধরে কিছু সময় থাকতে চায় তাহলে কী অন্যায় হয়ে যাবে।
প্রলয়ের প্রতিটি কথা নয়নার বুকে তীরের মতো লাগলো সে ভাবতে লাগলো,
~আসলেই আপু তো কখনো নিজের কথা ভাবিনি।আমি আপুর এই সুখময় অনুভূতি নষ্ট করবো না আর আমার সম্পর্কটাও তো ঠিক করতে হবে সারাজীবন তো আর এভাবেই থাকতে পারবো না।
নয়না বললো,
~হুম ঠিক আছে আমি আপনার কথা বুঝতে পেরেছি।
প্রলয় মুচকি হেসে বললো,
~Good girl.আইসক্রিম খাবে?
নয়না খুশি হয়ে বললো,
~অবশ্যই।
প্রলয় নয়নার হাত ধরে সামনে আগাতে লাগলো হয়তো তাদের নতুন জীবনটা শুরু হতে যাচ্ছে।

_______________

পরশ প্রহেলীকে নিয়ে রেস্টুরেন্টের ভিতরে চলে আসলো প্রহেলী বললো,
~নয়না আর প্রলয়?
তখনই নয়না বললো,
~আমরা এখানে আপু।
প্রহেলী তাকিয়ে দেখলো নয়না আর প্রলয় একই সাথে দাড়িয়ে আছে তা দেখে প্রহেলীর মনটা খুশি হয়ে গেলো তারা যে নিজের সম্পর্কটাকে এগিয়ে নিচ্ছে এটাই অনেক।
সবাই এক টেবিলে বসে পরলো তারপর খাবার অর্ডার করে দিলো কিছুক্ষন পর খাবার চলে আসতেই সবাই খাওয়া-দাওয়া করে নিলো।তারপর প্রলয় বললো,
~এখন রুমে গিয়ে রেস্ট নিয়ে বিকেলে সমুদ্র দেখতে বের হবো।
পরশ বললো,
~আচ্ছা।চল
নয়না বললো,
~দুলাভাই আপনি আপুর সাথেই থাকেন আমি ওনার সাথে যাই।
বলেই নয়না আর প্রলয় তাদের রুমর দিকে চলে গেলো।পরশ একটু অবাক হলেও পরক্ষনেই মুখে হাসি ফুটে উঠলো নিজ রুমে চলে গেলো পরশ।প্রহেলী বারান্দায় দাড়িয়ে কক্সবাজারের মনোরম পরিবেশ দেখতে ব্যস্ত হঠাৎ পরশ এসে তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো প্রহেলী বললো,
~এতো ভালোবাসা কেন আজ?
পরশ বললো,
~আমার তো সবসময় তোমাকে ভালোবাসতে মন চায়।
প্রহেলী বললো,
~দেখেন প্রকৃতির দৃশ্যটা কতো সুন্দর লাগছে।বাতাসটা কতোটা শীতল
পরশ আরো নিবিড়ভাবে প্রহেলীকে জড়িয়ল ধরে বললো,
~এই শীতলময় পরিবেশে তোমাকে আরো কাছে পেতে মন চায়।
প্রহেলী বললো,
~কবি হলেন কবে থেকে?
পরশ বললো,
~তোমার প্রেমে পড়ার পর থেকেই তো কবি হয়ে গেলাম।
প্রহেলী বললো,
~তাই নাকি তা এতোদিন তো শুনিনি।
পরশ বললো,
~বউ টা যে পাশে ছিল না তাই।
প্রহেলী বললো,
~একটা কথা সত্যি করে বলবেন?
পরশ প্রহেলীর গলায় মুখ গুজে বললো,
~কোন কথা?
প্রহেলী বললো,
~বাবার সাথে কী কথা হয়েছিল বিয়ের আগে আপনার?
পরশ প্রহেলীর গলা থেকে মুখ উঠিয়ে তাকে ছেড়ে দিয়ে বললো,
~আমি তোমার কথা বুঝতে পারছিনা।
প্রহেলী হালকা হেসে বললো,
~থাক কিছু কথা বুঝতে হবে না সময় আসলে বুঝে নিবেন।
প্রহেলীর আকাশের দিকে নয়নযুগল তুলে তাকালো পরশ সেই চেহারার দিকে তাকিয়ে রইলো।

___________

প্রলয় বারান্দায় দাড়িয়ে আছে রুমের ভিতরে নয়না বিছানায় ঘুমিয়ে পরেছে।এতো পথ জার্নি করে এসেছে তাই সে ক্লান্ত প্রলয় রুমের ভিতরে চলে আসলো।নয়নার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে প্রলয় মুচকি হেসে তার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বললো,
~তোমার এই মাসুম মুখ টাকে দেখেই তো আমার কঠোর মনটা নরম হয়েছে।তুমি যদি আমার জীবনে না আসতে তাহলে কখনো হয়তো এই একাকী জীবন থেকে বের হতে পারতাম না।
প্রলয় নয়নার কপালে ঠোঁট ছুইয়প দিলো তখনই নয়না আধো আধো চোখ খুলে দেখলো প্রলয় তার অনেক কাছে।নয়না চিৎকার করতে যাবে তখনই প্রলয় তার মুখ চেপে ধরে বললো,
~খবরদার গলার স্বর যদি উঁচু করেছো চিৎকার করার মতো কোনো কাজ আমি করিনি।
বলেই সে নয়নার মুখ ছেড়ে দিলো নয়না জোরে জোরে নিশ্বাস নিয়ে বললো,
~রাক্ষস কোথাকার।
প্রলয় বললো,
~রেডি হয়ে নেও আমরা সমুদ্র দেখতে যাবে।
তারা ৪জনই রেডি হয়ে বের হয়ে গেলো পরশের মনটা খারাপ কিন্তু সে সেটা বুঝতে দিচ্ছে না।যাওয়ার আগে পরশ প্রহেলীর birthday এর সব কিছু ঠিকঠাক করে গেলো।রাত ১২টায় প্রহেলীকে সারপ্রাইজ দেওয়া হবে
তারা তাদের গন্তব্যে পৌছে গেলো নয়না তো সমুদ্র দেখতে পেয়ে তাতে ঝাপিয়ে পরে প্রলয় তার আশে পাশে থাকছে।আর প্রহেলী পরশের কাঁধে মাথা রেখে এক নজরে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে।পরশ বললো,
~সমুদ্রের শব্দ কতোটা সুন্দর।
প্রহেলী বললো,
~মনের ভিতর প্রশান্তি বয়ে আনছে।
পরশ বললো,
~এই বিশাল সমুদ্রের সামনে একটা বলছি তোমায় ভালোবাসি প্রিয়।
প্রহেলী বললো,
~ভালোবাসি আপনাকে।
প্রলয় আর নয়না একপাশে দাড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখছে নয়না নিজের অজান্তেই প্রলয়ের হাত ধরে ফেললো।
তা অনুভব করতে পেরে প্রলয় মুচকি হেসে আকাশপাণে তাকিয়ে রইলো।

চলবে

(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading🤗🤗)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে