#গল্পের_নাম_মনের_অন্তরালে
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ৯
প্রলয় এক হাত দিয়ে নয়নাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অন্যহাতে পিস্তলটা মাহিনের দিকে তাঁক করে বললো,
~তো কী বলছিলেন আপনি আরেকবার বলুন তো?
মাহিন শুকনো ঢোক গিলে বললো,
~দেখেন ভাই,আমার বোন অনেক ছোট আর আপনার তুলনায় তো আরো ছোট প্লিজ একটু বোঝার চেষ্টা করুন।
প্রলয় বাঁকা হেসে বললো,
~আমার কোনো সমস্যা নেই পিচ্চি বউ লালন-পালন করতে।
প্রহেলী বললো,
~প্রলয়,একটু বোঝার চেষ্টা করুন।দেখুন নয়না কীভাবে কাঁদছে আপনার কী খারাপ লাগছেনা তা দেখে।
প্রলয় একবার নয়নার দিকে তাকিয়ে দেখলো আসলেই সে কাঁদছে তা দেখে প্রলয়ের একটু খারাপ লাগলো কিন্তু নিজেকে সামলে বললো,
~বিয়ে হওয়ার পর আর কাঁদতে দিবো না।
পরশ বললো,
~প্রলয় অনেক হয়েছে এখন ঠান্ডা হয়ে আমাদের কথা শোন।নয়নার বাবা বাসায় নেই এখন এসব করে লাভ নেই।
প্রলয় বললো,
~২ঘন্টা পর আমার বাসায় চলে আসিস।
বলেই সে নয়নাকে নিয়ে হনহন করে বাসার বাহিরে চলে আসলো। নয়নাকে গাড়ির ভিতর বসিয়ে দিলো নয়না বললো,
~একটু বোঝার চেষ্টা করেন বাবা জানতে পারলে অনেক রাগ করবে।প্লিজ আমাকে যেতে দিন।
প্রলয় গাড়িতে বসে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বললো,
~সুযোগ দিয়েছিলাম কেউ মানে নি আমিও এখন মানবো না।
বলেই সে গাড়ি ড্রাইভ করতে শুরু করলো নয়না জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো।
প্রহেলী এখনও স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছে মাহিন আমরুল সিকদারকে ফোন করতে গিয়েছে মারিয়া সিকদার কান্না করছে।আমেনা আর জামিলা সিকদার তাকে সামলাচ্ছে রাবেয়া সিকদার আর সায়েম দাড়িয়ল আছে তাদের মনেও নানান কথা ঘুরছে।
পরশ বললো,
~আপনারা চিন্তা করবেনা না প্রলয় নয়নাকে কোনো ক্ষতি করবেনা।
প্রহেলী বললো,
~তা আমরা জানি পরশ কিন্তু বাবা তা বুঝবে?
রুমানা তালুকদার মারিয়া সিকদারের কাছে গিয়ে বললেন,
~আপা,আমার ছেলেটা অনেক ভালো সে কোনো উল্টাপাল্টা কাজ করবে না বিশ্বাস রাখেন।
মারিয়া সিকদার কিছু বলছেন না শুধু কান্না করছেন।
একটু পর আমরুল সিকদার বাসায় এসে হাজির হয়েই হন্তদন্ত হয়ে প্রহেলীর কাছে চলে আসলেন আর বললেন,
~আমার মেয়ে কোথায়?প্রহেলী।তোমার স্বামীকে জিজ্ঞেস করো তার বন্ধু আমার মেয়েকে কোথায় নিয়ে গেছে?
প্রহেলী বললো,
~বাবা,প্রলয় কিছু করবেনা নয়নার সাথে প্রলয় ওকে ভালোবাসে আর পরশ খোজ নিচ্ছে।
আমরুল সিকদার ধপ করে সোফায় বসে পরলেন মারিয়া সিকদার তার পাশে এসে তাকে সামলাতে লাগলেন।
পরশ গাড়ি নিয়ে বের হয়েছে প্রলয়ের খোজে এতোটা টেনশনে ফেলে দিয়েছে প্রলয় তাকে।পরশ রাস্তার পাশে গাড়ি থামিয়ে আশেপাশে খোজ করছে কিন্তু কোনো খবর পাচ্ছে না।প্রলয় অনেক বুদ্ধিমান ছেলে কাঁচা খেলা সে খেলবেনা এটাতো সে জানে।পরশ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে গাড়িতে বসতেই ফোন বেজে উঠলো তার পকেট থেকে ফোন বের করে দেখলো প্রলয় ফোন করেছে।
পরশ ফোন রিসিভ করে কানে ধরে বললো,
~কোথায় তুই?বাসায় চলে আয়।
প্রলয় বললো,
~বিয়ে হয়ে গেছে তোরা আমার বাসায় এসে পর।
পরশের মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো সে বললো,
~তুই কী করেছিস নিজেও জানিস না।teenager দের মতো ব্যবহার করছিস তুই।
প্রলয় বললো,
~চলে আয় আমার বাসায়।
বলেই খপ করে ফোন কেটে নয়নার দিকে তাকিয়ে দেখলো সে সোফায় বসে কাঁদছে। নয়নার পাশে বসে বললো,
~তুমি কান্না করাটা বন্ধ করো।সেই ২ঘন্টা যাবত কেঁদেই চলছো।
নয়না চোখ মুছতে মুছতে বললো,
~বাবা আসলে আমি চলে যাবো।থাকবো না আপনার সাথে।
প্রলয় বললো,
~রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেও।
নয়না সেভাবেই বসে রইলো প্রলয় এবার নয়নাকে কোলে তুলে বললো,
~তোমার কোলের চড়ার এতো শখ আগে জানতাম না।
________________
সবাই প্রলয়ের বাসার সামনে দাড়িয়ে আছে পরশ,প্রহেলী আর রুমানা তালুকদার ছাড়া সবার মুখ হা হয়ে আছে।প্রলয়ের যে এতো টাকা-পয়সা আছে তা তারা জানতো না এতো বড় বাড়ি দেখেই তারা সেটা বুঝতে পেরেছে।আমরুল সিকদারের মনটা এখন একটু নরম হলো পরশের থেকে প্রলয়ের উঁচু স্থান দেখে সে অনেকটাই খুশি হলো কিন্তু সে সেটা প্রকাশ করলো না।
সবাই প্রলয়ের হলরুমে বসে পরলো প্রলয় আর নয়না সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসলো।নয়না প্রহেলীকে দেখে দৌড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো প্রহেলী বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
~চল রুমে যাই আমরা সেখানে গিয়ে বসে কথা বলবো।আর তোর জন্য বিরিয়ানি এনেছি।
প্রহেলীর কথায় নয়না মাথা দুলালো প্রহেলী নয়নাকে নিয়ে রুমে চলে গেলো।আমরুে সিকদার বললেন,
~প্রলয়,তুমি যা করেছো তার জন্য আমি তোমাকপ কোনোদিন ক্ষমা করবোনা।
প্রলয় বললো,
~তাতে আমার কোনো সমস্যা নেই আপনার মেয়েকে একদিনের জন্য আপনার বাসায় নিয়ে যাবো আবার আমার সাথেই ফেরত নিয়ে আসবো।আপনার ক্ষমার আমার কোনো প্রয়োজন নেই।
পরশ বললো,
~যা হওয়ার হয়ে গেছে এখন সব ভুলে নতুন করে সবকিছু শুরু করা যাক।
আমেনা সিকদার বললেন,
~হ্যাঁ আমারও তাই মনে হচ্ছে।
মারিয়া সিকদার বললেন,
~আমাী একটামাত্র মেয়ে তার বিয়েতে আমি কিছুই করতে পারলাম না।
প্রলয় বললো,
~আপনাদের জন্যই তো ভালো হলো টাকা বেঁচে গেলো।
প্রহেলী নয়নাকে খাইয়ে দিচ্ছে আর বলছে,
~নয়না,এখন তোর বিয়ে হয়ে গেছে আর প্রলয় তোকে সুখে রাখবে। আর তুই পড়াশোনার চিন্তা করিস না প্রলয়ের সাথে এ ব্যাপারে আমি কথা বলবো।
নয়না বললো,
~আপু আমি কীভাবে থাকবো তোমাদের ছাড়া?
প্রহেলী বললো,
~আরে আমরা কী অনেক দূরে নাকি তোর যেসময় মন চাইবে সেসময় চলে আসবি।
নয়না ফুপিয়ে উঠলো আর বললো,
~আমার নতুন জামা গুলো পাঠিয়ে দিয়ো।
প্রহেলী মুখ টিপে হেসে বললো,
~আমারও তো নতুন জামা গুলো সে বাসায়ই রয়ে গেলো।
নয়নাও হেসে উঠলো আর বললো,
~তাহলে আজই চলে যাই সব কিছু নিয়ে চলে আসি।
প্রহেলী বললো,
~ঠিক আছে।
রুমানা তালুকদার প্রলয়কে খাবার প্লেটে বেরে দিয়ে বললো,
~নয়না একা বাসায় থাকতে পারবে না তুই ওকে নিয়ে আমাদের বাসায় চলে আয়।
পরশ বললো,
~মা ঠিক বলেছে।আমাদের সাথে থাকলে নয়না হাসি-খুশি থাকবে।
প্রলয় বললো,
~আমরা হানিমুনে যাচ্ছও তুই আর প্রহেলীও যাবি।
পরশ অবাক হয়ে বললো,
~হানিমুন কী বলছিস?
প্রলয় বললো,
~কক্সবাজার যাওয়ার সব ব্যবস্থা করে ফেলেছি কালই যাবো।
পরশ বললো,
~ভালো খুব ভালো।
প্রলয় বললো,
~কাল সকাল ৬টায় বের হবো।
বাকি সবাই চলে গেছে অনেকক্ষন শুধু প্রহেলী আর পরশই আছে।প্রহেলী বললো,
~নয়না আর আমি আমাদের বাসায় গিয়ে সব জিনিসপত্র আনতে হবে।
নয়না বললো,
~আমার সব তো ওখানেই আছে।
পরশ বললো,
~কক্সবাজার থেকে এসে সব নিয়ে আসো।
প্রহেলী আর নয়না বললো,
~কক্সবাজার?
প্রলয় বললো,
~হানিমুনে যাবো বিয়ে করেছি হানিমুনে তো যেতেই হবে।
পরশ বললো,
~সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে আর তোমাদের ব্যাগও আমরা প্যাক করে ফেলেছি। so don’t worry.
প্রহেলী বললো,
~ঠিক আছে।
নয়না বললো,
~আমি যাবো না আমাকে বড় মায়ের কাছে দিয়ে আসো।
প্রলয় বললো,
~আমি দেখছি ব্যাপার টা তোমরা বাসায় যাও।রেস্ট নেও।
প্রহেলী বললো,
~নয়নাকে আমি সাথে করে নিয়ে যাই কালকে তো দেখা হচ্ছেই।
প্রলয় বললো,
~প্রহেলী,trust me আমি ওর খেয়াল রাখবো তুমি নিশ্চিত হয়ে বাসায় যাও।
পরশ বললো,
~প্রহেলী,নয়নাকে এখানেই রেখে যাও।
প্রহেলী নয়নার হাতটা ছাড়িয়ে বললো,
~কালকেই দেখা হচ্ছে তুই এখন রেস্ট নে।
নয়না বললো,
~তুমি এখানেই থেকে যাও।
পরশ মনে মনে বললো,
~এখন আবার আমার বউ নিয়ে টানাটানি না শুরু করে দেয়।
পরশ হেসে বললো,
~নয়না আমরা কালকে সকালেই চলে আসবো।
প্রলয় নয়নার হাত ধরে বললো,
~তোরা ঠিক মতো পৌছে আমায় ফোন করবি বুঝতে পেরেছিস।
পরশ আর প্রহেলী গাড়িতে উঠে বসলো প্রলয় নয়নার হাত ধরে তাকে রুমে নিয়ে গেলো।
_________________
প্রহেলীকে গাড়িতে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে পরশের মনটা খারাপ হয়ে গেলো।পরশ প্রহেলীর একটা হাত শক্ত করে ধরে বললো,
~তুমি কোনো চিন্তা করোনা সব ঠিক হয়ে যাবে।
প্রহেলী বললো,
~নয়না কীভাবে সব সামলাবে? নিজেকে সামলাতে ও হিমশিম খায় এখন সংসার?
পরশ বললো,
~প্রলয় ওর সাথে আছে প্রহেলী সব ঠিক হয়ে যাবে আর দেখো পরিবারের সবাই ওদের মেনে নিয়েছে।
প্রহেলী বললো,
~এখন নয়না মেনে নিলেই হয়।
পরশ বললো,
~নয়নাও মেনে নিবে কারণ প্রলয়কে সে পছন্দ করে।
প্রলয় নয়নাকে রুমে নিয়ি বিছানায় বসিয়ে দিয়ে কার্বাড থেকে একটা বক্স বের করে বললো,
~এইটা তোমার জন্য নয়না।আমার মায়ের ছিল এখন তোমার।
নয়না বললো,
~এসব আমি নিবো না।
প্রলয় দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নয়নার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বললো,
~আমার মায়ের জন্য একটু পরে দেখাও মা বেঁচে থাকলে সেই পরাতো।
নয়না অবাক হয়ে বললো,
~আপনার মা
নয়নার কথা শেষ হওয়ার আগেই প্রলয় বললো,
~ঠিক আছে তোমার পরতে হবে না।
নয়না বললো,
~আমি পরবো।
প্রলয় সেই বক্সটা নয়নার হাতে তুলে দিলো নয়না বক্স খুলে গলার হারটা বের করে সে পরে নিলো।প্রলয় নয়নাকে দেখে মুচকি হেসে বললো,
~অনেক সুন্দর লাগছে।
নয়না বললো,
~এখন খুলে ফেলি আমার এতো ভারি গহনা পরার অভ্যাস নেই।
প্রলয় বললো,
~ঠিক আছে।গহনা খুলে ঘুমিয়ে পরো আমি অন্য রুমে আছি কোনো কিছুর দরকার পরলে জানাবে।
নয়না ভয়ে ভয়ে বললো,
~আমি একা ঘুমাবো না ভয় করে আপুর সাথে যাওয়াটাই বেস্ট অপশন ছিল।
প্রলয় বললো,
~ঠিক আছে বাবা,আমি সোফায় শুয়ে পরছি।
নয়না বললো,
~ঠিক আছে।
অতঃপর দুজনই শুয়ে পরলো প্রলয় সোফায় শুয়ে নয়নার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পরলো।
বিপরীত মুখী দুজন মানুষ কীভাবে একসঙ্গে পথ চলবে সেটাই এখন দেখার বিষয়। প্রলয় নয়নাকে সামলাতে পারবে নাকি মাঝরাস্তায় হাত ছেড়ে দিবে।নয়না কী আগলে রাখবে প্রলয় আর সংসারকে?
সময় সব প্রশ্নের জবাব অবশ্যই দিয়ে দিবে সেটার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
সকালে ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে পরশ,প্রহেলী,নয়না আর প্রলয় রওনা হলে নিজ গাড়িতে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে।নয়না প্রহেলীর সাথে বসে কথার ঝুলি খুলে বসেছে পরশ গাড়ি ড্রাইভ করছে তখনই প্রলয় ফিসফিস করে বললো,
চলবে
(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন।ভুল গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading🤗🤗)