#গল্পের_নাম_মনের_অন্তরালে
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ৮
সকালের সজীবতা উপভোগ করতে নয়না ছাদে চলে আসে আজ এবাসায় শেষ দিন।সবাই আজ রওনা দিবে বাসার উদ্দেশ্যে বরাবরই নয়নার ছাদ অনেক পছন্দ পরশদের ছাদটা আবার গোছানো একটা ছোট্ট চিলেকোঠাও আছে ছাদে।ফুলের টবগুলোও অনেক সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছে নয়না ফুলগুলোকে হাত দিয়ে ছুয়ে দেখতে ব্যস্ত। তখনই কেউ তার হাত খপ করে ধরে ফেললো নয়না উপরের দিকে চোখ তুলে দেখলো প্রলয় মুখের কোণে হাসি নিয়ে দাড়িয়ে আছে।প্রলয়কে দেখে নয়না অনেকটাই ভয় পেলো ভাই যদি দেখে তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।প্রলয় থেকে নিজ হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,
~অসভ্যের মতো ব্যবহার করছেন আপনি।কাল রাত থেকে আপনার এসব সহ্য করছি মাহিন ভাই এসব জানলে আমাকে শেষ করে দিবে।
নয়না এসব বলে প্রলয়কে পাশ কাটিয়ে চলে আসতে নিবে তখনই প্রলয় তার হাত ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বললো,
~২দিন পর তোমার ওই useless ভাই তোমাকে আমার কাছে দিয়ে আসবে।
বলেই সে ছেড়ে দিলো নয়নাকে। নয়না একবার প্রলয়ের দিকে তাকিয়ে দৌড়ে ছাদ থেকে নিচে নেমে আসলো প্রলয় ছাদের রেলিং ধরে দাড়িয়ে সেই নীল আকাশ দেখতে ব্যস্ত হয়ে পরলো।
প্রহেলী সকালের নাস্তা তৈরি করছে রুমানা তালুকদারের সাথে।বাড়িতে এতো মানুষ তাকে সাহায্য করাটা জরুরি রুমানা তালুকদার বললো,
~প্রহেলী তোমার এসব করতে হবে না মরিয়াম(সার্ভেন্ট) এসব করতে পারবে।
প্রহেলী পরোটা বেলতে বেলতে বললো,
~মা,আমি কাজ করছি কারণ আমার ভালো লাগছে।
রুমানা তালুকদার বললেন,
~তোর বর এখনই চিল্লানো শুরু করবে এই বলে,মা আমার শার্ট বের করে দেও,মা আমার ওইটা দেও,সেইটা দেও।আমি কিন্তু আজ থেকে এসব করবোনা তোমার দায়িত্ব সব।
প্রহেলী কিছু বলতে যাবে তার আগেই পরশ চিৎকার করে রুমানা তালুকদার কে ডাকতে লাগলো,
~মা ও মা,আমার শার্টটা দাও পাচ্ছি না।
রুমানা তালুকদার হেসে বললো,
~যাও মা।
প্রহেলী হাতের কাজ রেখে চলে গেলো রুমের দিকে। রুমে প্রবেশ করে দেখলো পরশ শুধু টাওয়াল জড়িয়ে দাড়িয়া আছে আর আলমারি ঘাটছে অথচ হাতের কাছে কতো শার্ট। প্রহেলী পরশের পিছে দাড়িয়ে বললো,
~এতো শার্ট থাকতে আপনি শার্ট খুজে পাচ্ছেন না?
পরশ পিছন ফিরে প্রহেলীকে দেখে একদফা ধাক্কা খেলো প্রহেলীকে একেবারে বউ বউ লাগছে পড়নে শাড়ি আঁচল টা কোমড়ে গুজে রাখা আছে।বিন্দু বিন্দু ঘাম তার কপালে পরশ হা করে প্রহেলীকে দেখছে তা দেখে বিরক্ত হয়ে প্রহেলী বললো,
~এভাবে কী দেখছেন?দেখি আপনার শার্ট বের করে দেই।
পরশকে সরিয়ে প্রহেলী মেরুন রঙের একটা শার্ট আর কালো প্যান্ট বের করে পরশের হাতে দিয়ে বললো,
~ড্রয়ারে আপনার ওয়ালেট রাখা আছে আর আপনার সব দরকারি জিনিস ড্রেসিন টেবিলে রাখা আছে।আগে যদি জানতাম আপনি শার্টও বের করে পরতে পারেন না তাহলে তাও বের করে রাখতাম।
বলেই প্রহেলী পা বাড়ালো বাহিরে যাওয়ার দিকে পরশ প্রহেলীর হাত ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।
প্রহেলী পরশের দিকে তাকিয়ে বললো,
~কী করছেন ছাড়েন?আমার কাজ আছে মা একা সব করছেন আর আপনি এতো বড় একজন লোক নিজের কাজ নিজে করতে পারেন না।
পরশ বললো,
~কেন আমি কেন করবো?আগে মা করতো এখন তুমি করবে যাতে এই ফাঁকে একটু রোমান্স করতে পারি।
প্রহেলী বললো,
~ছাড়েন আমার কাজ আছে তো।
তখনই দরজা ঠেলে ঘরে ডুকে পরে প্রলয় ঘটনার আকস্মিকতায় প্রহেলী আর পরশ দুজন দুদিকে ছিটকে দূরে সরে যায়।প্রলয়ও দুষ্ট হাসি দিয়ে বললো,
~সরি আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম যে তোরা এখন ব্যস্ত থাকবি।
_________________
প্রহেলী বললো,
~নাহ আপনি ভুল ভাবছেন আমি যাই মা একা কাজ করছে।
বলেই সে রুম থেকে সোজা রান্নাঘরে চলে গেলো।প্রলয় বললো,
~তুই কী এমন রূপেই দাড়িয়ে থাকবি যা কাপড় পরে নে।
পরশ বললো,
~কেন রে তোর কী আমায় দেখে লজ্জা লাগছে?
প্রলয় বললো,
~লজ্জা না ভাই তোর পেট বাহিরে আসছে তোর।
পরশ বললো,
~যাহ ভাগ আমি মোটা তুই মোটা।
বলেই সে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো প্রলয় বিছানায় আধশোয়া হয়ে মোবাইল টিপতে লাগলো।
সবাই একসাথে নাস্তা খেতে বসেছে শুধু আমরুল সিকদার নেই সে কোনো এক কাজে চলে গেছে।নয়না আর ফারিহা নাস্তা সার্ভ করছে।নয়না প্রলয়ের প্লেটে পরোটা দিতে যাবে তখনই মাহিন বললো,
~নয়না,আমার কাছে আয় তো।
নয়না বাধ্য মেয়ের মতো মাহিনের কাছে চলে গেলো প্রলয় এতে রেগে গেলো মাহিনকে জব্দ করতে হবে অনেক বেড়ে গেছে।পরশ বললো,
~কী রে তোর প্লেটের খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তো মুখে দে।
প্রলয় খাবারে মনোযোগ দিলো তার এখন পরশের সাথে কথা বলতে হবে নাহলে ব্যাপারটা আরো বিগরে যাবে।ফারিহা সায়েমের সাথে বসেছে, নয়না মাহিনের সাথে,আর পরশের পাশে প্রলয় প্রহেলী সব মুরুব্বিদের জন্য খাবার দিয়ে এসেছে রুমে।প্রহেলী পরশের পাশের চেয়ারে বসে পরলো।নাস্তা খাওয়া শেষে পরশ আর প্রলয় ছাদে দাড়িয়ে কথা বলছে প্রলয় বললো,
~একটা কথা আছে তোর সাথে।
পরশ বললো,
~বল কী বলবি?
প্রলয় বললো,
~আমি নয়নাকে বিয়ে করবো।
প্রলয়ের কথা শুনে পরশ অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে বললো,
~কী বললি তুই?
প্রলয় বললে,
~বয়রা হয়ে গেছিস?বলছি তোর শালীকে বিয়ে করবো।
পরশ বললো,
~কেমনে হলো?এসব।
প্রলয় বললো,
~জানিনা কেমনে হয়েছে।
পরশ বললো,
~আমার শালী এখন ছোট বিয়ে দিবো না রাস্তা মাপেন।
প্রলয় বললো,
~কিডন্যাপ করুম তোর শালীরে তারপর বুঝবি মজা।ভালোই ভালো বিয়েটা দিয়ে দে।
পরশ বললো,
~শশুড় আব্বা মানবে না।
প্রলয় বললো,
~তুই মানাবি আমি জানিনা।
পরশ বললো,
~নয়না এখনো ছোট তোর বয়সটা বেশি হয়ে গেছে।
প্রলয় বললো,
~এগুলো বলিস না তো বিয়েটা করিয়ে দে।
পরশ বললো,
~দেখছি কী করা যায়?
প্রলয় বললো,
~পরে দেখিস তুই ১দিন সময় নাহলে অন্য ব্যবস্থা নিবো আমি।
পরশ বললো,
~আচ্ছা বাবা ঠিক আছে তুই চিন্তা ছাড়।
প্রলয় আর কিছু না বলে দাড়িয়ে থাকে। নয়না, ফারিহা আর প্রহেলী বসে আড্ডা দিচ্ছে নয়না একটু চুপচাপই আছে। তা লক্ষ্য করে প্রহেলী বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
~কী হয়েছে আমার লক্ষ্মী সোনার?
নয়না আর চুপ থাকতে পারলোনা প্রহেলীকে সব ঘটনা খুলে বললো।তা শুনে প্রহেলী আর ফারিহা চরম পর্যায়ে অবাক হলেন প্রহেলী বোনকে বুকে জড়িয়ে বললো,
~তুই কী প্রলয়কে পছন্দ করিস?
নয়না কিছু না বলে চুপ করে আছে ফারিহা বললো,
~হ্যাঁ সোনা বল তোর কী ইচ্ছা?
নয়না বললো,
~মাহিন ভাই রাজী হবে না আপু।ভাই ওনাকে পছন্দ করল না।
প্রহেলী বললো,
~মাহিনকে আমি দেখে নিবো তুই তোর কথা বল?
নয়না বললো,
~যদি বাবা আর ভাই রাজী থাকে আমার কোনো আপত্তি নেই।
প্রহেলী মুখ টিপে হেসে বললো,
~ঠিক আছে আমি ব্যাপারটা দেখছি।
_________________
পরশ রুমে পায়চারি করছে তখনই রুমে প্রবেশ করলো প্রহেলী।পরশ প্রহেলীকে দেখে বললো,
~তোমার সাথে কথা ছিল।
প্রহেলী বললো,
~আমারও আসলে।
প্রহেলীর কথা শেষ হওয়ার আগেই পরশ বললো,
~প্রলয় নয়নাকে বিয়ে করতে চায়।
প্রহেলী বললো,
~জানি।
পরশ বললো,
~কীভাবে?
প্রহেলী বললো,
~নয়না সব বলেছে।
পরশ প্রহেলীকে নিজের কাছে টেনে বললো,
~নয়না কী প্রলয় কে
প্রহেলী তাকে থামিয়ে বললো,
~বাবা আর মাহিন রাজী থাকলে তার কোনো আপত্তি থাকবে না।
পরশ বললো,
~তাহলে শশুড় আব্বা আর শালা কে রাজী করাতে হবে।
প্রহেলী বললো,
~হুমম।
আমরুল সিকদারের সামনে বসে আছে প্রলয়। পরশ সব কিছু বলেছে আমরুল সিকদার বললেন,
~প্রলয়,আমার মেয়ে ছোট আমি তাকে বিয়ে দিতে চাই না।
মারিয়া সিকদার বললেন,
~তুমি কী বলছো?এতো ভালো ছেলে আমি আমার মেয়েকে প্রলয়ের সাথে বিয়ে দিবো।
মাহিন বললো,
~মা তুমি চুপ থাকো।আমি নয়নার বিয়ে এখন কোনো মতেই দিবো না।
পরশ বললো,
~প্রলয় নয়নাকে অনেক সুখে রাখবে।
পরশকে থামিয়ে দিয়ে প্রলয় বললো,
~যদি এই বিয়ে না হয় তাহলে এরপর যা হবে তার জন্য আপনি দায়ী থাকবেন।
বলেই সে গটগট করে বাসা থেকে বের হয়ে যায়।প্রহেলী বললো,
~ভেবে দেখতে পারেন প্রলয় ছেলে হিসেবে ভালো।
আমরুল সিকদার বললেন,
~যে ছেলে থ্রেট দিয়ে গেলো সে আবার ভালো ছেলে হয় কীভাবে?
আমরুল সিকদার সেখান থেকে উঠে চলে আসলেন তার পিছে মারিয়া সিকদারও হাঁটা ধরলেন।
প্রলয় গাড়ি নিয়ে পরশদের বাড়ির সামনে রেখে গাড়ি থেকে নেমে পরলো তারপর সোজা চলে গেলো নয়নার রুমে।নয়না বিছানায় শুয়ে আছে প্রলয়কে এভাবে রুমে আসতে দেখে সে ভয় পেয়ে গেলো। প্রলয় নয়নাকে কোলে তুলে নিলো নয়না এতে অবাক হয়ে পরলো।
নয়না বললো,
~আপনি করছেন টা কি?কেউ দেখলে কী ভাববে?
কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?
প্রলয় কিছু না বলে নয়নাকে নিয়ে রুমের বাহিরে চলে আসলো।পরশ তা দেখে দৌড়ে প্রলয়ের কাছে গিয়ে দেখলো নয়না কাঁদছে পরশ বললো,
~একটু শান্ত হ আমি সব দেখছি তুই ঠান্ডা হ।
প্রলয় বললো,
~আমি আজই ওকে বিয়ে করবো।তুই সরে দাড়া
হট্টগোল শুনে প্রহেলী আর বাকি সবাই বের হয়ে আসলো।প্রলয় নয়নাকে কোল থেকে নামিয়ে তার হাত শক্ত করে ধরে বললো,
~আমি আজই ওকে বিয়ে করবো।কেউ বাঁধা দিলে আমি কাউকে ছাড়বো না।
প্রহেলী বললো,
~প্রলয় ঠান্ডা হন পরশ বলেছে সব ঠিক করে ফেলবে।
হঠাৎ মাহিন রেগে গিয়ে এগিয়ে এসে নয়নার হাত ধরে বললো,
~আমার বোনকে এমন গুন্ডার সাথে বিয়েতে কখনো দিবো না।
বলেই সে নয়নাকে টান দিতে লাগলো কিন্তু প্রলয় নয়নার হাত শক্ত করে ধরে একহাত দিয়ে কোমড় পিছন থেকে এমন একটি জিনিস বের করলো মাহিন তা দেখে ভয় পেয়ে পিছিয়ে গেলো পরশ আর প্রহেলীর ভয়টা আরো দ্বিগুন বেড়ে গেলো।
চলবে
(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading🤗🤗)