#গল্পের_নাম_মনের_অন্তরালে
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ২
প্রহেলী বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে পরশ গাড়ি চালাতে ব্যস্ত প্রহলীর মাথাটা ভার হয়ে আছে।কান্না করাটা উচিত হয়নি পরশ আড়চোখে প্রহেলীর দিকে তাকিয়ে বললো,
~প্রহেলী,আমি প্রলয়ের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলবো।তুমি তো জানোই প্রলয় আমার কতোটা কাছের মানুষ আমি ওকে কষ্ট দিতে চাই না।
প্রহেলী পরশের দিকে তাকিয়ে বললো,
~আপনি কী আমাকে অবিশ্বাস করছেন?
পরশ আলতো হেসে গাড়িটা থামিয়ে বললো,
~প্রহেলী,আমি জানি তুমি সেরকম মেয়ে না।আর তুমি যে মিথ্যা বলবেনা তাও আমি জানি অবশ্যই এরকম কোনো ঘটনা ঘটেছে তাই তুমি বলছো।আমি প্রলয়ের সাথে কথা বলবো you don’t have to worry about that.এখন একটু হাসো তোমার সেই হাসিমাখা মুখখানা দেখতে চাই আমার পরাণটা যে শান্তি পাবে।
পরশের এমন আহ্লাদী কথা শুনে ফিক করে হেসে দিলো প্রহেলী।পরশ তা দেখে মুচকি হেসে প্রহেলীর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
~সব কথায় কাঁদতে হয় না বুড়ি।তোমাকে অনেক শক্ত হতে হবে লড়াই করতে হবে তোমার জীবনে অনেক সমস্যা আসবে তা সমাধান করতে হবে তোমারই।
একা লড়তে শিখো তুমি মেয়ে বলে যে তোমার সবসময় কারো উপর নির্ভর থাকতে হবে এমন কথা কোথাও লেখা নেই।আমি তোমার সাহসিকতাকে ভালোবাসি আমার সেই প্রহেলী আজ কোথায়?
পরশের প্রতিটি বচন প্রহেলীর মাথা পর্যন্ত পৌছাতে সক্ষম হয়েছে সে যে প্রতিবাদি মেয়ে কাউকে ভয় পায় না তাহলে আজ কেন পিছু হটলো সে?কেন প্রলয় থেকে পালিয়ে আসলো তাহলে কী আজ পরশকে হারানোর ভয়ে এই কাজটি করে ফেলেছে?
প্রহেলী নিজ ভাবনা থেকে বের হয়ে বললো,
~আমি যদি আজ প্রলয়কে আপনার সামনে এই ব্যাপার নিয়ে অপমান করতাম তাহলে কী আপনি আমার সার্পোট করতেন?
পরশ প্রহেলীর চুলগুলো কানের পিছে গুজে দিয়ে তার কপালে ওষ্ঠ জোড়া ছুইয়ে বললো,
~সত্যের সানিধ্য আমি আজীবন করে যাবো প্রলয়কে তার কাজের জন্য অবশ্যই শাস্তি দেওয়া হবে।তার আগে আমি প্রলয়ের কথাও শুনতে চাই।
প্রহেলী বললো,
~ঠিক আছে।আপনার উপর আমার আস্থা আছে
পরশ গাড়ি ড্রাইভ করতে শুরু করলো প্রহেলী একধ্যানে বাহিরের দিকে তাকিয়ে রইলো।
_________
প্রহেলী বাসায় প্রবেশ করার সাথে সাথেই তার দাদী জামিলা সিকদার উচ্চস্বরে বলে উঠলো,
~এসেছে মহারাণী,সারাদিন বাহিরে বাহিরে থেকে এখন এসেছে।বলছি যে লজ্জা সরম কী বাজারে বেঁচে এসেছে?
প্রহেলী আলতো হেসে দাদীর পাশে বসে বললো,
~দাদীজান,আমার লজ্জা-সরম কে কিনবে বলো?আর তোমার যদি তার প্রয়োজন হয় আমারটা নিয়ে নেও।
বলেই খিলখিল করে হেসে উঠলো জামিলা সিকদার নাতনীর এই হাসিমাখা মুখের পিছে যে বেদনা লুকিয়ে আছে তা বুঝতে সময় লাগেনি।
জামিলা সিকদার নাতনীর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
~সারাদিন না খেয়ে আছিস যা গোসল করে খেয়ে নে।আমি এভাবে বলি যাতে একটু ধ্যান-জ্ঞান হয় তোর আশেপাশে কতো শত্রু।
প্রহেলী দাদীকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~যেমন শত্রু আছে তেমনি তুমি আর মাও তো আছে আমার ভালোবাসার মানুষ।
জামিলা সিকদার দুষ্ট হেসে বললো,
~আর পরশ?
প্রহেলী দাদীর কথা শুনে বুঝতে পারলো সে যে মজা করছে প্রহেলী বললো,
~যদি বলি সেও আমার ভালোবাসার মানুষ তাহলে কী তুমি হিংসা করবে?
জামিলা সিকদার শাড়ির আঁচল মুখে চেপে হেসে বললো,
~হ্যা,হিংসা করবো পরশ একদম তোর দাদাজানের মতো।
প্রহেলী আবারও খিলখিল করে হেসে উঠলো প্রহেলীর হাসির শব্দ পুরো হলরুম জুরে আমেনা সিকদার রুম থেকে বের হয়ে।প্রহেলীর কাছে এসে বললো,
~সেই সকাল বেলায় বের হয়েছিস পেটে কিছু পরে নি। ফ্রেশ হয়ে আয় তোর জন্য বিরিয়ানি রান্না করেছি।
প্রহেলী দাদীর পাশ থেকে উঠে বললো,
~নয়না কোথায়?
আমেনা সিকদার টেবিলে খাবার রাখতে রাখতে বললেন,
~আর বলিস না এই মেয়ে সারা বছর পড়াশোনা করবে না এখন পরীক্ষা বই নিয়ে সারাদিন বসে আছে।
প্রহেলী হেসে বললো,
~ওর কাজই এটা।
প্রহেলী রুমে এসে শাওয়ার নিয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল মুছতে থাকলো।তখনই বাহিরে চেঁচামেচির আওয়াজ শোনা গেলো প্রহেলী হাতের টাওয়ালটা রেখে রুম থেকে বের হয়ে দেখলো মারিয়া সিকদার তার ছেলে মাহিরকে ধরে রেখেছে।মাহির ঢুলছে তার ঠিক সামনে আমরুল সিকদার অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
নয়না জামিলা সিকদারের সাথে দাড়িয়ে রয়েছে। আমরুল সিকদার বললেন,
~এই ছেলেকে বাসা থেকে বের করো।মদ খেয়ে আমার বাসায় আসা যাবেনা এরকম বেহায়া সন্তান আমার লাগবেনা।
মারিয়া সিকদার চেঁচিয়ে বললেন,
~ওহ এখন আমার ছেলে বেহায়া আর আপনার মেয়ে যখন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে তখন সে মহান মানুষ।
প্রহেলী ঠিক বুঝতে পারলো কথাটা তাকেই বলা হয়েছে কিন্তু সে এই ব্যাপারে কোনো কথা না বলে আমরুল সিকদারকে বললো,
~মাহিরকে রুমে যেতে দিন আর মদ খাওয়ার টাকা সে কার থেকে পেলো তার খোঁজ করুন।আমার দোকান থেকে যদি নিয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই সেই টাকা ফেরত দিতে হবে।
মারিয়া সিকদার আরো তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো সে বললেন,
~বেয়াদব মেয়ে আমার ছেলে তার বাবার দোকান থেকে টাকা নিয়েছে এতে তোর কী?
প্রহেলী বুকে হাত গুজে বললো,
~বই,খাতা,কলম,অন্যসব জিনিসের জন্য টাকা নিলে কোনো ব্যাপার না কিন্তু মদ খাওয়ার টাকা যদি নিয়ে থাকে তাহলে তার শাস্তি পেতে হবে।
______________
পরশ বারান্দায় দাড়িয়ে আকাশ পাণে তাকিয়ে আছে প্রলয় তার পাশে দাড়িয়ে সিগারেটে টান মেরে বললো,
~তোর নতুন প্রযেক্টটা কেমন চলছে?
প্রলয়ের প্রশ্নের উত্তরের জবাব পরশ দিলো না বরং আকাশের দিকেই তাকিয়ে রইলো।প্রলয় ভ্রুকুচকে পরশের কাঁধে হাত রেখে বললো,
~কী হয়েছে বলবি?ভাবির সাথে কিছু হয়েছে?
পরশ প্রলয়ের হাতটা কাঁধ থেকে সরিয়ে তার দিকে ফিরে বললো,
~একটা প্রশ্নের উত্তর দিবি?
প্রলয় একটু সরে দাড়িয়ে সিগারেটটা হাত থেকে ফেলে দিয়ে বললো,
~কী প্রশ্ন?
পরশ বললো,
~ধর তোর অনেক কাছের একজন ব্যক্তি তোর মনের মানুষের উপর হাত বাড়িয়েছে তখন তুই কী করবি?
প্রলয়ের মাথা বেয়ে ঘাম বেয়ে পরলো সে শুকনো ঢোক গিলে বললো,
~এটা কেমন প্রশ্ন?
পরশ হালকা হেসে বললো,
~দূরে থাক প্রলয় আমার প্রহেলী থেকে দূরে থাক তোর জন্য ভালো হবে।তোর সবকিছু ছাড় দিলেও এ বিষয়টা ছাড় দিবো না।
প্রলয় বললো,
~প্রহেলী তোকে কী এমন বলেছে যার কারণে তুই এমন করছিস?ওই দুদিনের আসা মেয়ের জন্য তুই এমন করছিস?
প্রলয়ের কথা শেষ হতেই পরশ তার শার্টের কলার টেনে ধরে বললো,
~মুখটা সামলিয়ে চল প্রলয় মায়ের কারণে চুপ করে আছি যদি মা তোকে এতোটা ভালো না বাসতো তাহলে তোর উপর হাত উঠাতে আমি দ্বিধাবোধ করতাম না।
বলেই সে প্রলয়ের কলার ছেড়ে দিয়ে বললো,
~এখন তুই আমার সামনে থেকে যা।
প্রলয় রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে রুমের বাহিরে চলে আসলো রুমানা তালুকদার প্রলয়ের সামনে এসে বললো,
~চল বাবা তোর জন্য ভূনা খিচুরি রেঁধেছি।
প্রলয় মুচকি হেসে বললো,
~আজ আসি কালকে অবশ্যই আসবো।
বলেই সে গটগট করে বাসার বাহিরে চলে আসে নিজ গাড়িতে বসে সে রওনা দেয় বাসার উদ্দেশ্যে।
প্রহেলী খাবার শেষ করে নয়নার পাশে বসে তাকে পড়া বুঝিয়ে দিচ্ছে তখনই ঘরে প্রবেশ করলো মারিয়া সিকদার।প্রহেলী বই থেকে চোখ সরিয়ে মারিয়া সিকদারের দিকে তাকালো মারিয়া সিকদার বললো,
~নয়না,তুই অন্যরুমে যা।
নয়না বললো,
~মা,আপু আমাকে পড়া বুঝিয়ে দিচ্ছে।আমি এখন কোথাও যাবো না
মারিয়া সিকদার রেগে বললেন,
~এই তুই যাবি নাকি এক ঘা বসাবো?
নয়না সব বই গুছিয়ে বললো,
~আমি বড় মায়ের কাছে গেলাম।
নয়না চলে যেতেই মারিয়া সিকদার বললেন,
~এই নবাবের বেটি,আমার ৩০,০০০ টাকা লাগবে।
প্রহেলী বললো,
~কোন সুখে লাগবে এতো টাকা?
মারিয়া সিকদার বললেন,
~টাকা লাগবে তুমি দিবে এতো কথা শুনতে চাই না।
প্রহেলী বিছানা ছেড়ে উঠে বললো,
~কী বলছেন,আমার টাকা আমি বুঝে শুনে খরচ করতে চাই হালাল টাকা কামাই করতে কষ্ট আছে।আপনার ভাইয়ের মতো তো আর অবৈধ টাকা আমার না।
মারিয়া সিকদার ফুসে উঠলেন প্রহেলী বললো,
~কোনো টাকা দিতে পারবো না আমার রুম থেকে বের হোন।
মারিয়া সিকদার বললেন,
~তোর দাদাজান মরে গিয়েও আমাকে শান্তি দেইনি একটা বেয়াদব মেয়েকে সম্পত্তির মালিক করে গেছে।
প্রহেলী কিছু বলবে তার আগেই মারিয়া সিকদারের গালে থাপ্পড় পরে।জামিলা সিকদার তাকে থাপ্পড় মেরেছে মৃত স্বামীর নামে এসব শুনে সে সহ্য করতে পারেনি।তাই হাত উঠে গেছে জামিলা সিকদারের এহেন কান্ডে মারিয়া সিকদার অনেকটাই ভয় পেয়ে গেছে সে আর কিছু না বলে চোখ নামিয়ে চলে গেলো।
_____________
প্রহেলী দাদীর পায়ের সামনে বসে আছে জামিলা সিকদার চুপচাপ শুয়ে আছে।প্রহেলী বললো,
~দাদীজান,মন খারাপ?
জামিলা সিকদার বললেন,
~জানিনা কোন অলক্ষুণে সময়ে তোর বাবা এই মহিলার ফাঁদে পরেছিল?
প্রহেলী হেসে বললো,
~হাইপার হয়ো না দাদীজান ঘুমানোর চেষ্টা করো।
জামিলা সিকদার বললেন,
~তুই কোনো ছাড় দিবি না সবাইকে দেখিয়ে দিবি তুই সবকিছু সামলাতে পারিস একাই।
প্রহেলী বললো,
~আর কতো একা থাকবো।
প্রহেলী এতটুকু বলে সেখান থেকে উঠে বারান্দায় চলে আসলো।জামিলা সিকদার নাতনীর উদাস মনের ঠিকানা খুজে বের করলো পরশ তার নাতনীর জীবনে সুখ নিয়ে আসুক তাই চায় সে।
সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রহেলী মায়ের কাজে সাহায্য করতে লাগলো।মাহির ঢুলুঢুলু পায়ে ডাইনিং টেবিলে বসে পরলো প্রহেলী মাহিরের সামনে পরোটার প্লেট রেখে বললো,
~কতো টাকা উড়িয়েছিস?
প্রহেলীর কথার জবাবে কী বলবে মাহির তাই বুঝতে পারছেন না বন্ধু দের পাল্লায় পরে কাজ খতম করে ফেলেছে।মাহির আমতা আমতা করে বললো,
~আপু হয়েছে কী
প্রহেলী মাহিরকে থামিয়ে বললো,
~কত টাকা নিয়েছিলি?
মাহির মাথানিচু করে বললো,
~৫০০০
প্রহেলী বললো,
~৭ দিনের টাইম দিলাম তোকে আমার দোকানের ড্রয়ারে যাতে সেই ৫০০০টাকা পৌছে যায়।
এতটুকু বলে প্রহেলী কাজে চলে যায় মাহির রাগে কটমট করতে থাকে।
প্রহেলী আমেনা সিকদারের হাতে বাজারের টাকা দিয়ে ব্যাগ নিয়ে ছুটলো ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রাস্তা পার করতে যাবে তখনই তার নজর পরলো রাস্তার ওপারের ব্যক্তির উপর।
প্রহেলীকে দেখে সেই ব্যক্তি পিছে পা বাড়ালো আর সেই ব্যক্তিটি রাস্তা পার হয়প তার কাছে চলে আসলো।প্রহেলী বললো,
~প্রলয় আপনি এখানে?
প্রলয় সানগ্লাসটা খুলে বললো,
~আসতে হলো sweetheart.
প্রহেলী বললো,
~এসব আজেবাজে নামে ডাকবেন না।
প্রলয় বললো,
~ওকে। আজকে তোমার সাথে দেখা করাটা জরুরি ছিল কিছু কঠিন সত্য কথা তোমাকে জানানোর জন্য।
প্রহেলী বললো,
~কোনো ধরনের মিথ্যা বলবেন না।আর আমি আপনার কোনো কথা শুনতে চাইনা
বলেই সে প্রলয়কে পাশ কাটিয়ে চলে আসতে নিলো তখনই প্রলয় বললো,
~তোমার বাবা যে তোমাকে বিক্রি করে দিয়েছে তা কি তুমি জানো?
প্রহেলীর পা থেমে গেলো সে বরফের মতো জমে গেলো তার মাথার একটা কথায় ঘুরছে আমরুল সিকদার তাকে বিক্রি করে দিয়েছে।
চলবে
(বিদ্রঃ কেমন হয়েছে জানাবেন আর ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading🤗🤗)