#মধুমাস
#পর্ব_২৫
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
শ্যামা বিছানায় কাথা গায়ে শুয়ে আছে।প্রচন্ড জ্বরে সারা শরীর কাঁপছে।গতোকাল রাতে এমন বেধম মা র খাওয়ার পরে তার শরীর আর সহ্য করতে পারেনি,সারা শরীর ভিষণ যন্ত্রণায় কাতরে জ্বর এসেছে। বিছানা থেকে নামার শক্তিটুকু পাচ্ছে না,জ্বরের মাঝে মনে হচ্ছে ফিরোজের কাছে যেতে পারলে তার জ্বর সেরে যেতো।ফিরোজের একটু হাতের ছোঁয়ায় তার অসুস্থতা নিমিষেই ভালো হয়ে যাবে।লোকটা তার ভালো থাকার যা,দু,ম,ন্ত্র,পা,গল টাকে দেখার জন্য মনটা কি ছটফট করছে,অসুস্থতায় যেনো আরো বেশী মনে পড়ছে।শ্যামা ব্যাথায় কেঁপে উঠে,ছেলেটার কাছে যেতে পারলেই শরীর ভালো লাগতো কিন্তু সে ফিরোজের কাছে যাবে কি করে?তাকে যে আটকে রেখেছে।যদি আটকে না রাখতো তাহলে শ্যামা ঠিক চলে যেতো।বাড়ির লোকেরা বোধহয় তার মনের ভাব বুঝতে পেরেছে।তাইতো আটকে রেখেছে।ফারিয়ার সাথেও দেখা করতে দেয়নি।সে ফারিয়াকে বলতে পারেনি যে ফিরোজ যেনো তাকে নিয়ে যায়।শ্যামা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।টেবিলের উপরে দুপুরের খাবার ঢেকে রাখা।খেতে ইচ্ছে হয়নি আর কেউ তাকে খেতেও বলেনি।প্রেম করার অপরাধে শ্যামাকে সবাই ভুলে গিয়েছে।
হঠাৎ শ্যামা ফিরোজের গলার স্বর শুনতে পায় পরক্ষনেই তার আব্বার হুংকার।রিপনের কথা আর আর থাপ্পড়ের শব্দ।শ্যামা কাথা সরিয়ে লাফিয়ে উঠে দাঁড়ায়।শরীরের যন্ত্রণা উপেক্ষা করে ছুটে দরজার সামনে যায়।সে নিশ্চিত রিপন ফিরোজকে মে,রেছে।শ্যামার চোখ উপচে পানি পরে।ভিষণ রাগী মানুষটা তার জন্য মা,র খাচ্ছে?শ্যামা দরজায় কান পাতে বাহিরে কোনো শব্দ নেই কেনো?ফিরোজ কি চলে গেছে?শ্যামা শুকনো গলায় ফ্যাসফ্যাস আস্তে আস্তে বললো,
“ফিরোজ!ফিরোজ আমাকে নিয়ে যাও।”
বাহির থেকে কোনো শব্দ আসে না।তার আস্তে বলা কথা হয়তো কেউ শুনেনি কেউ শুনলে নির্ঘাত আবার মা,রতো।শ্যামা দরজা ঘেসে মাটিতে বসে হু হু করে কেঁদে দেয়।ফিরোজ কিছু বলতে চাইছিলো,যেভাবেই হোক সে জেনে গেছে শ্যামা বিপদে তাইতো বাড়ি অবধি এসেছে কিন্তু একজন আরেকজনকে চোখের দেখাও তো দেখতে পারলো না।ভালোবাসায় এতো কষ্ট কেনো?এতো যন্ত্রণা কেনো ভালোবাসায়?ফিরোজের আব্বা এমন না করলেও পারতো,ফিরোজকে একরকম বলে তার আব্বাকে আর একরকম বলেছে।শ্যামার শরীর এতো দূর্বল লাগছে যে সে মাটিতে শুয়ে পড়ে।পাগলের মতো বোবা কান্না কাঁদতে থাকে।যন্ত্রনার বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে।দরজা বন্ধ,মোবাইল কাছে নেই কিভাবে ফিরোজের সাথে যোগাযোগ করবে?কথা না হলে দেখা না হলে শ্যামা পাগল হয়ে যাবে।
ফিরোজ চুপচাপ রুমে বসে আছে।আজকে মনে হচ্ছে এই দুনিয়ায় তার আপন বলতে কেউ নেই,থাকলে কি আর এমন হতো?সবাই এমন বেইমানী করতো?ছোটবেলায় মা বেইমানী করে চলে গেলো,তারপর থেকে তার আব্বাকে দুনিয়ার সবচেয়ে আপন ভাবতো কিন্তু আপন হলে কি উনি এই কাজটা করতে পারতো?পছন্দের কথা বলার পরে,নিজের আকুতিগুলো জানানোর পরে সে ভেবেছিলো তার আব্বা তার শান্তির জন্য সব করবে কিন্তু উনি তার বিপরীত করেছে ফিরোজকে বুঝিয়ে দিয়েছে সে এই দুনিয়ায় কতোটা একা। তার আর সুখ পাওয়া হবে না।উনি নিশ্চয়ই শ্যামার বাবাকে অপমান করেছে তা না হলে উনারা এতো রেগে থাকবে কেনো?উনি কি ভেবেছে এমন করলে সে শ্যামার হাত ছেড়ে দেবে?ভালোবাসা এতো ঠুনকো?কখনোই না,শতো বাধা আসলেও সে শ্যামাকে ঠিক নিজের করে নেবে।এই মেয়েটার জন্যই তো আজকে রিপনের মতো ছেলে তার গায়ে হাত দিতে পারলো।সে প্রতিবাদ করলে হয়তো শ্যামাকে কষ্ট পেতে হতো।ভিষণ রাগী ছেলেটাও ভালোবাসার জন্য চুপ থাকতে শিখে গিয়েছে।আচ্ছা উনারা শ্যামাকে কি আবার মে,রেছে?তা না হলে শ্যামাকে দেখা গেলো না কেনো?ফিরোজের হাফসাফ লাগে,দম বন্ধ হয়ে আসে অজানা ব্যাথায় বুকটা চিনচিন করে ভারী লাগে,চোখ ভিষণ জ্বালা করে পানি আসে।তার মনের কষ্ট বলার মতো একটা মানুষও দুনিয়ায় নেই।ফিরোজ মোবাইল থেকে শ্যামার ছবিটা বের করে ঠোঁটের কাছে এনে চুমু দেয়,ফিসফিস করে বললো,”তোমাকে ঠিক নিজের করে নেবো।তুমি চিন্তা করোনা পাখিটা।”
মোহাম্মদ আলী এখনো বাড়ি আসেনি।ফিরোজ চাইলেই হোটেলে গিয়ে সব জিজ্ঞেস করতে পারতো কিন্তু না সে বাড়ি আসার অপেক্ষা করছে।গেইট খুলার শব্দ হওয়াতে ফিরোজ উঠে দাঁড়ায়।বের হয়ে দেখে মোহাম্মদ আলী সোফায় বসেছেন।ফিরোজ সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
“আপনি স্বপন কাকাকে কি বলেছেন?”
“যা বলেছি তা তো ফোনেই বললাম।”
ফিরোজ শান্ত গলায় বললো,
“আর কি বলেছেন সেটা বলেন।”
মোহাম্মদ আলী বুঝতে পারে ছেলে যে কোনো ভাবেই হোক জানতে পেরেছে তাই আর কিছু লুকোয় না।
“ফিরোজ আমি আগেও বলেছি শ্যামাকে আমি মানি না সুতরাং তাকে বিয়ে করাতে পারবো না।”
ফিরোজ চিৎকার করে বললো,
“আপনি কি মানবেন?বিয়ে করবো আমি সংসার করবো আমি আপনার মানার দরকার কি?আপনাকে আমি পছন্দের কথা বলেছি আপনি তার মান রাখলেন না।”
ফিরোজ তার আব্বাকে সবসময় মেনে চলতো,সবার সাথে রাগী হলেও উনার সাথে শান্ত ছিলো কিন্তু আজকের মতো এতো রেগে যায়নি,এমন কর্কশ কন্ঠে কথা বলেনি।উনি বললেন,
“ফিরোজ।বেয়াদবি করোনা।”
“বেয়াদবির কি করেছি?আপনি স্বপন কাকাকে উল্টাপাল্টা কথা বলেছেন কেনো?”
“বলেছি ভালো করেছি।এমন ফ্যামিলিতে কোনো আত্মীয়তা হবে না।আমার জান থাকতে ওই মেয়ে এই বাড়িতে আসতে পারবেনা।”
ফিরোজ ত্যাড়া কন্ঠে বললো,
“আমি এই বাড়িতে শ্যামাকে বিয়ে করে আনবোই।”
“তুই বেশী ফাজলামি করছিস।”
ফিরোজের কন্ঠ রাগে কাঁপতে থাকে।
“ফাজলামির কি দেখেছেন? যদি শ্যামাকে বিয়ে না করান তাহলে আমি এই বাড়িতে আ,গুন লাগিয়ে দেবো।”
মোহাম্মদ আলী বুঝেন ছেলে খুব রেগে গিয়েছে উনি শান্ত করার জন্য বললেন,
“শান্ত হ।ভেবে চিনতে কাজ করতে হবে।”
ফিরোজ দাঁত কিড়মিড় করে মোহাম্মদ আলীর সামনে থাকা কাঁচের সেন্টার টেবিলটা লাথি দিয়ে ভেঙ্গে ফেলে বললো,
“শান্ত!শান্ত রাখতে চাইলে এমন কাজ কিভাবে করলেন?ভালোয় ভালোয় স্বপন কাকাকে মানিয়ে নিন।”
“অসম্ভব।”
ফিরোজ রুমে যেতে যেতে বললো,
“নিজের পয়সার অহংকার কিছুটা কমান।”
ফিরোজ রুমে যায়।অশান্তিতে সারা রুমময় পায়চারী করে।যেভাবেই হোক দেখা করতেই হবে কিন্তু উপায় কি?এর পরের দিন সকালে ফিরোজ ফারিয়াকে আবার শ্যামাদের বাড়ি পাঠায়।ফারিয়া ভ,য় পাচ্ছে কিন্তু স্বাভাবিক ভাবে হেটে শ্যামাদের বাড়ি যায়,তারপর সোজা শ্যামার রুমে চলে যায়।ফাতেমা বেগম তখন শ্যামাকে সকালের নাস্তা দিতে এসেছে।ফারিয়াকে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকায়।
“তুমি কেনো এসেছো?”
ফারিয়া হেসে বললো,
“কালকে তো এসে দেখা করতে পারিনি তাই আজকে আসলাম।”
তারপর শ্যামার দিকে তাকিয়ে বললো,
“কিরে আজকে কলেজে যাবি?”
শ্যামা ছলছল চোখে ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।শ্যামা কিছু বলার আগে ফাতেমা বেগম বললো,
“না না শ্যামার তো জ্বর কিভাবে যাবে?ও কয়দিন কলেজে যাবে না।”
ফারিয়া মাথা নেড়ে বললো,
“অহ!আচ্ছা।”
ফারিয়া বিছানায় বসতে গেলে ফাতেমা বেগম বললো,
“ফারিয়া ওকে ওষুধ খাইয়ে দিয়েছি এখন ঘুমাবে।তুমি না হয় পরে এসো।””
ফারিয়া বুঝতে পারে তাকে শ্যামার সাথে কথা বলতে দেবে না।সে মাথা নেড়ে উঠে দাঁড়ায়।ফাতেমা বেগমের পেছনে পেছনে যেতে নিয়ে সে পেছনে তাকিয়ে ছোট একটা দলা মুচরানো কাগজ শ্যামার দিকে ছুড়ে দেয় তারপর চোখে হেসে বেরিয়ে যায়।শ্যামা কাগজটা হাতে নিয়ে লুকিয়ে ফেলে।বুকটা বেশামাল ভাবে কাঁপছে।ফাতেমা বেগম জলদি ফিরে আসে।
“এই,ফারিয়া তোকে কি দিলো?”
শ্যামার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠে।কাগজে কি লেখা সে এখনো পড়েনি।শ্যামা মাথা নেড়ে বললো,
“কিছু দেয়নি।”
“কি জানি দিলো আমি দেখলাম।”
“না।ও তো তোমার সাথেই চলে গেলো।”
ফাতেমা বেগমের বিশ্বাস হয় না।
“তুই উঠে দাঁড়া।”
শ্যামা উঠে দাঁড়ায়।ফাতেমা বেগম অনেকক্ষণ খুঁজেও কিছু না পেয়ে দরজা আটকে চলে যায়।শ্যামা কাঁপা কাঁপা হাতে কাগজটা খুলে।
কাগজে ঘুট ঘুট অক্ষরে লেখা,
“রাতে একটু দেখা করতে পারবে?শুধু একটু।পরিস্থিতি যাইহোক আমি সব ঠিক করে দেবো।আমি আমার পাখিটাকে খুব ভালোবাসি।বাড়ির সামনে অপেক্ষায় থাকবো।”
শ্যামা ফিরোজের হাতের লেখায় অসংখ্য চুমু দেয়।চিঠিটা গালে ঘষে নেয়।তার মনে হচ্ছে এটা চিঠি না এটা ফিরোজের হাত।ফিসফিস করে বললো,
“আমিও তোমাকে খুব ভালোবাসি।”
কিন্তু দেখা করবে কি করে?আজকে দু’রাত ধরে ফাতেমা বেগম শ্যামার সাথে ঘুমাচ্ছে উনার চোখ ফাঁকি দিয়ে যাওয়া অসম্ভব।শ্যামা চিন্তায় সারাদিন কাটিয়ে দেয়।ঘর থেকে কিভাবে বের হবে সেই চিন্তায় বিভোর হয়ে থাকে।
আজকে শ্যামার ভাগ্য তার উপরে সদয় ছিলো ফাতেমা বেগম দুই রাত একনাগারে জেগে থাকার ফলে প্রেসার কমে যায়।আর প্রেসার কমে যাওয়ার ফলে উনি প্রেসারের ওষুধ খেয়ে ঘুমায় তাই রাত বারোটা বাজতে বাজতেই উনি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে যায়।
রাত একটা;শ্যামা এতোক্ষণ ঝিম ধরে চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর ভান করে শুয়ে ছিলো।ফাতেমা বেগমের ভারী শ্বাস ফেলার শব্দ শুনে আস্তে করে উঠে বসে।নিঃশব্দে পা ফেলে বেরিয়ে যায়।দরজা ভেজিয়ে উঠোনে নেমে আসে।ভয়ে হাত পা থরথর করে কাঁপছে কিন্তু প্রেমী মনকেও আটকাতে পারছে না সে ফিরোজের সানিধ্যে যাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে।শ্যামা দ্রুত এগিয়ে যায়।বাড়ির একটু দূরেই একটা অন্ধকারে একটা মানবছাঁয়া ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।শ্যামা দ্রুত সেদিকে এগিয়ে যায়।ফিরোজ শ্যামার দিকেই তাকিয়ে ছিলো সেও একটু এগিয়ে যায়।বৈশাখী ঝড়ের মতো দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে।শ্যামা শব্দ করে কেঁদে উঠে।ফিরোজ বললো,
“আস্তে ।কেউ শুনে ফেলবে।”
শ্যামা চুপ হয়ে যায়।দুজনের ভালোবাসার স্পর্শ পেয়ে দুজনেই সস্থির নিঃশ্বাস ফেলে,একে অপরকে পাগলের মতো আঁকড়ে রাখে।ফিরোজ শক্ত করে শ্যামাকে জড়িয়ে নেয়।ফিরোজ এতো শক্ত করে ধরাতে শ্যামার আঘাতের ফলে ফুলে উঠা কালসিটে হওয়া জায়গায় ব্যাথা পায় সে ককিয়ে উঠে।ফিরোজ বললো,
“কি?”
শ্যামা মাথা নেড়ে না করে ফিরোজের বুকে ঢুকে যাবার বৃথা চেষ্টা করে।ফিরোজের সন্দেহ হয়,শ্যামার শরীর খুব গরম তাছাড়া সে জড়িয়ে ধরাতে মনে হলো ব্যাথা পেয়েছে।সে জোড় করে শ্যামাকে নিজের থেকে সরাতে চায়।শ্যামা বলে,
“আরেকটু থাকি?”
ফিরোজ শ্যামাকে ছাড়িয়ে নেয়।মোবাইলের ফ্ল্যাশ জ্বালাতে জ্বালাতে বললো,
“আগে দেখি কই ব্যাথা পেয়েছো।”
শ্যামা চুপচাপ ফিরোজের কাজ দেখে।ফিরোজ আলোতে শ্যামার হাত গলা দেখে চমকে যায়।ফারিয়া বলেছিলো শ্যামার জ্বর কিন্তু এখন তো দেখা যাচ্ছে বিষয় ভিন্ন।হাতে গলায় কেমন কালো দাগ পরে আছে,দেখেই বুঝা যাচ্ছে এগুলো আ,ঘাতের চিহ্ন।ফিরোজের বুক ধরফর করে,
“এই দাগ কি সারা শরীরেই আছে?”
প্রত্যেকটা মানুষই হয়তো প্রিয় মানুষের কাছে আসলে কষ্ট,ব্যাথাগুলো একটু আশকারা পেলে হু হু করে বেরিয়ে আসে।শ্যামার ক্ষেত্রেও তাই হলো ফিরোজের কথায় বুক ভেঙ্গে কান্না আসে।চোখ উপচে পানির স্রোত বয়।মাথা নেড়ে হ্যাঁ জানায়।
ফিরোজের মুখাবয়ব কষ্টে ভারাক্রান্ত হয়।শ্যামার পানিতে টলমল চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে।ফিরোজকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে কান্নার তোড়ে শ্যামার ঠোঁট তিরতির করে কাঁপিয়ে কেঁদে দেয়।ফিরোজ গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“কে মে,রেছে?রিপন?”
“আব্বা।”
ফিরোজ হাত দিয়ে চুল খামচে ধরে।নিজেকে শান্ত করে বললো,
“উনারাও না।কিছু হলেই গায়ে হাত তুলতে হবে?সেদিন আব্বা কি বলেছিলো?”
মোহাম্মদ আলী তার আব্বাকে যা যা বলেছে শ্যামা সব ফিরোজকে বলে।ফিরোজ বললো,
“কালকে অনেক ঝগড়া করেছি,যেভাবেই হোক আমি মানিয়ে নেবো।”
ফিরোজ আর শ্যামা কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।
শ্যামা বললো,
“কখন এসেছো?”
ফিরোজ হেসে বললো,
“রাত দশটায়।”
শ্যামা অবাক হয়।
“এতোক্ষণ অপেক্ষা করলে।”
“তোমার জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করতে পারবো।”
শ্যামা আগেও ফিরোজের উপর মুগ্ধ ছিলো এখন আরো মুগ্ধ হয়।
ফিরোজ শ্যামার হাত ধরে,পরম যত্ন নিয়ে আ,ঘাতগুলো ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখে,আ,ঘাতে চুমু দিয়ে বললো,
“খুব কষ্ট হচ্ছে? ”
ফিরোজের স্পর্শ,ভালোবাসায় শ্যামা আরো বেশী কাঁদে।মাথা নেড়ে বললো,
“না।”
ফিরোজের চোখে পানি টলটল করছে।তার জন্যই তো মেয়েটা এতো কষ্ট পাচ্ছে।ভাগ্যিস অন্ধকার বলে শ্যামা তার কান্না দেখতে পেলো না।
“মিথ্যা বলোনা।মা,রের কারণে জ্বর উঠে গেছে আর তুমি বলছো কষ্ট হচ্ছে না।”
ফিরোজের ধরা গলার স্বর শুনে শ্যামা বুঝতে পারে রাগী পুরুষটার তার জন্য একটা নরম মন আছে যা এই মূহুর্তে তার ব্যাথায় কাঁদছে।
“এতোক্ষণ ব্যাথা হচ্ছিলো তোমার কাছে এসে সব ভালো হয়ে গেছে।”
ফিরোজ চুপ করে থাকে।শ্যামা বললো,
“তুমি কাঁদছো কেনো?”
ফিরোজ এবার খুব আলতো করে শ্যামাকে নিজের বুকে জড়িয়ে নেয়।দুনিয়ার সব সুখ বুঝি এই ছোট মেয়েটার কাছেই নিহিত।এই পাখিকে কাছে পেলে এতো শান্তি লাগে এটা কাউকে বলে বোঝানো যাবে না।শ্যামা বিড়ালছানার মতো ফিরোজের বুকে মিশে থাকে।শ্যামা ফিরোজের বুকে চুমু দেয়।ফিরোজ আস্তে করে বললো,
“তুমি চিন্তা করোনা আমি সব ঠিক করে দেবো।”
শ্যামা কান্নাভেজা গলায় বললো,
“আচ্ছা।”
ফিরোজ দু হাতে শ্যামার গালে হাত রেখে মুখে অজস্র চুমু দেয়।কপালে কপাল ঠেকিয়ে বললো,
“খুব ভালোবাসি।”
শ্যামা দু’হাত দিয়ে ফিরোজের গলা আঁকড়ে ধরে।গালে গাল ঘষে নেয়।
“আমিও তোমাকে খুব ভালোবাসি।”
“দেখা করতে পারছিলাম না মনে হচ্ছিলো আমার দম আটকে আসছে।”
শ্যামা বিরবির করে বললো,
“আমারো।এই শোনো আমি কিন্তু তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না।”
ফিরোজ হেসে বললো,
“আমাকে ছাড়া বাঁচবে কেনো,দুজন একসাথে বাঁচবো।”
শ্যামা ফিরোজের বুকে নাক ডুবিয়ে রাখে।এই মানুষটার শরীরের ঘ্রান এতো ভালো লাগে।ফিরোজ শ্যামার কপালে চুমু দিয়ে বললো,
“বাড়ি যাও।কেউ টের পাবে।”
শ্যামা আবার বাচ্চাদের মতো কেঁদে দেয়।
“বাড়ি যাবো না।আমি একবারে চলে এসেছি।”
ফিরোজ চুপচাপ শ্যামার দিকে তাকিয়ে থাকে।পরম যত্নে পাগল প্রেমিকার চোখের পানি মুছিয়ে দেয়।
“চলে এসেছো?”
“হ্যাঁ।”
“কেনো?”
“বাড়ি গেলে আমাকে বিয়ে দিয়ে দেবে।”
“আমি থাকতে কোথাও বিয়ে হবে না।ঠিক আছে?”
“না ঠিক নেই।আমি বাড়ি যাবো না।”
“এভাবে চলে আসা ঠিক না,তোমার আব্বাকে আমার আব্বা অপমান করেছে আমি চাই আমার আব্বা নিজের ভুল বুঝতে পারুক আর তোমার আব্বা যোগ্য সম্মান পাক।”
শ্যামা বুঝতে পারে ফিরোজ ঠিক কথা বলছে কিন্তু বাড়ি গেলেই বিপদ তা সে জানে।সে চুপচাপ জড়িয়ে থাকে।ফিরোজ শ্যামাকে ছাড়িয়ে দূরে দাঁড়ায়।
“যাও।”
শ্যামা যায় না।জুলুজুলু চোখে তাকিয়ে থাকে।ফিরোজ হাসে হয়তো প্রেমিকার মনের ভাষা চোখেই বুঝে ফেলেছে।এগিয়ে এসে আলতো করে ঠোঁট স্পর্শ করে বললো,
“বাড়ি যাও শ্যামা আর একমিনিট থাকলে আর যেতে পারবে না।”
শ্যামা তার হাত দিয়ে ফিরোজের গালে হাত ভুলিয়ে নিজের হাতে চুমু দেয়।ফিরোজ বললো,
“কি হলো?”
“তোমার স্পর্শ হাতে মেখে নিলাম।”
ফিরোজ হাতে ধরে বললো,
“এমন করে আমাকে পাগল বানিয়ে দিচ্ছো কেনো লক্ষীটা।যাও যেভাবেই হোক যোগাযোগ রাখবো।”
“আচ্ছা।”
“হাসো।মুখ এমন করে রাখলে আমার খারাপ লাগে তো।”
শ্যামা হাসে।ফিরোজ গালে হাত দিয়ে বললো,
“আমার রানী।”
শ্যামা ধীরে ধীরে বাড়ির পথে এগিয়ে যায়।কয়েকবার পেছনে ফিরে দেখে ফিরোজ তখনো দাঁড়িয়ে আছে তার মুখে হাসি ফুটে উঠে সে জানেও না বাড়িতে তার জন্য কতোবড়ো ঝড় অপেক্ষা করছে জানলে ভুল করেও বাড়ি যেত না।
চলবে….
#মধুমাস
#পর্ব_২৬
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
“কোথায় গিয়েছিলি?”
শ্যামার চোখ বড়ো বড়ো হয়ে যায়,কণ্ঠনালি শুকিয়ে মরুভূমির ন্যায় খটখটে হয়ে যায়।শান্তিপূর্ণ মুচকি হাসি মুহূর্তেই ফ্যাকাসে হয়ে সেখানে ভর করে ভ,য়।শ্যামা দরজায় দাঁড়িয়ে হাত পায়ের মৃদু কাঁপন স্পষ্ট টের পায়।
অন্ধকার রুমের মধ্যে থেকে ফাতেমা বেগমের রুক্ষ কন্ঠ আবারো ফিরে আসে।
“ভেতরে আয়।”
শ্যামার প্রাণপাখি ছটফট করে উঠে।দুর্বল পা বাড়িয়ে রুমে প্রবেশ করে।ফাতেমা বেগম দরজা বন্ধ করে লাইট জ্বালায়।শ্যামা টিনের বেড়ার সাথে সিঠিয়ে দাঁড়ায়।ঘরের আরেক পাশে শান্তা দাঁড়িয়ে আছে।শান্তাকে দেখে শ্যামা বুঝতে পারে শান্তাই ফাতেমা বেগমকে জাগিয়েছে।শান্তার মুখের ঠোঁট টিপা হাসি দেখে শ্যামার খুব খা,রাপ লাগলো,মানুষের ভাবী নাকি বোনের মতো হয় কিন্তু তার ভাবী এমন কেনো?শান্তাকে দেখে তার ঘৃণা লাগলো। ফাতেমা বেগমের চোখ দিয়ে আগুনের ফুলকি বেরোচ্ছে,জোড়ে জোড়ে শ্বাস ফেলে বললো,
“কথার উত্তর দে শ্যামা।”
শ্যামা জিভ দিয়ে শুষ্ক ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়।কথা বলতে গিয়ে টের পায় তার গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।সে বহুকষ্টে বললো,
“আম্মা আমি… ”
শ্যামা তার কথা শেষ করার আগে ফাতেমা বেগম বললো,
“টয়লেটে তো যাসনি।তাহলে কোথায় গিয়েছিলি?”
শ্যামা অপলক তার আম্মার দিকে তাকিয়ে আছে।মনে মনে যুতসই উত্তর মিলাতে পারছেনা।শ্যামাকে চুপ করে থাকতে দেখে ফাতেমা বেগম এগিয়ে আসে।হাত দিয়ে শ্যামার মুখ চেপে ধরে।
“কথা বল।”
গাল চেপে ধরাতে শ্যামার কথা বলতে সমস্যা হয়।সে বললো,
“আম্মা।”
“ফিরোজের কাছে গিয়েছিলি?”
শ্যামা চুপচাপ ব্যাথা সহ্য করে কিন্তু কোনো কথা বলেনা।শ্যামকে চুপ থাকতে দেখে ফাতেমা বেগম হাতের শক্তি বাড়িয়ে আরো জোড়ে চেপে ধরে বললো,
“বল।”
শ্যামা মুখে র,ক্তের নোনতা স্বাধ পায়।ব্যাথায় ককিয়ে উঠে বললো,
“হ্যাঁ।”
শ্যামার কথা শুনে ফাতেমা বেগম তার মুখ ছেড়ে টেবিলের কাছে হেলান দিয়ে রাখা বিছানার ঝাড়ু হাতে নেয়।শ্যামা ঠোঁট ভেঙ্গে কেঁদে দেয়।
“আম্মা আমাকে কিছু বলতে দাও।”
ফাতেমা বেগম গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে শ্যামাকে কয়েকটা বারি দিয়ে ফেলে।শ্যামা আ,ঘাতের চোটে ঘরের মধ্যে ছুটতে থাকে।ফাতেমা বেগম চুল টেনে ধরে বললো,
“এতো রাতে কি করেছিস বল।অ,সভ্য।শেষ পর্যন্ত তুই এতো খারাপ হলি?বিয়ের দরকার হলে বলতি আমরা বিয়ে দিতাম কিন্তু এই নোংরা কাজ করলি কি করে?”
শ্যামা স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে।তার আম্মা কি ভাবছে এসব?সে আর ফিরোজ কি এতো খারাপ?প্রেম করলে কি শারীরিক সম্পর্কই মূখ্য ব্যাপার?মায়ের মুখে এমন তর কথা শুনে শ্যামার খুব খারাপ লাগে।মাথা নেড়ে প্রতিবাদ করে বললো,
“না না আম্মা।তুমি যা ভাবছো তা না।আমি আর ফিরোজ কেউই এতো নিচু মনের না।”
শান্তা পাশ থেকে বললো,
“বললেই হলো?এতো ভালো মনের হলে রাতে কেন দেখা করতে গেলি?”
ফাতেমা বেগম শ্যামার দিকে তাকিয়ে আছে।শ্যামা বললো,
“আম্মা তুমি আমাকে বিশ্বাস করো না?”
“করি না।তুমি আমাকে ঘুমে রেখে ওই ছেলের সাথে দেখা করতে চলে গিয়েছিস,কিভাবে বিশ্বাস করবো।”
“আমি শুধু একটু দেখতে গিয়েছি আর কিছু না।তুমি যা ভাবছো তা ভুল।”
ফাতেমা বেগম বললো,
“এতো কথা না বলে ফিরোজকে ভুলে যা।”
শ্যামার সারা শরীরে পুরোনো ব্যাথাগুলো আবারো তরতাজা হয়ে উঠে।সে দাতে দাত চেপে বললো,
“কখনো না।”
ফাতেমা বেগম রেগে যায়।ঝাড়ু দিয়ে আরো কয়েকটা বারি দিয়ে বললো,
“তোর আব্বাকে ভালো করে বললে না হয় বুঝতাম কিন্তু এতো অপমানের পরেও তুই এই কথা কিভাবে বলিস?এই জন্য তোকে জন্ম দিয়েছিলাম?”
শ্যামা মাটিতে বসে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে।শান্তা বললো,
“থাক আম্মা আর মা,ইরেন না।”
ফাতেমা বেগম ঝাড়ু ছুড়ে ফেলে চলে যায়।শান্তা শ্যামার কাছে এসে বললো,
“ইমার্জেন্সি পিল এনে দেবো নাকি?”
শ্যামা রাগ্বত চোখে শান্তার দিকে তাকায়।
“এতো নিচু মনের কেনো তুমি?”
“আমাকে বল।পরে বাচ্চা টাচ্চা হয়ে গেলে আমাদেরই ঝামেলায় পরতে হবে।”
শ্যামার সারা শরীর ঘৃণায় রি রি করে উঠে।শান্তার দিকে তাকিয়ে রেগে বললো,
“বেরিয়ে যাও আমার রুম থেকে।”
শান্তা বললো,
“কেন?আমি চলে গেলে নাগরকে রুমে এনে ঢোকাবি নাকি?”
“হ্যাঁ তাতে তোমার কি?”
শান্তা হেসে বললো,
“কি আবার আম্মাকে আবারো ডেকে আনবো।”
“তুমিই মাকে ডেকেছিলে তাই না?”
“ডাকবোনা,নাগরের সাথে দেখা করতে গিয়েছো।”
শ্যামা সারা শরীর ব্যাথায় কেঁপে কেঁপে উঠছে।শ্যামা আর কথা বাড়াতে চায় না।সে হাত বাড়িয়ে দরজা দেখিয়ে বললো,
“বেরিয়ে যাও অ,সভ্য মহিলা।”
শান্তা চোখ পাকিয়ে দরজার দিকে যেতে যেতে বললো,
“কে অ,সভ্য তা তো বুঝাই যায় রাতের বেলা বেরিয়ে যায়।”
শান্তা যাওয়ার আগে বাহির থেকে দরজা আটকে চলে যায়।বন্ধ দরজার দিকে তাকিয়ে শ্যামার নাকের পাটাতন ফুলে উঠে,ঠোঁট ফুলিয়ে মুখে হাত ঢেকে কেঁদে ফেলে।সে আর ফিরে আসতে চায়নি কিন্তু ফিরোজ তাকে জোড় করে পাঠিয়েছে এবার কি হবে?
শরীরের যন্ত্রণায় তার খুব কষ্ট হচ্ছে।মুখটা নোনতা নোনতা লাগাতে থু থু ফেলে দেখে থু থু এর পরিবর্তে টাটকা র,ক্ত এসেছে।গালে হাত দিয়ে তখন ফাতেমা বেগম চেপে ধরাতে যে ব্যাথা হয়েছিলো তা তীব্র আকাড়ে অনুভূত হয়।
ফিরোজ সকালে নাস্তা করতে যায়।মোহাম্মদ আলী তার সাথে কথা বলেনা নাস্তাও খায় না।ফিরোজও রাগ করে আগ বাড়িয়ে কথা বলেবা।উনি আজকে টেবিলে বসে আছে ফিরোজ গম্ভীর মুখে নাস্তা না খেয়েই বেরিয়ে যেতে চায়।মোহাম্মদ আলী দারাজ গলায় বললো,
“ফিরোজ।দাড়া।”
ফিরোজ দাঁড়ায়।মোহাম্মদ আলী বলে,
“নাস্তা করে যা।”
“আমি নাস্তা করবো না।”
রোজিনা বেগম বললো,
“তা করবে কেনো ঘরে দাসী আছিনা কোমড়ের হাড় ক্ষয় করে নাস্তা বানাবো ইচ্ছা হলে খাবে না হলে নাই।মাইয়াদের পিছে ঠিকি ঘুরতে পারে,মায়ের মতো হইছে একদম,বদ,মাইশ।”
ফিরোজের মাথা গরম হয়ে যায়।
“এই মহিলা চুপ।একদম চুপ।”
“চুপ না হলে কি করবে?”
ফিরোজের হঠাৎ করে খুব খারাপ লাগে।মা থাকলে কি আজকে এমন করে বলতে পারতো?তার পছন্দকে এমন অবজ্ঞার চোখে দেখতো?ফিরোজ শক্ত চোখে তার আব্বার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
“আব্বার উনাকে চুপ করতে বলেন।”
রোজিনা বেগম বললো,
“হুকুম দেয়,বেয়াদব।”
মোহাম্মদ আলী বিরক্ত কন্ঠে বললো,
“তুমি চুপ থাকো।আমি কথা বলছি।ফিরোজ তুই কাল রাতে কেনো শ্যামার সাথে দেখা করতে গেলি?”
ফিরোজ বিস্মিত হয়।সে যে শ্যামার সাথে দেখা করেছে তা উনি জানলো কি করে?উনি কি তার পিছনে খোঁচর লাগিয়েছে?হয়তো;না হলে কি করে জানবে?সে বললো,
“কে বলেছে?”
“যাসনি?মিথ্যা কথা?”
“গিয়েছি তাতে আপনার কি?”
“কেন যাবি?তোকে মানা করেছি না।”
“বউয়ের সাথে দেখা করবো না?”
“কিসের বউ?”
“আমি তো শ্যামাকেই বিয়ে করবো।”
মোহাম্মদ আলী ছেলের দিকে তাকিয়ে বললো,
“বিয়ে করবে?”
“হ্যাঁ।”
মোহাম্মদ আলী কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
“আচ্ছা ভালো কথা।”
ফিরোজ বললো,
“আব্বা ভালোয় ভালোয় মেনে নেন।”
“হ্যাঁ তাই ভাবছি।”
ফিরোজ চলে গেলে রোজিনা বেগম মোহাম্মদ আলীকে বললো,
“তুমি মেনে নিলে?এমন ফকিন্নি মার্কা বাড়িতে বিয়ে করাবে!”
মোহাম্মদ আলী হাসে।রোজিনা চোখ পাকিয়ে বললো,
“হাসি আসে তোমার?”
“আসলো তো।”
রাত নয়টা ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে।স্বপন ইসলাম বাড়িতেই ছিলো।আকস্মিক মোহাম্মদ আলী স্বপন ইসলামের বাড়িতে আসেন।উনার উপস্থিতিতে সবাই অবাক হয়।স্বপন ইসলাম ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে।মোহাম্মদ আলী ঘরে যায়না।বাহির থেকে বললো,
“আপনি কথা রাখতে পারেননি।”
স্বপন ইসলাম নিজের মেয়ের বন্ধ রুমের দিকে তাকায়।মেয়ে তো বাড়ি থেকে বেরোয়নি; তাহলে!
মোহাম্মদ আলী বললেন,
“আপনার মেয়েকে আটকে রাখতে পারেন না কেনো?বাবা ভাই ঘরে থাকতে রাত একটায় একটা মেয়ে কি করে বাড়ির বাহিরে চলে যায়?নাকি আপনারাই বাহিরে যেতে দিলেন।”
স্বপন ইসলাম নিজের স্ত্রীর দিকে তাকায়।ফাতেমা বেগম অপরাধী চোখে তাকিয়ে আছে।স্বপন ইসলাম কিছু বলার আগে মোহাম্মদ আলী বললো,
“মেয়েকে সামলান।আর না পারলে হাত পা ভেঙ্গে বাসায় বসিয়ে রাখেন,আল্লাহর উয়াস্তে আমার ছেলেকে মুক্তি দেন।আসি।”
মোহাম্মদ আলী যেমন তু,ফানের বেগে এসেছিলো তেমন চলেও গেলো মাঝখান দিয়ে শ্যামাদের টিনের চালের ঘরটায় তুফানে সব লন্ডবন্ড করে গেলো।শ্যামা রুম থেকে সব কথা শুনতে পেলো শুনে ভ,য়ে কুঁকড়ে যায়।স্বপন ইসলাম স্ত্রীর দিকে তাকায়।
“ও কি বেরিয়ে গিয়েছিলো?”
ফাতেমা বেগম চুপ হয়ে থাকে।স্বপন ইসলাম মেয়ের রুমের দিকে যায়।উনার ক্ষিপ্ত রুপ দেখে সবাই ভ,য় পেয়ে যায়।যে তুফান এসেছিলো তার সবটা আ,ঘাত শ্যামার উপরে আছড়ে পরে,কাতর শ্যামা আর সইতে পারে না।চোখের পানি অঝোরে ঝড়ছে আর শরীর কাঁপছে।সবাই স্বপন ইসলামকে শ্যামার থেকে ছাড়িয়ে নেয়।উনি
কাঁপা কন্ঠে বললো,
“রিপন ঘটককে বলবি তাড়াতাড়ি সমন্ধ আনতে।এই জঞ্জাল যতো তাড়াতাড়ি পারি দূর করে দেবো।”
ফিরোজ রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলো।শ্যামাদের বাড়ি থেকে তার আব্বাকে বেরোতে দেখে সে চিন্তিত্ব হয়।
“আপনি ওদের বাড়িতে গিয়েছিলেন কেনো?”
স্বপন ইসলাম কুটিল হাসে কিন্তু কোনো কথা না বলে চলে যায়।ফিরোজের বুকটা কেঁপে উঠে।এক দৌড়ে শ্যামাদের বাড়িতে চলে আসে।বাড়ির ভেতরে সবার হইচই শুনে কোনোদিকে না তাকিয়ে ভেতরে চলে যায়।শ্যামাকে এমন অবস্থায় দেখে ফিরোজ বললো,
“আপনারা ওকে কি করেছেন?”
ফিরোজকে দেখে রিপন রে,গে যায়।এগিয়ে এসে সে ফিরোজকে আ,ঘাত করে,একে একে কয়েকবার আ,ঘাত করে।ফিরোজ শূন্য দৃষ্টি মেলে শ্যামার দিকে তাকিয়ে আছে।রিপন তাকে ধাক্কা দিয়ে বারান্দা থেকে উঠোনে ফেলে দেয়।বলিষ্ঠ দেহের ফিরোজ ধপাস করে মাটিতে আছড়ে পড়ে।ঝিরিঝিরি বৃষ্টির কারণে।গায়ে কাদা লেগে যায়।স্বপন ইসলাম বললেন,
“রিপন থামো।আর এই ছেলেকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলো।”
শ্যামা পা হেচড়ে হেচড়ে বারান্দায় আসে।অস্পষ্ট গলায় বললো,
“ভাইয়া আর মা,ইরো না ভাইয়া।”
ফিরোজের চোখে পানি টলমল করছে।সে চাইলে রিপনের সাথে মা,রা,মা,রি করতে পারতো কিন্তু তার শ্যামাকে পেতে হবে তাই এখন বাড়াবাড়ি করা ঠিক না।সে শ্যামার দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমি আসবো,তুমি কেঁদোনা শ্যামা।”
রিপন ফিরোজকে ধাক্কা দিয়ে বললো,
“আরেকবার আসলে পা ভেঙ্গে দেবো,বেরিয়ে যা।”
শ্যামা কেঁদে দেয়।
“ভাইয়া আর মে,রো না।”
রিপন হুংকার দিয়ে উঠে।
“তুই ভেতরে যা।”
ফিরোজ আর শ্যামা অসহায় চোখে একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে।দুজনের চোখে না পাওয়ার আকুতি,ব্যাথা ভুলে নিজেদের কাছে টানার ব্যাকুলতা।
কি হবে এই অসম প্রেমের?আদো কি মিলন হবে?
চলবে……