#মধুমাস
#পর্ব_২১
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
শ্যামা উজ্জ্বল মুখে ফারিয়ার রুমে ফিরে যায়,আজকে আরেক নতুন সুখের উন্মোচন হয়েছে,যা তাকে ফিরোজের প্রতি আরো ব্যাকুল করছে।ফিরে আসার আগে ফিরোজ বলেছে,
“খুব শীঘ্রই বিয়ে করে নেবো।”
শ্যামা লাজুক হাসে।গ্রীষ্মের কড়া রোদে যেমন আচমকা ঝরঝরিয়ে বৃষ্টি নামে তেমনি ফিরোজের বাহুবন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে শ্যামার মুখে একরাশ লজ্জা ভর করে।মাথা নিচু করে ফিরোজের সামনে থেকে পালিয়ে আসে।
রুমে এসেও শ্যামার মুখের লাল রাঙ্গাভাব যায় না,চোখের তারায় খুশীর ঝিলিক সরে না কিন্তু ফারিয়ার সামনে নিজের এসব ভাবভঙ্গীমা প্রকাশ করা যাবে না সে যতোটা সম্ভব নিজের মনের ভাব লুকানোর চেষ্টা করে।ফারিয়া বিছানায় আসাম করে বসে আছে।শ্যামা ফারিয়াকে দেখে হাসে।বিছানায় বসে বললো,
“কথা শেষ?”
ফারিয়া কথা বলেনা।তীর্যক চোখে শ্যামার দিকে তাকিয়ে আছে।ফারিয়াকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে শ্যামা শুকনো ঢোক গিলে বললো,
“কি হয়েছে?”
ফারিয়া গম্ভীর গলায় বললো,
“কবে থেকে এসব চলছে?”
শ্যামা হকচকিয়ে যায়।চোখের তারায় বিষ্ময় জেগে উঠে।ফারিয়ার প্রশ্নের মানে হলো ফিরোজের সাথে সম্পর্কের ব্যাপারে সে জেনে গেছে।শ্যামা না বুঝার বান করে বললো,
“কোন সব?”
শ্যামার এমন ভাব ফারিয়ার মেজাজ খারাপ করে দেয়।চোখ বড়ো বড়ো করে বললো,
“ছাদে যে চুম্মা দেওয়া হচ্ছিলো ওইসব।”
শ্যামার মুখ লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে যায়।ফারিয়া দেখেছে?ইশ!কি লজ্জার ব্যাপার।সে কোনোরকম বললো,
“কি বলিস এসব?”
ফারিয়া কাছে আসে।হাত খাঁমচে ধরে বললো,
“একদম ভাব নিবি না।শয়তান মেয়ে।কবে থেকে এসব চলছে সেটা বল।”
শ্যামা তারপরও স্বীকার যায় না।করুণ স্বরে বললো,
“কোনো কিছু চলছে না।”
ফারিয়া চোখ পাকিয়ে তাকায়।
“ঢং করবিনা।আমি নিজ চোখে দেখেছি।”
আর কোনো উপায় না দেখে শ্যামা ফারিয়াকে জানাতে বাধ্য হয় তবে প্রেমের সঠিক বয়সটা জানায় না।বোকা বোকা হেসে বললো,
“এক মাস হলো।”
ফারিয়া চোখ গোল গোল করে তাকায়।
“এক মাস!কিভাবে হজম করলি?একবারও আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করলি না?”
শ্যামা মাথা নেড়ে বললো,
“জানাতাম তো তার আগেই তুই জেনে গেলি।”
ফারিয়ার মন খারাপ হয়।শ্যামার থেকে এমন লুকোচুরি সে আশা করেনি।সে মন খারাপ করে বললো,
“তুই আমাকে এতো পর ভাবিস?”
শ্যামা ফারিয়ার মন খারাপের আঁচ টের পায়।ফারিয়ার হাত ধরে বললো,
“তুই ভুল বুঝিস না প্লিজ।তোকে আপন মনে করি বলেই তো পারমানেন্ট তোদের বাড়িতে আসার চেষ্টা করছি।”
ফারিয়া কথা বলেনা।চুপচাপ অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।শ্যামা ফারিয়ার সাথে কথা বলার চেষ্টা করে কিন্তু ফারিয়া নিশ্চুপ।শ্যামা ফারিয়াকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“প্লিজ ফারু কথা বল।আমার ভুল হয়েছে।”
তারপরও ফারিয়া কথা বলেনা।শ্যামা ফ্লোরে দাঁড়িয়ে কানে ধরে বললো,
“এই কানে ধরছি আমার খুব ভুল হয়েছে।তুই চাইলে তোর মাসুম ভাইকে ছ্যাকা দিয়ে চলে আসবো।”
শ্যামার কথা বলার ধরনে ফারিয়া হেসে ফেলে।
“হুহ।প্রেমের জালে আটকিয়ে এখন ছ্যাকা দেবে।এতো ঢং জানিস?”
রুপা অসহায় গলায় বললো,
“তুই বললে দেবো।তুই আমার জানে জিগার না?”
“হয়েছে।”
“কালকে বিয়ে আজকে এভাবে মন খারাপ করে থাকিস না প্লিজ।”
ফারিয়া মাথা দুলিয়ে বললো,
“আচ্ছা,আমার বিয়ে বলে ছাড়া পেলি।”
শ্যামা মুচকি হাসে।
ফারিয়া বিছানায় আধশোয়া হয়ে শুয়ে বললো,
“কিভাবে পটালি আমার গম্ভীর ভাইকে?”
শ্যামা ফারিয়ার সামনে শুয়ে বললো,
“পটে গেলো।”
“কিভাবে?”
শ্যামা লজ্জা পায়।বিছানায় মুখ ডুবিয়ে বললো,
“প্রপোজ করলাম আর তোর ভাই রাজী হয়ে গেলো।”
ফারিয়া অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে বললো,
“এতো সহযে ভাই রাজী হলো?”
“হ্যাঁ।”
“কিভাবে করলি এটা?”
“হয়ে গেলো।”
ফারিয়া গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার মতো ফিসফিস করে বললো,
“এই;চুমু খেতে কেমন রে?”
শ্যামা ফারিয়ার হাতে আলতো থাপ্পড় দিয়ে বললো,
“ছিহ!সর।”
“আরে বল না আমার তো কোনো এক্সপেরিয়েন্স নাই।”
“কালকে রাতেই সব অভিজ্ঞতা হবে।”
“আচ্ছা।”
শ্যামা ফারিয়াকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“আমি খুব সরি।তোকে বলা উচিত ছিলো।”
“আমার ভাইকে আমি খুব ভালোবাসি,ভাইয়ের কথা ভেবে তোকে ক্ষমা করে দিলাম।যা।”
খুব সুন্দরভাবে ফারিয়ার বিয়েটা অনুষ্ঠিত হয়।ফিরোজ এক মূহূর্তের জন্যও দাঁড়াতে পারেনি,সারাদিন ব্যস্ত ছিলো।শ্যামা একটু পর পর ফিরোজকে দেখছে,কাজ করা অবস্থায় ফিরোজকে কি সুন্দর লাগে,তখন এতো সুদর্শন মনে হয় ইচ্ছে করে বুকে চলে যেতে।মেয়েরা যাকে একবার মন দেয়,ভালোবাসার গোপন কুঠরিতে জায়গা দেয় তাকে তার চোখে সারাজীবনের জন্য সুন্দর লাগে এখন সে যে অবস্থাতেই থাকুক না কেনো।
ফিরোজের কাজের মাঝে শ্যামার চোখে চোখ পড়লে মুচকি হাসি দিয়ে চলে যাচ্ছে,এই টুকুই শ্যামাকে এক আকাশ পরিমান সুখ দিচ্ছে।
ফারিয়াকে বিদায় করতে করতে রাত নয়টা বেজে যায়।ফারিয়াকে বিদায়ের পরে শ্যামা বাড়ি যাওয়ার জন্য বেরিয়ে যায়।তাকে ফিরোজ এগিয়ে দিতে আসে।সারা রাস্তা দুজনেই চুপচাপ হেটে আসে।ফিরোজ থেমে শ্যামার হাত ধরে বললো,
“আজকে থেকে গেলেই পারতে।”
কাল রাতের মধুর স্মৃতি মনে হতেই শ্যামা লজ্জা পায়,আজকে থাকলে আজকেও ফিরোজ পাগলামি করবে।তাছাড়া ফারিয়ার বিয়ে হয়ে গেছে সে কার সাথে থাকবে?আর থাকাটাও সুভনীয় না।
“না।”
বাড়ির কাছে এসে ফিরোজ শ্যামাকে জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে বললো,
“আস্তে আস্তে তুমি আমার সবটা জুড়ে নিজের আধিপত্য ছড়িয়ে দিয়েছো,কখনো আমাকে ছেড়ে যেও না,তোমাকে পেয়ে আমার জীবনের রঙ পালটে গেছে।”
শ্যামা ফিরোজের বুকে মাথা রেখে বুঝতে পারে গম্ভীরমুখো ছেলেটা তার জন্য কতোটা ব্যাকুল।শ্যামা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
“কখনো ছেড়ে যাবোনা।”
একটু দূর হতে টর্চ লাইটের আলো এসে দুজনের উপরে পরে।হঠাৎ আলো আসাতে দুজন ছিটকে দূরে সরে যায়।টর্চ লাইট নিয়ে রিপন এগিয়ে আসে।শ্যামার কাছে এসে ঠান্ডা কন্ঠে বললো,
“বাড়ি চল।”
ঠান্ডা কন্ঠ শুনে শ্যামার গলা শুকিয়ে যায়।বাড়ি এসে রিপন স্বপন ইসলামের কাছে যায়।শান্ত কন্ঠে বলে,
“আব্বা শ্যামার বিয়ে উনারা ভাঙ্গেনি কিন্তু অন্যকেউ ভেঙ্গেছে আর কে ভেঙ্গছে তা জানতে পেরেছি।”
স্বপন ইসলাম উত্তেজিত হয়ে বললো,
“কে?”
শ্যামার সারা শরীর থরথর করে কাঁপে।আজকে কি করে রক্ষা পাবে?
চলবে…..
#মধুমাস
#পর্ব_২২
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
শান্তা বলেছিলো শ্যামা প্রেম করে কিন্তু রিপন সেই কথার গুরুত্ব দেয়নি,
সে কখনো ভাবেনি শ্যামা এমন কিছুতে নিজেকে জড়াবে আসলে শ্যামাকে দেখে কখনো মনে হয়নি প্রেমের মতো কোন সম্পর্কে জড়াতে পারে।পরিবারের সবার ছোট বলে অগাধ ভালোবাসার মাঝে যে এমন কাজ করবে এটা কারো কল্পনায় ছিলো না।বিয়ে ঠিক হয়ে হঠাৎ করে বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ায় রিপনের মনে সন্দেহ জাগে,উনারা পারলে ওইদিনই বিয়ে করে নিয়ে যেতো কিন্তু এতো পছন্দের মাঝে বিয়ে ভেঙ্গে দেয়ার মানে কি?রিপন হাল ছাড়েনি,প্রতিনিয়ত অনুসন্ধান করেছে,কঠিন চেষ্টার পরে জানতে পারে কে এই কাজ করেছে।জানার পরে রিপনের হাত শক্ত হয়ে যায়,মুখের ভাবভঙ্গি হয় আগুনের ন্যায়।বিয়ে আর কেউ না ফিরোজ ভেঙ্গেছে এই সত্য রিপনকে সন্ধ্যা হতে তাড়া করছে।ফিরোজ এই কাজ কেনো করেছে সেটা ভাবতে ভাবতে কারণটাও চোখের সামনে এসে পড়েছে।নিজের চাক্ষুষ শত্রুর বুকে ছোট বোনকে দেখে তার তিক্ত অনুভূতি হয়েছে,ইচ্ছে হয়েছে বোনকে সেখানেই ক,বর দিয়ে ফেলে।রিপনের দিকে তাকিয়ে স্বপন ইসলাম ভ,য়াবহ কিছু আঁচ করেন।দারাজ গলায় প্রশ্ন করে,
“কে?নাম বল।”
রিপন র,ক্তচক্ষু নিয়ে শ্যামার দিকে তাকায়। ভাইয়ের চোখের এমন দৃষ্টি দেখে শ্যামার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠে।রিপন তার আব্বাকে বললো,
“আপনার মেয়েকে জিজ্ঞাসা করেন।”
রিপনের কথায় সবাই অবাক।বিয়ে ভাঙ্গার সাথে কি শ্যামা যুক্ত?তাহলে কি শ্যামাই বিয়েটা ভেঙ্গেছে?কিন্তু কেন?এমন হাজারো প্রশ্ন নিয়ে হতবিহ্বল চোখে সবাই শ্যামার দিকে তাকায়।স্বপন ইসলাম মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
“ও কি বলবে?”
রিপন শ্যামার দিকে তাকিয়ে বললো,
“যা বলার এই অ,সভ্যই বলবে।”
ফাতেমা বেগম উৎকন্ঠা নিয়ে জানতে চাইলো,
“কি বলছিস?বিয়ে কি করে ভাঙ্গবে তা ও জানবে কিভাবে?”
রিপন বললো,
“কিরে,তুই বলবি নাকি আমিই বলবো।”
বাবা ভাইয়ের সামনে এমন পরিস্থিতি শ্যামা আশা করেনি।সবার ভ,য়ে ইতোমধ্যে চোখ দিয়ে পানি পড়া শুরু করে দিয়েছে।রিপনের কথায় বুকের কাঁপন বাড়ে,দম আটকে আসে।শ্যামাকে কাঁদতে দেখে রিপন আরো রেগে যায়।পা বাড়িয়ে শ্যামার গালে শক্ত হাতের থাপ্পড় বসায়,শ্যামা ছিটকে দূরে সরে যায় রিপন ক্ষান্ত হয় না চুলের মুঠি ধরে গালে থাপ্পড় দেয়।রিপনের এমন উগ্র কাজে সবাই অবাক হয়ে যায়,হতবিহ্বল রেশ কাটিয়ে রিপনের থেকে শ্যামাকে আলাদা করে।হঠাৎ করে মেয়ের উপর এমন আক্রমণের জন্য স্বপন ইসলামও ছেলের উপর রেগে যায়।
“ওকে মা,রছিস কেনো?”
রিপন চেচিয়ে বললো,
“তোমার মেয়ে প্রেম করে।কার সাথে জানো?ফিরোইজ্জার সাথে।”
রিপনের কথা শুনে সবাই স্তব্ধ হয়ে যায়।স্বপন ইসলাম মেয়ের দিকে অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে থমকে যায়।
শ্যামার সারা শরীর ভ,য়ে কাঁপছে।রিপনের থাপ্পড়ের ফলে কান মাথা তব্দা লেগে গেছে।চোখের পানি ঝরছে নিঃশব্দে।স্বপন ইসলাম তার দিকে নিঃশব্দে এগিয়ে আসে।শ্যামা মাথা তুলে তাকায় না।
স্বপন ইসলাম মেয়েকে বললো,
“এসব সত্যি?”
শ্যামা চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।মেয়ের নিশ্চুপতায় স্বপন ইসলামের ভেতরটায় দাউদাউ করে আ,গুন জ্বলে উঠে,নিশ্চুপ থাকা মানে সম্মতি দেয়া।উনার রাগের পারদ তরতর করে বাড়ে।হুংকার দিয়ে বললো,
“কিরে!কথা বলতে পারিস না? ”
শ্যামা পিছিয়ে যায়।কান্নার দমকে শরীর কেঁপে উঠছে।স্বপন ইসলামের মাথায় র,ক্ত উঠে যায়।মুহূর্তেই এগিয়ে এসে শ্যামার গলা টিপে ধরে,তীব্র আক্রোশে মে,রে ফেলতে চায় জন্ম দেয়া মেয়েকে।মুখ দিয়ে চেচিয়ে বলেন,
“কু,ত্তার বাচ্চা!এই কো,লাঙ্গার এর সাথে প্রেম করার জন্য তোকে জন্ম দিয়েছিলাম?”
উনার পুরুষালি হাতের চাপে শ্যামার মুখ কালো হয়ে যাচ্ছে,শান্তা আর ফাতেমা মিলে উনাকে ছাড়িয়ে আনে।শ্যামা গলায় ধরে কাশতে থাকে।স্বপন ইসলামের রাগ কমেনা উনি হাতের কাছে বাটি দিয়ে আঘাত করে শোকেছের আয়না ভেঙ্গে ফেলে।ফাতেমা বেগম শ্বাসটানা মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
“মেয়েকে মে,রে ফেলবেন নাকি? ”
ফাতেমা বেগমের কথায় শ্যামার রাগ উনার উপরে আসে।বাম গালে তীব্র শব্দ করে থাপ্পড় দিয়ে ফাতেমা বেগমকে পাথর বানিয়ে দেয়।মায়ের এই অবস্থা দেখে শ্যামার কষ্ট লাগে,তার দোষে তার আম্মাকে ভুগতে হচ্ছে।স্বপন ইসলাম চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,
“কতো ভালো বিয়েটা ভাঙ্গলো এই অ,সভ্য ছেলের জন্য।এই তোর চোখ নাই?ভালো খারাপ বুঝিস না?ম,দখোর,জু,য়াখোর এক ভাদাইম্মা কে পছন্দ হলো।আমার বিশ্বাসের এই মর্যাদা দিলি?”
শ্যামার বুকটা কেঁপে উঠে।সে আসলেই তার আব্বার তাজা বিশ্বাসে দাগ লাগিয়েছে,এই যে বাবা মায়ের কষ্টটা তার ভালো লাগছে না আবার প্রেমে পাগল মনও ফিরোজকে ছাড়া কিছু চায় না।শ্যামা আস্তে করে বললো,
“আব্বা।”
স্বপন ইসলাম দ্বিগুণ রেগে যায়,হুংকার দিয়ে বললো,
“তুই আমাকে আব্বা বলবি না।তোর মতো মেয়ে আমার লাগবে না।শান্তা এই অবাধ্য মেয়েকে এখান থেকে চলে যেতে বলো।”
শ্যামা নিজেই চলে যায়।রুমে গিয়ে ফুপিয়ে উঠে।বিছানায় বসে হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ডুকরে কেঁদে উঠে।জীবনের এই পরিস্থিতির কথা সে কখনো ভাবেনি,যখনই এসব মনে হয়েছে সে ভেবেছে মোকাবিলা করতে পারবে কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ভাবা আর পরিস্থিতির কাঠগড়ায় দাঁড়ানো এক কথা না।মানসিক চাপে শ্যামার দম বন্ধ হয়ে আসে।মোবাইলে টুং করে শব্দ হলে শ্যামা মোবাইল হাতে নেয়।ফিরোজ!তার ফিরোজ তাকে মেসেজ দিয়েছে।ফিরোজের মেসেজ দেখে শ্যামার বুকটা ভারী হয়ে আসে,চোখ জ্বালা করে আবারো টপটপ করে চোখের পানি পড়ে।
ফিরোজ তখনো বাড়ি যায়নি।চিন্তায় রাস্তায় পায়চারি করছে।সে শতভাগ নিশ্চিত যে রিপন দুজনকে আলিঙ্গনরত অবস্থায় দেখে ফেলেছে,রাগী রিপন তার ফুলটাকে কি করবে ভাবতেই শরীরে ঘাম ছাড়ছে,সে জানে শ্যামাদের পরিবারের লোকজন তাকে পছন্দ করে না।সে মোবাইল হাতে নিয়ে মেসেজ পাঠায়।
ফিরোজের মেসেজটা শ্যামা আবার পড়ে।
“শ্যামা;তুমি ঠিক আছো?”
শ্যামা দম আটকে মেসেজের রিপ্লাই দেয়।
“ঠিক আছি।”
ফিরোজ ভ্রু কুঁচকে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আছে।শ্যামার মেসেজটা তার বিশ্বাস হচ্ছে না।সে ফোন দেয়।শ্যামা সাথে সাথে রিসিভ করে,
“ফোন দিয়েছেন কেনো?”
শ্যামার জড়ানো কন্ঠ শুনে ফিরোজ বললো,
“কি হয়েছে?আমাকে বলো।”
প্রিয় মানুষের কথা শুনে শ্যামার কান্নার দমক বাড়ে।ফিসফিস করে বললো,
“ভাইয়া সব জেনে গেছে।”
ফিরোজ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
“কিভাবে?”
“জানি না।বিয়ে ভেঙ্গেছেন এটাও জানে।”
শ্যামার কান্না শুনে ফিরোজ বললো,
“তোমাকে মে,রেছে?”
শ্যামা নিশ্চুপ হয়ে থাকে।ফিরোজ নরম কন্ঠে আবার ডাকে।
“শ্যামা!”
এই ফিরোজের মতো তাকে কেউ এতো ভালোবাসবে না,অন্য কোথাও শ্যামা এতো শান্তি পাবে না,শত বাধা পেরিয়ে হলেও তার এই ছেলেটাকেই চাই।কিছুক্ষণ আগে ফিরোজের বলা করুন আবদারগুলো মনে হয়ে শ্যামার মন খারাপ হয়।বাবা মায়ের কথা মনে হয় না প্রেমে পাগল মন নিজের সুখের কথা ভাবে। ফিরোজের আদুরে ডাকে কান্নায় শ্যামার গলা বুজে আসে,
“হুম।”
ফিরোজের চোয়াল শক্ত হয়।গম্ভীর কন্ঠে বলে,
“কে মে,রেছে।”
“ভাইয়া,আব্বা।দুজনেই।”
ফিরোজের বুকটা মুচড়ে উঠে।কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো,
“আমি আগামীকাল আব্বাকে তোমাদের বাড়িতে পাঠাবো,তোমাকে আমার বউ করে নিয়ে আসবো।কারো মা,র খেতে হবে না।”
শ্যামা মাথা দুলিয়ে বললো,
“আচ্ছা।”
“তুমি শুধু আমার হাতটা শক্ত করে ধরে রেখো।”
“রাখবো।”
ফিরোজ ভিষণ ভালোবাসা মাখা কন্ঠে বললো,
“যেকোনো পরিস্থিতিই আসুক না কেনো আমি তোমাকে ভালোবাসি।”
” ভালোবাসি।”
চলবে…….