Sunday, October 5, 2025







মধুমাস পর্ব-১৯+২০

#মধুমাস
#পর্ব_১৯
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর

নিজের চোখের সামনে ছেলেটার বয়স হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে তা মোহাম্মদ আলীর ভালো লাগে না।ছেলে বিয়ে করবেনা না করলেও উনি কিন্তু থেমে থাকেনি।গোপনে গোপনে ঠিকি মেয়ে খুঁজে যাচ্ছেন।তেমনি কালকে এক বাল্যকালের বন্ধুর বাসায় গিয়ে বন্ধুর মেয়ে পছন্দ করে ফেলেছে।বন্ধুকে মনের কথাটা বলতেই বন্ধু রাজী হয়ে যায়।মোহাম্মদ আলী ছেলেকে বিয়ে করানোর জন্যে ঘোর প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।সকালে নাস্তার টেবিলেই ফিরোজকে পেয়ে যান।
“ফিরোজ।”

ফিরোজ নাস্তা খেতে খেতেই তার আব্বার দিকে তাকায়।মোহাম্মদ আলী ধীরে সুস্থে বললো,
“তোর না না তো অনেক শুনলাম।আর না শোনার ধৈর্য নাই।আমি মেয়ে দেখে এসেছি।তুই তামিম কে নিয়ে বিকেলে মেয়েটা দেখে আয়।”

মোহাম্মদ আলীর মুখে আবারো বিয়ের নাম শুনে ফিরোজের খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।কপালের চামড়া আপনাআপনি কুঁচকে যায়।সে গম্ভীর গলায় বললো,
“মানে?”

“কথাতো স্পষ্ট করেই বললাম।বুঝতে পারছিস না?”

“আমি আপনাকে বলেছিনা যে এখন বিয়ে করবোনা।”

মোহাম্মদ আলী মূহুর্তেই রেগে যায়।কিড়মিড় করে বললো,
“তুই বললেই আমি শুনতে হবে?”

আফিয়া বেগম সুযোগ হাতছাড়া করেনা।দাঁত কিড়মিড়িয়ে বললো,
“বেয়াদব!মায়ের মতো বেয়াদব হইছে।”

ফিরোজ চোখ তুলে আফিয়া বেগমের দিকে তাকায়।আফিয়া বেগম থমথম খেয়ে অন্যদিকে তাকায়।মোহাম্মদ আলী চেয়ার ছেড়ে উঠতে উঠতে বললো,
“বিকেলে চলে যাবি।আমি কোনো কথাই শুনতে চাই না।”

“আমি যাচ্ছি না।”

“কেনো?”

“কারণ আমি এখনই বিয়ে করতে চাচ্ছি না।”

“কারণটা কি?”

“কোনো কারণ নেই।”

মোহাম্মদ আলী ছেলের দিকে ফিরে তাকায়।ফর্সা মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি সমেত ফিরোজকে ভিষণ সুন্দর লাগছে।ছেলেদের এতো সুন্দর হওয়া ভালো না।আচ্ছা উনার এতো সুন্দর ছেলে প্রেম করছে না তো?উনি সোজা প্রশ্ন করেন,
“তুই কাউকে পছন্দ করিস?”

ফিরোজ তার আব্বার দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে না করে।
“তাহলে সমস্যা কি?”

ফিরোজ নিভু গলায় বললো,
“কিছুনা।”

“তাহলে আর কি?বিকেলেই যাবি।”

ফিরোজ রেগে যায়।তীক্ষ্ম গলায় বললো,
“আমি বলেছি না যাবো না।”

মোহাম্মদ আলী ছেলের এই অবাধ্যতার সাথে পরিচিত না।সবার সাথে ফিরোজ রাগী হলেও উনার সাথে রাগী না।উনি হতভম্ব হয়ে ফিরোজের দিকে তাকিয়ে থাকে।কালকে ফারিয়ার গায়ে হলুদ তাই আর কথা বাড়ায় না।মেয়ের বিয়ের আগে অশান্তি সৃষ্টির দরজার নেই।

ফিরোজ হনহন করে রুমে চলে যায়।শ্যামার সাথে কথা বলতে হবে।যতো তাড়াতাড়ি পারা যায় শ্যামাকে বিয়ে করতে হবে।যা পরিস্থিতি হচ্ছে
কবে না তার আব্বা মেয়ে বাড়ি এনে বলবে এখনি বিয়ে কর।সকাল সকাল তার মেজাজ সপ্তম আকাশে উঠে যায়।তখনি এমপি মহোদয়ের কাছে থেকে ফোন আসে।উনার সেক্রেটারি জানায় আজকে পাশের এলাকায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হবে।স্যার ফিরোজের উপস্থিতি আশা করছে।ফোন কাটার সাথে সাথে শ্যামা ফোন দেয়।ফোন রিসিভ করে কিছু বলার আগে শ্যামা কিছু উতপ্ত বাক্য ফিরোজের দিকে ছুড়ে মা,রে।সে কোনো কিছু বলার আগেই শ্যামা কট করে ফোন কেটে দেয়।সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া মোবাইলের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকে।পাগল!মেয়েটা কি পাগল নাকি?হুট করে কেউ সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে?ফিরোজের বুকের উঠানামা দ্রুত হয়।শ্যামার ফোন নাম্বারে ডায়াল করে কিন্তু বন্ধ।এদিকে এমপি সাহেবের কাছে যাওয়াও জরুরী।ফিরোজ হাত দিয়ে চুল খামচে ধরে,শ্যামা না করলো কিভাবে?ওর জন্যই আজকে তার আব্বার সাথে বাজে ব্যবহার করেছে না হলে এতো অনুরোধের পরে বিয়েতে অবশ্যই মত দিতো কিন্তু সে দেয়নি কারণ তার শ্যামা পাখি আছে যে অধির আগ্রহের সাথে ফিরোজের জন্য অপেক্ষা করে।বাচ্চাদের সাথে প্রেম করার এই এক জ্বালা তারা হুটহাট সিদ্ধান্ত নেবে।আরো কয়েকবার শ্যামাকে ফোন দিয়ে কোনো সুলক্ষণ না দেখে বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।

শ্যামা আজকে কলেজে যাবে না।সকালেই এমন এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা শ্যামার শরীরের সর্ব শক্তি শুষে নিয়েছে।বিছানায় শুয়ে কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে।ফাতেমা বেগম আর শান্তা এসেছিলো কিন্তু শ্যামা মাথা ব্যাথার দোহাই দিয়ে উঠেনি,কারো সাথে কোনো কথাও বলেনি।শান্তা রুমে গিয়ে রিপনকে বলে,
“আমার মনে হয় তোমার বোন প্রেম করে।”

রিপন মোবাইলে চোখ রেখেই বললো,
“কার সাথে?”

“তা জানি না।কিন্তু প্রেম করে।”

“কিভাবে বুঝলে? ”

“মাঝে মাঝে ফোনে কথা বলে,আবার বিয়ের কথা বলাতে কিভাবে কাঁদলো দেখলেনা?”

“সব মেয়েই বিয়ের কথায় কাঁদে।”

শান্তা মুখ অন্ধকার করে বললো,
“আমার কথা বিশ্বাস হয়না তো,যখন অঘটন ঘটবে তখন মিলিয়ে দেখো।”

রিপন বললো,
“শ্যামা এমন মেয়ে না,দেখলেনা আব্বা শ্যামাকে কতো বিশ্বাস করে।”

রিপনের কথাগুলো শান্তার মনমতো হয়না।সে বিরবির করে কি জানো বলতে থাকে।

রাত বারোটার দিকে ফিরোজ বাড়ি আসে।ফ্রেশ হয়ে শ্যামাকে ফোন দেয় কিন্তু যথারীতি বন্ধ।ফিরোজ ক্লান্ত হয়ে চেয়ারে বসে পড়ে।তার শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ব্যাথা।সারাদিন কম পরিশ্রম হয়নি,ক্লান্তিতে চোখদুটো বন্ধ হতে চাইছে।সে উঠে দাঁড়ায়।স্পঞ্জের জোতা পায়ে দিয়ে ঘর ছেড়ে রাস্তায় উঠে আসে।শ্যামার রুমের কাছে এসে সতর্ক চোখে আশেপাশে তাকিয়ে আস্তে করে টোকা দেয়।তিন চারবার পরপর দিতে থাকে।তার বিশ্বাস শ্যামা ঘুমায়নি।

শ্যামা জেগেই ছিলো।এতোবড়ো একটা কান্ড ঘটিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমানোর প্রশ্নই উঠে না।সারাদিন ফোন বন্ধ করে রেখেছিলো ফিরোজ কতোটা রাগবে সেটা ভেবেই কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছিলো।জানালায় কারো টুকা শুনে সে এগিয়ে যায়।জানালা খুলে দেখে ফিরোজ দাঁড়িয়ে।তাকে দেখে বললো,
“বের হতে পারবে?”

শ্যামা স্বাভাবিকভাবেই বললো,
“পারবো।”

“রাস্তায় আসো।”

শ্যামা দরজা ভেজিয়ে চুপচাপ রাস্তায় যায়।ফিরোজ শ্যামাকে দেখে বললো,
“কি সমস্যা?”

শ্যামা তখনো কাঁদছে।ফ্যাচ ফ্যাচ করে নাক টেনে বললো,
“কোনো সমস্যা না।”

“তাহলে সম্পর্ক শেষ মানে কি?”

ফিরোজের শীতল কন্ঠস্বর শ্যামার অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে দেয় কিন্তু সাহস করে বললো,
“শেষ মানে শেষ।”

ফিরোজ রেগে যায়,সারাদিনের ক্লান্তিতে মেজাজ ঠিক রাখতে পারে না।
“বললেই হলো?আমাকে কি গাধা মনে হয়?আমিতো প্রেম করতে চাইনি তুমি আমাকে পাগল বানিয়েছো,আমার অন্তরে ঢুকে সব উল্টাপাল্টা বানিয়ে দিয়েছো।এখন বলো সম্পর্ক রাখবে না।কি মনে করো আমাকে?”

ফিরোজ যা বলছে সব সত্যি।শ্যামা মুখে হাত চেপে কেঁদে ফেলে।ফিরোজ হাত দিয়ে নিজের মুখ মুছে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে।কান্নারত শ্যামার কাছে এসে শ্যামার হাত ধরে চোখের পানি মুছে দেয়।আলতো হাতে কাছে টেনে শ্যামাকে বুকে জড়িয়ে নেয়।মাথার চুলে চুমু দিয়ে বললো,
“তুমি আমার পাখি না!এসব কেনো বলো?সারাদিন অনেক প্যারায় ছিলাম তোমার এমন কথাগুলো শুনে মাথা ঠিক রাখতে পারছিনা।প্লিজ এসব বলোনা।”

ফিরোজের বুকে গিয়ে শ্যামার মনে হলো সারাদিনের কষ্টগুলো নিমিষেই দূর হয়ে গেলো।ফিরোজের কাতরতা শ্যামাকে ছুঁয়ে যায়।সে ফিসফিস করে বললো,
“আব্বা জানলে খুব কষ্ট পাবে।আমাকে নিয়ে আব্বার খুব আশা।”

“আমরা তো পালিয়ে যাচ্ছি না।আমরা সবাইকে মানিয়ে বিয়ে করবো।তাহলে আর কেউ কষ্ট পাবে না।”

“আমার ভ,য় হয়।”

“আমি আছিতো এতো ভ,য় কিসের?”

শ্যামা ফিরোজের হাত থেকে ছুটতে চায়।
“যাইহোক আমি সম্পর্ক রাখবনা।”

ফিরোজ শ্যামাকে আরো কাছে টেনে নেয়।
“আমি ছাড়লে তো যাবে।”

শ্যামা কাঁদে।দু’দিকে মাথা নেড়ে বললো,
“কেউ মানবেনা।”

ফিরোজ সযত্নে শ্যামার চোখের পানি মুছিয়ে বললো,
“এসব চিন্তা আমার।তুমি শুধু এই উল্টাপাল্টা কথাগুলো বলো না,আমার শান্তপাখি হয়ে থাকো।”

শ্যামা চোখভরা পানি নিয়ে ফিরোজের দিকে তাকিয়ে থাকে।ফিরোজ অশ্রুভেজা চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“তোমাকে ছাড়া আমি শূন্য।বাঁচবোনা সোনা।”

শ্যামা মাথা দুলিয়ে বললো,
“আমিও।”

“আর এসব বলবে না।ওকে?”

“কিন্তু ”

“কোনো কিন্তু না।সব বাধা অতিক্রম করে আমার পাখিকে বুকের খাঁচায় আনবই।”

“আচ্ছা।”

“আর এসব বলবে?”

“না।”

“তুমি আমার শান্তির কারণ,এটা মনে রেখো।”

শ্যামা বাড়ি আসার আগে থমকে দাঁড়িয়ে যায়।ফিরোজ কিছু বললেও উত্তর দেয় না।জুলুজুলু চোখে ফিরোজের দিকে তাকিয়ে থাকে।ফিরোজ মিহি গলায় জানতে চায়,
” কি হয়েছে।”

শ্যামা মাথা নাড়ে।ফিরোজ হঠাৎ হো হো করে হেসে ফেলে।তারপর শক্ত করে শ্যামাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়।কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
“আমাকে ছাড়া থাকতে পারবেনা,সেটা আমি জানি।”

শ্যামা হেসে বললো,
“রাজা ছাড়া রানী থাকে কি করে?”

শ্যামা সকল চিন্তা দূরে ঠেলে বাড়ির দিকে হাটে।ফিরোজ ঠিক তাকে জয় করে নেবেই।কিন্তু হাসিহাসি মুখে নিমিষেই ভ,য়ের চিহ্ন ফুঁটে উঠে।চলন্ত পা থেমে যায়।
রিপন দারাজ গলায় বললো,
“কই গিয়েছিলি এতো রাতে?”

চলবে…..

#মধুমাস
#পর্ব_২০
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর

শান্তা আগেই বলেছিলো শ্যামা প্রেম করে কিন্তু রিপন সেই কথা কানে তুলেনি,সে বিশ্বাস করেনি তার বোন প্রেম করতে পারে।তাছাড়া সে আর স্বপন ইসলাম শ্যামাকে এতো কড়া শাসনে রেখেছে যে প্রেম করার ফুসরত দেয়নি।কিন্তু এখন কি নিজের চোখকে অবিশ্বাস করবে?রিপনের কথা শুনে শ্যামা দাঁড়িয়ে গিয়েছে।রিপনের সন্দেহ গাঢ় হয়।
“কিরে!কথা বলিস না কেনো?”

শ্যামা ভাবতেও পারেনি আজকে রিপনের সামনে পরবে।ভ,য়ে তার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে,গলা শুকিয়ে চৌচির।কি বলবে ঠিক গুছিয়ে উঠতে পারে না।কোনোমতে বললো,
“ভাইয়া..”

“কই গিয়েছিলি?”

শ্যামা বুঝতে পারে এই মূহুর্তে কথা না বলে চুপ থাকলে আরো বেশী বি,পদ হবে।সে আস্তে করে বললো,
“বাথরুম থেকে যাওয়ার সময় দেখলাম কে জানি দৌড় দিলো।আমি ভাবলাম চোর নাকি তাই একটু এগিয়ে সামনে গিয়ে দেখলাম দুইটা শিয়াল।”

রিপন তার বোনের দিকে অপলক তাকিয়ে আছে।শ্যামার কথা শুনে মনে হচ্ছে সে মিথ্যা বলছেনা।সে অনুসন্ধানী চোখে তাকিয়ে বললো,
“সত্যি কথা?”

“হ্যাঁ ভাইয়া।”

“তুই একা একা চোরের পিছু নিলি যদি সত্যিই চোর হতো।”

“তাহলে আমি চিৎকার করে তোমাদের ডাকতাম।”

রিপন শ্যামাকে একটা ধমক দেয়।
“চুপ।আর কখনো রাতের বেলা কোনোদিকে যাবি না,বেশী সাহস হয়ে গেছে তাই না?”

শ্যামা বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়ে।সে যে রুমে নেই এটা তার ভাই বেশীক্ষণ হবেনা টের পেয়েছে।টের পেলে এই সাজানো কথাগুলো বিশ্বাস করতো না।রিপন বাথরুমের দিকে চলে গেলে শ্যামা বুকে হাত দিয়ে শ্বাস ছাড়ে।আজকে বুঝি ভাগ্যও তার প্রতি সদয় ছিলো তাইতো চূড়ান্ত ধোলাই থেকে প্রানে বেঁচে গেছে।

এই কথাটা রিপন সকালে ঘরের সবার সামনে তুললো,শ্যামা যে কতো বীর তা বললো।রিপনের কথা শুনে সবাই শ্যামাকে আচ্ছামতো বকা দিলো।শ্যামা অবুজ চেহারা করে বললো,
“আমি বুঝতে পারিনি যে বিপদ হতে পারতো।”
***
আজকে ফারিয়ার গায়ে হলুদ।প্রিয় বান্ধুবীকে ছাড়া গায়ে হলুদ করার মতো ইচ্ছা তার নেই।যেভাবেই হোক শ্যামাকে তার বাড়িতে তার পাশে চাই ই চাই।ফারিয়া সেই চিন্তাভাবনা থেকে দুপুরেই শ্যামাকে নিতে চলে এসেছে।শ্যামার মা ফাতেমা বেগম তো কোনোভাবেই রাজী না।উনার এক কথা বিয়ের দিন সকালে গেলেই হয় কিন্তু ফারিয়াও নাছোড়বান্দা।স্বপন ইসলাম বিরোধ করে, মেয়ে মানুষ আরেকজনের বাড়িতে গিয়ে রাত কাটানো উনার পছন্দ না।কিন্তু ফারিয়ার আবদারের কাছে রাজী না হয়ে পারলো না।শ্যামা ব্যাগ গুছিয়ে না হওয়া শশুড় বাড়ির উদেশ্যে বেরিয়ে যায়।সে ফারিয়ার বিয়েতে যেতে পেরে যতোটা খুশী এর চেয়ে বেশি খুশী অনেকটা সময় ফিরোজের আশেপাশে থাকতে পারবে বলে।

ফারিয়াদের বাড়ি গিয়ে শ্যামা কাপড় পালটে নেয়।হলুদের শাড়ি পড়ে,ইচ্ছেমতো সাজে।লাল টুকটুকে লিপস্টিক দিয়ে সাজটা আরো গাঢ় করে।এখানে আসার পর থেকেই দেখছে ফিরোজ কাজ করছে,কোথায় কি হবে সে সব তদারকি করতে ব্যস্ত অবশ্য কয়েকবার দুজনের চোখাচোখি হয়েছে।শ্যামা ফিরোজকে দেখে মুচকি হাসলেও ফিরোজের মুখভঙ্গি ছিলো গম্ভীর,ধারালো দৃষ্টি ফেলে শ্যামাকে দেখেছে।হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার পরে অনেক ছেলেই শ্যামার সাথে ভাব জমাতে চেয়েছে,কথা বলতে চেয়েছে কিন্তু শ্যামা সবাইকে এড়িয়ে গিয়েছে।সবাই তার সাজের প্রশংসা করলেও শ্যামার অন্তর ঠান্ডা হয় না,যাকে দেখাবে বলে সাজলো সে,সে তো একবারো প্রশংসা করলো না,মুগ্ধ চোখে তাকালো না;এই বিরহে শ্যামার মুখের হাসি কমে যায়।চঞ্চল চোখে বারবার ফিরোজকে খুঁজে।রাত যখন দুইটা তখন অনুষ্ঠান শেষ।ফারিয়া রুমে গিয়ে মেকাপ তুলে তখন তার বর মাহিনের ফোন আসে।মাহিনের ফোন দেখে ফারিয়ার মুখটা লজ্জায় আরক্ত হয়।তখন শ্যামা ছাড়া আর কেউ নেই ফারিয়ার রুমে।ফারিয়া তার সাজগোছ তুলে ফেললেও শ্যামা তুলেনি,তার প্রিয় পুরুষ যে এখনো তাকে মন ভরে দেখেনি!।ফারিয়াকে এমন হাসোজ্জল হয়ে কথা বলতে দেখে শ্যামার ভালো লাগে শ্যামাকে আরো ভালো লাগায় ডুবাতে তার ফোনে ছোট একটা মেসেজ এলো,
“ছাদে অপেক্ষায় আছি।”

পাষান পুরুষের মন গলেছে,সারাদিনে এতোক্ষণে এই অবুজ প্রেমিকাকে স্বরণ করেছে।ফারিয়া তার বরের সাথে কথা বলায় ব্যস্ত শ্যামা আস্তে করে বেরিয়ে যায়।পা টিপে টিপে ছাদে উঠে।নিঝুম রাত,আশেপাশের ঝি ঝি পোকার ডাক অতিক্রম করে শ্যামার বুকের ধিমধিম শব্দ যেনো বেশী শব্দ করছে।ছাদে পা রেখে আশেপাশে চোখ বুলায়।ফিরোজ দূরে দাঁড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।শ্যামার লজ্জা হয়,ফিরোজ এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকানোতে সে আড়ষ্ট হয়ে যায়।ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় প্রাণভোমরার কাছে।হ্যাঁ ফিরোজ তার প্রাণ ভোমরা এই প্রাণ ভোমরা না দেখলে সে একটুও বাঁচবেনা।এই যে সারাটাক্ষন মনম,রা হয়ে ছিলো সব কষ্ট অভিমান নিমিষেই দূর হয়ে যাচ্ছে।ফিরোজের কাছে যেতে হয়না ফিরোজই বড়ো বড়ো কদম ফেলে শ্যামার দিকে আসে।ফিরোজের চোখজোড়া আজকে অন্যরকম,নেশালো।শ্যামা আর আগাতে পারেনা বরং পিছিয়ে যায়।পিছাতে পিছাতে চিলেকোঠার দেয়ালের সাথে মিশে যায়।মন্ত্রমুগ্ধের মতো ফিরোজের দিকে তাকিয়ে আছে,দুজনে কথা না বললেও চোখে চোখে হাজারো না বলা কথার আদান প্রদান হচ্ছে।

ফিরোজ ভাবে মেয়েটা তাকে নির্ঘাত মে,রে ফেলার পায়তার করছে তা না হলে এমন সাজ দিয়ে সামনে আসবে কেনো?এই প্রথম শ্যামাকে এমন রূপে দেখেছে।দেখে যেনো চোখের তৃষ্ণা বেড়ে গেছে,ইচ্ছে করছিলো আজকেই বিয়ে করে পুতুলটাকে সারাক্ষণ তার সামনে বসিয়ে রাখে।নিঝুম রাতে প্রিয় রমিনীকে কাছে পেয়ে ফিরোজের দেহে আলোড়ন সৃষ্টি হয়।অনুভূতির প্রখরতায় হাত পা ঝিমঝিম করে উঠে।হাত বাড়িয়ে শ্যামার গাল ছুঁয়ে দেয়।ফিরোজের হাতের স্পর্শে শ্যামা কেঁপে উঠে।কিশোরী মনে ঝড় বয়।ফিরোজ শ্যামার সবকিছুই খেয়াল করছে।বারংবার কেঁপে উঠা,শ্বাস ভারী হয়ে পড়া যেনো তাকে আরো মাতাল করে দেয়।শ্যামার দীঘির মতো গভীর চোখের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বললো,
“কি সমস্যা? ”

“কোনো সমস্যা নেই তো।”

“সমস্যা না থাকলে আমাকে মে,রে ফেলার ধান্দা করছো কেনো?”

“কিভাবে?”

“এতো সেজেছো যে তাই।”

ফিরোজের মুগ্ধ দৃষ্টি শ্যামাকে শান্তি দিলো।সে ফিরোজের মতোই ফিসফিস করে বললো,
“আপনার জন্যই সাজলাম।”

ফিরোজ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো,
“সুন্দর লাগছে।একদম বউয়ের মতো লাগছে।”

শ্যামা লজ্জা পায়।মাথা নামিয়ে চোখ এপাশ ওপাশ ঘুরায়।ফিরোজ চেপে দাঁড়ায়।আঙ্গুলের ভাজে আঙ্গুল রেখে বললো,
“ইচ্ছে করছে বিয়ে করে ফেলি।তুলতুলে পুতুলটাকে সারাক্ষণ চোখের সামনে বসিয়ে রাখি,যখন তখন চুমু দেই,গভীর রাতে মিষ্টি আলিঙ্গনে পিষে ফেলি।কি বালিকা বিয়ে করবে?”

ফিরোজের এমন বেশামাল কথায় শ্যামা খুব লজ্জা পায়।উশখুশ করে বললো,
“কেউ দেখে ফেলবে নিচে যাই?”

ফিরোজ যেনো কথাগুলো শুনেনি এমন করে বললো,
“লিপস্টিক দিয়েছো কেনো ?”
ততক্ষণে ফিরোজের হাতের আঙ্গুল শ্যামার ঠোঁটের আশেপাশে ঘুরাঘুরি করছে।শ্যামা কোনো কথা বলতে পারে না।ঠোঁট কাঁপছে।হাত পা শিরশির করে ;তার কেমন ব্যাকুল লাগছে।সে কোনোমতে বললো,
“এমনি।”

ফিরোজ গাঢ় স্বরে বললো,
“ভদ্র প্রেমিক হতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি তার সুযোগ দিচ্ছ না।মাথা নষ্ট করে দিয়েছো।আমি সত্যিই আর ভদ্র থাকতে পারছিনা।”

শ্যামা অপলক ফিরোজের দিকে তাকিয়ে আছে।ফিরোজ শ্যামার কানের কাছে ঠোঁট ছুঁয়িয়ে বিরবির করে বললো,
“আজকে একটু অভদ্র হই?বেশী না একটু।”

শ্যামার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে।এই ফিরোজ তার কাছে অপরিচিত,গম্ভীরমুখো ফিরোজের মুখে এমন কথা কাম্য ছিলো না।সে নড়াচড়া করতে পারছে না তার হাত ফিরোজের হাতে।
সে কিছু বলার আগে ফিরোজ এই প্রথম তার পুরুষালি ঠোঁট প্রিয়তমার কোমল ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়।একবার ছুঁয়িয়ে ক্ষান্ত হয় না,পরপর কয়েকবার ছুঁয়ে দেয়।শ্যামার হাত পা কাঁপছে,এই প্রথম কোনো পুরুষের মিষ্টি আদর পেলো।চোখের দৃষ্টি ফিরোজের দিকে।ফিরোজ তার খুব কাছে।নিঃশ্বাস শ্যামার মুখে পড়ছে।শ্যামার দিকে তাকিয়ে ফিরোজ কাতর স্বরে বললো,
“প্লিজ।”

শ্যামা কিছু না বললেও তার চোখের ভাষা ফিরোজ বুঝে নিলো।ফিরোজ ঠোঁটে ঠোঁট রাখতেই শ্যামা চোখ বন্ধ করে ফিরোজের বলিষ্ঠ শরীর আঁকড়ে ধরে।নিকষ কালো নিঝুম রাত,দুজনের শ্বাস প্রশ্বাস বেশামাল ভাবে পড়ছে।কিছুক্ষণ পরে ফিরোজ বললো,
“আসলেই মধুরানী।”

চলবে……

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ