Monday, October 6, 2025







মধুমাস পর্ব-১৭+১৮

#মধুমাস
#পর্ব_১৭
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর

“দেখা করবো।”

ফিরোজ কোনো দ্বিমত করেনা।শান্ত স্বরে বললো,
“আসছি।”

তারপর ফোন কেটে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।হৃদপিণ্ড উত্তেজিত হয়ে বেশামাল ভাবে লাফাচ্ছে।বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে!বললেই হলো?মগের মুল্লুক নাকি হ্যাঁ? তার পাখি অন্যকারো হবে এটাও মানতে হবে?সে কখনোই এটা হতে দেবেনা।নিজেকে যতটুকু দরকার শান্ত রাখার চেষ্টা করে।লম্বা লম্বা পা ফেলে শ্যামার আগেই সে পুকুর পাড়ে চলে আসে।চুপচাপ পুকুর পাড়ে অপেক্ষা করে।নিঝুম রাত ঝি ঝি পোকার ডাকগুলো আজকে কেমন বিষাদ মাখানো মনে হচ্ছে।শেয়ালের ডাকগুলো কারো আত্মচিৎকার বলে কানে ধরা দিচ্ছে।সে অস্থির পায়ে প্রেয়সীর জন্য অপেক্ষা করে।

দূর থেকে ফিরোজকে দেখে শ্যামার বুকের ক্ষতে আরো বেশী যন্ত্রণা হয়।কান্নারা দলা পাকিয়ে গলার দিকে উঠে আসে।দীঘল কালো চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে।ফিরোজের কাছে গিয়ে চোখের পানির ধারা যেনো আরো বাড়লো।কাঁপা গলায় বললো,
“আব্বা বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে।আমি কিন্তু তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবোনা।”

ফিরোজ কিছু না বলে শ্যামার দিকে তাকিয়ে থাকে।মেয়েটা কেঁদেকেটে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে।ফিরোজের প্রচন্ড রাগ হলো হঠাৎ করে রাগে শরীর কেঁপে উঠলো থরথর করে।
শ্যামা যে শুধুমাত্র তার এটা সবার জানা দরকার ছিলো,সে ছাড়া অন্যকারো কাছে বিয়ে দেয়ার সাহস কি করে হয়?সে শ্যামাকে বললো,
“আমার কথা বলোনি?”

শ্যামা ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদে।মাথা দু’দিকে নাড়িয়ে মানা করে।মুখে বলে,
“ভ,য়ে বলিনি।আমি খুবই খারাপ মেয়ে,তোমার কথা প্রকাশ করার মতো সাহস আমার হয়নি।”

ফিরোজ শান্ত চোখে শ্যামার দিকে তাকিয়ে থাকে।মেয়েটা যে ভ,য় পেয়েছে সে তা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে।সে অভ,য় দিয়ে বললো,
“কোনো ব্যাপার না।”

শ্যামা কাতর গলায় বললো,
“আমি কিন্তু বিয়ে করবোনা।”

“আচ্ছা।”

শ্যামার ফিরোজের সামান্য আচ্ছায় মন ভরে না।
“আচ্ছা!আচ্ছা কি?দুইদিন পরে বিয়ের তারিখ দেয়া হয়েছে।”

ফিরোজ দুষ্টুমি করে বললো,
“তাতে কি?বিয়ে ঠিক হলে করে নিবা।শুনলাম কানাডার প্রবাসী তাহলে কানাডা যেতে পারবে।”

শ্যামার কান্না আরো বাড়ে।ফিরোজের কথাগুলো শুনে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করে।ধরা গলায় আধভাঙ্গা সুর করে বললো,
“বিয়ে করে নেবো?”

ফিরোজ হাসি চেপে রেখে বললো,
“হুম।”

শ্যামা আর কিছু না বলে বাড়ির দিকে পা বাড়ায়।ফিরোজ তাড়াতাড়ি হাত চেপে ধরে বললো,
“এই!কই যাচ্ছো?আমি তো দুষ্টুমি করেছি।”

ফিরোজের কথাবার্তা শ্যামার কাছে খাপছাড়া লাগছে।হাত মুচরাতে মুচরাতে বললো,
“এটা দুষ্টুমি করার সময়?”

ফিরোজ মাথা নেড়ে না করে।শ্যামার কান্না থামে না।ফিরোজ বললো,
“আমার পাখিকে বিয়ে করে নেবে এতো সাহস কার?নিতে আসুক না বুক থেকে কলি,জা আলাদা করে দেবো।”

শ্যামা ফুপিয়ে উঠে।
“আমি কিন্তু তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না।”

“আমাকে ছাড়া বাঁচতে হবে না।এসব নিয়ে একটুও চিন্তা করোনা।আমার উপর বিশ্বাস রাখো,আমি সব সামলে নেবো,এই কানাডিয়ান পাত্রের বিয়ে হাতের এক তুড়িতেই ভেঙ্গে দেবো।”

শ্যামা ফিরোজকে নিজের চাইতে বেশি বিশ্বাস করে।ফিরোজ শ্যামার চোখের পানি যত্ন করে মুছিয়ে দেয়।গালে হাত রেখেই বললো,
“কাঁদো কেনো?আমি বললাম না সব সমাধান হয়ে যাবে।”

ফিরোজের কথায় শ্যামার কান্না কমে না বরং সে কেঁপে কেঁপে উঠে কান্নার তোড়ে।
“আমার ভ,য় হচ্ছে।”

“ভ,য় পাওয়ার কোনো কিছু নেই।”

শ্যামা কাঁদতে কাঁদতেই মাথা নাড়ে।ফিরোজ শ্যামার চোখের পানি আলতো স্পর্শে মুছে দেয়।
“আর এক ফোঁটা চোখের পানিও যেনো না পড়ে।এখন হাসো তো দেখি।”

শ্যামা হাসে না।ফিরোজ শ্যামার গালে টোকা দিয়ে বললো,
“হাসে না কেনো আমার পাখি?”

ফিরোজ হাসতে হাসতে এই কথা বলে,ফিরোজের হাসি শ্যামার ঠোঁট পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করে।শ্যামাও হাসে।ফিরোজ শ্যামার দিকে অপলক তাকিয়ে থাকে।এই মেয়েটা হাসলে তার এতো সুখ লাগে।পাখিটাকে ছাড়া তার বেঁচে থাকা অসম্ভব।এই মুখে হাসি ফোটানোর জন্য যা করা লাগবে সব সে করবে।সে আলতো করে শ্যামার গালে হাত ভুলিয়ে বললো,
“এভাবেই হাসবে তোমার হাসি আমাকে শক্তি যোগায়।”

শ্যামা চোখে জল মুখে হাসি।সে হেসে বললো,
“আচ্ছা।”

“অনেক রাত হয়েছে বাড়ি যাও।”

শ্যামা বাড়ির পথে হাটা ধরেও থেমে যায়।পিছন ফিরে আবার ফিরোজের কাছে আসে।শ্যামাকে আবার আসতে দেখে ফিরোজ বললো,
“কি? ”

শ্যামা ফিরোজের চোখের দিকে তাকায়।আস্তে করে বললো,
“একটু জড়িয়ে ধরি?শুধু একটুখানি”

প্রেমিকার এমন আবদারে ফিরোজ হকচকিয়ে যায়।সে বললো,
“অফকোর্স।এটা জিজ্ঞেস করার কি আছে?”

“যদি ওইদিনের মতো আবার মা,রো।”

ফিরোজ হেসে ফেলে বললো,
“তখন তো তুমি আমার পাখি ছিলেনা,এখন তুমি আমার ছোট চড়ুই।এখন নো মা,রা,মা,রি।”

তারপর শক্ত করে তার বুকের মাঝে শ্যামাকে জড়িয়ে নেয়।শুধু বুকে জড়িয়েই ক্ষান্ত হয় না,আলতো করে শ্যামার গলায় মিষ্টি একটা চুমু দিয়ে দেয়।ফিরোজের পক্ষ থেকে প্রথম ভালোবাসায় বাহুবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে শ্যামার নারী মন দিশা হারাতে চায়,পেটে হাজারো প্রজাপতির উড়াউড়ি টের পায়,পুরুষালী উষ্ণ ঠোঁটের স্পর্শে শ্যামা কেঁপে উঠে; ফিরোজের বুকে বিড়ালছানার মতো মিশে যেতে চায়।এতো আদরে সে আবারো কেঁদে দেয়।ফিরোজ বুকে নিয়েই ফিসফিস করে বললো,
“কি হলো?”

শ্যামা ফিরোজের মতোই ফিসফিস করে বললো,
“এতো আদর দিচ্ছো কেনো?আমার কপালে এতো সুখ সইবে না,আমি ঠিক ম,রে যাবো।”

ফিরাজ মিষ্টি করে হাসে।শ্যামার মতোই ফিসফিস করে বললো,
“আমি বোধহয় আমার পাখিটাকে সুখে সুখেই মে,রে ফেলবো।খুবই খারাপ প্রেমিক আমি।”

শ্যামা তার বুকে নাক ঘষে বললো,
“আমার প্রেমিক।”

ফিরোজ শ্যামাকে ছেড়ে দিয়ে আস্তে করে বললো,
“আমাকে তুমি করে সম্মোধন করছো কেনো বালিকা?প্রেম নদীতে কি আজন্ম ডোবাতে চাও নাকি?”

শ্যামা লজ্জামাখা মুখে বললো,
“কখন তুমি বললাম?আচ্ছা আর বলবো না।আপনি বলাই ভালো।”

“আপনি থেকে তুমিই বেশী আদুরে ডাক।তুমি বললে কেমন আপন আপন লাগে।এই অদমকে আদুরে ডাক থেকে বঞ্চিত করার কি দরকার?”

শ্যামা তর্ক করেনা।ফিরোজ শ্যামার হাত ধরে বললো,
“চলো এগিয়ে দেই।”

দুজনে হাতে হাত রেখে এগিয়ে যায়।এই ছোট কাজেও শ্যামার সুখের ছোঁয়া লাগে।মনে মনে ভাবে সারাজীবন যেনো এভাবেই হাতে হাত রেখে চলতে পারে।

রাতে দেরী করে ঘুমানোর ফলে শ্যামা সকালে দেরী করে ঘুম থেকে উঠে।রুম থেকে বেরিয়ে বাড়িটাকে বিয়ে বাড়ি মনে হয় না,মনে হচ্ছে শোকার্ত কোনো বাড়িতে চলে এসেছে।বাড়ির প্রতিটা কোনা চুপচাপ,নিস্তব্ধতায় ঘেরা।শ্যামা খাবারের ঘরে যায় সেখানে শান্তা ফাতেমা বেগমের মাথায় তেল পানি দিয়ে দিচ্ছে।শ্যামা কাছে গিয়ে বললো,
“কি হয়েছে আম্মার?”

শান্তা রাগী চোখে শ্যামার দিকে তাকিয়ে বললো,
“তোর দোয়া কবুল হয়েছে?”

শ্যামা আগামাথা কিছু না বুঝে বললো,
“কিসের দোয়া?”

“বিয়ে ভেঙ্গে গিয়েছে।সেই খবর শুনেই আম্মা অসুস্থ হয়ে পড়েছে।”

শ্যামা কোতুহলী হয়ে বললো,
“কেনো ভাঙ্গলো?”

“তোর বয়স কম উনারা আরেকটু বড়ো মেয়ে চায়।”

শ্যামার নিজের কানকে নিজের বিশ্বাস হয় না,মনের মাঝে খুশীর সমুদ্র হো হো করে বয়ে যায়।কিন্তু এই সুখের লেশমাত্র সে প্রকাশ করে না,বরং চেহারার ভাব করে দুঃখী,মুখ মনমরা হয়ে যায়,চুপচাপ সে তার আম্মার পাশে বসে।আস্তে করে বললো,
“অহ!আচ্ছা।”

ফাতেমা বেগম শ্যামার ব্যাথাতুর চেহারা দেখে ভাবলেন বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়াতেই বুঝি মেয়ের মন খারাপ হয়ে গিয়েছে।সে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
“এসব নিয়ে মন খারাপ করবি না।”

এমন সময় স্বপন ইসলাম এসে রুমে ঢুকে।স্ত্রীর কথা শুনে বললো,
“মন খারাপ করবে কেনো?এরচেয়ে ভালো পাত্র খুঁজে আনবো।”

শ্যামা মাথা নিচু করে রুমে চলে আসে।রুমে এসে দরজা আটকে এলোমেলো হাত পা ছুড়ে কতোক্ষন নাচানাচি করে।ধপাস করে বিছানায় শুয়ে পড়ে।মুখে হাত চেপে খিলখিল করে ছুটে আসা হাসির শব্দ আটকায়।হাসির তোড়ে চোখে পানি চলে আসে।সে তৎক্ষনাৎ ফিরোজকে ফোন দেয়।ফিরোজ তখন উপজেলায় বসে কিছু কাজ করছিলো।শ্যামার ফোন পেয়ে মুখে হাসি ফুটে উঠে।রিসিভ করে শ্যামার হাসি শুনতে পায়।সে আলতো গলায় বললো,
“আমার মহারানী কি নিয়ে এতো খুশী?”

শ্যামা ফিসফিস করে বললো,
“বিয়ে ভেঙ্গে গেছে।”

ফিরোজ হেসে বললো,
“তাই?খুশীর খবর তো ;এই খুশীতে মিষ্টি খাওয়াও।”

শ্যামা হেসে হেসে বললো,
“মিষ্টি তো দোকানে।”

“মধুরানীর মধুরাজা কি দোকানের মিষ্টি খাবে?”

শ্যামা মনোযোগী হয়ে বললো,
“তো?”

ফিরোজ আস্তে করে বললো,
“এতোকিছু বুঝাতে পারবো না।বিয়ে ভেঙ্গে গিয়েছে সেই উপলক্ষে আমার মিষ্টি চাই।অকে মধুমাসের মধুওওওরানী?”

ফিরোজের ইঙ্গিত এতোক্ষণ ধরতে না পারলেও এখন শ্যামার বোধগম্য হয়।তারপর কট করে ফোন কেটে দেয়।লজ্জায় কান দিয়ে গরম ধুঁয়া বের হয়।ইশ!এককালে এই ছেলেটাকেই সে কিনা আনরোমান্টিক বলেছিলো?এই ছেলে তো পাক্কা মধুমাসের রাজা।শ্যামা লজ্জায় মুখ লুকায়।

চলবে…….

#মধুমাস
#পর্ব_১৮
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর

শান্তা শ্যামার রুমে আসে।শ্যামা তখন মাত্র ফিরোজের সাথে কথা বলেছে।তার চোখেমুখে তখনো হাসির রেশ লেগে আছে।সে কলেজে যাবে বিধায় রেডি হচ্ছে।শান্তা বললো,
“তুই প্রেম করিসনা শতবার বললেও আমি বিশ্বাস করি না।”

হঠাৎ করে ভাবীর মুখে এমন কথা শুনে শ্যামা থমকে যায়।মাথা ঘুরিয়ে সতর্ক চোখে শান্তাকে দেখে বললো,
“কেনো কেনো?তোমার ধারণা এমন কেনো?”

“আমার ধারনা শুধু এটা না আমার ধারণা তোর বয়ফ্রেন্ডই বিয়েটা ভেঙ্গেছে।মাহিন কে যতোটুকু দেখেছি আমার তো একবারও মনে হয়নি অপছন্দ হয়েছে।বরং পারলে তখনই বিয়ে করে ফেলতো।”

শ্যামা শান্তার কথাটা নিয়ে ভাবে।তাহলে কি বিয়ে ভাঙ্গার পেছনে ফিরোজের হাত আছে?শ্যামা মনে মনে নিজেকে গাধা বলে অজস্র গালাগালি দিলো।এই সামান্য ব্যাপারটা এতোক্ষণ কেনো তার মাথায় আসেনি?ফিরোজ যে তার পাখিকে ছাড়বেনা এটা তার ভাবা উচিৎ ছিলো,আর সে কিনা ঢ্যাং ঢ্যাং করে এই সুখবরই ফিরোজকে দিতে গিয়েছে যে কিনা মূল কারিগর!
মনে মনে সে নিজে হাজারগুন অবাক হলেও শান্তার সামনে তা প্রকাশ করেনা,মুখে হাজারো মেঘের ভীড় জমিয়ে বললো,
“ফালতু কথা বলো না তো।”

“আমি প্রমাণ করে দেবো।দেখিস।”

শ্যামা ঠোঁট উল্টে বললো,
“কিছু থাকলে তো প্রমাণ হবে।”

“আচ্ছা!তাহলে রাতে ফুসুরফাসুর করে কার সাথে কথা বলিস?”

“কথা বলিনা।আমি রাতে পড়ি।রাতে পড়লে আমার মুখস্ত হয় বেশী।”

শান্তা আর কিছু বলার আগে শ্যামা ব্যাগ কাধে নিয়ে বেরিয়ে যায়।যাওয়ার আগে বললো,
“এতো চিন্তা করো না।আমি এমন কিছু করিনা।”

শান্তা শ্যামার যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে।তার সন্দেহের বীজ আরো শক্ত হয়ে গেথে যায়।

শ্যামা ফারিয়াকে বিয়ে ভাঙ্গার কথাটা বলাতে ফারিয়া খুব মন খারাপ করে।আফসোস করে বললো,
“থাক মন খারাপ করিসনা।দেখবি আরো ভালো কোথাও বিয়ে হবে।”

শ্যামা হাসে।ফারিয়ার দিকে তাকায়।ফারিয়ার ফোন এসেছে।হবু বরের সাথে কথা বলতে বলতে ফারিয়া মুচকি হাসছে।শ্যামা লক্ষ করেছে আজকাল ফারিয়ার চেহারার উজ্জ্বলতা যেনো অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।এই মেয়েটা তার ভালো বিয়ের প্রত্যাশা করছে যদি জানতে পারে তারই বড়ো ভাইয়ের সাথেই মধুর প্রণয়ে জড়িয়ে আছে তাহলে?ফারিয়া বোধহয় খুব রেগে যাবে।আগে শ্যামা ফারিয়ার সাথে ততোটা মিল মোহাব্বত ছিলো না কিন্তু একদিন ঘামে ভেজা রাগী ফিরোজকে দেখেই স্কুলে পড়ুয়া শ্যামার মনে বসন্ত এসে দোলা দিয়ে যায়।মনের গোপন কুঠুরিতে কোকিল মধুর স্বরে কুহু কুহু ডেকে যায়।শ্যামা কোকিলের না বলা কথাটা যেনো বুঝতে পারলো,কম্পনরত বুক নিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে ফিরোজকে দেখে কোকিলের কথাটা বুঝলো,ফিরোজকে তার রাজা বানানোর তীব্র ইচ্ছা মাথায় চাপলো।ভ,য় পেয়ে কাছে না গেলেও দূর থেকে ফিরোজকে গোগ্রাসে গিলে নিতো।ফিরোজের কাছে যাওয়ার বাহানায়ই ফারিয়ার সাথে বান্ধুবীর সম্পর্ক গড়ে তুলা।ফারিয়া তুখোর ছাত্রী।শ্যামা ততোটা ভালো ছাত্রী না হলেও মন দিয়ে পড়ে লেখাপড়ায় উন্নতি ঘটায়,ফারিয়ার সাথে শক্ত করে সম্পর্ক করে,আর এখন ফারিয়া তার প্রাণের বান্ধুবী।আর মাত্র তিনদিন পরেই ফারিয়ার বিয়ে।ফারিয়ার অনুরোধ হলো বিয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শ্যামাকে ফারিয়াদের বাড়িতে থাকতে হবে।কিন্তু দুজনেই চিন্তিত্ব এটা ভেবে যে সেদিন রিপনের সাথে ফিরোজের এতো বড়ো মনমালিন্য হয়ে গেলো এখন কি শ্যামাকে আসতে দেবে?ফারিয়া যে কোনো ভাবেই হোক শ্যামাকে তার কাছে রাখবে।সারাদিন কলেজ করে শ্যামা যখন বাড়ি আসে তখনো বাড়ির পরিবেশ থমথমে।মনে হচ্ছে বিয়ে ভাঙ্গেনি এর চেয়েও ভ’য়াবহ কোনো কিছু ঘটে গেছে।সে মাথা না ঘামিয়ে রুমে গিয়ে ফিরোজকে ফোন দেয়।ফিরোজ ফোন রিসিভ করলে শ্যামা সোজা প্রশ্ন করে,
“আপনিই বিয়েটা ভেঙ্গছেন তাই না?”

ফিরোজ মুচকি হাসে।তার পাখিটা এতোক্ষণে এইব্যাপারটা ধরতে পারলো?সে বললো,
“তুমি কিভাবে ভাবলে আমার শ্যামা পাখিকে আরেকজন নিয়ে যাবে এটা এই ফিরোজ মানবে?এই ফিরোজ!”

শ্যামা হেসে বললো,
“এতো ভাব নিয়েন না।আজকে নেয় নি তো কি হয়েছে যেকোনো দিন নিয়ে যাবে।”

“গায়ের একফোঁটা র,ক্ত অবশিষ্ট থাকতে তা সম্ভব না।”

শ্যামা ভ,য়ার্থ কন্ঠে বললো,
“যদি আব্বা অথবা ভাইয়া যদি জানতে পারে আপনিই বিয়ে ভেঙ্গেছেন তো আমাকে একদম মে’রে ফেলবে।”

ফিরোজ হেসে বললো,
“কেউ জানতে পারবেনা।এতো ভ,য় পেওনা।”

“কিভাবে করলেন এটা।”

“খুবই সহয কাজ।ব্যাটাতো আমাকে দেখেই ম্যাও ম্যাও শুরু করেছে।”

“যদি কাউকে বলে দেয় তাহলে কিন্তু ভালো হবেনা।আমি আরো বেশী বিপদে পড়বো।”

“বললে কি হবে তা ওই ছেলে ভালো করেই জানে।তুমি এতো চিন্তা করোনা।”

“আমি কেনো চিন্তা করি আমাকে হারালে বুঝবেন।”

ফিরোজ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে এই প্রথবারের মতো অসহায় গলায় বললো,
“আমি তোমাক ছাড়া নিজেকে ভাবতে পারিনা শ্যামা।তুমি আমাকে ছেড়ে যেওনা।”

ফিরোজের এমন বিমর্ষ গলা শুনে শ্যামার মন কেমনতর নাম না জানা ব্যাথার চিড়বিড়িয়ে উঠে।ফিসফিস করে আশ্বাস দেয়া গলায় বললো,
“আমি কখনো ছেড়ে যাবোনা।আমি আমার কাছে খুব দামী।”

“ভালোবাসি।”

শ্যামা ফিসফিস করে বললো,
“ইশ!এতো ভালোবাসেন কেনো?”

“জানিনা।এমন মিষ্টি পাখিকে বোধহয় ভালোবাসারই কথা।”

শ্যামা সুখের আবেশ নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।সারারাত ভর ফিরোজকে নিয়ে স্বপ্নে মজে থাকে।

পাশের বাড়ির মালেক মিয়ার মেয়ে রুবি এক ছেলের সাথে প্রেম করে।সবার ভাষ্যমতে ছেলেটা চুড়ান্ত বেয়াদব।রুবি ভালো ছাত্রী কিন্তু কিভাবে যেনো এই চালচুলোহীন ছেলের ক্ষপ্পড়ে পড়ে গেছে।মালেক মিয়া রুবিকে প্রথমে বুঝিয়েছেন কিন্তু কোনোভাবেই যখন মেয়ের মন ফিরাতে পারছিলো না তখন আরো কঠিন হয়েছে রুবি এসবের তোয়াক্কা করেনি সব বাধা ডিঙ্গিয়ে সে পালিয়ে গেছে।মালেক মিয়া মেয়ের এই স্বার্থপরের মতো কাজটা মানতে পারেনি আশেপাশের মানুষের কটু কথা শুনে আত্মহ,ত্যার চেষ্টা করেছেন।ভাগ্যভালো বিধায় এইবারের যাত্রায় বেঁচে ফিরেছেন।শ্যামার আম্মা ফাতেমা বেগম উনাকে দেখে আসলেন।সবাই বারান্দায় বসে মুড়িমাখা খাচ্ছিলো উনি সবার সাথে এসে খেতে বসে।খাওয়ার এক পর্যায়ে আক্ষেপ করে বললো,
“বাবা মা এতো কষ্ট করে ছেলে মেয়ে বড়ো করে কি এভাবে নাক কান কাটার জন্য?”

স্বপ্নন ইসলাম স্ত্রী দিকে তাকিয়ে বললো,
“সব মেয়ে কি এক নাকি?কিছু বেয়াদব আছে এমন।”

ফাতেমা বেগম মেয়ের দিকে একপলক তাকায়,
“কিভাবে বুঝবো?রুবি যে কেমন মেয়ে ছিলো তা কি আমাদের অজানা।ওই যেহেতু এতো নোংরা একটা কাজ করতে পেরেছে আর কি বলবো বলো।”

রিপন সায় দিয়ে বললো,
“খারাপ ছেলেদের পাল্লায় পড়লেই শেষ।তাছাড়া আজকাল গ্রামে এই মাতাল ছেলেদের আনাগোনা বেশী।”

“বাবা মা কতো কষ্ট করে ছেলে মেয়ে বড়ো করে তাদের কি উচিত না বাবা মায়ের সম্মান রেখে চলা?”

স্বপন ইসলাম শ্যামার মাথায় হাত ভুলিয়ে বললো,
“ছেলেকে তো বিয়ে সম্মানমতো বিয়ে করাতে পারলাম এখন আমার আম্মারে একটা রাজপুত্রর কাছে তুলে দিতে পারলেই হয়।”

রিপন বোনের দিকে তাকিয়ে বললো,
“দেখো তোমার মেয়েও কোনো নেশাখোরের পাল্লায় পড়েছে কিনা।”

স্বপন ইসলাম হতাশার গলায় বললো,
“এমন হলে মালেক মিয়ার মতো জানে বাঁচার আশা থাকবে না,আমি তখনি ম,রে যাবো।”

শ্যামার মাথায় হাত ভুলিয়ে বললো,
“এমন করবা নাকি আম্মা?”

শ্যামার বুকটা ধক করে উঠে অচেনা ভয়ে মনটা চিরবিরিয়ে উঠে।বাবার উজ্জ্বল মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হয় তারা এতোকষ্ট করে তাকে বড়ো করছে আর সে কিনা প্রেম করছে? হঠাৎ করেই শ্যামা নিজেকে নিজে ঘৃণা করলো,তার আব্বার মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“না।”

মেয়ের মুখ থেকে এমন সুন্দর উত্তর শুনে স্বপন ইসলাম হইহই করে বললো,
“আমি জানি আমার আম্মা আমার সম্মান রাখবে।”

পরম আদরে স্বপন ইসলাম শ্যামাকে বুকে জড়িয়ে নেয়।আবেগে আপ্লুত হয়ে উনি কান্না করে দেয়।আর বিরবির করে বলে,
“মা রে আমার সম্মান রাখিস।মেয়েদের এই কাজটা যে বাবা মায়ের জন্য কতোটা কষ্টের তা বুঝানো যাবে না।”

কি থেকে কি হয়ে গেলো।হঠাৎ উনার কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে যায়,এমন কাজে সবাই হতভম্ব।শ্যামা উঠে তার রুমে চলে যায়।বিছানায় শুয়ে ফুপিয়ে কাঁদে।এমন করে সে কখনো ভাবেনি,বাবা মায়ের কথা সে কখনোই ভাবেনি।কাঁদতে কাঁদতে এক পর্যায়ে সে সিদ্ধান্ত নেয়,হাত বাড়িয়ে ফোনটা এনে ফিরোজকে ফোন দেয়।ফোন রিসিভ হলে দম আটকে বললো,
“আমি আপনার সাথে আর কোনো সম্পর্ক রাখতে পারবো না।”

চলবে……

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ