Monday, October 6, 2025







মধুমাস পর্ব-০৯

#মধুমাস
#পর্ব_০৯
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর

বিয়ে করবে?শ্যামার এতো কান্না কি লোকটার চোখে পড়ছে না।শ্যামা চোখ মুখ কুঁচকে ফিরোজের দিকে তাকিয়ে থাকে।
“কি করবেন?”

ফিরোজ আবছা অন্ধকারে শ্যামার দিকে তাকিয়ে থাকে।মেয়েটার দিকে তাকালেও শান্তি লাগছে,কোন অদৃশ্য মায়াবলে অন্তর ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।এই নির্জন রাতের আধারে প্রাপ্তবয়স্ক যুবক যুবতী একা এমন কথা বলতে যদি কেউ দেখে ফেলে তাহলে কু-কথা রটাতে বেশী দেরী হবেনা।ফিরোজ না গেলে শ্যামাও যে যাবে না তাই ফিরোজ বললো,
“বেশী কথা বলোনা এখন বাড়ি যাও।”

“যাচ্ছি।”

যেতে নিয়েও ফিরোজ থেমে যায়।গম্ভীর গলায় বললো,
“রাতে খাওনি তাইনা?খেয়ে নিও।”

ফিরোজের এই ছোট ছোট যত্নগুলো শ্যামাকে সুখ দেয়।সে যে খায়নি এটা ফিরোজ কিভাবে বুঝলো?তার শুকনো মুখ লক্ষ করছে?সুখে সুখে শ্যামার মনে ময়ূর নাচে,মাথা ঝাকিয়ে সম্মতি দেয়।ফিরোজ আর দাঁড়ায় না লম্বা লম্বা পা ফেলে সামনে এগিয়ে যায়।তার মনে হচ্ছে শ্যামা একটা চুম্বক যা তাকে টেনে ধরছে,যেতে মোটেই ইচ্ছে করছেনা।সে হাটতে হাটতেই পিছনে ঘুরে তাকায় শ্যামা তখনো দাঁড়িয়ে আছে।ফিরোজ বললো,
“কি হলো ! যাচ্ছোনা কেনো?”

শ্যামা হেটে যাওয়া ফিরোজকে দেখছিলো।লোকে বলে যাকে ভালোবাসে তার সবকিছুই নাকি ভালো লাগে ফিরোজের হেটে যাওয়াও শ্যামার ভালো লাগছে,তাই তাকিয়ে ছিলো।ফিরোজের কথা শুনে শ্যামা বাড়ির দিকে পা বাড়ায়।যে বিষাদের কালো মেঘ মাথায় করে এসেছিলো এখন মনে একটুও কষ্ট নেই,ফুরফুরে মনে প্রেমের মৃদুমন্দ বাতাস বইছে।সে ফিরোজকে ঠিক বুঝতে পারে না,ফিরোজের আচরণ আগের থেকে অন্যরকম মনে হয়,একবার মনে হয় ফিরোজও তাকে ভালোবাসে কিন্তু মুখে স্বীকার করে না।শ্যামা ফিরোজের জন্য অপেক্ষা করবে,যতোদিন না পায়রা পাঠিয়ে প্রেমকথার কাব্য পাঠায় ঠিক ততোদিন। চুপিচুপি করে তার রুমে ঢুকে যায়,তার রুমের সাথের রুমটাতে রিপন থাকে,একবার যদি জানতে পারে শ্যামার এই লুকোছাপ তাহলে তাকে নির্ঘাৎ মে,রে ফেলবে।যদিও মোহাম্মদ আলীর পরিবারের সাথে শ্যামাদের পরিবারের সম্পর্ক ভালো কিন্তু সব সমস্যা ফিরোজকে নিয়ে।রিপন আর ফিরোজ সমবয়সী হওয়া সত্ত্বেও দুজনের মধ্যে এক ফোটাও মেলবন্ধন নেই।শ্যামা বিছানায় মাথা রাখে,ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসির রেশ ছোটাছুটি করছে।মনে মনে ভাবে,”আল্লাহ! কি ভ,য়টাই না পেয়েছিলাম,এখন শান্তি লাগছে।”
শ্যামা নিশ্চিন্ত মনে ঘুমায়,ঘুমে ডুবে যায় এক ভালোবাসার রাজ্যে।যে রাজ্যে ফিরোজ আর তার বিচরণ।আহা জীবন এতো সুন্দর কেনো?

ফিরোজ হাটতে হাটতে অনেক কিছু ভাবছে।সে কি শ্যামাকে পছন্দ করে?নাকি ভালোবাসে?ফিরোজ ত্যাড়া মনোভাবে বললো,
“ভালোবাসি না,মেয়েদের ভালোবাসা মানেই কষ্ট পাওয়া।”
ফিরোজের মন অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে।বিদ্রুপ করে বলে,
“ভালোবাসিস না!বললেই হলো?তাহলে তখন বিয়ের কথা আসাতে শ্যামাকে মনে পড়লো কেনো?শ্যামার সামান্য ম্যাসাজ দেখে এতো রাতে পাগলের মতো ছুটে এলি কেনো?ওর সব পাগলামি কেনো সহ্য করিস?বিচার দে ওর বাবা মায়ের কাছে।পারবি?যানি পারবি না কারন তুই নিজেও শ্যামাকে ভালোবাসিস।”

এমন ধ্রুব সত্যের পরে ফিরোজ আর তর্ক করার সাহস পেলো না।সে কি না চাইতেও শ্যামাকে ভালোবেসে ফেলেছে?নিজের অজান্তে মনের সীলমারা শক্ত কুঠুরি কি খুলে গেছে? ফিরোজ তা চায় না,সে চায় না তার সাথে কেউ জড়িয়ে যাক।আর শ্যামা তো আরো আগে না,তার অনুভূতি যদি জেগে উঠে তাহলে আবার শান্তও হয়ে যাবে।শ্যামার সাথে তার মিলন কখনোই সম্ভব না,পরিবার কখনোই মানবে না,আর ফিরোজ কারো বাকা কথা শুনতে রাজি না।জীবন এভাবে চলছে চলুক এর ছন্দ পরিবর্তন এর দরকার কী?

মোহাম্মদ আলী মুনিয়ার বাবা তৌহিদ হোসেন কে ফোন করে না করে দেন,বিয়ের প্রতি ছেলের অমতের কথা খুলে বলেন,যদি কখনো বিয়েতে সুমতি হয় তাহলে অবশ্যই মুনিয়া মামনিকে আগে স্বরনে রাখবে।ফোন রেখে উনার মুখে আমাবস্যার অন্ধকার বিরাজ করে।তিনি ছেলের উপর নাখোশ।কতো আশা করে বড়োমুখ করে সমন্ধ পাঁকা করেছিলো আর ছেলে কিনা মুখের উপর না করে দিলো?মা হারা ছেলে বলেই তিনি বেশী কিছু বলেননি।মুনিয়ার বাবা তৌহিদ নিজে যেঁচে মেয়ে বিয়ে দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে আর উনি কিনা সোনার ডিম পাড়া হাঁস তাড়িয়ে দিলেন! উনার বেশ রাগ লাগছে,মুনিয়ার সাথে বিয়ে হলে রাজকন্যার সাথে রাজ্য ফ্রী ছিলো কারণ মুনিয়ার কোনো ভাই বোন নেই।ফিরোজ বুঝলই না,ছেলেটা যে কি বুঝে,আরে জীবনে টাকাই তো সব এমন সুযোগ কি বারবার আসে?ফিরোজ যে কি বুঝে!
ফিরোজ ঘুম থেকে উঠে বাড়ির পরিবেশ ঠান্ডা পায়,প্রতিদিনের মতো হট্টগোল নেই,রোজিনা বেগমের হাকডাক নেই।না চাইতেও তার ভ্রু কুঁচকে আসে,পায়ে স্যান্ডেল গলিয়ে বেরিয়ে আসে।তার বাবা সোফায় বিমর্ষ মুখে বসে আছে।ফিরোজ বিচক্ষণ ছেলে,বাবার মন খারাপের কারণ বুঝে।টেবিলে বসে নাস্তা করতে করতে বললো,
“আব্বা নাস্তা করেছেন?”

মোহাম্মদ আলী ছেলের দিকে না তাকিয়েই বললো,
“করেছি।”

ফিরোজ আড়চোখে বাবার রেগে থাকার পরিমাণ অনুমান করে বললো,
“হোটেলে যান নি কেনো?”

মোহাম্মদ আলী কথা বলেনা।বাবার নিশ্চুপ দেখে সে নিজেই আবার বললো,
“শরীর খারাপ লাগলে যাওয়ার দরকার নেই।আমি নাস্তা করে যাচ্ছি।”

মোহাম্মদ আলী মাথা নেড়ে।সায় দেয় মুখে বললো,
“আচ্ছা।”

ফিরোজ বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।কিছুদূর যেতেই মুনিয়ার সাথে দেখা।মুনিয়া হাত নেড়ে থামতে বলে।ফিরোজ থামালে মুনিয়া এগিয়ে আসে।
“সমস্যা কি ফিরোজ ভাই?”

ফিরোজ বুঝতে পারে মুনিয়া বিয়ের কথা বলছে কিন্তু না বুঝার ভান করে বললো,
“কিসের কথা বলছো?”

মুনিয়া লজ্জা পেলো,অকারনেই মুখ মুছে বললো,
“বিয়ের কথা।”

“না করে দিয়েছি শুনোনি,আব্বা বলেনি এখনো?”

“বলেছে।তাইতো বলেছি কি সমস্যা?”

ফিরোজ মুনিয়ার দিকে তাকায়।বাবা মায়ের একমাত্র সুন্দরী কন্যা।নিঃসন্দেহে বিয়ে করার মতো সুন্দরী কিন্তু ফিরোজ তো বিয়েই করবেনা এতোশত জিনিস ভেবে লাভ কি!
“কোনো কারণ নেই মুনিয়া।”

মুনিয়া কিছুক্ষণ স্থির তাকিয়ে থাকে তারপর আস্তে করে বললো,
“আপনার কি পছন্দের কেউ আছে?”

পছন্দের কেউ!হুট করে দীঘল কালো চোখের অধিকারীনির চেহারাটা মনের অদৃশ্য পর্দায় ভেসে উঠে।শ্যামা কি তার পছন্দের মানুষ!ফিরোজের মনে হয় এসব নিয়ে না ভাবাই ভালো,যতো ভাবে ততোই মেয়েটা কাছে আসে।ফিরোজ মুনিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“না।”

মুনিয়ার চোখে ঝিকঝিক করে আশার আলো জ্বলে উঠে।
“তাহলে! ”

ফিরোজ বিরক্ত হয়।মুনিয়াকে ঠাডিয়ে একটা থাপ্পড় দিতে ইচ্ছে করে।নিজের এই ভ,য়ংকর ইচ্ছা দমিয়ে রেখে বললো,
“আমি বিয়ে করবোনা। আর কেনো করবোনা, কারণ কি,সমস্যা কি, এসবের কৈফিয়ত তোমাকে দিতে বাধ্য নই।”

মুনিয়াকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে সে চলে যায়।দুঃখী মনে মুনিয়া ফিরোজের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।যেভাবেই হোক ফিরোজকে নিজের দিকে আকর্ষিত করবেই।

বিকেলে শ্যামার আম্মা ফাতেমা বেগম ফিরোজদের বাড়ি হাটতে যায়।হাটতে যাওয়ার মূল কারণ মুনিয়ার সাথে যে ফিরোজের বিয়ে ঠিক হয়েছে এটা সঠিক কিনা জানতে।রোজিনা বেগমকে জিজ্ঞেস করলে উনি মুখ বেকিয়ে বললো,
“আর বইলেন না ভাবী,কুত্তার পেটে ঘি হজম হয় বলেন?”

ফাতেমা বেগম উৎসুক হয়ে বললো,
“কি হয়েছে ভাবী?”

“বিয়ে করবেনা,রাতে কি রাগারাগি।”

“এতো ভালো মেয়ে তারপরও না করে?”

রোজিনা বেগম মুখ ঝামটা মে,রে বললো,
“মেয়ে যে বিয়ে দিতে রাজী হয়েছে এটাই তো অনেক।”

ফাতেমা বেগম মাথা নেড়ে বললো,
“আপনার ছেলে তো কোনো কাজ করেনা,এসব নেতাগিরি করলে কি কেউ মেয়ে দিতে রাজী হবে?আমার মেয়ে দিতেও তো রাজী হবোনা।সেদিন আপনার ভাই বললো রাস্তাঘাটে সবার সামনেই বেয়াদবের মতো সিগারেট খায়।”

রোজিনা বেগম মাথা নেড়ে বললো,
“মা ছাড়া বান্দর হয়ে গেছে।আমি কি কম যত্ন করি ভাবী?কেউ কখনো বলতে পারবে সৎ মা বকে নাকি অন্যচোখে দেখে।”

দু’জনে কথা বলা শেষ করে ফাতেমা বেগম চলে যাবে সেই মূহুর্তে শ্যামা আসে।ফারিয়ার রুমে যেতে যেতে বললো,
“তুমি চলে যাও আম্মা।ফারিয়ার সাথে আমার কাজ আছে।”

ফারিয়ার কাছে শ্যামা প্রায়ই আসে তাই ফাতেমা বেগম আর কোনো কথা বললেন না উনি উনার মতো চলে গেলেন।শ্যামা এসে দেখে ফারিয়া ঘুমাচ্ছে।সে ফারিয়াকে ঘুম থেকে উঠার তাড়া দিয়ে বেরিয়ে আসে।আশেপাশে তাকিয়ে দেখে কেউ আছে কিনা তারপর টুপ করে ফিরোজের রুমে ঢুকে যায়।দরজা আটকে পুরোটা রুমে চোখ ভুলায়।কেমন মিষ্টি একটা সুগন্ধ সারা রুমজুড়ে।শ্যামার বুক কাঁপে।সে জানতো এই সময় ফিরোজ থাকবে না তাই সে এই সময় এসেছে।ফিরোজের বিছানা অগোছালো শ্যামা বালিশে মাথা রেখে বিছানায় গড়াগড়ি করে,ইশ!এই বিছানায় লোকটা ঘুমায়।শ্যামা বালিশে কয়েকটা চুমু দিয়ে ফেলে,আদুরে বিড়ালের মতো বালিশে গাল ঘষে।কোলবালিশ শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।বালিশ,বিছানা, কোলবালিশ সবকিছুতেই ফিরোজের স্পর্শ,ঘ্রাণ লেগে আছে যা শ্যামা উপলব্ধি করছে,গায়ে মাখার বৃথা চেষ্টা করছে।শ্যামা ভাবে এতো সুখ কেনো চারদিকে,তার কেমন দম বন্ধ হয়ে আসছে।বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়।চেয়ারের উপরে ফিরোজের একটা কালো গেঞ্জি ছড়িয়ে রাখা।শ্যামা গেঞ্জিটা হাতে নেয়,কাঁপা কাঁপা হাতে গেঞ্জিটা গালে চেপে ধরে,গেঞ্জিতে লেগে থাকা আধো আধো পারফিউমের ঘ্রাণ শ্যামাকে মাতাল করে দেয়।দুপুরেই গায়ে দিয়েছিলো হয়তো।শ্যামা গেঞ্জিটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ভাবে ফিরোজকে জড়িয়ে ধরেছে।তারপর কি মনে করে গেঞ্জিটা ওরনার নিচে লুকিয়ে ফেলে।রুম থেকে বেরিয়ে ফারিয়ার কাছে যায়।শ্যামার সারাশব্দ না পেয়ে ফারিয়া ভেবেছিলো যে শ্যামা হয়তো চলে গেছে তাই সে আবারো ঘুমিয়ে গিয়েছে।ফারিয়া ঘুমিয়ে গেছে দেখে শ্যামা আর দাঁড়ায় না।ছুটে বাড়ি চলে আসে।একটা গেঞ্জি না বলে নিয়ে আসলে কি সে চোর হবে?হলে হোক!শ্যামা এসব পরোয়া করে না।ফিরোজের জন্য সে ডাকাতও হতে পারে।

রাতে ফিরোজ বড়ি এসে গোসল করে।সকালে পরা গেঞ্জিটা ধুয়ার জন্য খুঁজে কিন্তু সারা রুম তন্নতন্ন করেও যখন খুঁজে পায় না তখন মেজাজ খারাপ হয়,কালো গেঞ্জিটা তার খুব পছন্দের।কোথাও খুঁজে না পেয়ে ফারিয়াকে ডাকে।ফারিয়া আসলে চেয়ারটা দেখিয়ে রাগী গলায় বললো,
“আমার কালো গেঞ্জিটা এখানে ছিলো।”

ফারিয়া কিছু বুঝতে না পেরে বললো,”তো?”

“কোথায় গেলো? দেখেছিস?”

ফারিয়া মাথা নাড়িয়ে না করে মুখে বললো,
“না।আমি তোমার রুমে আসিই নি।”

“তাহলে কই গেলো?ভুত এসেছিলো?”

“দেখো কোথাও আছে হয়তো।”

ফিরোজ বিরক্ত হয়।এক হাত কোমড়ে আরেক হাত কপালে ধরে বললো,
“সব দেখা শেষ।”

ফারিয়া নিজেও এদিক ওদিকে দেখে।ফিরোজ বললো,
“আজকে অন্যকেউ এসেছিলো?”

ফারিয়া ভেবে বললো,
“না।”

“ভালো করে মনে কর।”

“শ্যামা এসেছিলো,আমি ঘুমিয়েছিলাম তাই চলে গেছে।”

এতোক্ষণে ফিরোজ বুঝতে পারে গেঞ্জিটা কোথায় গেছে।সে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফারিয়া বললো,
“ও কি তোমার গেঞ্জি নেবে?খেয়েদেয়ে কাজ নেই তো তোমার পুরোনো গেঞ্জি চুরি করবে,আমার বান্ধুবী এমন না”

ফিরোজ কথা বলেনা।একটু পর উঠে দাঁড়ায়।ওয়্যারড্রোবের উপরের তাক খুলে বললো,
“এইতো পেয়েছি।”

পেয়েছে শুনে ফারিয়া বললো,
“কই রেখে কই খুঁজো ভাইয়া?আবার সন্দেহও করো।”

ফারিয়া চলে গেলে ফিরোজ হাসে।তার বোন যদি জানতে পারতো প্রাণপ্রিয় বান্ধুবীই চোর তাহলে কি যে হতো।ব্যবহৃত গেঞ্জি দিয়ে পাগলটা কি করবে?কি করবে ভাবতেই ফিরোজের সারা শরীরের যেনো আগুনের পরশ লেগে যায়,উপরের দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে।স্তব্ধ,বিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।মেয়েটা তাকে এতো জালাচ্ছে কেনো?বুকে যে দাবানলের সৃষ্টি হচ্ছে তা কি শ্যামা নিভাতে পারবে?সে বিছানায় বসে ফোন দেয় চোরটাকে।আজকে এই যন্ত্রণার বিহিত করতেই হবে।দুইবার রিং হওয়ার পরে ফোন রিসিভ হয়।ফিরোজ শক্ত গলায় বললো,
“তুমি চুরিও করতে পারো?”

শ্যামা ফিক করে হেসে দেয়।আজকে সে খুব খারাপ একটা কাজ করে ফেলেছে।না না ফিরোজের গেঞ্জি চুরি করেছে সেটা না তার থেকেও জঘন্য কাজ।সে এই মূহুর্তে ফিরোজের গেঞ্জি পরে বসে আছে।অজানা অনুভূতির তোপে বারবার কেঁপে উঠছে।এই সামান্য গেঞ্জিটাই তার বুকে জ,লোচ্ছ্বাস বয়িয়ে দিচ্ছে।এমন সময় যদি মধুমাসের রাজা নিজেই ফোন দেয় তাহলে কেমন লাগে?জ,লোচ্ছ্বাস যে লাল দাগ অতিক্রম করে ভ,য়াবহ রূপ ধারন করে।ফিরোজের কথার ধরনে সে বুঝতে পারে ফিরোজ জানতে পেরেছে।
“কি চুরি করেছি?”

“ভাব করোনা।কেনো নিয়েছো সেটা বলো।”

শ্যামা আস্তে করে বললো,
“জানিনা।”

ফিরোজ কেনো জানি রাগী গলায় কথা বলতে পারছে না।মিহি গলায় বললো,
“এটা খারাপ কাজ হলোনা?চুরি করবে কেনো?”

“আমি যা চাই তা না দিলে ডাকাতিও করতে পারি।”

“কি ডাকাতি করবে শুনি?”

“সময় হলেই বুঝবেন।”

“আমার প্রিয় গেঞ্জি ছিলো।”

শ্যামা নিচু স্বরে বললো,
“সব প্রিয় জিনিস কি কাছে রাখা যায়?আপনিও তো আমার প্রিয়।”

ফিরোজ চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ে।কিছুক্ষণ কেউই কোনো কথা বললোনা।অনেকক্ষণ পরে ফিরোজ জানতে চাইলো,
“একটা সত্যি কথা বলবে?”

“কি?”

“গেঞ্জিটা এখন গায়ে দিয়ে রেখেছো?”

শ্যামা ছোট করে বললো,
“হুম।”

ছোট শব্দটা কিন্তু ফিরোজের সারা শরীর হালকা ধাক্কায় কেঁপে উঠলো।তার গায়ের গেঞ্জি এখন শ্যামার গায়ে।উফ!মেয়েটা পাগল!
“লজ্জা করছেনা?”

শ্যামা কোনো কথা বলেনা।ফিরোজই আবার বললো,
“তুমি কতোবড়ো খারাপ কাজ করেছো ধারনা আছে?”

“না নেই।”

“এর শাস্তি কতো ভ,য়াবহ হতে পারে জানো?”

শ্যামা বললো,
“আপনি শাস্তি দিলে সব শাস্তিই মঞ্জুর।”

“আমি কিন্তু খুব খারাপ,আমার শাস্তিও খারাপ খারাপ হবে।”

“হোক।”

“আমি আসছি এখনি গেঞ্জি ফেরত দেবে।”

শ্যামা আৎকে উঠে।
“দেবো না।”

“না দিলে তোমার আব্বাকে বলে আনাবো।”

“আব্বাকে বলবেন?বলেন আমি ভ,য় পাই না।”

ফিরোজ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে মিহি গলায় শ্যামাকে ডাকলো,
“শ্যামা……”

ফিরোজের এই ছোট ডাকে শ্যামার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো।আজকে ফিরোজের কথাগুলো কাঠখোট্টা লাগছে না বরং বৃষ্টির পর ঠান্ডা বাতাসের মতো ভালো লাগছে।শ্যামা আবেশে চোখ বন্ধ করে বললো,
“হুম।”

“তুমি যে দা,বানলের উৎপত্তি করছো এর তাপ সম্পর্কে ধারনা আছে?নিজ দায়িত্বে দা,বানলে ঝাপিয়ে পড়ছো এর তাপ সইতে পারবে তো?”

শ্যামা কট করে ফোন কেটে দিলো।নিঃশ্বাস পড়লো এলেমেলো।জ্বিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে শক্ত হয়ে বিছানায় পড়ে রইলো।সে খুব চাইতো এই দা,বানল তাকে পুড়িয়ে দেক কিন্তু দা,বানলের নাম শুনেই তো দম বন্ধ হচ্ছে,পুড়ে যাচ্ছে শরীর।অনুভূতির প্রখরতা বাড়ছে।হাতের মোবাইল কেঁপে উঠে জানান দেয় অপর পাশের লোকের কথা শেষ হয়নি।শ্যামা ফোন ধরেনা।টুং করে ম্যাসাজ আসে।ফিরোজ লিখেছে,
“ভয় পাচ্ছো?পেলেই কি!শুনেছি একবার দা,বানলের আগুন জ্বললে নাকি অনেকদিন থাকে,সারাজীবনও থাকতে পারে।কি?পারে না শ্যামা?”

চলবে….

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ