ভৈবর নদীর পাড় পর্ব-০৮

0
76

#ভৈবর_নদীর_পাড়
কলমে : #ফারহানা_কবীর_মানাল
পার্ট -৮

সন্ধ্যা নামতে এখনও ঢের দেরি। কম করে হলেও পাঁচ মিনিট। অথচ এর মধ্যেই সবকিছু অন্ধকার হয়ে গেছে। জে’লের পরিবেশ বাইরের দুনিয়ার মতো নয়। কেমন যেন অন্যরকম। গা ছমছমে ভাব। ফুফুরা চলে যাওয়ার পর থেকে দারোগা সাহেবের সাথে দেখা হয়নি। তিনি দেখা করতে আসেননি। মতিন ছেলেটা বেশ কয়েকবার এসেছিল। সাধারণ কথাবার্তা হয়েছে। তেমন কাজের কথা হয়নি। বুকের মধ্যে জমা কষ্ট চোখের পানির সাথে গড়িয়ে না পড়লে হৃদয় ভাঙার আওয়াজ শোনা যায়। আমিও শুনতে পাচ্ছি। সে আওয়াজ বড্ড বেশি ভ’য়ং’ক’র, অশ্রাব্য! কানে তালি লেগে যায়। শুধু তাই নয়। বুকের ভেতর কোন এক জায়গায় বিরাট ক্ষ’ত হয়ে গেছে। সেখান থেকে র’ক্তের গলগল আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। পরিনত হয়েছি অনুভূতিহীন প্রস্তরখন্ডে!

রাত দশটার দিকে দারোগা সাহেব আমায় দেখেতে এলেন। খালি হাতে আসেননি। সাথে করে ফল মিষ্টি নিয়ে এসেছেন। অবাকই হলাম। দারোগা সাহেব বললেন, “ফয়সাল, শরীর ভালো?”

হড়বড় করে বললাম, “জ্বি ভালো।”

“তোমার ব্যাপারটা আমি বুঝতে পারছি। চিন্তা করো না। আল্লাহ চাইলে তুমি ন্যায় বিচার পাবে।”

“কি বুঝতে পারছেন?”

“এমনিতে তোমার বয়স কম। বাচ্চা ছেলে। সব কথা তোমার সাথে আলোচনা করা যায় না। তবুও কিছু করার নেই। আমাকে বলতেই হবে।”

“কি বলতে চান বলুন। আপনি বলতে পারলে আমার শুনতে সমস্যা হবে না।”

“তোমার দাদির খু”নের দুটো দিক আছে। প্রথমটা হচ্ছে তুমি যা বলছ তা সত্যি। অন্যটা তোমার ফুফুরা যা বলছে সেগুলো সত্যি। ”

“আপনার কি মনে হয়?”

“আমার কিছু মনে হয় না। কাজের কথা বলি। দাদির সাথে তোমার সম্পর্ক কেমন ছিল?”

“ভালো ছিল। খুব ভালো ছিল। সত্যি বলতে মা বাবা মা”রা যাওয়ার পর থেকে দাদিই আমার অভিভাবক।”

“বুঝলাম। দাদির মা”রা যাওয়ায় তোমার কি লাভ হতে পারে?”

“দাদি মা”রা গেলে আমার কোন লাভ নেই। বরং ক্ষতি। সরল হিসাব।”

“ক্ষতির পরিমাণ বর্ণনা করো। হিসাব করে দেখি।”

“দুনিয়ার বুকে একা হয়ে গেছি। আমার জীবনে এর থেকে বড় ক্ষ’তি আর নেই।”

“তদন্তের সুবিধার্থে তোমার জীবন কাহিনী জানা প্রয়োজন। আমার হাতে সময় আছে। তুমি চাইলে বলতে পারো আবার না-ও বলতে পারো।”

অল্প হাসলাম। দারোগা সাহেবের কথা বলার ভঙ্গি চমৎকার। কথা বলার সময় মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। নিজের জীবনের সমস্ত ঘটনা গুছিয়ে বলার চেষ্টা করলাম। এবং মতিনের ঠোঁটের কোণে হাসি দেখে মনে হলো সেই চেষ্টা সফল হয়েছে।

মতিন বলল, “স্যার কিছু বুঝতে পারলেন?”

দারোগা সাহেব শীতল গলায় বললেন, “হ্যাঁ, অনেক কিছুই বুঝতে পারছি। অসংখ্য হা’য়েনার মাঝে অসহায় হরিণ! এখন শুধু প্রমাণের দরকার।”

মতিন ভাব নিয়ে বলল, ” স্যার! এই কে’সের দায়িত্বটা আমি নিতে চাই। জুনিয়র হিসাবে আপনার কাছে এটা আমার দাবী স্যার।”

“আচ্ছা বেশ। এই দায়িত্বটা তোমাকে দিলাম। তবে আমিও নিজের মতো করে খোঁজ খবর করব। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কি হয়!”

“স্যার কিছু মনে না করলে একটা কথা বলবো?”

দারোগা সাহেব থমথমে গলায় বললেন, “বলো।”

মতিন মিইয়ে গিয়ে বলল, “না থাক। অন্য একদিন বলবো।”

দারোগা সাহেব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়ালেন। তারপর হনহনিয়ে থানা থেকে বেরিয়ে গেলেন। মতিন নিচু গলায় বলল, “স্যারের মতিগতি সুবিধার মনে হচ্ছে না। কি বলো ভাই?”

বিরক্ত গলায় বললাম, “আপনাকে একটা কথা বলি, আমাকে বিরক্ত করবেন না। কিছু ভালো লাগে না।”

মতিন ভ্রু কুঁচকে ফেললো। সরু গলায় বলল, “আমাকে আপনি আজ্ঞে করবে না। আমার আপনি শুনতে ভালো লাগে না।”

“তাহলে কি বলবো?”

“তুমি করে বলবে। ইচ্ছে করলে তুইও বলতে পারো। আমার ছোট ভাই আমাকে তুই করে বলে। কাজেই তুমি তুই করে বললে তেমন অসুবিধা হবে না।”

“আচ্ছা বলবো।”

মতিন সরল ভঙ্গিতে হাসলো। আমার কাঁধের ওপর একটা হাত রেখে বলল, “আমি চলে যাচ্ছি। খানিকক্ষণ কেঁদে নাও। কাঁদলে না পারলে সহ্য করতে পারবে না।”

মতিন চলে গেল। কাঁদতে ইচ্ছে করছে, পারছি না। চোখের পানি কেন মনের সঙ্গ দেয় না?

ঘুম ভাঙলো ভোরের দিকে। ঠিক ভোর কি-না জানি না। চারপাশ অন্ধকার। আকাশ দেখা যাচ্ছে না। মাঝরাতের দিকে হঠাৎ চোখ থেকে পানি বের হতে শুরু করল। ঘন্টা খানেক কাঁদা পর খেয়াল করলাম অদ্ভুত রকমের শান্তি লাগছে। কিছু ভালো স্মৃতি মনে পড়ছে। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতে পারিনি। চোদ্দ শিকের আড়ালে নিজেকে অনেক বেশি অসহায় আর একা মনে হচ্ছে। চার দেওয়ালের মাঝে ব’ন্দীর কাছে কোন খরব আসে না। সম্ভবও না। কাজেই আমার কাছে কোন খরব আসছে না। ফুফুরা কি করছে জানতে পারলে ভালো হতো। সে উপায় নেই। জে’লের মধ্যে আ’টকে রাখা হয়েছে। ফুফার দেখানো ভিডিও অনুযায়ী আমিই খু’নটা করেছি। সেই প্রমাণের ভিত্তিতে আমি দো’ষী। অথচ সবকিছু আয়নার মতো পরিষ্কার। একবার তাকালেই স্পষ্ট বোঝা যায়।

সকাল নয়টার দিকে মতিন থা’নায় আসলো। নয়টা সঠিক সময় কি-না জানি না। অনুমান করে বলেছি। মাঝেমধ্যে অনুমান ঠিক হয়ে যায়। মতিন বলল, “সকাল সকাল আসতে চেয়েছিলাম। নয়টা বেজে গেল। যাইহোক ডিয়ার ব্রাদার! সকালের নাস্তায় পরোটা আর ডিম। চলবে?”

ভাঙা গলায় বললাম, “আমাকে বলছেন?”

“হ্যাঁ, তো আর কাকে বলব? এখানে তুমি ছাড়া কেউ নেই।”

“অপ’রাধীর সাথে পুলিশের এমন মিল বাস্তবে দেখা যায় না। বাস্তবের পুলিশ ছাত্রদের ওপর গু’লি চালাতেও দ্বিধা করে না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বললেই দো’ষী হয়ে যেতে হয়।”

মতিন নিচু গলায় বলল, “চাকরি বাঁচাতে অনেক কিছুই করতে হয়। যাইহোক তুমি খেয়ে নাও। স্যার দেখলে রাগ করতে পারেন।”

“দারোগা সাহেবকে না বলেই খাবার নিয়ে এসেছেন?”

“হ্যাঁ, না বলেই এনেছি। নিজের পকেটের টাকা দিয়ে এনেছি।”

“কেন এনেছেন?”

“কৈফিয়ত দিতে পারছি না। খেতে ইচ্ছে করলে খাও- ইচ্ছে না করলে খেতে হবে না।”

“আমার খেতে ইচ্ছে করছে না। আপনি নিয়ে যান।”

মতিন মুখ গোমড়া করে চলে গেল। একটু খারাপ লাগলো। ছেলেটা ভালোবেসে এসব খাবার নিয়ে এসেছিল। আমার ব্যবহারে কষ্ট পেয়েছে নিশ্চয়ই। পাওয়াও উচিত। সত্যি বলতে আমার কিছু ভালো লাগছে না। এই মুহুর্তে কোন খাবারই গলা দিয়ে নামত না। শুধু শুধু খাওয়ার চেষ্টা করতে ইচ্ছে করেনি। মতিন দূরে সরে গিয়ে আমার দিকে পেছন দিয়ে চেয়ারে বসে রইলো।

বেলা এগারোটার দিকে ফুফুরা থানায় আসলো। ওদের ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে বিয়ে বাড়িতে দাওয়াত খেতে এসেছে। তুলি আন্টি ঠোঁটে মেরুন কালারের কড়া লিপস্টিক দিয়েছে। পরনে চোখ ধাঁধানো উগ্র পোশাক। ছোট দাদি পরেছেন জামদানী শাড়ি। কটকটে হলুদ রঙের শাড়িতে তাকে খুব একটা খারাপ লাগছে না। দারোগা সাহেব সবে থানায় এসেছেন। চেয়ারে বসে চায়ের কাপে ছোট ছোট চুমুক দিচ্ছেন। তার মুখ দেখে মনে হচ্ছে চা-টা ভালো হয়েছে। ফুফু বলল, “আম্মার লা”শ পাওয়া যাবে কখন? ম’রা মানুষকে দুনিয়ায় ঘোরানোর নিয়ম নেই। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দা’ফ’ন করতে হয়। ”

দারোগা সাহেব হাসলেন। টেবিলের ওপর চায়ের কাপ রাখতে রাখতে বললেন, “এসব নিয়ম স্বাভাবিক মৃ’ত মানুষের। খু’ন হওয়ার লা’শের জন্য এই নিয়ম বরাদ্দ করা যায় না।”

“কিসব উল্টো পাল্টা বলছেন?”

“উল্টোপাল্টা বলা আমার স্বভাবে নেই। যা বলছি সহজভাবেই বলছি। আপনার মা’য়ের লা”শ ময়নাত’দ’ন্তের জন্য বেশ কয়েকদিন দুনিয়াতে রাখা হবে। কাজ শেষ হলে লা’শ ফেরত পাবেন। তখন ক’ব’র দিতে পারবেন।”

ফুফু মুখ কালো করে ফুফার দিকে তাকালো। ফুফা বললেন, “বুঝতে পারছি। তবুও যদি একটু দ্রুত করার চেষ্টা করতেন। শরিয়তের বিধান আছে।”

“সেই চেষ্টা করছি। চিন্তা করবেন না। আপনারা দাঁড়িয়ে আছেন কেন? বসুন। মতিন ওদের চেয়ার এনে দাও।”

মতিন ব্যস্ত হয়ে চেয়ার আনতে লাগলো। যেন এরা খুব সম্মানিত মেহমান। একটু ত্রুটি হলে সবকিছু ফেলে দিয়ে চলে যাবে। ছোট দাদি চেয়ারে বসতে বসতে বললেন, “থাক বাবা, এতো কিছু করার দরকার নেই। আমরা এমনই ঠিক আছে।”

“এমনি ঠিক থাকলে বসছেন কেন? দাঁড়িয়ে থাকুন।” কথাগুলো বলে মতিন নিজের জিভ কা’ম’ড়ে ধরলো। মাথা নিচু করে বলল, “সরি স্যার।”

দারোগা সাহেব ব্যাপারটা খুব একটা আমলে নিলেন না। সহজ গলায় বললেন, “মোশারফ সাহেব, আপনার বাড়ির খানিকটা সামনে একটা শপিং মলের মতো হয়েছে দেখেছেন?”

ফুফা সম্মতি সূচক মাথা নাড়লেন। অথাৎ তিনি দেখেছেন। দারোগা সাহেব বললেন, “তাহলে নিশ্চয়ই এটাও জানেন ওখানে একটা সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে। সেখান থেকে আমরা কিছু ফুটেজ পেয়েছি।”

ফুফা উত্তেজিত গলায় বললেন, “কি ফুটেজ পেয়েছেন?”

“এই যে ফয়সাল আপনার শাশুড়ি সাথে হেঁটে হেঁটে কোথাও একটা যাচ্ছে। কোথায় যাচ্ছে তা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। দু’জনে হাত ধরাধরি করে আছে।”

ফুফার চোখ চকচক করে উঠলো। অথচ তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করেছে। পকেট থেকে রুমাল বের করে ঘাম মুছতে মুছতে বললেন, “আপনাকে তো বলেছিলাম। ফয়সাল আম্মার সাথে বেরিয়ে গেছিল।”

দারোগা সাহেব হাসলেন। অদ্ভুত গলায় বললেন, “আপনাদের বাড়ির সামনে কোন শপিং মল হয়নি। আপনি এতো উত্তেজিত হয়ে আছেন কেন?”

ফুফা চমকে উঠলেন। যথাসম্ভব স্বাভাবিক গলায় বললেন, “তেমন কিছু নয়। ব্যক্তিগত ব্যাপার।”

“কি ধরনের ব্যক্তিগত ব্যাপার?”

ফুফা একটু ইতস্তত করে বললেন, “এক লোক আমার কাছে কিছু টাকা পায়। সে টাকার জন্য তাগাদা দিচ্ছে।”

“কত টাকা?”

“লাখ খানেক।”

সবকিছু কেমন এলেবেলে হয়ে আছে৷ দারোগা সাহেবের কথার আগামাথা পাওয়া যাচ্ছে না। কেমন যেন খাপছাড়া ভাব। কথা বলছেন অন্য সুরে। ফুফা ক্রমশ ঘামছেন। ফুফুসহ বাকিরাও হাস ফাঁস করছে। হঠাৎই খেয়াল করলাম তিশা আপু আসেনি। কেন আসেনি? ফুফুকে জিজ্ঞেস করবো? না থাক। আপাতত চুপ থাকাই ভালো। বয়স্ক কনস্টেবলটা হাতকড়া পরিয়ে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। এভাবে দাঁড়িয়ে থাকার ব্যাপারটা ভালো লাগছে না। আবার খুব একটা খারাপও লাগছে না।

দারোগা সাহেব হাতের ইশারায় কাউকে ভেতরে আসতে বললেন। রোগা মতো একটা ছেলে ভেতরে প্রবেশ করল। ছেলেটা পরনের কাপড় ছেঁড়া, ধূলো ময়লা মাখা। দারোগা সাহেব বললেন, “তিতু যা বলবি সব সত্যি বলবি তো?”

“জ্বে স্যার। সব সত্যি বলবো। আল্লাহর কসম দিয়ে কচ্ছি।”

“ভালো করে এই ছেলেটাকে দেখ। একে আগে পরে কোথাও দেখেছিস?”

তিতু মাথা নাড়লো। সে আমাকে দেখেছে। দারোগা সাহেব বললেন, “কোথায় দেখেছিস?”

“ভৈবর নদীর পাড়ে আমার মামার চায়ের দোকান আছে। সেই দোকানের সামনে দিয়ে যেতে দেখেছি।”

“শেষবার কবে দেখেছিস?”

“গতকাল দুপুরের দিকে দেখছি।”

“ছেলেটার সাথে কি কেউ ছিল নাকি একা ছিল? যদি কেউ থাকে তাহলে কে কি এখানে আছে?”

তিতু ফুফার দিকে হাত উঁচু করে বলল, “এই লোকটা ছিল। দুজনে খুব গল্প করছিল।”

ফুফা খেঁকিয়ে উঠলেন। ঝাঁঝালো গলায় বললেন, “বেজ’ন্মা! মিথ্যা বলছিস কেন?”

তিতু জোর গলায় বলল, “মা বাপ তুলে গা’লি দেবেন না। যা দেখছি তাই বলছি। মিথ্যা কথা এই তেতু বলে না।”

দারোগা সাহেব বললেন, “মোশারফ সাহেব এটা থা’না। অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করলে আপনাকে জে’লে ভরতে দু’মিনিট সময়ও লাগবে না।”

ফুফা মিইয়ে গিয়ে রাগী দৃষ্টিতে তিতুর দিকে চেয়ে রইলেন। দারোগা সাহেব বললেন, “প্রতিদিন রাস্তা দিয়ে হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে। তুমি আলাদা করে এদের চিনলে কিভাবে?”

“ওই ছেলেটার পায়ে কালো রঙের জুতো ছিল। ওইটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে। তাই আলাদা করে মনে আছে।”

দারোগা সাহেব আমার পায়ের দিকে তাকালেন। আমিও তাকালাম। সত্যি এক জোড়া কালো জুতো পরে আছি। ফুফু বলল, “আপনারা বিনা কারণে আমার স্বামীকে ফাঁ’সা’নো
চেষ্টা করছেন। ও ফয়সালের সাথে যায়নি। একা গিয়েছিল। মা নিজেই কল দিয়ে ডেকেছিল। ওর মোবাইল চেক করে দেখুন। শেষবার মা নিজেই ওকে কল দিয়েছে।”

দারোগা সাহেব হাত বাড়িয়ে ফুফার মোবাইল নিলেন। কল লিস্ট চেক করে দেখে বললেন, “এই কলটা রেকর্ড করা নেই?”

ফুফা বললেন, “সবকিছু তো রেকর্ড করা নেই। তবে কিছু আছে৷ আমি বের করে দিচ্ছি।”

ফুফা কল রেকর্ড বের করলেন। তাতে স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে আমি বলছি- আমি দাদিকে মে”রে ফেলবো! খানিকক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলাম। হায়রে সম্পত্তি! তোরা চাইলেই তো আমি দিয়ে দিতাম। এতিম না হয় এতিমের মতোই এতিমখানায় বড় হতাম। এমন বি’শ্রী পরিকল্পনা করতে কি একটুও লজ্জা করল না?

দারোগা সাহেব হাসলেন। সহজ ভঙ্গিতে বললেন, মোশারফ সাহেব ছোট্ট জীবনে কিসের চাহিদা আপনার? কেন মিথ্যে বলছেন?”

“মানে? কি বলতে চাইছেন?”

“আপনার বাড়ি থেকে ভৈবর নদীর পাড় পর্যন্ত যাওয়ার রাস্তায় তিনটে দোকানে সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে। আমরা সেখান থেকে কিছু ফুটেজ পেয়েছি। সেসব ফুটেজে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে ফয়সাল আপনার সাথেই ছিল।”

ছোট দাদি খেঁকিয়ে উঠলেন। তেঁতো গলায় বললেন, “আমার ছেলেকে ফাঁ’সাচ্ছেন কেন?”

“গলা নিচু করে কথা বলেন। না হলে আপনাকেও চোদ্দ শিকের ভাত খাওয়াতে পারি।”

ফুফু বলল, “আপনি কিসব বলছেন আমরা বুঝতে পারছি না।”

“না বোঝার মতো কিছু নেই। আমি বাংলায় কথা বলছি। তারপরও যখন বুঝতে পারছেন না। বুঝিয়ে বলছি। আপনার মা’য়ের খু’নি হিসেবে ফয়সালকে গ্রে’ফ’তার করা হয়েছিল। প্রমাণ হিসেবে মোশারফ সাহেব একটা ভিডিও দেখিয়েছিলেন। সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। আপনারা বলেছেন ফয়সাল নাকি তার দাদির সাথে গিয়েছে, কোথায় গিয়েছে জানেন না। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। আমরা অনুসন্ধান করে দেখেছি গতকাল দুপুরের সময় ফয়সাল মোশারফ সাহেবের সাথে নদীর পাড়ে গিয়েছিল। এখন কথা হচ্ছে আপনারা মিথ্যা সা’ক্ষ্য কেন দিয়েছেন? কি উদ্দেশ্যে দিয়েছেন? আসলে কে খু” ন করেছে, কেন করেছে সবকিছুর উত্তর জানতে হবে। সেজন্যই মোশারফ সাহেবকে গ্রেফতার করা হবে এবং আপনাদেরকে নজর বন্দী করে রাখা হবে।

ফুফু বলল, “কোন আইনে আমার স্বামীকে গ্রে’ফতা’র করতে চাইছেন?”

দারোগা সাহেব বরফ শীতল গলায় বললেন, “পুলিশকে ভুল পথে চালিত করার জন্য। বাড়াবাড়ি করলে আপনাকেও একই ধারায় গ্রে’ফ’তা’র করা হবে।”

ফুফু সত্যিকার অর্থে নিভে গেল। একজন কনস্টেবল এসে বলল, “স্যার থানার মধ্যে একটা বেড়াল ম”রে আছে। দেখে মনে হচ্ছে কেউ বি” ষ দিয়েছে।”

দারোগা সাহেব ভ্রু কুঁচকে ফেললেন। তরল গলায় বললেন, “কি খেয়েছিল কেউ কি দেখেছ?”

“হ্যাঁ স্যার দেখেছিলাম। মতিন পরোটা আর ডিম এনে টেবিলের ওপর রেখেছিল ওই খেয়েছে।”

মতিন বেশ খানিকটা ঘাবড়ে গেল। ফুফা তীক্ষ্ণ চোখে মতিনের দিকে তাকিয়ে আছে। সেই চোখের দৃষ্টি পড়া যায় না।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে