ভুল এবং ভালোবাসা
পর্ব:- ০৭
লেখা- অনামিকা ইসলাম।
মানে আবার কি হবে? তুই তো বললি ভাবি ওনার বাবা মায়ের সাথে ২বছর ধরে আছে। তার মানে এটা দাঁড়ায় না যে তুই ভাবিকে ওনাদের সাথে কবরে শুইয়ে দিয়ে আসছিস!
বোনের কথা শুনে চেঁচিয়ে উঠে শুভ্র। কি উদ্ভট কথা বার্তা বলছিস তুই? কবরে কেন শুয়ে থাকবে? ওদের বাবা মা আছে না? ওদের সাথে বাসায় থাকবে।
এখানেই ভুল করছেন আপনি ডা: শুভ্র। লাবণ্যর বাবা মা তো তখনই মারা যায় যখন ও অনার্স ১ম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা দিচ্ছিল। তাহলে ওরা কিভাবে কবর ছেড়ে বাসায় থাকবে? পিছন থেকে বলে উঠে লাবণ্যের কাজিন সোহেল।
চমকে উঠে পিছনে তাকালো শুভ্র। আপনি?
ডাঃ সোহেল জবাব দেন, হ্যাঁ আমি। লাবণ্যের কাজিন। পেশায় একজন ডাক্তার। সেদিন লাবণ্যের শরীরে অনেক জ্বর ছিল, ও হাঁটতে পারছিল না। তাই আমি ওকে শক্ত করে ধরে বাসায় নিয়ে যাচ্ছিলাম। আর আপনি সেটা দেখেই ভুল বুঝলেন।
ভুল না বুঝে উপায় আছে? ও হঠাৎ করে যোগাযোগ কেন বন্ধ করে দিল? ওর বাবা মা মারা গেছে সেটা তো আমায় বলতে পারত। নিজে না পারুক, তুষারকে দিয়ে তো বলতে পারত। জানাতে পারত সমস্যার কথা।
মানুষটা স্বাভাবিক জীবনে থাকলে তো এতকিছু ভাবতো। আর কার কথা যেন বলছিস? তুষার?!!!!
হা, হা, দুঃখের মাঝেও হাসি পেল।
তুষার বেঁচে থাকলে তো খবর নিয়ে যাবে!
শিশিরের কথা শুনে আঁতকে উঠে শুভ্র। কাঁপা গলায় বলে, মানে? তু তু তু……..ষা…..র নেই?
সোহেল জবাব দেয়, না নেই। সেদিন কার এক্সিডেন্টে শুধু লাবণ্যর বাবা মা মারা যায়নি, তুষারও মারা গিয়েছিল।
ওদের কথা শুনে শুভ্রর পুরো পৃথিবী ঘুরছে। মনে হচ্ছে, এখনি যেন মাথা ঘুরে পরে যাবে। শুভ্র মনে মনে বলছে, হায় আল্লাহ! একি শুনালে আমায়?
” শুধু ওরাই মারা যায়নি। মারা যাওয়ার সাথে সাথে নিয়ে গেছে একটা মেয়ের মুখের হাসি। বেঁচে থাকার স্বপ্ন। নিয়ে গেছে একটা মেয়ের সুস্থ স্বাভাবিক জীবন। সেদিন চোখের সামনে পরিবারের এতগুলো মানুষের মৃত্যু মেনে নিতে পারে নি মেয়েটি। তাই তো সে সব হারিয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে যায়।”
শিশির থেমে গেল। সোহেল বলতে শুরু করল, মেয়েটি ঢাকায় যে বাসায় থাকত সে বাসার বাড়িওয়ালা ও আশেপাশের বাসার লোকজনেরা ওকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখে। কারন, ওকে কন্ট্রোল করা যাচ্ছিল না। খবর পেয়ে ছুটে আসে মেয়েটির গ্রামের বাড়ির আত্মীয় এবং সেই সাথে মেয়েটির মায়ের বান্ধবী। মানসিক হসপিটালে ভর্তির পরও অবস্থার কোনো উন্নতি হচ্ছে না দেখে মেয়ের মায়ের সেই বান্ধবী ও ওনার হাজবেন্ড মেয়েটিকে দেশের বাহিরে নিয়ে যান।
অবাক বিস্ময়ে প্রশ্ন করে শুভ্র, মা?!!!
সোহেল জবাব দেয়, হ্যাঁ। আপনার মা’ই ছিল লাবণ্যর মায়ের একমাত্র কাছের বান্ধবী। লাবণ্যকে আপনার মা অনেক আগে থেকেই আপনার জন্য পছন্দ করে রেখেছিল।
ভাইয়া, এই ভাইয়া! দাঁড়া….. কোথায় যাচ্ছিস এভাবে?
সোহেলের পুরো কথা না শুনে শুভ্র ছুঁটতে থাকে। শিশির বার বার ডেকেও থামাতে পারল না ভাইকে।
শুভ্র ছুটছে তো ছুটছে’ই……………
শিশির! ওকে পিছু ডেকো না। যেতে দাও ওকে। ওকে ওর ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতে দাও। ওর প্রায়শ্চিত্তের সময় এসে গেছে শিশির। পিছু ফিরে তাকাই শিশির। প্রশ্ন করে সোহেলকে, কিন্তু সেই প্রায়শ্চিত করার সুযোগ আদৌ কি ও পাবে? ভাবি কি এখনো আপনাদের বাড়িতে আছে?
লাবণ্যকে ওখানে রেখে আসার পরদিন’ই তোমার বাবা মা ওকে ঢাকায় তোমাদের নতুন বাসায় নিয়ে গেছে। ও ওখানেই আছে এখন। অনার্স ২য় বর্ষে পড়ে। ও এখন বেশ ভালোই আছে।
শিশির কৌতূহলের সঙ্গে জিজ্ঞেস করল, মানে? ভাবি এখন আমাদের বাসায় আব্বু আম্মুর সাথে আছে? সোহেল স্মিতহাস্যে জবাব দেয়, হ্যাঁ। ও তোমাদের বাসায়’ই আছে। এইতো আমি তো তোমাদের বাসা থেকেই আসলাম ওকে দেখে।
শিশির আনন্দে লাফিয়ে উঠে শুভ্রর নাম্বার ডায়াল করে। খুশিতে আত্মহারা হয়ে বলে, ভাইয়াকে তাহলে খবরটা দিতে হয়!
সোহেল হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নেয়। শিশির চোখ বড় বড় করে সোহেলের দিকে জিজ্ঞাসো দৃষ্টিতে তাকায়। সোহেল গম্ভীর কন্ঠে বলে, লাবণ্যর কথা এখন শুভ্রকে বলা যাবে না।
শিশির অবাক বিস্ময়ে প্রশ্ন করে, কেন বলা যাবে না? মুচকি হেসে সোহেল বলে, খুঁজোক না! খুঁজোক আর একটু একটু করে পুঁড়তে থাকুক বিরহের অনলে। তবেই না ভুলের প্রায়শ্চিত্ত হবে।
শিশির মন খারাপ করে বলে, কিন্তু ভাইয়া তো কষ্ট পাবে?!!!
প্রশ্নোত্তরে সোহেলের জবাব, আরে বোকা মেয়ে! কষ্টের পরই তো ভালোবাসার অধ্যায় শুরু হবে। একটু তো ধৈর্য্য ধরো!!!
শিশির সোহেলের কথামতো শুভ্রকে আর কল দিল না।
এদিকে শুভ্র?!!!
লাবণ্যর জন্য পাগলপ্রায়। এখানে ওখানে করে অসংখ্য জায়গায় লাবণ্যর খুঁজ করেছে, কিন্তু কোথাও ওকে পায়নি। লাবণ্যর গ্রামের লোকজন ভিষণ অপমানজনক ও কটু কথা বললো শুভ্রকে। কিন্তু শুভ্র একটুও অপমানিত হয়নি।
কারণ- ও জানে এ হবে, এ হওয়ার কথা ছিল। রাত্রি ১২টা বাজে।
শুভ্রর চোখে ঘুম নেই।
সারাটা দিন লাবণ্যকে খুঁজে ক্লান্ত শুভ্র বাসায় ফিরে যায়। ফ্রেমে বন্দি লাবণ্যর ছবিটা লাবণ্যর খাটের নিচে অযত্নে অবহেলায় পরে ছিল, আজ শুভ্র সেই ময়লায় ঢাকা ছবি বুকে নিয়ে কাঁদতেছে আর ছবির গায়ে চুমুর পর চুমু দিচ্ছে।
এমন সময় দুরের কোনো এক দোকান থেকে ভেসে আসছে-
” তোর কাছে আমার
অনেক কথা বলার ছিল,
তোর সাথে আমার
স্বপ্ন দেখার আলাপ ছিল!!
তুই শুধু দুরে যাস, দুরে যাস
পাবি না আমাকে!!
.
তোর কাছে আমার
অনেক কথা বলার ছিল,
তোর সাথে আমার
স্বপ্ন দেখার আলাপ ছিল।
চলবে……