ভালোবেসে ঘর বাঁধবো পর্ব-০৪

0
3719

#ভালোবেসে_ঘর_বাঁধবো (৪)

রাত প্রায় নিসিতে, আরমানের ফিরবার এখনো কোনো নাম নেই। সবাই ঘুমিয়ে গেলেও মেহেরের চোখে কোনো ঘুম নেই। আরমানের চিন্তায় সে বিভোর।নিচ তলায় ড্রয়িং রুমে বসে বসে অপেক্ষার প্রহর গুনছে। ফজরে তাকে জাগতে হবে সেজন্য হলেও তারাতাড়ি ঘুমুতে হবে, চোখ বলে নিদ্রা যা, মন বলে জেগে রও। দু দ্বিধা দ্বন্দ্বে পড়েছে সে। চোখে তন্দ্রা নেমে আসতেই কিছু একটার শব্দ কানে ভেসে আসলো। চোখ খুলে তাকিয়ে আরমানকে দেখতে পেয়ে মুহুর্তেই তাঁর উত্তপ্ত হৃদয়খানায় যেনো প্রশান্তির ছোঁয়া লাগলো। স্বপ্ন ভেবে চোখ বন্ধ করতেই চোখ খুলে সিউর হয়ে নিলো আরমান আসলো কি-না!
সত্যি তাহলে উনি এসেছেন!

আরমান আলো জ্বালাতেই মেহেরকে দেখতে পেয়ে আশ্চর্য হলো।মেহেরকে কোন কথা বলতে না দিয়ে বলল, ‘এখানে এভাবে বসে আছো কেন ? তোমাকে কি চো’র পাহারার কাজ দিয়েছে?’

-‘ এতো রাতে বাসায় আসা সেটাও চুরির চেয়েও কম কিছু!’

-‘ আমার নিজের বাসায় আসবো যাব এতে কার কী!’ কোনো কিছুতে আরমান চৌধুরীর অনুমতি নিতে হয় না। ‘

আরমান মেহেরের খুব কাছে এসে বলল, ‘ তোমাকে তো আমি স্ত্রী হিশেবেই মানি না, সো মাইন্ড ইট।’

এই বলে সে হনহনিয়ে সিঁড়ি বেয়ে চলে গেল। আরমান শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে আসতেই মেহের তোয়ালেটা এগিয়ে দিয়ে দূরে যেতেই আরমানের শার্টের বোতামের সাথে মেহেরের চুল আঁটকে যায়। দুজন একে অপরের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মেহেরের মনে এক অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছে। মন তাহার আরমান কে বলছে – তোমার চোখে চোখ রেখে এ জীবন অনায়াসে দিতে পারি পাড়ি, তোমার হাতে হাত রেখে শেষ হবে দীর্ঘ রাত, তোমারি মনের দুরন্ত পথিক যে আমি।

শক্তপোক্ত সুঠাম দেহের সাথে ল্যাপ্টে আছে মেহের ভয় পাচ্ছে সে। যদি বুকের ধুকবুক শব্দ শুনতে পায় আরমান। যদি বুঝে যায় মেহেরের বে’হায়া মনের আকুতি। তখন তো ভীষণ লজ্জায় পড়ে যেতে হবে। মেহেরের তখন পৃথিবীর কোনো এক কোণে লুকিয়ে যেতে হবে। আরমান শার্টের বোতাম থেকে চুল সরানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। আরমানের স্পর্শে মেহের কেঁপে কেঁপে উঠছে ।আরমান একবার উপর থেকে নিচ পর্যন্ত মেহেরকে দেখলো। মেহেরের চোখের অদ্ভুত চাহনিতে সে ভরকে গেলেও নিজেকে সামলে নিলো। খানিকক্ষণ পর সে শরীর কাঁপিয়ে হাসতে লাগলো। মজার ছলে বলেই ফেলল, ‘ কি ব্যাপার এমনভাবে কাঁপছো কেন, আমি ভাবলাম ভূমিকম্প বুঝি শুরু হয়ে গেছে।’

মেহের খুব দ্রুত আরমানের হাত থেকে নিজের হাতটা সরিয়ে দূরে চলে গেল।মেহের মনে মনে ঢোক গিলে বলল, ‘ আর একটু হলেই তো তার হার্টটা ব্রেক ফেল করতো। ভালোবাসা থাকলে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কগুলো হয় চুম্বকের মতো। ইশ! মানুষটাও তাকে চুম্বকের আকর্ষণ করছে।’

তার মানে মেহের তাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে। এই ভেবে সে ছোট্ট আওয়াজ করে হাসতে লাগলো।

মেহেরের হাসির শব্দ শুনে আরমান কপালে ভাঁজ তুলে বলল, ‘ সে কি এতো রাতে তোমাকে ভূ’ত ধরেছে না-কি! কেমন অদ্ভুত মেয়ে রে বাবা।ঘড়িতে রাত তিনটা হলো এতো রাতে তুমি হাসতে পারো! আল্লাহ জানে আর কি কি করতে পারো।’

এই বলে আরমান শুয়ে পরলো।

মেহের মিটিমিটি হেসে যাচ্ছে এখনো তার অনুভূতিগুলো স্মরণ করে। মেহের চোখ বুঁজতে ভয় পায়।চোখ বুঁজলে মানুষটার মায়াবী মুখখানা ভেসে আসছে। আরমান যেন তাকে ইশারায় বলছে মেয়ে তুমি বড্ড নি’র্ল’জ্জ কিভাবে পারো চোখ দিয়ে একজন পুরুষের হৃদয় স্পর্শ করতে।

আজকের সকালটা খুব সুন্দর। চারিদিকে রোজ ঝলমল করছে। সকালে অন্যান্য কাজের ফাঁকে মেহের খেয়াল করল একটা মেয়ে কু’কু’র তার সঙ্গী নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের খুব ক্ষু’ধা’র্ত দেখাচ্ছে। মেহের দেখতে পেলো মেয়ে কুকুরটা হামহাম করে খেয়ে যাচ্ছে কিন্তু সঙ্গীটা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। খেলো না একটুও। সঙ্গীর খাওয়া হলে পরে দুজনে আবার চলে গেল।

মেহেরের এটা ভেবে ভালো লাগছে প’শু’র মধ্যেও কত মিল কিন্তু নিজের কথা মনে হতেই ম’র্মা’হত হলো। সে শ্বশুরের ডাক শুনতেই কল্পনা থেকে বাস্তবে ফিরে আসলো। আরমানকে দেখেই মেহের বুঝতে পারলো অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়েছে সে। মেহেরের দিকে চোখ পরতেই চোখ ফিরিয়ে নিলো। বাবা-মাকে দোয়া করতে বলল। আজ তাদের একটা বড় টেন্ডার জমা দেবে। হাতছাড়া হয়ে গেলে অনেক টাকার লস গুনতে হবে। বাবা আরমানের হাত নিজের হাতে নিয়ে বললেন, ‘ দোয়া করি বাবা তুই সফল হ এবং সেই সাথে তিন চার বাচ্চার বাবা হ।’

আরমান বাবার কথায় বিষম খেলো। আরমান মেহেরের দিকে তাকাতেই মেহের হন্তদন্ত হয়ে ছুটে পানি নিয়ে আসলো। আরমান পানি খেয়ে নিজেকে সামলে নিল মেহেরের হাতে পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে চোখাচোখি হতে চোখ ফিরিয়ে নিল।

চলবে-
( আফরিন ইভা)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে