#ভদ্র স্যার♥রাগী বর-পর্ব ২০
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম শুভ্র স্যার আমার ব্যাগ গুচাচ্ছে।
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে বললাম,
আমার ব্যাগ গোছাচ্ছেন কেনো?
স্যার আমার দিকে না তাকিয়ে ব্যাগ গোছাতে গোছাতেই বলল,তুমি তোমার বাবার বাড়ি যাবে তাই।
আমি উদ্বিগ্ন মুখে বললাম,আপনি কি এখন আমাকে এ বাড়ি থেকে বের করে দিবেন?
স্যার ব্যাগ গোছানোর মধ্যেই রাগী গলায় বলল,নাটক বন্ধ করো।
তোমার বাবার শরীর খারাপ হয়েছে।কিছুদিন সেখানে থেকে আসো।
বাবার অসুস্থতার কথা শুনে খুব চিন্তা হচ্ছিলো।
আর কিছু না বলে তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নিলাম।
গাড়িতে নিশ্চুপ হয়ে বসে আছি আর বারবার তাকে দেখছি।শুভ্র স্যারও চুপচাপ ড্রাইভ করছে একবার তাকাচ্ছেও না।আমার অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল এক্সামের রেসাল্ট দিয়েছে।ফাস্ট ক্লাস পেয়েছি।সব স্যারের জন্যই। মানতে হবে,আমাকে স্যারের বাচ্চাদের মতন বেত দিয়ে পড়ানোর জন্যই এত ভালো রেসাল্ট হল।এর মাঝে একদিন নাহিদ ভাইয়ার সাথে দেখা হয়েছিল।আমাকে বলছিল তার পক্ষ থেকে শুভ্র স্যারকে ধন্যবাদ জানাতে।তার থেকেই জানতে পারলাম সেদিন স্যার দায়িত্ব নিয়ে নাহিদ ভাইকে বোঝাচ্ছিলো কারণ নাহিদ ভাই একটি মেয়ের সাথে রিলেশন করে আর দুই দিন পর পরই তাদের খুব ঝগড়া হয়।তাই এখন যেহেতু তারা বিয়ে করতে যাচ্ছে তাই স্যার তাকে বোঝাচ্ছিলো।আর আমি কি ভেবেছিলাম!
বাসায় গিয়ে পৌছাতেই বাবার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে জোরে জোরে কেঁদে উঠলাম।সব কষ্ট মিলে খুব যন্ত্রণা দিচ্ছে।বাবার স্নেহের ছায়ায় এসে সব কষ্টগুলো অশ্রু হয়ে ভেতর থেকে বেড়িয়ে আসছে।বাবা মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আর কাঁদতে মানা করল।
কিছুক্ষণ পর স্যার সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল।আমাকে কিছুই বলল না।তার চলে যাওয়ার দিকে আমি ছলছল চোখে তাকিয়ে রইলাম।এখন এত দূরে থেকে কি করে স্যারের থেকে ক্ষমা চাইবো।
স্যারের রাগ কি আমি কোনোদিনই ভাঙাতে পারবো না!
স্যার চলে যাওয়ার পর জানতে পারলাম বাবার সামান্য প্রেশার হাই হয়েছিল।আমাকে ব্যাগপত্র নিয়ে আসতে দেখে সবাই বেশ অবাক।
কারো প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে সারাদিন ফোন হাতে নিয়ে রুমে বসে রইলাম।স্যার যদি একবার ফোন দেয়! আমার ফোন দেওয়াতো ব্যর্থ।কিন্তু নাহ! একবারো ফোনটা বেজে উঠে স্কিনে স্যারের নাম ভেসে উঠল না।
খুব মনে পড়ল আগের কথা।যখন এই বাড়িতে আগে আসলে স্যার দুই মিনিট পরপরই ফোন করত।কখনো নিজের থেকে দূরে থাকতে দিত না।আর আজ! আমার এই পরিণতি আমি নিজে অর্জন করেছি।
ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম জানি না।বিকেলে ঘুম ভাঙলে আমি ওড়না ঠিক করে ঘুমু ঘুমু চোখে উঠে বসলাম।
তখনই ভাবি হন্তদন্ত হয়ে রুমে এসে আমাকে দেখে বলল,ঘুম ভেঙেছে তাহলে! কখন থেকে ঘুমিয়েই আছিস।
তোর কাজকর্ম আমি কিছুই বুঝি না,শুভ্র আজ আমেরিকা চলে যাচ্ছে আর তুই এখানে পড়ে আছিস!আরে দুইদিন পরও তো আসতে পারতি!
আমি অবাক হয়ে গেলাম ভাবীর কথা শুনে।
ভুরু কুঁচকে বললাম,আমেরিকা চলে যাচ্ছে…..
আমার কথা মাঝখান থেকে থামিয়ে ভাবী বলতে লাগল,হ্যাঁ আর এক ঘন্টা পরই তো ফ্লাইট।
সেই কথাও ভুলে খেয়ে আছিস।আমি এটা বুঝি না শুভ্রর হঠাৎ আমেরিকার বিজনেস সামলানোর কি হল? এতদিন তো এখান থেকেই সব সামলিয়েছে।
তুই এখানে থাকবি আর শুভ্র বিদেশে পড়ে থাকবে আমার এটা একদমই ভালো লাগছে না।
কথাগুলো বলে ভাবী চলে গেল।
আমার হতভম্ব ভাব এখনো কাটে নি।এই কারণেই স্যার আমাকে এখানে রেখে গেল।আমার থেকে দূরে থাকার জন্য স্যার আমেরিকা চলে যাচ্ছে?
আমাকে ছেড়ে?
আমি সেই মুহূর্তেই এক ছুটে পার্সটা নিয়ে সেভাবেই এলোমেলো খোলা চুল নিয়ে দৌড়াতে লাগলাম।স্যার আমাকে ছেড়ে চলে যাবে ভাবতেই আমার শরীর অসাড় হয়ে আসছে।পা যেন চলতে চাইছে না।কিন্তু আমাকে আজ থামলে চলবে না।দৌড়াতে হবে খুব জোরে,খুব।স্যারকে আমি কিছুতেই আমাকে ছেড়ে যেতে দিব না।
কোনোমতে একটি সিএনজি দাঁড় করিয়ে উঠে পড়লাম।কিন্তু আজ যেন সিএনজির চাকায় ঠাডা পড়েছে।চলছেই না।এদিকে সময়ও দ্রুতগতিতে বয়ে যাচ্ছে।আর মাত্র পঁয়ত্রিশ মিনিট!
আবার পড়ে গেলাম জ্যামে।ঢাকার যেই ট্রাফিক জ্যাম।এই জ্যাম কবে ছুটবে কোনো ঠিক ঠিকানা নেই।যতদূর চোখ যায় শুধু গাড়ি আর গাড়ি দেখা যাচ্ছে।
আমি ব্যাকুল হয়ে সিএনজি থেকে নেমে দৌড়াতে লাগলাম।পিছন থেকে সিএনজির চালক “আমার টাকা,আমার টাকা” বলে চেচাচ্ছে।আমি পুরো পার্সটাই তার দিকে ছুঁড়ে মেরে আবার দৌড়াতে লাগলাম।
সবাই অদ্ভুত ভাবে আমার দিকে তাকাচ্ছে।এই পড়ন্ত বিকেলে এভাবে এলোমেলো খোলা চুলে ঘুমুঘুমু চেহারা নিয়ে পাগলের মত একটি মেয়েকে ছুটতে দেখে যে কারোরই তাকিয়ে থাকার কথা।
কোনোমতে এয়ারপোর্টে পৌঁছালাম।সবাই ব্যস্ত ভঙ্গিতে ব্যাগপত্র ট্রলিতে টেনে ছোটাছুটি করছে। পাশে একটি পাঁচ ছয় বছরের বাচ্চা বসে বসে চকলেট ক্যান্ডি খাচ্ছে।
চারপাশে অসহায়ের মত চোখ বুলাতে লাগলাম।
হঠাৎ এক সেকেন্ডের জন্য মনে হল আমি দেরি করে ফেলেছি।স্যার চলে গেছে আমাকে ছেড়ে।
মুহূর্তের মধ্যেই একবুক শূন্যতায় গাল বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল।সামনে তাকানো অবস্থায় দু পা পিছনে পিছাতেই কারো সাথো মৃদু ধাক্কা খেলাম।
ঘুরে তাকাতেই দেখলাম শুভ্র স্যার।সেও মাথা নিচু করে হাটছিলো।ধাক্কা লাগায় স্যরি বলার জন্য আমার দিকে তাকাতেই সে অবাক হয়ে গেল।
পরক্ষনেই তার চোখে এক চাপা কষ্ট জায়গা করে নিল।
স্যারকে দেখে আমি কাঁদতে কাঁদতেই খুশি হয়ে গেলাম।
শুভ্র স্যার আমাকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিল।আমি তার পথ আগলে দাড়িয়ে তার হাত ধরে কান্নার বেগ টা কমানোর চেষ্টা করে কাঁপা কাঁপা গলায় বলতে লাগলাম,স্যার প্লিজ আমাকে ছেড়ে যাবেন না।আমাকে ক্ষমা করে দিন।আপনি যা বলবেন আমি তাই করবো।কিন্তু আমায় ছেড়ে…..
আর বলতে পারলাম না কান্নার জন্য।
স্যারের চোখেও পানি ছলছল করছে যা সে আপ্রাণ চেষ্টা করে আটকিয়ে রাখছে।
সে আমার দিকে না তাকিয়েই বলল,সুপ্তি আমার জন্য সবকিছু আর কঠিন করো না।আমার যেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আমি নিয়ে ফেলেছি।
শুভ্র স্যার আমার হাত ছাড়িয়ে চলে যাচ্ছে।
“শুভ্র..আমি তোমাকে ভালোবাসি”★★★
স্যার যেতে যেতে থমকে দাঁড়াল পিছন থেকে আমার কান্নামাখা জোড়ালো গলা শুনে।
কয়েক মুহূর্ত সেভাবেই দাড়িয়ে থেকে পিছনে ঘুরে
নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে হাত দিয়ে মাথার চুলগুলো পিছনে ধরে কিছুক্ষণ এদিক ওদিক তাকাতে লাগল।
তারপর দ্রুত আমার সামনে এসে অশ্রু ঝরিয়ে কান্নামাখা গলায় বলতে লাগল,I Hate The Fact, তুমি আমাকে তোমার ভালোবাসায় এতটা দূর্বল করে ফেলেছো যে আমি তোমার ওপর একটু রাগও হয়ে থাকতে পারি না।
বলেই আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।
আমিও শক্ত করে তাকে আঁকড়ে ধরলাম।আমরা দুজনই অঝোর ধারায় কেঁদে যাচ্ছি।পাশ থেকে সেই বাচ্চাটা মুখে আঙুল দিয়ে জোড়ে সিটি বাজিয়ে হাত তালি দিতে লাগল।
স্যার আমার ঘাড়ে মুখ লুকিয়ে কানে বলতে লাগল,আমিও তোমাকে ভালোবাসি সুপ্তি….খুব খুব খুব ভালোবাসি।
আমাকে আর কখনো ছেড়ে যাবে না তো!
আমরা দুজন সবসময় একসাথে থাকবো,ঠিকাছে!
আমি শুভ্রকে ছেড়ে বললাম,দুজন না…
তারপর ওর একটি হাত আমার পেটে চেপে ধরে বললাম,তিনজন…
স্যার তার হাতের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আমার চোখে জিগ্যাসু চোখে তাকালো।
আমিও মৃদু হেসে চোখের পলক ফেলে তাকে আশ্বাস দিলাম।
হ্যাঁ আমাদের মধ্যে তৃতীয় জন আসছে।
দুজনের মাঝে তৃতীয় জন আসা বলতে সেই আলাদা করা অর্থে নয়।তৃতীয় জন আসছে আমাদের দুজনকে আরো আঁকড়ে ধরতে দুজনার সাথে।আজ সকালেই আমি আমার শরীরে শুভ্রর ভালোবাসার অস্তিত্বের খোঁজ পেয়েছি।
কথাটা বোঝা মাত্রই শুভ্রর চোখে মুখে এক খুশির চমক খেলে গেল।
সাথে সাথেই আমাকে উপরে তুলে ধরে ঘোরাতে শুরু করল খুশিতে আর বলতে লাগল,আজকে তুমি আমাকে আমার জীবনের সবথেকে বড় দুটি উপহার দিলে।নিজেকে এই পৃথিবীর সবথেকে সুখী মানুষ লাগছে।আমি…অনেক…খুশি।
আমি ওর কাঁধে দু হাত রেখে হাসতে হাসতে ব্যালেন্স সামলাতে লাগলাম।
ওর চোখে এখন সুখের অশ্রু ঝরছে।আমাকে ধীরে ধীরে উপর থেকে নিচে নামাতে লাগল।ওর কপাল বরাবর আসতেই আমি দু হাত দিয়ে ওর গাল ধরে ওর কপালে এক দীর্ঘ ভালোবাসার পরশ ছুঁয়ে দিলাম।আমাকে নিচে নামানো থামিয়ে শুভ্র আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলল।
চোখের নিচে এখনও মুক্তর মত অশ্রু চিকচিক করছে।
তারপর আমার চোখের দিকে মৃদু হেসে অসীম সুখের ছায়া মুখে নিয়ে তাকিয়ে রইল।আর আমিও মৃদু হেসে তাকিয়ে রইলাম সেভাবেই ওর গাল ধরে ওর চোখে।
সময় যেন সেভাবেই থেমে রইল আমাদের ভালোবাসায়।এ যেন এক স্বর্গীয় সুখের মুহূর্ত।যার প্রকাশ ভাষায় করা অসম্ভব।
জীবনের স্রোতে আমরা যেন এভাবেই একসাথে আঁকড়ে থাকি,সমস্ত জীবনের প্রার্থনা জুড়ে এখন শুধু এই একটাই চাওয়া।
★★★সমাপ্ত★★★
Am kothai osadharon nothing to say. just love it . Api knob sundor . Keep it up.
Plz season 2 Tau diben plz. Onk vallagse eta..
অবশ্যই দেওয়া হবে আপু। সবসময় চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে
Just apurbo sotti eto sundor hoise j bole bujhate parbo na