#ভদ্র স্যার♥রাগী বর-পর্ব ১৯
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি
স্যার এখনো আসছে না কেনো দেখার জন্য বাইরে বেড়িয়ে রুহী আপুর রুমের সামনে দিয়ে যেতেই কানে এলো রুহী আপু কাঁদছে।
আমি আস্তে আস্তে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলাম।
তার কাছে যেয়ে তার কাঁধে হাত রাখতেই সে ঘুরে আমাকে জড়িয়ে ধরে খুব কাঁদতে লাগল।আর বলতে থাকল,সুপ্তি বল তো ও আমার সাথে এমন কেনো করল।কি দোষ করেছিলাম আমি?
আমি তো শুধু ওকে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছিলাম।কিন্তু ওর এসবে কিছুই যায় আসে না।বিয়ে করে কি সুন্দর বউ নিয়ে সুখে আছে।
আর আমি কষ্টের আগুনে পুড়ছি।
রুহী আপু কেঁদেই যাচ্ছে।নিজেকে তার সামনে বড্ড অপরাধী লাগছে।
মনে হচ্ছে তার এই কষ্টের কারণ আমিই।বুকের ভেতরটা আমারো ফেটে যাচ্ছে।সাথে রাগ উঠছে,প্রচন্ড রাগ।
রুমে যেতেই শুভ্র স্যার আমার কাছে এসে হাত ধরে উদ্বিগ্ন মুখে জিগ্যাসা করল,তোমার কি শরীর খারাপ?আর্জেন্ট ডেকে পাঠালে হঠাৎ!
তার ছোয়ায় আমার শরীরে কাটা দিয়ে উঠল।
আমি সমস্ত শক্তি দিয়ে তাকে ধাক্কা দিয়ে চেঁচিয়ে বললাম,একদম ছোঁবেন না আমায়।দূরে যান।অসহ্য লাগছে আমার আপনাকে।
আমি কখনো ভাবতেও পারি নি আপনি এমন
একজন মানুষ।দুই নৌকায় পা দিয়ে চলেন।
স্যার রেগে চিৎকার দিয়ে বলল,চুপ।একদম চুপ।
কি বলছো এসব।
আমি রাগে কান্নায় বলতে লাগলাম,কেনো? যা করেছেন তা শুনতে পারছেন না কেনো?
আপনি আমাকে আর রুহী আপুকে দুজনকেই ঠকিয়েছেন।
স্যার অবাক হয়ে ভুরু কুঁচকে বলল,রুহী?
কেনো আপনি রুহী আপুর সাথে আপনি রিলেশন
করতেন না?
নিজে আমার ফিলিংস নিয়ে খেলে আমাকে
ঠকিয়ে অন্য একটি মেয়ের সাথে প্রেম করেছেন।
আর বিয়ের পর কি সুন্দর আমার ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দিয়েছেন যে আমি আপনাকে ঠকিয়েছি।আরে ঠকিয়েছেন তো আপনি আমাকে আর এখন তাকে ফেলে আবার আমাকে বিয়ে করে রুহী আপুকে ঠকালেন
স্যার বলল,কি যা তা বলছো এসব।রুহীর সাথে আমি রিলেশন করতাম মানে?
আমি যা তা বলছি? নিজের চোখে দেখেছি।
স্যার বলল,কি দেখেছো?
আমি তার কাছে গিয়ে বললাম,তাহলে শুনুন,
মনে আছে কলেজে থাকতে আমরা কবে লাস্ট কথা বলেছিলাম,ঠিক তার পরদিনই আমি কলেজে বই জমা দিতে গিয়ে আপনার কেবিনে গিয়েছিলাম।
যখন আপনি রুহী আপুর হাতে হাত রেখে কথা বলছিলেন আর আপু আপনাকে জড়িয়ে ধরেছিল।
সেদিনও আমি আপনার ল্যাপটপে আমি আপনার আর তার একসাথে ছবি দেখেছি।
আর এরপরও আশা করেন এত কিছু দেখে আমি আপনার সাথে তখন কথা কন্টিনিউ রাখতাম।
আর এখনও সব ভুলে স্বাভাবিক থাকতাম।
আমার মন ভেঙেছেন আপনি।খুব নিষ্ঠুর ভাবে।
স্যার আমার কথা শুনে একটু পিছনে গিয়ে দু হাত দিয়ে মাথার চুলগুলো পিছনে নিয়ে থমকে দাঁড়াল। তারপর আমার সামনে এসে বলল,তুমি এই কারণে আমার সাথে এতদিন ধরে এমন করে যাচ্ছো?
এই কারণে?
রুহীকে আমি না অন্য একটি ছেলে ঠকিয়েছে।
যাকে সে প্রচন্ড ভালোবাসতো।ছেলেটির সাথে রুহী পালিয়ে গিয়ে বিয়েও করেছিল।কিন্তু ছেলেটি বিয়ের পরে পরকীয়া করে রুহীকে ধোঁকা দেয়।
রুহী আমার ফুফাতো বোন।আমরা সমবয়সী।
রুহী ছোটথেকেই বিদেশে বড় হয়ে আসছে।ওর চলাফেরাও তেমনি।যেদিনের কথা তুমি বলছো
সেদিন রুহী আমার কেবিনে ঐ ছেলেটার পরকীয়ার কথা বলেই কাঁদছিল।
আর ইমোশনাল হয়েই ও আমাকে জড়িয়ে ধরে।যেহেতু ওর কালচারে এটা কেনো ব্যাপার না।কিন্তু তবুও আমার ওর জড়িয়ে ধরা ভালো লাগে নি।এত কিছু যখন দেখেছো তখন আরেকটু দাঁড়িয়ে এটা কেনো দেখলে না যে আমি সাথে সাথেই ওকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে দিয়েছিলাম।
আর ল্যাপটপের যেই ছবির কথা বলছো,ফুফাতো বোনের সাথে একটি ছবি তোলা কি খুবই অন্যায়।
ঐ ছবিটা যদি একটু চেঞ্জ করে দেখতে পুরো ল্যাপটপ ভরেই তোমার ছবি ছিলো।
আমার বিশ্বাস হচ্ছে না যে তুমি সামান্য এই কারণের জন্য আমার সাথে এতদিন এমন করেছো! শুধু একবার এসে যদি জানতে চাইতে সত্যিটা কি!
কিন্তু না!তুমি কিছু না বলে গা ঢাকা দিয়ে দিলে।
আমি পাগলের মতো ভালোবেসেছি তোমাকে।
আর তুমি?
জানো যখন হঠাৎ করে উধাও হয়ে গিয়েছিল তখন আমার কি অবস্থা হয়েছিল।দম বন্ধ হয়ে আসতো।আমি ঘুমাতে পারতাম না।দুইবছর আমি শান্তিতে ঘুমায় নি।মাঝরাতে হঠাৎ করে উঠে কাদঁতে থাকতাম।ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম।
বারবার মনে একই প্রশ্ন আঘাত হানতো কেনো তুমি এমন করলে!
বোঝো এটা কতটা কষ্টের।পাগল হয়ে গেছিলাম জাস্ট।
তুমি আমাকে যতটা কষ্ট দিয়েছো তার জন্য তোমাকে আমি কোনোদিনই মাফ করবো না।কোনোদিনই না।
স্যার চাপা রাগ নিয়ে কান্নামুখে কথাগুলো বলছিলো।
আর আমি তার মুখে এই কথাগুলো শুনে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম।মুখ দিয়ে কোনো কথাই বেড়োচ্ছিলো না।
স্যার আবার বলল,আমার কথা যদি বিশ্বাস না হয়ে থাকে তাহলে রুহীকে গিয়েই জিগ্যাসা করো।
কথাগুলো বলেই সে চরম রাগ নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।
আমি দুই হাত দিয়ে চুলগুলো খামছে ধরলাম।নিজের ওপর প্রচন্ড রাগ লাগছে।এটা
আমি কি করেছি।এতটা ভুল বুঝেছি স্যারকে।
ছোট্ট একটা ভুল বোঝাবুঝির জন্য এতটা কষ্ট দিয়েছি স্যারকে।কেনো এভাবে কথা চেপে না রেখে স্যারকে গিয়ে বললাম না।
একবার যদি কথাগুলো তাকে জানাতাম!
আমার আর রুহী আপুকে জিগ্যাসা করতে হবে না।স্যারের মুখের কথাই আমার কাছে যথেষ্ঠ।
নিজেকে খুন করে ফেলতে ইচ্ছা করছে।
এই আমি ভালোবাসি শুভ্র স্যারকে!
ভালোবাসলে কি করে এতটা ভুল বুঝতে পারলাম?
আমি তাকে যেই কষ্ট দিয়েছি তারপরে স্যারের আমাকে ক্ষমা না করাটাই উচিত।আমি তার ক্ষমারও যোগ্য না।
অঝোরে ধারায় অশ্রুর বন্যা ভাসিয়ে আমি বসে বসে কাঁদতে লাগলাম।
আর স্যারের ফিরে আসার অপেক্ষা করতে লাগলাম।কিন্তু স্যার সারারাতে আর ফিরে আসলো না।
তারপরের দিন সকালে একবার এসে দুই মিনিটের জন্য মার সাথে কথা বলেই চলে গেল।আমাকে কিছু বলারও সুযোগ দিচ্ছে না।বারবার ফোন করি কিন্তু ফোন রিসিভও করে না।এই অপরাধী অনুভূতি নিয়ে আমি ভেতরে ভেতরে দগ্ধ হতে লাগলাম।
স্যার সারাদিন অফিসে কাটায়।বাসায় আসলেও পাঁচ দশমিনিট পরই চলে যায়।ভুলেও রুমে যায় না।
সবার সামনে আমি কিছু বলতেও পারি না।যাওয়ার সময় পেছন থেকে ক্রমাগত ডাকতে থাকি তবুও ফিরেই তাকায় না।
দুইদিন পর সে একটি ফাইল নেওয়ার জন্য রুমে আসতেই আমি তার পা ধরে অঝোরে কেঁদে উঠি।
স্যার বারবার পা ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু আমি আরও শক্ত করে চেপে ধরে কেঁদে কেঁদে বলতে থাকি,স্যার প্লিজ,আপনি আমাকে যেই শাস্তি দেওয়ার দিন যত বড়ই শাস্তি হোক না কেনো আমি মাথা পেতে নিবো।কিন্তু এভাবে দূরে দূরে থাকবেন না।আমাকে মাফ করে দিন স্যার,
মাফ করে দিন।
স্যার আমাকে হাত দিয়ে উঠিয়ে ধরে বলল,কেনো! তোমার তো আমাকে সহ্য হয় না তাই না।
আমাকে যেন আর দেখতে না হয় আমি তো সেই ব্যবস্থাই করছি।
বলে আমাকে ধাক্কা মেরে চলে গেল।আর আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদতে থাকলাম।
তারপর দিন বিকেলে ছাদে গিয়ে দেখি স্যার আকাশের দিকে তাকিয়ে সিগারেট খাচ্ছে।
দেখে আমার বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠল।তাকে আমি কখনোই খেতে দেখি নি।
কতটা কষ্ট পেলে স্যারের মত ছেলে সিগারেট খেতে পারে ভেবেই আমার চোখ ঝাপসা হয়ে এলো।
আমি স্যারের ঠোঁট থেকে সিগারেটটা বের করার
জন্য হাত বাস্যার আমার হাত খপ করে ধরে ফেলল।
আমি কাকুতির স্বরে বললাম,প্লিজ এগুলো খাবেন না।
স্যার রক্তবর্ণ চোখে তাকিয়ে বলল,কষ্ট দিয়ে এখন
কষ্ট কমাতেও দেবে না?
আমি চোখের পানি ঝরিয়ে বললাম,আমাকে যেই শাস্তি দেওয়ার দিন।কিন্তু এভাবে আর থাকবেন না।আমার আর সহ্য হচ্ছে না।
স্যার তাচ্ছিল্যের সুরে বলল,দুইদিনেই সহ্য করতে পরছো না।আর আমি যে বছরের বছর এর থেকেও দ্বিগুন কষ্ট সহ্য করে আসছি।
আমি আরো কিছু বলতে নিলাম কিন্তু তার আগেই
স্যার আমার মাথা পেছন থেকে তার দিকে টেনে তার সিগারেট আমার হাতের কাছে এনে বলল,এখন তুমি যাবে নাকি এই সিগারেট হাতে চেপে ধরবো?
স্যার আমাকে আগুনের ছ্যাকার ভয় দেখাচ্ছে!
স্যারের চোখের দিকে তাকিয়ে একটি মৃদু হাসি দিয়ে আমি নিজেই সিগারেটের আগুনের অংশ আমার হাতে চেপে ধরলাম।
স্যার আমার চেহারার এই হঠাৎ পরিবর্তন আর সিগারেট চেপে ধরা দেখে হতবিহবল হয়ে তাকিয়ে রইল।
তারপর তাড়াতাড়ি সিগারেট কেড়ে নিয়ে দ্রুত নজর সড়িয়ে চলে গেল।
কিছুক্ষণ আমি রুমে গিয়ে দেখলাম স্যার তার হাতেও সিগারেট চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে রেখেছে।
আমার উপস্থিতি টের পাওয়ার সাথে সাথেই সিগারেট ফেলে দিয়ে দ্রুত বের হয়ে গেল রুম থেকে।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম শুভ্র স্যার আমার ব্যাগ গুচাচ্ছে।আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে বললাম…………
চলবে,,