Sunday, October 5, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"ভদ্র স্যার রাগী বরভদ্র স্যার♥রাগী বর-পর্ব ১৭+১৮

ভদ্র স্যার♥রাগী বর-পর্ব ১৭+১৮

#ভদ্র স্যার♥রাগী বর-পর্ব ১৭
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি

Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি

সকাল ভোরে স্যারের নাম্বার থেকে একটা রিং বাজতে না বাজতেই আমি উত্তেজিত হয়ে দাঁড়িয়ে রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে কিছু বলতেই আমার হাত থেকে ধপ করে ফোনটা মাটিতে পড়ে গেল।তারপর আমি কিভাবে হসপিটালে পৌছালাম,জানি না।
আমার সমস্ত পৃথিবী যেন ঘুরছে।স্যারের নাম্বার
থেকে হসপিটালের একজন ডাক্তার ফোন করেছিল।সে শুধু বলল,এই ফোন যার তার এক্সিডেন্ট হয়েছে।
ব্যাস! আমি আর বাকিটুকু শুনতে পারি নি।
আমার পুরো শরীর থরথর করে কাঁপছে।মনে হচ্ছে একটা ঘোরের ভেতর চলে গেছি।

কোনোমতে রিসিপশনে দাঁড়ানো মেয়েটিকে কাঁপতে কাঁপতে বললাম,অ্যাক্সিডেন্ট করেছে সে কোথায়?
মেয়েটি চোখ গোলগোল করে বলল,একটু আগে অ্যাক্সিডেন্টে আসা একটি পেশেন্ট মারা গেছে, আপনি কি তার কথা বলছেন?
কথাটি শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে পরলাম।সাথে সাথে লুটিয়ে পরলাম মাটিতে তারপর আর কিছুই মনে নেই।

সেন্স ফিরে আসলে দেখলাম আমি একটি বেডে
শুয়ে আছি।আর আমার পাশে শুভ্র স্যার হাতে ব্যন্ডেজ মাথায় ব্যন্ডেজ নিয়ে সামান্য ভুরু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি সঙ্গে সঙ্গে উঠে বসে তার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে জড়িয়ে ধরে জোরে জোরে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলাম।
আশে পাশে ডাক্তার নার্স সব জড়ো হয়ে গেছে।স্যার সবার সামনে এভাবে আমার জোরে জোরে কাঁদায় একটু অস্বস্তি অনুভব করছে।লজ্জামাখা মুচকি হাসি দিয়ে আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলতে লাগল,এই সুপ্তি আমি ঠিক আছি তো।দেখো দেখি! আর কাঁদে না….থামো।
হঠাৎ পাশে থাকা ডাক্তারটা জোরে জোরে হেসে উঠল।তার হাসির শব্দে এবার আমার মাথায় সেন্স আসল।আমি স্যারকে ছেড়ে একটু সরে বসে চোখের পানি মুছলাম।
ডাক্তার বলে যাচ্ছে, বাব্বাহ!এত প্রেম।
কিরে শুভ্র! তোর বউ দেখি তোকে খুব ভালোবাসে।
পুরো কথা ঠিকমতো না শুনেই বেহুঁশ।
ভাগ্যিস তখন আমি সেখানে থাকায় তোর বউকে চিনতে পেরেছি।
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল,এই যে মা,আমি কিন্তু তোমার শ্বশুরের বন্ধু।শুভ্রর ডাক্তার আঙ্কেল।তোমাদের বিয়েতে যেতে পারি নি কিন্তু বিয়ের সব ছবি দেখেছি।
আমি সকাল বেলা এসেই জানতে পেরেছি শুভ্রর কথা।শুভ্রকে রাতেই হসপিটালে আনা হয়েছিল।
আর ওর পরে আরেকটা অ্যাক্সিডেন্টের পেশেন্ট এসেছে যে মারা গেছে।
রিসিপশনিস্ট তোমাকে তার কথাই বলছিলো।কিন্ত তুমি তো পুরোপুরি না শুনেই সেন্স হারালে।পেশেন্টের সেন্স ফিরেছে আরো এক ঘন্টা আগে আর বউ সেদিকে তিনঘন্টা ধরে সেন্সলেস হয়ে পড়ে আছে।
শুভ্র স্যারও একটু মজা করে বলে উঠল,আরে বুঝো না এগুলো সব চালাকি যাতে আমার সেবা না করা লাগে।
এই কথায় ডাক্তার আঙ্কেল বেশ মজা পেলেন। হা হা করে হাসতে লাগলেন।
আর আমি চোখ দিয়ে স্যারকে ঈষৎ রাগ দেখালাম।

শুভ্র স্যারকে সেদিনই বাসায় নিয়ে আসলাম।
বাবা মাকে জানাতে চেয়েছিলাম কিন্তু স্যার মানা করল,বলল মার এমনিই শরীর অসুস্থ আর এর ভেতর শুধুশুধু টেনশন করবে।ডাক্তার আঙ্কেল বলেছে দশ পনেরদিন ফুল রেস্ট করলেই হবে।
স্যার ডান হাতে ভালো ব্যাথা পেয়েছে বেশি নাড়াচাড়া করতে পারে না।পায়েও সামান্য ব্যাথা পেয়েছে।খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটঁতে হয় তাই তার সব কাজ এখন আমিই করে দেই।
জান প্রাণ দিয়ে স্যারের সেবা করে যাচ্ছি।
তাকে খাইয়ে দেওয়া,ঔষধ খাওয়ানো,গোসল করানো,এমনকি ড্রেস চেন্জও আমাকে করিয়ে দিতে হয়।আমার ভীষণ লজ্জা লাগে তখন।
বেশি লজ্জা লাগে যখন গোসল করানোর সময় খালি গায়ে সাবান মাখিয়ে দিতে হয়।
তার ফর্সা উন্মুক্ত বুকে সাবান লাগাতে গিয়ে আমি লজ্জায় লাল হয়ে কুঁকড়ে যাই।তার দিকে তাকাতেও পারি না।শুভ্র স্যার আমার অবস্থা বুঝে মুচকি মুচকি হাসতে থাকে।
নিজেকে এখন মনে হয় স্যারের স্যার।স্যার যখন খেতে চায় না ধমক দিয়ে বলি চুপচাপ হা করুন।
বলে ভাত মেখে খাইয়ে দিতে থাকি।
অনেকদিন হয়ে গেছে এখন স্যার কিছুটা সুস্থ।এখনই সে অফিসে যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছে।কিন্তু আমি যেতে দেই না।

রাতে স্যারকে খাইয়ে দিয়ে বসে আছি।শুভ্র স্যার একটি হালকা নীল আর কালো রঙের চেকচেক শার্ট পড়ে বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে আছে। কপালের কোনায় এখনো একটি ওয়ানটাইম ব্যান্ডেজ লাগানো।প্রচন্ড বাতাস ছেড়েছে।মনে হয় ঝড় আসবে।আমি উঠে দরজা জানালা সব বন্ধ করে দিলাম।
শীতল হাওয়ায় ভরে গেছে পুরো রুম।ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে।একটুপরই ঝপ ঝপ করে প্রচন্ড বৃষ্টি নামতে লাগল।সাথে একটু পরপরই বিজলি চমকাচ্ছে আমার এই বিজলির শব্দটায় বেশ ভয়ভয় লাগে,যেমন এখন লাগছে।

একটুপরই কারেন্ট চলে গেল।আমি উঠে মোমবাতি জ্বালালাম বেশ কয়েকটা।মনে পড়ল স্যারের ঔষধ এখনো খাওয়ানো হয় নি।ড্রয়ার থেকে ঔষধের বক্সটা বের করতেই কারেন্ট চলে আসল।বাইরে গুরুম গুরুম শব্দ হয়েই যাচ্ছে।
আমি বিছানায় স্যারের পাশে বসে ঔষধ খাইয়ে দিলাম।তখনই কাছে কোথাও কান ফাটানো শব্দ করে বাজ পড়ল সাথে সাথেই কারেন্ট চলে গেল।রুমটা মুহূর্তের জন্য আলোকিত হয়ে গেল।
শব্দ হওয়ার সাথে সাথেই আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে স্যারের বুকে মুখ লুকিয়ে তার পিছনের শার্ট খামছে জড়িয়ে ধরলাম।স্যারও আমাকে শক্ত করে আগলে ধরল। বাইরে দিয়ে অনর্গল বৃষ্টির শব্দ আর বিদুৎ চমকানো কানে আসছে।
হঠাৎ কি হল জানি না।আমাদের দুজনের নিঃশ্বাসই ঘন হয়ে আসল।দুজনের শরীরের উষ্ণতায় আমার যেন কোন ঘোরের মধ্যে হারিয়ে গেলাম।হাতের বাঁধন আরও শক্ত হতে লাগল।
কিছুক্ষণ পর বাঁধন ধীরে ধীরে আলগা হয়ে গেল।
স্যার আমাকে খুব আস্তে আস্তে তার পাশে শুইয়ে দিয়ে আমার দু চোখে খুব ভালোবেসে দুটি চুমু দিল।তারপর ধীরে ধীরে তার শার্টের বাটন একটি একটি করে খুলে আমার ঘাড়ে একটি গভীর চুম্বন করল।আমি বিছানার চাদর শক্ত করে খামছে ধরলাম।সে আমার হাত বিছানার চাদর থেকে ছাড়িয়ে তার হাতের মুঠোয় নিয়ে শক্ত করে চেপে ধরল।তার প্রতিটি স্পর্শে আমি বারবার কেঁপে উঠছি।আমার কেঁপে উঠায় সে আমাকে আরো ততই শক্ত করে আকঁড়ে ধরছে। স্যার আমায় আজ যেন কোন এক অচেনা সাগরে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আর আমিও তার সাথে সাথে ভেসে যাচ্ছি।আজ যেন আমাদের ভেতর কোনো বাঁধা নেই,কোনো দ্বিধা নেই।ভালোবাসা যেন আজ সব,এক পরম আবেশে জরিয়ে রাখছে আমাদের।

সকালের মৃদু আলো চোখে লাগতেই আমার ঘুম ভেঙে গেল।রাতের তুমুল বৃষ্টির পর এখন আকাশ ফকফকা ফর্সা।আজকের সকালটা যেন অন্যরকম লাগছে।নিজেকে আবিষ্কার করলাম স্যারের উন্মুক্ত বুকে।এক প্রশান্তির ছায়া মুখে নিয়ে সে এখনো ঘুমিয়ে যাচ্ছে।রাতের মুহূর্তগুলো মনে পরতেই লজ্জায় কুঁকড়ে গেলাম।নিজেকে স্যারের কাছ থেকে ছাড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে একটি লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।

আমি কিচেনে দাঁড়িয়ে চা বানাচ্ছি।তখনই শুভ্র স্যার উপর থেকে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে লাগল।আমার চোখে চোখ পড়তেই সেই আগের মত মাথা চুলকিয়ে একটি লাজুক হাসি দিল।অনেকদিন পর আজ যেন সেই লাজুক শুভ্র স্যারকে দেখলাম। স্যার নেমে ডাইনিং টেবিলে চেয়ার টেনে বসল।
আমি মাথা নিচু করে চা বানাচ্ছি।আর স্যার বারবার আড়চোখে আমাকে দেখে যাচ্ছে।আমার গাল দুটো লাল হয়ে আছে।আমি তাকাতেই পারছি না স্যারের দিকে।আজ যেন পৃথিবীর সমস্ত
লজ্জা আমার উপর ভর করেছে।

কিছুদিন হলো সামিয়া,বাবা,মা সবাই চলে এসেছে।স্যার ছাদে টবের ফুলগাছে পাইপ দিয়ে পানি দিচ্ছিল।
আমি পিছনে গিয়ে দাঁড়াতেই ইচ্ছে করে পাইপ ঘুরিয়ে আমার গায়ে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিল।
আর এখন এমন ভাব করছে যে ভুলবশত দিয়ে ফেলেছে।পানি দিয়েই বারবার বলতে লাগল,স্যরি স্যরি স্যরি।
আমি নাক ফুলিয়ে পিছনে ঘুরে চলে যাচ্ছিলাম।
স্যার তাড়াতাড়ি আমার সামনে এসে পথ আগলে দাড়িয়ে আমার কোমড় টেনে কাছে নিয়ে বলল,
স্যরি বউ।ভুল করে হয়ে গেছে।
আমি রাগ হয়ে বললাম,ভুল করে!আমার তো চোখ নেই আমি তো কিছু বুঝি না,না?
সে আমার কাঁধ থেকে চুল সরিয়ে মুখে চিন্তিত ভাব নিয়ে বলল,এ কি! সুপ্তি তোমার গলায় এমন লাল
দাগ কিভাবে হলো?
আমি মুখ ভেংগিয়ে বললাম,একটা পাঁজি মশা করেছে।
স্যার বলতে লাগল,কি!কোন মশা করেছে!
মশার এত সাহস আমার বউয়ের এত সুন্দর গলার
এই অবস্থা করেছে।ঐ মশাকে তো আমি ছাড়ছি না।

আমি তার বুকে হালকা আঘাত করে বললাম,হয়েছে।আর ঢঙ করে সাধু সাজতে হবে না।আমাকে ভিজিয়ে দেওয়ার জন্য এখন কানে ধরুন।
স্যার চোখ কপালে তুলে বলল,কানে ধরব?
তুমি তোমার স্যারকে কানে ধরাবে?
আমি তাকে ধাক্কা দিয়ে বললাম,স্যার না? তাহলে দূরে থাকুন স্যারের মতো।স্যার হয়ে ছাত্রীর সাথে এত ঘেষাঘেষি কিসের?
আমি আবার চলে যাচ্ছিলাম কিন্তু স্যার তাড়াতাড়ি বলল,আচ্ছা আচ্ছা,রাগ করো না।ধরছি।
বলে কানে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল।আমি তাকে এভাবে দেখে খিলখিল করে হেসে দিলাম।আর স্যার মুগ্ধ চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইল।

আজ আমি ঠিক করেছি স্যারের জন্য পায়েস বানাবো।স্যার আমাকে যেভাবে শিখিয়ে দিয়েছিল সেভাবেই।যেই ভাবা সেই কাজ!কোমড়ে আঁচল গুজে আমি নেমে পরলাম পায়েস বানাতে।

রাতে শুভ্র স্যার যখন অফিস থেকে আসলো আমি তার সামনে পায়েসের বাটি ঢেকে রাখলাম।স্যার বাটির দিকে তাকিয়ে এক্সাইটেড হয়ে বলল,ওয়াও! নুডুলস!
আমি তাড়াতাড়ি বললাম,নুডুলস না পায়েস।আমি বানিয়েছি।
স্যার তাড়াতাড়ি এক চামচ মুখে দিল।আমি নার্ভাস হয়ে জিগ্যাসু চোখে তাকিয়ে রইলাম।
স্যার মুখে একটি চমকপ্রদ এক্সপ্রেশন দিয়ে হাত দিয়ে দেখালো অসাধারণ।
আমি খুব খুশি হয়ে বললাম,সত্যি!আমিও একটু খেয়ে দেখি তো।
আমি চামচ হাতে নেওয়ার আগেই স্যার দ্রুত আমার সামনে থেকে বাটি সরিয়ে বলল,একদম না।আমার জন্য বানিয়েছো সব আমি খাবো।তুমি
একটুও পাবে না।বলে স্যার খুশিমনে খুব দ্রুত খেতে লাগল।আমি তো সেই খুশি স্যারের এত পছন্দ হয়েছে।
তার খাওয়া শেষ হলে আমি খালি বাটি নিয়ে বাইরে চলে আসলাম।কিছুক্ষণ পর ফিরে আসলাম পায়েসের একটি পিরিচ হাতে মুখ থমথম করে।কারণ………….

#ভদ্র স্যার♥রাগী বর-পর্ব ১৮
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি

কিছুক্ষণ পর ফিরে আসলাম পায়েসের একটি পিরিচ হাতে মুখ থমথম করে।কারণ নিচে যাওয়ার সাথে সাথেই সামিয়া আমার সামনে পায়েসের পিরিচ নিয়ে বলল,ভাবী এই পায়েস কে বানিয়েছে।কি বিশ্রী!কিচেনে পায়েস দেখে আমি এক পিরিচ তুলে নিয়েছিলাম খাওয়ার জন্য।
কিন্তু এক চামচও মুখে দিতে পারি নি।
আমি ওর কথা শুনে অবাক হয়ে ওর হাত থেকে পায়েস নিয়ে এক চামচ মুখে দিতেই বমি চলে আসল।এটা কি পায়েস? মনে হয় চিনির জায়গায় লবণ দিয়ে ফেলেছি।এই পায়েস স্যার পুরো একবাটি খেলো কি করে?
আমার রীতিমতো কান্না পাচ্ছে।লবণের বদলে চিনিটা ঠিকমতো দিলেই কি সুন্দর ভালো হতো।এমন ভুল আমি করলাম কিভাবে।
স্যারের সামনে গিয়ে বললাম,আপনি আমাকে মিথ্যা বলেছেন কেনো?
এই পায়েস তো খাওয়ার উপযুক্তও না।
স্যার আমার দিকে একপলক তাকিয়ে আমার হাত টেনে তার পাশে বসিয়ে বলল,কই আমার তো বেশ লেগেছে।তুমি আমার জন্য বানিয়েছো আমি না খেয়ে পারি?
আমি কাঁদো কাঁদো করে বললাম,আপনার এই বীশ্রি পায়েস খাওয়ার কি দরকার ছিল? আমি তো একচামচও খেতে পারলাম না।
স্যার আমাকে তার বুকে টেনে বলল,তোমার হাতের বিষও আমার কাছে অমৃত।আমি তাও একচুমুকে খেতে পারব।
আমি বললাম,কেনো?
স্যার বলল,এখনো তোমার জিগ্যাসা করতে হয়, কেনো?
আমি আরো কিছু বলতে নিলাম কিন্তু তার আগেই
স্যার আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,চুপ।আর কিছু বলো না।কিছুক্ষণ এভাবেই থাকো তো আমার বুকে।

তারপরের দিন পুরো বাড়িতে গোছগাছ চলছে।স্যারের যেই ফুফু বিদেশে থাকে সে আজ প্রায় দু বছর পর আসছে।
বিকেলে তারা চলে আসলো।স্যার তাদেরকে এয়ারপোর্ট থেকে নিয়ে এসেছে।
তাদের আসার কথা শুনে আমি নিচে নেমে সামনে আগালাম।একটি মধ্যবয়স্ক মহিলা আর স্যারের পেছন থেকে হঠাৎ একটি মেয়ে বেরিয়ে এলো পরনে টপস আর জিন্স।মেয়েটার চেহারার দিকে চোখ যেতেই বুকের ভেতর চিনচিনে ব্যাথা করে উঠল।আমার সমস্ত পৃথিবী যেন উল্টে গেল কারণ আমার সামনে সেই মেয়েটি যাকে আমি স্যারের সাথে দেখছিলাম।
মেয়েটি বেশ সুন্দরী, চেহারায় একটা দুঃখী দুঃখী ভাব।পুরনো ক্ষতটা যেন আবার জেগে উঠেছে।পাশ থেকে মা আমায় বলল,এই তোমার ছোটো ফুফু শ্বাশুড়ি আর তার মেয়ে।
আমি কোনোমতে সামনে গিয়ে ফুফকে সালাম করলাম।তারমানে স্যার তার ফুফাতো বোনের সাথে….??বারবার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে।অনেক কষ্টে চোখের পানি আড়াল করে মুখে নকল হাসি এনে রাখছি।কিন্তু কষ্ট হচ্ছে খুব,খুব।

কিন্তু স্যার আর মেয়েটার মধ্যে তেমন কিছু চোখে পড়ছে না যেটাতে মনে হতে পারে তাদের মধ্যে কিছু আছে।কিন্তু আমি যে আগে দেখেছিলাম?
হঠাৎ স্যার রুমে এসে অত্যন্ত দুঃখী হয়ে বলল,তার অফিসের কোন কাজে কিছু দিনের জন্য চট্টগ্রাম যেতে হবে।এখনই।
স্যার খুব দ্রুত ব্যাগ গুছিয়ে নিল।যাওয়ার সময় আমাকে জড়িয়ে ধরে মন খারাপ করে বলল,
তোমাকে খুব মিস করব।আমার একটুও যেতে ইচ্ছে করছে না।কিন্তু বাবা বলল তাই যেতে হচ্ছে।আমাকে কিন্তু ফোন করবে আমি একটু পরপরই ফোন করবো কিন্তু।
আমি চুপচাপ শুনে যাচ্ছি কিছু বলছি না।স্যার আমাকে ছেড়ে কপালে একটি চুমু দিয়ে বলল,ভালো থেকো।তারপর চলে গেলো।
আমার এখন আরো কান্না পাচ্ছে।
বাথরুমে গিয়ে শাওয়ার অন করে অনেকক্ষণ কাঁদলাম।

সারাদিন চুপচাপ বসে থাকি।কিছুই ভালো লাগে না।স্যার একটু পরপরই ফোন করে।সে একা একাই কথা বলতে থাকে।আমি শুধু হুম হা করি।
স্যারও মন খারাপ করে আমার এই নিরবতায়।সেই মেয়েটির নাম রুহী।আমার থেকে বড়।আমি আপু বলেই ডাকি।সারাদিন মনমরা হয়ে বসে থাকে।আমি তার থেকে যতটা পারি দূরে দূরে থাকি।তার সামনে গেলেই খুব কষ্ট লাগে।
কিছু ভালো লাগে না।কিছুদিন ধরে শরীরও ভালো লাগে না।স্যারও নেই।খুব একা একা লাগে।

শুভ্র স্যার আজ বিকেলে ফিরে এসেছে।এসেই খুব খুশি।আমাকে অনেকক্ষণ বুকে জড়িয়ে ধরে রাখল।আর বলল,এই বার আমার দেহে প্রাণ ফিরে আসলো।
আমার জন্য অনেক কিছু নিয়ে এসেছে।আমি বেশি আগ্রহ দেখালাম না।

রাতে সে যখন আমার কাছে আসতে চাইল আমি বাঁধা দিয়ে অন্য দিকে ঘুরে শুয়ে রইলাম।স্যারও কিছুক্ষণ অন্য দিকে ফিরে শুয়ে থাকল।একটুপর উঠে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইল।আমি এখান থেকেও দেখতে পেলাম স্যার একটুপরপর চোখ মুছছে।স্যার যে খুব কষ্ট পেয়েছে তা বুঝতে পারলাম।
কষ্ট আমারও লাগছে।

সারারাত স্যার ব্যালকনিতেই দাঁড়িয়ে রইলো।
আমারও চোখে আর ঘুম আসলো না।ভোরে আযান দিলে স্যার ভেতরে আসল।
তার চোখের দিকে তাকিয়ে আমার বুকে ছ্যৎ করে উঠল।চোখ নাক লাল হয়ে আছে।বোঝাই যাচ্ছে সারারাত কান্না করেছে।

খুব কষ্ট লাগলো আমার।
আমি তখনই একটি সিদ্ধান্ত নিলাম।অনেক হয়েছে এসব।আমি আর আগের কথা ভাববো না।
স্যার যদি আগে তার ফুফাতো বোনের সাথে রিলেশন করে থাকে তাহলে করেছে।এখন তো আর করছে না।স্যার তো আমাকেও কত ভালোবাসে।
আমি তার স্ত্রী।তার উপর এখন শুধু আমার
অধিকার।
আগের কথা ভেবে ভেবে আর নিজেও কষ্ট পাবো না আর স্যারকেও দিবো না।পুরনো কথা সব মাটিচাপা দিয়ে আমি আজ শুভ্র স্যারকে বলবো যে আমি তাকে কতটা ভালোবাসি।
বিকেলে আমি স্যারের ফোনে মেসেজ পাঠিয়ে তাকে একটু তাড়াতাড়ি আসতে বললাম।
একটি আকাশি রংয়ের জর্জেট শাড়ি পরলাম আর হাত ভরে চুড়ি।
স্যার এখনো আসছে না কেনো দেখার জন্য বাইরে বেড়িয়ে রুহী আপুর রুমের সামনে দিয়ে যেতেই কানে এলো…………..

চলবে,,

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ