বৈধ নাকি অবৈধ পর্ব ৮

0
1659

বৈধ নাকি অবৈধ পর্ব ৮
জামিয়া পারভীন তানি

তূবার দুচোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। মাথা নীচু করে অঝোরে কাঁদছে মেয়েটা৷ এতো টা অবিশ্বাস নিয়ে কি ঘর করা যায়! তূবাকে আবারও নিজের বাসায় এনে ইচ্ছেমতো আঘাত করে নাইম। কারণ একটাই, ছবিতে দেখা শোভন আর এই শোভন পুরোপুরি দেখতে একইরকম। তূবা যতবার কিছুই জানে না বলছে ততবারই নাইম তূবাকে চড় থাপ্পড় এমনকি ঘুষি পর্যন্ত মেরেছে। মারের চোটে মেয়েটা অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিলো এতক্ষণ। জ্ঞান ফিরে আসা মাত্র কিছুক্ষণ আগের ঘটনা নিয়ে কাঁদতে শুরু করে তূবা।

বাইরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে, সাথে বজ্রপাত। কিন্তু এই বৃষ্টি তূবার হৃদয় ছুঁচ্ছে না, বজ্রপাতের শব্দেও ভয় লাগছেনা । শুধু বুকের মাঝে হাহাকার বয়ে চলেছে, কিভাবে একটা মানুষ এতো নির্দয়ভাবে মারতে পারে!

অনেক টা কষ্ট করে তূবা উঠে দাঁড়ায়, আয়নার সামনে নিজেকে একবার দেখে নেয়। গালে থাপ্পড় দেওয়ার জন্য রক্ত জমাট বেঁধে গেছে, নাকের নিচে রক্ত জমে আছে, হাতে কালসিটে পড়েছে কালো হয়ে। গলাতে কামড়ে দেওয়ার দাগ, গায়ের রং পর্যন্ত বিবর্ণ হয়ে গেছে। এভাবে কি একটা মানুষ বাঁচতে পারে!
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/



কষ্ট করে বাথরুমে গিয়ে শাওয়ার ছেড়ে দেয়, গায়ে পানি পড়াতে জ্বলছে শরীর টা। তারপরও গোসল সেরে নিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসে। জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ শেষ করে, কোরআন শরিফ পড়ে একটু। কিছুক্ষণ পড়ার পর নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেনা। কান্নার জল গড়িয়ে পড়ছে, স্বামীর অবিশ্বাস নিয়ে কিভাবে সে ঘর করবে!

কিছুক্ষণের মাঝে নাইম ঘরে ঢুকে, ঢুকেই তূবাকে মুখ খারাপ করে গালি দিয়ে বলে,
“ তোর মতো………. কখনো নামাজ হবেনা , পবিত্র কোরআন শরিফ তোর হাতেও রাখা যাবে না৷ ” বলে তূবার সামনে থেকে কেড়ে নেয় নাইম৷

তূবা শুধু একবার বললো,
“ আমি সজ্ঞানে কখনো পাপ করিনি নাইম। ”
“ তাহলে কি অজ্ঞান হয়ে শোভনের বিছানায় গিয়েছিলি? ”
“ আম্মু শুধু শোভনের সাথে বিয়ে ঠিক করে রেখেছিলো কিন্তু বিশ্বাস করো আমি ওকে মোটেও পছন্দ করতাম না। ”
“ তাহলে ওর বিছানায় গেছিলিস কেন?”
“ নাইম প্লিজ, বিশ্বাস করো আমাকে। ”
“ তোকে বিশ্বাস করা আর পতিতা যদি বলে সে নিষ্পাপ, তাহলে একই কথা হবে। ”
তূবা শুধু উচ্চারণ করে “ ছিঃ ”

অন্যদিকে তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নেয় তূবা। ঘৃণা হচ্ছে তার, খুব ঘৃণা হচ্ছে নিজেকে। ঘৃণা হচ্ছে নাইম কে, যে কিনা অন্যের কথা বেশী বিশ্বাস করে।
তূবা উঠে দাঁড়ায়, ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে লাগলে নাইম পায়ে পাড়া দেয়। এতে তূবা পা পিছলে পড়ে যায়। মাথা টা কেটে গিয়ে ব্লাড বের হতে শুরু করে। নাইম তূবাকে ওভবেই ফেলে রেখে বেরিয়ে যায় আবার। নিচে নেমে দেখে ফুপু দাঁড়িয়ে আছে। দেখেও না দেখার ভান করে বেরিয়ে যায় বাসা থেকে।

তূবার আম্মু তূবাকে নিয়ে হসপিটালে আসে, মেয়েটা নিজের না হলেও বড্ড আদরের। এই বাসা তে এসে মেয়েটাকে এতো নির্যাতন সহ্য করতে হচ্ছে দেখে মায়ের চোখে জল গড়িয়ে পড়ে। চব্বিশ ঘন্টা পর তূবার জ্ঞান ফিরে আসে। মাথায় পাঁচ টা সেলাই পড়েছে, অনেক টাই কেটে গিয়েছিল। এতক্ষণ ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছিলো, নইলে কাটা যায়গা গুলো তে অনেক পেইন হতো। জ্ঞান ফিরে মায়ের হাত বুকে জড়িয়ে কান্না করছে মেয়েটা। তূবার আম্মু তূবার মাথায় হাত রেখে বললো,

“ নাইম যতই খারাপ হোক তুমি ওর সংসারে ই থেকো। তুমি ওকে সহ্য করে নিও, কারণ ও তোমার স্বামী। তুমি যদি ওকে ছেড়ে যেতেও চাও তাহলে সমাজ তোমাকে খারাপ বলবে। মেয়েরা স্বামীর ঘরে ঢুকে বউ হয়ে আর বের হয় লাশ হয়ে। যদিও তুমি অনেক ভালো একটা মেয়ে, তবুও কপালে দোষ পড়লে তোমাকে নিয়ে বাজে কথা বলতে খারাপ মানুষ দের বাঁধবে না। ”

“ সমাজ কি বললো সেটাই দেখবে আম্মু, আমার সুখ টাও কি দেখবে না?”
“ নাইম ওর ভুল বুঝতে পারবে দেখো, তখন তুমি অনেক সুখী হবে। ”

তূবা চোখ বন্ধ করে অনুভব করে, সমাজের নির্মমতা৷ কিছুই করার নেই তার, মেনে নিতেই হবে।

যদি তুমি নীরবে সহ্য করো স্বামীর অত্যাচার,
হবেনা কভু দ্বন্দ্ব, বিন্দাস করিতে পারিবে সংসার।

নারী যদি তুমি হও স্পষ্টবাদী, করো অন্যায়ের প্রতিবাদ,
পাবেনাকো সুখ, লেগে রবে সারাক্ষণ ঝগড়া বিবাদ।
হবে ছোট সমাজের কাছে, তুমিই হবে খারাপ।
নিজের মাতাপিতা পর্যন্ত তোমায় করবে দোষারোপ।
আফসোস! কেউ শুনবেনা তোমার আর্তনাদ।
চোখ বন্ধ করে সব সহ্য করাই তোমার কাজ।

তোমার নেই কোনো অস্তিত্ব, নেই অধিকার,
মাথানিচু করে বাঁচার তুমি দাবীদার।

তূবার মুখে এমন কড়া কথা গুলো শুনে তূবার আম্মু বললো,
“ তুমি নাইমের সাথে থাকতে বাধ্য, কারণ তুমি আর একা নও, তোমার মাঝে তুমি বহন করছো আরেক টা প্রাণের অস্তিত্ব। ”

মায়ের কথা শুনে নিজ অজান্তেই পেটে হাত দেয় তূবা। সত্যিই সে মা হবে! বিশ্বাস করতে পারছেনা। কিন্তু নাইম যদি ওকে মেনে না নেয়!

চলবে…

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে