বৈধ নাকি অবৈধ পর্ব ৪
জামিয়া পারভীন তানি
দিন গুলি ভালোই ছিলো, একদম স্বপ্নময়। লুকিয়ে লুকিয়ে তূবার হাসি দেখা, তূবাকে ভয় দেখানো, তূবার ভয় পেয়ে চিৎকার করা, বিশেষ করে তূবার বেণি করা চুল ধরে টানা!
তূবার নাক টা খাড়া, উজ্জ্বল শ্যামলা চেহারা, চোখ দুটো গভীর কালো, ঘন চোখের পাপড়ি, ঠোঁট চিকন সরু, ঠোঁটের কোনায় ছোট্ট একটা তিল। সব কিছু মিলিয়ে তূবা কে প্রথম থেকে পছন্দ করতো নাইম। কিন্তু কখনো মনের কথা বলা তো দূরে থাক, সব সময় তূবাকে শাস্তির ব্যবস্থা করে দিতো নাইম। বেশির ভাগ খুনসুটি হতো নানুর বাড়িতে, কারণ তখন দুই পরিবার এক সাথেই থাকতো।
একবার তূবা ঘুমিয়ে ছিলো, তখন তূবার চুলে বেণি গেঁথে বেণি টা কে দড়ি দিয়ে ফ্যানের সাথে বেঁধে রাখে নাইম৷ তূবা ঘুমিয়ে আছে দেখে তূবার মুখে দূর থেকে জোরে করে পানি মারে, তূবা লাফিয়ে উঠে ঘুম থেকে।
উপরে চুল বাঁধা আছে খেয়াল করেনি, প্রচণ্ড ব্যথা পায় মাথায়। নাইম তূবার কান্না দেখে পালিয়ে যায়, তখন মেয়েটার চুলে কয়েকদিন পর্যন্ত ব্যথা ছিলো।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/
নাইম অবশ্য এই জন্য অনেক গুলো মার ও খেয়েছিলো ওর মায়ের কাছে। ফাজিল হবে তাই বলে এমন দুষ্টুমি কি মানা যায়!
কথাগুলো ভেবে তূবা মুচকি হাসে, এরকম ফাজিলের সাথে তার বিয়ে হবে কখনো ই ভাবেনি সে! হ্যাঁ ফাজিল, না শয়তান হয়ে গেছে। আগেকার অন্যায় গুলো মেনে নেওয়া যায় কিন্তু এখনকার অন্যায় গুলোর ক্ষমা হয় না।
ছাদের এক কোণে ওয়াইনের বোতল হাতে দাঁড়িয়ে আছে নাইম, কয়েক ঢোক গিলে ফেলেছে, নেশা করতে হবে যে! নইলে বউ পিটাবে কিভাবে! আগে থেকে খারাপ পথে পা বাড়িয়েছিলো আর এখন পুরো পুরি খারাপ হয়ে গেছে। খারাপ হবার পিছনে যথেষ্ট কারণ আছে, যদিওবা ভুল বুঝাবুঝি। তূবা কে ছোট থেকেই ভালোবাসতো নাইম, জ্বালাতন করতে করতে কখন যে প্রেমে পড়ে গেছিলো নিজেও বুঝতে পারেনি। অথচ আজ ভালোবাসার মানুষ কে বউ হিসেবে পেয়েও তাকে কি না অত্যাচার করতে হচ্ছে। অত্যাচার পাওয়ার ই যোগ্য সে! নয়তো কেনো ফ্রেন্ড এর সাথে রিলেশন করতে গিয়েছিলো সে! নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে নাইম।
“ আর কতো মদ গিলবি?” নাইমের বাবার ডাকে নাইম পিছে ঘুরে তাকায়। কিছু না বলে নিজ কাজে মন দেয় আবার।
নাইমের আব্বু নোমান ইসলাম আবার বললেন,
“ যা করে চলেছিস ভালো হচ্ছেনা কিন্তু, এভাবে জীবন চলতে পারেনা। তুই ওই মেয়েকে ডিভোর্স দিয়ে নতুন করে বিয়ে কর।”
নাইম রাগী দৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকায়, এরপর বলে,
“ যা বলেছো বলেছো, এই কথা দ্বিতীয় বার যেনো না শুনি। নইলে তূবা কে নিয়ে এই বাসা ছেড়ে চলে যাবো।”
নোমান সাহেব এই ভয় টাই পাচ্ছিলেন, নাহ ছেলে কে আর ক্ষেপানো যাবেনা। একটা মাত্র ছেলে তার। তাই শান্ত ভঙ্গিতে বললেন,
“ তাহলে বউমা কে নিয়ে ঘুরে আই, তোর তো নেক্সট ৪ তারিখে কুয়েত যাবার কথা। জাহাজ ভ্রমণ ও হয়ে যাবে, সাথে তোদের হানিমুন ও!”
“ বাবা হয়ে এসব বলতে লজ্জা লাগে না? আর হ্যাঁ, তূবা কে নিয়ে যাবো নেক্সট বার। তূবাকে একা রেখে কখনো যাবোনা আর কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে নাও। ”
নোমান সাহেব আর কথা না বাড়িয়ে সিড়ি বেয়ে নিচে নামা শুরু করে। একটা মাত্র ছেলে, অথচ বাবা কে সম্মান পর্যন্ত করেনা!
নিচে নেমে তূবা কে ডাকে, তূবা ঘরে থেকে বেরিয়ে আসলে নোমান সাহেব বল্লেন,
“ তোর বাসায় সব কিছু জানিয়েছি, ওরা আসলে যা সিদ্ধান্ত নিবে তাই হবে ।”
উপরে থেকে নাইম চিৎকার করে বললো,
“ আমার স্ত্রীর সিদ্ধান্ত আমি নিবো, অন্য কেউ মাথা ঘামালে মাথা আলাদা করে দিবো। ”
নাইমের আম্মু রেহেনা খাতুন বললেন,
“ তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? এতো খারাপ ব্যবহার করছিস কেনো তুই?”
“ হ্যাঁ হয়ে গেছে, সেটা শান্ত হবে ওরে খুন করার পর। তবে খুন করবো ধীরে ধীরে, একদিনে না!” তূবার দিকে হাত দেখিয়ে বললো নাইম৷
“ যা খুশি কর, চিল্লাচিল্লি করিস না নাইম। আমরাও সমাজে বাস করি, সমাজের মানুষ আমাদের খারাপ বলবে।”
মা’য়ের কথায় কথা না বাড়িয়ে নাইম হনহন করে ঘরে ঢুকে যায়। তূবাকে ওর মামী বললো,
“ সারাদিন কিছুই খাস নি, এভাবে কয়দিন না খেয়ে থাকবি?”
তূবা মামীর দিকে তাকিয়ে বললো,
“ খাবার ইচ্ছে নেই। ” বলে নিচের রুমে গিয়ে শুয়ে থাকে। তূবা পাশ ঘুর তেই দেখলো নাইম দাঁড়িয়ে আছে। তূবা তাড়াতাড়ি উঠে বসে। ভয় পেয়ে গেছে একপ্রকার। নাইম এসেই তূবার চুল গুলো টান দিয়ে ধরে তূবার মাথা টা নিজের কাছে নিয়ে আসে। আর বলে,
“ না খেয়ে মরতে দিবোনা তোকে। খাইয়ে দাইয়ে সময় সারাজীবন কষ্ট দিয়ে মারবো তোকে। ”
“ খাবোনা আমি, ছাড়ুন আমাকে, লাগছে আমার ”
তূবা মুখ ফাঁকা করে কথা বলার সময় মুখের মাঝে স্যান্ডউইচ ঢুকিয়ে দিয়ে মুখ চেপে ধরে বললো,
“ কথা না বলে তাড়াতাড়ি গিল। ”
তূবা অনেক কষ্টে মুখের খাবার শেষ করে, শেষ হওয়া মাত্র তূবা কে ডাইনিং এ টেনে নিয়ে আসে। জোর করে চেয়ারে বসিয়ে নিজেও তূবার পাশে বসে। ডিম পোঁচ, পরাটা তূবার মুখে ঢুকিয়ে দেয়। তূবা ও অশান্তির হাত থেকে বাঁচতে সব খেয়ে নেয়।
খাওয়া শেষ হতেই নাইম উঠে যায়, তূবা চেয়ারে বসে বসেই কাঁদতে শুরু করে।
একদিন তূবার খুব শখ হয়েছিলো রান্না করার, ভুল বশত তূবার হাত পুড়ে গিয়েছিলো। সাথে সাথে নাইম তূবার হাত মুখে নিয়ে চুমু দিয়েছিলো, যেনো তূবার চেয়ে নাইম কে ই বেশী লেগেছিলো। অথচ আজ সেই নাইম মারতেও দ্বিধা করে না।
পুরনো অতীত মনে করে তূবার কান্নার পরিমাণ বেড়ে যায়। এভাবে প্রতিদিন ধুঁকে ধুঁকে মরার কি দরকার! একেবারে মরে যাওয়া ই তো ভালো।
হটাৎ তূবা ওর খোলা পিঠে ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেলো। তূবা পেছনে ঘুরে তাকাতেই নাইম তূবাকে পাঁজা কোলা করে কোলে তুলে নিয়ে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ায়।
তূবা কে বেডের উপর বসিয়ে ঘরের দরজা লাগিয়ে আসে নাইম। তূবার সামনে এসে বসলো নাইম। এরপর বললো
“ কি অন্যায় করেছিলাম? যে আমাকে ধোঁকা দিলে তুমি?”
তূবা মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বললো ,
“ জানুয়ার আপনি, মানুষ নন।”
সাথে সাথে তূবার গালে আবারও থাপ্পড় দেয় নাইম।
“ হ্যাঁ আমি জানুয়ার, তোকে ভালোবেসে জানুয়ার হয়ে গেছি আমি।”
পকেট থেকে সিগারেট আর লাইটার বের করে। একসাথে তিনটা সিগারেট ধরায়, সবগুলো একসাথে টানে আর ধোঁয়া গুলো তূবার মুখে ছাড়ে।
তূবার সিগারেটের গন্ধ সহ্য হয় না, কাশি উঠে যায়। তবুও নাইম একে একে এক ডজন সিগারেট টানে আর তূবার শাস্তির ব্যবস্থা করে।
এক সময় কাশতে কাশতে অস্থির হয়ে পড়ে তখন নাইম সিগারেট খাওয়া বন্ধ করে। ততক্ষণে তূবার অবস্থা খারাপ, শ্বাসকষ্ট হচ্ছে খুব৷
চলবে
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/