Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"বৃষ্টিভেজা আলাপনবৃষ্টিভেজা আলাপন পর্ব-৪২+৪৩

বৃষ্টিভেজা আলাপন পর্ব-৪২+৪৩

#বৃষ্টিভেজা_আলাপন (৪২)

“আমি খুব বাজে হয়ে গিয়েছি তাই না? কথা বলেন না কেন? আমাকে বাজে দেখাচ্ছে নিশ্চয়ই? খুব বিশ্রি। লাইক বিস্ট? খুব খারাপ দেখাচ্ছে আমায়। আপনি আমাকে আর ভালোবাসবেন না তাই না? একটা বাজে দেখতে মেয়েকে কেন কাছে টানবেন।”

অতীতে বলা উষশী’র কথা গুলো স্মরণ হতেই মৃদু আন্দোলিত হয়ে ঘুম ছুটে গেল অভিরাজের। কিছু সময় ধরে চোখ লেগেছিল তার। সামনেই শুয়ে আছে উষশী। মেয়েটার হাতে ক্যানলা। মুখে অক্সিজেন মাস্ক। কতটা বাজে সময় যাচ্ছে বলার মতো না। শরীরের বেশ কিছু জায়গায় আ ঘা ত লেগেছে। শ্বেত রঙা শরীরে ফুটে উঠেছে সেসব। অভি’র ভেতরটা চৌচির হয়ে এল। বাদামি রঙা চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। শান্ত,ধীর,স্থির কণ্ঠ।
“ইউ আর বিউটিফুল রেইন। ইউ আর এস বিউটিফুল এস আ ফ্লাওয়ার। এস ব্রাইট এস দ্য সান।”

উষশী’র নরম তুলতুলে হাতটা মুঠো বন্দী করল অভিরাজ। সেখানে তার উষ্ণ ঠোঁটের তাপ ছড়িয়ে যাচ্ছে। চারপাশ থেকে মিষ্টি এক সুবাস আসছে। উষশী’র শরীরের মাতাল করা সুবাসটা বরাবরের মতোই উন্মাদ করে তুলে। মৃদু বাতাস এসে ছুঁয়ে যাচ্ছে শরীর। লাবণ্য বাইরে থেকে দৃশ্যটা দেখতে পেল। গত দিন অভি’র অবস্থা ছিল খেই হারা মাঝির মতো। মেয়েটিকে কোলে তুলে নিয়ে উন্মাদের মতো আচরণ করেছিল। লোকজন দেখেছিল এক পাগল প্রেমিকের আর্তনাদ। গতরাত থেকেই উষশী’র পাশে বসে আছে। এখনো জ্ঞান ফিরে নি মেয়েটির। খুব বেশি ক্ষতি না হলেও শরীরের অবস্থা বিশেষ ভালো নয়। নানান ধরনের নেশা জাতীয় পানীয় আর দীর্ঘ দিন ধরে ড্রাগ নেওয়ার ফলে শরীর দূর্বল হয়ে পড়েছে। সেই জন্যেই জ্ঞান আসতে সময় নিচ্ছে। লাবণ্য উষ্ণ শ্বাস ফেলে ভেতরে এল। অভি অলসহীন তাকিয়ে। খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে যুবতীকে। পাঁচ বছর যেন একটা সংখ্যা মাত্র। এই পাঁচ বছরে মেয়েটির রূপ, জৌলুস কয়েক গুন বৃদ্ধি পেয়েছে। মনে হচ্ছে মেঘ থেকে নেমে আসা প্রথম জলবিন্দু। কিংবা ফুলের সব থেকে সৌন্দর্য পাপড়ি। খারাপ সময়টাতেও অভি’র ঠোঁটদ্বয় প্রসারিত হলো। শক্ত পোক্ত হাতের থাবাতে উষশী’র ছোট্ট নরম হাতটা আরো বেশি করে জড়িয়ে নিল।
“ফ্রেস হয়ে নে।”

“হুম।”

অভি চলে যেতেই পাশে বসল লাবণ্য। উষশী যেন ঘুমিয়ে আছে। মেয়েটির রূপ লাবণ্য একটুও কমে নি। এই যে এতটা ঝড় নেমে গেল তারপরও কতটা স্নিগ্ধ লাগছে ওকে। অভি ফ্রেস হয়ে এসেছে। তার শরীরটা মৃদু দুলছে।
“খাবার আনতে দিয়েছি। জানি বাইরে যাবি না।”

এ কথার পৃষ্ঠে কথা বলল না অভিরাজ। সে উষশী’র প্রসঙ্গে চলে গেল।
“ওর জ্ঞান কখন ফিরবে?”

“ডাক্তারের সাথে আলোচনা করেছি। বলেছে আরো কিছুটা সময় লাগবে। অত বড়ো ঘটনার মধ্য দিয়ে গিয়েছে। শরীরের বিরাম প্রয়োজন।”

“হুম।”

“ছোঁয়া অর ঈশানের ব্যাপারে সবটা জানতি?”

“শুরুতেই জানতাম না। ছোঁয়া’র সাথে অলকের সম্পর্ক হওয়ার পরে জেনেছি। যদিও ঈশানের অনুভূতি ধরা ছোঁয়ার বাইরে ছিল। প্রথমে ধরতে পারতাম। তবে ওর ভবঘুরে স্বভাবের জন্যে শতভাগ নিশ্চিত ছিলাম না।”

“তারপর কিভাবে নিশ্চিত হলি?”

“উষশী বলেছিল।”

“উষশী!”

“হুম। কেমন করে যেন বুঝে গিয়েছিল। তবে তখন কিছু করার ছিল না। ভেবেছিলাম ছোঁয়া জীবনে এগিয়ে গিয়েছে। কিন্তু ওদের সম্পর্কটা যে জোর করে করা সেটা জানা ছিল না। তাছাড়া চাচ্চু আর মেঝো মা চায় নি ছোঁয়া তাদের ছেলের বউ হোক।”

লাবণ্য হতাশার নিশ্বাস ফেলল। ছোঁয়াকে কত আদরে বড়ো করা হয়েছে। সর্বদা মেয়ের মতো আদর দিয়েছে। অথচ ছেলের বউ হিসেবে নাকি মেনে নিতে পারছিল না। সত্যিকার অর্থে মানুষ স্বার্থপর। এর মধ্যেই খাবার এসে গেল। লাবণ্য খাবার বেড়ে এগিয়ে দিল।
“তুই ও খেয়ে নে। আমার জন্য অনেক প্রেসার যাচ্ছে তোর।”

মৃদু হাসল লাবণ্য। অভি’র জন্য তার ভেতরটা সবকিছু করতে প্রস্তুত। খাওয়া শেষে ঈশানের নাম্বারে ডায়াল করল অভিরাজ। ছেলেটা ওর কল ঠিকই রিসিভ করল।
“বাড়ি ফিরছিস না কেন?”

“আমার কেউ নেই ব্রো। আমি একা। কেউ নেই আমার।”

“এসব বলতে নেই। যা হবার তা হয়ে গিয়েছে। তুই ফিরছিস। আর সেটা ও খুব দ্রুত।”

“সম্ভব না ব্রো।”

“ফিরে এসে বাড়িতে দেখতে চাই। সব শেষে পরিবারটা ঠিক থাকা চাই। ছোঁয়া যেন কখনো না ভাবে তার জন্য পরিবারটা ভেঙে গেল।”

অভি কল কেটে দিল। ঈশান শান্ত সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর হৃদয়ের যন্ত্রণাটা কেউ বুঝে না।

উষশী’র জ্ঞান এল দুপুরে। অভি তখন কাছে ছিল না। মেয়েটার মৃদু গোঙানি শোনা যাচ্ছে। শুরুতেই দেখা মিলল লাবণ্য’র। তার কোটরে যাওয়া দুটি চোখ। উষশী তার ঘোলাটে মনির দৃষ্টি দিয়ে বাইরের দিকে তাকাল। সূর্যের আলো দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ এখন রাত নয়। বারের ঘটনার পর আর কিছুই স্মরণ করতে পারছে না। বেশ চাপ সৃষ্টি হলো মস্তিষ্কে। ওর অবস্থা বুঝতে পারছে লাবণ্য। কাছে এসে আদুরে হাতে গাল স্পর্শ করল। মেয়েটির কোমল ত্বকের উষ্ণতা অনুভব হলো। সেই সাথে মৃদু হাসির উদয় ঘটল অধরে।
“কেমন লাগছে বাবু?”

উষশী ধীর স্থির ভাবে তাকাল। লাবণ্য তাকে বাবু বলে ডেকেছে। তারমানে কি সে কিশোরী বয়সে ফিরে গেছে? এই সেই লাবণ্য যাকে দেখলে মন ভালো হয়ে যেত ওর। আর অভি, সে কোথায়?
“অনেক দিন পর হালকা অনুভব হচ্ছে উষশী। তোমাকে পুনরায় ফিরে পাওয়ার আনন্দ অনুভব হচ্ছে।”

উষশী একটা কথাও বলল না। আসলে তার মুখ থেকে বাক্য উচ্চারণ হচ্ছে না। সে চেয়ে রইল। তারা বাদামি রঙা চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে। ফ্যাকাশে ঠোঁট। যেন নেতিয়ে যাওয়া গোলাপের শেষ পাপড়িটি। অভি’র প্রবেশ ঘটল কিছু সময় পর। উষশী তখন আধ শোয়া হয়ে। লাবণ্য নেই। সে ডাক্তারের সাথে কথা বলতে গিয়েছে। আয়নায় অভি’র ছবি দেখা যাচ্ছে। শিউরে উঠল উষশী। তাকাল ঝটপট। যতটা সম্ভব। অভি’র ভেঙে পড়া মুখটা নজর কেড়েছে। চোখের দৃষ্টিতে ব্যথা অনুভব হলো। মনে হচ্ছে পাঁচ বছর পূর্বে ফিরে গিয়েছে ওরা। অস্পষ্ট স্বরে ডাকছে মেয়েটি। দূর থেকেই অভি বলল,”চুপ করে বসে থাকো।”

উষশী তাই করল। নড়ল না অবধি। অভি ভেতরে এসেছে। তার চলন বলন যেন শান্ত সমুদ্রের মতো। হাতে ব্যন্ডেজ নিয়েই এগিয়ে এল ছেলেটা। দু হাতের সাহায্যে স্পর্শ করল মেয়েটির মুখ।
“তোমার কিছু হয়ে গেলে অভিরাজ ম রে যাবে রেইন। কোনো কিছুর বিনময়ে তোমাকে হারাতে চাই না। আমি বড়ো ভালোবাসি তোমায়।”

উষশী উত্তর করছে না। তার চোখে জল। লাবণ্য খানিক বাদে এল। ততক্ষণে অভি তার চোখের জলটুকু মুছে নিয়েছে।
“কোকো কে অবজারভেশনে রাখা হবে।”

প্রাণীটার কথা স্মরণ হতেই আতকে উঠল যুবতী। অভি উঠে গিয়েছে। সে দেখল উষশী কিছু বলতে চাইছে। তবে অতিরিক্ত উত্তেজনায় বলতে পারছে না। অভি ওর মুখের ভাষাটা যেন বুঝে নিল। হাত দুটো বাড়িয়ে বলল,”কোকো ঠিক আছে।”

উষশী’র দু নয়নে জল চকচক করছে। স্মরণ হচ্ছে সেই সময়টার কথা। প্রাণীটাকে প্রথমবারের মতো বারে নিয়ে এসেছিল। কে জানত সেদিনই দূর্ঘটনাটা ঘটে যাবে। সব থেকে বড়ো কথা উষশীকে রক্ষা করতে গিয়ে আ ঘা ত পেয়েছে কোকো। প্রাণীটা যদি ছুটে এসে ওর উপরে গিয়ে না পড়ত তবে উষশী’র জীবন বাঁচানো মুশকিল হয়ে যেত।

দুপুরের শেষ সময়ে কথা বলতে পারল উষশী। খুব বেশি নয়। শুধু বলল,”অভিরাজ, একটু এদিকে আসবেন।”

মেয়েটির কণ্ঠ পেয়ে ঝড়ের গতিতে ছুটে এল অভি। তারপর দুটো হাত বাড়িয়ে দিয়ে শুধাল,”কি হয়েছে উষশী?”

“আপনার ফোনটা দেওয়া যাবে?”

বাক্যটি শেষ হতেই নিজের ফোন এগিয়ে দিল উষশী। তারপর অনেকটা সময় নিয়ে কি যেন করল। অভি একটা কথাও বলল না। কি করছে প্রশ্ন ও করছে না। শুধু তাকিয়ে দেখছে মেয়েটির অবস্থা। বেশ কিছু সময় গেলে উষশী’র উষ্ণ শ্বাস নেমে এল। সেই সাথে নেমে এল চোখের জল।
“মম কে বাঁচানো গেল না। এই পৃথিবীতে এতিম হয়ে গেলাম আমি।”

কথাটা বোধগম্য হলো না অভিরাজের। মেয়েটি সম্পর্কে খুব বেশি জানা নেই। অথচ বুকের ভেতর আকাশসম ভালোবাসা। আর সেই ভালোবাসার অধিকার থেকেই শক্ত হাতে জড়িয়ে নিল বুকে। মেয়েটির শরীর থেকে ভেসে আসা ফুলের সুবাস যেন প্রাণ ভরে মেখে নিচ্ছে। খুব করে মন চাইল যদি সময়টা এভাবেই থমকে যেত।

চলবে….
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

#বৃষ্টিভেজা_আলাপন (৪৩)

“কি পেলেন এই জীবনে?”

“একটি সুন্দর ভালোবাসার স্বাক্ষী হয়ে থাকার সৌরভ।”

“তারপর?”

“একটি ব্যক্তিগত উৎসর্গ।”

“আর তারপর?”

“সামনে এগিয়ে যাওয়ার মাধ্যম।”

“মাধ্যম!”

“হুম।”

“কি সেটা?”

“যদি বলি আপনি? খুব অবাক হবেন বুঝি?”

“একটুও না। তবে ভেঙে যাওয়া হৃদয় কি জোরা লাগানো যায়?”

“নতুন করে গড়ে নিবেন না হয়।”

স্মিত হাসল নাফিস। ওপাশ থেকে লাবণ্য’র মিষ্টি একটা নিশ্বাস ভেসে এল। মেয়েটা কথা গুলো নিছকই মজার ছলে বলেছে। তবে এই মজাটা যদি কখনো সত্যি হয় খুব কি ক্ষতি হবে? নাফিস ভেবে পায় না। তার তপ্ত হৃদয়ে এত কঠিন অনুভূতি ধরা দেয় না। শুধু মনে হলো সামনেটা মন্দ নয়।

লাবণ্য ফ্লাইটের টিকেট বুক করেছে। নানান ঝামেলায় পার হলো সাতটা দিন। উষশী এখনো সুস্থ নয়। সুস্থ নয় কোকো ও। তাদের দুজনেরই চিকিৎসা প্রয়োজন। অভি স্যুপের বাটি নিয়ে যাচ্ছিল। লাবণ্য বাঁধা দিয়ে বলল,
“আমি নিয়ে যাচ্ছি। যাওয়ার পূর্বে উষশী’র সাথে কিছু কথা বলে যাই।”

“ঠিক আছে।”

উষশী আধ শোয়া হয়ে ছিল। হাতে রিমোর্ট। টিভিতে নিউজ চলছে। বার দূর্ঘটনায় শতাধিক মানুষের মৃ ত্যু ঘটেছে। এখনো উদ্ধার কাজ শেষ হয় নি। ধারণা করা হয় মৃতের সংখ্যাটা দেড়শ ছাড়িয়ে যাবে। উষ্ণ শ্বাস বের হলো উষশী’র হৃদয় থেকে। সে টিভি অফ করে দিল।
“আজ চলে যাচ্ছি উষশী।”

“আবার কবে আসবে আপু?”

“হয়ত আর আসা হবে না।”

“কেন?”

“ফিরে গিয়ে হসপিটালে জয়েন করব। বিজনেস এর বিষয়টা অভি আর ঈশান ই দেখে নিবে।”

“ঈশানের কি খবর এখন?”

“বাড়ি ফিরেছে। তবে ধকলটা কাটিয়ে উঠতে পারে নি।”

লাবণ্য স্যুপের বাটিটা এগিয়ে দিয়ে ন্যাপকিন বিছিয়ে দিল। এক চামচ স্যুপ মুখে দিয়ে উষশী বলল,”জীবনের দীর্ঘ সময় একজনকে স্বার্থ নিয়েও ভালোবেসে যাওয়াটা সহজ নয়। সেখানে তোমার ভালোবাসাটা খাদহীন। মিস্টার রাগির প্রতি তোমার ভালোবাসার কোনো প্রতিদান হয় না আপু।”

লাবণ্য ঠোঁট প্রসারিত করল। তারপর ব্যাগ থেকে একটা পেন্ডেন্ট বের করে বলল,”এটা রেখে এসেছিলে। যত্ন করে কুড়িয়ে রেখেছি আমি। তোমাকে দেওয়া অভি’র প্রথম উপহার।”

এবার উষশী’র চোখে জল নেমে এল। সত্যি বলতে লাবণ্য’র প্রতি কখনোই ক্ষোভ ছিল না ওর। এমনকি লাবণ্য যখন মেকাপের বিষয়টা ঘটাল তখনো বিষয়টা পুরোপুরি গোপন করে রেখেছিল। মেয়েটির প্রতি ওর ভালোবাসাটা আসলেই মিথ্যে নয়। উষশী’র খুব ইচ্ছে হলো লাবণ্যকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরার। তেমনটাই করল সে। লাবণ্য হেসে উঠল। পিঠে হাত বুলিয়ে বলল,
“জীবনে সুখী হও। ভালোবাসায় ভালো থাকো। তোমাদের জীবনে প্রতিটা দিনে বৃষ্টি নামুক। আর সেই বৃষ্টিতে রাঙিয়ে যাক প্রহর।”

উষশী কথা বলতে পারল না। তার চোখ ভেঙে জল নামতে চাইছে। লাবণ্য ফের বলল,”তোমার প্রতি আমার করা অন্যায়টা অভিকে না বলার জন্য সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকব উষশী। আমার একত্রিশ বছর বয়সে এসে আমি তোমায় বিজয়ী ঘোষণা করলাম। হার মেনে নিলাম তোমাদের প্রণয়ে।”

লাবণ্যকে এয়ারপোর্টে ছাড়তে এসেছিল অভিরাজ। মেয়েটা ওর জন্যে অনেক করল। এই ভালোবাসাটা অভি ভুলবে না। শেষবেলা তে এসে কান্নায় ভেঙে পড়ল লাবণ্য। অভি’র দু হাত জড়িয়ে বলল,”তোর ভালোবাসাটা অন্তত পূর্ণ হোক অভি। এত গুলো বিচ্ছেদের যন্ত্রণা আসলেই নিতে পারছি না। একটা কেউ অন্তত ভালো থাকুক।”

অভি প্রসারিত হীন হাসল। লাবণ্য’র মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,”সাবধানে যাস।”

“খুব দ্রুত তোদের দেখতে চাই।”

“দেখবি।”

“নিজেদের যত্ন নিস।”

“নিব।”

“কোকো’র খেয়াল রাখিস।”

“রাখব।”

লাবণ্য’র কথা ফুরিয়ে গেল। অভিরাজ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। মেয়েটিকে যতক্ষণ দেখা গেল তাকিয়ে রইল সে। লাবণ্য এমন এক চরিত্র যে চরিত্রের পূর্ণতা নেই। নেই কোনো প্রাপ্তি। নেই কোনো বিশেষ অবস্থান। এত নেই এর মাঝেও মেয়েটি যেন অনেক কিছু হয়ে রইল অভি’র জীবনে।

উষশীকে ধীর স্থির ভাবে উঠাল অভিরাজ। ক্লান্ত তার শরীর। পা ফেলার মতো শক্তি নেই শরীরে। অভি ধরে ধরে চলতে সাহায্য করছে।
“লাবণ্য আপু ফ্লাইটে উঠে গিয়েছে তাই না?”

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে অভি বলল,”হুম।”

“এখন নিশ্চয়ই ডেনমার্ক পেরিয়ে গেছে।”

“যেতে পারে।”

“কয়েক মুহূর্তেই কত দূরে চলে গেল।”

“হুম।”

পূর্ণ নজরে তাকাল উষশী। অভি’র মনটা বিশেষ ভালো দেখাচ্ছে না। যুবতী তার নরম তুলতুলে হাতে ছেলেটার গালে স্পর্শ করল।
“লাবণ্য আপুর জন্য কষ্ট হচ্ছে তাই না?”

“হুম।”

“এত গুলো বছর ধরে আপনার পাশে ছিল। ভরসা হয়ে ছিল। খারাপ লাগাটাই তো স্বাভাবিক অভিরাজ।”

“নিজেকে ক্ষমা করতে পারছি না উষশী। মনে হচ্ছে কোথাও একটা ভুল করে ফেলেছি।”

“ভুল করেন নি আপনি। আমার দিকে তাকান তো।”

অভি তাকাল। উষশী’র ঘোলাটে দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে সব যেন ভুলে বসল পুরুষটি। উষশী একটু কাছিয়ে এসে বলল,”লাবণ্য আপু এবার ভালো থাকবে। আপনি সর্বদা চেয়েছেন সে নিজের জীবন গুছিয়ে নিক। কিন্তু সে চেয়েছে আগে আপনার জীবনটা গুছিয়ে যাক। এবার সব ঠিক হবে অভিরাজ।”

মেয়েটার নরম তুলতুলে হাতে চুমু খেল অভিরাজ। তারপর বলল,”তেমনটাই যেন হয় উষশী।”

নিজের মা বাবা’র ছবিতে হাত বুলাচ্ছে উষশী। এখন মধ্যরাত কিংবা তার ও বেশি। মেয়েটি একদমই শূণ্য হয়ে গেল। তার ঘোলাটে চোখ আরো বেশি ঘোলাটে হতে শুরু করেছে। ওর ঠিক বরাবর বসে আছে অভিরাজ। ছেলেটা এতদিনেও মেয়েটিকে কোনো প্রশ্ন করে নি। কখনো করবে না বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উষশী’র অতীত নিয়ে বিশেষ কোনো মাথা ব্যথা নেই। তবে উষশীই তাকে ডেকেছে। মেয়েটি কেন ডেকেছে এখনো পরিষ্কার নয়। অভি অনেকটা সময় চুপ থেকে বলল,
“উষশী,ভেঙে পড়লে চলবে? তুমি তো খুব স্ট্রং গার্ল তাই না?”

“ভেঙে পড়ছি না অভিরাজ।”

“বারান্দায় যাবে? বৃষ্টি হচ্ছে।”

উষশী তাকিয়ে দেখল আসলেই বৃষ্টি হচ্ছে। আকাশ থেকে থেকে চমকাচ্ছে। চারপাশ থেকে কেমন ভেজা গন্ধ আসছে। তবু মন ভালো হলো না মেয়েটির। অভি ধীর স্থির ভাবে মেয়েটিকে উঠাল। ছেলেটার হাতে ভর করে পথ চলতে চলতে উষশী বলল,”এই জীবনে আবার আপনার হাত ছুঁতে পারব কখনোই কল্পণা করি নি। একটা সময় পর মনে হয়েছিল এ জীবনটাকে শেষ করে দেই।”

মেয়েটার মুখে প্রাণ না শের কথা শুনে কম্পন ধরে গেল অভি’র শরীরে। সে বিশেষ কোনো কথা না বলে গিলে নিল অনুভূতি।
“বৃষ্টিটা সুন্দর।”

“হুম।”

“মনে আছে আপনার, বৃষ্টির দিন গুলো আমাদের জন্য কতটা সুন্দর ছিল।”

“সব সময় মনে থাকে উষশী।”

“ডেনমার্কের বৃষ্টি আমার জীবনের সব থেকে খারাপ সময় ছিল।”

উষশী’র শরীর থেকে অদ্ভুত একটা উষ্ণতা বাইরে ছেঁয়ে গেল। অভি অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। সে খুব একটা মন দিতে পারছে না। মন চাইছে সেই দিন গুলোতে ফিরে যেতে। এত সময় উষশীই কথা বলেছে। এখন অভি বলল,
“তোমাকে হারিয়ে আমার জীবন থেমে গিয়েছিল রেইন। আমিই বলতাম কারো জন্য জীবন থেমে থাকে না। অদ্ভুত ভাবে এই অভিরাজের জীবনটাই থেমে গিয়েছিল।”

উষশী তাকাল না। সে চোখ বন্ধ করে নিচু হয়ে আছে। বৃষ্টির পরিমাণ বেড়ে গেল। কিছু পানি হাতে মেখে নিল অভিরাজ। তারপর ধীর স্থির ভাবে মেয়েটির মুখ উঁচু করল। উষশী’র দু চোখে কান্না নেমেছে। অভি’র চোখেও জল। একে অপরকে পেয়ে যাওয়ার পরেও বুকটা অশান্ত হয়ে আছে। কেন এত ব্যথা? এর উত্তর ছিল না। অভিরাজ মেয়েটার নরম কোমল হাত মুঠোয় নিয়ে বৃষ্টির জল লাগাল।
“ভালো লাগছে?”

“হুম।”

একটু থেমে রইল উষশী। তারপর বলল,”বুকে মাথা রাখি?”

মেয়েটির কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে নিজেই কাছে টেনে নিল অভিরাজ। ওর শরীরের গন্ধটা পেয়ে যেন একরাশ স্বস্তি পেল উষশী। তারপর অনেকক্ষণ ওভাবেই থেমে রইল। খানিক বাদে বৃষ্টিও থেমে গেল। চারপাশে সদ্য ঝরে যাওয়া ফুলের ঘ্রাণ ভেসে বেড়াচ্ছে। পাখির কলতান আর ভেজা মাটির সৌরভ। সব কেমন সুন্দর লাগছে। অভি মেয়েটির মুখটা উঁচু করে দু হাতে আবদ্ধ করে নিল। বেশ সময় নিয়ে দেখে নিচ্ছে নিজ প্রিয়তমাকে। পাঁচ বছরের তৃষ্ণা এক রাতের দর্শনে কি শেষ হয়?

চলবে…
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ