Sunday, October 5, 2025







বিভাবতীর জীবন পর্ব-২+৩

#বিভাবতীর_জীবন
#লেখিকাঃতামান্না
#পর্বঃ২+৩

” যারে এত ভালোবাসো, যারে কর দেহ দান!”
দিন শেষে সে কি চায় তোমারে, ইহকাল?
“যারে এত দেও সুখ, যারে কর তৃপ্ত!
দিন শেষে সে ঠিকই তোমাতে হয়েছে, অসন্তুষ্ট!
কে রইলো স্বামী? কে হইলো কার?
দিন শেষে তুমি শুধুই তোমার!
“এই জগৎ জুড়ে নামেই সম্পর্কের জাল!”

~তামান্না~

বিভা তার মায়ের কাছে কথা না বলতে পেরে, কিছুক্ষণ পর সবুজকে ফোন করল। সবুজের কাছে সে প্রশ্ন করবে সবুজ কেন এমন করছে? কি দোষে সবুজ তার উপর রেগে আছে? কেন তার সন্তানের প্রতি তার কোন মায়া নেই? সে ভুলেগেছে তাদের বিয়ের প্রথম রাত্রিরে সেই প্রতিজ্ঞা? কত ভালোবাসা আর কত ত‍্যাগের পর দুজন দুজনকে কাছে পেয়েছিল তারা। মনে পরে গেল সবুজ সেদিন তাকে বুকে জড়িয়ে কাধে মাথা রেখে বলেছিল –

–” বিভাবতি আজ থেকে আমি শপথ করলাম, তোমার এই ত‍্যাগ আমি বিফলে যেতে দিব না। তুমি শুধু আমায় ভালোবাসো বলে নিজের পরিবারকে ছেড়ে এসেছো। কথা দিচ্ছি তোমাকে হাজারো ঝড় আর আছড়ে পরা সমুদ্রের ঢেউ থেকে আমি রক্ষা করবো! তোমার আমার ছোট্ট সংসারে হবে না কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঝড় যা হবে শুধুই অভিমান। তোমার মান ভাঙ্গাবো আমি আর তুমি আমার!”

সময়ের তালে তালে সম্পর্কটা আর মান ভাঙ্গানোর রইল না হয়েগেল পুরোপুরি ভেঙ্গে যাওয়ার। বিভা কয়েকবার চেষ্টা করল সবুজকে ফোন করার তারপরই দেখতে পারল ফোনটা সুইচড অফ! বাহ! সবুজ কতটা নির্দয় হয়েগেলে তুমি! এতটা নির্দয় হলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে কথা রাখতে পারলে না। আবার আমার ফোনটাও ধরলে না। সত‍্যিই তুমি আমাকে মারতে প্ল‍্যান করলে? বিভা নিজের মনের প্রশ্নগুলো করতে করতে ঘরের ভিতর নিজের জমানো কষ্টগুলোকে চেপে কাদঁতে লাগল।

সন্ধ‍্যেবেলায় অনেকটা কষ্টকরেই মুখে কাপড় প‍্যাচিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল সে। আশপাশ ভালো করে দেখতে লাগল। এই গ্রামে প্রথম পা দেওয়া সবুজের সঙ্গে,
সবুজ কত হাসিখুশি ছিল সেদিন। সারাগ্রাম সে বিভার হাত ধরে দেখিয়ে দিচ্ছিল কোথায় কোন বাড়ি, কোথায় তাদের জায়গা সব। আজ সেই সবুজের ঠিকানাই কিনা তাকে ছাড়তে হচ্ছে চিরজীবনের জন‍্য।

বাসের সামনের সীটে বসেছে বিভা, খুব কষ্ট হচ্ছে তার।
পুরোটা পথ হেটে এসেছে সে। গলা শুকিয়ে কাঠ, গা গুলিয়ে আসছে তার। বাসের ভিতর নানালোকের ভীড়। সবাই যে যার মত তাদের গন্তব‍্যে পৌছাবে। সে কোথায় যাবে? কোথায় কি করবে? গাড়ি চলতে শুরু করল।
ময়মনসিংহের গফরগাঁও থেকে ঢাকাগামী বাসে সে রওনা দিয়েছে। ভীড় আর লোকসমাগমের কারনে বাসেই হড়হড় করে বমি করে দিল সে। পাশের সীটে বসা বৃদ্ধা মহিলা তার সামনে দাড়িয়ে বলল-

–” নাও মা পানি খাও, বমি করে একদম শরীর দূর্বল হয়েগেছে। এই সময়ে এভাবে চলাচল করা উচিৎ না।
ঢাকায় কেউ আছে তোমার? একা একা যাচ্ছো!”
বিভার বড় কষ্ট হচ্ছে কথা বলতে কোনরকমে শ্বাস ফেলে সে বলল-

–” আমার কেউ নেই আন্টি,”

–” মা কোন সমস‍্যা হয়েছে তোমার? না মানে কিছু মনে করো না মা। আমি ও মা, তোমার বয়সি আমার ও একটা মেয়ে আছে দুটো ছেলে আছে, তুমি নিশ্চিন্তে বলতে পারো এমন কিছু হলে । ”

–” কিছু হয়নি,”

–“আচ্ছা ঠিক আছে বুঝলাম কিছু হয়নি, সেই কখন থেকে দেখছি তুমি বমি করছো, শরীর তো দূর্বল হয়ে পরবে তোমার। এই নাও পানিটা নিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলো। ”
বিভা মুখ ধুয়ে নিলে উনি বিভাকে ওনার ব‍্যাগে থাকা রুটি আর সবজি দিলেন খেতে।

–” আমি সুগারের রুগী, দুবেলায় রুটি খেয়ে থাকি। ব‍্যাগে করে নিয়ে এসেছি রুটিগুলো। ঢাকায় বড় ছেলের বাসায় যাচ্ছি। ভাবলাম তুমিও আছো এক সঙ্গে খেয়েনি কি বলো? ”

বলতে বলতে ভদ্রমহিলা তাকে খেতে দিলেন রুটিগুলো। বিভা রুটি মুখে দিয়ে খেতে পারছেনা। গলা দিয়ে এই খাবার যে তার রুচবে না। বিভা একটি রুটি ছিড়ে সবজি দিয়ে খেয়ে আর খেতে পারল না। চোখের সামনে ভাসতে লাগল তার মায়ের চেহারা। মা ও তো সে খেতে না চাইলে রুটি ছিড়ে ছিড়ে খাইয়ে দিত। স্কুলে বা কলেজর সময় গুলোতে বিভার ব‍্যাস্ততম দিন গুলোতে নিজ হাতে খাইয়ে দিতেন তিনি। সেই মা কিনা আজ আর মায়ের জায়গায় নেই। মা আজ তাকে অভিশাপ দিয়ে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।
বাসের সীটে হেলান দিয়ে বসেছে বিভা, বসে তো আছে কিন্তু ঘুম আসছে না তার।

ক্ষনেক্ষনে মনে পরে যায় প্রাণ প্রিয়র মুখখানি, কত সুন্দর অনূভুতি ছিল দুজনার! এসএসসির জন‍্য মা তাকে কোচিং সেন্টারে ভর্তি করিয়েছিলেন সেখানে সবুজ ছিল পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক। খুব একটা কথা হতো না বিভার কিন্তু সবুজের মায়ায় পরে গিয়েছিল সে ছেলেটা কখনও কোন মেয়ের দিকে মাথা তুলে তাকাতো না। কথা বলার সময় মুখে মুচকি হাসি হাসি ভাবটা তার রয়েযেত সব সময়।
সবুজকে বিভা তখন থেকেই কিছুটা পছন্দ করতো।
এই বয়সটা খুব কাল! এই বয়সের আবেগ নাকি প্রত‍্যেকটি মেয়ের জীবনেই ধংস বয়ে আনে বিভা সব ভুলে সত‍্যিই সবুজের সেই মায়াময় মুখে আর চালচলনে ডুবে গিয়েছিল। মনে পরে যায় বান্ধবী উর্মির কথা, উর্মি বলেছিল-

–” প্রেম করিতে প্রেমিক পুরুষ যেমন তেমন হয়!
সংসারেতে স্বামী শুধু কাছের পরুষ হয়!
বিভা উর্মির কথায় কিছুটা অবাক হয়ে বলেছিল এই ছন্দ তুই কোথায় পেলি?”

উর্মির উত্তর ছিল –” প্রেম যার তার সাথে করতে পারিস। কিন্তু মনে রাখবি ঘর বাধার মানুষটি মানি তোর স্বামী যেন সারা জীবন তোর কাছের পুরুষ হয়, এমন একজন মানুষকেই তুই তোর জীবনে জায়গা দিবি। যে তোকে সব সময় নিজের মত আগলে রাখবে ঢাল হয়ে তোর পাশে থাকবে।”

বিভা চোখের পানিগুলোকে নিরবে মুছতে লাগল। বুকের ভিতরটা ফাকা ফাকা লাগছে। যার সাথে সারাজীবনের প্রতিজ্ঞা করেছিল থাকার জন‍্য তার হাত ছেড়ে আসতে হলো তাকে।

দীর্ঘযাত্রার পর রাত দশটা পনেরোর সময় ঢাকায় এসে পৌছাল বিভা। হাতের মোবাইলে চেনার পরিচিত মানুষদের নাম্বার খুজতে লাগল। কিন্তু বিশ্বাস যোগ‍‍্য আর কাউকে সে পেলো না যেখানে ঠাই নিতে পারবে। অবশেষে বারংবার ভেবে মামাতো বোন মিলির বাসায় এলো বিভা।

কলিংবেল চাপার পরপরই মিলির স্বামী রেজওয়ান দরজা খুলে দিল। সামনে দাড়ানো আগন্তুককে হঠাৎ দেখে চমকে গেলো রেজওয়ান বিভাকে দেখেই বলে উঠলো –

–” বিভা তুমি এখানে? আর এই অবস্থা কেন তোমার?”
স্ত্রী মিলিকে ডেকে উঠলো রেজওয়ান।
রেজওয়ানের ডাকে মিলি তার তিনবছরের মেয়েকে নিয়ে সামনে দাড়িয়ে অবাক চোখে চেয়ে আছে বিভার দিকে।
কি অবস্থা মেয়েটার, এমন সুন্দর শরীরটা কেমন ভেঙ্গে গিয়েছে। বিভার শরীরটা শুকিয়ে যাওয়াতে শুধু পেটের অংশটাই নজরে পরে। চোখের নিচে কালো হয়েগেছে।
মিলি আর দাড়াতে না পেরে বিভাকে জড়িয়ে ধরে কেদেঁ দিল। কত আদরের এই বোনটা তার। কত খুজেঁছে আর আজ মেয়েটা এসেছে। মিলি বিভাকে নিয়ে তার ড্রয়িংরুমে বসিয়ে দিল। দুবোন মিলে অনেক কথা বলতে লাগল।
নিজেদের জমা কথাগুলো বলতে লাগল।
মিলি সব শুনে একদম স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। বিভার সঙ্গে এমন কিছু হবে সে কল্পনাও করতে পারছেনা। রেজওয়ান মিলিকে বিভার সঙ্গে রাতে থাকতে দিয়েছে। বিভার যা মানসিক আর শারীরিক অবস্থা এই অবস্থায় মেয়েটার কষ্ট হতে পারে।

ঐদিকে পাড়ায় পাড়ায় রটেগেছে বিভা পেটের বাচ্চাকে নিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়েছে। বিভার শাশুড়ি সবার সঙ্গে এই কথাগুলো বলে সবুজকে ফোন করে জানিয়ে দিলেন বিভা পালিয়েছে। সবুজ যেন আরও তেতেঁ গিয়েছে, সবুজ তৎক্ষণাৎ ফোনটা কেটে দিয়ে বিভাকে ফোন করল। বিভা তখন মাথা ধুয়ে বসেছে মাত্র খাটে মাথা ব‍্যাথা আর শরীরের দূর্বলতায় সে যেন পরে যাচ্ছে।
পাশে তাকিয়ে দেখে সবুজের কল। ধরতেই সবুজ বলে উঠল –

–“এই ***,কি প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে গেলে শেষমেশ !
এতই জ্বালা শরীরের? এত খারাপ তুই? তোকে তো আমি এত খারাপ ভাবিনি, তুই এত নিকৃষ্ট কি করে? এতদিন মা আর মিনা বলতো আমি বিশ্বাস করতাম না। মা আমাকে আগেই বলেছে তোদের জাতই খারাপ। তোদের শুধু টাকা আর চাহিদা বেশি!”
বিভা সবুজের কথা শুনে অবাক হয়েগেল সবুজ তাকে ফোন দিয়ে এইসব কথা শুনাচ্ছে? আবার বলছে তাদের জাত খারাপ। বিভা নিজেকে শক্ত করে বলল-

–“মুখ সামলে কথা বলো, সবুজ! তুমি না শিক্ষিত? এই তুমি একজন শিক্ষক হয়ে এমন ভাষায় কথা বলছো কেমন করে? রুচিতে বাধে না তোমার এমন কথা বলতে?”

–” রাখ তো শিক্ষা, কি শিক্ষার কথা বলছিস তুই? আমার অবর্তমানে অন‍্যপরুষের সঙ্গে থেকে…., এই বাচ্চা যে হলো এই বাচ্চা না তোকে নষ্ট করতে বললাম! তুই ঐ রহিম ( রহিম বাদ দিয়ে রায়হান ) রায়হানের সঙ্গে পালিয়ে যাসনি? রায়হানকে আর মনে ধরে না? আমি জানতাম তো এইগুলোই তোরা করিস। আমি এখন তোর সামনে থাকলে কি করতাম জানিস? তোকে আমি খুন করতাম!”

–” খুনের ভয় আমাকে আর দেখাতে এসো না সবুজ, আমার আর কেউ নেই! আমি বুঝেগেছি দুনিয়াতে চলতে হলে তোমাদের মত আপনজন লাগে না। আমি নিজেই বাচঁবো আমার সন্তান নিয়ে বাচঁবো। পস্তাবে তুমি তোমার মা! আল্লাহ না করুক এমন একদিন হয়তো আসবে। পথে পথে ঘুরে বেড়াবে একদিনের সুখের জন‍্য হয়তো আল্লাহ তোমাকে একদিনের ও সুখ তোমার কপালে দিবেনা।
হয়তো বললাম অভিশাপ দিলাম না। কারন তুমি আমাকে ভুলে গেলেও আমি তোমাকে স্বামী হিসেবে মেনে নিয়েছিলাম।”

বিভা কাদঁতে কাদঁতে দেখল সবুজের ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন। ফোনটাকে আছড়ে ফেলে সে কাদঁতে লাগল।
এই জীবনটা রেখেই কি লাভ? কিছু নেই তার, কিছুই নেই!

চলবে।
[আমি আব্দুর রহিম নামের বদলে রায়হান দিলাম। আমার মনে হলো আসলেই নামটা মিলছে না। গল্পের দ্বিতীয় পর্ব পরে বিবেচনা আগেই করবেন না। গল্পের মধ‍্যাংশেও অনেক সুন্দর হয়। একটু পড়ে দেখবেন। ]

#বিভাবতীর_জীবন
#লেখিকাঃতামান্না
#পর্বঃ৩

বিভা কাদঁতে কাদঁতে দেখল সবুজের ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন। ফোনটাকে আছড়ে ফেলে সে কাদঁতে লাগল।
এই জীবনটা রেখেই কি লাভ? কিছু নেই তার, কিছুই নেই!

সারাটা রাত বিভা এপাশ ওপাশ করে শুতে চেষ্টা করল।
এই সময়টা একটা মেয়ের জীবনে কতটা যন্ত্রণার তা ভাষায় প্রকাশ করার মত না। পাশ ফিরে দেখল মিলি ঘুমাচ্ছে। মিলিকে আর জ্বালালো না। মিলির দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগল। মিলির সাজানো সংসার, কখনও কোন ঝামেলা হয়না, রেজওয়ান ও খুব ভালো মানুষ। বিভা যখন এইচএসসি দিচ্ছিল তখন মিলির পেটে মিলির মেয়েটা ছিল। গর্ভস্থায় রেজওয়ান তার অনেক খেয়াল রেখেছিল। মিলির স্বামী রেজওয়ান একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে। হাতে সময় না পেলেও
যেটুকু কেয়ার করতো তাতেই যথেষ্ট ছিল। বাড়ি থেকে কাজের মেয়ে আনার পর ও রেজওয়ান প্রতিদিন প্রায় একঘন্টা পরপর ফোন করে খোজ নিয়ে জানতো মিলি কি খাচ্ছে, মিলি কি করছে। পাচঁ মিনিটের ভরসা দেওয়া আর খোজ নেওয়া ফোনগুলো ঘন্টার পরপর কাজ করে যেত।
মিলির মুখের হাসি দেখাযেত সঙ্গে ফুটে উঠতো একটা লজ্জা। এখনও মনে আছে বিভার একদিন মিলি বিভাদের বাসায় বেড়াতে এসেছিল। সেখানেও এতগুলো মানুষের সামনে বসা অবস্থায় ফোন করে খবর নেওয়াটা তাকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেললে ও মিলির মুখটায় একটা উজ্জ্বলতা কাজ করতো।

বিভা কিছুটা খিচিয়ে বসলো, আজ শরীরটা কেমন করছে। এমন করছে কেন? কিছুক্ষণ নড়চড়ে বিছানায় আবার শুয়ে পরল বিভা। রাত প্রায় তিনটায় উঠে বসল ঘুমই যখন আসে না তখন নাহয় তাহাজ্জুত নামাজ পরা যায়। রাতের বেলায় উঠে অজু করে নামাজ পরে নিল সে।
নামাজ পরে কিছুক্ষণ সূরা ও দোয়া পাঠ করতে লাগল।
নিঝুম রাত্রীর ইবাদত নাকি রাব্বুল আলামিনের নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয়। বিভার সূরা ও দোয়া পড়তে পড়তে দেখল ফজরের আজানের ধ্বনি আসছে। ফজরের নামাজটা পড়ার পরপরই উঠে দাড়ালো।
মিলির পাশে গিয়ে আবার শুয়ে পরল। মিলিকে জাগিয়ে নামাজ পড়তে বলে সে আবার ঘুমাতে চলেগেল।

পাচঁদিন হয়েগেছে বিভা এখানে আছে। মিলি একদিন ও তার যত্নে কোন অবহেলা করেনি। বরং নিজের মায়ের পেটের বোনের মত তাকে রেখেছে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে বিভার এখানে থাকাটা একদমই উচিৎ নয়। মিলি বা তার স্বামী রেজওয়ান হয়তো কিছু মনে করেনি। কিন্তু তাই বলে সে ও তো দায়িত্বজ্ঞানহীনের মত একজনের বাসায় পরে পরে থাকতে পারেনা। নিজের ব‍্যাগ ঘুছিয়ে নিল বিভা এবার বের হতে হবে তাকে। কিছু একটা করে হলেও এই জীবনের লক্ষ্য স্থীর করতে হবে। মিলির রুমের কাছে এসে মিলির সঙ্গে কথা বলার জন‍্য রুমে প্রবেশ করার আগেই শুনতে পেল তার বড় মামি মিলিকে বলছে –

–” বিভা যে এখানে এসেছে তুই আমাকে জানাসনি কেন?”

–” আম্মা, ও তো মাত্র পাচঁদিন হয়েছে এখানে এসেছে।
তাই অতটা বলার প্রয়োজন বোধ করিনি।”

–” মানি একটা মানুষ আজ পাচঁদিন তোর বাসায় পরে আছে। আরে বিপদে পাশে দাড়া নিষেধ করেনি তোকে তাই বলে একেবারের জন‍্য মেয়েটাকে ঘাড়ে তুলে নিবি?
আক্কেল জ্ঞান নেই তোর? তোর কি ঢাকায় ওদের মত ডুপ্লেক্স বাড়ি একটা সাত তলা বাড়ি আছে? তোর জামাই আর তুই তো নিজেদের সংসার চালাতে হিমশিম খেয়ে যাস এই জিনিসটা তুই বুঝবি না? জামাইটা সারাদিন বাইরে খেটে আসে, তুই তো চাকরি করিস না ওর ও তো কম খাটনি না এত টাকা রোজগার করা। কিছু বুঝতে চেষ্টা কর ওর মা-বাবা আজ রেগে আছে কাল ও তাদের সামনে গেলে রাগ ভেঙ্গে যাবে। একটা মাত্র মেয়ে তাদের ওর কপালেই সব আছে। তুই কেন এইসব ঝামেলায় জড়াতে চাস?”

–” আম্মা ফুফু ও কে অনেক কথা শুনিয়েছে, ফুফু ও তো ওকে রাখতে দিবে না। তাহলে ও যাবে কোথায়?”

–” আমি কিছু বুঝতে পারছিনা, তোকে ও বা কি বলবো আর ওকে ও বা কি করে কি করবো। কিন্তু এভাবে বসে ও তো থাকা যাবে না।”

–” মা চিন্তা করো না তো, সব ঠিক হয়ে যাবে। ”
বিভা আর রুমে এগোতে পারল না সেখান থেকেই তার থাকার রুমে চলে এলো। কিছুক্ষণ বসে থাকার পর সে আবার উঠে দাড়ালো।

মিলির সামনে দাড়িয়ে বলল-

–“আপু অনেক তো থাকলাম এবার চলে যাই, আমাকে এতটা দিন থাকতে দিয়েছো আমি তোমার কাছে কৃতজ্ঞ আপু। ঐ অবস্থায় তুমি যদি আমাকে থাকতে না দিতে সত‍্যিই আমার খুব কষ্ট হতো। ধন‍্যবাদ!”

–” ছি! কি বলছিস তুই এগুলো, আর ব‍্যাগ নিলি কেন? তুই চলে যাবি ভেবে নিলি, থাকবি কোথায়?”

–” ইনশাআল্লাহ! কোথাও না কোথাও ঠিকই জায়গা হয়ে যাবে আপু।”

–” আরে তুই কি পাগল হলি নাকি,এই অবস্থায় এমন করিস না। ”
বিভাকে জোর করে ও মিলি রাখতে পারল না। বিভা তার হাত ছেড়ে সরে গেল। বাসা থেকে বেড়িয়ে চলেগেল।
বিভা ভেবে নিয়েছে একা জীবনটাকে সে সামলে নিবে।
বিভা ইডেন কলেজের ছাত্রী অনার্স তৃতীয় বর্ষে।
আর তার জন‍্য সবুজই চেষ্টা করেছে নিজেই বিভাকে সে ভর্তি করিয়েছে। সবুজকে আজও সে বুঝতে পারে না। যে সবুজ তাকে পড়াশুনা করানোর ব‍্যবস্থা করেছিল যেন সবুজের জন‍্য বিভার জীবনে কোন দাগ না লাগে। বিভার কেরিয়ার না নষ্ট হয়,সেই সবুজের আজ কিনা সংসারের প্রতি অনিহা তার প্রতি, কি এমন কারন যার জন‍্য সবুজের এত তিক্ততা! এতটা খারাপ ভাষায় কথা বলার মত সবুজ তো নয়।

বিভা ক্লাসমেট নীড়ার সঙ্গে কথা বলে হোস্টেলে থাকার ব‍্যবস্থা করে নিল। হোস্টেলের সামনে এসে দাড়াতেই নীড়াকে ফোন করে জানিয়ে দিল সে। নীড়া ও তাকে এগিয়ে আনতে নিচে এসে দাড়ালো। খুব ব‍্যাথা করছে বিভার প‍েটের দিকটায় তবুও অগ্রাহ্য করে সে আস্তে আস্তে সিড়ি সিড়ি বেয়ে তিনতলায় নিজের ঠিক করা রুমে এসে দাড়ালো। নীড়া বিভার এই অবস্থা আর এভাবে হঠাৎ এখানে আসার কারন জানতে চাইলে সে উত্তরে কিছুই বলল না।

নীড়া হোস্টেলের রান্নাঘর থেকে ম‍্যানেজ করে খাবার এনে খাইয়ে দিল বিভাকে। সম্ভবত অতিরিক্ত চলাচলের কারনে বিভার শরীর কিছুটা দূর্বল হয়ে পরেছিল। তাই সে বসে থাকতে পারছেনা একটু শুয়ে পরল। পেটটা এখনও কিছুটা ব‍্যাথা করছে। বিকেল বেলা ঘুম থেকে উঠেই বিভা একটু বিছানা থেকে নামল ব‍্যাথাটা বেড়েগেল তার কমছে না। নীড়া তার সামনের ব‍েডে বসেছিল। হঠাৎ তার চোখে পরল বিভা যেখানে দাড়িয়েছিল সেখানে রক্তে ভেসেগেছে। নীড়া বিভাকে চিৎকার করে বলল-

–” বিভা এগুলো কি? রক্ত এলো কি করে?”
আরেকটু এগিয়ে এসে বলল –” বিভা তোমার কিছু হলো না তো? তুমি কি জার্নি বেশি করেছো?”
বিভা নিজের দিকে একবার তাকিয়ে নীড়ার দিকে তাকালো। অসহায় চোখে তাকিয়ে সে চিৎকার করে বলল-

–” নীড়া আমার সর্বনাশ হয়েগেল। আল্লাহ্ আমার কোন পথ রাখল না। আমার সবশেষ করেদিল।”
বিভা সেখানেই মাথাঘুরে পরে যেতে নিলে নীড়া তৎক্ষণাৎ তাকে ধরেই, সবাইকে ডেকে উঠলো। হোস্টেলের ম‍্যাডামকে ডেকে এনে সব কিছু বলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। পরিবারের কোন সদস‍্য আছে কিনা জানার জন‍্য নীড়াকে জিজ্ঞেস করতেই নীড়া বিভার মোবাইল থেকে দেখে নিল লাস্ট কল কার ছিল। মিলির নাম্বারে কল করেই বলে দিল বিভা হাসপাতালে ভর্তি এবং কি কারনে ভর্তি তাও বলে দিল সে।

ঘন্টা খানেক পর মিলি ও তার স্বামী রেজওয়ান এসেছে পিছন পিছন বিভার মা আর বাবা ও এসেছে।
সন্তান যত বড় অন‍্যায় করুক মা বাবা কখনই সেই সন্তানকে ফেলে দিয়ে দূরে চলে যায় না। তার ব‍্যাতিক্রম বিভার বাবা-মা ও করেনি। বিভার মা এককোণে বসে নিজেই নিজেকে দোষারোপ করতে লাগলেন। আজ যদি তিনি অমন অভিশাপ না দিতেন তাহলে তো মেয়েটার এমন কিছু হতে পারতো না। বিভার বাবা মিলির থেকে শুনেছেন আজ পাচঁদিন বিভা মিলির বাসায় ছিল কি পরিস্থিতি তার উপর দিয়ে তা মিলি সব খুলে বলেছে তাকে। ভদ্রলোক নিজেই অবাক হয়েগেলেন নিজের স্ত্রীর আচরণে। একবার প্রশ্ন পর্যন্ত করল না মেয়েটা কেন ফোন করেছে। না শুনেই ইচ্ছে মত কত গুলো কথা শুনিয়ে দিল।

বিভার মিসক‍্যারেজের কথা নিয়ে টেনশনে আছে মিলি।
মেয়েটা তো শেষ হয়ে যাবে।

চলবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ