বালিকা বধূ ৪র্থ পর্বঃ
#লেখাঃ_শারমিন_আক্তার_(#সাথী_____)
——–আয়াতঃ প্লিজ তনয়া বলো কি হয়েছে? প্লিজ—–?
তনয়াঃ আয়াত আজ পর্যন্ত আমাকে কেউ এত নোংড়া কথা বলেনি। ঘৃনায় আমার মরে যেতে ইচ্ছা করছে।
আয়াতঃ তনয়ার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে প্লিজ আগে শান্ত হও তারপর বলো কে তোমায় নোংড়া কথা বলেছে? বলো?
তনয়াঃ তখনও বাচ্চাদের মত কাঁদতে কাঁদতে বললো বাড়ি আসার সময় রাস্তার মোড়ে কিছু ছেলে আমাকে দেখে খুব বাজে নোংড়া কথা বলছে। আমার সাথে নোংড়ামি করার——- কিন্তু আমি কোন রকম সি এন জি তে উঠে চলে আসছি। আমি কখনো এমন নোংড়া কথা শুনিনি।
তনয়ার কথা শুনে আয়াতের মাথায় রক্ত উঠে গেলো। তনয়াকে উঠিয়ে হাত ধরে রাস্তার মোড়ে নিয়ে গিয়ে বললো কোন ছেলেটা।
তনয়া কয়েকটা ছেলেকে দেখিয়ে বললো ওরা। আয়াত কোন কথা না বলে গিয়ে ছেলে গুলোকে মারতে শুরু করলো। তনয়া দেখে হতবাগ হয়ে গেলো। কারন ও চিন্তাও করতে পারেনি আয়াত এমন করবে! তিন চারটা ছেলের সাথে আয়াত পেরে উঠলো না। ওরাও আয়াতকে মারতে শুরু করলো। কে যেনো পুলিশকে খবর দিলো। পুলিশ এসে ব্যাপারটা থামালো। স্থানীয় সবাই ছেলে গুলোর বিরুদ্ধে নালিশ করলো। পুলিশ ছেলে গুলোকে ধরে নিয়ে গেলো। আয়াত মোটামুটি আঘাত পেয়েছে তাই তনয়া ওকে হাসপাতালে নিয়ে গেলো। পুরো রাস্তায় তনয়া আয়াতের সাথে একটাও কথা বললো না। ডাক্তার আয়াতকে দেখে ভালোভাবে ট্রিটমেন্ট করে ঔষধ দিয়ে দিলো। আয়াতের ডান হাতের অনেকটা কেটে গেছে। পায়েও বেশ ব্যাথা পেয়েছে। তনয়া আয়াতকে নিয়ে বাড়ি ফিরলো। আয়াতের কথা শুনে সবাই বেশ চিন্তিত ছিলো। হাসপাতালে যেতে চেয়েছিলো। কিন্তু তনয়া নিষেধ করায় যায়নি। আয়াতকে নিয়ে ঘরে ফিরতেই সবাই বিভিন্ন প্রশ্নের সমাহার খুলে বসলো। সবার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে তনয়া আয়াতকে ধরে রুমে নিয়ে আসলো। তখনও তনয়া চুপ করে আছে। তাই আয়াত জিগেস করলো
আয়াতঃ কি হয়েছে তনয়া? সেই কখন থেকে চুপ করে আছিস? কিছু বলছো না যে?
তনয়াঃ (রাগি চোখে তাকিয়ে) কি বলবো তোমাকে? বলার মত কিছু রাখছো?
আয়াতঃ মানে?
তনয়াঃ কে বলেছে তোমায় ঐ ছেলে গুলোর সাথে মারামারি করতে? হিরোগিরি করতে কে বলেছে? আমার সাথে একদম এসব ন্যাকামো দেখাবা না বলে দিলাম।
আয়াতঃ ওরা তোমার সাথে নোংড়ামি করতে চেয়েছিলো তনয়া। তাহলে কি ওদের ছেড়ে দিবো!
তনয়াঃ আমার সাথে নোংড়ামি করলে তাতে তোমার কি? কি সমস্যা তোমার? তোমার সাথে তো কিছু করেনি?
আয়াতঃ তনয়া তুমি ভুলে যাচ্ছো তুমি আমার স্ত্রী।
তনয়াঃ আর তুমিও ভুলে যাচ্ছো আমাদের সম্পর্কের মেয়াদ আর তিন মাসও নাই। তারপর তোমার আমার পথ আলাদা। না থাকবে সম্পর্ক, না থাকবে অধিকার, আর না থাকবে কোন ভালোবাসা। এফরিথিংঙ্ক ইজ ফিনিস।
আয়াত আর কোন কথা বললো না। তনয়ার কথা গুলো শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলো।
কিছুক্ষন পর অনু ওদের খাবার নিয়ে রুমে ডুকলো।
অনুঃ ভাবি তোমরা বরং এখানে বসেই খাও। আর খাবার পর ভাইয়ার ঔষধ খেতে দিও।
তনয়াঃ ঠিক আছে।
অনু চলে যাবার পর
তনয়াঃ খেয়ে নাও। আয়াত কোন কথা না বলে খাবার প্লেটটা তুললো। কিন্তু ডান হাতটা অনেকটা কেটে যাওয়ায় খেতে পারছে না। তনয়া প্লেটটা আয়াতের হাত থেকে নিয়ে নিজে আয়াতকে খাইয়ে দিচ্ছিলো। আয়াত কোন কথা না বলে বাধ্য বাচ্চাদের মত চুপচাপ খেয়ে নিলো। তনয়া আয়াতেকে ঔষধ খাইয়ে দিয়ে নিজে অন্য রুমে ঘুমানোর জন্য চলে যায়। আয়াত ভেজা চোখে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। রাতে তনয়ার কেন যেনো ঘুম আসছিলো না। কেন যেনো মনটা খুব অস্থির লাগছে। তাই রুম থেকে বেরিয়ে হাটাহাটি করার জন্য যাচ্ছিলো। কারো গোঙানোর শব্দে থমকে দাড়ালো। শব্দটা আয়াতের রুম থেকে আসছে। তনয়া আস্তে গিয়ে দড়জাটা খুললো। দেখলো আয়াত বিছানায় শুয়ে ছটফট করছে আর কি যেনো বিড়বির করেছে। তনয়া গিয়ে আয়াতের মাথায় হাত রেখে চমকে উঠলো। কারন গায়ে প্রচন্ড জ্বর। হয়তো ব্যাথায় আর ঔষধের সাইড এ্যাফেক্ট এর কারনে গায়ে জ্বর আসছে। তনয়া তরিঘরি করে বালতি ভরে পানি এনে আয়াতের মাথায় দিলো। কপালে জলপট্টি দিলো। হাত পা মালিশ করে দিলো। আয়াতের গা টা মুছে দেয়া দরকার। কিন্তু আয়াতের শার্ট খুলতে তনয়ার খুব লজ্জা লাগছে। কিন্তু তবুও কি করার? আয়াতের শার্ট খুলে যখন মুছতে নিলো তখন আয়াতের বুকের বাম পাশটা দেখে চমকে উঠলো। সেখানে কেঁটে তনয়ার নাম লেখা । তনয়া আয়াতের বুকের বাম পাশের লেখাটা নিজের হাত দিয়ে আলতো করে স্পর্শ করলো। কোন এক অজানা কারনে তনয়ার বুকের বাম পাশটায় প্রচন্ড ব্যাথা শুরু হলো। তনয়া মনে মনে ভাবছে
তনয়াঃ সত্যিই কি আয়াত আমায় এত ভালোবাসে? হ্যা আমি জানি আয়াত আমায় পাগলের মত ভালোবাসে আর সারাজীবন ভালোবাসবে। ওর ভালোবাসার প্রনয় আমি প্রত্যেক মুহূর্তে অনুভব করতে পারি। কারন আমিও তো ওকে—–! কিন্তু যখনই ওর করা কাজটার কথা ভাবি তখনই ওর প্রতি মনটা ঘৃনায় বিষিয়ে ওঠে। কেন আয়াত সেদিন ওমন কাজটা করলা? যদি না করতে তাহলে আজ আমাদের মাঝে এতটা দূরত্ব আর ঘৃনা থাকতো না। থাকতো শুধু ভালোবাসার মাদকতা। কিন্তু তুমিই নিজেই সব উল্টে দিলে। আয়াতকে ধরে বসিয়ে ওর গা টা মুছে দিলো। আয়াতকে যখন বসালো তখন আয়াত জ্বরের ঘোরেই তনয়াকে জড়িয়ে ধরলো। আয়াতের স্পর্শের উষ্ম পরশ পেয়ে তনয়া কিছুক্ষন ভুলে গেছিলো আয়াতের প্রতি ওর তিক্ততা। শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছিলো আয়াতকে। জ্বরের ঘোরে আয়াত বিরবির করে প্রলাপ করতে ছিলো তনয়া সত্যিই আমি কোন অন্যায় করিনি। খুব ভালোবাসি তোমায়। প্লিজ তনয়া আমায় ভুল বুঝো না। আয়াতের কথা শুনে তনয়া আরো শক্ত করে আয়াতকে জড়িয়ে ধরলো ।অনেকক্ষন এভাবে জড়িয়ে ধরার পর তনয়া আয়াতকে শুইয়ে দিলো। আয়াত জ্বরের ঘোরে বারবার নিজের মাথা চেপে ধরছিলো। তনয়া বুঝতে পারলো ওর খুব মাথা ব্যাথা করছে তাই কিছুক্ষন আয়াতের মাথাটা টিপে দিলো। আয়াতের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে তনয়া আয়াতের বুকেই ঘুমিয়ে পরলো।
খুব সকালে আয়াতের ঘুম ভাঙলো। মাথাটা এখনো বেশ ভারী হয়ে রয়েছে। কিন্তু বুকের উপর কারো চাপ অনুভব করে বুকের দিকে তাকাতেই ভুত দেখার মত চমকে ওঠে। কারন তনয়াকে এভাবে নিজের বুকে ঘুমিয়ে থাকতে আয়াত কেবল তার স্বপ্নে দেখছে। কিন্তু স্বপ্নটা সত্যি হবার আশাটাতো ছেড়েই দিয়েছিলো আয়াত। তনয়ার নিঃশ্বাসের গরম ভাবটা আয়াতের বুকে লাগছে । আয়াতের মনটা মুহূর্তেই চনমনে হয়ে গেলো। খুব পানির তৃষ্না পেয়েছে কিন্তু ভাবলো নড়বো না নড়লেই তনয়া জেগে যাবে। নিচের দিকে তাকাতে দেখে ফ্লোরে পানি ভর্তি বালতি, পাশের টেবিলে বাটিতে জলপট্টির পানি। ওর শার্টটাও পাশেই রাখা। আয়াতের বুঝতে বাকি রইলো না কাল রাতে ওর জ্বর আসছিলো আর তনয়া সারারাত ওর সেবা করে ক্লান্ত হয়ে ওর বুকে ঘুমিয়ে পরেছে। আয়াত চুপচাপ তনয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
তনয়া একটু নড়েচড়ে ওঠতেই আয়াত ঘুমের ভান ধরে পরে রইলো। তনয়া ওঠে নিজেকে আয়াতের বুকে পেয়ে খুব বিব্রত বোধ করলো। তারপর আয়াতের মাথায় হাত দিয়ে দেখলো জ্বরটা এখনো কমেনি। আরেকবার শরীরটা মুছিয়ে দিতে হবে। ওর ঘুম ভাঙার আগে মুছে দেই নয়তো কিনা কি ভাবে? তনয়া তারাতাড়ি পানি এনে আয়াতেকে ধরে কোন রকম বসালো। তারপর শরীরটা ধীরে মুছে দিতে লাগলো। আয়াত চোখ বন্ধ করে রয়েছে । তনয়ারক বুঝতে দিচ্ছে না যে ও জেগে আছে। কিন্তু তনয়ার চুলের ঘ্রানে পাগল করার মাতালতা ছিলো। নিজেকে তনয়ার থেকে দূরে রাখাটা কঠিন থেকে কঠিনতম হয়ে দাড়ালো। নিজেকে কিছুতেই আটকাতে না পেরে তনয়ার ঘাড়ে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। তনয়ার পুরো শরীর কেঁপে উঠলো। কিছুক্ষন স্তব্ধ হয়ে রইলো। পরোক্ষনেই আয়াতকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে বললো—-
তনয়াঃ তোমার মত নোংড়া মানুষের কাছ থেকে নোংড়ামি ছাড়া আর কিই বা আশা করা যায়! আমার জন্য তোমার এই অবস্থা হয়েছে ভেবে তোমাকে সুস্থ করার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু তুমি তো——–? ছিঃ—– তনয়া রাগ করে চলে গেলো।
আয়াত চুপ করে রইলো। কারন ভুলটা ওরই ছিলো। নিজের প্রতি নিজের খুব রাগ হচ্ছিলো। কেন নিজেকে আটকাতে পারলো না। কিছুক্ষন পর তনয়া যখন ওকে খাওয়াতে আসলো তখন আয়াত বললো——
আয়াতঃ তনয়া প্লিজ মাফ করে দাও। প্লিজ—–
আমি নিজেই জানি না কেন এমনটা করলাম? আসলে তোমার প্রতি ভালোবাসাটা দিন দিন শুধু বাড়ছে। যার কারনে তোমার থেকে নিজেকে দূরে রাখতে খুব কষ্ট হয়। স্যরি তনয়া। প্লিজ—–
তনয়াঃ ইট’স ওকে।
তনয়ার সেবায় আয়াত খুব শিগ্রই সুস্থ হয়ে ওঠে। কিছুদিন পর বাড়িতে বিয়ের শানাই বাজে। অনুর বিয়েও হয়ে যায়। কিন্তু ওদের সম্পর্ক ঠিক হয় না।
আজ জজ এর দেয়া ছয় মাস সময় পূর্ন হলো। আজ ওদের ডিভোর্স। তনয়ার ঘরের কেউ জানেনা আজ ওদের ডিভোর্স। কারন তনয়া কাউকে জানায়নি। আয়াত অঝোরে কাঁদছে কারন ওর ভালোবাসা আজ তনয়ার ঘৃনার কাছে হেরে গেলো। ও তনয়াকে বলেছিলো ছয় মাসের মধ্যে তনয়ার মনে নিজের প্রতি ভালোবাসা তৈরী করবে কিন্তু তনয়া পরিষ্কার করে বলে দিয়েছে তনয়া আয়াতকে শুধু ঘৃনা করে। তাই নিজের ভালোবাসার কাছে হেরে বাধ্য হয়ে ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিলো। আয়াত বিষন্ন মনে হেঁটে যাচ্ছে অজানার পথে। তনয়া নিজের সব কিছু নিয়ে নিজের মায়ের বাসায় গেলো। মা এত বড় সুটকেস দেখে বললো
মাঃ কি রে অনেক দিন থাকবি নাকি এবার!
তনয়াঃ নাহ!
মাঃ তাহলে এত বড় সুটকেস?
তনয়াঃ এখন থেকে এখানেই থাকবো।
মাঃ মানে?
তনয়াঃ আজ আমার আর আয়াতের ডিভোর্স কমপ্লিট হয়েছে। আজ থেকে আমরা দুই তীরের বাসিন্দা। আজ থেকে আমি আয়াতের সাথে জড়ানো সব সম্পর্ক থেকে মুক্ত।
চলবে———
ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন