Monday, October 6, 2025







বসের সাথে প্রেম পর্ব:- ২৭

বসের সাথে প্রেম
পর্ব:- ২৭

লেখা- অনামিকা ইসলাম।

বাসায় ঢুকে সিয়াম সরাসরি সাইমার রুমে যায়।
ওখানে গিয়ে মণিকে দেখতে না পেয়ে সিয়াম ওর বাবা-মায়ের রুমে যায়। সেখানেও মণিকে পেল না। সিয়াম এবার ওর রুমে যায়।
নাহ, এখানেও নেই।
কই গেল মেয়ে’টা???
মণি মণি করতে করতে উপরতলা থেকে নিচতলায় নামে সিয়াম।নিচতলায় ড্রয়িংরুমে সিয়ামের বাবা আর মা কি যে গল্প করতেছিলেন।সিয়ামকে দেখে দু’জনেই একদম চুপ হয়ে যায়। সিয়াম মণি মণি করতে করতেই ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। সিয়াম ওর বাবা-মা দু’জনকেই মণির কথা জিজ্ঞেস করলেও একজনও কথার উপযুক্ত জবাব দেননি। একজন বলতেছে এসেছিস বাবা?!!! ফ্রেশ হয়ে আয়, নাস্তা করবি….
আরেক জনের জবাব-
বিদেশী কোম্পানির সাথে ঐ যে একটা ডিল হয়েছিল তার খবর কিরে?!!!
– সিয়াম বার বার জিজ্ঞেস করার পরও ওদের এরকম জবাবে আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে নি। চেঁচিয়ে সাইমাকে ডাকা শুরু করে। সাইমা দৌঁড়ে নিচে আসে। কি হয়েছে ভাইয়া?
– মণি কোথায়???
সিয়ামের প্রশ্নের জবাবে প্রতিউত্তরে সাইমা যা বলেছে তা হলো-
ভাইয়া….
আজকে না ওর একটা বন্ধু ফোন দিয়ে কিসব উল্টাপাল্টা কথা বলেছে।
সিয়ামের রাগটা এবার বহুগুনে বেড়ে যায়।
চেঁচিয়ে ডাকতে থাকে_
আবির! আবির…..
সাইমা পিছন থেকে বলে আবির বাসায় চলে গেছে, আমি বলছি দাঁড়া….
সিয়াম পিছু ফিরে দাঁড়ালো।সাইমা বাবা মায়ের মুখের দিকে একবার শুধু চাইছে তারপর….
তারপর বলে দেই মণিকে কখন কিভাবে কোথায় দিয়ে আসা হলো।
সবটা শুনে সিয়াম কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছিল তারপর দাঁড়ানো থেকে বসে পরে সোফায়। অনেকক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে থেকে কাউকে কিছু না বলে একটা সময় রুমে চলে যায়। রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয় সিয়াম। তারপর ফোন’টা বের করে ছোট্ট মণির মায়া মায়া মুখের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকে। চোখটা ছলছল করে উঠে তার। খেলনাগুলো বুকে জড়িয়ে কেঁদে উঠে সিয়াম।
তারপর সেই অবস্থাতেই ঘুৃমিয়ে পরে।সেদিন শত ডাকাডাকির পরও সিয়াম দরজা খুলেনি, কিচ্ছু খায়নি। এদিকে রাত সকাল, আর সেই সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে রাত হতে চলল। সিয়াম রুমের দরজা খুলছে না তো খুলছে না।ওর একটাই জবাব__
” আমাকে প্লিজ একটু একা থাকতে দাও তোমরা….”
একে একে সবাই ডাকতে এসে ফিরে গেল। সিয়াম দরজা আর খুলছে না। সবশেষে আসল সিয়ামের বাবা। ওনি দরজার পাশ থেকে ছেলেকে বারে বার ডাকলেন। ছেলের একটা’ই জবাব এখন আমি দরজা খুলতে পারব না। ব্যর্থ হয়ে ফিরে যাওয়ার আগে শেষ চেষ্টা করলেন সিয়ামের বাবা। জোরে জোরে বললেন-
সিয়াম! আমার কাছে ঐ বাসার এড্রেস আছে,
আসার সময় মণির মামা দিয়ে দিয়েছে, তুই রুম থেকে বের হ, এখনি খেলনা নিয়ে ঐ বাসা থেকে মণিকে দেখে আয়….”
সিয়ামের বাবার কথা শুনে সিয়াম এক রকম লাফ দিয়ে দরজা খুলল। ফ্রেশ হয়ে এসে বাবার কাছে কার্ড চাইল।সিয়ামের বাবা সিয়ামের হাতে কার্ড দিয়ে বলে-
এই নে! আর হ্যাঁ….
কিছু খেয়ে যা। না হলে রাস্তায় মাথা ঘুরে দূর্ঘটনা একটা ঘটে যাবে। সিয়ামের কানে সেই মুহূর্তে কারো কথায় ঢুকছিল না। গাড়ির চাবি আর খেলনাগুলো রুম থেকে নিয়ে সিয়াম ছুঁটে বের হয়ে গেল রুম থেকে।

ঘন্টাখানেকের মধ্যে পৌঁছে গেল কাঙ্খিত স্থানে।
গেইটের সামনে গিয়ে হুইসেল দিতেই দাড়োয়ান ছুটে আসল। কাকে চাই???
সিয়াম কার্ডটা দেখিয়ে বলল-
ডাক্তার বিজয় কার্ডটা দিয়েছেন আমায়,ওনি কি বাসায় আছেন???
দাড়োয়ান বললেন-
জি….
কিন্তু ওনি তো এই সময় কারো সাথে কথা বলেন না।
সিয়াম দাড়োয়ানকে বলল,
আমার ওনার সাথে দেখা করতেই হবে।খুব দরকার ওনাকে….
দাঁড়োয়ান গেইট খুলে দিয়ে বলল- ঠিক আছে!
আপনি তাহলে যান….
সিয়াম গাড়ি নিয়ে ভেতরে ঢুকে গেল। গাড়ি’টা রেখে খেলনাগুলো হাতে নিয়ে দরজায় নক করল সিয়াম। দু’তিনবার বাজার পর দরজা খুলল ডাক্তার বিজয়…..

বিজয় যেন চমকে গেল সিয়ামকে দেখে।
চমকে যাওয়ার’ই কথা।
কারণ- অবিকল এই লোকটার মতই একটা ছবি বিগত ৫বছর ধরে দেখে আসছে মায়াকে লুকিয়ে ছবিটাকে বুকে ধরে কাঁদতে। তাহলে কি এই সেই সিয়াম?
কিন্তু ও এই বাসার ঠিকানা কোথা থেকে পেল?!!!
বিজয় সাদর অভ্যর্থনা জানিয়ে সিয়ামকে ভেতরে নিয়ে আসে। সিয়াম রুমের ভেতরে ঢুকে।
বিজয় সিয়ামকে সোফায় বসে একটু ওয়েট করতে বলে চা করতে চলে যায়। সিয়ামের মাথা’টা যেন ঘুরছে। কি হচ্ছে এসব???
প্রথমত মণিকে দেখে আপন,খুব আপন লাগছে।এখন তো মণির মামাকেও পরিচিত পরিচিত লাগছে। শুধু পরিচিত না, ভিষন পরিচিত….
উফ!!!
মাথা’টা আর কাজ করছে না….

ঠিক তখন’ই বিজয় দু’কাপ চা হাতে নিয়ে হাজির।
এই নিন!
চা’টা খেয়ে নিন,
মাথা ঠিক কাজ করবে।
সিয়াম বিজয়ের দিকে তাকালো-
আপনি অবিকল আমার দেখা একজন লোকের মত। আচ্ছা, আপনি ঐ বিজয় নইতো যিনি একটা সময় প্রতিদিন পার্কে বোনের সাথে দেখা করতেন???
– কথাটা বলতে বলতে সিয়াম চা’য়ের কাপটা হাতে নেয়। বিজয় সোফায় বসে চা’য়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বলে-
__ আপনিও কিন্তু অবিকল সিয়ামের মত।
,
সিয়াম চোখ তোলে তাকাই-
আশ্চর্য! লোকটা আমার নামও জানে….
তার মানে আমার অনুমান ঠিক???
– কি হলো জনাব সিয়াম সাহেব? কোথায় হারিয়ে গেলেন?(বিজয়)
_ অবিকল নয় আমি সত্যি’ই সিয়াম। আর আমার অনুমান যদি ঠিক হয়, তাহলে আপনি মায়ার ভাই বিজয়….(সিয়াম)
~চা’য়ের কাপটা হাত থেকে রেখে সিয়ামের দিকে তাকিয়ে বলে-
হ্যাঁ, তুমি ঠিক’ই ধরেছ।
আমি বিজয়।
মায়ার ভাইয়া….
আপন মায়ের পেটের না তবে আপনার থেকেও কোনে অংশে কম না….
আমার সারা পৃথিবী জুড়ে একমাত্র ও’ই ছিল আমার সব, আর ওর পৃথিবীতে আমি’ই ওর একমাত্র ভরসা…..(বিজয়)
_ সিয়াম এতক্ষণ ধরে সবটা বসে বসে শুনছিল। এখন চায়ের কাপটা হাত থেকে রেখে বিজয়ের পায়ে ধরল গিয়ে সিয়াম।
বিজয় তো হতবাক….
কি করছ, কি করছ তুমি এসব???
— ভাইয়া আমি সিয়াম।
আমায় চিনতে পারছেন???
আমি মায়ার সিয়াম…..
পা জড়িয়ে কেঁদে কেঁদে কথাগুলো বলছিল সিয়াম।
~ আমি জানি তো। আমি চিনতে পারছি তুমি সিয়াম।তুমি প্লিজ পা ছাড়ো।(বিজয়)
__ না, আপনি আগে বলুন আমায় ক্ষমা করে দিয়েছেন?(সিয়াম)
~ সিয়াম আমি তোমায় ক্ষমা করে দিয়েছি, এবার তো তুমি উঠো….(বিজয়)
—- সিয়াম পা ছেড়ে দিল। বিজয় ওকে সোফায় উঠে বসালো। সিয়াম মেয়ে মানুষের মত তখনও কাঁদছে।বিজয় সিয়ামকে ধমক দিয়ে কান্না থামালো।
দু’জনেই বেশ চুপচাপ…..

কারো মুখে কোনো কথা নেই। সিয়াম যেন লজ্জায় বিজয়ের দিকে তাকাতে পারছে না। বিজয় সেটা লক্ষ করল। আর তাই বিজয়__
~ শুনেছি, তুমি এক্সিডেন্ট করেছ, মায়া খবরটা শুনে সেখানে ছুটে গিয়েছিল।তারপর কি এমন হলো যার কারনে ও বাসা থেকে চলে আসে???
কি এমন হয়ে গেল?
যার কারনে এতকিছু হয়ে গেল???
আমি শুনতে চাই,
আমি একটু শুনতে চাই।
– – – – – – – – – – – – – – – – – –
বিজয়ের কথা শুনে সিয়াম চিন্তাজগত থেকে বাস্তব জগতে ফিরে আসে। ও জানে মায়াকে ফিরে হলে সবটা খুলে বলতে হবে। তা হয়তো ওকে ফিরে পাওয়া যাবে না….
আর তাই সিয়াম একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলা শুরু করে-
~ কয়েকদিন যাবৎ লক্ষ করছিলাম মায়া কেমন উদাসীন হয়ে থাকে। আর রাতের বেলা লুকিয়ে চুরিয়ে কার সাথে যেন ফোনালাপ করে। ব্যাপারটা আমি পাত্তা না দিয়ে উড়িয়ে দিলাম। কিন্তু সেদিন যখন অফিস থেকে ফেরার পথে পার্কে গিয়ে মায়াকে দেখি-
আপনাকে জড়িয়ে ধরে কান্না ধরে কান্না করছে আর বলছে-
আমায় ছেড়ে যাবি না তো?
কিংবা আপনি যখন বলছেন, খুব ভালোবাসি তো পাগলী তোকে। তোকে ছেড়ে আর কোথাও যাব না। সেই মুহূর্তে আমার পৃথিবীটা ঘুরছিল।
মনে হচ্ছিল যেন আমায় পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। আমি খুব বড়সড় একটা শক্টড খেলাম।
হাতের ঐ ফুলগুলো যেগুলো মায়ার জন্য এনেছিলাম সেগুলো ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে একরাশ ঘৃণা বুকে নিয়ে চলে আসি। গাড়িতে উঠার পরও আপনার শেষ কথোপকথনগুলো কানে বাজছিল। মাথা’টা প্রচন্ড ঘুরছিল। তারপর কি হয়েছে আমি কিচ্ছু জানি না।
পরে দেখলাম-
আমি হসপিটালে আর আমায় ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে আমার পরিবার ও রিলেটিভরা। সেদিন আমি সুস্থ হয়নি, আমায় সুস্থ হতে দু’মাস লেগেছিল। এই দু’মাস মায়ায় হসপিটালে আমার পাশে থাকত, কিন্তু আমি ওকে কাছে ঘেষতে দিতাম। কেন জানি, ওকে দেখলে খুব রাগ হতো। এতবেশী রাগ যে সে সময় আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারতাম না….
তারপর হসপিটাল থেকে বাসায় যায়। তখন আমি পুরোপুরি সুস্থ। তবুও মায়াকে কাছে ঘেষতে দিতাম না। ওকে বিভিন্ন কটু কথা বলতাম, আঘাত করতাম কথার অশ্রু দিয়ে। ভেবেছিলাম এসব সহ্য করতে না পেরে ও চলে যাবে। বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে যাবে। কিন্তু কি আশ্চর্য!!!
ও যায়নি….বাড়ি থেকে কোথাও যায়নি।
বুঝতে পেরে গিয়েছিলাম, ওকে এভাবে তাড়ানো সম্ভব নয়….
কিন্তু আমি যে মন থেকে কখনো ওর সাথে থাকতে পারব না, পারব না সুখের সংসার করতে।
না, না!
আমায় যে করে’ই হোক ওকে বাসা থেকে বের করতে হবে। অবশেষে এলো সেই দিন……
যেদিন বাসায় সব রিলেটিভদের দাওয়াত করা হয় আমার সুস্থ্যতা উপলক্ষ্যে। সেদিন সবাই চা দেওয়ার পর মায়ের কথা মত আমায় চা দিতে আসতে হলো ওকে। ও যেন আমার দিকে তাকাতে পারছিল না ভয়ে, ওর হাত দুটো ঠকঠক করে কাঁপছিল। আর ঠিক সেই সুযোগ’টাই আমি কাজে লাগাইলাম। ওর হাত থেকে চা নেওয়ার সময় ইচ্ছে করেই চা’টা আমার হাতে ফেলে দেই…..
তারপর ওমাগো করে উঠি।
ও দৌঁড়ে গিয়ে দৌঁড়ে আসল হাতে কাচের পানিভর্তি জগ নিয়ে। তারপর সেই জগের ভিতর আমার হাত’টা ঢুকিয়ে দেয়। ওর চোখে তখন ছিল আমার জন্য বড্ড মায়া আর চোখে?!!!
আমার চোখে ছিল ওর জন্য একরাশ ঘৃণা।
হাত ঢুকানোর সাথে সাথেই জগ থেকে হাতটা বের করে নিলাম। তারপর ওর হাত থেকে জগটা কেড়ে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিলাম।
ভেঙে টুকরোটুকরো হয়ে গেল কাচের জগ’টা। অপমান করা’টা তখন থেকেই শুরু। বাড়ি ভর্তি লোক বসা থেকে দাঁড়িয়ে পরছিল আর আমি ওকে বাজে, খুব বাজে কথা শুনিয়েছিলাম। ওকে আমি দুশ্চরিত্রা বললাম। এতেও যেন কাজ হচ্ছিল না। ও ঠাঁই দাঁড়িয়ে ছিল ড্রয়িংরুমে। আর করুণ চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল।
বাবা-মা,আবির-সাইমা,ওর শ্বশুর-শাশুড়ি সবাই আমাকে ধমকাচ্ছিল। কিন্তু আমি কারো কথা শুনিনি। ভালোবাসার দোহাই আর আমার মৃত্যুর কথা বলে তাড়িয়ে দেই ওকে। বলে দেই – হয় বাড়ি ছাড়বি না হয় আমার মরা মুখ দেখবি। ও আর একমুহূর্তও সেখানে দাঁড়িয়ে থাকেনি, চলে আসে বাসা থেকে বের হয়ে….
_ এটুকু বলে সিয়াম থেমে যায়। বিজয়ের চোখ তখন জলে ছলছল করছে….
চোখের জল মুছে বিজয় বলা শুরু করে_

” বাবা-মাকে যেদিন খুন করা হয় সেদিন মায়া অজ্ঞান হয়ে পরেছিল। সন্ত্রাসী’রা বাবা-মাকে মেরে আমাকে নিয়ে যায়। সেখান থেকে পালিয়ে চলে আসি পরদিন। কিন্তু মায়াকে আর পাইনি। শুনেছি ও ওর মামার বাড়িতে গেছে। সেদিন’ই চাচার সাথে বিদেশ চলে যায়। সেখানেই লেখা-পড়া বড় হয়ে উঠা।

সেখান থেকেই ডাক্তারি পাস করে ঢাকায় ফিরে আসি। যেদিন ঢাকায় ফিরে আসি তারপরের দিন’ই মায়ার মামার বাড়িতে যায় মায়ার সাথে দেখা করতে। কিন্তু সেখানে মায়াকে খুঁজে পায়নি। মায়ার মামী ছিল শয্যাশায়ী। ওনার থেকে’ই মায়ার সব কথা জানতে পারি। শুনতে পারি, কতটা অত্যাচার করেছিল ওরা মায়ার উপর। কঠিন রোগে শয্যাশায়ী মায়ার মামীকে শান্তনা দিয়ে আর চিকিৎসার জন্য কিছু টাকা দিয়ে চলে আসছিলাম।পিছন থেকে একটা মেয়ে ডাক দেই। ফিরে তাকাই আর জানতে পারি, মেয়েটা মায়ার মামাতো বোন। ও আমায় সেদিন মায়ার ফোন নাম্বার দেই। আর এও বলে মায়া- ভালো আছে…
খুব ভালো।
সেদিন রাত্রেই মায়াকে কল দেই। এরপর থেকে’ই ওর সাথে কথা শুরু।
সেদিন আমার সাথে দেখা করতে এসে ও কিছু না বলেই কান্না করতে করতে ছুটে গিয়েছিল হসপিটালে। তারপর তিনমাস ওকে ফোনে পাইনি, ওর সাথে দেখাও হয়নি….

সেদিন চেম্বার থেকে ফেরার সময় ওভারব্রিজের কাছে এসে থমকে দাঁড়ায়। একটা মেয়ে বার বার চাচ্ছে ব্রিজ থেকে লাফ দিতে আবার পেটের দিকে তাকাচ্ছে। বুঝতে বাকি রইল না কি করতে চাচ্ছে মেয়েটি। দৌঁড়ে গিয়ে হ্যাচকা টানে ওকে কাছে নিয়ে আসলাম। মেয়েটি ঢলে পরল। মুখের দিকে তাকাতেই চমকে উঠলাম। এ যে আমার কলিজার টুকরা একমাত্র ছোট বোন মায়া….
গাড়িতে উঠিয়ে তাড়াতাড়ি ওকে নিয়ে বাসায় ফিরলাম। পরীক্ষা করে দেখলাম ওর কোনো কিছু হয়নি, তবে যা হয়েছে তা হলো-
” ও প্রেগন্যান্ট…. “
চমকে উঠলাম।জানতাম না ও বিবাহিতা…
ওর জ্ঞান ফিরলে আমার দিকে একবার তাকিয়ে পেটে হাত দেয়।
ওকে বলি-
সব ঠিক আছে…কিন্তু তুই….(…..)….???
ও মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বলল,
“হ্যাঁ, আমি বিবাহিতা।
আর আমি প্রেগন্যান্ট। আমার পেটে ওর বাচ্চা। ওর বয়স ৪মাস। ৪মাস ধরে ও একটু একটু করে বেড়ে উঠতেছে ও আমার পেটে…
ভেবেছিলাম ওর বাবাকে আজকে কথাটা জানাব, কিন্তু তার আগেই ও বাসা থেকে বের করে দিল….”
এরপর থেকে মায়া এ বাসায়’ই থাকে। এর মাঝে মরার প্ল্যান করেছিল শতেকবার, আবার কি মনে করে যেন মরেও নি। বোধ হয়, পেটের ভেতর থাকা অস্তিত্ব’টাই ওকে বার বার বাধা দিচ্ছিল।মানা করছিল মরতে। ও একটা সুন্দর,ফুটফুটে মেয়ে সন্তানের জন্ম দেয়। আর মণি ওর’ই মেয়ে। যে তোমার গাড়িতে উঠে তোমার বাসায় চলে গিয়েছিল। আর তোমাকে বাবা ডেকেছিল। ও প্রায়’ই দেখত ওর মা একটা ছবিকে বুকে জড়িয়ে কান্না করে, আর সেটা দেখেই পাকনা বুড়িটা বুঝে যায় এ তার জন্মদাতা বাবা। সেদিন জন্মদিন উপলক্ষ্যে ও ওর মায়ের কাছে ওর বাবাকে চাইলে ওর মা ওকে খুব বকে। এতে’ই রেগে যায় ও। স্কুল থেকে পালিয়ে যায়। সৃষ্টিকর্তার কি অপার লীলা!
যেই বাবার জন্য রাগ করে স্কুল থেকে পালিয়ে যায়, সেই বাবাকেই ও পেয়ে যায় একটা পার্কের সামনে…
বিজয় এটুকু বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। তারপর আবার বলা শুরু করল__
তুমি যে এখানে আসতেছ সেটা তোমার বাবা আমায় ফোন করে জানালো। অথচ তখন অবধি আমি কিংবা তুমি কেউ জানতাম না দু’জন দু’জনের কত আপন….!!!!

— সিয়ামের চোখ দুটো জলে ছলছল করছে। বিজয়ের দিকে তাকিয়ে বাড়ির এদিক ওদিক তাকালো। তারপর জিজ্ঞেস করল-
” মায়া কোথায়?”
বিজয়ের জবাব__
মেয়েকে নিয়ে স্কুলে গেছে। ফিরে আসবে এখন’ই…..
ঠিক তখন’ই কলিংবেলের আওয়াজ।
বিজয় হাসতে হাসতে বলল,
এই বোধ হয় মা মেয়ে আসল। যাও দরজা খুলে দাও। সিয়াম বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। দরজার দিকে একপা দু’পা করে এগিয়ে যায়…..

চলবে…….

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ